ফানাহ্ 🖤 #পর্বসংখ্যা_৩৬ #হুমাইরা_হাসান

#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৩৬
#হুমাইরা_হাসান

প্রচন্ড রকম থমথমে একটা বাতাবরণ ঘরটা জুড়ে। পিনপতন নীরবতায় শুধু তিনটে মানুষের ফোঁসফোঁস নিঃশ্বাসের শব্দই কানে আসছে।
ভীষণ আতঙ্কে শঙ্কিত বুকটার ধুকপুকানির চিৎকার নিজ কানেই বাজছে মোহরের। এই মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার মতো কাজটা অতীব দুঃসহ হলেও তাছাড়া আর কোনো উপায় ও নেই৷

গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো মোহর, বিছানার এক কোণায় মূঢ়মূর্তির ন্যায় স্থবির চিত্তে বসে আছে তাথই। দৃষ্টি, বোধশক্তি সবটাই শূন্যের কোঠায় পৌঁছে এখন স্তব্ধ, নিরেট, স্থূলবুদ্ধির ন্যায় ভাবাবয়বে পরিপূর্ণ করেছে।
আলতো ভাবে হাতটা তাথইয়ের ঘাড়ে রাখলো মোহর, বড়সড় একটা ঢোক গিলে বাচনভঙ্গি স্বাভাবিক রাখার তীব্র প্রচেষ্টায় খসখসে গলায় বলল

– আপা? তুমি এভাবে কেনো বসে আছো?কথা বলো?

তাথইয়ের নিরুত্তর ভাবাব্যক্তি মোহরকে আরও ভীষণ চিন্তায় ফেলছে। শুকনো মুখে একবার সামনের পুরুষাবয়বের দিকে তাকালো। কাঠকাঠ, তীক্ষ্ণতা উপচে পড়ছে চেহারাতে, একটু আগেই দেখা সেই ফরমাল গেট-আপ টার অবিন্যস্ত আর বিধ্বস্ত অবস্থাটা যতটা না, তার চেয়ে বেশি নাজেহাল মুখাবয়ব। স্থির, অনড় দাঁড়িয়ে তাথইয়ের দিকে দৃষ্টিক্ষেপণ করে রেখেছে।
মোহর তাথইয়ের ঘাড়ে রাখা হাতটার চাপ আরেকটু গাঢ় করে বলল

– আপা, তুমি এভাবে চুপ করে থেকো না? কিছু তো বলো?

– কি বলবো আমি? বলার মতো কিছু কি রয়েছে? ওকে কে বলেছিলো আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে মাথা ঘামাতে, ওকে কে বলেছিলো আমার স্বামীর গায়ে হাত তুলতে?

নীরবতা চিরে অস্থির, রেশপূর্ণ কথাগুলো ভীষণ ঘৃণা, আর ক্ষোভ মিশ্রিত শোনালো। তবুও তাতে একচুল অপমানবোধ করলো না পৃথক। বরং আরও কয়েক কদম এগিয়ে এসে বলল

– তুমি কোন স্বামীর জন্যে সাফাই গাইছো আশু যে কি না তোমার সাথে জো’র জব’রদস্তি করছিলো? তোমাকে যা নয় তা বলছিলো?

– হ্যাঁ তো তাতে আপনার কি? সে আমার স্বামী, আমাকে জোর জব’রদস্তি করুক, মা’রুক, কা’টুক সেটা শুধুমাত্রই আমাদের ব্যপার। এখানে আপনাকে আগ বাড়াতে কে বলেছিলো? কে আপনি হ্যাঁ? এটা আপনার বন্ধুর বাড়ি, সেখানে অতিথি হয়ে এসে বাড়ির জামাইয়ের গায়ে হা’ত তোলার সাহস কে দিয়েছে আপনাকে?

– আশু!

নামটুকু বলে আর কোনো শব্দ বের হতে পারলো না পৃথকের কণ্ঠনালি ভেদ করে। তাথইয়ের মুখ হতে নিঃসৃত কটাক্ষবাণী গুলো তী’রের মতো বিঁধলো ওর বুকে। প্রচন্ড রকমভাবে বেদনাদায়ক একটা পীড়া টনটন করে উঠলো বুকের ভেতর।
মোহর তাথইয়ের এরূপ অস্থিরতা দেখে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল

– আপা, একটু শান্ত হও প্লিজ। যেটা হয়েছে ওটা তো কারো স্বেচ্ছায় হয়নি…

মোহরকে সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই ওর মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে তাথই আবারও বলল

– স্বেচ্ছায় ই হয়েছে, ও তো এটাই চেয়েছিলো। আমার সংসার ভাঙতেই তো চাই ও। কি ভাবছো মোহর, অরুণ মাহমুদ এভাবে ছেড়ে দেবে? ওকে চেনো? ও যে মা’র খেয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো কি মনে করেছো ও দমে গেছে? কখনোই নাহ ও এবার তোলপাড় করবে, আমার জীবনটা তছনছ করে ফেলবে। আর তার জন্য দায়ী শুধুমাত্র এই বাইরের লোকটা

বলে আঙুল তুলে ধরলো পৃথকের দিকে। অশ্রুভরা, অগ্নিঝরা দৃষ্টিটা দেখে ধক্ করে উঠলো পৃথকের বুকটা। এটা কি সেই চোখ যা দেখে ওর যৌবনে প্রথম প্রেম এসেছিলো? এটা কি সেই মুখটাই যেটা ওর চেহারা টা দেখলেই লজ্জায় লুকিয়ে পরতো! কিশলয়ের পাপড়িবৃত চোখটা যে সারাক্ষণ পৃথকের মুখটা দেখার জন্য উতলা,উদগ্রীব,অস্থির হয়েই থাকতো সেই চোখেই আজ এতো ক্রোধ, এতো ঘৃণা?
ভূমিকম্পের তান্ডবের ন্যায় অন্তরস্থলের সমস্ত ভীত, অনুকংপা চুরচুর করে উঠলো যেনো। কণ্ঠে টন খানেক আঘা’তের বান এসে ভর করলো পৃথকের, তবুও জিহ্ব ঠেলে কোনো মতে অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করলো

– আমি তোমার সংসার ভাঙতে চাই? আমি বাইরের লোক?

