ফানাহ্ 🖤 #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান #পর্বসংখ্যা_২৩

#ফানাহ্ 🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_২৩

মেহরাজ দুহাতে মোহরের কোমর ঝাপটে ধরে মুখ গুঁজে রেখেছে। ঘনঘন নিঃশ্বাসের সাথে প্রবল উত্তাপ শুলের ন্যায় বিঁধে যাচ্ছে মোহরের কোমলমতি উদরে। ভেতরের তান্ডব কে আস্কারা না দিয়ে ধাতস্থ হলো বড়ো বড়ো শ্বাস টেনে।
দুহাতে আলতো ভাবে মেহরাজের কপালে গালে হাত রাখলো। আগের চেয়ে তুলনামূলক কম তবে এখনো হয়তো জ্বরের পারদ একশোর নিচে নামেনি।
পাশ থেকে ভেজা কাপড় টা নিয়ে আবারও মেহরাজের কপালে চেপে ধরলো।
বা হাতটা মেহরাজের মাথার নিচে রেখে বেড সাইড টেবিল থেকে পানির বোতয়ল টা নিয়ে ছিপি খুলে মেহরাজের খরার জমির ন্যায় শুষ্ক পিপাসায় কাঁতর ঠোঁটের কাছে ধরলো মোহর।

ঢকঢক করে পানি খেলো মেহরাজ। পিপাসায় উত্তপ্ত শ্রান্ত দেহাভ্যন্তরস্থ উত্তাপে যেন এক পশলা শৈথিল্যের স্পর্শ পেল। পুরো বোতলের পানি টা একবারে নিঃশেষ করে ফেলল কয়েক মুহূর্তে। বোতল টা রেখে কপাল থেকে ভেজা কাপড় টা তুলে আবারও পানির মধ্যে ভেজালো। শরীরের উত্তাপে ভেজা জবজবে কাপড় টাও গরম হয়ে গেছে। চিপড়ে বাড়তি পানিতে নিংড়ে নিল। ব্ল্যাংকেটের আস্তরণ টা সরিয়ে উন্মুক্ত করলো জ্বরে কম্পিত সুবৃহৎ দেহাবয়ব টা। গায়ে জড়ানো হালকা অলিভ রঙের টি-শার্ট টা কুচকে লেপ্টে আছে শরীরে। বাঁহাতের উপর উত্তপ্ত ঘাড় টা রেখে ডান হাতটা গলিয়ে দিল মেহজারের পাতলা টি-শার্টের ভেতরে।
প্রশস্ত পিঠটাতে নিজের চিকন আঙুলের চালনা করে পিঠময় শীতল স্পর্শে ভিজিয়ে দিতে লাগলো নিঃশব্দে। যেন প্রবল উত্তাপের আব্রুতে বেষ্টিত দেহখানায় শীতলতার আরাম ঢেলে দিল। সর্বাঙ্গে শিথিলতায় পরিপূর্ণ আবেশবোধ হলো মেহরাজের। ও তখনো এক হাতে ঝাপটে রেখেছে মোহরের কোমর। আরেক হাতটা নির্জীব হয়ে অসাড়তার কাছে হার মেনে পরে আছে অবহেলায়।

মোহর পিঠ থেকে ভেজা কাপড় টা বের করে রাখলো মেহরাজের সেই হাতটার তালুতে। আধো হুশে পরে থাকা দূর্বল আঙুল গুলো মেহরাজ একত্রিত করে চেপে ধরলো মোহরের হাতটা, অত্যুষ্ণ হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো মোহর, যেন জ্বরের উত্তাপটা চামড়া ভেদ করে ওর হাতটাকেও পুড়িয়ে দিচ্ছে। ইসস একটু খানি স্পর্শেই যখন মোহরের এমন লাগছে না জানি জ্বরের তোপে অসাড় হয়ে যাওয়া মানুষটার কত না কষ্ট হচ্ছে!

