নিস্তব্ধ_বিকেলে_তুমি 🖤 #পর্ব-২ শেষ

#নিস্তব্ধ_বিকেলে_তুমি 🖤
#পর্ব-২ শেষ
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

‘ নিজের প্রেমিকাকে ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিচ্ছেন, তবুও শান্তি পান নি? এখন আবার হলুদ ও ছুঁয়াতে এসেছেন? আপনি কি বুঝতে পারছেন না ? আপনার এইসব কার্যকলাপ কতটা বেদনাদায়ক আরোহীর কাছে। ‘
ইরাদ আরোহীকে হলুদ ছোঁয়াতে আসলে, আরোহীর এক বান্ধুবি ফিসফিসিয়ে ইরাদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে। ইরাদ আরোহীর দিকে তাঁকিয়ে দেখতে পায়, আরোহী মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। ইরাদ নিচে ঝুঁকে, কেমন ফিচেল গলায় বললো, ‘ আমি তোমাকে একটু ছু্ঁইয়ে দিলে বুঝি তোমার কষ্ট হবে? ‘
আরোহী উত্তর দিলো না। নির্বিকার সে। ইরাদ ফের বললো, ‘ মেয়ে,আমার কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?

‘ দু:খ আমাকে ছুঁতে পারবে না। আমার সয়ে গেছে। ‘

‘দুঃখ তোমায় ছুঁতে পারবে না কেন? ‘

‘ ভালোবাসার সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে,এক বুক তীব্র যন্ত্রনা সহ্য করার অসীম ক্ষমতা ধারণ করতে হবে। যা আমি প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। ‘

ইরাদ হলুদের বাটি নিয়ে, আরোহীর গালে হাল্কা ছুইঁয়ে দেয়। আরোহীর আখিজোড়া বেয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পরে। ইরাদ তা দেখেও, একপ্রকার না দেখার মতো উঠে দাঁড়ালো। বেশ তাড়া আজকে তার। নতুন জিএফ এর সাথে ডেটিং এ যেতে হবে। ইরাদের সাথেই মেয়েটা পড়াশোনা করে। ইরাদের বন্ধুসহ অনেকের ক্রাশ মেয়েটি, তাকে জিএফ বানিয়ে আলাদা এক ভাব কাজ করছে তার মাঝে। যদিও এমন কাজ তার কাছে খুব একটা বড় নয়। তার ফোন বারংবার বেজে চলেছে, সে পকেটে থেকে রিসিভ করতে চাইলে, নিহান বলে উঠে, ‘ ভাই এইবার তুই যা।আমার বউকে আমি একটু হলুদ ছুঁইয়ে দেই কেমন?’

নিহান এর কথা শুনে কেন যেন তেঁতিয়ে উঠলো ইরাদ। বিয়ে না হতেই, বউ হয়ে গেলো? ইরাদ ফোনটা রিসিভ করলো না। সোজা হয়ে নিহান এবং আরোহীর মাঝখানে বসে পরলো। নিহান এবং আরোহী দুজনেই অবাক হলো।

‘ কি করছিস ভাই? আমাদের মাঝখানে বসে পরলি কেন?’

‘ তুই পরে হলুদ দিবি, আগে আমি তোদের সাথে ভালো করে ছবি তুলে, তা ইন্সট্রাতে আপলোড দিবো। ‘

ইরাদের ত্যারা উত্তর শুনে, নিহান কাচুমাচু হয়ে বলে, ‘ তোর জন্যে কি নিজের বউকে এখন হলুদ দিতে পারবো না?’

‘ না পারবি না। আগে আমি ছবি তুলবো গট ইট? ফাস্ট অফ অল আগে বিয়ে কর, তারপর বউ বউ করে চেচাবি বুঝলি?’

নিহান মুখ ছোট করে বসে থাকে। ইরাদকে সে যথেষ্ট ভয় পায় সে। ইরাদ তার এক বছরের বড় হলেও, বড় ভাই হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করে সে। তাই ইরাদের কথার বিপরীতে কিছু বলার সাহস পেলো না।নিহান বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি, নিজের বাবার ব্যবসা দেখছে। আরোহী ইরাদের কান্ডে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ধীর কন্ঠে বলে উঠে, ‘ সমস্যা কি আপনার? কি শুরু করেছেন? সবাই কি ভাবছে বলুন তো?’

