পরীর দেশের ডেভিল,পর্ব-৮

পরীর দেশের ডেভিল,পর্ব-৮
-শাহরিয়ার আবিদ

-রাজপ্রাসাদের ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে৷ তার মধ্যে থেকে আবিদ রাজকুমারীর আওয়াজটা ঠিক চিন্তে পারল। কিছু একটা এখন করতে হবে না হলে সমস্যা হয়ে যাবে। ডেভিলগুলো আক্রমণ করে বসলে তো শেষ। ডেভিলের আক্রমণের কথা ভাবতেই আবিদের বুকের ভেতর কেমন যেন বুকের ভেতর তাজা রক্তগুলো চলাৎ করে ওঠল। আবিদ আর দাঁড়িয়ে না থেকে রাজপ্রাসাদের ভেতরে ঢুকার স্বিদ্ধান্ত নিল। যেই ভাবা সেই কাজ। ভেতর থেকে সবাই বাইরে বেরিয়ে আসছে। সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ। রাজপ্রাসাদ থেকে সবাই দৌঁড়ে চলে আসছে বাইরে। কিন্তু রাজকুমারীকে দেখা যাচ্ছে না। রাজকুমারী ভেতর থেকে বের হচ্ছে না।

রাজপ্রাসাদের ভেতর থেকে প্রায় সবাই বের হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু রাজকুমারী এখনো বের হল না। আবিদ এ জায়গায় এসে স্বিদ্ধান্ত নিতে পারতেছে না সে কি আর ভিতরে যাবে নাকি? এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে রাজকুমারীর আসা অপেক্ষা করবে।

আবিদ এভাবে প্রায় মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে থাকল সেখানে কিন্তু রাজকুমারীর কোনো সাড়া শব্দ নেই। হঠাৎ ভেতর থেকে একটা আওয়াজ এলো আওয়াজটা খুব ক্ষিণ। আবিদ প্রথমে আওয়াজটা ভালোভাবে বুঝতে পারে নি। আবার মনোযোগ দিয়ে শুনার চেষ্টা করল। এবার ঠিক শুনতে পেয়েছে আওয়াজটা। আওয়াজটা আসছে একেবারে রাজপ্রাসাদের শেষ অংশ থেকে৷ আওয়াজটা রাজকুমারীর মত লাগল। আবিদ আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে। আওয়াজটার উৎসের অনুসরণ করে সেদিকে যাওয়ার চেষ্টা করল ভেতরে আবছা আলো। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেও এটা কত সুন্দর আলোকিত ছিল।

অল্পকিছু মুহূর্তের মধ্যে এই সাদা রাজ্যটা কেমন অন্ধকারে ছেয়ে গেল। আবিদ আবছা আলোর মধ্য দিয়ে সাবধানে আওয়াজের উৎস লক্ষ্য করেই এগিয়ে যেতে লাগল।

যত সামনের দিকে এগোতে লাগল শব্দটা তত বেশি পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে ৷ আবিদ একটা জায়গায় গিয়ে চমকে উঠল এবার আর আগের একটা আওয়াজ নয় তার সাথে আরো একটা আওয়াজ। রাজকুমারীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে তবে খুব দূর্বলভাবে। আরেকটা আওয়াজটা অনেকটা গর্জন মত কোনো হিংস্র বড় পশু গর্জন করলে যেমন লাগে আওয়াজটা ঠিক তেমনি।
আওয়াজটা শোনার পর আবিদের বুকের ভেতরটা দুমড়ে মোঁছড়ে গেল৷ আওয়াজটা এতটাই ভয়ংকর স্বাভাবিক কোনো মানুষ শুনলে সাথে সাথে জ্ঞান হারাবে। এবার আরেকটা আওয়াজ শোনা গেল যেটা আবিদ পেছন দিক থেকে।

এই আওয়াজটা একেবারেই আবিদের কাছেই, খুব কাছেই। আবিদ একেবারে শক্ত হয়ে গেল আওয়াজটা শোনার সাথে সাথে৷ কোনোরকমে পেছনে ফিরে গেল। পেছনে ফেরার সাথে সাথে আবিদের উপর প্রথম আঘাতটা হানল, হিংস্র জানোয়ারটা। প্রচন্ড শক্তিশালী হাতের মুষ্টিবদ্ধ ঘুষিটা খেয়ে তাল সামলাতে পারল না।

আবিদ নিচে পড়ে গেল। এই আবছা আলোতে এমন একটা আকষ্মিক আক্রমণ স্বাভাবিক কিন্তু এতটা ক্ষিপ্র গতিতে নয়। আবিদ গাল বেয়ে রক্ত পরতে লাগল। আবিদ আবার উঠার চেষ্টা করল তার আগেই তার বুকের উপর মস্ত ভারি একটা পা এসে চেপে ধরল তার বুকে। আবিদের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পর পর আরো দুটো ঘুষি পড়ল আবিদের মুখের উপর৷ এরপর আবিদের আর কোনো জ্ঞান ছিল না। পরে কি হয়েছে আর জানতে পারেনি। …