মেহরাজের ঘাড় হতে কোমর অব্দি শরীর টা তখনও মোহরের অঙ্কদেশে পরে আছে। এক হাতে কোমর টা আরেক হাতে মোহরের হাতটা দূর্বল স্পর্শে চেপে ধরে বলল

– মাথা টা, মাথা টা খুব ধরেছে মোহমায়া। বুকের ভেতরে খুব ব্যথা করছে।

বলে ভীষণ দুর্বলচিত্তের অবীর হাতে মোহরের হাতটা নিয়ে নিজের বুকের বাঁ পাশটায় রেখে বলল

– এইখানটায় খুব যন্ত্রণা করছে মোহ, এখানকার জ্বরটা সারিয়ে দিন না! ভেজা সিক্ত স্পর্শ ছুঁয়ে এইখানটার উত্তাপ ও কমিয়ে দিন। এতটা তো সহ্য করতে পারছি না

নরম হাতের তালুর নিচে মাংসল পিন্ডটা কাঁপছে। অবিরাম, অন্তহীণ স্পন্দন গুলো খুব করে টের পাচ্ছে মোহর, কেমন এক ঘোরের বশে নিজের অজান্তেই চিকন লম্বা আঙুল গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিলো, মুচকি হেসে উঠলো মেহরাজ।
কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে রুগ্ন ফ্যাকাশে মুখ, শুষ্ক ঠোঁট সামান্য প্রসারিত হলো। অপলক চেয়ে রইলো মোহর, নিশুতি রাত্রির অন্ধকারে ঝিঁঝি পোকার ডাকের সূক্ষ্ম অস্তিত্ব ও যেখানে বিলীন সেখানে নিজের বক্ষস্থলকে ব্যগ্র করে ঝংকার তোলা সুরটা স্পষ্ট শুনতে পেল।
মনের ভেতরে আনাগোনা করা বিচ্ছিন্ন এলোমেলো অনুভূতি, শব্দ গুলো কোনো ভাষায় রূপ দেওয়ার মতো সাধ্যি হয়তো ওর নেই।
হুট করেই মনটা যেন সদ্য যৌবনে পা ফেলা কিশোরীর মতো অধিকন্তু, আরত্ত হয়ে উঠলো। বুকের ভেতর জমিয়ে রাখা উন্মাদনা গুলো স্ব স্ব গন্ডি ছাড়িয়ে বেপরোয়া হয়ে ছুটতে লাগলো।

মেহরাজের মাথায় আলতো স্পর্শে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কতটা সময় পেরিয়ে গেল তা মোহরের হিসেব, অবধারণার বাইরে। ঘড়িতে সময় তিনটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট। জ্বরে কাতরে বুদ থাকা দূর্বল শরীর টাকে আলতো ভাবে ধরে কোল থেকে নামিয়ে বালিশে রাখলো। খাট থেকে নেমে কাবার্ডের ড্রয়ার হাতরে ছোট্ট জিনিসটা বের করে আনলো। ক্যাপটা খুলে যন্ত্রটার চোখা মুখটা উত্তপ্ত ওষ্ঠের মাঝে গুঁজে দিল মোহর ।
মিনিট খানেক বাদে মুখ থেকে বের করে টেম্পারেচার দেখে স্থুল দৃষ্টিতে তাকালো মেহরাজের দিকে। ডিজিটাল থার্মোমিটারে কাটকাট বয়ান দিচ্ছে এখনো জ্বর একশো দুই ডিগ্রি। চিন্তায়, উৎকণ্ঠায় ললাটে পুরু ভাঁজ ফেলল। রাত গভীর, কাকে ডাকবে? হসপিটালেও নেওয়ার কথা ভাবছে না।
সুরাহা একটাই, তা হলো মোহর নিজে! ওকেই যা করার করতে হবে। মোহর ভেবে পাইনা ক্যাম্পিং, ফিল্ড ওয়ার্কে এমন হাজারো মানুষের অসুখ দেখেছে, কিন্তু মেহরাজের অসুস্থতা যেন ওকে জাত মতো কাবু করে ফেলে, সামান্য থার্মোমিটার টা ধরতেও হাত কাঁপে।

