ফানাহ্_🖤 #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান #পর্বসংখ্যা_০৩

#ফানাহ্_🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_০৩

-নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে। কি করেছিস বল,কি করে তুই রাজকে ফাসিয়েছিস? কেন ও তোকে এক রাতের মধ্যে বিয়ে করেছে বল?

তিয়াসা এক হাতে মোহরের বাহু চেপে ক্রমাগত গর্জে উঠছে, মিসেস আম্বি এক পাশে দাঁড়িয়ে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখছে তা।

-তিয়াসা, ছাড়ো ওকে!

তীক্ষ্ণ পৌঢ়া কণ্ঠে তিয়াসা দরজার দিকে তাকালো। মোটা পাড়ের সাদা রঙের জামদানী পরিহিত মহিলাটি এগিয়ে এলেন, চোখে চিকন সোনালী ফ্রেমের চশমা। বৃদ্ধা বয়সের ভারে ঝুকে গেলেও চোখে মুখে স্পষ্টত আভিযাত্য, সম্ভ্রমের ছাপ হুট করেই তিয়াসা শান্ত বনে গেল। বৃদ্ধার আগমনে বেশ ভড়কে গেছে তা চেহারার অস্বস্তিতে স্পষ্ট। পায়ের স্যান্ডেলের খটখট শব্দ করে এগিয়ে এলো। মোহরের দিকে এক নজর তাকিয়ে ক্রুদ্ধ চোখে তাকালো তিয়াসার দিকে

-তুমি ওর গায়ে হাত তুলেছো?

তিয়াসা প্রত্যুত্তরে চুপ রইলো। অশান্ত চেহারায় আম্বির দিকে তাকালো একবার। বয়স্কা কণ্ঠস্বর মুহুর্তেই তেঁতে উঠলো,

-তোমাকে প্রশ্ন করেছি আমি? তুমি ওর গায়ে হাত তুলেছো?

পৌঢ়া কণ্ঠের উচ্চশব্দে কেঁপে উঠলো তিয়াসা। আমতা-আমতা করে বলল

-হ্ হ্যাঁ, মানে ও

-চুপ করো, তোমার সাহস কি করে হলো ওর গায়ে হাত তোলার, ভরা আসরে মেহরাজ কি বলেছে শুনতে পাওনি তুমি? ও যে মেহরাজের বিয়ে করা বউ এটা কি তুমি শুনতে পাও নি? কোন সাহসে তুমি এ বাড়ির বউয়ের গায়ে হাত তুলেছো!

-কিন্তু দিদা মেহরাজ আমার, ওর আমার হওয়ার কথা ছিল

-কথা ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। ভাগ্যে যা স্থির ছিল তাই হয়েছে। তা বলে তুমি ওর গায়ে হাত তুলেছো? আর আম্বি, তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি। নিজের ছেলে বউকে দাঁড়িয়ে থেকে মার খাওয়াচ্ছো তুমি?

-ও আমার ছেলের বউ না। মানি না আমি,ওকে আমার বাবুর বউ মানি নাহ। ও একটা ঠক, ছলচাতুরী করে বিয়ে করেছে আমার ছেলেকে

-তোমার ছেলে নিজে মুখে বলেছে ও সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে, তবুও এ কথাটা কিভাবে বলছো

-হ্যাঁ বলছি মা,বলছি। আমার ছেলের বউ হয়ে তিয়াসার আসার কথা ছিল আর ওই হবে। বাকি রইলো এই মেয়ে,এই দু টাকার মেয়েকে আমি দুদিনে দূর করবো আমার বাবুর জীবন থেকে

অশ্রুসিক্ত গলায় এক প্রকার চেঁচিয়ে বলল আম্বি, মোহরের দিকে বিতিষ্ণা ভরা দৃষ্টিতে একবার তাকিয়েই গটগট করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। আম্বির পেছন পেছন তিয়াসাও বেরিয়ে যায়।
মহিলা ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে এগিয়ে আসে মোহরের দিকে।
ও এক কোণায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠোঁটের কোণায় এক ফোঁটা রক্ত লেগে আছে।
মোহরের হাত ধরে এগিয়ে এনে খাটের উপর বসালো মহিলা, নিজেও বসলো পাশে, ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা রক্ত হাতের আঙ্গুলে মুছে দিয়ে বলল

-জ্বলছে?

