#বউ চুরি
সিজন-২
পর্ব ঃ ১৫+১৬ (শেষ পার্ট )
লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা
ওল্ড ইজ গোল্ড মেডাল নামে এক বিশাল বড় প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছে ইমন বাবা। যেখানে আমার বয়সী, আমার থেকে ছোট বড় অনেকেই আছে। সকলের বয়সই এিশ এর ঊর্ধ্বে। আর সকলেই অসহায় হতদরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে।
এসেছে বললে ভুল হবে ইমন বাবাই তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে সেখানে জায়গা দিয়েছে। সবাই সেখানে পরিশ্রম করেই খায়। বিশাল বড় এক নার্সারিতে সকলে মিলে কাজ করি আমরা।
সেখানে বিভিন্ন ধরনের চারা রোপণ করা হয়। সেগুলো বড় হলে বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায় তা আবার আমাদের ই কাজে লাগে। আর এই বুদ্ধি টাও ইমনের ই। আমাদের মতো মধ্য বয়স্ক মহিলারা ভারী কাজ করতে পারবে না। এছাড়া কাজ ছাড়াও আমাদের দায়িত্ব ইমন বাবা নিতে পারতো কিন্তু তা না করে আমাদের পরিশ্রম করিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে তুলেছে। যাতে বাকি জীবনটা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি। এতে আমাদের সবার সময়ও কাটে তার পাশাপাশি সবাই আত্মনির্ভরশীল ও হয়ে ওঠতে পেরেছি। সারাজীবন যতো অবহেলা,অপমান আমাদের ভীতরটা জ্বালিয়ে শেষ করে দিয়েছে,,, সেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনে পানি পরে যখন নিজেদের পারিশ্রমিক পাই।
আর এসব শুধু ইমনের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আমার খুব গর্ব হয় রে মা যে আমার মেয়ের জামাই এতো ভালো মনের একজন মানুষ।
মুসকান অবাক হয়ে তার মায়ের কথা শুনছে।
আমি তো এসব কিছুই জানিনা,,,
হ্যাঁ রে তোকে তো ইমন বাবা কিছু জানতেই দেয়নি।
নিজ হাতে সবটা সামলেছে রে মা। আর সব সময় বলেছে আমি কি, আমি কেমন সেটা মুসকান ধীরে ধীরে জানবে বুঝবে।
জানিস মা তোকে যদি ঐভাবে ইমন বাবা নিয়ে না আসতো তাহলে তোকে আমি তোর বাবার কালো ছাঁয়া থেকে বাঁচাতে পারতাম না।
কারন ঐ অমানুষ টা বলেই দিয়েছিলো এবার মেয়ে হলে মা সহ মেয়েকে পুঁতে ফেলবো।
মুসকান ভয়ে শক্ত করে হাত চেপে ধরলো বিদিষা বেগমের।
বিদিষা বেগম বললেন হ্যাঁ রে মা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ের পর থেকে কতো অত্যাচার আর অবহেলা যে সয়েছি মা।
দুই মেয়ে হওয়ার পর অত্যাচারের মাএা আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। মারধর করতো সবসময় ছেলে ছেলে করে সারাদিন মাথা খেতো। তারপর তুই যখন পেটে এলি ভয় দেখাতে শুরু করলো এবার ছেলে না হলে নাকি আর ঘরে জায়গা দিবে না। যখন আটমাস তখন নিজেকে আর তোকে বাঁচাতে চলে যাই মায়ের বাড়ি। ভেবেছি যদি ছেলে হয় তবেই ফিরবো নয়তো ফিরবো না। কিন্তু তুই হওয়ার পর পাঁচদিনের মাথায় ইমন তোকে নিয়ে চলে আসে। প্রথমে দুঃখ পেলেও পরে বুঝতে পারি আল্লাহ যা করেছে ভালোর জন্যই করেছে। আর দেখ তুই কতো ভালোভাবে মানুষ হয়েছিস আর তোর আর বড় বোন দুজন শাবালক হওয়ার আগেই পরের ঘরে চলে গেছে।তাদের ও শান্তি নেই রে মা শান্তি নেই বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো বিদিষা বেগম।
মুসকান ওঠে বসে মাকে জরিয়ে ধরলো।
কেঁদো না মা কেঁদো না তুমি।
বিদিষা বেগম মুখ তুলে বললেন জানিস ঐ শয়তানটা যখন জানতে পারলো তুই মৃত জন্মাসনি। আমরা মিথ্যা বলেছিলাম এটা যখন জানতে পারলো। আর যখন জানলো অনেক বড় লোক বাড়িতে তুই মানুষ হচ্ছিস তখন থেকেই শুরু হয়ে গেলো আরেক অত্যাচার। মা মারা যাওয়ার আগে সব সত্যি আমাকে বলে যায় তখনি ঐ অমানুষটা সব শুনে নেয়। তারপর থেকেই লোভ জন্মায় যে তোকে ফেরত নিয়ে যাবে সাথে মোটা অংকের টাকাও পাবে।
ঢাকা শহরেও এসেছিলো,লোক ও পাঠিয়েছিলো।
তারপরেই তো ইমন বাবা যায় আমাদের ওখানে সেখানেই দেখা হয় ওর সাথে। আমি না চিনলেও ও ঠিক আমাকে চিনে নিয়েছে ।
