#বউ চুরি
সিজন-২
পর্ব ঃ ৮
লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা
আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো মুসকান ইমনকে। একসময় ইমন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো। মুসকানকে জরিয়ে নিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো ঘুমের মাঝেই হালকা কেঁপে ওঠলো মুসকান। জ্বরের ঘোরে আর জাগতে পারেনি। ইমন মুসকানের বুকে মাথা রেখে দুহাতে গভীরভাবে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল হতেই মুসকানের ঘুম ভেঙে গেলো। কিন্তু নিজেকে কারো মাঝে আবদ্ধ অনুভব করলো।
ভয়ে চোখ খুলতেই বুঝতে পারলো ইমন তার বুকে মাথা রেখে তাকে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
মূহুর্তেই মুসকানের বুকের স্পন্দন বেড়ে গেলো।
আলতো করে মাথায় হাত দিতেই বুঝতে পারলো গভীর ঘুমে মগ্ন আছে ইমন।
ইশ এভাবে কেউ জরিয়ে রাখে এখন ওঠবো কি করে। এমনিতে তো কাছেই আসতে চায় না ঘুমিয়েছি সেই ফাঁকে ঠিকই আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে আছে। লজ্জায় লাল হয়ে মুচকি হাসলো মুসকান। কতোগুলো দিন পর এভাবে আমার কাছে এসেছো সত্যি ভীষন সুখ সুখ লাগছে।
মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে পুরনো সুখকর স্মৃতি গুলো ভাবছে মুসকান।
দিপু এসে দরজায় শব্দ করতে লাগলো মুসকান আপু ওঠো । তোমার জ্বর কি কমেছে, ঘুম কি ভেঙেছে।
এই যা এখন কি হবে দিপুতে ডাকছে। এ তো আমাকে এমন ভাবে জরিয়ে রেখেছে ওঠার ও উপায় নেই। এখন কি করি,,,
মাথায় আলতো করে ধরে ডাকলো শুনছো,,,
বেশ কয়েকবার ডাকতেই ইমন একটু নড়েচড়ে মুসকানকে আরো নিজের সাথে চেপে ধরলো।চোখ বন্ধ রেখেই ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো একদম জ্বালাবেনা। সবসময় জ্বালানোর ধান্দায় থাকো শান্তি তে ঘুমাতে দাও। ভারী আওয়াজ গলায় পড়তেই শিউরে ওঠলো মুসকান। এদিকে দিপু ডেকেই যাচ্ছে ইমনকে একটু ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো মুসকানকে। সারারাত অর্ধেক শরীর তার উপর ছাড়লেও এবার পুরোপুরি মুসকানের শরীরে গা এলিয়ে দিলো। মুসকানের দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেলো। খুব কষ্টে বললো এই ওঠো দিপু ডাকছে তো।
দিপু ডেকে ডেকে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।
মুসকান দিপুর সারা না পেয়ে একটু স্বস্তি পেলেও ইমনের ভারী শরীর টা আর নিতে পারছিলো না। তাই ডাকতে শুরু করলো গা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে।
ইমন বিরক্ত হয়ে রেগে চোখ খুললো। মাথাটা উঁচু করে এক ধমক দিলো মুসকানকে।
কি সমস্যা ডিস্টার্ব করছো কেনো। ঘুমাতে দিবে না নাকি। সবসময় ফাজলামো করো চুপচাপ সুয়ে থাকো আর আমাকে ঘুমাতে দাও।
মুসকানের খুব কান্না পেলো কিন্তু কান্না আটকে বললো।আমার শরীর খুব ব্যাথা করছে খুব ভারী লাগছে।
ইমন আবারো মুসকানের বুকে মাথা রেখে জরিয়ে শুয়ে রইলো।
সহ্য করো,,, এতোদিনে এইটুকু সহ্য তো করতেই হবে।বউ হয়েছো আর এটুকু সহ্য করবে না।
মুসকান রেগে গিয়ে বললো এর থেকেও বেশী করেছি,,,
ইমন চুপ রইলো,,, মুসকান খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো।