‘ কে কি ভাবলো? তাতে আমার কি আসে যায়? আমার জিএফ এর পাশে আমি বসতেই পারি…’

‘ উহু! জিএফ নয়, প্রাক্তন প্রেমিকা। যার প্রতি কোন অধিকার নেই আপনার। যে রাত পোহালেই, অন্য কারো হয়ে যাবে।’

আরোহীর কথার বিপরীতে দমে গেলো ইরাদ। নিহানের বন্ধুরা এবং আরোহীর বান্ধুবিরা, নিহান এবং আরোহীকে একসাথে ছবি তুলতে, তাদের নিয়ে ছাদের এক কিনারায় নিয়ে গেলো। ইরাদ শুধু দেখে গেলো। আখিজোড়া কেমন টকটকে লাল রঙ্গা হয়ে উঠলো। দূর থেকে দেখতে পেলো, নিহান আরোহীর হাত ধরে বিভিন্ন ছবি তুলে যাচ্ছে। আরোহীও কেমন দূর থেকে ইরাদকে দেখে হাসলো। ইরাদের বুকে যন্ত্রনা হলো। অদ্ভুদ যন্ত্রনা। মেয়েটাকে বুঝি হাসলেও সুন্দর লাগে। কাঁদলেও সুন্দর লাগে, হাসলেও সুন্দর লাগে। বিড়বিড় করে ইরাদ বললো, ‘ আরোহী মানেই ভয়ংকর এক সৌন্দর্যের নাম। ‘

____________
নিজের বাসায় ফিরে গাঁয়ের পাঞ্জাবি টা খুলে তা রেখে দিয়ে, বারান্দা থাকায় ছোট্ট দোলনায় বসে পরলো ইরাদ। নিহানের সাথে আরোহীকে এতো ঘনিষ্টভাবে দেখে, তার মাথা একপ্রকার কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে। অস্হীর অস্হীর লাগছে তার। কিন্তু এই অস্হীরতার কারণ কি? পকেটে থেকে ফোন বের করে, তার এবং আরোহীর কিছু ছবি বের করে দেখতে থাকে। কত সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত একসাথে কাটিয়েছে তারা। নিমিষেই, তার আখিজোড়া অশ্রুসিক্ত হয়ে পরে। সে নিজের আখিজোড়ার জল দেখে অবাক হয়। সে কেন কাঁদছে? কিসের এতো ব্যাথা তার?

_________

হ্লুদের পর্ব শেষ করে, একটা টপ্স পরে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায় আরোহী। ছাদের বেশ কয়েকটা অংশ জুড়ে সাজানো থাকলেও, কিনারের জায়গায় নেই কোন সজ্জা। আরোহী প্রান ভরে শ্বাস ফেললো। তাদের পাশের বড় করে ব্লিডিংটা ইরাদদের। পাশাপাশি বাড়ি তাদের। অনুষ্টান শেষে মানুষটিকে দেখতে পাইনি সে। মানুষটাকে দেখার তীব্র ইচ্ছে থাকলেও, তা অতি গোপনে বিসর্জন দিলো। রমনীর পলক ঝাপটানোর সাথে সাথেই তার পাশে অতী পরিচিত কোন পুরুষের অস্তীত্ব টের পেলো সে। সে পাশে ঘুড়ে ইরাদকে দেখে চমকিত হলো। সে কিছু বলার পূর্বেই, ইরাদ তার হাত ধরে, তার ললাটে তার ললাটে ছুঁইয়ে দিলো। আরোহীর বুক ভারি হয়ে উঠলো। ইরাদের গরম নিঃশ্বাস উপলব্ধি করতেই, তার শ্বাসরুদ্ধ অবস্হা শুরু হতে লাগলো। ইরাদ ক্লান্ত সুরে বললো, ‘ আমার বড্ড ক্লান্ত লাগছে, কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কেন এতো বেদনা? উত্তর আছে তোমার কাছে। ‘