ঘনঘন মাথা নাড়িয়ে না বলল মোহর। মহিলা দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা কাজের মেয়েটিকে কিছু একটা ইশারা করতেই বেড়িয়ে গেল সে। মহিলা মোহরের থুতনিতে হাত রেখে বলল

-মোহর তাই তো?

আবারও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো মোহর। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মোহরের দিকে, গভীর ভাবনায় খানিক মত্ত থেকে, ধাতস্থ করলো নিজেকে। ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো, যথাসম্ভব গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-আমার নাম শাহারা, মেহরাজের দিদা, মানে তোমার দাদিশ্বাশুড়ি। তুমিও আমাকে দিদা বলেই ডাকবে।

খানিক দম নিয়ে আবারও বলতে আরম্ভ করলো

-আমি জানি তুমি শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো ভাবেই সুস্থিত নেই। আর না থাকা টাই স্বাভাবিক। তবে এদের এহেন আচারণে একেবারেই ভেঙে পরো নাহ। তিয়াসার সাথে মেহরাজের পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক করে রাখা। ছোট থেকেই পছন্দ করে মেহরাজকে, মেয়েটা একটু উদ্ভট স্বভাবের তাই এরূপ দুর্ব্যবহার করেছে। আর আম্বির কথা বললে মেহরাজ ওর ভীষণ আদরের, একমাত্র দুর্বলতা মেহরাজ ওর। আম্বির কাছে সমস্ত দুনিয়া একদিকে আর মেহরাজ একদিকে, আদরের ছেকের এমন অকস্মাৎ কাজে অনেক বড় ধাক্কা পেয়েছে, তাই এমন করছে ও ঠিক হয়ে যাবে।

বলতে বলতে কাজের মেয়েটি ঘরে ঢুকলো। হাতে একটা ফার্স্ট এইড বক্স, আর কয়েকটা শাড়ি। শাহারা বেগম বক্স টা হাতে নিয়ে নিজ হাতে মলম লাগিয়ে দিল মোহরের ঠোঁটে। ব্যস্ত গলায় বলল

-বাবা কোথায় করেন তোমার?

-ছয় মাস আগেই মারা গেছে

হুট করে শাহারার হাত থেমে গেল। অদ্ভুত চোখে তাকালো মোহরের নির্জিব চেহারায়। মেয়েটা খুব বেশি ফর্সা না, শ্যামলা আর ফর্সার মাঝামাঝি একটা গড়ন, চেহারার ক্লান্তি বিধ্বস্ততাকে ছাড়িয়ে অদ্ভুত এক মায়া ঝিলিক দিয়ে উঠছে।
স্থির তাকিয়ে থেকে আবারও জিজ্ঞাসা করলো

-মা?

-আজ সকালে মাটি হয়েছে

পরপর যেন ঝটকা খেলো শাহারা, অন্যরকম শান্ত গলায় মেয়েটির বলা শব্দে ভেতরটা মুচড়ে উঠলো। সামনে বসে থাকা মোহরকে পাথরমূর্তির ন্যায় মনে হলো শাহারার, কথাগুলো যেন যন্ত্রমানবের মতো বলল। বাতাবরণ তমসাচ্ছন ভারী হয়ে আছে। নিশ্চুপ পরিবেশে শুধু মোহরের চাপা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ কানে এলো শাহারার, যেন এক অনাসৃষ্টি যন্ত্রণার আভাস ছুঁয়ে দিল শাহারা বেগমকে। কতটুকু বয়স হবে এই মেয়ের? উনিশ মি বিশ? এতটুকু মেয়ের দীর্ঘশ্বাস এতটা ভারী হতে পারে!
মোহর বরাবরের মতোই নির্বিকার বসে রইলো। এসে থেকে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া ও দেখায়নি।
শাহারা বেগম গলা খাকারি দিয়ে বলল

