ফানাহ্_🖤 #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান #পর্বসংখ্যা_০২

#ফানাহ্_🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_০২

প্রচন্ড জোরে গাড়ির ব্রেক কষার দরুন তাৎক্ষণিক ধ্যান ভাংলো মোহরের। চোখ খুলে তাকিয়ে পাশে ফিরতে দেখল তার পাশে বসে থাকা লোকটি গাড়ি থেকে নেমে গেছে, মোহরের ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমানিত করে গাড়ির দরজা না খুলেই বাড়ির ভেতর হাঁটা ধরলো, মোহর তাতে অবশ্য দুঃখ পাইনি। কোনো রকম প্রতিক্রিয়া ছাড়াই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।
সহসা সবকিছু যেন থমকে গেল, ধীর গতিতে চোখের পলক ফেলল দুবার, মোহরের সম্পূর্ণ সজাগ দৃষ্টি তখন স্থির নেত্রে আটকে আছে সামনের দোতালা বাড়িটার দিকে, আরেকটু এগিয়ে আলিসান গেইটের পাশে লাগানো বর্গাকৃতির কালো বর্ণের নেমপ্লেটের দিকে এক নজর তাকালো, চিকচিকে রূপালী বর্ণের অদ্ভুত একটা হরফে লেখা ‘ Abraham Mansion ‘।
সামনের সউচ্চ আলিসান বাড়িটার দিকে তাকিয়ে নাজুক দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে মৃদুমন্দ পায়ে এগিয়ে গেল।
অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে লোকটা, মুহুর্তের জন্য ধক করে উঠলো মোহরের, রোমন্থন গতিতে এগিয়ে যেতেই দূর্বল হাতের কবজিটা মুঠোবন্দি হলো প্রচন্ড দৃঢ় এক মুষ্টিতে। যেন একটু আলগা হলেই হারিয়ে যাবে।
তর্জনী তুলে দরজার বেল বাজালে অবিলম্বেই খুলে গেলো বৃহৎ আকৃতির কাঠের দরজাটা,যার সামনে দাঁড়ালে মানুষকে নেহাৎ ছোট্ট একটা বাচ্চা লাগবে। গটগট পায়ে মোহরের হাত ধরে ঘরে ঢুকতেই আচানক কেও ঝড়ের বেগে এসে ঝাপটে পরলো সেই ব্যক্তিটির বুকে যার নামে কিছুক্ষণ আগেই কবুল পরেছে মোহর।

-রাজ! রাজ কোথায় ছিলে তুমি সারারাত,যানো কত টেনশন হচ্ছিলো। আংকেল আন্টি, গ্র‍্যানি, মম, ড্যাড সবাই কত টেনসড ছিল। এ্যান্ড আই কান্ট স্লিপ হোল নাইট, আই ওয়াজ সো ওয়ারিড ফর ইউ। বলোনা কোথায় ছিলে তুমি?

হোক সদ্য বিয়ে করা, তবুও নিজের স্বামীর বুকে অন্য কাওকে জড়িয়ে থাকতে দেখে কেও সহ্য করতে পারবে নাহ। কিন্তু মোহরে কোনো প্রতিক্রিয়া হলো নাহ, ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো নির্জীব হয়ে।
দুহাতে সরিয়ে দিল লেপ্টে থাকা মেয়েটিকে বুক থেকে, সকলের কৌতুহলী দৃষ্টি মোহরের হাতে আবদ্ধ থাকা রাজের হাতের দিকে।

-কাল সারারাত কোথায় ছিলে মেহরাজ? তোমাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল নাহ, কাল সকালে বেরিয়েছ অথচ একবার বাড়িতে ইমফর্ম করার প্রয়োজন বোধ করোনি? সকলে কতটা চিন্তিত ছিল তুমি কি বুঝতে পারছ?

