#ধূসর_শ্রাবণ💚 #লেখিকা:#তানজিল_মীম💚 #পর্ব-১৫

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-১৫
________________

কিছুটা ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে তাকিয়ে আছে শুভ্র বর্ষার মুখের দিকে। আর বর্ষা প্রায় সব ভুলে তিয়ানের সাথে হাসাহাসি করছে। মুলত তিয়ানের বাংলা শব্দগুলোকে ফানি ফানি করে বলছে বলে বর্ষা না চাইতেই হেঁসে ফেলছে। তিয়ান তাঁর পুরো পায়েসটা শেষ করে বললো,

‘ পাসেত না পাসেয় না পায়েসটা কিন্তু খুব ডেলিসিয়াস ছিল,ভাবি?’

উওরে হেঁসে বললো বর্ষা,

‘ থ্যাংক ইউ।’

বর্ষার কথা শুনে মুচকি হাসে তিয়ান। এরপর আরো কিছুক্ষনের কথোপকথন হয় সকলের মাঝে। সবাই বর্ষার হাতের রান্না খেয়ে প্রশংসা করে। সাথে শাড়িতে বর্ষাকে খুব সুন্দর লাগছে এটাও বলে বিশেষ করে তিয়ান। শুভ্রও মুখ ভাড় করে সবার কথার প্রতিউওর হিসেবে শুধু মুচকি হাসে। অতঃপর খাওয়াদাওয়া শেষ কিছু্ক্ষন শুভ্রের সাথে কথা বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সবাউ তারপর বর্ষা আর শুভ্রকে টাটা বাই বাই জানিয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। বর্ষাও খুশি মনে সবাইকে এগিয়ে দিতে বেরিয়ে যায় ওদের পিছু পিছু। শুভ্রের দিকে তাকাই নি একবারও যার কারনে শুভ্রের আরো বেশি রাগ হচ্ছে সে কি বলেছে বর্ষাকে ওদের এগিয়ে দিতে তাহলে যেচে কেন যাচ্ছে,অতিরিক্ত? শুভ্র ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো খাটে। রাগ হচ্ছে তার, ভীষণ রাগ!

এদিকে,

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবাইকে বিদায় জানালো বর্ষা। বেশ লেগেছে তাঁর শুভ্রের বন্ধুদের। মেয়ে ছেলে সবাই যথেষ্ট ভালো। শুভ্রকে কত সম্মান করে। মুচকি হাসলো বর্ষা তারপর দরজা আঁটকে চলে যায় শুভ্রের রুমের দিকে। এঁটো বাসন গুলো এখনো শুভ্রের রুমে রয়েছে সেগুলো এনে ধুতে হবে তাঁকে। যেই ভাবা সেই কাজ। বর্ষা রুমে ঢুকেই সর্বপ্রথম চলে যায় বিছানার কাছে কোনো কিছু না বলেই বিছানার উপর থেকে ট্রে সমেত থালাবাসনগুলো গুছিয়ে হাতে নেয় সে। তারপর খুশি মনে বলে,

‘ আপনার বন্ধুগুলো ভীষণ ভালো। কি সুন্দর মিষ্টি কথা বলে।’

উওরে শুভ্র চুপ। শুভ্রের চুপ থাকার মাঝেই আবারো বলে উঠল বর্ষা,

‘ বিশেষ করে তিয়ান নামের ছেলেটি, বাংলা ঠিক ভাবে উচ্চারনই করতে পারছিল না পায়েসকে কতকিছু বললো পাতেস, পাসেত, পাসেয় আরও কত কি?

বলতে বলতে হেঁসে ফেলে বর্ষা। বর্ষার হাসি দেখে গম্ভীর কণ্ঠ নিয়েই বলে উঠল শুভ্র,

‘ একদেখায় এত ভালো লেগে গেলো ওদের।’

‘ তাহলে বলছি কি আপনি ভাগ্য করে এমন ভালো বন্ধু পেয়েছেন। আমার তো হাতে গোনা মাত্র ক’জন।’

উওরে কিছু বলে না শুভ্র। কেন যেন বর্ষার মুখে তিয়ানের প্রসংশাটা ঠিক নিতে পারছে না সে। বর্ষা এঁটোবাসন গুলো একটু সাইড করে রেখে বিছানা ঠিক করতে করতে বলে,

‘ আপনি রাতে কি খাবেন?’

