#ধূসর_শ্রাবণ💚 #লেখিকা:#তানজিল_মীম💚 #পর্ব-১৬

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-১৬
________________

ঘড়ির কাঁটারা টিকটিক শব্দ করে চলছিল বেশ। রাতের আলোক মাখা জোৎসা ভরা তাঁরারা জ্বল জ্বল করছি আকাশের বুকে। জানালা জুড়ে থাকা সাদা পর্দাগুলোই নড়ছিল বারংবার আর এসবের ভিড়েই শুভ্রের চুলে আনমনেই বিলি কাটছিল বর্ষা। ঠোঁটে রয়েছে তাঁর মিষ্টি হাসি। যদিও শুভ্রের শরীরের জ্বরের তাপে সেও গরম হয়ে যাচ্ছে খুব। বর্ষা আনমনেই তাকিয়ে রইলো শুভ্রের মুখের দিকে তারপর বললো,

‘ আপনি এমন কেন শুভ্র? আমি জানি কিছুক্ষন আগে আপনি যে পাগলামিগুলো করলেন সেগুলো সত্যি ছিল না। জ্বরের ঘোরে ভুলভাল বকেছেন মাত্র। তবে কি বলুন তো আমি খুব খুশি হয়েছি। বাস্তব না হোক ভুলভালই শ্রেয়। ইস! যদি সত্যি সত্যি আপনি আমায় ভালোবাসতেন। আচ্ছা আপনি কি কখনোই আমায় ভালো বাসবেন না শুভ্র?’ কি জানি হয়তো বাসবেন হয়তো না। তবে আমি আপনার সাথে থাকতে পারছি এটাই অনেক। আপনি হয়তো জানেনও না সেই ছোট বেলা থেকেই আমি আপনায় ভালোবাসি শুভ্র। যবে থেকে জেনেছি আপনিই আমার স্বামী হবেন তবে থেকে সেই ভালোবাসা যেন আরো গভীর হয়েছে। কিন্তু আপসোসের বিষয় হলো আপনি আমায় ভালোবাসলেন না। জানেন তো এখনো আমার মনে একটাই প্রশ্ন ‘আপনি কেন সেদিন ফিরে এলেন?’ কি এমন হয়েছিল যার কারনে আপনি ফিরে এসে আমায় বিয়ে করলেন।’ এই প্রশ্নের উত্তর কি কখনো বলবেন আমায়। আমি ছোট বেলা থেকেই ভীষণ ভিতু,সহজে মনের কথা কাউকে বলতে পারি না। আপনি সজাগ থাকলে হয়তো এই কথাগুলো আপনায় কখনোই বলতে পারতাম না আমি। কিন্তু এখন দেখুন না কি সুন্দর আপনার ঘুমের সুযোগ নিয়ে মনের কথাগুলো বলছি নিমিষে। আমার ভীষণ ভয় হয় জানেন তো যদি আপনায় ভালোবাসি কথাটা শোনার পর আপনি রাগ করেন তাই বলি না। তবে এখন কি জানেন আমি আপনায় ভালোবাসি কথাটা বলি আর না বলি আপনি তো এখন আমারই, তবে আমি কি কখনো আপনার হবো শুভ্র?’

শেষের কথাটা আকাশ পথে তাকিয়ে বললো বর্ষা। তারপর জোরে নিশ্বাস ছাড়লো সে। কেন যেন ভিতর থেকে খুব খারাপ লাগা কাজ করছে হুট করে। বর্ষা শুভ্রের কপালে হাত রাখলো আবার এখনো গরম। চটজলদি বালিশের পাশ থেকে ভেজা কাপড়টা এনে সেটা বাটিতে ভিজিয়ে ভালো মতো নিগড়ে কপালে রাখলো শুভ্রের। গায়ের কাঁথাটাও সুন্দর মতো জড়িয়ে ছিল শুভ্রের গায়ে। তারপর চুপচাপ বসে রইলো সে। ঘুম পাচ্ছে তাঁর কিন্তু শুভ্রকে সরাতে মোটেও ইচ্ছে করছে না বর্ষার। তাই ঘুমটাকে কিছুক্ষনের জন্য উপেক্ষা করে চুপচাপ বসে রইলো সে। কিন্তু ঘুমকে কি চাইলেও উপেক্ষা করা যায় তাই বলতে না বলতেই আনমনেই দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো বর্ষা নিজের অজান্তেই।’