কি বললাম এটা ধ্যাঁত,,,কিন্তু এতো ওঠছেই না কি করি এখন আমি তো গলে যাবো এখন। নিঃশ্বাস টাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কোন উপায় না পেয়ে মুসকান কাঁদতে শুরু করলো। ইমন কান্নার শব্দ শুনে ওঠে পড়লো।
এই মেয়েটা এক দন্ড শান্তি দিবে না আমায়। বলেই রাগে ওঠে দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো আমি তোমার কাছে নিজ ইচ্ছায় যাইনি। জ্বরের ঘোরে তুমিই এসেছিলে। তোমার কাছে যাওয়ার কথা এখন আর আমার মাথায় আসে না। একসাথে এক রুমে থাকাও তো অসহ্য লাগে। শুধু গ্রামে এসেছি বলে নয়তো এটাও সম্ভব হতো না।
ইমন বেরিয়ে গেলো রুম ছেড়ে। দিপুকে গিয়ে ধমকাতে লাগলো।কি শুরু করেছিস একবার ডেকে পাসনি তার মানে ঘুমাচ্ছে এতো ডাকার কি আছে।
দিপু ভয়ে চুপ করে রইলো।
মুসকানের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।
ইরাবতী এসে বললো এতো রাগ করছিস কেনো বাবা।মুসকানের জ্বর কমেছে নাকি সেটা জানতেই আমি ওকে ডাকতে বলেছি।
হ্যাঁ। কমে গেছে এখন গিয়ে মহারানীকে জিগ্যাস করো আর কোন বিপদ আছে তারাতারি সেগুলোর মুখে পড়তে বলো।
লীনা এসে বললো এতো রাগ কেনো সকাল সকাল।
ইমন কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো।ইরাবতী বললো তেমন কিছুনা ঘুম হয়নি বোধ হয় তাই রেগে গেছে।
বাইরে বের হতেই শুভ কে দেখতে পেলো ইমন।
নিপুর সাথে কথা বলছে শুভ কে দেখেই মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো।
সেই সাথে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করার কথা ভাবলো।পরোক্ষনেই ভাবলো নাহ কিছু বলার দরকার নেই মানবিক বোধ থেকে বাঁচিয়েছিস বেশ ভালো। ভবিষ্যতে যে কোন সমস্যায় সাহায্য পাবি আমার থেকে।আমার মহামূল্যবান সম্পদ রক্ষা করেছিস। কিন্তু তুই আমার বউ এর শরীরে স্পর্শ ও করেছিস তাই ধন্যবাদ দিতে পারলাম না।
ইমন চলে গেলো সেখান থেকে।
এদিকে শুভ সারারাত ঘুমাতে পারেনি। চোখের সামনে সবসময় মুসকান কে দেখতে পেয়েছে।
বিপদের মুখে পড়া একটা মেয়েকে বাঁচিয়ে যখন প্রথম তার মুখটা দেখলো তখনি তার বুকের বা পাশে এক ধাক্কা লাগে। সেই ধাক্কাতেই আটকে আছে সে।
নানারকম কথার ফাঁকে মুসকানের বিষয়ে জেনে নিচ্ছে।
শুভ বললো দিপুরা,তাহলে তিন ভাইবোন,,,
নিপু বললো হ্যাঁ। দিপক ভাই, মুসকান আর দিপু।
ওও আচ্ছা। মুসকানের কি অবস্থা।
ভালো তুই ছিলি বলে বেঁচে গেছে মেয়েটা। নয়তো কি যে হতো,,,
শুভ বেশ লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো আল্লাহ ই পাঠাইছে আমাকে ওকে বাঁচানোর জন্য। সবই আল্লাহর ইচ্ছা।
কদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠান। আকাশের অবস্থা বেশ খারাপ। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বাড়িতে মেহমান আসা শুরু করে দিয়েছে। এতো লোকজনের ভীড়ে ইমন বেশ বিরক্ত। মুসকান সবার সামনে থাকায় অনেকেই তার দিকে নজর দিচ্ছে যা বেশ লক্ষ করছে ইমন। ভরদুপুরে বেশ বৃষ্টি শুরু হলো। সবাই যার যার ঘরে চলে গেলো। ইমন ও ঘরে এসে মুসকানের অপেক্ষা করছে কিন্তু মুসকান আসছেনা।বেশ অনেকক্ষন অপেক্ষার পর বিরক্ত হয়েই রুম ছেড়ে বারান্দায় বের হলো ইমন।
বারান্দায় দাঁড়াতেই চোখ গেলো ছাদে।
একি মুসকান এই বৃষ্টিতে ছাদে কেনো,,, এই মেয়ের কি বুদ্ধিসুদ্ধি নেই, মনে কোন ভয় নেই জ্বর ঠান্ডা হয়ে যাবে তো। আজ তো একে আমি,,, রেগে দ্রুত পা ফেললো ইমন। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই ছাদে চলে গেলো সে।
