বউ চুরি সিজন-২ পর্ব ঃ ১২

#বউ চুরি

সিজন-২

পর্ব ঃ ১২

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

ইমন ফোন খুঁজতে এসে ফোন পেলো না।
হয়তো মুসকান নিয়েছে বিয়ে বাড়ি গিয়েও নেওয়া যাবে ভেবেই বেরিয়ে পড়লো।

গাড়িতে ওঠেই পূবালী কে দেখতে পেলো মুসকান। মৃদু হেসে গাড়িতে ওঠে বোসলো।পূবালী মুসকানের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো সত্যি কোথায় মুসকান কোথায় আমি,,, আমিও না বড্ড বোকা। এমন অপরূপ সুন্দরী কে রেখে আমার মতো গ্রামের অতি সাধারণ মেয়েকে কেনো ইমন ভাইয়া জীবনসঙ্গী করবে। যে মেয়ের রূপ দেখে আমি মেয়ে হয়েও মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি তাহলে মানতেই হবে এই মেয়ের মধ্যে অসীম ক্ষমতা আছে ইমনকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে সবাই বাসে যাচ্ছে,দুটো বাস আর একটা প্রাইভেট কার নেওয়া হয়েছে। বরের সাথে দিপু আর ইমন রয়েছে। বাকি সব বাসে সবাই যে যার মতো গল্পে মজে ওঠলো। সব ভাবীরা হাসি ঠাট্রায় মেতে ওঠলো। মুসকান এর হাসি না পেলেও তাদের সাথে সঙ্গ দিতে হচ্ছে। কিন্তু মাথায় শুধু ঘুরছে সেই নাম্বার টা।
পিছনের সিট থেকে মিম বলে ওঠলো এই যে ননদিনী আপনাকে তো ঝাক্কাস লাগছে।
সীমা বলে ওঠলো ইশ ভাষার কি ছিড়ি এই তুমি কি রাস্তার বখাটে নাকি।
মুসকান ওদের কথা শুনে হেসে ফেললো। আর বললো না ভাবী যেভাবে প্রশংসা করার ইচ্ছে করো।
মিম আবারো বললো আহারে ননদিনী আমাদের প্রশংসায় কি আর তোমার মন ভরবে গো।
মন তো ভরবে আজ রাতে,,, বলেই চোখ মারলো মিম।
মুসকান খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো।
লীনা পাশের সিট থেকে বলে ওঠলো আহারে সেটি আর হচ্ছে না। বাড়ি ভর্তি মেহমান সব মেয়েরা মেয়েদের সাথে থাকবে। আর ছেলেরা ছেলেদের সাথে থাকবে। শুধু বর- কোনে একসাথে থাকবে।
রিপা,আর এশা দুজনেই বললো এই কি শুরু করেছো তোমরা,,, এশা বললো আমার ননদ টাকে একা পেয়ে তোমরা এভাবে টর্চার করছো আমি কিন্তু এখানেই আছি।
সবাই হোহো করে হেসে ওঠলো। মুসকান লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। পূবালী জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।
রিপা বললো যে যাই বলো আমার ভি.আই.পি দেবরটা কিন্তু এক মুসকান ছাড়া কারো সাথে বেড শেয়ার করেনা । আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ইমন মুসকান ছাড়া কারো সাথেই বেড শেয়ার করবে না।
রূপ বললো মাম্মাম, মাম্মাম চাচ্চু কেনো তাহলে মামনির সাথে বেড শেয়ার করে। রূপের কথা শুনে সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিলো। পিছন থেকে দিপক আর মিলন বললো সামনে কি হাসির প্রতিযোগিতা হচ্ছে নাকি???