– হ্যাঁ তাই। বেরিয়ে যান আপনি, এক্ষুনি বেরিয়ে যান। আপনার ওই মুখটা আমি দ্বিতীয় বার দেখতে চাই না।

আর এক মুহূর্ত স্থির দাঁড়াতে পারলো না পৃথক। পা দুটোর নিচের ভিত্তটা কেমন নড়বড়ে হয়ে গেলো যেনো। চোখ দুটি নিমিষেই ঝাপসা হয়ে এলো। অতি দ্রুতপায়ে দরজার চৌকাঠ মাড়িয়ে বেরিয়ে এলো। বিদ্যুতের গতিতে সিড়ি বেয়ে নেমে ঘর, বাড়ি, সমস্ত আব্রাহাম ম্যানসনটাকে পেছনে ফেলে আসলো৷ বুকের ভেতর কেমন জ্বলন ধরেছে, অদ্ভুত রকমের যন্ত্রণা ক্রমেই গ্রাস করছে ওকে। সমস্ত শরীর টা ঝিম ধরে আসলো।

পৃথক বেরিয়ে যেতেই তাথই ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। দুহাত মুখে চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। ওর কান্নার আহাজারিতে মোহরের ভেতরটা কেঁপে উঠলো, ও দুহাতে আগলে ধরলো তাথইয়ে, বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল

– আপা, আপা গো তুমি কেঁদো না। দোহাই তোমার কিচ্ছু হবে নাহ

– তুমি জানো না মোহর,আমার জীবন টা নিঃশেষ করে দেওয়া জা’নোয়ার ওই অরুণ। ও এতো সহজে ছেড়ে দেবে মনে করো না। নিজের দোষ ঢাকতে আমার গায়ে মিথ্যে কলঙ্কের দাগ লাগাতেও ওর বাঁধবে না।

তাথইয়ের চোখ ভরা অশ্রু আর এমন মর্মান্তিক কথাগুলো হৃদয় কাঁপিয়ে তুললো মোহরের। তাথইয়ের মুখটা দু’হাতে মুছিয়ে দিয়ে বলল

– তুমি চিন্তা কোরো না আপা। ওর এই ভালো মানুষীর মুখোশ টেনে ছি’ড়ে ফেলবো আমি। তুমি শুধু সকাল হতে দাও।

বলে উঠে দাঁড়ালো। তাথইয়ের হাত ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে বলল

– আজ এই ঘরে যা হলো এটা ভুলেও যেনো দরজার বাহিরে না যায়। সকাল হতে দাও তারপর সবটা উন্মোচন হবে

– তুমি কি করবে মোহর? ওকে তুমি তো ঠিক করে চেনোও না!

– চিনি আপা, খুব ভালো মতন চিনি। উনি আমাকে চিনতে না পারলেও আমার একটুও ভুল হয়নি উনাকে চিনতে। এই সুযোগটার অপেক্ষায়ই তো ছিলাম।

কথা গুলো অত্যন্ত বিড়বিড়িয়ে বলল মোহর। তাথইয়ের কানে অস্ফুটস্বরে কয়েকটা শব্দই শুধু গেলো। তাতে আর যাই হোক মোহরের মস্তিষ্কে যে অন্যকিছু ঘুরছে তা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। আচানকই বুকটা ধক্ করে উঠলো তাথইয়ের, যেই মান সম্মানের দায়ে এতদিন, বছর মুখ বুজে সবটা সয়ে গেছে সেটাকেই রাত পোহালে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে না তো!

.

বাড়িভর্তি মেহমান, লোক সমাগমের ভিড় কমে অনুষ্ঠানের ইতি পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় রাত এগারোটা বেজে গেলো। কাকলি,আম্বি বেগম, আজহার, আরহাম মুর্তজা ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন। তাথই তারপর আর ঘর থেকেই বের হয়নি, তাথইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও জানে না যে অরুণ হুট করেই চলে গেছে।যাওয়ার আগ দিয়ে তাথইয়ের সাথে দেখা করতে এলে শরীর খারাপ বলে তাথই কাটিয়ে দিয়েছে। অরুণের ব্যাপারে তারাও জিজ্ঞাসা করেনি, কারণ এমন হুটহাট ওর উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা সম্পর্কে পরিবারের লোকের ও খুব ভালো মতই জানা।

মোহর সন্ধ্যা থেকে পুরোটা সময় তাথইয়ের সাথেই ছিলো ওর ঘরে৷ অতঃপর তাথই ঘুমিয়ে গেলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মোহর, নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে এগোতে নিলে পেছন থেকে মাঝবয়েসী নারীর কণ্ঠের ডাকে ঘুরে তাকালো।

– এই যে মোহর না কি, এদিকে আসো তো।

মোহরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিড়ি বেয়ে খোরাতে খোরাতে নামলো মোটাসোটা গড়নের মহিলাটি। মোহর প্রতিক্রিয়া দেখালো নাহ, বরং সেও নিঃশব্দে নিচে নামতে লাগলো। ডাইনিং এ এসেই ধপ করে সোফার উপরে বসে টি-টেবিলের উপরে পা তুলে দিলো রুকাইয়া বেগম। কোঁকাতে কোঁকাতে বললেন

– বাবারে বাবা, এতো লোকজনের ভিড়ে ঘুরে আমার পা দুটো শেষ হয়ে গেছে। এই জন্যে এতো লোকসমাগম একেবারেই পছন্দ না আমার।

মোহর কোনো শব্দহীনা এসে পাশে দাঁড়ালো। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে রুকাইয়া বেগম বলেন

– এই মেয়ে এমন খাম্বার মতন দাঁড়িয়ে থাকার জন্যে তোমাকে ডাকিনি আমি। যাও একটু তেল গরম করে এনে আমার পা টা মালিশ করে দাও তো। পা টা নড়াতে পারছিনা বাবাগো

বলেই আবারো বিলাপ করার ন্যায় কোঁকাতে শুরু করলো। মোহর স্থুল দৃষ্টিতে তাকালো আপাদমস্তক রুকাইয়ার দিকে। পুরো পার্টির সময় টা জুড়ে উনাকে শুধু এক জাগায় বসে খেতে দেখেছে ও, বসে থেকে মাজা ব্যথা হলেও যুক্তিযুক্ত মানা যেতো, পায়ে ব্যথার হেতু টা বুঝতে পারলো না মোহর।
তবুও মুখ চালালো না, চুপচাপ রান্নাঘর থেকে বাটিতে করে তেল গরম করে আনলো। মোহরকে দেখে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসলো রুকাইয়া। আয়েশী ভঙ্গিতে বললেন

– একটু ভালো করে মালিশ করো, পুড়িয়ে দিও না আবার

মোহর কথা বলল না কোনো। গায়ের শাড়িটা এখনো ছাড়তে পারেনি। এটা পড়ে দীর্ঘক্ষণ থাকায় বেশ অস্বস্তি হচ্ছে, তবুও কোনো রকম গুটিয়ে বসলো। গরম তেলে ফুঁ দিয়ে হাতের সাথে লাগিয়ে খুব সাবধানে রুকাইয়ার পায়ে লাগিয়ে দিলো। বেশ কিছুক্ষণ ওভাবে মালিশ করার পর হুট করেই রুকাইয়া বেগম পা ঝারা দিয়ে চিৎকার করে উঠলো

– ওরে বাবা গো। আমার পা পু’ড়িয়ে দিলো। এই মেয়ে তোমার মনে মনে এতো কুটনামি।একটু পায়ে তেল কি ঘষে দিতে বলেছি আর তুমি পা-ই পু’ড়িয়ে দিতে চাইলে

আকস্মাৎ পা ঝারা দেওয়ার তেলের গরম বাটিটা ছিটকে মেঝেতে পরে তার থেকে দুয়েক ছেটা মোহরের হাতে পরলো। জ্বলে উঠলো চামড়া টা।
ততক্ষণে রুকাইয়ার চেঁচামেচি শুনে আম্বি বেগম ছুটে এসেছেন, তার পিছে পিছে কাকলিও এলো।

– কি হয়েছে আপা। চেঁচামেচি করছেন কেনো?