‘ কিছু না।’ (গম্ভীর কন্ঠে)

‘ সুপ খাবেন?’

উওরে চুপ থাকে শুভ্র। এরই মধ্যে বর্ষার ফোনটা বেজে উঠল। বর্ষাও বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা তুললো উপরে তাঁর বেস্ট ফ্রেন্ড আরোহীর নাম্বার দেখে খুশি মনে ‘হ্যালো’ বলতে বলতে এটোবাসনগুলো হাতে নিয়ে শুভ্রকে টোটালি ইগনোর করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।’

আর শুভ্র জাস্ট হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো বর্ষার পানে। বর্ষার ইগনোর দেখে আরো রাগ হলো শুভ্রের তবে সেটা প্রকাশ করলো না একটুও।’

_____

বিকেল পাঁচটা!’

ঢাকার উওরার একটা পুরনো লাইব্রেরিতে চুপচাপ বসে আছে হিয়া। চোখে চশমা, পরনে পেস্ট কালার সেলোয়ার-কামিজ, চুলগুলো সুন্দর মতো আঁচড়ে বেনুনি করা দৃষ্টি তাঁর বইয়ের পাতায়। এমন সময় হতভম্ব হয়ে তাঁর দিকে দৌড়ে এগিয়ে আসতে লাগলো শিফা। আশেপাশে তাকিয়ে লাইব্রেরির শেষ প্রান্তে হিয়াকে দেখে পাঁচ দশ কিছু না ভেবেই ঝড়ের গতিতে দৌড়ে গিয়ে বসলো হিয়ার মুখোমুখি তারপর হতভম্ব গলায় বললো সে,

‘ দোস্ত, শুনলাম নির্মল ভাইয়া নাকি তোদের বাড়িতে গিয়েছিল তোর বিয়ে ভাঙতে?’

শিফা এতটাই উচ্চস্বরে কথাটা বললো যে আশেপাশের লোকজন তাদের কাজ থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো শিফার দিকে। সবার চাহনি দেখে হাল্কা ঘাবড়ে যায় শিফা। তক্ষৎনাত সবার কাছে নিচু স্বরে বললো সে,

‘ সরি সরি। আসলে একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে গেছি আর কি? আপনারা আপনাদের কাজ করুন।’

লোকগুলো শুনলো কেউ কিছু না বলে আবারো নজর দিলো তাদের কাজে। সবাইকে নিজের থেকে দৃষ্টি সরাতে দেখে সস্থির নিশ্বাস ছাড়লো শিফা। তারপর আবারো দৃষ্টি রাখে সে হিয়ার দিকে। মেয়েটা কোনো ভাবনাহীন ভাবেই চুপচাপ চেয়ে আছে বইয়ের দিকে। শিফা বুঝলো না তার চেঁচানো শুনে সবাই তাঁর দিকে তাকালেও হিয়া কেন তাকালো না সে কি শোনে নি তাঁর এই ষাঁড়ের মতো গলা। শিফা বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে আবারো বলে উঠল,

‘ দোস্ত, দোস্ত তুই কি শুনতে পাস নি আমার কথা, নাকি নির্মল ভাইয়ার কান্ডে তুইও আমার মতো নিস্তব্ধ।’

প্রতিউওরে খুব শান্ত গলাতেই বললো হিয়া,

‘ শুনছি তো, আর তেমন কিছু হয়নি যার কারনে নিস্তব্ধ হয়ে যাবো?’

হিয়ার কন্ঠ আর কথা শুনে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বললো শিফা,

‘ শুনছিস তাহলে কিছু বলছিস না কেন, আর তুই সত্যি ঠিক আছিস দোস্ত?’