মেহরাজের গায়ের উপর থেকে কম্বল টা সরিয়ে দিল মোহর, এই মুহুর্তে একটাই উপায় আসছে মোহরের মাথায়। হয় স্পঞ্জ নয়তো কোল্ড শাওয়ার। জ্বরের উত্তাপ যখন মেডিসিন বা সাধারণ টোটকা তে নামতে চাইনা তখন রোগীকে ডিপ স্পঞ্জ নয়তো স্ট্রেইট ব্যাথ করানো ই একমাত্র পন্থা। এতে শরীরের তাপ নেমে যায়।

– শুনছেন? একটু উঠতে পারবেন প্লিজ? আপনার উঠা টা খুব দরকার। এভাবে শুয়ে থাকলে জ্বর কমবে না।

শ্রান্ত চোখ দু’টো আধবোজা রেখেই খুললো মেহরাজ। মোহর নিজের চিকন হাতের শক্তপোক্ত বন্ধনে চেপে ধরলো। টলমলে পায়ে ওয়াশরুমে এসে দাঁড়ালো। মোহর ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে অবলম্বেই শাওয়ারের নব টা মুচড়ে দিল।

কৃত্রিম বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানি এক দুই তিন করে অসংখ্য স্পর্শে মেহরাজের অত্যুষ্ণ শরীর ছুঁয়ে দিল। অদ্ভুত প্রশান্তিতে শরীর শিথিল হয়ে আসলো দেহটা। এতক্ষণের প্রাণঘাতীর ন্যায় উত্তাপটা যেন নিজ দেহকে ছারখার করে দিচ্ছিল মেহরাজের। পানিতে ভেজা চোখে সিক্ত চাহনিতে চেয়ে সম্মোহনী মুখটা দেখল। অতিশয় ব্যগ্র রূপে যে নিষ্পলক চেয়ে আছে এক হাতের বাহু ধরে।

দুজনের মাঝখানে কিঞ্চিৎ ব্যবধান। তা হয়তো পানির ঝাপটা থেকে বাঁচার প্রয়াস। মেহরাজ তাতে তোয়াক্কা করলো না,খুব নির্মল কায়দায় দূর্বল হাতের এক টানে মোহরকে এনে দাঁড় করালো নিজের সামনে। মোহর পানির বিরতিহীন সিঁচে চোখ খুলে তাকাতে হিমশিম খাচ্ছে। মোহরের অপ্রস্তুত, অস্থির ভাবাবয়ব দেখে তেমন অভিব্যক্তি দিল না মেহরাজ।
ড্যাবড্যাব করে খানিক তাকিয়ে থেকেই ঘাড় নামিয়ে আনলো, দীর্ঘ আশ্লেষের ছোঁয়ার সহিত কপাল টা ঠেকালো মোহরের কাঁধে। দুহাতে কোমর পেচিয়ে ধরে ঘাড় গলার আরও গভীরে মুখ ডুবিয়ে দিল। বাহুডোরের রাজ্যে পুরোপুরি বন্দিনী করে ফেলল মোহরকে। বিহ্বলিত মোহর কোনো অভিপ্রায় আনার সুযোগ টুকুও পেল না। কম্পিত হাতে মেহরাজের প্রশস্ত পিঠে হাত রাখলো। পরনের টি-শার্ট টা খামচে সরিয়ে দিতে গেলে বাহুডোরের বন্ধন আরও দৃঢ়, শক্ত, অভঙ্গুর হয়ে উঠলো। ঘাড়ের মাঝে মুখ খানা শক্তভাবে চেপে অস্পষ্ট গলায় মেহরাজ বলল