আমার অবস্থা দেখে ও খানিকটা আঁচ করতে পেরেছিলো যে তোর জন্মদাতা কতো জঘন্য মানুষ।
তাই বেশ কয়েকমাস পর আবার আমাদের ওখানে যায়। আমাকে নিয়ে আসার জন্য আমি প্রথমে আসতে চাই না। যেখানে নিজের স্বামীই দিনরাত খাওয়া পড়া নিয়ে খোটা দিতো সেখানে অন্য কেউ কি করে আমার দায়িত্ব নিবে।
তারপর ইমন বাবা যখন বললো নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারবো। শুধু আমি না আমার মতো আরো অনেকে থাকবে তখন ভাবলাম আমার তো আর কোন পিছুটান নেই। মেয়েরা কাছে নেই,স্বামী তার দ্বিতীয় বউ বাচ্চার সাথে ভালোই আছে। বৃদ্ধ মা টাও চলে গেছে এই একা জীবন নরকে পার করার থেকে এই ছেলেটার হাত ধরে আরেকবার শুরু করি নিজের জীবন টা ।
ইমন বাবাকে ভরসা করেই সেদিন ঢাকায় আসি। আর ঢাকায় আসার পর তোকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছিলাম রে মা,,, কিন্তু ইমন বাবা আমাকে বার বার অনুরোধ করেছে মা আপনি একটু ধৈর্য ধরুন, সঠিক সময়ে ঠিক নিজের মেয়েকে কাছে পাবেন।
তারপর আর কি সেই আশা নিয়ে ঐ বিশাল বড় বাড়িতে থাকছি। সকলের সাথে একসাথে খাওয়া, একসাথে গল্প করা,কাজ করা বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলো।
ইমন বাবা ও যেতো মাঝে মাঝে দেখা করতে।
আর অবশেষে আমি আমার মেয়েটাকেও কাছে পেয়ে গেলাম।
মুসকানের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে,,,
এতো ভালো মানুষ হয়,,,
হয়রে মা হয় এই মানুষের জন্যেই তো তুই আজ এতো সুন্দর একটা জীবন পেয়েছিস। ছেলেটা যেনো তোকে ভালোবাসার জন্যই, তোকে সুখ দেওয়ার জন্যই দুনিয়াতে এসেছে।
কাঁদিস না মা বরং উপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় কর। যে জন্মের পর থেকে এমন মানুষের সাথে সারাজীবন কাটাতে পেরেছিস,,, আর শেষ অবদিও পারবি বলে।
ইমন অফিস থেকে বিকালের দিকে বের হয়ে গেলো সুমনদের বাড়ি। গাড়িতে বসেই সাব্বির কে ফোন করে বললো -সাব্বির মুসকানের মা কে এবার নিয়ে বড় বাড়ি চলে যা। কাল বাবা আসবে আর তারপরেরদিন সবাই চলে আসবে। তাই আজকের দিনটাও রাখা যাবে না। ভালো ভাবে বুঝিয়ে নিয়ে আসিস । মা কে বলিস এখন থেকে মুসকান কে মাঝে মাঝে বেড়াতে নিয়ে যাবো বড় বাড়িতে।
আর মুসকান যদি না আসতে দিতে চায় বলবি আমি বলেছি যেতেই হবে।
ঘরের সব জিনিস ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে হেনা।
সুমন বড় বড় করে চেয়ে ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এসে বললো এসব কি করছো।
তোর মুন্ডু করছি একদম আমার আশে পাশে ঘেষবি না। নয়তো আজ তোকে খুন করে ফেলবো বলেই তেরে গিয়ে ছোট ছুরিটা গলায় ধরলো।
সাথে সাথেই কলিং বেল বেজে ওঠলো।
সুমন কোনরকমে হেনাকে ছাড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে রুম ছেড়ে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুললো।
ইমন কে দেখেই জাবটে ধরে বললো ভাই বাঁচা, বাঁচা।
ইমন ব্যাকুব হয়ে গেলো কোনরকমে ছাঁড়িয়ে বললো আরে কি হয়েছে টা কি??
ভাই মা চন্ডি বলেই আঙুল দিয়ে হেনার দিকে দেখালো।ইমন সেদিকে তাকিয়ে দেখে হেনা তেড়ে আসছে,,,
ইমনকে দেখেই হেনা ভয়ে ছুঁড়িটা ফেলে দিলো। এক ঢোক চিপে আমতা আমতা করে বললো আপনি,,,
স্যাট আপ,,, ইমনের এক ধমকে সুমন সহ হেনা দুজনেই কেঁপে ওঠলো।
কড়া গলায় ইমন সুমনকে বললো সুমন আজি এই মেয়েকে ডিভোর্স দিবি। সব আমি রেডি করে দিচ্ছি।
সুমনের মুখ টা চুপসে গেলো।
হেনা বেশ খুশি হতে গিয়েও স্তব্ধ হয়ে গেলো যখন ইমন বললো – তুই ওকে এ বাসা থেকে বের করে দিবি। ওর বাবা মা কে বলবো মেয়ের কোন দায়িত্ব যেনো না নেয়। বাড়ি তে জায়গা দিলে বা মেয়েকে টাকা পয়সা দিয়ে কোন প্রকার সাহায্য করলে ওর বাবার চাকরি খেয়ে দিবো আমি। সেই সাথে এলাকা ছাড়া হতেও বাধ্য করবো। আর এখনি বের করে দে এই মেয়েকে। স্বামীর গায়ে যে মেয়ে ছুঁড়ি তুলতে পারে সে মেয়ের কোন জায়গা স্বামীর ঘরে হতে পারেনা।