-ওর নাম নাজমা, তোমার যেকোনো দরকারে ওকে বলবে। আর আমি তো আছিই। আপাতত পরনের কাপড় পালটে খাবার গুলো খেয়ে নাও

মোহর বাধ্যগত মেয়ের মতো, সম্মতি দিলো। শাহারা ওর হাতে একটা শাড়ি তুলে দিয়ে বলল

-গোসল করে এটা পরে নাও

চুপচাপ শাড়িটা হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো মোহর। শাওয়ার চালু করে নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। পানির ফোয়ারার সাথে যেন দুঃখ কষ্টগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে মোহরের সমস্ত শরীরে। পানিবিন্দু গুলো বিষের মতো ঢুকে যাচ্ছে। এখনো নিজের অবস্থান টা উপলব্ধি করে উঠতে পারছেনা ও, কি থেকে কি হলো। নিজের ধ্বংসাত্মক জীবনের সাথে আরেকটা মানুষকেও জুড়ে নিলো। কার সংসারে এসে পড়লো, সম্মান বাচাতে যে মানুষটা ওকে বিয়ে করেছে সে কি আদও ওকে বউ হিসেবে মানবে? লোকটাকে শুরু থেকেই কেমন দূর্ভেদ্য ব্যক্তিত্বের মনে হয়। কথা,চাল চলন, দৃষ্টি সবকিছুতেই যেন কেমন একটা ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত কাজ করে। অদ্ভুত, প্রচন্ড অদ্ভুত লাগে মানুষটিকে। অজান্তেই গাল বেয়ে অনবরত অশ্রুধারা বয়ে গেল। পানির প্রবাহের ঝিনঝিন শব্দের সাথে শোনা গেলো আকুতি ভরা আর্তনাদ মিশ্রিত কণ্ঠস্বর

-তুমি কেন আমায় একা ফেলে চলে গেলে বাবা। তুমি ছাড়া আমাকেও কেও বোঝে নাহ। তুমি থাকলে তো আজ এতো কিছু হতো না। তুমি কেন চলে গেলে বাবা মাও তো চলে গেল আমায় ছেড়ে, সাথে দিয়ে গেল নিজের মৃত্যুর দায়ভার যা আমৃত্যু দোষী হিসেবে বয়ে বেড়াতে হবে আমার। আমি কোথায় এসেছি বাবা, এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, তুমি আমায় নিয়ে যাও তোমার কাছে নিয়ে যাও বাবা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, খুব!

……………..

দিবাভাগ গড়িয়ে প্রষেদকাল নেমেছে ধরণীতে। মাগরিবের নামাজ পরে খাটের এক কোণায় বসে আছে মোহর, শাহারা বেগম যাওয়ার পরে আর কেও আসেনি এ ঘরে। প্রাচুর্যে সজ্জিত ঘরটাকে কেমন কারাগারের মতো মনে হচ্ছে মোহরের, প্রতিটা নিঃশ্বাস ফেলতে বুক চিরে যাচ্ছে ওর। এখানে কেন এলো, কোথায় এলো। বারংবার মনে হচ্ছে খুব ভুল জাগায় এসে পড়েছে ও,এখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে ও। এখানে কিছুতেই থাকতে পারবে না। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো মোহর, বক্ষের তীব্র যন্ত্রণায় চাপা স্বরে কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।