– হুসস, নড়বেন না মোহমায়া। শান্তি লাগছে, এই শীতল পানির বর্ষণের চেয়ে আপনার আলিঙ্গনের বর্ষণ টা অনেক বেশিই প্রয়োজন আমায় আরোগ্য দান করতে৷

মোহর টু শব্দটি তো দূর একচুল নড়াচড়ার প্রয়াস করলো না। তা স্বেচ্ছায় নাকি মেহরাজের স্পর্শে বন্দী হয়ে তা নিজের কাছেও অস্পষ্ট। শুধু বর্ষার ন্যায় অবিরাম পানির মুষলধারায় ভিজে গেল দুজন। দুটো শরীরে মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ফাঁক রইলো না, পানির বিন্দুগুলো সানন্দে হৃদয়ে প্রাণসঞ্চার করে ভিজিয়ে, মিশে গেল দুটো মানব মানবীর শরীরে।

.

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে আশপাশ জুড়ে। নিকষ আধারের বুক চিরে সদ্য ফুটে ওঠা মুকুলের মতো সূর্যটা পূর্বদিক থেকে খিলখিলিয়ে উঠবে খানিক বাদেই। আজানের কুলুধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে রাতের পরিবেশ। গভীর, অশেষ নির্জনতাকে ছুটিয়ে দাপটের সহিত বেজে উঠলো মসজিদের মাইক গুলো। সুমধুর ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিত হলো ভূপৃষ্ঠ। গাছগাছালী দীঘল সময় ধরে কয়েদির ন্যায় মূর্তিমান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার রাত পার করে গা এলিয়ে নড়েচড়ে উঠলো খানিক,তার সাংকেতিক হিসেবেই মৃদু কিচিরমিচিরের ঠুনকো শব্দ তুলল পাখিদের ছানারা।

মোহর ফজরের নামাজ শেষ করেই, নিচে নেমে এলো। রান্নাঘরে খুব একটা আসা হয়না, তা অবশ্য সেই মানুষটারই নিষেধাজ্ঞা। তৈজসপত্র রাখা অজ্ঞাত স্থানগুলো হাতিয়ে সবজি,তেল, পাত্র সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সামগ্রী বের করে নিল।
বেশ খানেক সময় ব্যয় করে বাটি ভরে স্যুপ
নিয়ে বেরোলো। দ্রুতপায়ে ঘরে ঢুকেই উজ্জ্বল আলোয় আবেষ্টি ঘরটার বিশাল বিছানায় শুয়ে থাকা মেহরাজের দূর্বল শরীর টা চোখে বিঁধলো। মৃদুমন্দ পা ফেলে এগিয়ে এসে বসলো নরম বিছানাটার প্রান্তে। পাশেই পরিচিতার উপস্থিতি অনুভব করে চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে প্রসারিত চোখে তাকালো মেহরাজ সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পরিহিত স্নিগ্ধ একটা চেহারার দিকে। চুলগুলো ভেজা, নির্ঘুম একটা রাত পেরিয়েও ক্লান্তি বা অবসাদ যার মুখে হানা দিতে পারেনি।

মোহর ঘুরিয়ে বসলো মেহরাজের সামনা-সামনি। ওকে ধরে উঠিয়ে আধশোয়া করে দিল। গরম স্যুপের বাটিতে চামচ নেড়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে ঠান্ডা করে মেহরাজের মুখের সামনে ধরলো। মেহরাজ ক্লান্ত, ফ্যাকাশে চোখে মুখে তাকিয়ে আছে, আদও দেখছে কি না বুঝছে না মোহর, মেহরাজ সারাটা রাতই এমন চোখের খোলা বন্ধের অনবরত ধারাতেই ছিল। জ্বরের ঘোরে অনেকেই এভাবে তাকিয়ে থাকলেও আসলে তাদের হুঁশ থাকে নাহ।

