বউ চুরি সিজন-২ পর্ব ঃ ৬

#বউ চুরি

সিজন-২

পর্ব ঃ ৬

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

মুসকান রুমে বসে নিঃশব্দে কেঁদেই চলেছে।
তুমি একবারো আমার কাছে আসলেনা। তোমার মুসকানের জ্বর হয়েছে এটা জেনেও তুমি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রইলে ,,, ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো মুসকান।
এশা এসে বললো মুসকান ওষুধ টা খেয়ে নাও। তারপর রেডি হয়ে নাও আমাদের কিন্তু একটু পরেই বেরুতে হবে।
না কোন ওষুধ খাবনা আমি প্লিজ চলে যাও এখান থেকে।
দেখো মুসকান কোন জেদ করো না। ইমন ভাইয়া জানলে কিন্তু আবারো ঝামেলা হবে। প্লিজ বনু ওষুধ টা খেয়ে নাও। তুমি এমন অবাধ্য আর হইয়ো না। দেখো সবটা ঠিক হয়ে যাবে।
মুসকান কোন কথা বললো না ওষুধ টা খেয়ে নিলো।
এশা বললো কিছুক্ষন রেষ্ট নিয়ে রেডি হয়ে নাও কেমন। এশা চলে গেলো মুসকান হাটুতে মুখ গুজেই বসে রইলো।

এশা শাড়ি পড়ছে দিপক হাটু গেড়ে বসে কুঁচি ধরে আছে। শাড়ি পড়তে পড়তেই এশা বললো তোমার ভাইয়া যেমন জেদী তোমার বোনটাও তেমন ত্যাড়া।
একজন তো অবাধ্য হবেই আরেকজন শুধু মেজাজ দেখাবে, কি করেছে দেখেছো অমন মুখ নিয়ে সবার সামনে যাবে কি করে বলোতো,ইশ দুগালে দাগ পড়ে গেছে একদম।

দিপক ওঠে দাঁড়ালো, কি আর করার বলো কারো কিছু বলার বা করার নেই। মুসকানের ব্যাপারে ইমন ভাইয়ের সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত । আর মুসকানের প্রতি ইমন ভাইয়ের ভালোবাসার গভীরতা কতোটা সেটা এ বাড়ির সবাই জানে। মাঝে মাঝে ওর ভুলে এমন ক্ষেপে যায় কিন্তু সব ওই ঠিক করে নিবে।
মুসকান না নিলেও ও ঠিক করে নিবে। সেই আটবছর বয়স থেকে মেয়েটা কে পাগলের মতো ভালোবাসে। ওই বয়সে বউ করার জন্য পাঁচদিনের শিশুকে নিজ বুদ্ধিতে অপহরণ করে এ বাড়ি নিয়ে এসেছে। যে বয়সে খেলাধুলা করার কথা, ঘুরাফেরার করার কথা সেই বয়সগুলাতে ভাইয়া শুধু মুসকানকে নিয়ে ব্যাস্ত থেকেছে। স্কুল কলেজে কড়া নজড় রেখেছে। সম্পূর্ণ নিজের আয়ত্তে রেখে বড় করেছে। নিজ হাতে গড়েছে মুসকানকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী করার জন্য বুঝলে।

হুম তা তো এ বাড়ি এসেই বুঝেছি। এই প্রথম কাউকে দেখেছি যে বউ চুরি করে নিয়ে আসে। তাও আবার আট বছর বয়সে পাঁচ দিনের শিশুকে। তোমার ভাই হচ্ছে একজন ভয়ংকর প্রেমিক,সেই সাথে ভয়ংকর স্বামী।

দিপক এশাকে পিছন থেকে জরিয়ে এশার চুলে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো আমিও কিন্তু তারই ভাই,,,
এশা চট করে দিপক কে ছাড়িয়ে বললো এই যে আমার মহা প্রেমিক আমার শাড়ি নষ্ট করার ধান্দা তাইনা।
দিপক হেচকা টান দিয়ে এশাকে জরিয়ে নিলো নিজের মাঝে।কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো আমি করবোনা তো কে করবে শুনি,,,
ধ্যাত ছাড়তো তিনটা বেজে গেছে।