উপস্থিত মধ্যবয়স্ক লোকটার প্রশ্নেও কোনো উত্তর দিল না মেহরাজ, তবে ততক্ষণে মাঝবয়েসী একটা মহিলা এগিয়ে এসেছে। চোখ মুখ ফোলা ফোলা, অবিন্যস্ত চেহারা তার। দেখেই মনে হচ্ছে কাল সারারাত হয়তো ঘুমাতে পারেনি। তিনি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে এগিয়ে এসে ঝাপটে ধরলো মেহরাজ কে,ওর গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে কান্নামিশ্রিত গলায় বলল

-মেহরাজ বাবা, কাল সারারাত কোথায় ছিলি তুই? মায়ের জন্যে কি তোর এতটুকুও চিন্তা হয়না বল? তুই জানিস না তুই বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত আমি ঘুমাতে পারিনা, তাও কেন বাড়িতে ফিরিস নি। আমি চিন্তায় ম’রে যাচ্ছিলাম

বলে এলোমেলো ভাবে মেহরাজের গালে, হাতে, বুকে হাত ছুঁয়ে দিল। দুহাত গালে রেখে লম্বা শরীরের মেহরাজের মুখ এগিয়ে এনে চুমু দিয়ে বলল

-সে যাই হোক, আমার মানিক বাড়িতে ফিরেছে আর কিচ্ছুটি চাইনা আমার। তুই আই বাবা সারারাত নিশ্চয় কিছুই খাসনি

বলেই মেহরাজের হাত ধরে এগিয়ে নিতে লাগলে গম্ভীরমুখের লোকটি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল

-দাঁড়াও আম্বি! সবসময় ছেলেকে নিয়েই পাগল হয়ে যাও,আশেপাশের কোনো কিছুই কি তোমার চোখে পরে না?

তড়িৎ সচকিত হলেন যেন আম্বি। ঘাড় ঘুরিয়ে মেহরাজের দিকে তাকিয়ে দেখল সে এখনো আগের মতোই নিশ্চুপ, নিরুত্তর দাঁড়িয়ে। প্রচন্ড গাম্ভীর্যে ভরা মুখ, হাতটা এখনো আবদ্ধ তারই পাশে দাঁড়ানো এক অপরিচিতার হাতে।

-এই মেয়ে কে মেহরাজ?

-হ্যাঁ আমরা তো একে চিনি না, হু ইজ সি রাজ?

মিসেস আম্বির কথায় সহিত পাশে দাঁড়ানো মেয়েটিও কৌতুহলী গলায় জিগ্যেস করলো। উপস্থিত ছয় জোড়া চোখে তখন চূড়ান্ত উদগ্রীব, অনুসন্ধিৎসা। মেহরাজ এক পলক তাকালো ওর পাশেই দাঁড়ানো মেয়েটির দেখে,,সুস্থির প্রশান্ত গলায় উচ্চারণ করলো চারটি শব্দ

-সি ইজ মাই ওয়াইফ

এই চারটি শব্দই যথেষ্ট ছিল দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মধ্যবর্তী অবস্থানকৃত মানুষ গুলোর মধ্যে এক তুফান বয়ে দিতে। মেহরাজের কথার মর্মার্থ বুঝতে যেন কয়েক মুহূর্ত লেগে গেল সবার।

-মেহরাজ! ইউ আর কিডিং রাইট? প্লিজ সে হু ইজ সি? ইজ সি ইউর ফ্রেন্ড?

-কি হলো তিয়াসার কথার উত্তর দাও, এটা কোন ধরনের রসিকতা! কি যা তা বলছো

যেনো খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে ইয়ার্কি করার অপরাধে খানিক ধমকে উঠলেন মেহরাজের বাবা। তিয়াসা নামের মেয়েটি অপ্রস্তুত চেহারায় এগিয়ে এসে বলল

-ইটস ওকে আংকেল। তুমি ইয়ার্কি করছো রাইট?

মেহরাজ ওর ধূসর বর্ণা চোখ জোড়া ঘুরিয়ে তাকালো, সমুদ্রের ন্যায় প্রশান্ত স্বরে বলল

-কখনো করেছি?