কিরে তুই মুখ এমন করছিস কেনো তুই তো কোন অপরাধ করিসনি,যে অপরাধ করেছে সে শাস্তি পাবে। চিন্তা করিস না তোকে আবার বিয়ে করাবো পরের বউ অনেক বেশী সুন্দরী হবে। বলেই সুমনের কাঁধে হালকা থাপ্পর দিয়ে হেনার চোখের আড়ালে চোখ টিপ দিলো। সাথে সাথে সুমনের মুখে হাসি ফুটে ওঠলো। হেনার দিকে তাকিয়ে এক হাত দরজার দিকে করে বললো এই মেয়ে বেরিয়ে যাও।
ইমন হাতে তুরি বাজিয়ে বললো আউট,,,
হেনা মুখ টা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে গভীর ভাবনায় ডুব দিয়েছে।
ইমন বললো সুমন,,,চিন্তা করিস না বিবাহিত ছেলেরা অনেক অবিবাহিত মেয়ে বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু বিবাহিত মেয়েরা অবিবাহিত ছেলে সহজে বিয়ে করতে পারবেনা বলেই হেনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। ইমন চোখ ইশারা করতেই সুমন গিয়ে হেনার হাতে শক্ত করে ধরে দরজা অবদি নিয়ে এসে বললো বেরিয়ে যাও,,,
হেনা হাত ছিঁটকে বললো আমি কোথায়ও যাবো না।
ইমন বললো যেতে তো তোমাকে হবেই,,,
প্লিজ ভাইয়া আমাকে বের করে দিবেন না।
স্বামী হিসেবে তো আমার বন্ধু কে মানোই না কোন অধিকারে থাকবে এ বাড়িতে?? এর থেকে ভালো নিজের পথ নিজেই বুঝে নাও।
সুমনের দিকে তাকাতেই সুমনও ইশারা করলো বেরিয়ে যাও।
হেনা কষ্টে কেঁদেই ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে বললো আমি কোথাও যাবো না।
আমি আর তোমার সাথে অমন করবো না।
বিশ্বাস করিনা,,, তোমার মতো অহংকারী মেয়ে আমার দরকার নেই,,, আমার খুব সাধারণ একটা মেয়ে হলেই চলবে।
বন্ধু,,,
ইয়েস,,,
আজি মেয়ে খুঁজো আমার জন্য।
হেনা হুট করেই সুমনকে জরিয়ে ধরলো,,,
প্লিজ আমাকে বের করে দিও না,,,আমি আর অমন করবো না। তোমার মা কে আসতে বলো ওনার কাছেও ক্ষমা চাইবো আমি।
ইমন এক গাল হেসে মাথা চুলকিয়ে অন্যদিকে তাকালো।
সুমন হেনাকে দুহাতে জরিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে ফেললো। আবার মুখ বন্ধ করে ফেললো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম। নেক্সট এমন হলে বিয়ে আমি করবোই।
,
মা চলে যাওয়ায় বড্ড মন খারাপ হলো মুসকানের।
আবার ভাবলো এখন থেকে তো মায়ের কাছে যেতে পারবো,,,মায়ের আদর পাবো এই তো অনেক। কদিন পরেই যাবো আমি মায়ের কাছে। ভাবছে আর রান্না করছে। রাত আটটা বাজে এখনো আসছেনা কেনো। এবার তো ভয় করছে কখন আসবে ইমন,,,
ভাবতে ভাবতেই কলিং বেল বেজে ওঠলো।
মুসকান গলাটা ভালোভাবে ঢেকে দৌড়ে দরজা খুললো। ইমন ভিতরে ঢুকেই বললো এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও তারাতারি।
মুসকান দরজা লাগিয়ে তারাতারি এক গ্লাস পানি এনে সামনে ধরলো। ইমন গটগট করে পানিটা খেয়ে উপরে চলে গেলো। আর বলে গেলো খাবার টা উপরে নিয়ে আসো। নিচে আসতে পারবোনা অনেক ক্লান্ত লাগছে।
ইমন ফ্রেশ হয়ে ইরাবতী কে ফোন করলো। ইরাবতীর সাথে কথা বলছে এমন সময় মুসকান রুমেঢুকলো খাবাড় নিয়ে। মুসকানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছে আর রুমে হাটাহাটি করছে।
মুসকানের দিকে তাকিয়েই বললো আচ্ছা মা তাহলে রাখি। সাবধানে থেকো সবাই,,,
ফোন রেখেই ইমন বললো মুসকান,,,
এদিকে আসো মুসকান খাবাড় গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো আরে বলোনা শুনছি তো,,,
ইমন পকেটে হাত রেখেই বললো কি লুকাতে চাইছো আমার থেকে, আর সকাল থেকে এভাবে ওড়না পড়ছো কেনো? এদিকে এসো।
মুসকান আঁতকে ওঠলো ভয়ে ভয়ে ইমনের দিকে একবার তাকালো। এক ঢোক চিপে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বললো কই,,,কিছুনাতো,,,
ইমন কয়েক পা এগুতে এগুতে কঠোর গলায় বললো গলা কাঁপছে কেনো, হাত ই বা কাঁপছে কেনো। সকাল থেকে দেখছি সমস্যা কি বলেই একটানে ওড়নাটা সরিয়ে ফেললো।
মুসকান সাথে সাথে দু চোখ বন্ধ করে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