মুসকান রেডি হয়ে রুমেই চুপ করে বসে আছে।
ইমন গাড়িতে বসে ওয়েট করছে সবার জন্য।
দিপক গিয়ে গাড়িতে বসলো। ইমন বললো কিরে পিছনে কেনো সামনে আয় ওরা পিছনে বসবে।
দিপক আর কিছু না বলে সামনে চলে গেলো। আর মনে মনে বললো ভাই আমার এততো অভিমান পুষে রেখেছেন। আমি ভাবলাম পাশে বসিয়ে নিয়ে যাবেন আমার বোনটাকে আমিও আমার বউয়ের পাশে বসে যাবো সব আশায় পানি ঢেলে দিলেন।
গ্রামে যাচ্ছি, বউ নিয়ে যতো ইচ্ছা সময় কাটাস আলাদা কেউ কিছু বলবে না। গাড়িতে একসাথে না বসলে মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।
ইয়ে মানে ভাইয়া,,,ভাবছিলাম মুসকান সামনে বসবে হয়তো। আমতা আমতা করে বললো দিপক আর মনে মনে বললো ওরে আমার মনোবিজ্ঞানী ভাই। মনে মনেও কিছু বলা যাবে না,,,
ইমন বাঁকা হাসলো,,,
এশা আর মুসকান বের হলো ইমন গাড়ি থেকে আড় চোখে মুসকান কে দেখলো।
এশা শাড়ি পড়েছে আর মুসকান শাড়ি পড়লো না। এই প্রথম গ্রামে যাচ্ছে শাড়ি পড়াটা তো উচিত ছিলো। এইভাবে দেখে কেউ বলবে এ কারো বউ,,, ভীষণ রাগ হলো ইমনের তবু রাগটা হজম করে নিলো।
এশা গাড়িতে ওঠে মুসকান কে ওঠতে বললো। মুসকান ইতস্ততভাবে ওঠে বোসলো। আড় চোখে ইমনের দিকে তাকালো একবার।
আমার দিকে একবারো তাকালে না তুমি। এতোটা পর করে দিচ্ছো আমায়, আমি এসব সহ্য করতে পারছিনা।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার, বুকটা ভীষণ খালি খালি লাগছে। এতে শূন্যতা কি করে সহ্য করবো আমি। মুসকানের চোখ দুটো ঝাপশা হয়ে এলো।
ইমন আয়নায় মুসকানকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে গেলো। গালে পাঁচ আঙুলের দাগগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গতকালের কথা ভাবতেই ইমনের বুকটা মোঁচড় দিয়ে ওঠলো। আহত মনেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ইমন।

বাড়ি থেকে একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছে ইমন কে। একবার ইমন একবার দিপক তারা সবাই খুব উৎসাহিত সবাই অনেক বছর পর একসাথে হতে পারবে বলে। গ্রামে গিয়ে আর সবাই কয়েকদিন করে থাকলেও ইমন থাকেনি কারন আটবছর বয়স থেকেই সে তার বউকে ছেড়ে কোথাও থাকেনা। সারাদিন কাটিয়ে রাতে ঠিকই বাড়ি ফিরে এসেছে।
সবাই মুসকানকে অনেক নিয়ে যেতে বলেছে কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সত্যি বলতে ইমন মুসকানকে কোথাও নিয়ে যেতে চায় নি। এবার দাদুর কড়া আদেশ অমান্য করতে পারলো না। বয়স হয়েছে মোতালেব চৌধুরীর বেশ অসুস্থতার মধ্যে যাচ্ছে। বুড়ো মানুষ কখন কি হয়ে যায় সেই সাথে গ্রামের আর এক ভাই ই বিয়ে করার জন্য আছে।
তাই সবাই উপস্থিত থাকবে বিয়েতে।