চাপা একটা আর্তচিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো মোহরের, ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। ধাতস্থ হতে অনেকটা সময় লেগে গেলো। সন্ধ্যায় যেভাবে শুয়েছিল ঠিক সেভাবেই পরে আছে দীর্ঘক্ষণ একপাশ হয়ে শুয়ে থাকার দরুন ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথার আবির্ভাব হয়েছে। হুট করে আবারও কেমন চিৎকার ভেসে আসলো মোহরের কানে,কেমন অদ্ভুত আওয়াজ। মোহরের ষষ্টইন্দ্রীয় সজাগ হয়ে উঠলো, বিছানা থেকে পা নামিয়ে মৃদুমন্দ পায়ে এগিয়ে এলো দরজার দিকে। আস্তে আস্তে দরজা টা খুলে বাইরে এলেও ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই ঠাওর করতে পারলো না। রাত ঠিক কয়টা বাজে মোহর আন্দাজেও ঠাওর করতে পারলো নাহ। তবে পুরো বাড়িটা জুড়ে পিনপতন নীরবতা। বৃহৎ আকৃতির চকচকে দেওয়াল গুলোও নিকষ অন্ধকারে অদ্ভুতুরে লাগছে। ঠিক তখনি আবারও সেই আর্তনাদ কানে এলো মোহরের, স্পষ্ট শুনতে পেরেছে মেয়েলি কাকুতি, কাওকে তীব্র আঘাত করলে যেমন গর্জন করে ওঠে ঠিক তেমনি শোনাচ্ছে আওয়াজ টা। মোহরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। অপ্রসিদ্ধ ভয়ে সিটকে গেল সমস্ত শরীর। কিন্তু তীব্র কৌতুহল অনুসন্ধিৎসা দমিয়ে রাখতে পারলো নাহ। অন্ধকার হাতড়ে এগোতে লাগলো, কাওকে চাবুক দিয়ে আঘাত করলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমনই শব্দ পরপর দুবার কানে এলো।
কম্পন ধরা পায়ে আস্তেধীরে এগোতে লাগলে অসাবধানতা বশত অন্ধকারে হাতে লেগে কিছু একটা ধপ করে পরে গেলো, নিস্তব্ধতা জুড়ে বাড়িতে এই ছোট্ট শব্দটাও ঝনঝনিয়ে উঠলো দেওয়ালে দেওয়ালে। তবুও মোহর এগোতে লাগল এক পা এক পা করে, সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলেই পেছন থেকে একটা হাত ঝাপটে ধরলো মোহরকে, এক হাতে কোমর পেঁচিয়ে ধরে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরলো। অকস্মাৎ আক্রমণে সারা দেহ অসার হয়ে এলো মোহরের, দূর্বল হাত তুলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ছাড়িয়ে নেওয়ার৷ কিন্তু প্রচন্ড শক্তিশালী, দৃঢ় বন্ধন এক চুল আলগা করতে পারলো না৷ গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে থাকলো। ভয়,উৎকণ্ঠা, উত্তেজনায় মুখ জিহ্বা, ঠোঁট শুকিয়ে এলো। এক চুল কথা দূর, যেন তীব্র জেরোস্টোমিয়ার প্রকপে টু পরিমাণ শব্দ উৎপন্ন করতে ব্যর্থ হলো কণ্ঠনালী। অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সমস্ত শরীরের শক্তি ফুরিয়ে গেল, শরীর জুড়ে শীতল স্রোত বয়ে হুট করেই ঠান্ডা হয়ে গেল সব, আস্তে আস্তে নিকষ অন্ধকারে নির্জিব চোখ জোড়াও বুজে এলো।

প্রভাত বেলা,চারিদিক উজ্জ্বল আলোয় চিকচিক করছে, দক্ষিণের বিশালাকৃতির জানালা। তার উপরে আবৃত পাতলা পর্দা, সেই পর্দা ভেদ করে আঁজিষ্ণুর উপর নরম আলো পরতেই কুচকে এলো নেতিয়ে পরা হরিণী চোখ জোড়া। অমসৃণ, রুক্ষ শুষ্ক ঠোঁট জোড়ায় বিরক্তির ভাঁজ পরলো একটু। একদম ধবধবে ফর্সা না হলেও বেশ উজ্জ্বল গায়ের বরন। কপালের মাঝ বরাবর কালো একটা দাগ, হয়তো জন্মদাগ। তবে সেটা যেন মায়াভরা মুখ খানার সৌন্দর্যের বিস্তার আরও কয়েক গুণ বাড়িয়েছে।
সূরেত প্রতাপ ধীরে ধীরে বেড়ে উজ্জ্বল আলোতে ঘুম ভেঙে গেলো মোহরের। আধবোজা চোখে পাশ ফিরতেই সারা শরীরে ভীষণ যন্ত্রনাভূত হলো।রাতের কথা মনে পড়তেই এক ঝটকায় চিৎকার করে উঠে বসলো, থরথর করে কাঁপছে সারা শরীর । ঠিক কাছেই কারো উপস্থিতি অনুভব করতেই দিকবিদিক না ভেবে মানুষটার বুকে হুড়মুড় করে ঝাপিয়ে পড়লো, হাউমাউ করে কেঁদে বলল