তবে মেহরাজের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো। ওর মুখের সামনে চামচ টা ধরতেই বাধ্যগত বাচ্চার মতো কোনো বাহানা ছাড়াই হা করে মুখে পুরে নিল তরল জাতীয় খাবারটা। সারাদিন না খাওয়া,আবার রাতের জ্বরে একেবারেই নির্জীব অবস্থা। মোহর স্যুপটা খাইয়ে দিয়ে ওষুধ ও নিজ হাতেই মুখে পুরে দিল মেহরাজের। সবশেষে অনুগত শিশুর মতো চুপটি করে শুয়ে পড়লো মেহরাজ। লোকটা যে বাধ্য, কোমলমতি একটা বাচ্চার ন্যায় আচরণ ও করতে জানে তা হয়তো অসুস্থ না হলে মোহর কোনো দিনও বুঝতো না।

__________________

– মেহরাজ? বাবু কি হয়েছে?

আচানক উচ্চস্বরে কারো আতঙ্কসুলভ বাক্যে চট করে ঘুম ছুটে গেল মোহরের, চোখ খুলে তাকাতেই একদম সামনেই গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা মেহরাজের শরীর টা দেখতে পেল। ধাতস্থ হয়ে ওঠার আগেই আবারও শোনা গেল সেই কণ্ঠস্বর, এবং এবার তা আরও নিকট থেকে

– বাবু?

আম্বি বেগম ছুটে এসে মেহরাজকে ধরতে গেলে মোহর ব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল

– দাঁড়ান। ধরবেন না উনাকে প্লিজ।

আম্বি সকৌতুকে রুষ্ট চাহনিতে মোহরের দিকে তাকিয়ে বলল

– এখন কি নিজের ছেলেকে ধরতেও তোমার পারমিশন লাগবে? কে তুমি, দুইদিন এসে আমাকে এভাবে বলার সাহস হয় কি করে?

মহিলার বিরতিহীন কথার বানে মাথা ধরলো মোহরের। সারারাত পেরিয়ে ভোরের পরেই চোখটা লেগে এসেছিল, বিছানায় এক কোণাতেই ঘুমিয়ে গেছিল ঘাড় কাৎ করে। তবে ভোর হতেই যে আম্বি বেগম ছুটে আসবেন এটা খুব ভালো মতো জানা ছিল মোহরের। কেননা ভোরে স্যুপ বানানোর সময় মালা এসেছিল রান্নাঘরে। ও-ই সব শুনেছে মোহরের কাছ থেকে, এবং ভোর না হতেই যে সব রটাবে এসব ও জানতো মোহর।

– সারারাত জ্বরের চোটে শান্তি পাননি উনি, এই ভোরের দিকেই ঘুমিয়েছে। জ্বর, ঠান্ডার ওষুধ দিয়েছি তাই এমনিতেই ঘুমাবে। আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না। উনারও ঘুম ভেঙে যাবে আপনিও ক্লান্তু হয়ে যাবেন

– এই মেয়ে আমার ছেলের রাতভর জ্বর আর আমি কি না এখন জানতে পারছি। আর তুমি বলছো শান্ত হতে। আহারে আমার বাবু

বলে এগিয়ে গিয়ে মেহরাজের সিথানে বসলো। মোহর জানতো আম্বি বেগম ঠিক এভাবেই রাখতে অস্থির হয়ে পড়বে তাই ই জানাতে চাইনি রাত করে। ও স্থৈর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

– উনি এখন ভালো আছে৷ অনেকটা, শুধু একটু রেস্ট প্রয়োজন। জ্বর নেমে গেছে, এখন একটু ঘুমিয়ে থাকলে শরীর টা ভালো হবে।

আম্বি খাতুন এসব ব্যাপারে মোহরকে অবশ্য গালমন্দ করেন না। কারণ ওর চিকিৎসার হাতে তার নিজেরও বিশ্বাস আছে। তবে উঠলোও না ওখান থেকে। চুপচাপ ছোট মুখ করে মেহরাজের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।

