নিরব সে,২০শ পর্ব,২১

নিরব সে,২০শ পর্ব,২১
সাদিয়া_সৃষ্টি
২০শ পর্ব

–জিনিয়া তো নিজের বাবার বাড়ি গিয়েছে। কেন ? তুই এসব এখন জিজ্ঞেস করছিস কেন? তোকে জানায় নি ও?

–না না, মা । আমার কথার মানে ছিল জিনিয়া এখন কোথায়? মানে ও নিজের বাড়ি ঠিক মতো পৌঁছেছে কি না? আসলে সারাদিনে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হয়নি একবারও। আর এখন এতো রাতে কল করা ঠিক হবে না। ও হয়তো ঘুমাচ্ছে। তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম। তুমি তো সবার খবর রাখো। তাই আর কি !

–ও আচ্ছা, তুই এখন যা ঘুমিয়ে পড়।

–জিনিয়া কবে ফিরবে সেটা বলেছে?

–মনে হয় বেশ কিছুদিন থাকবে ওখানে। আমি বলেছিলাম ১ মাস থেকে আসতে। ওর বাবা মাও তাহলে খুশি হয়ে যেত। কেন ? তুই এটাও জানতি না?

–না তো, মানে জিজ্ঞেস করা হয় নি। সকালে তো তাড়াহুড়োর মধ্যে হাসপাতালে গেলাম।

–কই? হাসপাতালে তুই তো অনেক আস্তে ধীরেই গেলি? তাড়াহুড়ো কখন করলি? আমি তো দেখলাম না।

এটা শোনার পর ওয়াফিফের মুখ অনুভূতি শূন্য হয়ে গেল। এই প্রথমবার সামান্য একটা পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না সে। মনে মনে নিজেকে একদফা বকল সে। তারপর একটা বানোয়াট হাসি মুখে এনে বলল,

–আমার ঘুম পাচ্ছে, আমি গেলাম।

বলেই হাই তোলার অভিনয় করল আর মুখে হাত দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। এদিকে আফিয়া রহমান ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসি দিলেন। তারপর নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানায় ফারহান রহমানের সামনে বসলেন।

–এই যে শুনছ?

–হুম।

–শোনো না।

–হুম।

–শুনবা নাকি কালকের সকালে দুপুরে রাতে খেতে দিব না?

–হ্যাঁ হ্যাঁ বল, আমি তোমার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছি কথা শোনার জন্য।

বলতে বলতে এম্নভাবে হালকা লাফিয়ে উঠলেন যে চোখ থেকে চশমা খুলে পড়ল আর হাতে থাকা খবরের কাগজটা কিছুটা দুমড়ে গিয়ে ছিঁড়ে গেল। তবুও সেটা বিছানার এক কোণে রেখে দিলেন। কিছুটা ছুঁড়ে ফেলার মতো করে। কারণ তিনি জানেন, আফিয়া রহমান যখন একবার বলেছেন তখন তার খাওয়া বন্ধের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু করবেন রেগে গেলে। তাই তাকে রাগানো উচিত হবে না। কিন্তু মনে মনে খবরের কাগজের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। গত কয়েক দিন ধরে তিনি রাতে খবরের কাগজ পড়া শুরু করেছেন। বেশ ভালই লাগছে তার এই কাজটা। সকালে ঘুমান আর রাতে খবরের কাগজ পড়েন। বুক সেলফে যত বই আছে সব পড়া শেষ। আর নতুন বই মাস শেষেই কেনার কথা ভাবা হবে। ছেলেদের সাথে এই নিয়ে কথাও বলেছেন তিনি। এমন না যে ছেলেদের উপর নির্ভরশীল তিনি। কাজের পাশাপাশি বই পড়াটা তার নেশা। তাই বই পড়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন না। বইয়ের তাকে চোখ বুলালে এমন অনেক বই পাওয়া যাবে যেগুলো অনেকবার পড়েছেন তিনি। আর বাকি রইল বই কেনা। বই কিনতে না পারলেও লাইব্রেরি থেকে ধার নিতে পারবেন। কিন্তু মাঝে মাঝে বই পড়ায় এতো ডুবে যান যে বিশ্রাম নিতে ভুলে যান তিনি। তাই অতিরিক্ত বই কেনার জন্য ছেলে মেয়েদের অনুমতি নিতে হয়। আর না নিলে তো আফিয়া রহমান আছেনই। তিনি হুমকি দেন সব বই বিক্রি করে দেওয়ার।