গ্রামে ফিরতে তাদের রাত আটটা বেজে গেলো।
মুসকান আর এশা এই প্রথম গ্রামে আসলো। এশাকে খুব এক্সাইটেড লাগলেও মুসকানকে লাগলো না।
ইমন বেশ খেয়াল করছে সেটা। কেনো ভুল করো বার বার মুসকান। তোমার ভুলের জন্যই তুমি এতো কষ্ট পাও। মুখে হাসি নেই ইচ্ছে হচ্ছে দেই আর কয়েকটা এতো বছরে তো কম জ্বালাও নি এখানে আসার জন্য এখন কি হলো। ইমন আর পারছে না নিজেকে আটকে রাখতে নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত রাখছে।

এদিকে এশা আর মুসকানের সাথে সবাই পরিচিত হচ্ছে। মোতালেব চৌধুরী বললেন আমার গিন্নির শরীর টা ভালো নেই তারাতারি পরিচয় পর্ব সেরে বিশ্রাম নিতে দাও সবাই। মোতালেব চৌধুরী মুসকানের ওড়না দিয়ে এতো বড় ঘোমটা দেওয়ায় ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলো। এবং সর্বপ্রথম সেই বুঝলো ইমন আর মুসকানের মাঝে কিছু হয়েছে। তবুও সবার সামনে কিছু বললো না।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর বউ রূপালী ইমনের মেজো কাকার বউ রূপমের মা এশা আর মুসকান কে বেশ কিছু নিয়ম পালন করালেন। চৌধুরী পরিবারের বউ তারা দুজন প্রথম এসেছে তাই কিছু নিয়ম পালন করলেন। মফিজ এবং মতিস চৌধুরীর বউ ঝুমুর এবং নারগিস ও তাদের সাথে বেশ কিছুক্ষন আলাপচারিতা করলেন। মোতালেব চৌধুরী বললেন বাড়িটা আজ বেশ রমরমা লাগছে নাতী নাত বউদের নিয়ে একদম ভরে গেছে। ইমন এতো মানুষের ভীর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
রিক্তম,জোভান,মিলন, নিঝুম,নিপু বাড়ির সব ছেলে ছেলের বউ এসে পরিচিত হলো। এদের অনেককেই মুসকান চিনে। তারা ঢাকা গিয়েছে মুসকানের সাথে আলাপও আছে। সবার মধ্যে নিপু বেশ লজ্জা পাচ্ছে তার বিয়ের উদ্দেশ্যই বাড়ির সবাই এক হয়েছে।
মিলন, আর জেভানের ছেলে আছে মিলনের ছেলের বয়স তিন আর জোভানের ছেলের বয়স চার। রূপম ছাড়া চৌধুরী বংসে কারো ঘরেই কন্যা সন্তান আসেনি। রূপমের ছুটি না হওয়ায় সে আরো কিছুদিন পর আসবে গ্রামে তাই নিয়ে রূপালির বেশ মন খারাপ।