মেঘা বললো সামনের দিকে কান না দিয়ে তোমরা নিজেদের কাজ করো।আর মেঘ কে সামলাও,,,
মিলন বললো তোমাকেই সামলাতে পারিনা তোমার ছেলেকে কি করে সামলাই। পিছন সহ সামনের সবাই হৈহৈ করে ওঠলো।
যাক বাবা বাঁচলাম এবার আমাকে ছেড়ে এদের নিয়ে পড়বে,,,
সবাই এবার মেঘা আর মিলনকে ক্ষেপাতে লাগলো।
হাসি হাট্রায় পুরো জার্নিটা ভালোই কাটলো ।

বিয়ে বাড়ি গিয়ে ইমন মুসকান কে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। মা,কাকি কারো সাথেই দেখতে পেলো না।
মেঘার কাছে শুনতে পেলো মুসকান, এশা, রিপা নতুন বউ এর কাছে রয়েছে।
তাই ইমন মুসকানের অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষন পর মুসকান বেরিয়েও এলো। ইমনকে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই বেরিয়ে এলো। ইমন মুসকান কে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো।
এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ইমন মনে হচ্ছে তার দিকে কোন গ্রিন ফেয়ারি এগিয়ে আসছে,,, ঠোঁটের গোলাপি রং টা যেনো দ্বিগুণ গোলাপি রং ধারন করেছে। গায়ের ফর্সা রং টাও যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেছে। চোখে চোখ পড়তেই মুসকান সরিয়ে নিলো সামনে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ফোন এগিয়ে দিলো।
ইমন মুগ্ধ নয়নে চেয়েই ফোনটা হাতে নিলো।
মুসকান আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না সেখান থেকে চলে গেলো।
ইমনের ঘোর কাটলো মুসকান বলে কয়েকটা ডাক দিলো কিন্তু মুসকান দাঁড়ালো না।

খাওয়া -দাওয়া শেষে বিয়ে পড়ানোও শেষ হলো।
ইমনের মেজাজ বিগরে আছে কিন্তু ব্যস্ততার কারনে কিছু করতে পারছে না। মুসকানের দিকে মাঝে মাঝে কঠোর চোখে তাকাচ্ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। কারন মুসকান ইমনকে বার বার ইগনোর করে যাচ্ছে।
এরকম ব্যবহারের কোন অর্থ খুঁজে পেলো না ইমন তাই তার রাগটা আরো বেড়ে যাচ্ছে।
দাঁড়াও একবার শুধু হাতের কাছে পাই তোমার কি হাল করবো ভেবেও পাবে না। আমার অবাধ্য হয়েছো তবুও চুপ ছিলাম কিন্তু তারপর যা করলে এর জন্য তোমার আজ কি ভোগ করতে হবে কল্পনাও করতে পারবেনা।
বিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যে যার মতো বেরিয়ে পড়লো। ইমন এক বন্ধুর থেকে বাইক নিয়ে তাকে বাসে পাঠিয়ে দিলো।
মুসকান যখনি বাসে ওঠবে ঠিক তখনি হাতটা শক্ত করে চেঁপে ধরলো ইমন। টানতে টানতে খানিকটা দূরে নিয়ে গেলো।
ইরাবতী সবাইকে বলে দিলো মুসকান আর ইমন বাইকে করে বাড়ি যাবে তাই ওদের জন্য দেরী না করতে। সবাই যার যার সিটে বসে পড়লো। গাড়িও স্ট্রাট দিলো।
মুসকান দূর থেকে সেটা দেখে চিৎকার করে ওঠলো।
আরে কি করছো গাড়ি যে চলে গেলো,,, কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়, আরে ছাড়োনা,,,