আর এখন সব রাস্তা বন্ধ থাকায় তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নতুন কিছু চেষ্টা করার। তাই বিদেশীদের সময় অনুসারে যেন চলেন তিনি। সকালে ঘুমান আর রাতে জেগে থাকেন। এই নিয়ে কয়েক দফা বকা খেলেও পাত্তা দেন নি তিনি। বকা শেষ করে যখন আফিয়া রহমান মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবেন, তখন তিনি তার গাল টেনে দিয়ে সাহিত্যিকের মতো করে কিছু এমন লাইন শুনিয়ে দিবেন যাতে আফিয়া রহমান লজ্জা পেয়ে যান। আরপ্র মনে মনে নিজেই বলেন – ”বউ পটানোর মিশন একমপ্লিশড।”

আফিয়া রহমান বলতে শুরু করলেন নিজের সব কথা। ওয়াফিফকে নিয়ে তার কি মনে হয়। সারাদিন কি কি হয়েছে। প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কথা। এর মধ্যে পাশের বাড়ির ভাবির ছেলেও বাদ নেই। কি কি শুনেছে অন্যদের কাছে। এসব ফারহান রহমান শুনছেন আর মুচকি হাসছেন। মানুষটা তাকে সব কিছু বলে। বিয়ের এতো বছরেও মানুষটার মধ্যে এতোটুকু পরিবর্তন হয় নি। সবার কাছে ভয় পাওয়ার মতো মানুষ হলেও নিজের স্বামীর কাছে সবচেয়ে বেশি খোলামেলা তিনি। এসব চিন্তা আসতেই মুখের হাসি আরও প্রশস্ত হয় তার। ফারহান রহমানের মতে,

”তার স্ত্রী হল তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ধারাবাহিক গল্পের বইগুলোর মধ্যে একটি, যার শেষ নেই। যেখানে নতুন কিছু রোজ আবিষ্কার করে চলেছেন, যেই বইয়ের প্রেমে রোজ পড়ছেন নতুন করে। আগের ভালোবাসা কমছে না, বরং প্রতিনিয়ত সেটা হয়তো দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলেছে কিংবা তারও বেশি।”

অন্যদিকে ওয়াফিফের রুমে আলো না জ্বললেও আলোর কমতি নেই নেই। চাঁদের আলো না থাকলেও বাইরের অন্যসব বাড়ির আলোর ছটা কিংবা রাস্তার লাইটের আলো এসে ভিতরে ঢুকেছে। ওয়াফিফ শান্ত হয়ে শুয়ে থাকতে পারছে না। কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে থেকে আবার উঠে পড়ছে। ওই হালকা আলোর মধ্যে বুঝে বুঝে কদম ফেলছে আর হাঁটছে ধীরে ধীরে। তবে তার তীব্রতা খুব বেশি বলেই মনে হচ্ছে। তার মধ্যে এক আলাদা অনুভূতির জন্ম হচ্ছে। এক অস্থিরতা কাজ করছে। সে হাঁটতে হাঁটতে জানালার কাছে গিয়ে থামছে আর তালগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকছে কিছুক্ষণ। জিনিয়ার কথা মনে পড়তেই হেসে উঠছে সে। কি করে বিয়ের পর ১ম দিনই সে জিনিয়াকে ভয় দেখিয়েছিল। অন্যরা দেখলে হয়তো হাসত জিনিয়ার বোকামিতে। হাসারই কথা। তবে ওয়াফিফের এখন হঠাৎ করে বেশ ইচ্ছা করছে জিনিয়ার তখনকার মুখটা দেখার।

এর মধ্যে অবাক করার বিষয় একটাই। আজ পর্যন্ত ওয়াফিফ যতবার একা থেকেছে, ততবার ছবির কথা ভেবেছে। কিন্তু আজ একবারও ভাবছে না। তবে জিনিয়ার ছোট ছোট বিষয়গুলো তার ভীষণভাবে মনে পড়ছে। জিনিয়ার চুপ করে থাকার সময়টা যখন মাথা নিচু করে থাকত, বড়জোর তখন কিছু করলে একটা কাজই করত, নিজের শাড়ির আঁচল আঙুলে পেঁচাত। কারো নজরে পড়ে কি না জানা নেই। কিন্তু তার নজরে বেশ পড়ত। আবার জিনিয়ার হাসি মুখ, যখন কিছু সম্পর্কে ওয়াফিফের থেকে জানতে চাইত তখন জ্বলজলে চোখ জোড়া, যখন ভুল বুঝে অভিমান করত কিংবা রাগ করে মুখ ফুলিয়ে থাকত, আবার যখন লজ্জা পেত তখন হঠাৎ করেই তার কান লাল হয়ে যাওয়া। সেদিন হঠাৎ করেই ঘরে ঢুকেছিল ওয়াফিফ। ঘরে ঢুকে দেখে জিনিয়া তার সাদা এপ্রোন পরে আর চশমা চোখে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে, এর পাশাপাশি ওয়াফিফের নকল করছে। এটা দেখে হাসি পেলেও পরে দেখল জিনিয়া হুবুহু তার নকল করে কথা বলছে। কথা বলার সময় চোখের চশমাটা আঙুল দিয়ে ঠেলে দিচ্ছে হালকা। আবার বই হাত থেকে নামিয়ে চশমাও খুলে ফেলছে। ওয়াফিফ যে বই পড়া বা কাগজ দেখার সময় শুধু চশমা পরে এটাও খেয়াল করেছিল জিনিয়া।