– চেঁচামেচি কি আর সাধে করছি। আচ্ছা ছেলেবউ এনেছো আম্বি, আমার পায়ে একটু তেল ঘষে দিতে বলেছিলাম, ও কি না আমার পা-ই পুড়িয়ে দিলো

মোহর নিজেও বুঝতে পারলো না কয়েক মুহুর্তের মধ্যে কি থেকে কি হলো। তবে এতটুকু অবশ্যই বুঝতে পেরেছে যে এই মানুষটা ওর প্রতি তীব্র ঘৃণা পোষণ করেই এসব করছে।

– তুমি যদি দিতে নাই চাও তাহলে মানা করে দিতে, এইরকম কাজ কেনো করলে?

মোহর স্থিরতা নিয়ে তাকালো কাকলির দিকে। আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে রুকাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

– আমি কারো পা পুড়ি’য়ে দিতে চাইনি। তেলটা আমি ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে নিয়েছিলাম

– এই মেয়ে তো দেখছি খুব মিথ্যেবাদী ও।
ছি ছি এমন ও দেখার ছিলো। মেহরাজ এই মেয়েকে বউ করে রেখেছে, মাথা ভরা যতসব ষড়যন্ত্র।

রুকাইয়া বেগমের ফ্যাসফ্যাসে গলার আওয়াজে তখন ডাইনিং স্পেস টা গমগমে। বেশির ভাগ সদস্যই ঘুমিয়ে পড়েছে ক্লান্ত শরীরে। তিয়াসা হাঁটু সমান কালো রঙের একটা ফ্রক জাতীয় পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়। ঠোঁট জুড়ে ক্রুর হাসি। তবে এসব সকলের চক্ষুগোচর না হলেও অবিলম্বেই একটা গম্ভীর স্বর ঠিকই কর্ণগোচর হলো।

– কি হয়েছে?

অতি পরিচিত গলাটা শুনে অস্থির চোখে ফিরে তাকালো মোহর। এতক্ষণ কঠোর গম্ভীর অভিব্যক্তি দিয়ে রাখা মুখাবয়ব টা নিমিষেই অতিরঞ্জিত হলো বিষন্নতায়। না চাইতেও ঠাঁই পাওয়ার জায়গাটাকে পেয়ে চোখ ভরে এলো মোহরের।
একজোড়া উৎসুক চাহনি মুখিয়ে আছে মোহরের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনাতে মেহরাজকে। কিন্তু সে সকলের দৃষ্টি আর মনোবাসনাকে ধৃষ্টতার সাথে অগ্রাহ্য করে মেহরাজের মন, মস্তিষ্ক আর চোখ দুটো আঁটকে গেলো মোহরের অশ্রুপূর্ণ ছলছল চোখের দিকে। এক মুহূর্ত ব্যায় না করে দ্রুতপায়ে এগিয়ে এলো, মোহরের সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে বিচলিত গলায় বলল

– মোহ? কি হয়েছে? ঠিক আছেন আপনি?

মেহরাজের এতটুকু স্নেহপূর্ণ গলায় মোহরের বাকি সত্ত্বাটুকুও ক্ষীণ হয়ে গেলো। একফোঁটা জল চোখের আব্রু ছাপিয়ে গড়িয়ে পড়লো। মেহরাজ মোহরের অশ্রুসিক্ত চোখটা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকালো উপস্থিত মানুষ গুলোর দিকে।, নীরবতা ভেঙে রুকাইয়া বেগম প্যানপ্যানে গলায় বললেন

– এভাবে তাকাচ্ছো কেনো? তোমার বউ দোষ করবে আবার তুমিই চোখ রাঙানি দেবে।

মেহরাজের ভ্রু দুটো কুচকে এলো, রুকাইয়া তোতাপাখির বুলির মতো একইভাবে সেই মিথ্যে কথাটা আওড়ালো। সবটুকু শুনেও মেহরাজের অভিব্যক্তি শুন্যের কোটায়। স্থির নেত্রে তাকালো মোহরের দিকে, ওর একটা হাত মুঠোয় পুরে খুব স্পষ্টভাষার কাঠকাঠ গলায় বলল

– প্রথমত আমার বউকে দিয়ে পা মালিশ করানোটা ভীষণ অন্যায় হয়েছে, মোহর আমার বউ, পায়ে হাত দেওয়ার জন্যে এবাড়িতে আরও অনেকে আছে, স্টাফ’স আছে। তার উপর এরকম লেইম একটা অভিযোগ করছেন যে ও করেনি তা আমার মুখে বলতে হবে না।

বলে অপরপক্ষের মতামতের অপেক্ষা হীনায় অকপটে আবারও বলল

– আমার বউকে আমি খুব আদর যত্নে রাখি ফুপি, ওর প্রতি করা কোনো অসমীচীন আচরণ আমি সহ্য করবো না। ও যতটা নরম আমি ততটাই কঠোর, তাই এরপর থেকে এধরণের ভিত্তিহীন নাটক করবেন না আশা করছি।

বলে মুঠোয় পুরে রাখা হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে উপরের দিকে হাঁটা ধরলো। এতক্ষণ ক্রুর হাসি বিচরণ করা তিয়াসার মুখটায় আমাবস্যা নামলো নিমিষেই। মেহরাজের বউকে নিয়ে এতো উৎকণ্ঠা, আদিক্ষেতা এসব দেখলে ওর মাথাটা গরম হতে থাকে। ফিসফিস করে বলে

– খুব প্রেম হয়েছে না দুজনের? সব ঘুচিয়ে দেবো, ভেবো না চুপ করে আছি বলে দমে গেছি।খেলা তো এখনও শুরুই হয়নি। মেহরাজকে তো আমারই হতে হবে হোক আজ হোক কিছুদিন পর।

_________________________

আকাশ জুড়ে ফুটফুটে তুলোর মতো মেঘের বিচরণ, বাতাসে অদূর থেকে আসা বেনামি ফুলের মিঠা সুবাস। ছোট ছোট টুকরো রোদের লুকোচুরির মিষ্টি খেলায় মন মাতানো সকালের পরিবেশ টা হলেও আসলে তা কেবলই এগিয়ে আসা ঝড়ের পসরা সাজাচ্ছে তা বাড়ির ভেতরে না আসলে বোঝা যাবে নাহ।
একাধিক চেহারায় উপস্থিত গাম্ভীর্য, দুশ্চিন্তা আর অপমানের কুঞ্চিত ছাপ তার প্রবলতা স্পষ্ট ভাবে জানান দিচ্ছে।

– আপনি চুপ করে আছেন মুর্তজা সাহেব? এই দিনই কি দেখার ছিলো? আমিতো ভাবতেও পারছিনা আমার ছেলেকে আপনার বাড়িতে এসে মা’র খেতে হয়েছে। তাও কি না এমন একজনের হাতে যে আদতে এই বাড়ির কেও ই না!

