পরিণীতা,পর্ব ৮,৯
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ৮
১৬.
কোনো উপায় না পেয়ে বিয়েটা করতে রীতিমত বাধ্য হলো পরিণীতা আর অর্ণব। অর্ণব কিছুতে ই চাইছিলো না বিয়েটা করতে, পরিণীতা ও চায়নি। বিয়ে হতে হতে প্রায় ১২টার মতো বেজে গেছে। পরী স্তব্ধ হয়ে মাটিতে বসে আাছে, কী করবে এখন। একেতো এতো কষ্টের মধ্যে আছে তারপর আবার জোর করে বিয়ে। অচমকা ইলা চেচিয়ে উঠে।
–এসব রাস্তার মেয়েদের আশ্রয় দিলে এমন ই হবে। রাস্তা থেকে তুলে এনে আশ্রয় দিয়েছি এই প্রতিদান দেওয়ার জন্য।
–আপু আমি এমনটি করতে চাইনি। আমাকে ক্ষমা করে দেন প্লিজ।
–ক্ষমা করে দেওয়ার কোনো কাজ তুমি করোনি।
–আপনার ভাই ভালো করে জানে আমার কোনো দোষ নাই।
আপনার ভাইকে জিজ্ঞেস করেন। আপু আামর কোনো দোষ নেই। আমি আসতে চাইনি এখানে…
—থাক যা হইয়ে সব বাদ। তোমাকে সসম্মানে বলতেছি তুমি বাসা থেকে বের হয়ে যাও।
কথাটা বলার সাথে সাথে পরিণীতা ইলার পা জড়িয়ে ধরে। কান্না করতে লাগে।
অর্ণব সেই কখন বাড়ির ভেতরে চলে গেছে। কান্না করতে করতে পরী বললো।
—আপু আামকে কয়েকটা দিন আশ্রয় দিন আমি কয়েকটা দিন পর চলে যাবো।আপু একটু বুঝেন আমি এতিম। আমার যাওয়ার যায়গা নেই। এতোদিন যেখানে ছিলাম ঐখানে যাওয়ার থেকে আমাকে মেরে ফেলুন।
পরীর এমনভাবে কথাগুলো বললো ইলার একটু মায়া হলো তাই বললো,
–আচ্ছা দুমাস তোমাকে থাকতে দিবো তারপর চলে যাবে। আর এই দুমাস তুমি আলাদা রুমে থাকবে। এবং অর্ণব এর আশেপাশে আসবে না। অর্ণব তোমাকে রাখতপ চাইলে ও চলে যাবে কারণ তোমার মতো মেয়ে আামদের বাড়ির বউ হবার যোগ্যতা রাখে না।
ইলার সব সর্ত মাথা পেতে নিলো পরী। বিনিময়ে শুধু থাকতে দিবে।
এখন যে ঘটনাগুলো ঘটলো তার বিন্দু পরিমান অর্ণব জানে না। বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার পর বাড়ির ভেতরে গেছে। এখন ও বের হয়নি।
বেশকিছুক্ষব পর অর্ণব গাড়ি নিয়ে বের হলো। রাত প্রায় দুইটা বাজে।
–আপু যদি ইচ্ছে হয় উঠে বসতে পারিস। আমি চলে যাচ্ছি ঢাকা।
–ভাই এতো রাতের বেলা যেতে অসুবিধা হবে। আর লাগেজ তো গুছানো না। কিছু ই গুছানো না।
–পরী উঠো।
পরী কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে কারণ এখন পরী তাদের হাতের পুতুলের মতো যা বলবে তাই করতে হবে।।
পরী উঠার সাথে সাথে অর্ণব গাড়ি স্টার্ট দেয়। ইলাকে কথা বলার কোনো সুযোগ ই দেয় না।
ইলা বোকার মতো দাড়িয়ে আছে। কী হলো কিছু ই মাথায় ডুকছে না। খুব কষ্ট লাগছে ভাইয়ের জন্য এতো কিছু করছে অথচ ভাই ই মুহুর্তে বলদে গেলো। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির ভেতরে চলে যায় ইলা।
হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে পিছনে তাকিয়ে জোরে বললো,
–আমাকে কী তোমার ড্রাইভার মনে হয়। সামনে আসো।
পরী বাধ্য মেয়ে হয়ে সামনে চলে যায়।
–স্যরি আমাকে মাফ করবেন, সময় হলে আমি ঠিক চলে যাবো।
–তোমাকে এতো কথা বলতে বলছি।চুপ করে থাকো বেশি কথা বললে এখানে রেখে ই চলে যাবো।
১৭.