শান্ত হয়ে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না ওয়াফিফ। নিজেকে জিনিয়ার ভাবনা থেকে দূরে রাখার জন্য আবার শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর আপ্রান চেষ্টা করল। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হল না। পাশ ফিরে শুতেই তার কাছে খালি খালি মনে হল কিছু একটা। হাত দিতেই মনে পড়ল সেখানে জিনিয়া নেই। আর সাথে এটাও মনে হল সে রাতে জিনিয়া কি করে লেগপিস ভেবে ওয়াফিফের হাত কামড়ে দিয়েছিল। এসব ভেবে হাসতে গিয়ে আবার নিজেই শান্ত হয়ে গেল। সে ভেবে নিয়েছে জিনিয়ার কথা আর ভাববে না। একসময় ঘুমিয়েও গেল সে।


জিনিয়া ছাদে বসে আছে। আজ ৩ দিন ধরে ওয়াফিফের সাথে কথা হয় নি তার। ভাগ্য ভালো ওয়াফিফের ছবি ছিল সাথে। সেটাই দেখে যখন ইচ্ছা করে। শুনেছে সারিকা আপুর বিয়ে ঠিক হতে পারে। শিশিরের সাথে হতে পারে। তবে কবে হবে তার ঠিক নেই। সারিকা আপু না কি ক্রাশ ছেড়ে ভালোবাসায় পড়ে গিয়েছে শিশির ভাইয়ের সাথে। আর এখন সেও না কি এনজিও তে কাজ করার জন্য জিদ ধরেছে। তাই বিয়ে করতে গেলে কি করতে পারে সেই নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে ফোনে। আর জিনিয়া শুধু হেসেছে। রিতিকা আপুর না কি এই চিন্তা তার ছোট বোন বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে আর বাবা মা ছোট মেয়েকে বড় মেয়ের আগে বিয়ে দিতে পারবে না বলে রিতিকা আপুর বিয়ে যার তার সাথে দিয়ে দিবে। তখন স্বাধীন জীবন বিদায় বলতে হবে।

এসব চিন্তা ভাবনা করতে করতেই আবার ওয়াফিফের খেয়াল মাথায় আসে তার। সে আবার ডুবে যায় ওয়াফিফের ভাবনায়। নিজেকে কয়েকদফা বকে সেই চিন্তা থেকে বের হলেও আবার সেই চিন্তায় পড়ে যায়। নিজেকে কিছুতেই ওয়াফিফের চিন্তা থেকে আলাদা রাখতে পারছে না। আগে তো তাও দেখত মানুষটাকে। কিন্তু এখন দেখা হয় না বলে তার চিন্তা আরও বেশি হয়। রোজ ফোন করে সবার খবর নিলেও ওয়াফিফের সাথে কথা হয় নি তার। অবশ্য এইটুকু রাগ করতে ইচ্ছা করছে জিনিয়ার। ওয়াফিফ তাকে ভুল বুঝল ঠিক আছে, কিন্তু ওর কথা শোনার সুযোগ কেন দিল না? আর দিল না ঠিক আছে, নিজের ফোন তো একবার চেক করতে পারতো, নাকি নিজের কমনসেন্স এর পাশাপাশি ফোনটাকেও ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওয়াফিফ কি করে ভেবে নিতে পারল জিনিয়ার মতো মেয়ে এতো বড় কিছু ভাবতে পারবে তাও ওয়াফিফকে না জানিয়ে। এতোটা বুদ্ধিমান মানুষের এই বোকামি মানা যায় না। তাই কিছুদিনের জন্য এসব থেকে দূরে থাকতে চেয়েছে। সেদিন হঠাৎ করেই মা বাবার সাথে কথা হল। তারাই আফিয়া রহমানের সাথে কথা বললে আফিয়া রহমান ই এই আইডিয়া দেন । মেয়ের থেকে দূরে থেকে যেহেতু কষ্ট পাচ্ছেন, তাই মেয়েকে ১০-১৫ দিনের জন্য নিজের কাছে রেখে দেন। তাছাড়া জিনিয়া এখন প্রেগন্যান্ট, তাই ওর যেন মন খারাপ না হয় সেজন্যই বলেছিলেন এই কথাটা। জিনিয়াও তাতে সায় দেয়। সে নিজেকে তৈরি করতে কিছু সময় নিতে চাইছিল। যাতে ওয়াফিফের সাথে দেখা হলে নিজের ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ বলে দিতে পারে কোনোরকম ভয় না পেয়েই। যাই হোক, ওয়াফিফের থেকে দূরে থাকতে পারবে না এটা নিশ্চিত। এজন্য না যে ওয়াফিফ তার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে, বরং এইজন্য যে জিনিয়া ওয়াফিফের থেকে নিজে দূরে থাকতে পারছে না। আর এই ৩ দিনে তো তার প্রমাণ সে পেয়েই গিয়েছে। তাই ফিরে যেতে চায় সে।