ইমন হাত ছেড়ে দিলো গম্ভীর গলায় বললো চলে যাক তুমি আমার সাথে যাবে।
না যাবোনা তোমার সাথে আমি। ইমন খানিকটা এগিয়ে এলো কঠোর গলায় বললো কি সমস্যা তোমার? বেশি চেচামেচি না করে বাইকে ওঠো।
আমার কোন সমস্যা নেই আমি তোমার সাথে যাবো না ব্যাস।
ইমন বাইকে বসতে নিয়েও আবার থেমে গেলো।
এক ধমক দিয়ে বললো বেশী বাড়াবাড়ি করোনা মুসকান নয়তো এই অন্ধকারে রেখেই চলে যাবো।
গ্রামে রাতের অন্ধকারে রক্তখেঁকো শেয়াল রা এসে তোমার শরীর থেকে রক্ত শুষে নিবে।
ইমনের কথা শুনে মুসকান ভয়ে ঢোক গিললো। ভয়ে ভয়ে ইমনের একদম কাছে এসে দাঁড়ালো।
ইমনের হাতটা শক্ত করে চেঁপে ধরে বললো আমার খুব ভয় করছে তারাতারি বাড়ি নিয়ে চলো আমায়।
মুসকানের এমন ভয় দেখে ইমন বেশ মজা পেলো তাই বললো নো নো,,,তোমায় তো আমি আমার সঙ্গে নিবো না। তুমি আমার অবাধ্য হয়ে এভাবে বেরিয়েছো তাও বিয়ে বাড়িতে। তার ওপর সারাদিন এতো বার কথা বলতে গেলাম তুমি ভাব দেখিয়ে চলে গেলে। কোন সুযোগ ই দিলে না। ভেবেছিলাম কঠিন শাস্তি দিবো বাড়ি নিয়ে। কিন্তু এখন যখন অন্যভাবে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ পেলাম তাহলে সেই সুযোগ কেনো মিস করবো বলো। তোমায় আমি এখানেই রেখে চলে যাবো তারপর শেয়ালগুলো এসে তোমার রক্ত শুষে নিবে।
মুসকান ভয়ে চোখ বন্ধ করে ইমনকে জরিয়ে ধরে কাঁপতে লাগলো।
না না আমাকে এতো বড় শাস্তি দিওনা প্লিজ।
আমি তোমার সাথে এমন করতে চাইনি। আমি কি করবো বলো তোমার ফোনে হেনার কল করা, ওর সাথে তুমি সকালে দুমিনিট কথা বলেছো এগুলো দেখেই তো আমার খুব কষ্ট হয়েছে। মন টা খুব খারাপ লেগেছে তাই এমন করেছি। তুমি আমাকে বাড়ি নিয়ে তোমার মতো করে যা শাস্তি দিও তবুও আমাকে এখানে রেখে যেওনা। কেঁদে ফেললো মুসকান।
ইমন ভ্রু কুঁচকে ভাবলো তার মানে এই ব্যাপার ওরে পাগলী,,, সত্যি এমন বোকা বউ নিয়ে যেমন ঝামেলা তেমন সুবিধাও বটে ঠিক কেমন শেয়ালের কথা বলে ভয় দেখিয়ে পেটের কথা বের করে নিলাম। মুচকি হেসে ইমন গলাটা কঠোর করে বললো আচ্ছা যাও এতো নির্মন শাস্তি দিবো না । যা দেওয়ার বাড়ি ফিরেই দিবো এবার বাইকে ওঠে বোসো।
ইমন বাইকে ওঠতেই মুসকানও তারাতারি ওঠে বোসলো।
শেয়ালের ডাক কানে ভেঁসে এলো মুসকান কিছু বুঝতে পারলো না। ইমন বাঁকা হেসে বললো দেখেছো শীকার হাতছাড়া হয়েছে বলে শেয়াল গুলো কেমন হিংস্র ভাবে ডাকছে।
মুসকান কেঁপে ওঠলো ইমনকে দুহাতে শক্ত করে জরিয়ে ধরে চোখ দুটে বন্ধ করে বললো তারাতারি এখান থেকে নিয়ে যাও আমায় প্লিজ,,,
ইমন বাইক স্টার্ট দিলো আর মনে মনে হাসতে লাগলো।
মুসকান ইমনকে জরিয়ে তার পিঠে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। ইমন মনের সুখে বাইক চালাচ্ছে আর মুসকানের প্রত্যেকটা শ্বাস -প্রশ্বাস অনুভব করছে। একসময় ধীর গতিতে বাইক চালানো শুরু করলো। অতিরিক্ত বাতাসে মুসকানের ঠান্ডা না লেগে যায়,,,
মুসকান,,,
হুম,,,
এখন ভয় পেতে হবে না আমরা অনেক দূর চলে এসেছি।
শাড়ীর আঁচল দিয়ে নাক, মুখটা ভালো করে ঢেকে নাও আরো দশমিনিট লাগবে যেতে, দ্রুত যেতে হবে রাত হয়ে গেছে অনেক। নাক,মুখ ঢেকে শক্ত করে ধরে বোসো।
মুসকান তাই করলো, কিন্তু ভয় তার মন থেকে গেলো না।