ইমন মুসকানের গলার দিকে বড় বড় করে তাকালো।
এক ধমক দিয়ে বললো এই এটা কিহ,,,
মুসকান আবারো কেঁপে ওঠলো। কান্না করে দিয়ে বললো আমি খেয়াল করিনি,,, হঠাৎ তেল লেগে গেছে।
প্রচন্ড রেগে গিয়ে কি করবে বুঝতে পারলো না রাগের মাথায় মুসকানকে ঠাশশ,করে একটা থাপ্পর দিলো। মুসকানের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরতে লাগলো। দু কাধে ধরে বললো মাথা কি একবারেই খারাপ হয়ে গেছে। সেই সকালে তেল ছিটেছে কোথায় আমাকে তুই জানাবি তা না করে এটাও আমার থেকে গোপন রেখেছিস। এই তোর মাথায় কি কোন দিন বুদ্ধি হবে না। সারাজীবন এভাবেই জ্বালাবি আমাকে। আমাকে সকালে বললে এখন এই অবস্থা হতো না। বলেই এক টানে বিছানায় নিয়ে বসালো। মুসকান কেঁদেই চলেছে কাঁদতে কাঁদতে বললো- এই কারনেই তো জানাইনি এই বকা গুলো খেতে চাইনি, এই রাগটাও দেখতে চাইনি।
ইমন ধমকে ওঠলো চুপপ,,, আর একটা কথা এই মুখ দিয়ে বললে মুখ সেলাই করে দিবো বলেই দুগাল চেপে ধরলো । চুপ চাপ এখানে বসবি তুই ভালো কথার মানুষ না।গাল ছেড়ে ওঠে গিয়ে নিওবার্নিয়া মলম এনে গলায় লাগিয়ে দিতে লাগলো,,, মুসকান ব্যাথায় আহ করতেই ইমন কঠিন মুখে তাকালো।
মুসকান ভয়ে আর টু শব্দটিও করলো না।
বেশকিছু ক্ষন পর মুসকান বললো খেয়ে নাও,,,
ইমন আঙুল ওঠিয়ে বললো চুপপ,,,
কোন কথা বলবি না।
রাগে ফুসছে ইমন, মুসকান ভয়ে আর কিছু বললো না চুপ করে বসে রইলো।
ইমন না খেয়েই শুয়ে পড়লো।
একি আমার উপর রেগে না খেয়েই ঘুমাবে,,, ধ্যাত এর থেকে সকালে বললেই ভালো হতো। এমনটা হতো না মন খারাপ করে মুসকান বসে রইলো।
ইশ খুব খিদে পেয়েছে,,,নিজেও খেলো না আমাকেও খেতে দিলো না। ডাকতে গেলেও এখন ধমকে ওঠবে কি করি,,,পুরো রুম জুরে পাইচারি করতে লাগলো মুসকান।
ইমন মুসকানের পাইচারি দেখে ওঠে বোসলো। মুসকান দাঁড়িয়ে পড়লো। ইমনের দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে বললো হে আল্লাহ আর জানি বকা খেতে না হয়,,, প্লিজ,
প্লিজ,প্লিজ।
ইমন ওঠে গিয়ে বাথরুম থেকে মুখ আর হাত ধুয়ে আসলো। টেবিল থেকে খাবাড় নিয়ে বিছানায় বোসলো। মুসকানের দিকে তাকাতেই মুসকান বিছানায় এসে ইমনের সামনে বোসলো। ইমন খাবাড় মেখে মুসকানের সামনে ধরতেই মুসকান বললো সরি,,,
ইমন কঠিন চোখে তাকাতেই মুসকান টপ করে খাবাড়টা মুখে পুরে নিলো। মুসকান কে খাওয়িয়ে দিলো এবং নিজেও খেয়ে নিলো । খাবাড় শেষে মুসকান সব গুছিয়ে রেখে দিলো।
ইমন ফোন নিয়ে আলেয়া চাচীর নাম্বারে ফোন করলো। রিসিভ করতেই কাল সকালেই এসে পড়তে বললো।
বির বির করে বললো একটা দিন রান্না করতে গিয়ে শরীর পুরিয়ে ফেলেছে,,, আবার সেটা গোপন রাখারও সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে বাহ ব্রিলিয়ান্ট।
এই একদম আমার কাছে ঘেষবে না। এক কিনাড়ে গিয়ে ঘুমাবে, আমার কাছে আজ তোমার কোন জায়গা নেই বলেই ইমন পাশ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
মুসকান মুখ ভাড় করে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।
গভীর রাতে মুসকান যখন গভীর ঘুমে মগ্ন ইমন তখন মুসকানকে একদম নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে শান্তির এক নিশ্বাস ছাড়লো।
কয়েকদিন পর বাড়ির সকলেই গ্রাম থেকে চলে এলো। মুসকানও পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে। থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে তাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে মুসকান।
রাত দশটা বাজে ইমন ল্যাপটবে কাজ করছিলো আর মুসকান পড়াশোনা করছিলো। এমন সময় ইমনের ফোনে ফোন এলো রায়ার নাম্বার থেকে।
ইমন নাম্বার দেখেই ফোন এগিয়ে দিলো মুসকানের দিকে। মুসকান রায়া নামটা দেখেই চেয়ার থেকে লাফিয়ে ওঠলো।
ইমন বললো আগে ফোনটা রিসিভ করো পরে লাফাও।
মুসকান ফোনটা রিসিভ করেই বেলকুনিতে চলে গেলো।
হ্যালো,,, রায়া কেমন আছিস?
ভালো তুই কেমন আছিস?