ভ্রুযুগল আরো জড়ো হয়ে আসলো। গতদিনের এতো সুসজ্জিত অভিজ্ঞতার শেষে রাত পেরিয়েই এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে তাও কস্মিনকালেও কেও ভাবতে পারেনি। এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারলেন না কাকলি বেগম। বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে উঠতেই মেয়ের উপরে অসহনীয় ক্রোধ উতলে পড়লো, ক্ষ্যাপাটের মতো ছুটে এসে তাথইয়ের বাহু জোরে চেপে ধরে বললেন

– এসব কি শুনছি আমি? তুই কি আমাদের মান সম্মান ডুবাতে চাস? কাল এতো কিছু হয়ে গেছে আর আমরা জানি পর্যন্ত নাহ? কি করেছিস তুই? কি না শেষে অরুণকে..

বাকিটুকু বলার আগেই মুখের কথাটা প্রচন্ড ক্রুদ্ধতার সহিত ছি’নিয়ে নিলেন অরুণের মা মিসেস রূপালী। ছ্যানব্যান করে উঠে বললেন

– স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝামেলা হবে এটা তো বড়ো ব্যাপার নাহ। কিন্তু এর মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি কেনো আসবে? ওই ছেলে আপনার মেয়ের কি হয় কাকলি আপা? সে কেনো আমার ছেলের গায়ে হা’ত তুলেছে

কাকলি বেগমের অপমান, লজ্জায় মাথা হেট হয়ে এলো। ভাবতেও পারেনি এমনটা। তাথই পাথরের মতো নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে, আড়চোখে একবার শুধু তাকালো বাবা মায়ের মাঝে অতি ভদ্রলোকের মতো বসে থাকা ঘৃণ্য চেহারাটার দিকে। তাচ্ছিল্য হাসলো, মনে মনে বলল

– আমি কি চিনি না তোমাকে? আমি তো জানতাম ঠিক এমনটাই চাও তুমি

– তাথই, এভাবে চুপ করে আছো কেনো? তোমাকে কি জিজ্ঞাসা করা হয়েছে? কালকে এতো বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেলো আর তুমি এখনো এমন চুপ করেই দাঁড়িয়ে আছো?

আরহাম মুর্তজার ধমকানিতে তাথই মুখ তুলে তাকালো। অকপটে বলল

– উনারা বললোই তো। আমি আবার নতুন করে কি বলবো।

– সম্পর্ক টাকে কি ছেলেখেলা পেয়েছো? কিছু মনে করবেন না বেয়াই সাহেব। এতদিন ধরে আপনার মেয়ের এতো দেমাগ, অপরাধ সহ্য করেছি কিন্তু এবার মাত্রা ছাড়িয়েছে। এমন তো না যে বিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাদের পায়ে পড়েছিলাম আমরা। আমাদের ছেলে কি ফেলনা নাকি? এই মেয়ে নিজের স্বামীর সাথে শ্বশুরবাড়ির কারো সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখেনি। আবার কাল এতো ভালোবেসে আমার ছেলে দেখতে এলো আর ওকে কি না একটা বাইরের ছেলে দিয়ে মা’র খাইয়েছে। ভাবতেও লজ্জা লাগছে যে আমরা এমন বাড়ির সাথে আত্মীয়তা করেছি।

কুটুমপক্ষ হতে এতগুলো কটাক্ষপূর্ণ কথা শুনে উপস্থিত সকলের মাথা হেট হয়ে এলো। মেহরাজ এখনও নিশ্চুপ বসে। পুরোটা বুঝতে ওর ও বেশ অসুবিধা হচ্ছে। ওদের সম্পর্ক টা টানাটানির পর্যায়ে আসবে তা হয়তো ওর মাথায় এসেছিলো, কিন্তু হুট করেই এমন কিছু শুনতে হবে তা ওর ভাবনার বাহিরে। উপস্থিত সকলের হয়ে তখন শাহারা বেগম দূর্বল গলায় বললেন

– দেখুন আমার মনে হয় কিছু একটা ভুল হয়েছে। আমার মেয়েরা এমন নয়। তাথই বনু একটু রাগচটা হতে পারে তা বলে কি

– সেটা আপনার তাথইয়ের কাছেই জিজ্ঞাসা করুন দিদা। আমি একটাও মিথ্যা বলেছি কি না!

অরুণের কথাতে মুখটা থমথমে হয়ে এলো শাহারা বেগমের। অরুণের বাবা এবার গুরুগম্ভীর ভাবে আরহাম মুর্তজাকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– আপনাদের মেয়ের যদি এতই আপত্তি থাকে তাহলে বলে দিন আমরা খুব শীঘ্রই আইনি ব্যবস্থা নেবো। জোর করে আর যাই হোক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়না।

অরুণের বাবার মুখে এরূপ কথা শুনে বিচলিত হয়ে উঠলো কাকলি বেগম। অনুনয়ের সুরে বললেন

– না না এমন কথা বলবেন না ভাই। ওদের বিয়ে হয়েছে, সন্তান আছে ছাড়াছাড়ির কথা কেনো আসছে। আমি বুঝতে পারছি অনেক বড়ো একটা ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু ভুল যখন হয়েছে সমাধান ও হবে। তবুও এভাবে বলবেন না

বলে তাথইয়ের হাত ধরে টেনে অরুণের সামনে এনে বলল

– অরুণের কাছে ক্ষমা চা তুই। এতো বড়ো একটা অনাচার করার আগে তোর বুক কাঁপলো না মুখপু’ড়ি! এক্ষুণি তুই ক্ষমা চাইবি সকলের কাছে।

বলে ওদের দিকে ফিরে বলল

– ওর ভুল হয়েছে ও ক্ষমা চাইবে। আর যে অরুণের সাথে বেয়াদবি করেছে তাকে আমি নিজে আনবো আপনাদের সামনে, ও নিজেও ক্ষমা চাইবে।

তাথই চোখ ভরা ক্রোধের আগুন নিয়ে একবার অরুণের দিকে তো আরেকবার মায়ের দিকে তাকালো। কাকলি আবারও ওকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কথা বললে সকল আদব কায়দা ভুলে তাথই ক্ষুব্ধ স্বরে চেঁচিয়ে বলল

– কক্ষনো নাহ, এই শয়তান টার কাছে আমি ক্ষমা দূর কথাও বলতে চাইনা। মা’র খেয়েছে বেশ হয়েছে। এটা আরও আগে খাওয়া উচিত ছিলো ওর।

ভরা আসরে তাথইয়ের দুঃসাহসিক এই কাজটা উপস্থিত সকলকে হতবাক করে দিলো। পরিস্থিতি আওতার বাইরে যাচ্ছে এর পূর্বাভাস পেয়ে এতক্ষণ চুপচাপ উপরে দাঁড়িয়ে থাকা মোহর ব্যস্ত পায়ে ছুটে নেমে এলো। তবে ততক্ষণে মোহরের শঙ্কাকে ঠিক প্রমাণিত করে কাকলি বেগম সজোরে ঠা’স করে একটা চ’ড় বসিয়ে দিলো তাথইয়ের গালে। অকস্মাৎ ধাক্কা সামলাতে না পেরে ধুপ করে মেঝেতে পরে গেলো তাথই।
বড়ো বোনের এই অবস্থা দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সাঞ্জে, কিন্তু বড়োদের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যেতে পারলো নাহ।
ক্ষুব্ধ হয়ে কাকলি তাথইয়ে আবারও টেনে তুলে হাত তুললেও পেছন থেকে খপ করে হাতটা ধরে ফেললো মোহর, তাথইকে নিজের কাছে সরিয়ে নিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল

– সম্পূর্ণ সত্যটা যাচাই করার আগেই নিজের মেয়েকে আঘা’ত করতে বিবেকে বাঁধলো না আপনার? উনারা এসে যা বলল তাই মেনে নিলেন? মেয়েকে আবারও সেই জাগায় ঠেলে দেওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে যাচ্ছেন? আদও সেই জাগাটা মেয়ের জন্য সঠিক কি না তা ভাববার প্রয়োজন বোধ হলো না আপনার?