বাড়ি পৌঁছে শাড়ি পালটে তারাতারি দীপান্বিতার কাছে চলে গেলো মুসকান। নতুন বউ এর সব নিয়ম -কানুন পালন করে বাসর ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
সব ভাবীরা পাশেই বসে হাসি তামাসা করতে ব্যাস্ত।
দীপান্বিতা বললো কিরে তুই বাসর ঘরে না গিয়ে আমার পিছনে ঘুর ঘুর করছিস কেনো? মুখ টা এমন লাগছে কেনো তোর?
মুসকান ভয়ে ভয়ে বললো আম্মু আমি আজ তোমার সাথে ঘুমাবো।
দীপান্বিতা ভ্রু কুঁচকে বললো কেনো কি হয়েছে এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? ইমন কিছু বলেছে? রাগারাগি করেছে?
মুসকান কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো আম্মু কবে ঢাকা যাবো আমরা? আমি এখানে থাকবো না।
দীপান্বিতা বললো কি ব্যাপার বলতো,,, এখানে তো তুই ভারী খুশিই ছিলি এখানে ভালো লাগছে এটাও বলেছিস এখন যেতে চাচ্ছিস যে,,,
কি হয়েছে বল আমায়?
মুসকান ভয়ে ভয়ে বললো গ্রামে নাকি রক্ত খেকো শেয়াল আছে, ওগুলো নাকি মানুষের রক্ত খেয়ে নেয়।
দীপান্বিতা অবাক হয়ে হেসে ফেললো। মুসকানের দুগালে ধরে বললো তা মা এই কথা তোমাকে কে বলেছে ইমন,,,
মুসকান মাথা নিচু করে বললো হুম।
দীপান্বিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইমন এসে পড়লো।
কাকি কাল বিকেলেই আমি ঢাকা ফিরছি বাবা যেহেতু কাল যেতে পারছে না তাই আমাকেই যেতে হচ্ছে। অফিসে যেতে হবে জরুরি মিটিং আছে কালকের পরেরদিন।
মুসকান ও যাচ্ছে আমার সাথে সব গুছিয়ে দিও।
ইমন কথা গুলো বলেই চলে গেলো।
দীপান্বিতা বললো দেখেছিস তুই চাইতে না চাইতেই ইমন তোকে নিয়ে ঢাকা ফিরছে,,,
যা যা নতুন বউ এর কাছে যা আমার কাজ আছে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে হবে সকলের। তুই আমার সাথেই ঘুমাস আজ। কিন্তু ইমন যদি কিছু বলে তখন কিন্তু আমার কিছু বলার থাকবে না।

