পরীর দেশের ডেভিল,পর্ব-৯
শাহরিয়ার আবিদ
-আবিদ রাজপ্রাসাদের প্রতিটা কোণায় কোণায় দেখল। কিন্তু পরীকে কোথাও পাওয়া গেল না। আবিদ রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এল। সামনের রাজপ্রাসাদের দরজায়। কেউ নেই। সেখানে। এদিকে যত তত রাত ঘনিয়ে আসছে। আবিদ বুঝতে পারছে এখন সে কি করবে। কারো দেখা পাচ্ছে না। এখন রাজকুমারী কোথায় আবিদ তাও জানে না। তার ধারণা সে অজ্ঞান থাকা অবস্থায় পরীকে তুলে নিয়ে গেছে ডেভিলদুটো। কিন্তু ডেভিল গুলো কোথায় নিয়ে গেছে তা সে আর বলতে পারে না। এদিকে আবিদ কি করবে বুঝতে না পেরে রাজপ্রাসাদের সামনে বৈঠকখানায় গিয়ে বসে পড়ল। পানির পিপাসা পেয়েছে তার, পেটের মধ্যে ইঁদুরের ছানা দৌঁড়ানোর মতো পেটে ছো ছো করছে৷ তার পুরো শরীরের শক্তি ফুরিয়ে এল৷ শরীরটা বৈঠক খানায় এলিয়ে দিতেই আবিদ হারিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে।
রাফা আর সাইমনের জ্ঞান ফেরার তারা নিজেদের মাঠিতে শুয়া অবস্থায় আবিষ্কার করল। প্রথমে বুঝতে না পারলেও শেষে পূর্বের ঘটনাগুলো মনে করতেই বুঝতে পারল যে তারা ধোঁয়া মানবের সাহায্যে এখানে। তাহলে এটাই কি পরীর দেশ? চার পাশে সাদা ঝাপসা আলোয় অন্ধকারে দেখে যা মনে হচ্ছে। দুজনের মাথা এখনো ঝিম ধরে আছে। সাইমন ধোঁয়া মানবের রিংটা আনল কিনা সেটা দেখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছে। আশেপাশের জায়গা গুলো চষে ফেলছে। কিন্তু ধোঁয়া মানবের রিংটা পাচ্ছে না। সাইমনকে এমন চিন্তিত দেখে রাফা জানতে চাইল,
-কিরে কি হইছে তোর? কি খুঁজতেছিস?(রাফা)
-আরে ধোঁয়া মানবের আংটিটা। (সাইমন)
-ওটা কি তুই সাথে করে আনিস নি। (রাফা)
-আমার তো মনে হয়েছে এনেছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না এখন। (সাইমন)
-হায়, হায়,কি বলিস? (রাফা)
-হায়, হায় না করে তোর ব্যাগে একটু দেখনা আছে কিনা আশ পাশটাও দেখিস? (সাইমন)
-আচ্ছা দেখছি। (রাফা)
দুইজনে পুরো জায়গাটা চষে ফেলল কিন্তু কোথাও ধোঁয়া মানবের আংটিটা পেল না।
– এই যাহ এবার মনে হয় বিপদে আমরা পড়লাম। (সাইমন)
-তুই তো খাওয়া ছাড়া কোনো কাজ করতে পারিস না। (রাফা)
-আমার খাওয়া নিয়ে কোনো কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম না। (সাইমন)
-তো কি নিয়ে বলব শুনি। তুমি আজ পর্যন্ত ঝোলা ভরা ছাড়া আর কি কাজ ঠিক করে করছ শুনি একটু।। (রাফা)
সাইমন আর কিছু বলেনি মুখ গুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
-হয়েছে থাক থাক আর রাগ দেখাতে হবে না। এদিকে থাকা। আরে থাকা না।