পিনপতন নীরবতা ছেয়ে গেল খানিক সময় ধরে। উপস্থিত সকলের উৎকণ্ঠা ছাড়িয়ে মেহরাজ নিজেই বলে উঠলো

-সি ইজ মাই ওয়াইফ, আমি আজ সকালেই সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় ওকে বিয়ে করেছি।

-মেহরাজ!! কি বলছ তুমি কোনো আন্দাজ আছে? এভাবে হুট করে একটা মেয়ে তুলে এনে ওয়াইফ বললেই কি মেনে নেবে কেও!

চিৎকার করে উঠলো মেহরাজের বাবা। মিসেস আম্বি এখনো পাথরের মতো থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে, এবার আঁতকে উঠলো তিয়াসা। ছুটে এসে মেহরাজের সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-রাজ হ্যাভ ইউ গন ম্যাড? উই আর কমিটেড। তুমি কি করে যাকে তাকে এনে নিজের বউ বলতে পারো

-এত প্রশ্নের উত্তর দিতে আমার ভাল্লাগছে না, বিয়ে হয়েছে মানে হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি আর কোনো কথা বলতে চাইনা।

বলে এগোতে নিলে, আম্বি ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-কিসব বলছিস বাবা, এটা হতে পারে না তুই ও জানিস। সত্যিটা বল কি হয়েছে? কে এই মেয়ে?

তিয়াসা এগিয়ে গিয়ে মোহরের সামনে দাঁড়িয়ে ওর বাহু চেপে ধরে ঝাঝালো গলায় বলল

-হেই ইউ, হু আর ইউ? এই মেয়েই নিশ্চয় তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে কিছু নিয়ে? এসব থার্ড ক্লাস মেয়েদের আমার খুব ভালো করেই চেনা আছে, বড়লোক ছেলে দেখলেই ভেলকি দেখিয়ে গলায় ঝুলে পড়তে চাই, কথা বলছ না কেন কে তুমি?

মোহরকে দু’হাতে ঝাকিয়ে বলল তিয়াসা। এতক্ষণ নিশ্চুপ দর্শকদের ভূমিকায় থাকা মেহরাজের চাচী এগিয়ে এলো। কটাক্ষ করে বলল

-এই মেয়েকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেমন পরিবারের, এই মেয়েকে তুমি বিয়ে করেছ কিভাবে মেহরাজ, আমার কিন্তু এখনো বিশ্বাস হচ্ছে নাহ তোমার কথা!

মেহরাজের বাবা আজহার ধপ করে সোফার উপর বসে পড়লেন, তার পাশেই দাঁড়ানো ভাই কে উদ্দেশ্য করে বলল

-আরহাম ওকে ঠিক করে বলতে বল কি হয়েছে,কাল সারারাত কোথায় ছিল। হুট করেই একটা মেয়ে এনে বলে দিল বিয়ে করে এনেছি আর মেনে নিলাম এটা কি সিনেমা নাকি

গর্জে উঠলো আজহার, ঘেমে গেছে পুরো শরীর।আরহাম উনাকে শান্ত করে এগিয়ে এলো। মোহরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-এই মেয়ে, নাম কি তোমার?

-মোহর, মোহর শিকদার

ওদের অস্থিরতা, ব্যাপক অভিব্যক্তিকে অগ্রাহ্য করে স্থির, ক্লান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো মোহর।
আজহার বিদ্যুতের গতিতে উঠে দাঁড়ালো, চমকিত গলায় বলল

-কি বললে? মোহর শিকদার!

প্রত্যুত্তরে ঘাড় নাড়ালো কিঞ্চিৎ। আরহান ঘুরে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো আজহারের দিকে, মুহুর্তেই চোখে চোখেই যেন কতকিছু বলে ফেলল দুজন।
তবে অন্য কারো দৃষ্টিগোচর হলো নাহ সেসব।
হুট করেই মোহরের সমস্ত শরীরে ঝিম দিয়ে উঠলো। কাল থেকে অভুক্ত দেহে এতো শারীরিক মানসিক চাপে বিধ্বস্ত শরীর হুট করেই সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে দিলো। চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসতে আসতে নিভে গেলো আলো, ধপ করে লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে।

………………..