বারোটার পর সবাই নিপু আর নিপুর বউ পৃথুলা কে ছেড়ে যে যার মতো চলে গেলো।মেয়ে রা মেয়েদের সাথে ছেলেরা ছেলেদের সাথে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুসকান চট করে দীপান্বিতার কাছে চলে গেলো।
এই দিকে ইমন আগেই বলে দিয়েছে তার ঘরে যেনো কেউ না ঘুমায় একটা রুম বাদ দিলে কোন অসুবিধা হবেনা। দিপু বললো ভাইয়া আমি তাহলে তোমার সাথে ঘুমাই। ইমন কিছু বলার আগেই দিপক এসে দিপুর মাথায় থাপ্পড় বসালো। দিপু পিছন ঘুরতেই দিপক বললো চল আমার সাথে ঘুমাবি বলেই দিপুকে টেনে নিয়ে গেলো।
ইমন দীপান্বিতা কে ফোন করে বললো মুসকান কে পাঠিয়ে দিতে।
কিন্তু মুসকান জেদ করেই বসে রইলো সে যাবেনা।
ইমন ফোনটা আবার ও পকেট থেকে বের করে হেনার নাম্বারে কল দিলো।
হেলো,,,
হ্যাঁ। এই শালা ফোন করার আর সময় পাস না। তোর জন্য আমার বউ মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ফোন দিছোস ভালো কথা বউ এর নাম্বার দিয়ে ফোন দেস কেন,,,তোর নাম্বার নাই।
আরে ভাই কি বলস তোর বউ রাগ করছে,,,
কিন্তু ভাই এই দিকে তো নিজের বউ কে সামলাতে পারছিনা রাত দিন মায়ের সাথে একবার, আমার সাথে একবার পায়ে পা লাগিয়ে ঝগরা করছে। আমার ফোনটা অবদি নিজের কব্জায় নিয়ে নিছে।
অনেক রিকোয়েস্ট করছি ভাই তবুও ফোন দেয়নাই আমারটা না দিয়ে নিজের টা দিছে।
তার নাকি আমার ফোন খুব পছন্দ হইছে।

তোর সংসারে অশান্তি আমার সংসারে কেনো নিয়ে আসতে চাস। বউ কে টাইট দে নয়তো তোর কপালে দুঃখ আছে। একটা মেয়েকে যদি টাইট ই না দিতে পারোস কিসের পুরুষ মানুষ তুই। শুধু মেয়ে না বিয়ে করা বউ এমন শিক্ষা দিবি জীবনে চোখ তুলে তাকাবে না। আর নয়তো বউ এর হাতে মাইর খাইয়া মর । এই নাম্বার দিয়ে আর ফোন দিবি না। আমার বউ কে এখন ঠিক করতে হবে রাখ ফোন। এক ধমক দিয়ে ফোন রেখে দিলো ইমন।
রুম থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলো দীপান্বিতাদের ঘরে। কয়েকবার টোকা দিতেই দীপান্বিতা দরজা খুলে দিলো।
ইমন ঘরে গিয়ে দেখলো মিম আর মুসকান একসাথেই ঘুমিয়েছে। দীপান্বিতা বললো ঘুমিয়ে পড়েছে তো। থাকুক এখানেই তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।
ইমন বললো কাকি চোখ দুটো বন্ধ করো,,,
দীপান্বিতা কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এমন কথা শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না সে।
ইমন আবার বললো চোখ দুটো বন্ধ করো নয়তো মেয়ে জামাইয়ের প্রেম দেখো,,, বলেই চট করে মুসকান কে কোলে তুলে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।
দীপান্বিতা লজ্জা তো দূরের কথা ছেলেটার পাগলামো দেখে হাসতে হাসতে পেট ধরে বসে পড়লো ।

ইমন রুমে গিয়ে বেশ জোরেই বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো। ঘুম ভেঙে গেলো মুসকানের সেই সাথে ভয়ে শেয়াল শেয়াল বলে লাফিয়ে ওঠলো।
ইমন বাঁকা হেসে পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি সামনে ধরলো। ইমনকে দেখে মুসকান ভয়ে ঢোক গিললো। তুঁতলিয়ে বললো তুমি,,,
ইমন ইশারা করলো পানিটা খেয়ে নিতে মুসকানের সত্যি গলা শুকিয়ে এসেছে তাই পানিটা খেয়ে নিলো।