(বলেই রাফা সাইমনের মুখটা ধরে তার দিকে ফিরালো। সাইমন রাফাকে বাঁধা দিতে যাওয়ার সময় রাফার হাতে সাথে সাইমনের হাত স্পর্শ হয়। রাফার হাতে সাইমনের হাতের স্পর্শের সময় কিছু একটা ছোয়া লাগে। রাফা তারাতাড়ি সাইমনের হাতটা দেখে। দেখার পর তখন তার চোখ কপালে উঠার অবস্থা। )
-ঐ। (রাফা বলল সাইমনকে উদ্দেশ্য করে)
সাইমনে তার পরেও কিছু বলছে না দেখে। রাফা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল
-সাইমন তুই একটু তোর ডান হাতের দিকে তাকাতো। (রাফা)
সাইমন তার ডানহাতের দিকে তাকাতেই সে চমকে উঠে…
-আরে এটা কোত্থেকে? (সাইমন)
-আমারো একি প্রশ্ন।(রাফা)
-মনে পড়েছে এবার, ধোঁয়া মানবের আলোর যাদুর গোলকে ঢুকার সময় এটা হাতে নিয়ে ঢুকেছিলাম। কিন্তু আমি এতক্ষণ সব জায়গায় খোঁজেছি কিন্তু নিজের হাতের দিকেই তাকালাম। (সাইমন বলতে বলতে একগাল হেঁসে নিল)
– ওরে পেটুক তুই আমাকে দিয়ে তাহলে এতক্ষণ কি খোঁজাচ্ছিলি। নিজের হাতে আংটি রেখে পুরো জায়গা খোঁজালি। যাই হোক ভালোই হয়েছে। (রাফা হাসতে হাসতে কথা গুলো বলল)
-যা ক্ষুধা লেগেছে না৷ পেটের মধ্যে ইঁদুর ছানা দৌঁড়াচ্ছে মনে মনে হয়। কিছু থাকলে দে না। (সাইমন)
-কিছুক্ষণ আগেই না এক ঝোলা খেয়েছিলি। এখন আবার কি এভাবে খেতে থাকলে একদিন ঠুস করে বেলুনের মত ফুটে যাবি। হাহা….(রাফা হাসছে আর বলছে)
-তাতে তোর কি?(সাইমন হাল্কা রেগেই প্রশ্নটা করল)
-আচ্ছা বাদ দে কাজের কথায় আসি। ধোঁয়া মনব থেকে জিগ্যেস কর আবিদ কোথায় আছে, কিভাবে আছে? ওর কাছে কিভাবে যাবো আমরা?(রাফা)
-আচ্ছা তুই সবসময় আবিদের এত চিন্তা করিস কেন? সবসময় কেয়ার করিস কেন?আমার জন্য তো করিস না।(আবিদ)
-তোর জন্য করি না কে বলেছে। না করলে কি তুই ফুটে যাবি এটা বলতাম। (রাফা)
-থাক থাক আমাকে খোঁচা মেরে আর চিন্তা করতে হবে না। (সাইমন)
-তাহলে তো ভালোই। এখন যা বলেছি তাই কর৷ (রাফা)
সাইমন আর কিছু বলল না। সে আংটিটার আলোকিত অংশটায় হাল্কা একটা চাপ দিতেই ধোঁয়া মানব বেরিয়ে এসেছে।
-কি জানতে চাও?(ধোঁয়া মানব)
-আবিদ এ মূহুর্তে কোথায় আছে? কিভাবে আছে? (রাফা)
-আবিদ এ মুহুর্তে রাজপ্রাসাদে আছে এর চেয়ে বেশি বলতে পারব না। (ধোঁয়া মানব)
-কিন্তু কেন?(সাইমন)
-আমার নিষেধ আছে।(ধোঁয়া মানব।)
-আচ্ছা এটা বলেন রাজপ্রাসাদের যাওয়ার রাস্তাটা কোন দিকে? (সাইমন)
– এদিকটায় সোজা গেল নদী পাবেন। সেখানে একটা জায়গায় নদীর মোড় আছে ওখান থেকে কিছুটা দূরেই রাজপ্রাসাদ টা দেখতে পাবে। (ধোঁয়া একটা রাস্তা দেখিয়ে দিল)
রাফা হাঁটা শুরু করতে যাবে এমন সময়….