বেলা বাড়লে একে একে সকলেই আসলো মেহরাজের ঘরে ওকে দেখতে। তবে সকলেই ভীষণ সাবধানে নীরবতা পালন করলো। যাতে কোনো ভাবেই মেহরাজের ঘুম না ভাঙে। আর যাই হোক মেহরাজ হলো এ বাড়ির মধ্যমণি। ওর যেকোনো কিছুতে সকলে অনেক বেশি উদ্বীগ্ন হয়ে ওঠে।
প্রায় সকলেই মোহরকে ধন্যবাদ জানালো, আজহার মুর্তজা কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন তার একমাত্র ছেলের অসুস্থতায় সেবা করার জন্য। শাহারা বেগমের মতে এতে কৃতজ্ঞতা হওয়া মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়, কেননা মোহর মেহরাজের সহধর্মিণী। ওর সুখে দুঃখে, ভালো মন্দে সবসময়ই মোহরই পাশে থাকবে সাহায্য করবে। এসব কথা নিয়ে অবশ্য মোহর ওতটা মাথা ঘামায়নি। আপাতত মেহরাজ সুস্থ হওয়া নিয়েই ওর যত চিন্তা।
বারংবার ভয়ভয় করছে, দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে আবারও যদি জ্বর বাড়ে। মোহর কেন যে রাতের দৃশ্য গুলো ভুলতেও পারছে না। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে মেহরাজের রুগ্ন, ফ্যকাশে পাণ্ডুর মুখটা। ইশশ কতটায় না কষ্ট হয়েছে ওর? ভাবতেই মোহরের বুকে চিনচিনে ব্যথার আবির্ভাব হচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে বসলো মেহরাজের পাশে।
ঘর এখন ফাঁকা, সবাই যাওয়ার পরে গিয়েছে আম্বি বেগম, তিনি নিজে জান নি, সাঞ্জে আর কাকলি মিলে ধরে নিয়ে গেছে। নাওয়া খাওয়া ভুলে বসে ছিল তিন ঘন্টা ধরে।

বেলা গড়িয়ে সাড়ে দশটা বেজেছে। মেহরাজ এখনও ঘুমে বুদ। মোহর অনিমেষ, নিমজ্জিত চাহনি স্থির রেখে চেয়ে রইলো মেহরাজের মুখ পানে। লোকটা কেমন অদ্ভুত কান্ড করে যাচ্ছে দিনদিন। এভাবে হুটহাট কাছে চলে আসে কেন? সে কি জানে না এতে মোহরের ছোট্ট হৃদবক্ষে প্রচণ্ড তুলকালাম ওঠে। অশান্তির ঝড়ের তান্ডব বয়ে যায়! তবুও কেন এমন করে!
মোহরের আরও মনে হয়, আচ্ছা! কাল রাতে যে ওইভাবে কোমর আঁকড়ে ধরলো, ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিল, জড়িয়ে ধরলো, অদ্ভুত কিসব কথা বলল ওসব ই কি জ্বরের ঘোরে বলেছে? নাকি বাস্তবেই? আচ্ছা লোকটা ওত কঠিন কঠিন কথাও জ্বরের ঘোরে কি করে বলে দিল?

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে, হাতটা তুলে মেহরাজের কপালে স্পর্শ করলো মোহর। জ্বর কমে গেছে অনেকটা। মোহর প্রাণপণে চাইলো আর যেন ওমন যন্ত্রণাদায়ক অসুখ টা না করে মানুষটাকে। খুব দ্রুতই যেন সুস্থ হয়ে ওঠে, তখনি মোহরের সকল ধ্যান ধারণা ভেঙে, সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজে কলকাঠি নেড়ে দূর্বল গলায় মেহরাজ বলল

– মোহমায়া!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here