ইমন শার্ট খুলতে খুলতে বললো বেশী বোঝা আমি একদমই পছন্দ করিনা। আর তুমি অল টাইম বেশীই বোঝ। নাম্বারটা হেনার হলেও ফোন করেছিলো সুমন,,,
মুসকান ইমনের দিকে তাকালো,,,
ইমন আঙুল তুলে ইশারা দিয়ে বললো চোখ নামিয়ে।
মুসকান মাথা নিচু করে ফেললো।
তোমাকে আমি বলেছিলাম হেনার সাথে সুমনের বিয়ের ব্যাপারে। ওরা স্বামী স্ত্রী আর হেনা যে কতোটা সুবিধার মেয়ে সেটা নিশ্চয়ই এতোদিনে জানা হয়েছে।
মেয়েটা বেশ পাজি সারাদিন ঝগরা করে।
সুমনের পরিবারে ওর মা ছারা কেউ নেই ছোট বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে। ওর মায়ের মতো ভালো মানুষ আর একটা হয় না সেই মানুষ টার সাথেও পায়ে পা লাগিয়ে ঝগরা করে সারাদিন।
ঝগরার করেই সুমনের ফোন নিয়ে গেছে। আর ওরটা সুমনকে দিয়েছে। যেহেতু বিয়েটা আমিই দিয়েছি ওদের, ওদের সব সমস্যাতে আমাকেই আগে জানাবে। তাই সুমন হেনার নাম্বার থেকেই আমাকে ফোন করেছে।

মুসকান চুপ চাপ কথা শুনছে আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে,,,
আজ যে আমার কি হবে প্লিজ আজকের জন্য বাঁচিয়ে দাও আমায় প্লিজ।
ইমন শার্ট টা রেখে বিছানায় এগিয়ে এলো। তারপর মুসকানের দিকে এগিয়ে এসে বললো বলেছিলাম ওভাবে না সাজতে। সাধারন ভাবেই বিয়ে বাড়ি যেতে বলেছিলাম। কিন্তু কথা শুনার মানুষ তুমি না।
বিয়ে বাড়িতে তিনজন ব্যাক্তি তোমার দিকে কুনজরে তাকাচ্ছিলো এক লিমন,দুই শুভ, তিন পৃথুলার বড় ভাই পারভেজ।
মুসকান ইমনের দিকে তাকালো ধীর গলায় বললো কই আমিতো সেরকম কিছু দেখিনি।
ইমন দাঁতে দাঁত চেপে বললো তাহলে কি আমি মিথ্যা বলছি,,,
তোমার দিকে কে কখন কি নজরে তাকাচ্ছে সেটা আমার চোখ কখনোই এড়ায় না মুসকান।

মুসকান কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো আমার কি দোষ এতে,,,
হ্যাঁ তোমার দোষ নেই তাইতো আর একটা দিন ও এখানে রাখবো না তোমাকে। বিয়ের ঝামেলা শেষ কাল ই চলে যাবো এখান থেকে। পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে বাসায় ফিরে মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। আমি আম্মু দের সাথে যাবো তুমিতো ওখানে গিয়ে কাজই করবে একা একা আমি কি করবো।
ইমন গা এলিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
এসব কথা বলে কোন লাভ নেই, যা বলেছি তাই হবে। মুসকান মন ভারী করেই বসে রইলো।
ইমন মুসকানকে একটানে শুইয়িয়ে মুসকানের ওপর আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো মন খারাপ করে লাভ নেই।
যা বলছি তাই হবে,,,
ঝিনুকের ভেতর মুক্ত যেমন সংরক্ষিত আমার কাছেও তুমি ঠিক তেমনটাই সংরক্ষিত থাকবে।