একসাথে এতগুলো কথা উচ্চস্বরে বলেও হাফিয়ে গেলো না মোহর। বরং ভেতরটা যেনো রাগে, যেদে জ্বলে উঠলো আরও। আম্বি বেগম এগিয়ে এসে মোহরকে উদ্দেশ্যে করে বলল

– তুমি এখানে কেনো এসেছো? আগামাথা না জেনে বুঝেই কথা বলতে কে বলেছে তোমাকে?

– শুধু আগামাথা নয়, বরং পুরোটাই জানি আমি

বলেই অরুণের দিকে ফিরে ক্রুর চেহারায় রহস্যময়ী গলায় বলল

– তাই না অরুনাভ ব্যানার্জি?

চোখ দু’টো ক্রমশ নিষ্পলক, বৃহত্তাকার হয়ে এলো অরুণের। ঠিক কতটা তকমা লেগেছে সেটা ওর মুখাবয়বে ব্যক্ত করা সম্ভব নাহ। গতরাতে ধস্তাধস্তির সময় দেখেছিলো এক পলক। কিন্তু অন্যরকম সাজ আর মেকাপের আবৃত চেহারাটাকে অতটা ঠাওর করতে পারেনি। মোহরের চেহারাটা মস্তিষ্কে ধরতে পেরেই না চাইতেও মুখ ফসকে অরুণের বেরিয়ে এলো

– মোহর? তুমি!

– হ্যাঁ আমি। কাল তো রাতের অন্ধকারে টের পাননি আজ নিশ্চয় চিনতে অসুবিধা হচ্ছে নাহ!

অবিলম্বেই উত্তর দিলো মোহর। ওদের কথপোকথনের কোনো অংশই কারো বোধগম্যে আসলো নাহ। মেহরাজ এগিয়ে এসে মোহরকে বলল

– আপনি আর অরুণ কি পূর্বপরিচিত মোহ?

মোহর স্মিত হাসলো। খুবই সহজতর গলায় বলল

– হ্যাঁ চিনি তো। আপনাকে একটা কাজ করতে বলেছিলাম, সেটা হয়েছে?

মেহরাজ বিব্রত মুখেও ঘাড় উপর নিচ করে হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলো। মোহর অদ্ভুত ভাবে অরুণের দিকে তাকিয়ে বলল

– আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে অরুনাভ ব্যানার্জি, একটু দাঁড়ান।

বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।
.
.
.
চলমান

#হীডিংঃ বৃহৎ, বিশাল পর্ব দিয়েছি। আশা করছি এতগুলো প্রহরের অপেক্ষাটার যথার্থ মূল্যায়ন করতে পেরেছি? এবার ফটাফট পড়ে মন্তব্য করে ফেলুন, অপেক্ষারত!

©Humu_❤️
#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৩৬(চূড়ান্ত অংশ)
#হুমাইরা_হাসান

বিব্রত, জড়ত্বপূর্ণ চেহারাতে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো, পরনের জামা টা হাত দিয়ে টেনে সোজা করলো, ওড়নাটা ভালো মতো গায়ে জড়িয়ে দাঁড়ালো এক কোণায়। দুইতালা বাড়িটা জুড়ে বিশদ আভিজাত্যের ছাপ। আড়ষ্টচোখে চারপাশ টা অবলোকন করে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো।
গাড়িটা যথাস্থানে পার্ক করে ড্রাইভার এগিয়ে আসলো, কৃষ্ণাভ গড়নের লোকটি মাথার টুপিটি খুলে এক বাহুতে চেপে ধরে আরেক হাতে চাবি পকেটে পুরে বলল

– ভেতরে আসুন

কেমন একটা অজানা আশঙ্কা ক্রমেই ঘিরে ধরছে। হুট করেই আজ এইখানটার তলব কেনো এলো! মনটা কেমন কু গাইছে, প্রচণ্ড চিত্তগ্রাহী, প্রসংশা তুল্য বাড়িটির ভেতরে যেনো অজানা কোনো কিছু অপেক্ষা করছে যা মোটেও সুখকর হবে নাহ। এরূপ হাজারো দুশ্চিন্তা, কল্পনা ও অভিপ্রায় নিয়েই এগোলো রোমহ্নন পায়ে।

.

– অরুনাভ ব্যানার্জি? কাকে এই নামে ডাকছো তুমি?

ভারী গলার প্রশ্নসূচক কণ্ঠে মোহর এগোতে গিয়েও থেমে গেলো। আজহার মুর্তজা সকৌতুকে চেয়ে মেয়েলী মুখখানার দিকে। তার জিজ্ঞাংসুকে প্রশান্ত করে মোহর হতে জবাব টুকু আসার আগেই কাকলি বেগম ক্ষ্যাপাটে সুরে বলল

– এই মেয়ে যা তা বকছে। কাকে কি বলছে ও? মেহরাজ তোমার বউকে বলো নাক না গলাতে, আমার মেয়ে আমার পরিবার ওকে কে এতো ওস্তাদি করতে বলেছে? তাও যা নয় তা বলে যাচ্ছে।

মেহরাজ প্রত্যুত্তর না করলেও মোহরের দিকে চোখভরা উৎকণ্ঠা আর সওয়াল সুলভ চাহনিতে তাকালে মোহর মেহরাজের নিকট এগিয়ে এসে ভীষণ ধীমি গলায় বলল

– আমাকে বিশ্বাস করেন আব্রাহাম সাহেব?