খুব, খুব ভালো। কতোদিন পর তুই ফোন করেছিস বলতো,,,
হুম জানু,,, তোমাকে তো আজ ফোন করতেই হতো।
কেনো কেনো?? আজ কি কোন স্পেশাল ডে,,,কই আমার তো মনে পড়ছে না।
আরে ইয়ার আগে তো শান্ত হ আমাকে বলতে দে,,,
আচ্ছা দোস্ত বল,,,
মুসু,,,তুই খালামুনি হবি।
মুসকান এক চিল্লানি দিয়ে ওঠলো কি,,,সত্যি।
রায়াও হেসে ফেললো হ্যাঁ রে সত্যি, সত্যি, সত্যি।
ওয়াও দোস্ত তুই এখন কোথায় আছিস,,,
আর বলিস না,,, আমিতো যশোর আছি। তোর ভাইয়ার ছুটি নাই কয়েক মাস পরে আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে।
ওহ হো দোস্ত সাবধানে থাকবি কিন্তু,,, আর শোন তুই আসার আগেই আমাকে জানাবি। আমি তোর কাছে যাবো,,, আর শোন তোর বাবুর নাম কিন্তু আমি রাখবো মনে আছে তো।
আরে মনে থাকবে না,,,সব বন্ধু দের মধ্যে তোকেই তো আগে জানালাম। যা কথা ছিলো তাই করেছি আর তাই করবো ও আর শোন বাকিদের ও জানাতে হবে। এখন রাখি তোকে আবার পরে ফোন করবো কেমন।
আচ্ছা সাবধানে থাকিস কিন্তু।
আচ্ছা।
মুসকান প্রচন্ড খুশি হয়ে ইমনের গলা জরিয়ে ধরলো। জানো রায়া প্র্যাগনেন্ট,,,
ইমন স্বাভাবিক ভাবেই বললো ওও আচ্ছা।
মুসকান বললো আমার তো খুব ভালো লাগছে রায়ার বাবু হবে। বলোতো ওর কি বাবু হবে,,,
ইমন বললো এসব কি পাগলামো বাবু কি ওর হবে না তোমার হবে,,,
মুখ ফঁসকে কথাটা বলে ফেললো ইমন মুসকান মুখটা মলিন করে ফেললো। ইমন কে ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বোসলো। চুপচাপ বসে রইলো চোখ দুটো তার চিকচিক করছে,,,
ইমন বুঝতে পেরে ল্যাপটব টা অফ করে বিছানায় বসে মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো আরে ওর কি বাবু হবে সেটা আমি কি করে জানবো,,, ওর বাবুর খবড় তো ওর হাজব্যান্ড জানবে তাইনা,,, আমি তো জানবো তোমার আর আমার বাবুর খবড় বলেই মুসকান কে টেনে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
মুসকানের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে,,,
ইমন মুসকানের কানের পিঠে কিস করে বললো কেউ কি জানে এবার আমাদের ও বেবী নেওয়ার সময় হয়ে এসেছে।
মুসকান অবাক হয়ে ইমনের দিকে ঘুরে তাকালো।
ইমন হালকা হেসে মাথা নাড়ালো,,,
মুসকান দুহাতে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ইমনকে।
কয়েকমাস পর –
চলোনা হসপিটাল যাই এবার সিওর কিছু হবে দেখো। একমাসের বেশী হয়ে গেছে আমার তো পিরিয়ড হয়নি,,,
ইমন রাগের মাথায় ধমকে ওঠলো। এতো বেশী বুঝো কেনো? যখন হসপিটাল যাওয়ার প্রয়োজন হবে যাবোই তো পর পর তিনবার গিয়েছি।
পাঁচমাস ধরে একি নাটক চলছে আর ভালো লাগছে না ধূর বলেই ইমন রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
মুসকানের চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো অবিরত। বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে মুসকান বললো আমি কি সন্তানের মুখ দেখতে পারবো না,,, যা হারিয়েছি তা কি ফিরে পাবো না।
ইমনকে বাবা হওয়ার সুখ কি আমি দিতে পারবো না।
যদি না পারি তাহলে তো আমার জন্যই আমার দোষেই,,, ইমনের তো দোষ নেই ওর প্রথম সন্তান আমার জন্যই হারিয়েছে। আর আজ আমার জন্যই একটা সন্তানের মুখ দেখতে পারছে না।
ইমন পিছন থেকে সব কথা শুনে মুসকান কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। সরি মুসকান,,, আমি ওভাবে রাগ করতে চাইনি। কিন্তু কি করবো বলো তোমার অবুঝতা আমাকে এখন সত্যি খুব কষ্ট দিচ্ছে।
মুসকান ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো।
প্লিজ মুসকান কেঁদো না। আল্লাহ যখন চাইবে ঠিক আমাদের বেবী আসবে দেখো। একটু ধৈর্য ধরো তুমি, পাগলামো করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
মুসকান ইমনকে ছাড়িয়ে বললো আমি আর কোন দিন মা হতে পারবো না তাই না,,,
চুপপ,,,এইসব কি কথা মুসকান। তুমি কি নিজেকে ডাক্তার ভাবছো,,,তোমার কোন সমস্যা নেই শুধু শুধু অর্থহীন কথা বলে আমার মাথা গরম করে দিয়ো না।
আমার জন্যই তুমি বাবা হতে পারছো না,,,সব আমার দোষে বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো মুসকান।
ওও তাই,তুমি কিভাবে জানলে ভালো ভাবে বলছি আমার মাথা গরম করো না। একটু ধৈর্য ধরো এমন অবুঝ হলে কি করে চলবে,,,
মুসকান বললো না,না, না সব আমার জন্যই । তুমি এক কাজ করো তুমি আরেকটা বিয়ে করে নাও সেই বউ তোমাকে বাচ্চা দিতে পারবে।আমি পারবো না তোমায় একটা বাচ্চা দিতে বলেই কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো মুসকান।