ইমনের মুখের শ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই মুসকান মুখ ঘুরিয়ে নিলো। তার শ্বাস ও ঘন হয়ে এলো।
ইমন ভারী আওয়াজে বললো- তোমায় কি করি বলোতো,,, মাঝে মাঝে মেজাজ এমন ভাবে বিগরে দাও ইচ্ছে করে,,, বলেই মুসকানের মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরলো।
মুসকান খাঁমচে ধরলো ইমনের উন্মুক্ত পিঠে,,,
ঠোঁট ছেড়ে ইমন মুসকানের দিকে তাকালো বাঁকা হেসে বললো- আজ কিন্তু তোমায় অসাধারণ লাগছিলো। মুসকান লজ্জায় লাল হয়ে গেলো চোখ দুটো বন্ধ তার। অমন লজ্জা দেখে ইমন আরো দ্বিগুন ভাবে মুসকানের মাঝে ডুবে গেলো।
প্রায় ছমাস পর ইমন মুসকান কে এভাবে কাছে টেনে নিলো।

ভোরের দিকে ইমনের ঘুম ভেঙে গেলো। মুসকানকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ঘুমিয়েছিলো সে। ঘুম ভাঙতেই মুসকানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু মুসকান আরো গভীর ভাবে তাকে জরিয়ে ঘুমালো।
ইমন মুসকানকে খুব কষ্টে আলতো করে ধরে ছাড়িয়ে গা ঢেকে দিলো।
নিজে ওঠে বাথরুম গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিলো।
রুমে এসে ফোনটা হাতে নিতেই কয়েকটা মিসড কল দেখতে পেলো। তারাতারি ডায়ল লিষ্টে গিয়ে নাম্বারটায় ফোন করলো।
সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হলো।
আসসালামু আলাইকুম,,, কেমন আছেন?
ভালো নাই বাবা,,, কতোদিন হয়ে গেলো তোমায় দেখিনা বাবা।
ইমন খুবই নমনীয় ভাবে বললো দুঃখিত মা,,, কাজের চাপে পরিবারের নানা রকম ঝামেলায় আপনার সাথে দেখা করা হয়ে ওঠেনি।
ঠিকাছে বাবা সমস্যা নেই,,,তা বাবা কবে আসবা এখানে?
খুব শিঘ্রই আর আপনার জন্য অনেক বড় উপহার নিয়েও আসবো। আপনার এতোদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে এবার।
মহিলাটি বেশ খুশি হয়ে বললো বাবা আমার মা কেমন আছে??
ইমন মুসকানের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললো আপনার মা খুব ভালে আছে। আশা করি খুব তারাতারি আরো অনেক অনেক ভালো থাকবে।
তার না পাওয়া সব তাকে আমি ফিরিয়ে দিবো।
বাবাগো তুমি তো তাকে কোন কিছুরই অভাব রাখোনি,,, অনেক ভাগ্য করে তোমার মতো একজন জীবন সাথী পেয়েছে সে।
ইমন লজ্জা পেয়ে এক হাতে মাথা চুলকিয়ে বললো তবুও যা বাকি আছে সব পাবে সে।

আচ্ছা বাবা রাখি।
আচ্ছা ভালো থাকবেন। যে কোন সমস্যা হলে সাব্বির কে আগে জানাবেন।
আচ্ছা,,,

সকাল নয়টা বেজে গেছে বাড়ির সবাই ওঠে গেছে। নতুন বউ এর সাথে সবাই হাসি ঠাট্রা করছে।
ইরাবতী বললো কি ব্যাপার সবাই এখানে মুসকান কই। এশা যাও তো মুসকান কে ডেকে আনো।
এশা মুসকানকে ডাকতে যেতেই ইমন রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো এশা,,, মুসকানের শরীর টা ভালো নেই জ্বর হয়েছে। দ্বীপান্বিতা কাকি কে বলো কিছু খাবাড় পাঠিয়ে দিতে।
এশা ভ্রু কুঁচকে চলে গেলো।

চলবে…….

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here