পরীর দেশের ডেভিল,পর্ব-৭
শাহরিয়ার আবিদ
-এদিকে উল্টো হয়ে আবিদ গাছের ডালে বন্দী হয়ে আছে জালে। আসমান মাঠির জায়গায় আর মাঠির জায়গায় আসমান। গাছের পাতাগুলো সব মাঠিতে আর গোড়াটা উপরের দিক। আসল আবিদ উল্টো হয়ে ঝুলে আছে তাই তার এমন লাগতেছে। আবিদ এভাবে আর কিছুক্ষণ ঝুলে থাকতে থাকতে তার মাথাটা ঝিম ধরে এসেছে । আবিদ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারালো। এরপর তার আর কোনো খবর নেই।
.
.
আবিদের যখন জ্ঞান ফিরল আবিদ নিজেকে একটা পাথরের সাথে তার হাত, পা বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করল। তাকে কেউ একজন চোখে মুখে পানি চিটাচ্ছিল। আবিদ এখনো ভালো মত পরিষ্কার করে কিছুই দেখতে পারছে না । ধীরে ধীরে চোখের সামনের পরিবেশটা ঝাপসা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠল। তার সামনে কিছু পরী দাঁড়িয়ে আছে। আবিদ তো ভ্যাবাচ্যঁকা খেয়ে গেল। মনে মনে বলল,
” যা বাবা এরকম ফ্রীতে এত সুন্দর রুপসী পরীদের হাতে যদি সারাজীবন বন্দী হয়ে থাকলেও আমার অসুবিধা নেই। আহ কাকে রেখে যে কাকে দেখি” আবিদ যেন ভাবনার জগতে হারিয়ে গেছে। আবিদের ভাবনা জগৎ থেকে ফিরে আসল এক পরীর ডাকে,
– কে তুমি, এখানে কি করছ? তুমি থাক কোথায়? (লাল জামা পড়া পরীটা বলল)
আবিদ মনে মনে আবার বলল, ” চেহারা এত সুন্দর, আর কন্ঠটা কেমন ঝাঁঝাঁলো, ছি এ পরী টা ভালো না”
– কি হয়েছে কিছু বলছ না কেনো? ( কালো জামা পড়া পরী)
– না মানে ইয়ে আমি পৃথিবী থেকে এসেছি। (আবিদ)
– কি? পৃথিবী থেকে এসেছ কিন্তু এলে কিভাবে আমরা তো পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকি আর এখানে তো পৃথিবী থেকে কেউ আসতে পারে না । তুমি কিভাবে এলে ঠিক কর বল??(লাল জামা পড়া পরী)
-না ইয়ে…. (আবিদ ইতস্ত করে বলল)
-আমতা আমতা কেন করছ ঠিক করে বল?(কালো জামা পড়া পরী)
আবিদের চোখের সামনে একটা তীর ধরেছে।
– আমি ধোঁয়া মানবের সাহায্যে এসেছি। (আবিদ ভয়ে ভয়ে বলল)
– ধোয়া মানব, তার মানে আংটি। ধোঁয়া মানবের আংটিটা তুমি পেলে কিভাবে?