মেহরাজ বুকভরা অজানা উৎকণ্ঠা, দুর্ভাবনা সত্ত্বেও একেবারেই পানির ন্যায় স্বচ্ছল চোখের ইশারা করলো। যার মর্মার্থ আর কারো দৃষ্টিগোচর না হলেও মোহরের ফুলে এক ফালি হাসি আনার জন্য যথেষ্ট ছিলো।

– তুমি আসলে কি বলছো আর কি করছো যানো? তোমাকে এসবে মাথা ঢুকাতে কে বলেছে, নিজের ঘরে যাও তুমি

আম্বি বেগম শাসনাত্বক গলায় বললেন এগিয়ে আসতে আসতে, তবে মোহর এবার আর জবাবের প্রয়োজন বোধ করলো না। তার আগেই কলিং বেলের ধাতব শব্দটা টানটান মুহূর্তে একটা নীরব হুল্লোড় ফেলে দিলো, চোখ দুটো আরও প্রসারিত করে মোহর এগিয়ে গেলো।
দরজাটা খুলতেই কাঙ্ক্ষিত চেহারাটা সামনে আসলেও এবার আর মুখের হাসিটা বহাল রাখতে পারলো নাহ। প্রিয়জনের ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বুকে জিরিজিরি ব্যথার প্রাদুর্ভাব ঘটিয়েছে। তবুও যা সত্য তা আজ হোক আর কাল সকলের সামনে আসতেই হতো, ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস টেনে সরে দাঁড়ালো দরজা থেকে। আগন্তুকের হাতটা সন্তপর্ণে নিজের মুঠোয় আঁকড়ে নিলো, দৃঢ় বন্ধনটা জোরালো করে এগিয়ে নিয়ে এলো ঘরের ভেতরে,মধ্যিখানে।

সকলের উৎসুক, অনুসন্ধিতসু দৃষ্টি তখন মোহরের সাথে প্রবেশকারী সম্পূর্ণ আগন্তুক মানুষটার দিকে। হালকা বাদামি রঙের একটা সালোয়ার পরিহিত শুভ্রতার দিকে। হালকা পাতলা,ছোট খাটো গড়নের মেয়েটির মুখ জুড়ে জড়তা, বিব্রতের ছাপ। বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে শাহারা বেগম বললেন

– এটা কে মোহর?

মোহর এবার ঘুরে দাঁড়ালো অরুণের মুখোমুখি যার মুখটা আগন্তুকের আগমনেই রক্তহীন, পান্ডুরে পরিনত হয়েছে। মুখ চিরে নিজের সম্পূর্ণ অজান্তেই নামটা বেরিয়ে এলো

– শ্রীতমা!

চোখ দু’টো অদ্ভুত বিস্ময়ে ভরে এলো। এতগুলো মানুষের উপস্থিতি আর উৎকণ্ঠাকে অগ্রাহ্য করে শ্রীতমা বিস্মিতস্বরে বলল

– অরুন তুমি এখানে? এখানে কি করছো? তুমি তো চট্টগ্রাম গেছিলে!

পরিস্থিতি আরো বেগতিক হয়ে উঠলো, একের পর এক অদ্ভুত ঘটনায় তকমা লেগে বাকশক্তির খেঁই হারিয়েছে সবাই । ছেলের মুখের দিকে না তাকিয়েই রূপালি প্রচন্ড বিরক্তি আর তিক্ততা নিয়ে বলল

– কি যা তা শুরু করেছেন আপনারা? এই মেয়ে কি বলে যাচ্ছে তখন থেকে? এটা কি নাটক সিরিয়াল চলছে? কে এই মেয়ে আর আমার অরুণকে অরুনাভ ব্যানার্জি না কি এসব কেনো বলছে এই মেয়ে

– বলছি কেনো তা আপনার গুণধর ছেলেকেই জিজ্ঞাসা করুন, এই মেয়ে কে তার সাথে আপনার ছেলের কি সম্পর্ক তা আপনার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করুন। কেনো নিজের স্ত্রী, সন্তান থাকা সত্ত্বেও নিজের জাত, কূল, ধর্ম ভুলে মিথ্যে একটা পরিচয় বানিয়ে এই মেয়েটার সাথে সম্পর্কে জড়ালো তা আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞাসা করুন! এই রকম নিচ, বহুরূপী, ফ্রড একটা ছেলের হয়ে গলাবাজি করার আগে দশবার ভাবা উচিত ছিলো আপনার

সুনসান নীরবতাকেও হার মানালো আব্রাহাম ম্যানসনের ডাইনিং রুমটা। দশাধিক উপস্থিতিতে সত্ত্বেও নিঃশ্বাসের ফোঁসফোঁস শব্দ ছাড়া একটা টু শব্দ অব্দি সৃষ্টি হলো নাহ। মেয়েলী স্বরের তীক্ষ্ণ চিৎকার আর উচ্চশব্দে সব কটাক্ষ,হেয় আর ধমকানি মুহুর্তেই দমে গেলো। একে অপরের মুখে প্রচন্ড অসহায়ত্বক দৃষ্টি ফেলা ছাড়া কিছুই বোধগম্য হলো না কারো।
কিন্তু এটুকু বলেই দমে গেলো না মোহর, চিকন স্বরের কণ্ঠের খাদ আরও উচ্চরবে বলল

– এই যে আপনাদের ছেলে, এই বাড়ির সম্মানিত জামাতা। সে নিজের বউ রেখে অন্য একটা মেয়ের সাথে অগাধ সম্পর্কে জড়িয়েছে তাও নিজেকে হিন্দুধর্মী বলে দাবী করে! সেই খোঁজ জানা আছে? ছেলে আর তার বউয়ের সম্পর্ক স্বাভাবিক না বলে চলে এসেছেন বউকে দোষারোপ করতে, নিজের ছেলে আদও কতটা চরিত্রধার তার হিসেব রেখেছেন? বলুন রেখেছেন?

দম ছাড়লো লম্বা একটা, আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগেই দূর্বল, সিক্ত একটা কণ্ঠ কানে আসতে থমকে গেলো মোহর, ঘাড় ঘুরিয়ে বিচলিত চোখে তাকালো নিস্তেজ, নির্বাক রূপে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে।
দু কদম এগিয়ে গেলো শ্রীতমা, কাঁপা কাঁপা গলায় বলল

– অরুনাভ এরা কি বলছে? এরা কে হয় তোমার? কিসের বউ বাচ্চা, কিসের মিথ্যে নাটক? বলো অরুন চুপ করে থেকো না বলো মোহর কি বলছে এসব? এসবের মানে কি?

অরুণ কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পেলো, ঠিক এভাবে সবার সামনে সবটা উন্মোচন হবে এটা ভাবতেও পারেনি, এখন কি জবাব দেবে? নাকচ করার মতো পরিস্থিতি কি আদতেও বাকি আছে!
টলটলে দৃষ্টি, টলমলে পা। অন্তরপুরি তে কতটা

শ্রীতমার ভেতরে যে উথাল-পাথাল ঝড় উঠেছে, কতটা তীব্র দহন ছড়িয়েছে তা কি মুখে বলে বোঝানো সম্ভব? সকালে ফোনের রিংটনে ঘুম ভাঙলেই শুনতে পেয়েছিলো প্রিয় পরিচিত এক কণ্ঠের আদেশ সুলভ অনুরোধ ‘ তোর হোস্টেলের নিচে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, এক্ষুনি ওটাতে করে চলে আই। প্রশ্ন করিস না,আমিই পাঠিয়েছি গাড়িটা ‘
প্রাণপ্রিয় বিশ্বস্ত বান্ধবীকে আর দ্বিতীয়টি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়নি জবাবে।সদা সর্বদা বাধ্য মেয়ের মতোই আদেশ মতন চলে এসেছে। কে জানতো এখানে এতো বড়ো প্লবন অপেক্ষা করছে ওর জন্য? যা ওর এতগুলো দিন ধরে গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু সুখের রাজ্য টাকে নিমিষেই ছারখার করে দেবে!