জানালার কার্নিশ বেয়ে ধেয়ে আসছে মৃদু আলো, সাথে শীতল বাতাস। রাতের চাঁদ মামাও উঁকি দিচ্ছে শুভ্রের রুমে। তারাও জ্বলছে খুব আর এসবের ভিড়েই বর্ষার কোলে মাথা দিয়ে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে শুভ্র, আর বর্ষা দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে। বিষয়টা নড়বড়ে হলেও সুন্দর।’

_____

মাঝখানে কেটে যায় একসপ্তাহ। এখন শুভ্র পুরোপুরি সুস্থ। আজই প্রথম অফিস যাবে সে। সুস্থ হওয়ার পর মাঝখানে একদিন রেস্ট নিয়েছিল শুভ্র। আর বর্তমানে ওয়াশরুমে গোসল করতে গেছে সে।’

আর বর্ষা সকালের বিছানাপত্রকে সুন্দর মতো গুছিয়ে, শুভ্রের জন্য আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করে বিছানায় সুন্দর মতো রাখলো সে। তারপর চটজলদি বেরিয়ে যায় রুম থেকে ব্রেকফাস্ট সাজাতে হবে তাঁকে।’

.

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় নিজের জিনিসপত্রগুলো সুন্দর মতো সাজানো দেখে মুচকি হাসলো শুভ্র। বর্ষাকে বিয়ে করে একদিক দিয়ে ভীষণ লাভ হয়েছে তাঁর সহজেই নিজের জিনিসগুলোকে হাতের কাছে পেয়ে যায় শুভ্র। শুভ্র আনমনেই খুশি হয়ে জামাকাপড়গুলো পড়ে নেয় চটপট তারপর এগিয়ে যায় সে আয়নার কাছে চুলগুলো আঁচড়ে নেয় তাড়াতাড়ি।’

.
ব্রেকফাস্ট টেবিলে খাবার সাজাতে ব্যস্ত বর্ষা। সকাল থেকে চুলার সামনে থাকায় হাল্কা হাল্কা ঘাম জমেছে মুখে, মাথার চুলগুলোও এলেমেলো হয়ে আছে, পরনে কালো শাড়ি কোমড়ের আটকানো আঁচল, চোখের সামনে অবাধ্য চুলগুলো বারবার বিরক্ত করছে তাঁকে কিন্তু সেই বিরক্তিটাকে টোটালি ইগনোর করে কাজ করে যাচ্ছে বর্ষা। এমন সময় সিঁড়ি বেয়ে শার্টের হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে নিচে নামছিল শুভ্র। বর্ষার দিকে তাকায় সে, মেয়েটা অকারণেই এত তাড়াহুড়ো করছে, অফিসে যেতে তো এখনও অনেক সময় এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে। তাড়াহুড়োর কারনে ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারছে না। শুভ্র বুঝে না এই মেয়েটা এমন কেন, বেশি ভাবলো না। এই প্রশ্নটা যতবারই তাঁর মাথায় এসেছে ততবারই দলা পাকিয়ে মাথার মধ্যেই আঁটকে গেছে আবার। শুভ্র নানা কিছু ভাবতে ভাবতে নিচে নামলো। শুভ্রের উপস্থিতি টের পেতেই বর্ষা তাকালো শুভ্রের দিকে। তারপর পাউরুটিতে জ্যাম লাগাতে লাগাতে বললো সে,

‘ আপনি চলে এসেছেন?’

প্রতিউওরে শুভ্রও বলে উঠল,

‘ হুম।’

‘ বসুন আমি আপনাকে খেতে দিচ্ছি।’

বলেই জ্যাম লাগানো রুটিটি রাখলো শুভ্রের প্লেটের ওপর। শুভ্রও বসলো গিয়ে চেয়ারে তারপর পাউরুটিতে এককামড় দিয়ে বললো,

‘ তুমিও বসো একসাথে খাই?’