-দাঁড়া একটু কিছু খেয়ে নি আর না হলে এক কদমও এগুতে পারব না। (সাইমন)
-উফ… তোকে নিয়ে হয়েছে একজ্বালা যখন দেখি তখনি খাবার। খেয়ে নে….(রাফা)
সাইমন তার ব্যাগ থেকে দুটো স্যান্ডউইছ আর একটা একটা স্ট্রেবেরির প্রোটিন শেক বের করল। একটা স্যান্ডউইচ রাফা কে দিল। রাফা অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিল। তার পর খাওয়া শেষ করে দুজনেই হাঁটা শুরু করল৷
…..
এদিকে আবিদ এভাবে কতক্ষণ ঘুমালো তা বলতে পারে না। কিন্তু যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন বুঝতে পারল দিন হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে দিন ভিন্ন । দিনের আলোটা কেমন গোলাপি। আবিদ মনে মনে “বলল মন্দ নয়”
কিন্তু আবিদ এতক্ষণ খেয়াল করল সে তো বাইরে বৈঠক খানায় শুয়েছিল। এখানে রাজপ্রাসাদের ভেতর সাদা তুলার, মখলমের বেড়ে শুয়া গায়ে কাশফুলের তৈরি কম্বল। আবিদ তারাতাড়ি বিছানা ছেড়ে ওঠে দেখল। তার সম্পূর্ণ কাপড় বদল। তার গায়ে সোনালি একটা কাপড় পুরো শরীরে একটা কাপড় যেটা দিয়ে পুরো শরীর ঢাকা। আবিদ তো মহা চিন্তায় পড়ে গেছে। বাইরে বের হল। দুজন পাহারাদার দাঁড়িয়ে আছে। আবিদকে দেখে মনে হচ্ছে সে বেশ রেগে আছে৷ নাকটা ফুলে ওঠেছে রাগে। হাল্কা লাল ও হয়েছে নাকের ডগাটা৷ আবিদ যাকেই ডাকছে কেউ তার কথা শুনছে না। উপায়ন্তর না দেখে আবিদ একটা চিৎকার দিল । কিন্ত কাকে উদ্দেশ্য করে, কি জন্য তা বুঝা গেল না। আবিদের এমন অবস্থা দেখে আবিদের দুজন পরী আবিদের কাছে এল। আবিদ তাদের উদ্দেশ্য করে বলল,
-আমি এখানে কেন?(আবিদ)
-তাতো আমরা জানি না।
-কেন জানো না? তোমরা কি এখানে ছিলে না। (আবিদ)
-আমরা এখানে আসার পর থেকে আপনাকে তো ঘুমন্ত অবস্থায় দেখি।
-তাহলে এখানে এলাম কি করে?(আবিদ)
তখন আরেকজন বলে উঠল, ” কি হল” কন্ঠটা আবিদের পরিচিত কোথায় যেন শুনেছে। মনে পড়েছে আরে এটা তো রাজকুমারীর কন্ঠ। আবিদ পেছনে ফিরল,
আবিদ পেছনে তাকাতেই অবাক…..
আবিদ তোতলাতে তোতলাতে বলল
-তুমি এখানে???
-আমার বাড়িতে আমি থাকব নাতো কে থাকবে।(রাজকুমারী)
-কিন্তু তোমাকে না……
আবিদ আর কিছু বলতে না দিয়েই রাজকুমারী আবিদের মুখ চেপে ধরল। সোজা রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল…..
চলবে
(আপনারা কখনো সাইমনের মত করেছেন হাতে জিনিস রেখে পুরো জায়গা খোঁজেছেন কিন্তু হাতের দিকে খেয়াল করেননি। কমেন্টে বলবেন)