অন্যদিকে ওয়াফিফ বাড়িতে যতক্ষণ থাকে, বেশির ভাগ সময় ড্রয়িং রুমে বসে সময় কাটায়। বিশেষ করে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে না। নাহলে মা কি না কি ভেবে বসবেন। আবার জিনিয়ার দেখাও পায় না। সব মিলিয়ে সে রেগেও আছে, আবার জিনিয়ার কমতিও অনুভব করছে। ওয়াফিফ যে ছবির পর আর কারো প্রতি ওই অনুভূতি অনুভব করেছে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তবে এই অনুভূতি আরও বেশি গভীর। যেটা ছবিকে ভুলিয়ে রাখতে পারছে। ওয়াফিফের সামনে থাকত এতদিন জিনিয়া। ওয়াফিফ যখন চাইত তখন তাকে দেখতে পারতো। কিন্তু এখন চাইলেই দেখতে পারছে না। তাই সে বেশি করে মনে করছে জিনিয়াকে। মিস করছে খুব। নিজের কাজে সে নিশ্চিত । কিন্তু নিজের ওই পুরনো চিন্তা নিয়েই আছে যে জিনিয়া তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভেবেছে।

নিজের চিন্তায় এতটাই ডুবে গিয়েছিল যে নিজের শার্ট এর বোতাম ঠিকমতো লাগায় নি সেটা বুঝতে পারে নি। হঠাৎ রুমে এসে মিলা দেখল তার ভাই কোন এক চিন্তায় ডুবে আছে। তাই সে মজা করে বলল,

–আরে বড় ভাবি তুমি এখানে?

ওয়াফিফ নিজের চিন্তা থেকে বের হয়ে পিছনে ঘুরে বলল,

–কোথায় জিনিয়া?

মিলা এবার নিশ্চিত হল যে তার ভাই জিনিয়ার কথাই ভাবছে। তাই সে হেসে জবা দিল,

–বউয়ের চিন্তায় এতই মগ্ন হয়ে আছো যে নিজের শার্ট এর বোতাম উল্টোপাল্টা করে লাগাচ্ছ ভাইয়া?

ওয়াফিফ বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল,

-তকে আর ভাবতে হবে না যা এখান থেকে, কে বলল আমি জিনিয়ার কথা ভাবছিলাম? আমি তো পেশেন্টের কথা ভাবছিলাম।

বলেই মিলাকী ঘর থেকে বের করে সে দরজা লাগিয়ে দিল।


জিনিয়া ওই বাড়িটাকে খুব মিস করছিল। তাই জারিফের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল। আর এমন সময় গিয়েছিল যখন ওয়াফিফ ঘরে থাকে না। ওয়াফিফের রুমে গিয়ে দেখল রুমের অবস্থা ঠিক দেখালেও আসলে ঠিক নেই। কোনোমতে রুমটাকে রুম বলা যেতে পারে। সে গুছিয়ে দিয়ে আফিয়া রহমান, সুফিয়া ভাবি, মিলা মিনা আরিফ এর সাথে দেখা করল। আসফির সাথে খেলা করল। আফরানের সাথে শুধু ফোনেই কথা হল। আর ওয়াফিফের সাথে দেখা হল না।

সেদিন ওয়াফিফ বাড়ি ফিরে নিজে রুম আগের মতো গোছানো পেয়ে পুরো বাড়িতে একবার চোখ বুলাল। তারপর মাকে জিজ্ঞেস করল,

–আমার ঘর গুছিয়েছে কে মা?