প্রচন্ড রাগ নিয়ে ছাদে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো ইমন।
মুসকান দুহাত দুদিকে দিয়ে মুখ উঁচু করে চোখ দুটো বন্ধ করে ভিজছে,,,সারা শরীরে তার ভেজা কাপড় লেপ্টে রয়েছে ।
যা দেখে ইমনের মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা।
আমাকে দূর্বল করার জন্য এই পদ্ধতি নয়তো,,,
না না ঘটে যদি এতোই বুদ্ধি থাকতো তাহলে তো এই বউ নিয়ে আমার আজ এই দশা হতো না।
নিশ্চয়ই এটা ছেলেমানুষী। বৃষ্টিতে ভেজা, নাচ করা,এসবে তো তার আবার পাগলামো নেশা রয়েছে।
ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো ইমন। মুসকান দুহাত দুদিকে মেলে ঘুরতে শুরু করলো। সামনে ঘুরতেই ইমনের পুরো শরীরে আলাদা এক শিহরন বয়ে গেলো। বৃষ্টির ফোঁটা গুলোর প্রতি বড্ড হিংসে হলো তার। এগুতে এগুতে একদম কাছে এসে দাঁড়ালো।
বউকে আমি ছুঁই না বলে তোরা এভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছিস। অন্যের জিনিসে নজর দিতে নেই মনে মনে কথাগুলো বলেই মুসকানের কোমড়ে একহাতে শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন। মুসকান ভয়ে চোখ দুটো খুলতেই ইমনের চোখে চোখ পড়লো।
বৃষ্টির ফোঁটা মুসকানের কপাল, চোখ গাল ঠোঁট বেয়ে গলায় পড়ছে। যা গভীর চোখে দেখে যাচ্ছে ইমন।
মুসকান লজ্জা পেয়ে ইমনকে সরিয়ে দিতেই ইমন পিছন থেকে ওড়না টেনে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। কানের পিঠে ঠোঁট ছুইয়িয়ে বললো- বৃষ্টির ফোঁটা গুলো বড্ড বেহায়া।
মুসকান শিউরে ওঠলো। শ্বাস ঘন হয়ে আসলো।
কাঁপা গলায় বললো-
” বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোঁটা গায়ে পড়তেই যে শীতল শিহরন অনুভূত হয়
তোমার প্রত্যেকটা স্পর্শ সেই শিহরনকেও হার মানায়।,,
কথাটা শুনামাএই ইমন মুসকানকে গভীরভাবে জরিয়ে গলায় কিস করলো,,,মুসকান ইমনকে আবারো ছাড়িয়ে দূরে সরে গেলো।
ইমন আবারো কাছে গিয়ে মুসকানকে কোলে তুলে নিলো।
মুসকান লজ্জায় ইমনের বুকে মুখ লুকালো।
বেশ বড় হয়ে গেছে দেখা যায় রোমায়েন্টিক কথাও বলতে শিখে গেছে। কিন্তু ম্যাডাম এতো সহজে তো ধরা দিচ্ছি না।
পাঁজাকোল করে বাথরুমের সামনে নিয়ে নামিয়ে দিলো ইমন। মুসকান চোখ মেলে তাকালো ঘোরে চলে গেছিলো সে।
তারাতারি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো ঠান্ডা লেগে যাবে। এই বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছো কেনো? আবার অসুখ বাঁধিয়ে আমাকে জ্বালানোর জন্য কঠিন স্বরে বললো ইমন। মুসকান আর দেরী না করে চট করে বাথরুম চলে গেলো।
হায় আল্লাহ এই মানুষ টার এই কর্কশ স্বভাব কি কোন দিন চেন্জ করবে না। এতো সুন্দর মূহুর্ত নষ্ট না করলে ওনার পেটের ভাত হজম হচ্ছিল না বোধ হয়। ধূর ভাল্লাগে না আমিও আজ দেখবো কি করে আমার কাছে না এসে থাকো। জাষ্ট ওয়েট,,,
ভেজা কাপড় ছেড়ে মুসকান বেরিয়ে এলো। ইমন ল্যাপটবে বসে কাজ করছিলো। পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো চেয়ারে ভেজা কাপড় রাখা। কাপড়গুলো বাথরুমে রেখে রুমে এলো কিন্তু ইমন তার দিকে ফিরেও তাকালো না।
ইমনের পাশে গিয়ে চুপচাপ বসে আছে বেশ কিছুক্ষন কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইমনও তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। বেশকিছু ক্ষন পর মুসকান বললো দরকারি কাজ করছো,,,
