প্রিয়_অভিমান🥀🥀পর্ব-১৬

প্রিয়_অভিমান🥀🥀পর্ব-১৬
#ফাবিহা_নওশীন

||

রুহানি, নুশা আর রনকের সামনে কফি রেখে বলল,
“উফফ! ফাইনালি, আমি একটা জব পেয়ে গেলাম। হ্যা এটা ঠিক যে জবটা খুবই ছোট, স্যালারি কম তবে জব পেয়েছি এতেই খুশি। চারদিন কাজ করে আঠারো হাজার পাচ্ছি তাই অনেক।”

রনক কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
“এতে করে ভার্সিটিতে দুদিন ক্লাস করতে পারবে আর বাকি দুদিন মিস যাবে। সেটা আমি কভার করে দেব। চিন্তা করো না। তবে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে হবে। এই জবে তোমাকে তেমন খাটতেও হবে না।”

রুহানি গালে হাত দিয়ে বলল,
“পড়াশোনাতে আমার আর মন নেই। ইচ্ছে করে না।”

নুশা এতক্ষণ ওদের কথা চুপ করে শুনলেও রুহানির কথা শুনে বলল,
“যে করেই হোক গ্রাজুয়েট করতে হবে। মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিবি? আজীবন কি এই জব করবি? ভালো একটা জব পেতে হলে পড়াশোনাটা শেষ করতে হবে। আপাতত এই জব কর তারপর পড়াশোনা শেষ করে নিশ্চয়ই খুব ভালো একটা জব পাবি। সারাজীবন কেউ তোকে দেখবে না, নিজের ভবিষ্যত নিজেকেই তৈরি করতে হবে।”

রনক তাল মিলিয়ে বলল,
“অবশ্যই। দেখো রুহানি এমন অনেক জবের অফার আমি পেয়েছি কিন্তু রাজি হই নি। এখানে সেখানে টিউশনি করে বেড়াচ্ছি। কারণ কি জানো? আমার মঞ্জিল অনেক বড়। স্বপ্ন যখন দেখবেই বড় স্বপ্ন দেখা উচিত। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করছি বড় কিছু হাসিল করার জন্য। পরিবারের দুঃখ লাঘব করার জন্য। স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন পাড় করার জন্য। পার্ট টাইম জব করলে ক্লাস মিস যাবে, পড়াশোনার ক্ষতি হবে তাই করি নি। ভালো রেজাল্ট করে বের হলে ভালো একটা জব পাব সে স্বপ্নই দেখে যাচ্ছি। কিন্তু তোমার ব্যাপারটা আলাদা। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি এই জব করার জন্য তোমাকে সাপোর্ট করছি। তবে পড়াশোনা ছাড়ার কথা ভেবো না।”

“এখন না হয় না ভাবলাম কিন্তু আগামী বছর? ভর্তির সময় যাবতীয় খরচ ভার্সিটি রেখে দেয় তাই এ বছর স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারছি। শুধু ফ্রম ফিলাপ বাকি। কিন্তু আগামী বছর কি করে ভর্তি হব?”

“আগামী বছরেরটা আগামী বছর দেখা যাবে। ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবা জ্ঞানীর কাজ তবে ভবিষ্যত ভেবে ভেবে বর্তমান নষ্ট করা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।”

রুহানি রনকের দিকে হালকা হেসে চেয়ে বলল,
“বুঝেছি পন্ডিত মশাই। খুব বুঝেছি। চল ক্লাসে যাই। আগামী কাল তো আবার আসতে পারব না।”

ক্লাস শেষে রুহানি ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে সিড়ি দিয়ে নামছে। নুশা বকবক করে যাচ্ছে আর রুহানি তাল দিচ্ছে।

ফালাক নিচে দাঁড়িয়ে রুহানিকে দেখে ওর দিকে চেয়ে আছে। রুহানি সব সময় চুল খোলা রাখে। আজ উঁচু করে ঝুঁটি বেঁধেছে। গলায় একটা স্কাপ। হাতে কয়েকটা পাতলা বই। ফালাক অপলক ওকে দেখছে। রুহানির হটাৎ চোখ গেল ফালাকের দিকে। ফালাক ওর দিকে কিভাবে চেয়ে আছে। অদ্ভুত সে দৃষ্টি। রুহানিও ওর দিকে চেয়ে আছে। তবে ওর চাহুনি সাধারণ। রুহানি ওর দিকে চেয়ে ভাবছে ফালাক হটাৎ ওর দিকে এভাবে চেয়ে আছে কেন? কারণ উদঘাটন করায় ব্যস্ত। তবে আদৌও উদঘাটন করতে পারবে কি ওই গভীর চাহুনির কারণ?

ফালাকের চোখে চোখ পড়ার পরেও ফালাক চোখ সরাচ্ছে না। রুহানির কপালে ভাজ পড়ল। ফালাকের দিকে চেয়ে চেয়েই নামছে। হটাৎ হুচট খেয়ে পড়ে যেতে গেলে নুশা ধরে ফেলে বলল,
“আরে সাবধানে। কোথায় মন রেখে হাঁটছিস?”