যন্ত্রণায় ভার হয়ে আসা সারা শরীর, মাথা নিয়ে চোখ খুলে তাকালো মোহর। চোখ খোলার সাথে সাথে নিজের মুখের উপর একটা মেয়েলি চেহারা উবু হয়ে থাকতে দেখে আচমকা আৎকে উঠলো । তবে মেয়েটা যেন ভীষণ বিরক্ত হলো মোহরের এরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে। কিন্তু সেসবে গা না করে এক ছুটে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে।

কয়েক মুহূর্ত নির্লিপ্ত বসে রইলো মোহর, ঘাড় ঘুরিয়ে আশপাশ দেখতেই উপলব্ধি করলো ভীষণ আভিযাত্য সম্পূর্ণ দামী জিনিসে সাজানো একটা ঘরে বসে আছে বর্তমানে। কোনো কিছু বোধগম্য হলো না ওর, কি থেকে কি হয়ে গেলো, অজানা টাইফুনের মতো কোনো বৈরী হাওয়া এসে তার জীবনটা কয়েক ঘন্টায় এসপার উসপার করে দিল। সবকিছু কোনো এক নাম না জানা নাম না জানা বৈরাগী উপন্যাসের মতো লাগছে,কি থেকে কি হলো!
এ কোন বাড়িতে এনে ফেলল ওর নিয়তি? কিসমতের এই প্রকান্ড নিষ্ঠু’রতম লীলাখেলার ষড়’যন্ত্রের বেড়াজাল এ কোন নাম না জানা রাজ্যে এনে ফেলল! বিদ্যুতের ঝলকানির মতো মনে পড়ে গেল তিনদিন আগের ঘটনা