– আমি বলছি এসবের মানে কি।

এই মুহুর্তে ঠিক শ্রীতমার মতোই আরও একজনের মনে তুফান আসার কথা ছিলো। বিস্ময়, আঘাত, যন্ত্রণায় বুক ফেটে কান্না আসার কথা ছিলো কিন্তু সেই মানুষটা এসব অনুভূতিকে ভীষণ দাম্ভিকতার সহিত ঠেলে দিয়ে মুখভর্তি স্বাভাবিকতা নিয়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো শ্রীতমার পাশাপাশি। যেনো মুখস্থ ছড়া আওড়াচ্ছে, এরূপের ন্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলল

– তুমি যতগুলো প্রশ্ন করলে এর সবগুলোর উত্তর আমি দেবো। এই যে মানুষ টা দাঁড়িয়ে আছে তোমার সামনে, যাকে তুমি গত কয়েক মাস ধরে ভালোবেসে নিজের প্রেমিক,ভবিষ্যৎ পুরুষ অরুনাভ ব্যানার্জি বলে জেনে আসছো আসলে সে হলো অনল মাহমুদের জেষ্ঠ্য পুত্র অরুণ মাহমুদ, যার সাথে আড়াই বছর আগে আমার বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো আর মাস ছয়েক আগে আমাদের একটা কন্যা সন্তান ও হয়েছে। আইন অনুযায়ী আমি এখনো যার লিগাল ওয়াইফ।

নিজের অজান্তেই টুপটুপ করে অসংখ্য অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়লো শুভ্র মুখটা জুড়ে। এখনো সবটা অস্পষ্ট, গোঁজামিলে ঠেকছে। অনড় তাকিয়ে রইলো সামনে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকা অপরাধীর পানে যে কি না এতো বড়ো পাপ করেছে তার বিক্ষোভে একটা নয় দু দুটো জীবন আজ বিধ্বংসী মোড়ে দাঁড়িয়ে। তবুও শেষ বারের মতো একবার বুক ভরা আশা নিয়ে শ্রীতমা এগোলো, অসহায়, নির্জীব কণ্ঠে অনুরক্তির স্বরে বলল

– তুমি চুপ করে আছো কেনো অরুনাভ? একটা বার শুধু তুমি বলো এসব মিথ্যে,নাটক। তোমাকে মিথ্যে অপবাদে জড়াচ্ছে এরা, আমি তাই মেনে নেবো। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি খুব। তুমি ছাড়া আমার নিজের বলে কে থাকবে? তুমি একটা বার শুধু বলে দাও এরা মিথ্যা বলছে আমি সব নিকৃষ্ট কথাগুলো ভুলে যাবো। তুমি বলো না একবার বলো!

তিব্র অনুরোধ, অসহায়ত্ব নিমিষেই কান্নার ফুলকিতে পরিনত হলো। স্থান,কাল, পরিস্থিতি ভুলে বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পরলো শ্রীতমা, ওর বিধ্বস্ত অবস্থাটা মোহরের অন্তরটা চুরমার করে দিলো, ওকে দু’হাতে আগলে ধরে বলল

– শ্রী শান্ত হ। আমি তোকে অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুই যাকে এতটা ভরসা করে ভালোবাসছিস নিজের সবটা দিয়ে, সে আদও কে। তুই কেনো শুনিস নি বল, এই মানুষটা একটা ঠক। তোকে ঠকিয়েছে, ব্যবহার করেছে। এর জন্যে তুই কেনো কাঁদবি বল। আমার কথা টা শোন

মোহরের হাতটা তিক্ততার সাথে ছাড়িয়ে নিলো শ্রীতমা। নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে অরুণের দিকেই তাকিয়ে।
মেহরাজ এগিয়ে এসে অরুণের সামনা-সামনি দাঁড়ালো, ওর ক্ষুব্ধ চেহারায় তাকিয়ে আজহার শঙ্কিত গলায় বলল

– মেহরাজ, তুমি আগেই..

পুরোটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই থেমে যেতে হলো বাঘের থাবার ন্যায় হাতটার ইশারায়। তীক্ষ্ণ চোখটা অরুণের দিকে তাক করেই নিজ পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বলল

– তোমরা এতদিন, এতক্ষণ বলেছো। অনেক বলেছো। এবার যা বলার আর যা করার আমি করবো। কারো মতামত বা পরামর্শ যেনো ভুলেও আমার কান অব্দি না আসে

শান্ত অথচ প্রচণ্ড ধারালো শব্দের নীরব ধমকানিতে নিস্তব্ধ হয়ে রইলো বাড়িটির প্রতিটি দেওয়াল। কাজের লোক / স্টাফ’স গুলো রান্নাঘরের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে এদিকের অবস্থাটা বোঝার দায়ে।
মেহরাজ ক্ষ্যাপাটে মুখটা অরুণের দিকে নিক্ষেপ করে বলল

– তোমার কিছু বলার আছে অরুণ? নিজের হয়ে সাফাই গাইবে না? এক্সপ্লেইন্যাশন দেবে না? নাকি ভদ্র কা’লপ্রিটের মতো সবটা শুরুতেই মেনে নিলে।

-, ও কি সাফাই গাইবে, রাতের পর রাত কাজের বাহানা দিয়ে বাইরে বাইরে থেকেছে। ওর ফোনে মেয়েদের অসংখ্য ফোন কলস,ম্যাসেজ গায়ে মেয়েলি পারফিউম এমনকি ওর পকেটে আমি কতো বার মেয়েলী জিনিস দেখেছি।এসব অগ্রাহ্য করতে পারবে? মেয়েদের সাথে ওর ফোনালাপ আমি নিজ কানে শুনেছি সেই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে উল্টো আমাকেই দোষারোপ করেছে, এসবের পরেও ও কোন মুখে বলবে!

অরুণ কথার খেই হারিয়ে নির্বাক,নিশ্চুপ। শ্রীতমার সাথে সম্পর্ক অস্বীকার করার কোনো রাস্তায় নেই। কারণ শ্রীতমার ফোনে ওদের অসংখ্য গোপনীয় ছবি ক্যামেরাবন্দী করা। তার একটাও যদি প্রমাণ স্বরূপ দেখিয়ে দেয় ওর হাড় গুলো ও হয়তো আস্তো রাখবে না মেহরাজ। বহুক্ষণ আমতা-আমতা করেও মুখ চিরে কোনো শব্দের আগমন ঘটাতে পারলো নাহ।
অনল মাহমুদ মাথা হেট করে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে। বড়ো মুখ করে যাদের অপমান করতে এসেছিলো তাদের সামনেই এখন লজ্জায় অপমানে নুইয়ে আসছে ব্যক্তিত্ব। ক্ষুব্ধ হয়ে খিটখিটে গলায় ছেলেকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ঠা’স করে সপাটে চ’ড় বসিয়ে দিলো। মেহরাজের বুলি নিজেই ছিনিয়ে নিয়ে বলল

– ছিহহ,,তোর মতো নালায়েক কে জন্ম দিয়ে আমি পাপ করেছি। এত বড়ো একটা পাপ তুই করলি? নিজের বউ থাকতে অন্য একটা মেয়ে? মানুষের সামনে আমাদের মান সম্মান সব উড়িয়ে দিলি, লজ্জা করছে না তোর!