‘ কেন এতো বেদনা আপনার? ‘

‘ তোমাকে অন্য কারো পাশে সহ্য করতে পারছি না। কেন বলো তো? ‘

‘ কেন হচ্ছে এমন? ‘

‘ জানিনা, ইচ্ছে করে নিহানকে একদম মে/রে ফেলি।’

‘ ভালোবাসেন আমাকে ইরাদ? ‘

আরোহীর এমন প্রশ্নে দু পা করে পিছিয়ে আসে ইরাদ। আরোহীর প্রশ্নের প্রতিউত্তরে কোন জবাব নেই তার কাছে। ইরাদকে নিরত্তর দেখে ক্ষীন্ন হাসে আরোহী। ইরাদের হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে শান্ত সুরে বলে, ‘ আপনি না বাসলেও, আমি আপনাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি আপনাকে। আপনার মতো নিষ্টুর মানুষটাকেই আমি বড্ড ভালোবাসি। চাইলেও সে জায়গায় অন্য কেউ নিতে পারবে না আফসোস! ‘

শেষের কথাটি কিছুটা ধীর গলায় বলে সরে আসে আরোহী। ইরাদ শুনতে পেলো না। তবে আরোহীর মুখে ‘ ভালোবাসি ‘ কথাটি শুনে বুকের ভিতরে থাকা অস্হীরতা নিমিষেই কেমন যেন পালিয়ে গেলো। ইরাদ চিরকুটের দিকে তাকাতেই, আরোহী তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো, ‘ উহু! এখন নয়। কালকে সময় নিয়ে পড়বেন, যদি কোন জিএফ এর সাথে ডেটিং এর প্ল্যান না থাকে তবে। ‘

ইরাদ আরোহীর দিকে অসহায়ভাবে তাকায়, যেন সেই আখিজোড়া অনেক কিছু বলতে চাইছে আরোহীকে, কিন্তু ইগো নামক বাজে জিনিসটা বারংবার বাঁধা দিচ্ছে ইরাদকে। না পারছে কিছু বলতে না পারছে সইতে। বিচ্ছিরি এক অবস্হা!

‘ নিস্তব্ধ বিকেলে যখন খুঁজবে তুমি আমায়, পড়ে নিও আমার দেওয়া শেষ চিরকুটখানা। ‘

আরোহী শুকনো হাসি দিয়ে চলে যায়। ইরাদ আরোহীর যাওয়ার পানে অবুঝের মতো তাকায়। মেয়েটাকে তার কাছে রহস্যময়ী এক রমনী মনে হচ্ছে। যাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে তার। পকেট থেকে একটা সিগারেট তা টান দিয়ে, নিজের ভেতরের কষ্টগুলো উড়িয়ে দেয় তবুও কি তার কষ্ট কমলো? উহু নয়। সে আর কিছু না ভেবে নিজের গাড়ি নিয়ে একটি ক্লাবের বারে গিয়ে বসে পরলো। ওয়াইনের বোতল ঢগঢগ করে গিলে ফেললো। তার সামনে শুধু আরোহীর অসহায় মুখশ্রী ভেসে উঠছে। মেয়েটাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে সে, কিন্তু আজ তার ও বড্ড কষ্ট হচ্ছে কালকের পরে তার আরোহী অন্য কারো হয়ে যাবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে, ওয়াইনের বোতল হাতে নিয়ে, সামান্য হেসে উঠে সে। ফোনের স্ক্রিনে জলজল করছে আরোহীর ছবিখানা। সেই ছবির দিকে তাকায় ইরাদ। ভেতরের চাপা আর্তনাদগুলো বলে উঠছে’ আরোহী আমি পারছি না। ভালোবাসি তোমাকে। ফিরে এসো ‘ কিন্তু চাইলেও ইরাদ বলতে পারছে না। কি দমবন্ধকর অবস্হা!