-ও ওখানে কেও ছিল, কাওকে মারছিল। আমি স্পষ্ট শুনেছি। আমাকে আমকেও কেও মুখ চেপে ধরেছিল

-শান্ত হন, এখানে কেও নেই

-আমি শুনেছি,ছিল কেও ধরেছিল আমায়

-কেও ধরেনি, দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। আপনি নিজের বিছানাতেই ছিলেন

ভরাট আম্ভরিক কণ্ঠে হুশ ফিরলো মোহরের, নিজের অবস্থান উপলব্ধি করতে পেরে ছিটকে সরে গেলো। পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টি মেলে তাকালো খাটের একদম সাথ ঘেঁষে চেয়ারে বসে থাকা লোকটার দিকে। সকালের রোদ মুখে উপচে পরে ধূসর বর্ণা অদ্ভুত চোখ জোড়া চিকচিক করছে।
মেহরাজের নিগূঢ় দৃষ্টি তখন মোহরের দিকে, নিজের দিকে তাকিয়ে হকচকিয়ে পরনের পরিধেয় সুস্থিত করলো। নিজেকে এমন অপ্রিতিকর পরিস্থিতিতে একটা পুরুষের সামনে দেখে অপমানিত বোধ করলো, তবুও ধীমি গলায় বলল

-দুঃখিত, আমি বুঝতে পারিনি

-আপনি কি সত্যিই এতো ভালো নাকি ভালো সাজার অভিনয় করছেন?

মেহরাজের কটাক্ষ বোধগম্য হলো না মোহরের। কপালে ভাঁজ ফেলে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো। মেহরাজ তার কুচকানো ভ্রুদ্বয় সটান করে বলল

-বিয়েটা যেহেতু হয়েছে তাই রীতিমতো কাল আমাদের বাসর ছিল। অথচ কাল এ বাড়িতে এসে থেকে আমাদের দেখা পর্যন্ত হয়নি। বিয়েটা যেহেতু স্বেচ্ছায় করেছি সমস্ত দায়ভার ও সইচ্ছায় ই নেওয়া উচিত। তো বিয়ের রাতে আপনার বর আপনাকে একা ফেলে রাখলো, অথচ আপনার কোনো অভিযোগ নেই?

মোহরের কপালের ভাঁজ প্রসারিত হলো। দৃষ্টি স্পষ্ট, দৃঢ় করে বলল

-অভিযোগ তার কাছে করতে হয় যে নিজের মানুষ। জোর করে সম্মান বাচাতে, বা দায়বদ্ধতা নিতে বিয়ে করলেই স্বামী-স্ত্রী হওয়া যাইনা রীতি রেওয়াজ তো দূর। কাল সেই পরিস্থিতিতে আপনি আমায় গ্রহণ না করলে আজ আমার অবস্থান কোথায় হতো আমিও জানি নাহ
আপনি আমার জন্য যা করেছেন তাই অনেক, আপনার থেকে আর কোনো ভাবেই আশাবাদী নই আমি। বিয়েটা শুধুই প্রতিকূল পরিবেশে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা মাত্র।

মোহরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেলে শান্ত ভাবে চাইলো মেহরাজ। কোনো উত্তর হীনা উঠে দাঁড়ালো, থমথমে গলায় বলল

-তৈরী হয়ে নিচে আসুন

বলেই পা বাড়ালে, মোহর কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও, স্বাভাবিক গলায় বলল

-শুনুন?

পা থামিয়ে দাঁড়ালো মেহরাজ, দু’হাত পকেটে গুঁজে, ঘাড় ঘুরিয়ে প্রচন্ড শান্ত গলায় বলল

-রুদ্ধ, ইউ ক্যান কল মি রুদ্ধ!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here