–জিনিয়া এসেছিল, ওই করেছে মনে হয়।

–ওহ।

এর থেকে বেশি বলল না সে। আজ প্রথমবার তার মনে অভিমানের মেঘ জমল। সে অনুভব করতে পারছে, সে জিনিয়ার উপর রেগে নেই, তবে অভিমান করে বসে আছে এখনো।

চলবে।

”নিরব সে”
#সাদিয়া_সৃষ্টি
২১শ পর্ব

ওয়াফিফ গাড়ি চালাচ্ছে। এখন সে জিনিয়ার বাড়ি যাবে। জিনিয়ার সাথে কথা বলে সব তাকেই ঠিক করতে হবে। জিনিয়া কে সে যতটুকু চিনেছে , সেই ধারণা থেকে সে এইটুকু বলতে পারে যে জিনিয়া এতদিন তার থেকে আলাদা থেকেছে নিজের সাহস জোগাড় করার জন্য। আর হয়তো অনেকখানি জোগাড় করেছেও। কিন্তু তার সামনে আসলে সে যা ছিল তাই হয়ে যাবে। মুখের কথা মুখ থেকে আর বের হবে না। এভাবে কয়েক বছর ও চলে যেতে পারে। কিন্তু কয় বছর যাবে সেটার ও ঠিক নেই। তাই তাকেই এগিয়ে গিয়ে ঠিক করতে হবে। সে এখনো ভাবছে কি বাচ্চামোটাই না করেছে সে এই কয়দিন। নিজের কাজ নিজের কাছেই বিরক্তিকর লাগছে তার এখন। সে কি না অভিমান করে ছিল, তাও নিজের মন গড়া কাহিনী ভেবে। আজ মা ধরিয়ে না দিলে তো না জানি আরও কি কি ভেবে বসত সে।

কিছু সময় আগের কথাঃ-

ওয়াফিফ আসফির সাথে বসেছিল। আসফি নিজের মতো খেলছিল । ওয়াফিফ পাশে বসে আসফির খেলার দিকেই তাকিয়েছিল। কিন্তু তার মন পড়ে ছিল অন্য কোথাও। নিজের ছেলের এই বিষয় বেশ খেয়াল করেছেন আফিয়া রহমান। বার বার ছেলের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন কিন্তু কোন কথা বলছে না ওয়াফিফ। কোন দিকেই তার মন নেই। নিজের ভাবনায় মগ্ন হয়ে বসে আছে। রাতে দেরি হয়ে যাচ্ছে , ঘুমাতে হবে সেটাই বলতে এসেছিলেন আফিয়া রহমান। কিন্তু ছেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলেন না। আসফিকে সুফিয়ার কাছে পাঠিয়ে দিলেন তিনি। আসফিও দাদির কথা মতো চলে গেল। কিন্তু ওয়াফিফের দৃষ্টি তখনও সেখান থেকে সরে নি। সে নিজের মতো বসেই আছে। আফিয়া রহমান নিঃশব্দে ছেলের সামনে এসে বসলেন। তিনি বলে উঠলেন,

–জিনিয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে?

ওয়াফিফের মাথায় এই কথা কতোটুকু ঢুকল সেটা অজানা। তবে শব্দটা ঠিকই কান পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে। তাই সে চমকে গিয়ে বলে উঠল,

–মা এ কনভার্ট হয়ে গেলে কি করে আসফি?

জিনিয়ার মতো বোকা কথা শুনে আফিয়া রহমান হেসে উঠলেন আর বললেন,

–আসফি ঘুমাতে অনেক আগেই চলে গিয়েছে। আমি এখন আসলাম। তুই কোন চিন্তায় ডুবে ছিলি যে আমাকে এখানে আসতে পর্যন্ত দেখলি না?

–তেমন কিছু না মা, আমি যাচ্ছি ঘুমাতে।

–এড়িয়ে যাচ্ছিস?

–না মা। আমি সত্যিই ঘুমাতে যাচ্ছি।

–আচ্ছা, গেলে যাবি, কিন্তু এখন আমার পাশে বস।

বলেই নিজের ছেলের হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসালেন আফিয়া রহমান। ওয়াফিফ ও বসে পড়ল। আফিয়া রহমান এর কি মনে হল, তাই তিনি বলতে শুরু করলেন,