এখানেই থামলো নাহ। সকলকে অগ্রাহ্য করে ছেলেকে যা নয় তা বলে গেলেন। আর এতো সবের একটাই কারণ, তা হলো মেহরাজ। ওর চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে নাহ, নিজের ছেলের মতো চুনোপুঁটিকে মেহরাজ পায়ের তলে পি’ষার ক্ষমতা রাখে তা কারোই অজানা নয়। ভয়টা সম্মানের চেয়ে নিজের ছেলের প্রতিই বেশি হচ্ছে এখন।
মেহরাজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো নাহ, বোন আর তার সন্তানটার প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে উঠলেই ক্ষিপ্ত হয়ে অরুণের কলার টেনে ধরে বলল

– রাস’কেল! কি মনে করিস নিজেকে। তুই কার সাথে ছেলে খেলা করিস। তাথই কে? তোর বিয়ে করা দাসী? নাকি মনোরঞ্জন করার খেলনা। তুই কাকে ধোকা দিস,ব্যবহার করিস। এতদিন আমি চুপ ছিলাম কারণ আমার বোন কথা বলতে দেয়নি, আজ তোকে মে’রে ফেললেও…

– উনাকে ছাড়ুন, প্লিজ রেগে গিয়ে কোনো অঘটন করবেন নাহ

মেহরাজকে জোর করে হাত ধরে সরিয়ে আনলো মোহর, প্রচণ্ড ক্রুদ্ধতায় মোহরের চেহারাটা দেখে মেহরাজ প্রত্যুত্তর করলো নাহ। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে নাহ। মোহর ব্যস্ত হয়ে বলল

– আমি অনুরোধ করছি এমন কিছু করবেন না যাতে অনাচার সৃষ্টি হয়।

– ভাইয়া তুই ওকে ছাড় প্লিজ। ওকে চলে যেতে বল, এক্ষুনি চলে যেতে বল। আমি কিচ্ছু চাইনা শুধু ওর চেহারা টা যেনো আমার সামনে আর না আসে। আমি আজ অব্দি কিছু বলিনি, এর পরেও বলবো না কিন্তু দোহাই তোদের ওকে সরা আমার চোখের সামনে থেকে, আমি সহ্য করতে পারছিনা আর ওকে।

বিরক্তি আর ক্রোধে তাথইয়ের সারা শরীর কেঁপে উঠলো। মেহরাজ বোনের দিকে তাকিয়ে ওকে বোঝাতে গেলেও তাথই শুনলো নাহ, অস্থির হয়ে বলল

– ভাইয়া তুই অন্তত আমার কথাটা শোন। আমি কিচ্ছু চাচ্ছি না আর। ওকে কিছু কি বলবি আমার জীবনটার এই অবস্থাটা তো আমার নিজের মানুষ গুলোই করেছে, নিজেদের স্বার্থে আমাকে ওরা বিয়ের নামে বিক্রি করেছে।আমি শুধু আমার মেয়েকে নিয়েই বাঁচতে চাই একটু শান্তিতে। ওকে চলে যেতে বল ভাইয়া আমি আর ওদের সহ্য করতে পারছিনা।

আজহার মুর্তজা চুপ করে থাকলেও আরহাম ছুটে এলো। সমস্ত ভদ্রতার মুখোশ চিরে উচ্চস্বরে বলল

– এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। অনেক ভালো মানুষি দেখিয়েছি। এক মুহূর্ত আপনাদের মুখ দেখতে চাইনা। আপনার ছেলে যা করেছে তার শাস্তির এক ফোঁটাও মাফ যাবে না। যা দেখার কোর্টে দেখা যাবে

মুর্তজা পরিবারের ক্ষমতা, খ্যাতি আর হাতটা যে ঠিক কতদূর লম্বা হতে পারে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইনা। আপাতত পরিস্থিতি বাঁচাতে অনল মাহমুদ ছেলের হাত ধরে ক্ষিপ্ত পায়ে বেরিয়ে গেলো। অসম্মান, অপমানে মাথা হেট হলেও প্রত্যুত্তরের কোনো সুযোগ নেই। মুহুর্তেই বাড়ির ত্রিসীমানা পেরিয়ে যেতেই তাথই আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো নাহ। ছুটে নিজের ঘরে চলে গেলো। এতক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেও নিজের বোনকে এই পরিস্থিতিতে একা ফেলাটা কতটা অসমীচীন তা ঠিক বুঝতে পারলো সাঞ্জে, তাথইয়ের পিছু পিছু ওউ ছুটলো।

কিন্তু তখনো স্থির রইলো শ্রীতমা। ওর এখনো সবটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে, আদও কি এটা বাস্তব? এতটা নাটকীয় ও হয় বাস্তবতা? এভাবে ঠকে যায় মানুষ! কাল রাত অব্দি যার সাথে কথা বলল সেই মানুষটার এই রূপটা আজ কি করে সহ্য করবে ও! আকাশ পাতাল উচাটন সামলাতে পারলো না শ্রীতমা, সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে, কাঁধের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেলেও ঘুরে তাকালো নাহ। এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে সরে এলো। শরীরের সমস্ত শক্তি চিরে ছুটলো। মোহর ওর পেছনে আসলেও শ্রীতমা ওর কোনো কথায় কানে নিলো না, এক ছুটে গেট পেরিয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়িটার চৌহদ্দী মাড়িয়ে।
দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটতে ছুটতে অনেকটা পেরিয়ে এলো, চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসছে, কোনো কিছুই মস্তিষ্ক ঠাওর করতে পারছে না। বাবা-মা পরিবার হীনা এতিম জীবনে একটা ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন দেখেছিলো। সেটাও মিথ্যে! এতো নিষ্ঠুরতম নাটক!
আর ভাবতে পারছেনা কিছুই,প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত মন মস্তিষ্ক, টলমল চোখ আর পায়ে ছুটতে ছুটতে হুট করেই রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালো, অদূর হতেই তীব্র বেগে ছুটে আসলো একটা গাড়ি।
প্রচণ্ড বেগে লাগাম টেনে ব্রেক কষার আগেই ধাক্কা লাগলো শরীর টাতে,ছিটকে পড়লো রাস্তার মাঝে
.
.
.
চলমান

#হীডিংঃ অসময়ে হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত উপহারটি দিয়ে যেমন চমকে দিলাম, তেমনই শিগগির পড়ে ফেলে আপনাদের অতীব প্রাণোচ্ছল মন্তব্য গুলো ফটাফট লিখে ফেলুন।

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here