ইমনের মাথা গরম গয়ে গেলো এতো বড় একটা কথা তুমি কিভাবে বলতে পারলে মুসকান। মাএ সাত মাসেই এতো অধৈর্য কেনো হয়ে গেলে। ওহ আল্লাহ এই মেয়েকে একটু ধৈর্য দাও। আর আমাকে একটু বুঝানোর ক্ষমতা দাও ওকে।
মুসকান কেঁদেই চলেছে,,,
ইমন গিয়ে দুহাতে মুসকানের দুগালে ধরে বললো কি বললি তুই,,,আমায় আরেকটা বিয়ে করে নিতে,,, একুশ বছর ধরে আমার সব, ভালোবাসা আদর ভোগ করে এখন আর ভালো লাগছে না তাইনা।
মুসকান চোখ বন্ধ করে ফেললো গাল বেয়ে পানি পড়ছে।ইমন আরেটু মুখ এগিয়ে বললো তোকে যেভাবে আদর করি ভালোবাসি আরেকটা বিয়ে করলে তো তাকেও এভাবে আদর করতে হবে।
মুসকান চোখ খুলে ইমনের চোখে তাকালো।
ইমনের চোখ দুটোও ভীষন লাল,,,
মুসকান ইমনকে জাবটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো।
না, না, তুমি আমায় ছাড়া কাউকে আদর করবে না।কাউকে ভালোবাসবে না, তুমি শুধুই আমার। তুমি তো আমায় সব দিয়েছো,,,একটা বাবু দাওনা,,,
আর কিছু চাইনা শুধু তোমার সন্তানের মা হতে চাই আমি ।
ইমন মুসকানের মাথায় কিস করে বললো আমিও তোমার সন্তানের বাবা হতে চাই মুসকান। আমার সেই পিচ্চি বউ টার কোলে একটা পুচকি দেখতে চাই। শুধু ভয় একটাই আমার পুচকি টা আমার বউ এর মতো অবুঝ না হয়,,,
মুসকানের কান্না খানিকটা কমে এলো। ইমন মুসকান কে বিছানায় শুইয়িয়ে দিয়ে আদরে, ভালোবাসায় এক অন্য জগতে নিয়ে গেলো। যেখানে কান্না নেই আছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা। মুসকান কে কান্নার আর সুযোগ দিলো না ইমন। সারারাত ভালোবাসা আর আদরে কাটলো তাদের।
সকাল হতেই ফোন বেজে ওঠলো ইমনের।
মুসকান কে জরিয়েই একহাতে ফোন রিসিভ করলো।
ওপাশ থেকে খবড় এলো রায়ার ছেলে হয়েছে।
ইমন কনগ্রেস জানিয়ে ফোন রেখে মুসকানের কপালে আলতো করে চুমু খেলো।
মুসকানের গরম শ্বাস ইমনের উন্মুক্ত বুকে পড়ছে। যা ইমন কে পাগল করে দিচ্ছে কোন রকমে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে মুসকানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।
কিন্তু মুসকান আরো গভীর ভাবে জরিয়ে নিলো ইমনকে।
দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি বলেই মিটি মিটি হাসতে হাসতে মুসকান কে একটানে তুলে নিজের বুকের উপুর শুইয়িয়ে দিলো।হালকা ঘুম ছাড়তেই বুকেই মাথা রেখে ঘুমাতে লাগলো।
ইমন মুখটা একটু ওঠিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
মূহুর্তেই কেঁপে ওঠলো মুসকান। ঘুম ছাড়তেই বড় বড় করে তাকালো ইমনের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় মিইয়ে গেলো।
মুসকানকে ছেড়ে দুহাতে কোমড় জরিয়ে বললো এবার ঘুম ভেঙেছে। মুসকান জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললো ওহ এমন রাক্ষসের মতো করার কি আছে।
কি আমি রাক্ষস,,, বলেই মুসকান কে বিছানায় চেপে নাকে কামড় বসালো,,, নাক ছেড়ে ঠোঁট গলায় ভালোবাসার চিন্হ দিয়ে ছেড়ে দিলো।
হ্যাঁ এবার পরিপূর্ণ রাক্ষস আমি। মুসকান আড় চোখে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো।
ইমন বাঁকা হেসে ওঠে পড়লো। মুসকান আবার ঘুমিয়ে পড়লো,,,
অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট বের হয়েছে কদিন আগে,,,ইমন মুসকান কে বলেছে এবার চুটিয়ে সংসার করো। পড়াশোনার চাপ নেই স্বামী, সন্তান নিয়ে সুখে ঘর করবে এবার। তাই শুনে মুসকান মুখ ভাড় করে বসে আছে,,,
সংসার তো আছে সন্তান কবে আসবে,,,
সন্তান ছাড়া সংসারে কিভাবে মন দিবো।
দীপান্বিতা বললো সংসারে মন দে তবেই সন্তান আসবে। এশার তো ছয় মাস এবার তোর কোলেও বাবু আসবে দেখিস । তার আগে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
আমি তো চাচ্ছি আম্মু তবুও কেনো আসছে না।
আরে পাগলী নামাজ পড়,আল্লাহ কে ডাক তুই ওনার ইবাদত কর ওনিও তোর মনের আশা পূরন করবে। কিছু পেতে হলে তো কিছু দিতেও হয় রে মা।
আর একজন মায়ের ডাক অবশ্যই ওনি শুনবে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়, তাহাজ্জতের নামাজ পড়। দেখবি তোর ডাক ঠিক শুনবে ওনি।
হ্যাঁ।ঠিক বলেছো আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে দুহাত তুলে একটা সন্তান ভিক্ষে চাইবো। ওনি আমায় ফেরাবেন না।
দীপান্বিতা মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো হ্যাঁ মা তাই কর। তোর শাশুড়ী মাও যে একটা নাতি-নাতনীর মুখ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।