রুহানির বুক ঢিপঢিপ করছে। এখনই পড়ে যেত। আমতা আমতা করে বলল,
“তোর কথা শুনছিলাম। আর কোথায় থাকবে মন?”
রুহানি ফালাকের দিকে তাকাল। ফালাক মিটমিট করে হাসছে৷ রুহানি চোখ ছোট ছোট করে নাক ফুলিয়ে ওর দিকে তাকাল। তারপর ভেংচি কেটে ওর দিকে আর না তাকিয়ে চলে গেল। ফালাক তখনও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। ওর মনে বসন্ত না আসতেও বসন্তের ছোয়া লেগেছে।

.

রুহানি সকাল সকাল রেডি হয়ে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। কেন জানি খুব নার্ভাস লাগছে। রুহানি শেষ বারের মতো জোরে শ্বাস নিল। তারপর শেষ বারের মতো আয়নায় নিজেকে দেখে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
বাবার কাছে গিয়ে বসল।
“বাবা দোয়া করো। অনেক নার্ভাস লাগছে।”

রুহানির বাবা ওর মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“সফল হও। আর নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। মনে মনে বলো আর বিশ্বাস করো যে তুমি সব পারো। না পারা নিয়ে সংশয় তোমার মনে ভয় সৃষ্টি করছে। এই ভয়কে হারাতেই হবে। কি পারবে না?”

রুহানি মুচকি হেসে বলল,
“অবশ্যই পারব। পারতে আমাকে হবেই।”

রুহানি উঠে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছে গেল। ওর মা-ও মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আমার দোয়া সব সময় তোর সাথে আছে। ভপ্য পাস না। সততার সঙ্গে কাজ করবি।”

রুহানি বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। রুহানি একটা ড্যান্স ইন্সটিটিউটে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে জব পেয়েছে। এই ইনস্টিটিউটের ওনার ইমন খানের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েন করেছে। ইনি একজন খ্যাতিমান ড্যান্সার। উনার আন্ডারে অগণিত স্টুডেন্ট নাচ শিখে এবং কয়েকজন খ্যাতিমান টিচারও আছেন। রুহানির কাজ ইমন খানের কাগজপত্র গুছিয়ে রাখা। সবকিছুর হিসাব রাখা,কোন দিন কোথায় ফাংশন আছে, কারা কারা এডমিশন নিচ্ছে এসব তথ্য সংগ্রহ করা।

রুহানি দশ মিনিট ধরে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারছে না। জীবনে অনেক দুঃসাহসিক কাজ করেছে কখনো ভয় পায় নি। কিন্তু আজ ওর খুব ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ যদি হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যেত। কিন্তু ও তো ছোট বাচ্চা নয় আর না এখানে এডমিশন নিতে এসেছে। এখানে কাজ করতে এসেছে তাই ওর নিজেকেই নিজের গার্ডিয়ান মনে করতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। রুহানি আশেপাশে তাকাল। কত বড় ইন্সটিটিউট। বিশাল বড় মাঠ। বড় বড় গাছ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঠের চারদিকে ঘেরা বড় দালান। সামনে বিস্তৃত খোলা বারান্দা। পুরো দালান থেকে একটা একতলা দালান আলাদা করে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেটাই হচ্ছে অফিস রুম। রুহানি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

রুহানি আল্লাহর নাম নিয়ে ভেতরে পা রাখল। নিজের পরিচয় দিতেই পিয়ন রুহানিকে বসতে দিল। রুহানি একদম সোজা হয়ে বসে আছে। আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে।
চুল ঝুঁটি করা, চাপ দাঁড়ি, খাম্বার মতো লম্বা, এক হাতেই কতগুলো ব্রেসলেট পড়া মাঝারি গড়নের একজন লোক ওর দিকে আসছে। লোকটা যতই ওর দিকে এগিয়ে আসছে রুহানির বুকের ধুকধুকানি বেড়েই চলেছে। রুহানি দাঁড়িয়ে গেল।
লোকটা ওর সামনে এসে ওকে দেখে নিয়ে বলল,
“তুমিই রুহানি! প্লিজ সিট।”

রুহানি বসে পড়ল। লোকটা রুহানিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“নাচ পারো?”