~ রাত তখন প্রায় নয়টা, মেডিকেল ক্লাস শেষ করে, দুটো টিউশনি করিয়ে বাড়ি ফিরতে আজ একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় যেই বাচ্চাটাকে পড়াতে যাই আজকে সে নানুবাড়ি থেকে ফিরেছে। মোহর চলে আসতে চাইলেও বাচ্চাটার মা মোহরকে বসিয়ে রেখে তার মেয়ে ফিরলে পড়িয়ে তবেই ছেড়েছে। মহিলা ভীষণ রুক্ষ স্বভাবের। একদিন পড়াতে না গেলেও টাকা কমিয়ে দেয়। কিন্তু তাতে কি টাকা তো পাচ্ছে দুটো। চরম অভাবের সময় এই টিউশনিই যে করাতে পারছে এই অনেক।
বেশ দেরি হয়ে যাওয়াই দ্রুত পায়ে হাঁটছে। ব্যাগে মাত্র সত্তর টাকা আছে, আজ যদি রিকশা করে বাড়ি যায় তবে কাল হেঁটে যেতে হবে। সকালের টিউশনি করিয়ে হেঁটে যেতে নিলে ক্লাসে অনেক দেরি হয়ে যাবে। পায়ের গতি আরও বাড়িয়ে দিল মোহর, কিন্তু আরেকটু এগোতেই সামনের দৃশ্য দেখে না চাইতেও থমকে গেল।
আশপাশ টা পুরো সুনসান, অটোরিকশা এই গলিতে সন্ধ্যার পর আসে না খুব একটা, এরকম নিস্তব্ধ নির্জন জাগায় রাস্তার মাঝ বরাবর একজনকে উপুড় হয়ে পরে থাকতে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় মোহর। পুরুষ অবয়ব, বেশ লম্বা সুঠাম শরীর। এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল, লোকটা আদও জীবিত কি মৃত বোঝা যাচ্ছে না। মোহর চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারল না, হাঁটু মুড়ে বসে কাঁপা কাঁপা হাতে লোকটার কবজিতে ধরল, পালস চলছে তবে তা ভীষণ ক্ষীণ গতিতে।
মোহর কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে ডাকার চেষ্টা করলো, অস্পষ্ট আওয়াজ বেরিয়ে এলো লোকটার মুখ থেকে, দুইহাত দিয়ে মুখটা তুলতেই দেখল কপাল গড়িয়ে রক্তের ফিনকি ছুটে পড়ছে, মোহর তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালো, এক্ষুণি হসপিটাল নিলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ছুটে গিয়ে মেইন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর একটা অটো পেলে ড্রাইভার কে নিয়ে আসলো। দুজন মিলে ধরে ভারি শরীরটা অটোতে তুলে হসপিটালের উদ্দেশ্য চলতে শুরু করলো। তবে মোহরের ভেতরে ভীষণ দুশ্চিন্তা, ভয় কাজ করছে। একেবারে অজানা অচেনা একটা ব্যক্তিকে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে কি বলবে! কিসের পরিচয় দেবে সে? কিন্তু মাঝ রাস্তায় একটা মানুষকে মরতে দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার মতো অমানবিক কাজটাও তো করতে পারছে না।
কয়েক মিনিটের মধ্যে হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়ালো অটো, অপরিচিত লোকটাকে ধরাধরি করে ভেতরে নিল।
তবে মোহরের আর খুব একটা ভোগান্তি হয়নি, কারণ হসপিটালে তখন রাউন্ডে এসেছিল ওরই ডিপার্ট্মেন্টের টিচার ড.ফায়াজ করিম। তার ভরসায় অচেনা লোকটাকে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে বাড়ি ফিরেছিল, পরদিন সকালে দেখতে গেলেও লোকটাকে আর পাইনি সে, স্টাফদের থেকে জানতে পারলো সকাল ভোরেই লোকটা সব পেমেন্ট করে দিয়ে বেড়িয়ে গেছে।
বেশ অদ্ভুত লেগেছিল মোহরের, সুনসান রাস্তায় একা একটা মানুষকে ওভাবে আহত অবস্থায় পরে থাকতে দেখে, আশেপাশে গাড়িও ছিল না যে অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে। তবে সমস্যার শুরুই হয়েছিল ওখান থেকে, সেদিন রাতের অজানা লোকটাই মেহরাজ, আর সেদিন তাকে নিয়ে হসপিটাল যাওয়ার সময় মোহরের চাচা রহমান, আর সাথে আরও কিছু এলাকার লোক দেখেছিল। কিন্তু ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি গতরাতে…

ধুপধাপ পায়ের শব্দে ঘোর ভেঙে উঠে দাঁড়ালো মোহর, ভাবনাচ্যুত হলে তৎক্ষনাৎ ঘরে প্রবেশ করলো তিয়াসা,তার পেছন পেছন মিসেস আম্বি ও ঢুকলো।
তিয়াসা কে দেখেই তখনকার কথাগুলো মনে পরে আচানক আঁতকে উঠলো ওর অন্তরসত্ত্বা।তিয়াসা কি মেহরাজের ভালোবাসা? সে নিজে একটা মানুষের ঘর ভাংলো?
হাজারো নিশ্চয়তাহীন জল্পনা মস্তিষ্কে ঘিরে ধরলে অ-ধাতস্ত নিজেকে সামলে নেওয়ার আগেই মেয়েটা ক্ষিপ্ত রূপে ছুটে এসে ঠা’স করে একটা থা’প্পড় বসিয়ে দিলো মোহরের গালে, তাল সামলাতে না পেরে ধপ করে পরলো, অবিলম্বেই তিয়াসা মোহরকে টেনে তুলে চেঁচিয়ে বলল

-তুই,তুই আমার সংসার ভেঙেছিস,আমার ভালোবাসাকে নিজের করে নিয়েছিস! বল,বল কি করে ফাসিয়েছিস রাজকে, বল কি চক্রান্ত করে বিয়ে করেছিস
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here