ইমন ঠিক করলো সামনে মাসে মুসকান কে বড় গাইনোকলজিষ্ট দেখাতে নিয়ে যাবে। এদিকে খুব গুরুত্বপূর্ন কাজ পড়ে গেছে তাই দুদিনের জন্য ঢাকার বাইরে যেতে হবে ।
দুদিন ধরে মুসকানের গায়েও জ্বর,,, ইদানীং ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া ও করেনা। ভালো ডক্টর দেখাতে হবে। মনে মনে ভেবে ইরাবতীর রুমে পা বাড়ালো।
ইরাবতীকে কড়া গলায় বললো দুদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। তুমি বা মুসকান কেউ বাড়ির বাইরে যাবে না। আর রাতে মুসকানের সাথে ঘুমাবে। ওষুধ গুলো ঠিকভাবে যেনো খায় সেটা লক্ষ রাখবে। আমি বাড়ি এসে ডক্টর দেখাতে নিয়ে যাবো।
আচ্ছা বাবা তুই ঠিকভাবে যাস। আর ফোন করিস সকাল বিকাল। ইমন মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলো।
মুসকানের বমি হচ্ছে সেই সাথে পেটে প্রচন্ড পরিমানে ব্যাথা,,, বাড়ির সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো।
দীপান্বিতা আর ইরাবতী বললো লক্ষন গুলো তো মা হওয়ার মতোই। কিন্তু ওর ব্যাথায় ছটফটানি দেখে এভাবে রেখে দেওয়াও তো যায় না। দিপু গিয়ে তারাতারি ইমনকে ফোন করে সব জানালো।
ইমন দিপক আর মোজাম্মেল চৌধুরী কে ফোন করে মুসকানকে দ্রুত হসপিটাল নিয়ে যেতে বললো।
হসপিটাল ভর্তি করানো হয়েছে সেই সাথে যাবতীয় টেস্ট করানোও হয়েছে।
ডক্টর অনেক বকা,ঝকা করলো মুসকান কে। এই অবস্থায় না খেয়ে থাকা নিষেধ জানোনা ।
ইরাবতী বললেন যা খেয়েছে সব বমি হয়ে বেরিয়ে গেছে।
আপনারা ডক্টর দেখাতেন তা না করে একটু ও নজর দেননি শুরুতেই এমন অপুষ্টি থাকলে বাচ্চার তো অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।
মুসকান কে স্যালাইন দিয়ে রাখা হলো।
বাড়ির সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো।
পরেরদিন মুসকান কে বাড়ি নিয়ে আসা হলো।
দুটো বাচ্চার আগমনি বার্তা পেয়ে মোতালেব চৌধুরী আর গ্রামে থাকতে পারলেন না অসুস্থ শরীরেই চলে আসলেন।
ইমন ও খবড় পেয়ে গেছে। যতো দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরবে সে মুসকানকে ফোনে তাই জানিয়েছে।
ইরাবতী মুসকানের মাথায় তেল দিয়ে সুন্দর বেনুনি করে দিলো৷ তারপর বললো রুমেই থাকো আমি রান্না করি গিয়ে সন্ধ্যাে হয়েই এলো। ছেলে টাও আজ ফিরবে রুম ছেড়ে বের হবেনা কিন্তু। ইমন এসে দেখলে আর রক্ষে থাকবে না। দিপক কে আর দীপান্বিতা কে ফোন করে করে পাগল করে ফেলেছে একদম। খুব চিন্তায় আছে যতোক্ষনে বাড়ি ফিরবে ততক্ষনেই ওর শান্তি।
মুসকান লজ্জা পেয়ে মুখ সরিয়ে নিলো। ইরাবতী কথা গুলো বলে চলে গেলো।
মুসকান বেলকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আকাশ দেখতে লাগলো। একহাত পেটে রেখেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
মা হওয়ার অনুভূতি সত্যি আলাদা,,,
এতো সুখ বোধ হয় পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন কিছুতে আর নেই,,,
হুম আর বাবা হওয়ার অনুভূতি,,,
মুসকান চমকে ওঠে পিছনে তাকালো।
ইমনের হাসি মাখা মুখটা দেখেই দুপা এগিয়ে জরিয়ে ধরলো। ইমনও দুহাতে জরিয়ে নিলো বুকের মাঝে।
থ্যাংকিউ সো মাচ,,, আমি খুব খুব খুশি,,,
হুম আমিও খুব খুশি বলেই মুসকান কে পাজাকোল করে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো। নিজে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে মুসকানের
কোমড় জরিয়ে পেটে কান পেতে বললো খুব নাকি কষ্ট দিয়েছে বাবু,,, মুসকান বললো কই না তো কোন কষ্ট দেয়নি বরং আমিই না খেয়ে খেয়ে ওকে কষ্ট দিয়েছি।
ওওও তাই আমার কলিজার টুকরাকে কষ্ট দেওয়ার সাহস তুমি কই পেলে,,,
এবাবা আর আমিও যে কষ্ট পেলাম তার বেলায়।
ও হো দুজনেই তো কষ্ট পেয়েছো তাইনা তো আমার উচিত দুজন যেনো আর কষ্ট না পাও সেটাই দেখা তাই তো,,,
মুসকান মুখ ফুলিয়ে বললো হুম,,,
রাতে নিজের হাতে ভাত খাওয়িয়ে দিলো ইমন তারপর জোর করে এক গ্লাস দুধ খাওয়িয়ে বিছানায় শুতে বললো। গায়ে কাঁথা জরিয়ে দিয়ে ফোন বের করে সবাই কে জানিয়ে দিলো৷ বিদিষা বেগমকেও।
পুরো নয় মাস ইমন মুসকানের প্রচুর খেয়াল রেখেছে। প্রথমবারের মতো ভুল আর এবার কেউ করেনি। এশা আর দিপকের ছেলে নিয়ে দীপান্বিতা অনেকটা ব্যাস্ত থাকলেও মুসকান কেও সময় দেয়। তবে ইমন যেভাবে মুসকান কে আগলে রাখছে তাতে আর কাউকে প্রয়োজন পড়েই না।