–জানিস বাবা, ভুল বোঝাবুঝি অনেক খারাপ একটা জিনিস। এটা একটা সম্পর্ককে শেষ করে দিতে পারে মুহূর্তেই। কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে বিশ্বাস করাটা অনেক জরুরি। বিশ্বাস কে যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি বলা হয়। অবশ্যই প্রথমে মানুষটাকে বিচার করে নিতে হবে। তারপর যদি এটা প্রমাণিত হয় যে সে বিশ্বাসযোগ্য তাহলে তাকে বিশ্বাস করা উচিত, আর যেকোনো কারণে কিংবা পরিস্থিতিতে তার উপর বিশ্বাস করে তার পাশে থাকা উচিত। অনেক সময় এমন হয় যে আমরা কারো উপর বিশ্বাস করি না, কিংবা এমন কিছু দেখি যেটা হয়তো ঘটছে আমার সামনে, কিন্তু এর পাশাপাশি এটাও ঠিক যে আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণটা দেখিনি। এমন হলে তাকে ভুল বোঝা হয়। তারপর এক সময় সেটা সম্পর্ক ভাঙনের মুখ্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। একটা সময় আমিও অবিশ্বাস করেছিলাম। অনেক আগের কথা। তবে আমিও ভুল করেছিলাম তখন। এটা আমার বিয়ের আগের কথা। আমার এক বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ও বিয়েতে রাজি ছিল না। আমাকে অনেকবার বলেছিল, কিন্তু আমি শুনিনি সেদিন। ও বলেছিল যে ওর যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে ভালো না। কিন্তু আমি ওকে বিশ্বাস না করে ওর বাবার কথা শুনেছিলাম। পরে জানতে পারলাম যে ওই লোকটা খুব খারাপ ছিল। এতে আমার ভুল ছিল। আমি যদি ওর কথা মানতাম, তাহলে সেদিন ওর বিয়েটা আটকাতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি। উল্টো আমি ওর বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। এই বিষয়টা জানে পেরেছিলাম অনেক পরে। তোর বাবার সাথে ওর শ্বশুর বাড়ি ঘুরতে গিয়ে ওর ওই অবস্থা দেখি। পরে সেদিনই ওকে নিয়ে চলে আসি আমি। তোর বাবা সাহায্য করেছিল ওকে আলাদা জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিতে। কয়েক মাসের পাথক্যে আমার বান্ধবীর চেহারাই বদলে গিয়েছিল। চেনার উপায় ছিল না। প্রচুর মারত। আর ওর সাহায্য করার কেউ ছিল না। কিন্তু একটা ভালো দিক কি জানিস, ও আমাকে ভুল বোঝে না। ও আমাকে দূরে ঠেলে দেয় নি। সম্পর্ক ভেঙে দেয় নি। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমন ঘটে না। তবে ভুল বোঝাবুঝির একটা ভালো দিক আছে।

–কি মা?

–ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘতলে সেই সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। তাদের পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আরও গভীর হয়। পরেরবার এত সহজে কেউ কাউকে ভুল বোঝে না। আচ্ছা, অনেক কথা বললাম, এবার তুই যা। আমিও সব একবার দেখে ঘুমাতে যাবো।

এতকিছু শোনার পর ওয়াফিফের এতদিনের চিন্তা পুরোই বদলে গেল। নিজের মাথায় একটা কথাই ঘুরঘুর করতে লাগল – ”বাই এনি চান্স আমি জিনিয়াকে ভুল বুঝলাম না তো?” এসব ভাবতে ভাবতেই সে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল। অন্যদিকে আফিয়া রহমান মুচকি হাসলেন। এটাই চেয়েছিলেন তিনি। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে সে খুব সুন্দর করেই এড়িয়ে যেতে পারবে। কিন্তু জিনিয়া সেটা করতে পারবে না। সেই কথা ভেবেই তিনি জিয়ার সাথে কথা বলেছিলেন। সেখান থেকে জানতে পারেন যে জিনিয়ার সাথে ওয়াফিফের গত কয়েকদিনে একবারও কথা হয় নি। তিনি আরও কথা বলতে চাইছিলেন, কিন্তু এর থেকে বেশি জানতে পারলেন না। তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই ধরে নিলেন হয় ওদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে আর নাহলে অভিমান। এখানে শুরুতেই তিনি ঝগড়া বিষয় টি বাদ দিলেন। কারণ জিনিয়ার সাথে চেয়েও ঝগড়া করা যাবে না। ঝগড়া করতে হলে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হওয়া লাগবে। কিন্তু জিনিয়ার দ্বারা হু হা এর চেয়ে বেশি কথা বলানো সম্ভব না। তাই বাকি থাকল অভিমান। কেউ যদি অভিমান করে থাকে তাহলে সেটা ভাঙাতে হবে। নিজের মনের মধ্যে আরও কিছু চিন্তা ভাবনা করে এই সিদ্ধান্তে আসলেন যে কিছু করলে তাকেই করতে হবে। ওয়াফিফ কোন কারণে অভিমান করলে সেটা পুষে রাখবে মনে, কারণ এটা ওর জীবনের ১ম ঘটেছে। এই অনুভূতির প্রথম দেখা মিলেছে তার ক্ষেত্রে, সে সহজে বুঝতে পারবে না। কাউকে গিয়ে তাকে বোঝাতে হবে। আর জিনিয়া এই ক্ষেত্রে নাই। কারণ জিনিয়া অভিমান করে চলে গেলে ওয়াফিফ তাকে ফেরানোর চেষ্টা করত। ওয়াফিফ যেহেতু করে নি, তাই ওয়াফিফ ই অভিমান করেছে। তাই তিনি নিজে থেকেই ওয়াফিফের সাথে কথা বললেন। যাতে তার ছেলে এই নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়। আর তাই হল। ওয়াফিফের মুখ দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে যে সে নিজের মনে মনে কোন এক অংক মিলাচ্ছে।