সে মুহূর্তে আরেকজন এদিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠে,
-আংটিটা আমি ভূল করে পৃথিবীতে রেখে চলে আসি। (রাজকুমারী)
বাকি পরী দুজন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না। আবিদ তো পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। রাজকুমারী আবার প্রশ্ন করল
-তুমি এখানে কেন এলে?(রাজকুমারী)
.কথাটা আবিদের কানে গেল কি না বুঝা গেল না সে এখনো আগের মত এক পলক তাকিয়ে আছে। প্রেমে টেমে পড়ে গেল নাকি কোনো? রাজকুমারীর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকাতে রাজকুমারী একটু লজ্জাও পেল আবার বিরক্ত হল। আবার জানতে চাইল,
-আরে বলছ না কেন এখানে কি করছ তুমি? আর এখানে আসলে কেন কি কাজ তোমার এখানে? (রাজকুমারী)
আবিদ এবার বাস্তবে ফিরে এল। প্রশ্নটা ভালো করে বুঝতে পারল কি না তা ভালো করে বুঝা গেল না।
– এমনেই এসেছি ঘুরতে। (আবিদ)
– তা ঘুরতে আসার জন্য এই জায়গাটা পেয়েছ। (রাজকুমারী)
-আমি এখানে তেমন কিছুই চিনি না। (আবিদ)
– যে জায়গা চিন না। সেখানে ঘুরতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ( রাজকুমারী)
– চিনি না বলেই তো এখানে এসেছি চেনার জন্য।(আবিদ)
-তুমি বেশি কথা বল। তোমার সাথে কথায় পারা যাবে না। (রাজকুমারী)
– সেটা আমি জানি। আমার সাথেই কথাই পারবে না। (আবিদ)
– তোমাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি। আজকের পর থেকে তোমাকে যেন এখানে না দেখি। আর এখান থেকে যত দ্রূত চলে যেতে পার ততই তোমার জন্য মঙল। আশাকরি অবাধ্য হবে না।
রাজকুমারী কথা গুলো বলে আবিদের হাতের পায়ের বাঁধন খুলে দিল। আবার বলল,
-এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি না করে সোজা চলে যাবে। যাও। (ধমকের স্বরে)
– ভাবতেছি এখানে শ্বশুর বাড়ি বানাবো আর তুমি বলতছ চলে যেতে। (আবিদ হাত পা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল)
রাজকুমারী এ কথা শোনার পর রেগে গিয়ে। তলোয়ার নিয়ে একেবারে আবিদের গলার সামনে তলোয়ার এর তীক্ষ্ণ মাথাটা এনে ঠেসে ধরল।
– একথা স্বপ্নেও চিন্তা করবে না। তোমাকে মুক্তি দিয়েছি এটাই অনেক। চলে যাও পরের বার ধরলে তোমার অবস্থা খারাপ হবে বলে দিলাম। (রাজকুমারী)
আবিদ মনে মনে ভয় পেলেও তা কাউকে বুঝতে দিল না।
– জানি আমি তুমি আমাকে কিছু করবে না। কিছু করার হলে এতক্ষণ করে ফেলতে। (আবিদ)
– এবার কিছু করিনি বলে এটা পরে আবার কিছু করবনা এটা ভাবিও না। আশাকরি তুমি এতটা বোকা নও। (রাজকুমরী)
-আমিও এটায় আশা করি এত সুন্দর রাজকুমারী এতটা খারাপ নয়। তার সুন্দর চেহারাটার মত সুন্দর একটা মন ও আছে। (আবিদ)
রাজকুমারী আবিদকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে রাগে চলে যেতে লাগল। তখনি আবিদ পেছন থেকে ডাক দিল “রিউশা”
রাজকুমারী পেছনে না ফিরেই বলল,”তোমাকে আবার এখানে দেখলে শূলে ছড়িয়ে দেব। যেখান থেকে এসেছ সেখানে চলে যাও। ”
এগুলো বলেই রাজকুমারী চলে গেল।
আবিদ ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতেছে কি করবে সে। চলে যাবে নাকি এখানে থাকবে। চলে যাওয়ার কথা মনে হওয়ার পর তার মনে পড়ল সে ফিরে যাবে কিভাবে আংটিটাতো বাসায় ফেলে এসেছে৷
আবিদ আর এতকিছু না ভেবে রাজকুমারীকে লুকিয়ে লুকিয়ে অনুসরণ করতে লাগল । এভাবে অনুসরণ করতে করতে প্রায় রাজবাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। তবে এখনো কারো চোখে পড়েনি। কারণ আবিদ যে দিক দিয়ে এসেছে ওদিকটায় তেমন কেউ নেই। তাই কেউ দেখেনি তাকে। আবিদ গায়ে তার সাদা সুয়েটার টা পড়ে নিল সুয়েটার সাথে থাকা টুপিটা মাথায় ঢেকে নিল। সাদা প্যান্ট আগে থেকেই পড়া ছিল তাই এই সাদার রাজ্যে সবার থেকে এড়িয়ে চলতে তার তেমন কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। আবিদ এভাবে চুপি চুপি এসে রাজপ্রাসাদের দেয়াল টপকে রাজপ্রাসাদের সীমানার ভেতরে ঢুকে পড়েছে। তখনি আবিদের কানে রাজকুমারী আর রাজপ্রাসাদের ভেতর থেকে চিৎকার ভেসে এলো…
প্রশ্ন – কিসের হতে পারে এই চিৎকার?
চলবে—