ওয়াইনের বোতলটা শক্ত করে চেপে ধরে সে। হাত-পা ক্রমশ কেঁপে উঠছে তার। কাচ ঢুকে হাত বেয়ে ফিনকি র/ক্ত গড়িয়ে পরছে তার। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে, ‘ আই লাভ ইউ আরোহী। ‘

তারপর আর কিছু দেখতে পারে না ইরাদ। ঘোর অন্ধকারে নেমে আসে তার নেত্রপল্লবে। অজ্ঞান হয়ে সেখানেই পরে যায় সে।

________________

হসপিটালের দুজন নার্সের কথায় মাথায় হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ায় ইরাদ। দুজন নার্স এগিয়ে এসে দ্রুত বলে, ‘ মিঃ ইরাদ, আপনি শুয়ে থাকুন। আপনার অবস্হা বেশ ভালো না। অনেক ব্লা/ড লস হয়েছে আপনার। ‘

ইরাদ ভালো করে লক্ষ্য করে, নিজেকে হসপিটালের কেবিনে আবিস্কার করলো। কিন্তু সে হসপিটালে আসলো কীভাবে? তার ভাবনার মাঝেই, তার মা এবং তার বাবা দ্রুত কেবিনে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করে। তার মা ছেলের কাছে এসে, কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ তুই কি করছিলে কালকে ইরাদ? তুই কালকে রক্তা/ক্ত হয়ে, বারে অজ্ঞান হয়ে ছিলি। তোর ফোন দিয়ে আমাদের কল করে জানায়। আমরা কতটা ভয় পেয়ে তোকে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করাই। কি হয়েছিলো বাবা আমার? তোর এমন অবস্হা কেন হলো? ‘

ইরাদ কোনরকম উঠে দাঁড়িয়ে, তার মায়ের হাত ধরে তাকে শান্ত করতে বললো, ‘ তেমন কিছু হয় নি। জাস্ট একটু সেন্সলেস হয়ে পরেছিলাম। ‘

ইরাদের বাবা কিঞ্চিৎ রাগান্বিত হয়ে বললেন,

‘ সেন্সলেস মানে? তুই কালকে রাত থেকে অজ্ঞান ছিলি। আজ দুপুর পেরিয়ে, বিকেল হয়ে তোর জ্ঞান ফিরলো। ‘

বিকেলের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে সামনের দেয়ালা থাকা ঘরের দিকে চোখ পরলো ইরাদের। প্রায় সারে চারটে বাজে। আজ তো আরোহীর বিয়ে, তবে কি আরোহী অন্য কারো হয়ে গেলো?

‘ মা আরোহীর কি বিয়ে হয়ে গেছে? ‘

ইরাদের মা এইবার পুরো কান্না জুড়ে দিয়ে বললেন,

‘ আর কি বলবো বাপ? আরোহীকে সকাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় গেছে কেউ জানে না রে। ওই বাড়িতে আর খবরও নেওয়া হয় নি। তোর এমন অবস্হা। ‘

কথাটি শুনেই কালকে আরোহীর শেষ কথা মনে পরে…

‘ আপনার জায়গা কেউ নিতে পারবে না। ‘

ইরাদ তার পকেটে থাকা সেই চিরকুটখানা দ্রুত বের করে, পরে….

‘আপনি ঠিকই বলেছিলেন ইরাদ সাহেব। আমি আপনার কাছে দূর আকাশের হাজারো তারার মাঝে এক ফালি চাঁদ মাত্র, যাকে দূর থেকে দেখা যায়। উপলব্ধি করা যায়,হয়তো কষ্টও দেওয়া যায়, কিন্তু তাকে ছোঁয়ার সাধ্যি আপনার নেই। ভালো থাকবেন। আপনার জায়গা কখনো কেউ নিতে পারবে না। ‘

চিরকুট খানা পরে একমুহূর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে ইরাদ,অতঃপর কারো বাঁধা না শুনেই গাঁয়ের শার্ট জড়িয়ে দ্রুত বেড়িয়ে পরে হসপিটাল থেকে। কেউ চাইলেও তাকে আটকাতে পারে না। অসুস্হ অবস্হায় কাউকে এক হাত দিয়ে কল করে, অপর হাত দিয়ে ড্রাইভিং করে যাচ্ছে ইরাদ। আরোহীকে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে ফেলার ভয় তার মনে প্রবেশ হয়ে গেছে।