এবার হিয়া বইয়ের পাতা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চোখ রাখলো শিফার দিকে তারপর বললো,

‘ তুই যতটা হাইপার হচ্ছিস তেমন কিছুই হয় নি।’

‘ কিছু হয় নি।’

‘ না। তবে বিয়েটা ভেঙে গেছে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। ওই মা পাগল হাবলাকান্তকে আমায় বিয়ে করতে হবে না।’

লাস্টের কথাটা খুব হেঁসেই বললো হিয়া। হিয়ার কান্ডে শিফা বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ যাহ শালা আমি এতকিছু ভাবলাম অথচ তেমন কিছুই হয় নি।’

‘ হয়েছে তো।’

‘ কি কি হয়েছে দোস্ত বল না।’ (খুব আগ্রহ নিয়ে)

‘ হুম বলছি,

বলেই নির্মলের সাথে ঘটে যাওয়া সব কাহিনি খুলে বললো হিয়া শিফাকে। সব শুনে শিফার তো চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম। চোখ বড় বড় করে বললো সে,

‘ এত কিছু হলো আর তুই বলছিস তেমন কিছু হয় নি।’

উওরে শীতল দৃষ্টিতে শিফার দিকে তাকিয়ে বললো হিয়া,

‘ ওই আর কি?’

‘ আক্কেল তোকে কিছু জিজ্ঞেস করে নি?’

‘ না, আমি ফাঁক পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। ভাবছি আজ আর বাড়ি ফিরবো না খালামনির ওইখানে যাবো।’

‘ কি?’

‘ হুম। বেশি চেঁচাস না আমায় পড়তে দে খুব টেনশনে আছি বুঝলি?’

‘ কেন নির্মল ভাইয়ার জন্য?’

‘ আরে না।’

‘ তবে?’

‘ অন্যকিছু।’

প্রতি উওরে পাল্টা কিছু বলতে পারলো না শিফা। হয়তো একান্তই ব্যাক্তিগত কিছু যার দরুন হিয়া কিছু বলতে চাইছে না।’

______

রাতে আবার গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে শুভ্রের। যার কারনে কিছুটা হতাশ হয়েই শুভ্রের পাশে বসে আছে বর্ষা। কপালে জলপট্টি দিচ্ছে কিছুক্ষন পর পর। হুট করে জ্বরটা আবার কেন বাড়লো এটাই যেন বুঝতে পারছে না বর্ষা। বাড়ির কাউকেই বিষয়টা জানানো হয়নি কারন শুভ্র বারন করেছিল তাঁকে বিডিতে কিছু না বলে। এমনিতেও তাঁরা জানলেই বা কি করতো? শুধু শুধু টেনশন ছাড়া আর কিছু না। বিদেশে থাকলে এই এক সমস্যা প্রিয় মানুষগুলোর কাছে চাইলেও হুট করে যাওয়া যায় না আবার হুট করে তাঁরাও আসতে পারে না। হঠাৎই শুভ্রের মুখের কিছু অস্পষ্টনীয় বার্তা শুনে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো বর্ষা। হাল্কা চমকে উঠেই শুভ্রের দিকে তাকালো সে, শুভ্রের ঠোঁট নড়ছে কিন্তু শুভ্র কথা এতটাই আস্তে বলছে যে বর্ষার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। বর্ষা তার কানটা হাল্কা একটু কাছাকাছি নিলো শুভ্রের তারপর বললো,

‘ আপনি কি কিছু বলছেন?’

উওরে আবারো অস্পষ্টনীয় কিছু বললো শুভ্র কিন্তু কি বললো সেটাই বুঝলো না বর্ষা। শুভ্রের কাজে আরো হতাশ বর্ষা। নিজের কানটাকে আর একটু শুভ্রের ঠোঁটের কাছাকাছি নিয়ে শুনতে লাগলো শুভ্রের বলা কথা। শুভ্র বলছে,

‘ তুমি খুব খারাপ বর্ষা?’

সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে গেল বর্ষার। কি শুনলো সে, শুভ্র তাঁকে খারাপ বলছে কিন্তু কেন কি করেছে সে। কিন্তু শুভ্র হঠাৎ এসব বলতে যাবে কেন নিশ্চয়ই সে ভুলভাল কিছু শুনেছে। বর্ষা তাঁর কানটাকে আঙুল দিয়ে হাল্কা পরিষ্কার করে আবারো কান রাখলো শুভ্রের ঠোঁটের কাছাকাছি। শুভ্র আবারো বলছে,

‘ তুমি খুব খারাপ হয়ে গেছো বর্ষা, আমার কোনো কথার মূল্য দেও না।’

এবার বর্ষা পারুক খাট থেকে ধপাস করে পড়ে যাক। নির্ঘাত তার কান গেছে নয়তো শুভ্রের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বর্ষা হতাশ হয়ে বললো,

‘ আপনার কি হয়েছে শুভ্র, আপনি ঠিক আছেন তো, কিসব ভুলভাল বকছেন?’

উওরে এবার শুভ্র তাকালো বর্ষার দিকে। হুট করে শুভ্রের চোখ খোলাতে হাল্কা নড়েচড়ে উঠলো বর্ষা তক্ষৎনাত শুভ্রের কাছ থেকে হাল্কা সরে বসলো সে।

অন্যদিকে,

আচমকা চোখ খোলাতে চোখ জ্বলছে শুভ্রের,প্রচন্ড জ্বরের কারনে চোখ লাল হয়ে আছে তাঁর। যার কারনে শুভ্রকে খুব রাগী দেখাচ্ছে। শুভ্র বেশ রাগি কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আমাকে কি তোমার পাগল মনে হচ্ছে?’

শুভ্রের কথা শুনে চমকে উঠলো বর্ষা। বেশ হতভম্ব হয়েই বললো সে,

‘ এমা না না তা মনে হবে কেন?’

‘ তাহলে কি মনে হচ্ছে তোমার?’

‘ না আমার কিছু মনে হচ্ছে না।’

এবার শুভ্রের আরো রাগ হলো। খপ করে বর্ষার হাত ধরে বসলো শুভ্র, তারপর ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো,

‘ কেন কিছু মনে হচ্ছে না তোমার, তুমি এমন কেন বর্ষা? তোমাকে শুধু শুধু আমি ইডিয়ট ইস্টুপিট বলি।’

শুভ্রের কাজ আর কথা শুনে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম বর্ষার কিসব ভুলভাল বকছে শুভ্র। কি বোঝে না সে, এতক্ষণ বর্ষা হাফ শিওর থাকলেও এখকন পুরোপুরি শিওর শুভ্রের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বর্ষা ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে বললো,

‘ আয় হায় শেষে কিনা মাথা খারাপওয়ালা জামাই পেলাম আমি?’

উওরে কঠিন দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো শুভ্র,

‘ কি বললে তুমি?’

‘ কিছু বলে নি আপনি ঘুমান আমরা কাল কথা বলবো?’

‘ তোমার কালের একশো সতেরো বার।’

শুভ্রের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো বর্ষা,

‘ আপনি আমার সাথে এইভাবে ঝগড়া করছেন কেন?’

বর্ষার কথা শুনে বর্ষার দিকে তেড়ে গিয়ে বললো শুভ্র,

‘ আমি তোমার সাথে ঝগড়া করছি?’

‘ তা নয় তো কি।’

‘ বেশ করেছি ঝগড়া করছি, আমি আমার বউয়ের সাথে ঝগড়া করছি তাতে তোমার কি ইডিয়েট একটা।’

আর কিছু বলতে পারলো না শরীরের শক্তি যেন লোপ পেল শুভ্রের। ক্লান্ত শরীরটাকে আনমনেই নেতিয়ে দিলো সে বর্ষার কোলে। কোলে মাথা রাখতেই ঘুম এসে ভর করলো শুভ্রের চোখে। নীরবেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল সে। আর বর্ষা সে বুঝলোই না হুট করে শুভ্রের কি হলো, কি এমন করেছে সে যার কারনে শুভ্র তাঁর সাথে জ্বরের ঘোরে এইভাবে ঝগড়া করলো?’

অবাক কান্ড!’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here