#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-১৪ oky
________________
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে হিয়া নির্মলের মুখের দিকে। তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছে না নির্মল এই মুহূর্তে তাঁর বাড়িতে এসেছে। অন্যদিকে নির্মল খুব ভাব নিয়ে সবার সামনে এগিয়ে এসে পায়ের ওপর পা তুলে বসলো সামনের সোফায়। নির্মল বসতেই তাঁর পিছন পিছন কয়েকটা ছেলে ঢুকে মিষ্টি ফলমূল রাখলো সামনের টি-টেবিলের ওপর। তারপর চলে যায় তাঁরা আবার বাহিরে। এরই মধ্যে হিয়ার বাবা বলে উঠল,
‘ তুমি কে? আর তোমার সাহস তো কম না হুট করে বাড়িতে ঢুকে অভদ্রতা দেখাচ্ছো?’
হিয়ার বাবার কথা শুনে খুব স্টাইল মেরে নিজের চোখের চশমাটা খুললো নির্মল। তারপর পা ওপর থেকে পা নামিয়ে বললো,
‘ শশুর মশাই বেশি চাপ নিবেন না আমি আপনার ভবিষ্যত কালিন মেয়ের জামাই।’
নির্মলের কথা শুনে তেলে বেগুনে এক হলো হিয়ার বাবা। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কাট কাট গলায় বললেন উনি,
‘ মজা হচ্ছে এখানে, আমাদের কি জোকার মনে তোমার?
‘ এই তো শশুর মশাই আমার সিরিয়াস কথাটাকে আপনি মজা ভেবে বসলেন। আপনার সাথে পড়ে কথা বলছি আগে এদের সাথে কথা বলে নেই।’ ( পাত্রপক্ষদের দিকে তাকিয়ে)
নির্মলের কথা শুনে হিয়ার বাবা ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো,
‘ ওনাদের সাথে তোমার আবার কিসের কথা?’
‘ সেটা না হয় ওনাদেরই বলি।’
‘ বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।’
উওরে চোখের ভুরুটাকে হাল্কা চুলকিয়ে বললো নির্মল,
‘ এটা কিন্তু বারাাবাড়ি হচ্ছে শশুর মশাই।’
‘ তোমার শশুরের নিকুচি করছি,
বলেই নির্মলের দিকে তেড়ে আসতে নিলো হিয়ার বাবা। এবার বেশ বিরক্ত হলো নির্মল। ভেবেছিল চুপচাপ বিষয়টা শান্তভাবে মিটাবে কিন্তু না হিয়ার বাবা বারাবারি করছে। নির্মল তাঁর পকেট থেকে কালো রিভলবারটা বের করে রাখলো টেবিলের ওপর। তারপর শান্ত গলায় বললো,
‘ এবার তাহলে কাজের কথায় আসা যাক।’
নির্মলের কাজে হাল্কা ঘাবড়ে যায় হিয়ার বাবা তবে প্রকাশ করেন না। নির্মল হিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ শশুর মশাই আমি জাস্ট কিছুক্ষনের কথা বলেই চলে যাবো। তাই বেশি বকবক না করে চুপচাপ আমার কথাগুলো শুনন।’
নির্মলের কথা শুনে হিয়ার মা এগিয়ে এসে হিয়ার বাবাকে বসালো সোফায়। ঘাবড়ে সেও গেছেন। নির্মলের কাজ দেখে বেশ বুঝতে পেরেছেন এই ছেলে নির্ঘাত কোনো গুন্ডাফুন্ডা। হিয়ার মায়ের কাজ দেখে নির্মল খুশি মনে হিয়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আই লাইক ইট শাশুড়ী মা। আমার ছেলেমেয়ের দাদি হওয়ার জন্য আপনিই পারফেক্ট।’
নির্মলের কথা শুনে রাগ হলো হিয়ার বাবার। তবে কিছু বললেন না উনি। এরই মধ্যে নির্মল পাত্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ মেয়ে পছন্দ হয়েছে?’
উওরে কি বলবে ভুলে গেছে পাত্র। ভয়ে চোটে শরীর থর থর করে কাঁপছে তার। ছেলের কাজ দেখে নির্মল আবারো বলে উঠল,
‘ কি হলো কথা বলছো না কেন মেয়ে পছন্দ হয়েছে?’