অপরদিকে এয়ারপোর্টে নিজের লাগেজ হাতে করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরোহী। কিছুক্ষন পরে তার ইতালি যাওয়ার ফ্লাইট। হাতে সময় নেই। ইতালি থেকে স্কলারশিপ পেয়েছে সে। যদিও বাড়িতে কেউ জানে না। আরোহী অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু নিহানকে কিছুতেই সে ইরাদের জায়গা দিবে না। তাই পরশু যখন সে জানতে পারে তার স্কলারশিপ হয়ে গেছে, সে তখনই ঠিক করে বিয়ের দিনই সে ইতালির উদ্দেশ্য রওনা দিবে। বাড়িতে জানলে তাকে কেউ যেতে দিতো না, তাই সে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়বে সে। আরোহী ভালো করে লক্ষ্য করলো হাতে আদা ঘন্টার মতো সময় আছে। তার কল আসতেই, সে এয়ারপোর্টের সামনের দিকে চলে আসলো, যেখানে চেকিং করা হচ্ছে, কিন্তু সামনে থাকা ব্যক্তি সে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায়। তার সামনে স্বয়ং ইরাদ দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরোহীর বন্ধুদের থেকে খবর নিয়ে জানতে পেরেছে, আরোহী আজ ইতালি চলে যাবে। আরোহী মুখে হাত দিয়ে, ফুঁপিয়ে উঠে ইরাদের অবস্হা দেখে। ইরাদের আখিজোড়া টকটকে লাল। হাত পায়ে ব্যান্ডিজ। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে কেমন। একদিনে মানুষটার এমন বেহাল দশা হয়ে গেলো? ইরাদ খুড়িয়ে খুড়িয়ে, আরোহীর কাছে এসে সামান্য হেসে বললো, ‘ ভালোবাসার ব্যাপারগুলো আমার কাছে সেন্টিমেন্টাল মনে হতো। জাস্ট টাইম পাস, কিন্তু একটা কথা কি জানো? আমি বুঝেছি, ভালোবাসা মানে মনের অন্তঃস্হলে কাউকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তীব্র যন্ত্রণা উপলব্ধি করা, যা আমি ক্ষনে ক্ষনে উপলব্ধি করি। তবে কি আমি তোমাকে ভালোবাসি?’

আরোহী উত্তর দেয় না, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইরাদকে। আরোহীর ফুপানির শব্দে ইরাদ আরোহীর মাথায় হাত বুলিয়ে, ‘ অবাক করার বিষয় হচ্ছে তোমার কান্না আমাকে সুখ দিচ্ছে না,বিষিয়ে তুলছে আমার হৃদয়। ‘

কথাটি বলেই, আরোহীর চোখের অশ্রু সযত্নে মুছে দেয়। আরোহী বলে উঠে, ‘ আসলে আমি…’

আরোহীকে থামিয়ে ইরাদ শান্ত গলায় বলে, ‘ আমি তোমাকে আটকাতে আসেনি। আমি চাই তুমি নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ইতালি চলে যাও। নিজের পায়ে দাঁড়াও, তবে এইবার প্লে বয় নয় বরং তোমার মনের মতো প্রেমিক হয়ে তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো প্রেয়সী। ‘

আরোহী কথাটি শুনে খুশি হয়ে পুনরায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘ আপনি অপেক্ষা করবেন তো? আমি ফিরে আসবো। ‘

‘ হ্যা করবো অপেক্ষা। ‘

কথাটি বলে ইরাদ নিজেও কেঁদে ফেলে। তাদের ক্ষনিকের বিচ্ছেদ হলেও, সেই কষ্ট অসীম।

_________________

আরোহীর চিরকুট হাতে নিয়ে নদীর পাড়ে আকাশের পানে চেয়ে রয়েছে ইরাদ। সেখান থেকে একটা প্ল্যান চলে যাচ্ছে। ইরাদ হাত উচিয়ে বিদায় জানিয়ে বলে,

‘ তুমি আজ আমার পাশে নেই, তবুও আমার আবেগী মন জানে, কোন এক নিস্তব্ধ বিকেলে তুমি ফিরে আসবে আমার ভালোবাসার আঙ্গিনায়।’

সমাপ্ত।।।

আল্লাহ হাফেজ💙।

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here