ওয়াফিফ নিজের ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই তার ফোনে কল এলো। সে নিজের সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিল এই ভেবে যে জিনিয়া তাকে কল করেছে। কিন্তু স্ক্রিনে অন্য কারো নাম দেখে সে হতাশ হল। তার এক পেশেন্ট কল করেছে। সে কল রিসিভ করে কথা বলা শুরু করল। পেশেন্টের সমস্যা সে ওয়াফিফের এলাকায় থাকে না কিন্তু তার এখন একজন ডাক্তারের প্রয়োজন। এখন তার কার সাথে দেখা করা উচিত সেটাই জানতে চাইছে ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যক্তি। ওয়াফিফ সমস্যা শুনে তাকে হাসপাতালের ঠিকানা দিল সাথে একজন পরিচিত ডাক্তারের নাম বলল, সাথে ফোন নাম্বার ম্যাসেজে দিবে বলেই কেটে দিল। কিন্তু ম্যাসেজে ফোন নাম্বার দিয়ে বের হওয়ার সময় দেখল অনেকগুলো ম্যাসেজ পড়া হয় নি। কোন জরুরি ম্যাসেজ আছে কিনা সেটা দেখতে গিয়েই খেয়াল করল জিনিয়ার নাম। দেখার পর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না। নিজের চোখ কয়েকবার বন্ধ করল আর খুলল। জিনিয়ার নাম তখন ও স্ক্রিনে রয়েছে। যেই জিনিয়া কি না তাকে কল করে না সে ম্যাসেজ করেছে? এটা ভাবতেই সে ম্যাসেজ এর উপর ক্লিক করতে গেল। কিন্তু তখন ক্লিক না করে ফোন বন্ধ করে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল। নিশ্চয়ই মায়ের কোন কথা বলতেই ম্যাসেজ করেছিল। হয়তো মায়ের কল রিসিভ করে নি। তাই মা তাকে দিয়ে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। যাতে হঠাৎ করে জিনিয়ার নাম্বার দেখে সাথে সাথে ওয়াফিফ ফোন করে আর অইদিক থেকে মা কথা বলা শুরু করে দেয়। নিজের ঘরের লাইট বন্ধ করে সে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিন্তু মনের মধ্যে তখন একই ইচ্ছা জাগছে, ম্যাসেজটা দেখি। কিন্তু পরে নিজেই মনে মনে হাজার টা কথা ভেবে চোখ বন্ধ করে ফেলছে।

শেষ পর্যন্ত নিজের সাথে না পেরে ওয়াফিফ বিছানায় উঠে বসল। লাইট ও জ্বালিয়ে দিল। নিজে ফোন হাতে নিয়ে এদিক ও দিকে না তাকিয়ে কিছু না ভেবেই ম্যাসেজ খুলল। এরপর লেখা টা পড়ে নিজে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল কতক্ষণ। নিজের চোখ হাত দিয়ে ঘষে দেখল কয়েকবার। একই লেখা। হাতড়ে হাতড়ে টেবিল থেকে চশমা নিয়ে পড়ল।

”আমি আজ জাবিরের সাথে দেখা করতে *** ক্যাফেতে যাচ্ছি। আপনাকে অনেক বার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নি। সরি। আপনাকে অনেক কিছু বলার ছিল। ”

তার মানে জিনিয়া তাকে না জানিয়ে সেখানে যায় নি। আর এই না জানিয়ে যাওয়ার ভিত্তিতে ওয়াফিফ পুরো একটা কাহিনী কল্পনা করে নিয়েছিল। ওয়াফিফ এই প্রথম নিজেকে বকা দেওয়ার পাশাপাশি গালিও দিল । নিজের মাথায় হাত দিয়ে কয়েকবার বাড়ি মারল। আর বেশি চিন্তা করল না সে। জিনিয়ার কি বলার ছিল, কি বলতে চায় জিনিয়া, এই ম্যসেজের মানে কি, কি কি হয়েছিল তার সাথে – কিছুই ভাবল না ওয়াফিফ। নাহলে আরও কত মনগড়া কাহিনী ও জিনিয়াকে নিয়ে ভেবে বসতে পারে সেই চিন্তা করে আর কিছু ভাবল না। মাকে বলে সোজা ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আফিয়া রহমান যিনি শুতে গিয়েছিলেন তিনি বুঝলেন না যে কিছুক্ষণের মধ্যে তার ছেলে কি বলে গেল। কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন তখন একগাল হেসে ঘরে চলে গেলেন ফারহান রহমানকে বলতে যে কি কি হয়েছে আজ।