তোমার কি মনে হয় অদরকারী কাজ করছি,,, বলেই আবার কাজে মনোযোগ দিলো ইমন।
মুসকান ইমনের কাছে পাত্তা না পেয়ে রাগে ফুসতে লাগলো। বেশকিছুক্ষন ভেবে চিন্তে ইমনের গা ঘেষে বসলো। ইমন শক্ত চাহনীতে তাকিয়ে বললো কাজ করছি বিরক্ত করো না বলেই বিছানা ছেড়ে ওঠে চেয়ারে বোসলো। মুসকান বুঝে পায় না একটা মানুষ এতো ইগনোর কি করে করতে পারে। বউ কাছে থাকতেও এমন দূরে কি করে রাখতে পারে। মানলাম আমি ভুল করেছি তার জন্য কি আমি শাস্তি পাইনি। একজন মায়ের কষ্ট কি করে বুঝবে তুমি। আমি আমার প্রথম সন্তান হারিয়ে কি কম কষ্ট পেয়েছি। সন্তান হারানোর পর তুমিও অনেকটা দূরে সরে গেছো ইমন। হয়তো আমি খুব সহজে মানুষ কে বিশ্বাস করে ফেলি তাই বলে আমি তোমাকে ভালোবাসিনা এটা কিন্তু না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তোমার জন্যই তো আজ আমি স্বাভাবিক রয়েছি ইমন,,, তুমি না থাকলে হয়তো আমার কোন অস্তিত্বই থাকতো না সেই তুমিই আমাকে এমন দূরে সরিয়ে দিচ্ছো। এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মুসকান।
দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে ইমন গিয়ে দরজা খুলে দিলো। পূবালী দাঁড়িয়ে আছে।
ইমন ভ্রূ কুঁচকে তাকালো পূবালীর দিকে।
পূবালী আমতা আমতা করে বললো তোমার সাথে আমার খুব জরুরী কথা আছে।
ইমন পিছন ঘুরে মুসকান কে এক নজর দেখলো।
মুসকান রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে পূবালীর দিকে। ইমন বাঁকা হেসে ঘুরে পূবালীকে বললো
ও আচ্ছা কি দরকারী কথা চলো বাইরে গিয়ে বলি।
ইমন পূবালীর সাথে বাইরে গেলো।
পূবালী বললো সত্যি আমি ভাবতে পারিনি তুমি আমার দরকারে এক কথায় ই আসবে। যেতে যেতে বললো পূবালী। ইমন আবারো বাঁকা হাসলো।
মুসকান অবাক চোখে ইমনের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো। বাহ কি দারুণ দৃশ্য,,, বেশ ভালো আজকাল মেয়েদের সাথেও ভাব জমানো হচ্ছে। আর আমার বেলায় সব সময় কর্কশতা। কিন্তু ঐ পূবালী কই নিয়ে যাচ্ছে,,, কৌতুহল করে মুসকান পিছু নিলো খানিক যাওয়ার পর দেখতে পেলো পূবালী দের বাড়ি যাচ্ছে মুসকান আর এগুলো না। একরাশ অভিমান নিয়েই ফিরে গেলো।
পূবালীর মা পূবালীর ছোট ভাইকে ঢাকায় পড়া শোনা করাতে চায়,সেই বিষয়েই আলাপ করলো। ইমনও পূবালীর মা কে সব বুঝিয়ে বিদায় নিলো।ফিরে আসার সময় পূবালী বললো ইমন ভাইয়া একটা কথা জিগ্যাস করবো,,,
ইমন কিছু বললো না পা ফেললো সামনের দিকে। পূবালী ও সমান তালে পা চালাতে চালাতে বললো মুসকান কি তোমার ঘরে কোন দরকারে গিয়েছে।
না মানে ও তোমার সাথে অনেক ফ্রি তাইনা মাঝে মাঝেই তোমার ঘরে দেখতে পাই,,,
ইমন দাঁড়িয়ে পড়লো। পূবালীর দিকে তাকিয়ে বললো হুম ফ্রিই তো,,,আর আমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে এতো কৌতুহল আমি পছন্দ করিনা।
হুম সরি। আসলে একটা ব্যাপার মাথায় ঢুকছিলো না।
ইমন আবারো পা চালালো। কিছু বললো না।
পূবালী বললো আসলে একটা বিষয় খেয়াল করলাম মুসকান ওর ভাইদের থেকে তোমার সাথেই বেশী মিশে। যখনি যাই তোমার ঘরেই দেখি তাই ভাবলাম আর কি।
ইমন বললো নিজের ঘরে থাকবে না তো অন্য কারো ঘরে থাকবে।
মানে,,,