– এদিকে আবিদের ফুফি চিন্তায় অস্থির। আবিদের বাসা থেকে দু তিনবার ফোন এসেছিল এ দুই দিনে। কিন্তু নানা বাহানা দিয়ে তাদের বুঝ দেয়া হয়। কারণ সত্য ঘটনা আবিদের মা বাবা জানতে পারলে তার চিন্তা করবে। এতে বরং আরো ক্ষতি হবে লাভ হবে ন তাই আর তারা কিছু জানাল না। রাফা আর সাইমনেরও মন খারাপ৷ আবিদের সাথে এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। তার এখন বুঝতে পারছে তাদের আবিদের সাথে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারে নি আবিদ যো এভাবে না জানিয়ে চলে যাবে। দুদিনের আনন্দিত বাড়িটা কেমন যেন মৃত মৃত হয়ে গেল।

আবিদের সাথে কাটানো সময়গুলো তাদের মনে পড়তেছে। রাফার সাথে যে ছেলেুুলো খারাপ ব্যবহার করে ছিল ফলে আবিদ তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সে স্যারের কাছে বকা শুনেছে। সাইমনের থেকো আরো বেশি মনে পড়ছে। কারণ দুজনেই সবসময় একসাথে থাকত। দুটো শরীর মন কিন্ত ছিল একটা। আবিদ না থাকার ফলে তার বেশি কষ্ট হচ্ছে৷

সাইমন তার রুম থেকে বের হয়ে আবিদের রুমে এসেছে। আবিদের খুব বেশি মনে পড়তেছে। তাই তার রুমে আসতেই আবিদের মোবাইল। ল্যাপটপ থেকে তাদের ছবিগুলো দেখতেছিল। তার রুমথেকে পেনড্রাইব টা আনতে যাওয়ার সময় তার পায়ের সাথে কিছু একটা লাগে। সাইমন বিরক্তি নিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পাই ধোঁয়া মানবের আংটিটা। সাইমন সাথে আংটিটা তুলে নেই নিচ থেকে। তারপর ছোটে যায় রাফার রুমে…

খুব দ্রুত হঠাৎ রাফা ঘরে ঢুকাতে রাফা ঘাবড়ে যায়।

-তোর কি হল? এত ব্যস্ত হয়ে পড়লি কেন?(রাফা)

– এই দেখ কি এটা।(উত্তেজিত কন্ঠে সাইমন)

– আরে এটাতো ধোঁয়া মানবের রিংটা না।(রাফা)

-হ্যা ঐ রিংটায়। (সাইমন)

-আবিদ তাহলে এই রিংটাও নেয় নাই। বেঁচারা এখন চাইলেও আর এখানে ফিরে আসতে পারবে না। ওর ওখনে বিপদে পড়লে শেষ আর আসতে পারবে না। (রাফা)

-হ্যাঁ তবে আমরাতো ওকে সাহায্য করতে যেতে পারি। (সাইমন)

-উত্তম প্রস্তাব । (রাফা)

-ঠিক আছে তাহলে তুই তৈরি হয়ে নে । আমিও তৈরি হচ্ছি। (সাইমন)

কেউ আর কথা বাড়াল না। দুজনে দ্রুত নিজেদের ব্যাগ পানির বোতল আর প্রয়োজনিয় কিছু জিনিস নিয়ে নিল।

দুজনেই নিচে নেমে এল। আর তারা ফুফিকে তাদের সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল তারা এখন কি করতে যাচ্ছে তাও বলল, ফুফি তাদের এভাবে যাওয়াটা মোটেও পছন্দ করলনা। ফুফি তাদের যেতে মানা করে দিল। কিন্তু দুজনেই নাছোড় বান্দা দেখে শেষে ফুফির থেকেও তাদের কথায় রাজি হয়ে দুজনকে বিদায় জানাল। দুজনে এসে ধোঁয়া মানবের সাহায্যে যাদুঘরি আংটির যাদুঘরি আলোর গোলকে ভেতরে ঢোকে তীব্র আলোর তেজে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল..
.
.

আবিদের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এর ফলে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছে। যখন তার জ্ঞান ফিরল। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আবিদ উঠার চেষ্টা করতেই উঁহু আস্তে একটা চিৎকার দিয়ে তৎক্ষনাৎ চবার শুয়ে পড়ল। এভাবে আবার কয়েকবার উঠে বসার চেষ্টা করল। এখন তার শরীরে প্রচুর ব্যাথা। তারপর ধীরে ধীরে ভাবার চেষ্টা করল। কি হয়েছিল এখানে মনে করতেই তার রাজকুমারীর কথা মনে পড়ে। তখনি বসা থেকে উঠে পড়ে আর পাশের রুমের জ্বলতে থাকা প্রায় নিবু নিবু একটা মশাল নিয়ে পুরো ঘর খোঁজে দেখে কিন্তু রাজকুমারী কোথাও নেই..৷

প্রশ্ন -রাজকুমারী কোথায়???

-চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here