অর্ণব এর ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো পরীর। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো অর্ণব এর বেডে শুয়ে আছে। অর্ণবকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। হয়তো কোথাও গিয়েছে। ফোন রেখে গেছে।
এলোমেলো চুলগুলো খোপা করতে করতে বিছান ছেড়ে উঠে পরী অর্ণব এর ফোনে ধরলো দেখলো বারোটার মতো বাজে। আর অর্ণব এর ফোনে অসংখ্য ফোন ইলার নম্বর থেকে এসেছে। ইলার কথা মনে পড়তে ই দ্রুত রুম ত্যাগ করার জন্য পা বাড়লো পরী।
হঠাৎ দরজার সামনে দুজনে ই ধাক্কা খায়।
–আরে কী করছো দেখে হাটতে পারো না।
–স্যরি।
বলে ই চলে যেতে চাইলে অর্ণব হাতটা ধরে ফেলে।
–কোথায় যাচ্ছো
–রুমে।
–বিয়ে হয়েছে আমাদের।
–আপনি মানেন বিয়েটা।
–ভাগ্যে তুমি আছো তাই বিয়েটা হয়েছে নায়তো হতো না।
–আমি মানি না।
কথাটা বলার সাথে সাথে হ্যাচকা টান দিয়ে অর্নব এর সাথে মিশিয়ে নিলো। কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে গিয়ে বললো।
–তুমি না মানলে ও তুমি আমার বউ।
অর্ণব এর ঠোটগুলো বারবার পরীর কান ছুয়ে যাচ্ছে। অজানা অনুভূতিতে চোখ বন্ধ করে নিলো পরী। অর্ণব তাকিয়ে তাকিয়ে হাসতেছে। আর পরী নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
–আমি না ছাড়লে তুমি কখনো আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না। মনে রেখো।
কথাটা বলে ই অর্ণব পরীর হাত ছেড়ে দিলো।পিছন ফিরে না তাকিয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় পরী। অর্ণব এর কাছে আাসার অনুভূতি গুলো খুব সুন্দর পরীর যদি স্বাভাবিক জীবনে থাকতো তাহলে হয়তো অর্ণব এর প্রতিটি স্পর্শে সারা দিতো। নিজের অধিকার বুঝে নিতো। কিন্তু জীবন এমন এক স্থানে এসে দাড় করিয়েছে যেখানে নিজেকে টিকিয়ে রাখা ই বড্ড কষ্টকর।
পরের দিন,,,
পরী ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু রান্না করতে মন চাচ্ছে না।। কী করবে ভাবছে। কাজের লোক ও কেউ নেই বাসায়। শুধু অর্ণব আর পরী।
কয়েকবার ডাকলো অর্নব পরীকে কিন্তু কোনো শব্দ নেই।।। শব্দ না পেয়ে অর্ণব পরীর রুমের দিকে যায়। যে ঘটনা ঘটলো তারপর দুজনের ই একা থাকার প্রয়োজন ছিলো তাই একটু সময় নিয়েছে নিজেকে ঠিক করতে।
সোজা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অর্ণবকে দেখে পরিণীতা দাড়িয়ে যায় অন্য দিকে মুখ করে তাকায়। পরীকে এমন করতে দেখে অর্ণব পরীর হাতে টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে দেয়, অমনি দরজায় দিকে তাকিয়ে দেখে ইলা আসছে। পরী ভয় পেয়ে যায়, কী বলবে এখন কথা দিয়েছিলো তো অর্ণব এর পাশে আসবো না।
চলবে
পরিণীতা
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ৯
১৮.
অর্ণব আর পরিণীতাকে নিয়ে চুপ করে বসে আছে ইলা। অর্ণব পরীকে বার বার ইশারায় বার বার জিজ্ঞেস করতেছে ভয় পাচ্ছে কেনো কিন্তু পরী কোনো কথা বলছে না ভয়ে ইলার দিকে তাকাতে পারতেছে না। নিরবতা ভেঙ্গে ইলা বলে উঠলো,,
–অর্ণব তুই অন্য রুমে যা আমার পরিণীতার সাথে কিছু কথা আছে।
–কোনো কথা যদি আমার বউকে বলতে ই হয় তবে আমার সামনে ই বলতে হবে।
অর্ণব এর এমন মুখে মুখে উওর দেওয়ায় বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইলা। পরী ও করুন দৃষ্টিতে অর্ণব এর দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কি বিয়েটা সত্যি ই মনে নিয়েছো অর্ণব প্রশ্নটা ইলা পরী দুজনের মনে তৈরি হয়েছে।।।
–এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।
–দেখতেছি একটা রাস্তার মেয়ের জন্য আমার ভাই আমার সাথে কেমন ব্যবহার করে।
–ভুল বলছো আপু দুদিন আগে পর্যন্ত হয়তো পরিণীতা রাস্তা কেউ না তাও তোমার ভাষ্যমতে রাস্তার কেউ ছিলো কিন্তু এখন থেকে অর্ণব চৌধুরীর কালেমা পড়ে সব নিয়ম মেনে বিয়ে করা বউ।
–অর্ণব তুই ভুল করছিস। পরীকে কিন্তু আমি এ বাড়িতে এনেছি। আমি চাইলে বের করে দিতে পারি।
–আমার বউকে আমার কাছে রাখার ক্ষমা আছে আপু।
পরী দাড়িয়ে কান্না করতেছে। সব প্রবলেমের কারণ পরী ই। পরী না থাকলে তো এমন হতো না।তাই পরে এবার বললো,
–আপু আমি তো কালকে আপানর কাছে বলছি, এবং আপনার সব শর্ত ও মনেছি প্লিজ আপনারা দুই ভাইবোন আমার জন্য মনমালিন্য করবে না। সময় মতো আমার জায়গায় আমি চলে যাবো।
অর্ণব কোনো কথা না বলে হাত ধরে টেনে পরীকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। ইলা শুধু দাড়িয়ে দেখছে। জানে অর্ণবকে কিছু বলে লাভ নেই সে যা করতেছে শত নিষেধের পর ও করে ই। বড্ড মন খারাপ হচ্ছে ইলার ভাইকে এতোদিন এতো ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে, কতো স্বপ্ন ছিলো খুব ধুমধামে ভাইকে বিয়ে করাবে। সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেলো পরী নামের মেয়েটার জন্য।
.