ইমন থেমে গেলো পূবালীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বললো বরের কাছে বউ থাকবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়,,,ভাইদের থেকে বরই তো আপন।
ইমন পা চালালো আবারো কিন্তু পূবালী আর পা এগুতে পারলো না।
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।
মানে,,,এটা কি বলে গেলো ইমন। বর মানে মুসকানের সাথে ইমনের কি বিয়ে হয়েছে। এজন্যেই ওরা এক ঘরে সবসময় থাকে। কই কেউতো কিছু বলেনি। কিছু বুঝাওতো যায়নি। নিজেদের মধ্যে বলেই কি,,, আমার এতোদিনের অপেক্ষার তাহলে কি হবে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে দৌড়ে বাড়ি চলে গেলো পূবালী।
খানিক দূরে গিয়ে ইমন পূবালীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো- এও দেখি বোকা। ভাবীরা বলেনি জানি তাই বলে বুঝবে না এতো বোকা প্রানী হয়,,,
আজ নিপুর গায়ে হলুদ সন্ধ্যায় সবাই মিলে রেডি হয়ে ছাদে চলে গেলো। শুধু মুসকান বাদে অনেকদিন যাবৎ শাড়ি না পড়ায় আজ মুসকানের অনেক কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে শাড়ি পড়তে। ইমনকে বলেছিলো পড়িয়ে দিতে কিন্তু ইমন শুনেও না শুনার ভান করে চলে গেছে। মুসকান খুবই দুঃখ পেয়েছে এমন আচরনে। তাই একাই শাড়ি পড়ছে আর বিরবির করছে প্রথম দিকে তো খুব নিজেই শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছো। আর এখন এই আচরন। পুরানো হয়ে গেছি এখন আমি তাইনা,,,
তুমিও দেখে নিও আজ কি জ্বালানোটাই না আমি জ্বালাই তোমায় মুচকি হেসে মুসকান বেরিয়ে পড়লো।
লীনার ভাই লিমন এসেছে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। মুসকানকে দেখেই বেশ ফিদা হয়ে গেছে।
বেশ কয়েকবার কথা বলার ট্রাই করেছে কিন্তু পারেনি। ছাদে সবার মাঝে মুসকান চলে গেলো।
তিনজন ছেলের দৃষ্টি পড়লো মুসকানের উপর সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছে মুসকান কে।
মেরুন কালারের বেনারশীতে মুসকান কে ইমনের কাছে অপ্সরীর মতো লাগছে। দূর থেকেই এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ইমন।
মুসকান ইমন কে আড় চোখে একবার দেখে নিয়ে এগিয়ে গেলো নিপুর কাছে। নিপুর পাশেই বসে ছিলো লিমন।
মুসকানকে দেখে লিমনের মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা। হা করে তাকিয়ে রইলো লিমন।
নিপুর সাথে কথা বলছে আর হাসছে মুসকান লিমন এক ধ্যানে তাকিয়ে সেই হাসি দেখে যাচ্ছে। মুসকানের পুরো সাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো লিমন। মুসকানের চোখ ঠোঁট নাক সবটায় যেনো বার বার আটকে যাচ্ছে সে। দিপু এসে লিমনকে বললো ভাই এভাবে তাকিয়ে থেকো না ইমন ভাই কিন্তু এগুলো পছন্দ করে না।
লিমন মুসকানের দিকে চোখ রেখেই বললো আরে ইয়ার একটামাএ বেয়ান আমার তাকে দেখতেও কেনো এতো বাঁধা। ইমন ভাইকে বলে দিও এতো আগেই মুসকানকে দখল করে নেওয়া তার ঠিক হয়নি। বলেই হোহো করে হেসে ওঠলো লিমন। দিপু বললো আরে ভাই মজা করো না তো পরে কিন্তু ঝামেলায় পড়বা । লিমন ওঠে দাঁড়ালো আরে ব্রো কিসের ঝামেলা এতো সুন্দরী মেয়ের দিকে না চেয়ে থাকা যায় নাকি। সে আমার বেয়ান আমি তার বেয়াই আমাদের সম্পর্কটা যে খুবই মধুর। আর এই সম্পর্ক আরো মধুর হবে যখন তার ঐ ফাঁকা খোঁপায় আমি একটা লাল গোলাপ গুজে দিবো।
দিপু ভয়ে এক ঢোক গিললো।
চলবে…..