সকলের সাথে আলাপ হওয়ার পর রাতের খাবাড় খেয়ে ঘুমাতে যেতে যেতে বারোটা পার হয়ে গেছে।
সবাই যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে।
মুসকানকেও এক রুমে দিয়ে গেছে দীপান্বিতা আর বলে গেছে ঘুমিয়ে পড় ইমন এসে পড়বে। হয়তো আশে পাশে ঘুরছে অনেকদিন পর এসেছে তো।
দীপান্বিতা চলে যেতেই মুসকান চুপ করে শুয়ে রইলো। আর ঘরের টিন চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলো। চারপাশে দেয়াল উপরে টিন গ্রামের বাড়ি বেশ ভালো লাগছে মুসকানের। কিন্তু গরম ও লাগছে ফ্যান চলছে তবুও ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে। একবার শুয়ে আছে তো একবার বসে আছে। ঘুম আসছেই না একা একা অচেনা রুমে আছে সেটা ভেবেই আরো ঘেমে যাচ্ছে সে। আর বার বার দরজায় ওকি দিয়ে দেখছে ইমন আসছে কিনা।
ও কি আসবে না,,, আমার সাথে এক রুমে থাকতে হবে বলেই কি আসছে না,,,বড্ড খারাপ লাগছে মুসকানের। চারদিক নিঃস্তব্ধতা কারো কোন সারা নেই হঠাৎ কেমন ভয় ভয় লাগতে শুরু করলো তার।
একা একা আর বসে থাকতে পারছে না। বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো সাথে সাথে টিনের চালে প্রচন্ড আওয়াজ করে কিছু একটা পড়লো। মুসকান ভয়ে এক চিৎকার দিলো দুকান চেপে। ওর চিৎকার শুনে ইমন ছুটে এলো রুমের ভিতর।
কি হয়েছে ভয় পেয়েছো বলতেই মুসকান ইমনকে জাবটে ধরে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।এশা দিপক পাশের রুমেই ছিলো ওরাও দৌড়ে এলো।
দিপক বললো এই ভয় পেয়েছিস নাকি বোকা মেয়ে সকাল হলেই বুঝবি কিসের শব্দ ভয় পাস না। ইয়া বড় বড় গাছ রয়েছে ইয়া বড় বড় আম ও রেয়েছে। আম পড়েছে টিনের চালে বুঝলি পাগলী।
মুসকান ইমনকে ছেড়ে দিলো খানিক টা দূরে সরে দাঁড়ালো। এশা বললো ভাইয়া আপনি এখনো বাইরে কেনো। মেয়েটা একা একা ভয় পাবেতো কিছু চিনে না জানে না।
ইমন কিছু বললো না বিছানায় ফোন রেখে রুমের পাশে বাথরুমে চলে গেলো।
এশা আর দিপক ও মুসকানকে বুঝিয়ে চলে গেলো।
মুসকান দরজা লাগিয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলো।

ইমন ফ্রেশ হয়ে এসে লাইট অন রেখেই শুয়ে পড়লো।
মুসকান যাতে ভয় না পায় তাই লাইট অন ই রাখলো।

প্রায় বিশ মিনিট পর ইমনের মাথায় একদম রক্ত ওঠে গেলো। দুহাতে মুসকানের দুহাত বিছানায় চেপে ধরলো। চোখে চোখ রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো- চুপপ একদম চুপ অনেক হয়েছে আর না। এই,,,ধমকে ওঠলো ইমন মুসকান ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
এতো চোখের পানি কোথা থেকে আসে। আর এতো কাঁদারই বা কি হয়েছে। মুসকান ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে। ইমন আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।
কঠোর গলায় বললো এবার তুই থামবি নাকি রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাবো। মুসকান খানিকটা চুপ করলো কিন্তু কান্না চেপে রাখায় হেচকি ওঠে গেলো।
ইমন আরেকটু কাছে গিয়ে বললো- ভুল করার সময় মনে থাকে না,,,এখন কেনো এমন করছিস। আমায় ছেড়েই থাকতে হবে তোর এভাবে কেঁদে আর আমার মন গলাতে পারবিনা।
মুসকান ইমনকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
বিরক্ত লাগছে আমায়,,,যদি না ছাড়ি কি করতে পারবি তুই এই চোখের পানি ফেলা ছারা বলেই গালে ঠোঁট ছুইয়িয়ে দিলো ইমন। ঠিক যেখানটায় তার করা পাঁচ আঙুলের ছাপ রেয়েছে। মুসকান ডুকরে কেঁদে ওঠলো ইমন মুসকানের কান্না সহ্য করতে পারছেনা আবার শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত ও থাকতে পারছে না।
তুই থামবি তোর কান্না অসহ্য লাগছে বলেই ঠোঁটজোরা আঁকড়ে ধরলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here