রুহানি উনার প্রশ্নে চমকে গেল। নাচ জানার সাথে এই কাজের কি সম্পর্ক? রুহানি উনার দিকে আড়চোখে চেয়ে বুঝার চেষ্টা করছে উনি কি মজা করে জিজ্ঞেস করল না সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না। না উনার চেহারায় হাসির চিহ্ন আছে আর না অধিক গাম্ভীর্য। রুহানি উত্তর দেয়াটাই শ্রেয় মনে করল।
“জি পারি।”

ইমন খান রুহানির উত্তর শুনে হেসে ফেলল। তারপর বলল,
“তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো তোমার কাজের সাথে নাচের কি সম্পর্ক? আসলে আমি তোমাকে ইজি করার জন্য এই প্রশ্নটা করেছি। তোমাকে অনেক নার্ভাস লাগছে।”

রুহানি অপরাধীর ভঙ্গিতে বলল,
“সরি স্যার। একচুয়েলি আমি লাইফে অনেক কিছু করেছি কখনো ভয় পাই নি। দু পাতা পড়ে পরীক্ষার হলে বসেও কখনো নার্ভাস হই নি। কিন্তু আজ কেন জানি নার্ভাস লাগছে।”

“মেবি আমি জানি কেন তোমার নার্ভাস লাগছে। আসলে তুমি ভয় পাচ্ছো। আর ভয়ের কারণ হচ্ছে তোমার কাছে এই জবটা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। তোমার মনে হচ্ছে যদি না পারো, যদি কোন কারণে জবটা না থাকে। এই জন্য ভয় পাচ্ছো।”

“মেবি স্যার।”

“আচ্ছা তোমাকে কিছু কথা বলে রাখি। আমার ইনস্টিটিউট থেকে অনেকেই বিভিন্ন ওকেশনে পার্টিসিপিট করে। যদি ঢাকাতে হয় তবে আমাকে যেতে হয় না। কিন্তু ঢাকার বাইরে হলে আমাকে ওদের সাথে যেতে হয়। আমাকে যেতে হলে তোমাকেও যেতে হবে। তুমি কি পারবে?” ইমন রুহানির দিকে চেয়ে ওর ভাব বুঝার চেষ্টা করছে।

রুহানির কাছে কোন উপায় নেই। এই কাজটা দরকার তাই বলল,”হ্যাঁ পারব।”

ইমন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওকে তো ডান। আমি অরুনকে বলে দিচ্ছি তোমার সব কাজ বুঝিয়ে দিবে।”

রুহানি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,”ওকে স্যার।”

.

ফালাক রুহানিকে ভার্সিটির কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। রুহানি আজ আসে নি। কিন্তু কেন? পরের ক্লাসেও রুহানিকে পায় নি। তারপর যখন আবার ভার্সিটিতে পেয়েছে তখন রুহানি ক্লাস, লাইব্রেরী আর রনকের সাথে ব্যস্ত ছিল। এক সেকেন্ডের জন্য ফ্রি ছিল না। রুহানি পড়াশোনা নিয়ে পড়ে থাকে। রুহানির বদলে যাওয়া গুলো ওর হজম হচ্ছে না। কিছু একটা ঘাপলা আছে কিন্তু কি খুঁজে পাচ্ছে না। নিয়ম করে দুদিন রুহানিকে ভার্সিটিতে দেখা যায়। বাকি দুদিন কোথায় থাকে? আর কেন এত বদলে গেল? পড়াশোনায় এত সিরিয়াস কেন? আর সেদিন নেশার ঘোরে বলা কথাগুলো। সব কেমন জানি এক জায়গায় এসে মিলে যাচ্ছে। রুহানি ওকে দেখেও দেখে না। ফালাক রুহানিকে এত গুরুত্ব দেয় কিন্তু রুহানি ফালাকের দিকে চেয়েও দেখে না। ফালাকের অস্তিত্ব ওর জন্য এক্সিটই করে না। বিষয়গুলো ফালাককে খুব পোড়াচ্ছে।

ফালাক রুহানির অনুপস্থিতিতে নুশাকে জিজ্ঞেস করল,
“রুহানির কি হয়েছে? ও ঠিক মতো ভার্সিটিতে আসে না কেন? দুদিন আসে তো বাকি দুদিন গায়েব থাকে। আর আগের চেয়ে অনেক বদলে গেছে। কেমন শান্ত হয়ে গেছে। আগের মতো হইচই করে না। পড়াশোনা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। কিছু কি হয়েছে?”

“নাহ! কি হবে? সব ঠিক আছে। কিন্তু আপনি এই প্রশ্ন কেন করছেন?”

ফালাক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ল। নুশাকে জিজ্ঞেস করে অনেক বড় বোকামি করে ফেলেছে।
“কিছু না। ওর পরিবর্তন দেখে আগ্রহ জন্মাল তাই জিজ্ঞেস করলাম। যদিও তুমি সঠিক উত্তর দেও নি। ইটস ওকে।”

ফালাক ভাবছে রুহানির সামনাসামনি হবে। ওকে জিজ্ঞেস করবে ওর কি হয়েছে। না বললে জোর করবে। তবুও জেনেই ছাড়বে। এটা ওর ভালোবাসার অধিকার। যদি জিজ্ঞেস করে কোন অধিকারে জিজ্ঞেস করছে তবে বলবে ভালোবাসার অধিকারে। আর লুকাবে না।

এদিকে নুশা রুহানিকে ফোন করে ফালাকের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছে। রুহানি চিন্তায় পড়ে গেল। ফালাক কেন ওর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে? ফালাকের সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here