অর্ণব পরীকে নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। পরীকে বেডে বসিয়ে, প্লেট টা হাতে নিয়ে পরীর সামনে ধরলো,
–খেয়ে নাও।
–খাবো না।
–ক্ষুধা লেগেছে জানি তো। বললে ই তো হয় আমার হাতে খাবে।
–আমি এটা কখন বললাম।
–তাহলে খেয়ে নেও।
–খাবো না বলছি তো।
এবার অর্ণব খাবার হাতে নিয়ে জোর করে মুখে দিয়ে দিলো।
–খাবার সময় কান্না করতে হয় না বউ।
কথাটা শুনে আরো জোরে কান্না করতে লাগলো। অর্নব পরীকে এক হাতে আলতো করে জরিয়ে নিয়ে কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা করলো…
১৮
জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে পরী। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, এই সুখ কপালে সইবে তো,, রুম থেকে একবার ও বের হতে দেয় নাই অর্ণব । অর্ণব সব প্রয়োজনীয় জিনিস রুমে এনে দিয়েছে। তবে কী অর্ণব পরীকে ভালোবেসে ফেলেছে।
রুমে এসে পরীকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় যায়। অনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। পিছন থেকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে পরী হাত সরিয়ে নেয়।
–হাত সরিয়ে নিলে কেনো।
–আমার থেকে ভালো কাউকে পাবেন।
–ভালো কাউকে না তোমাকে ই প্রয়োজন।
–আমার সাথে এতো দেখা ই কয়েকদিনের তাহলে এতো কাছে কেনো টেনে নিচ্ছেন কেনো।
–বিয়ে করেছি বউকে দূরে রাখবো নাকি।
–এই বিয়েটা কী আপনি মানেন।
–না মানার কী আছে বউ।
–বউ বলেন কেনো কথায় কথায়।
–বউকে বউ বলবো না কী বলবো বউ।
এবার পরী রাগ দেখিয়ে রুমে চলে যায়।
–অ বউ কোথায় যাও,
–মরতে।
–দাড়াও আমি ও যাবো।
পরীর রুমে যেয়ে বসতে ই । অর্ণব গিয়ে ড্রসিং টেবিলে সামনে দাড়িয়ে পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
–এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো।
–দেখতেছি আমার সুন্দরী বউটাকে।
–দেখে লাভ কী গিলে ফেলেন পানি দিয়ে।
–তাই নাকি। মেয়েরা নাকি শপিং করতে অনেক পছন্দ করে চলো তোমাকে নিয়ে শপিং করতে যাই। যতক্ষণ ফুচকা খেতে পারো খাওয়াবো। তুমি তৃপ্তি নিয়ে ফুচকা খাবে আর আমি তৃপ্তি নিয়ে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো।।।
হঠাৎ পরীর ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিতে ই দেখে অদির আইডি থেকে আদি আর ইরার কিছু মুহুর্তের ছবি। ছবিগুলো দেখে ই অর্ণব এর দিকে তাকালো, কেউ ভালোবাসা পায় না আর কেউ পেয়ে ও দূরে ঠেলে দিতে দুবার ভাবে না। বড় অদ্ভুত এই দুনিয়া। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো পরী। অর্ণব বাহির থেকে খাবার কিনে আনতেছে, রান্না করে নাই হয়তো তাই।
কিচেনে যেতে ই ইলা বললো,
–আজ থেকে সকল রান্না তুমি করবে। কাজের লোকদের মানা করে দিয়েছি।
–আপু সমস্যা নেই আমি করতে পারবো সেই অভ্যাস আমার আছে।
–মুখে মুখে কথা বলতে শিখে গেছো বুঝি।
–আমি প্রশ্ন করছেন আমি উওর দিবো না।
–তুমি জানো তোমার যে কোনো যোগ্যতা নেই এই বাসার বউ হওয়ার।
–আপনি যোগ্যতা বিচার করা কে। আমার স্বামী তো আমাকে কিছু বলে না।
কথাটা বলার সাথে সাথে ইলা থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় সাথে সাথে পরী হাত ধরে ফেলে। এ অবস্থায় অর্ণব ও হাজির।
অর্ণব পরীর দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো সব দোষ ই পরীর।
চলবে