প্রতি উওরে হাল্কা হেঁসে বললো বর্ষা,

‘ আপনি খান আমি পরে খেয়ে নিবো।’

বর্ষার কথার প্রতি উওরে আর জোর খাটালো না শুভ্র। নিজের মতো করে খেতে শুরু করলো সে। হঠাৎই বর্ষা বলে উঠল,

‘ আপনাকে একটা কথা বলবো?’

বর্ষার কথা শুনে দুধের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বললো শুভ্র,

‘ হুম বলো?’

‘ আসলে হয়েছে কি আমার বেস্টফ্রেন্ড আরোহী আপনি চিনেন নিশ্চয়ই বউভাতে এসেছিল।’

‘ হুম,

‘ ও লন্ডনে থাকে তা ওর দু’ বছরের ছেলের জন্মদিন কাল। আপনাকে আর আমাকে ইনভাইট করেছে এখন আপনি কি যাবেন আমাকে নিয়ে, ও খুব করে যেতে বলছে?’

উওরে অনেকক্ষণ চুপ থাকলো শুভ্র। শুভ্রকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বললো বর্ষা,

‘ তবে আপনার অসুবিধা থাকলে যাওয়ার দরকার নেই আমি কিছু একটা বলে ম্যানেজ করে নিবো।’

বর্ষার কথা শুনে শুভ্র শীতল দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কাল কটায়?’

‘ সন্ধ্যায়।’

‘ ঠিক আছে. তুমি তৈরি থেকো আমি অফিস থেকে ফিরে তোমায় নিয়ে যাবো?’

শুভ্রের কথা শুনে প্রচন্ড খুশি হলো বর্ষা। হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললো,

‘ আপনি সত্যি যাবেন?’

‘ হুম।’

‘ ধন্যবাদ।’

উওরে আর কিছু বললো না শুভ্র। শুভ্রকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বললো বর্ষা,

‘ আর একটা কথা বলবো?’

বর্ষার কথা শুনে শান্ত দৃষ্টিতে আবারো তাকালো শুভ্র বর্ষার মুখের দিকে। শুভ্রের চাহনি দেখেই বললো বর্ষা,

‘ ভাবছি বিকেলে একবার শপিং এ যাবো আপনার তো সময় হবে না, আমি পাশের বাসার আন্টির সাথে যাই উনি বলেছিল আজ শপিং যাবে। আমি কি যাবো?’

‘ ঠিক আছে যেও?’

উওরে এবারও খুশি হলো বর্ষা। আবারো বললো সে,

‘ এত্তো গুলা ধন্যবাদ আপনায়।’

শুঁকনো হাসলো শুভ্র। অতঃপর ব্রেকফাস্ট শেষ করে টিসু দিয়ে মুখ মুছে। চেয়ার উঠে দাঁড়ালো শুভ্র তারপর চেয়ারের উপরে রাখা গায়ের কোটটা গায়ে জড়িয়ে বললো শুভ্র,

‘ আসছি তবে আর সাবধানে যেও।’

শুভ্রের কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললো বর্ষা,

‘ হুম আপনিও সাবধানে যাবেন।’

‘ হুম।’

এতটুকু বলে নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল শুভ্র। আর বর্ষাও শুভ্রকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আবার দরজা আঁটকে চলে আসে ভিতরে।’