সকালে ব্রাশ করা থেকে সব কিছুতেই ইমন সাথে থাকে। আটমাস হওয়ার পর থেকে গোসল টাও ইমন নিজে করিয়ে দেয়।
,
মুসকানের হঠাৎ ব্যাথা ওঠতেই ইমন পাজাকোল করে নিয়ে সিড়ি দিয়ে দ্রুত নেমে বেরিয়ে গেলো। ইরাবতী, দিপক ও সাথে গেলো। ইরাবতীর কোলে মুসকান কে রেখে ইমন ড্রাইভ করতে করতেই হসপিটালে ফোন করলো। আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিলো বলে কোন সমস্যা হলো না।
,
নার্স ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান নিয়ে এসে ইমনের কোলে দিতে নিলেই ইমন পিছন ঘুরে ফেললো।
নার্স সহ ইরাবতী, দিপক সবাই ভ্রু কুঁচকালো।
নার্স বললেন একি নিজের সন্তান দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলেন যে,আপনি কি পুএ সন্তান চেয়েছিলেন।
ইমন চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো আগে বলুন মুসকান কেমন আছে?? আই মিন আমার স্ত্রী ঠিক আছে তো,,,
দিপক, আর ইরাবতী স্বস্তির শ্বাস ফেলে নার্সের দিকে তাকালো। নার্স মুচকি হেসে বললো বাচ্চা এবং বাচ্চার মা দুজনই সুস্থ আছেন।
ইমনের মুখে হাসি ফুটে ওঠলো।
বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতেই ইমন ঘুরে তাকালো। দুহাত বাড়িয়ে দিলো নিজের সন্তান কে কোলে তুলে নিতেই তার হৃদয় শীতল হয়ে গেলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো সে। চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো বাচ্চার মুখ টা দেখে। এ যেনো ছোট্র মুসকান,,, একদম মায়ের বাচ্চা কালের মুখ কেটে বসানো। ইরাবতী বলে ওঠলো ও মা একদম মায়ের মতো দেখতে হয়েছে,,,
ইমন ইরাবতীর কোলে বাচ্চা টা দিয়ে দিপক কে টাকা বের করে দিলো। পুরো হসপিটালের মানুষ কে মিষ্টি খাওয়াতে বললো।
একবছর পর-
ছোট্ট ইভানা কে নিয়ে ইমন আর মুসকান যাচ্ছে বিদিষা বেগমের কাছে।
ইভানা বললো মাম,,,মাম,,,কোতা কোতা,,,
মুসকান এক গাল হেসে বললো -আমরা তোমার নানুর কাছে যাচ্ছি মামুনি।
ইমন সানগ্লাস চোখে দিয়ে মুসকান কে ইশারা করলো ওঠে বসতে।
মুসকান ইভানাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে বোসলো।
ইভানা,ইমন আর মুসকানের চোখের মনি,,,
প্রথম সন্তান হারিয়ে গেলেও প্রথম সন্তানের স্থান ঠিকি তাদের দুজনের হৃদয়ে গেঁথে আছে। মুন কে কখনোই ভুলেনি তারা, যার অস্তিত্ব কেবল মাএ মুসকান টের পেয়েছিলো তার গর্ভে। ইভানার নাম যখন ইমন মুন রাখতে চাইলো মুসকান বললো নাহ মুন তো আসেনি আমাদের কাছে,,, মুনের ছোট বোন এসেছে ওর নাম কেনো ওকে দেবো। না ওর নাম দিবো আর না ওর জায়গা দিবো। যার অস্তিত্ব তিনমাস আমি পেয়েছি তাকে আমি সারাজীবন ও ভুলতে পারবো না, আমি যে মা।
মায়ের কাছে প্রত্যেকটা সন্তান ই সমান। আর দুনিয়াতে মুন কে আমি কাছে পাইনি, পরকালে ঠিক পাবো,,,
ইমন মুসকানকে জরিয়ে ধরে বলেছিলো সরি,,,
মুনের জায়গা কেউ নিবে না আর ও হলো আমাদের ইভানা,,,
গাড়িতে বসে আছে ইভানা ঘুমিয়ে পড়েছে গাড়িতেই। মুসকান ইভানা কে বুকে জরিয়ে ইমনের কাঁধে মাথা রাখলো।
ইমন ড্রাইভ করছে,,, মুসকান চোখ বন্ধ করে বললো জীবনটা সত্যি খুব সুখের হলো আমার শুধু তুমি ছিলে বলে,,,
আমার এই এক জীবনে সত্যি আর কিছু চাওয়ার নেই।
ইমন বললো সত্যি তাই,,,
আমিতো বলি তোমার আর আমার ভালোবাসা কখনোই শেষ হবে না,,, বৃদ্ধ বয়সের ভালোবাসা না পেয়েই হয়রান হয়ে গেলে। আরো তো অনেক ভালোবাসা বাকি,,,
তোমার আমার এই ভালোবাসা শেষ হওয়ার নয়,,,
তোমার আমার ভালোবাসা সারাজীবন বেঁচে থাকবে,,,
সবাই জানে একটা বাচ্চা ছেলের সাহসীকতা,,,
সবাই জানে একটা বাচ্চা মেয়ে,অবুঝ মেয়ে কে বুঝিয়ে নিজের করে নেওয়ার কথা,,,
সবাই জানে ইমনের ভালোবাসার গভীরতার কথা,,,
কোন বাঁধাই পারেনি তোমার থেকে আমাকে আলাদা করতে,,, ইনশাআল্লাহ পারবেও না। বলেই মুসকানের দিকে ঘুরে মাথায় চট করে চুমু খেয়ে আবার গাড়ি চালাতে মনোযোগ দিলো।
সমাপ্ত
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। জানিনা কেমন হলো খারাপ লাগলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।শুরু থেকে যারা গল্পটির সাথে ছিলেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা। আপনারা সাথে না থাকলে এতোটা আগানো সম্ভব হতো না। সিজন ওয়ান থেকেই আপনাদের ভালোবাসা এবং উৎসাহ পেয়ে সিজন টু শেষ করলাম। সবাই কে অনেক অনেক ভালবাসা রইলো। সকলেই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ❤