ওয়াফিফ গাড়ি চালাচ্ছে আর ভাবছে সে কখন জিনিয়ার কাছে পৌঁছাবে আর কখন সব কথা জানতে পারবে। কিন্তু রাস্তায় বার বার বাঁধা আসছে। শহরের রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। আজ এক রাতেই ওয়াফিফ যেন ২ শহরের অলিগলি চিনে ফেলেছে। শহর হওয়ায় রাস্তায় আলোও আছে আর মানুষের আনাগোনাও আছে। ওয়াফিফ রাস্তার মানুষদের জিজ্ঞেস করে করে অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। আর অনেকটা সময় আর রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছেও গেল। জিনিয়ার বাড়ির নিচে গাড়ি থামিয়ে এবার তার নতুন ভাবনার সূচনা ঘটল। এতো রাতে দরজা খুলবে কে? সবাই তো ঘুমিয়েই পড়েছে। আর সে অন্তত পাইপ বেয়ে ওঠার কথা ভাববে না। এই বয়সে এসে মারামারি করতে পারে কিন্তু পাইপ বেয়ে উঠতে গিয়ে যদি পড়ে যায়, কিংবা পাইপ ভেঙে যায় তাহলে কি করবে সে? জিনিয়ার সাথে সব ভুল বোঝাবুঝি ঠিক করবে কিভাবে? তাই বেশি চিন্তা না করেই জিনিয়াকে কল করল।

জিনিয়া তখন ও ঘুমায় নি। তখন সে ওয়াফিফের চিন্তায় মগ্ন ছিল। কিন্তু ফোনের রিংটোনে ধ্যান ভাঙে তার। সে ফোনের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না যে ওয়াফিফ নিজে তাকে কল করেছে। তাও এতো রাতে। কিন্তু সে কল তুলল না। ওয়াফিফ কল না করে সোজা ম্যাসেজ পাঠাল,

”দরজা খুলে দাও, আমি বাইরে, আর ২ মিনিটের মধ্যে না খুললে এখনই বেল বাজাব।”

জিনিয়া দ্রুত উঠে দরজাআ খুলতে চলে গেল। দরজা খুলে কিছু বলবে তার আগেই ওয়াফিফ তাকে টেনে ঘরের ভিতরে নিয়ে চলে গেল। আর তার আগে দরজা লাগিয়েও দিল। তারপর জিনিয়ায়াকে নিয়ে জিনিয়ার রুমে ঢুকে সেই ঘরের দরজাও লাগিয়ে দিল। ঘটনাগুলো এত তাড়াতাড়ি হল যে জিনিয়া কিছু বোঝার বা বলার সময় পেল না। জিনিয়াকে অবাক করে দিয়ে ওয়াফিফ সেই মুহূর্তে জিনিয়াকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। যেন ধরে না রাখলে জিনিয়া পালিয়ে যাবে। জিনিয়া নিজের অবাক হওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনতে বেশ কিছু সময় নিল। ঘটনা গুলো একের পর এক নিজের মনে মনে সাজিয়ে সে নিজেকে শান্ত করল। আর শেষ পরজন নিজের মুখ থেকে কিছু বের করল,

–ডাক্তার সাহেব।

–হুম

–ডাক্তার সাহেব?

–হুম

একে তো কত কষ্ট করে জিনিয়া নিজের মুখ থেকে কথা বের করছে, আর এদিকে উনি হুম হুম করে যাচ্ছে। এটা ভেবেই এখন জিনিয়ার মনে ইচ্ছা জাগছে ওয়াফিফের মাথা ফাটানোর। কিন্তু তাও জিজ্ঞেস করল,

–আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন , ডাক্তার সাহেব?

জিনিয়া প্রশ্ন ওয়াফিফের মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছালে তার হাতের বাঁধন হালকা হল। সেই সুযোগে জিনিয়া নিজেকে ওয়াফিফের থেকে আলাদা করল। তারপর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকল। ওয়াফিফের কাছে আসায় তার হৃদস্পন্দন হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছে। সেটাই শান্ত করার চেষ্টা চালাতে লাগল। ওয়াফিফ জিনিয়ার এই কাজে হালকা হাসল। তারপর বলল,

–আমাকে সব বল, এতদিন যেই কথাগুলো বলতে চাইছিলে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here