_______

দুপুরের কড়া রোদ্দুরে মাঝে ফাঁকা একটা রাস্তা দিয়ে ভার্সিটি ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে হিয়া। চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ,মুলত রিকশা না পাওয়ায় এইভাবে হাঁটছে সে। এমন সময় পিছন থেকে একটা ছেলে এসে ব্যাগ ধরে দিলো টান আচমকা এমনটা হওয়াতে পুরো চমকে উঠলো হিয়া। ‘চোর চোর’ বলে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো কিছু স্পষ্টনীয় ধ্বনি। কিন্তু ততক্ষণে ব্যাগ নিয়ে দৌড়ালো চোর। হিয়াও হতভম্ব হয়ে দৌড়াতে লাগলো চোরের পিছন পিছন কিন্তু কিছুদূর এগোতেই মাঝরাস্তায় জুতো পিছলে রাস্তার মাঝে হুমড়ি খেয়ে পড়লো সে। এতে হাতে আর পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পায় হিয়া। হিয়া বুঝলো না তাঁর ওই ছেঁড়া ব্যাগটাকে নিয়ে চোরটা কি করবে। তেমন কিছু নেই ব্যাগে। মোবাইলটা হিয়ার হাতে ছিল যার কারনে মোবাইলটা বেঁচে গেল এটা নিলে হয়তো একটু লাভ হতো। ব্যাগের ভেতর একটা নতুন ডাইরি ছিল মাত্র কিনেছিল। আর দুটো কলম। বাকিতা বাসায়। আজ তেমন কিছু আনে নি হিয়া। কিন্তু ওই তিনটে জিনিসকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে আহত হতে হলো খুব হিয়া আশেপাশে তাকিয়ে সামনে একটা গাছের নিচে বসলো চুপচাপ। হাত আর পা জ্বলছে খুব। হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে এখন কি করবে বাড়ি ফিরবে? ভীষণভাবে কান্না পাচ্ছে হিয়ার কেন যে চোরের পিছনে দৌড়াতে গেল। রাস্তাটা খুব ফাঁকা আর নিরিবিলি থাকায় কারো কাছে হেল্পও চাইতে পারছে না হিয়া। পায়ে আর হাতে অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে রক্তও বের হচ্ছে। হিয়া অনেক ভেবে চিন্তে শিফার নাম্বারে কল করতে নিলো এমন সময় আচমকাই একটা ছেলে পায়ের কাছে এসে পড়তেই ভয়ে আঁতকে উঠলো হিয়া। সঙ্গে সঙ্গে তাকালো সে ছেলেটির মুখের দিকে। মাত্র যে ছেলেটা তাঁর ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে ছিল সেই ছেলেটা। হিয়া বিস্মিত হয়ে তাকালো সামনে, তাঁর দিকেই রাগী লুকিং নিয়ে এগিয়ে আসছে নির্মল। হিয়া একদমই ভাবে নি এই মুহূর্তে নির্মল তাঁর সামনে আসবে। এই ছেলেটাকি তাঁকে আড়াল থেকে ফলো করে নাকি যে যখনই প্রবলেমে পড়ে তখনই সামনে চলে আসে। হিয়া শিফার নাম্বারে আর ডায়াল না করে চুপটি বসে রইলো গাছের নিচে। এরই মাঝে নির্মল নিচে লুটিয়ে পড়া ছেলেটার ঘাড়ের অংশ চেপে ধরে বললো,

‘ তোর এত সাহস কি করে হলো আমার জানকে আঘাত করার?’

প্রতিউওরে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বললো ছেলেটি,

‘ ভাই এইবারের মতো মাফ কইরা দেন আমার ভুল হয়ে গেছে, আমায় ক্ষমা করেন ভাই।’

‘ ক্ষমা, নির্মলের কাছে কোনো ক্ষমা নেই তোর জন্য আমার প্রিয়দর্শিনী আঘাত পেয়েছে রক্ত ঝরছে। আর তুই বলছিস তোকে ক্ষমা করে দিবো।’

বলেই মুখ বরাবরই একটা ঘুষি মারলো নির্মল। সাথে সাথে ছেলেটির মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগলো। নির্মল আরো কয়েকটা মারবে তার আগেই হিয়া বলে উঠল,

‘ থামুন নির্মল কি করছেন কি ছেলেটা মরে যাবে তো?’

‘ মারতেই তো চাই।’

‘ ওঁকে ছেড়ে দিন নির্মল আর আমার ব্যাগে তেমন কিছু ছিল না।’

কিন্তু নির্মল শুনলো না এলোপাতাড়ি মারতে রাখলো ছেলেটিকে। নির্মলের কাজে হিয়া চেঁচিয়ে বলে উঠল,

‘ থামুন নির্মল। আমায় ভালোবেসে থাকলে থেমে যান বলছি?’

এবার থামলো নির্মল। নির্মলের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই ছেলেটি দৌড়ে পালালো। আর নির্মল নিচের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে লাগলো ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে সে, হিয়া তাকে না থামালে নির্ঘাত ছেলেটিকে আজ মেরেই ফেলতো সে।’

#চলবে……

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here