নির্মলের কথা শুনে পাত্রের বাবা বেশ সাহসীকতার সাথে বলে উঠল,
‘ ওঁকে কি বলছো যা জিজ্ঞেস করার আমাকে করো? তোমাদের মতো বখাটেদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় তা আমার হারে হারে জানা আছে।’
পাত্রের বাবার কথা শুনে উচ্চ স্বরে হাসলো নির্মল তারপর বললো,
‘ ও বাবা আপনি তো দেখছি খুব সাহসী।’
‘ কি ভেবেছো কি বাড়ি বয়ে এসে ভয় দেখালেই আমরা ভয় পেয়ে চুপসে যাবো। এক্ষুনি পুলিশকে একটা ফোন করবো তাঁরপর যা করার সব ওনারাই করবেন।’
এবার রাগ উঠলো নির্মলের টেবিলের উপর থেকে রিভলবারটা নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো,
‘ আপনি কাকে যেন ফোন করবেন বললেন?’
নির্মলের কাজে ভয়ে চুপসে গেল পাত্রের বাবা। নির্মল দেয়াল বরাবর একটা গুলি ছুড়লো সাথে সাথে পাত্র ভয়ের চোটে কোলে উঠে বসলো তাঁর মায়ের। পাত্রের কাজে হিয়ার হাসি পাচ্ছিল খুব কিন্তু আপাতত সেই হাসিটাকে দমিয়ে রেখে চুপচাপ বসে রইলো সে। নির্মল পাত্রপক্ষের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আমি হিয়ার পুরনো লাভার। বুঝতেই পারছেন কতটা ভালোবাসলে বাড়ি বয়ে আপনাদের জানাতে আসছি। এখন বলুন আপনারা কি এখনো এখানে বসে থাকবেন নাকি,,,
বলেই আর একবার রিভলবার ঘুরাতে লাগলো নির্মল। এবার ঘুরাতে ঘুরাতে পাত্রের কপাল বরাবর নিশানা রাখলো নির্মল। সাথে সাথে পাত্র ভয়ের চোটে মায়ের কোল থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,
‘ লাগলে আমি চিরকুমার থাকবো তারপরও এই বিয়ে করবো না।’
বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেল পাত্র। পাত্রের কাজে হাসলো নির্মল। বললো,
‘ এই না হলে কথা।’
তক্ষৎনাত একে একে পাত্রের পিছন পিছন পাত্রের মা বাবাও বেরিয়ে গেল। পাত্রের বাবা তো হিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কাজটা আপনি ঠিক করেন নি মির্জা সাহবে।’
উওরে কিছু বলতে পারলেন না হিয়ার বাবা। পাত্রপক্ষরা যেতেই হিয়ার বাবা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নির্মলের দিকে। সবাই যেতেই নির্মল এবার খুব সিরিয়াস ভাবে বললো,
‘ দেখুন শশুর মশাই। কথা প্যাঁচানো আমি একদমই পছন্দ করি না। আপনার মেয়েকে আমি ভালোবাসি। আর বিয়ে করলে ওঁকেই করবো। তাই মেয়ের জন্য পাত্র দেখা বন্ধ করুন। আমি শুধু আপনার মেয়ের মুখে ভালোবাসি শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। যেদিন আপনার মেয়ে ভালোবাসি কথাটা বলবে তখন আর অপেক্ষা করবো না ধুমধামভাবে বিয়ে করে নিয়ে যাবো আমার বাড়ি। তাই অহেতুক আপনার মেয়ের জন্য সময় নষ্ট করবেন না। ভালো থাকবেন আজ তবে আসি। শশুর মশাই।’
বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো নির্মল। তারপর চোখের চশমাকে আবারো স্টাইল মেরে চোখে পড়ে বললো সে,
‘ শান্ত গলায় কথাগুলো বলেছি বলে যদি আপনি আবার বারাবাড়ি কিছু করেন তাহলে তো বুঝতেই পারছেন। তখন আর আপনার মেয়ের ভালোবাসি শব্দটা শোনার জন্য আমি অপেক্ষা করবো না শশুর মশাই। সোজা তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। রোজ রোজ আপনি পাত্র নিয়ে আসবেন আর আমি তাদের হুমকি দিবো জিনিসটা বাজে তাই সরাসরি আপনাকেই হুমকি দিলাম। ভালো থাকবেন আবার দেখা হবে।’
বলেই একপলক হিয়ার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যেতে নেয় নির্মল। হঠাৎই টেবিলের উপর থাকা ফলমূলের দিকে তাকিয়ে বললো নির্মল,
‘ আর হ্যা এই মিষ্টি আর ফলমূলগুলো খেয়ে নিবেন। প্রথমবার শশুর বাড়ি আসছি খালি হাতে আসা যায় তাই এই অল্পকিছু জিনিসপত্র।’
উওরে হিয়ার বাবার কিছু কথা বলা বা শোনার আগেই হন হন করে চলে গেল নির্মল। আর হিয়ার বাবা মা জাস্ট নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে রইলো নির্মলের যাওয়ার পানে যেন যা হলো সব তাদের মাথার উপর দিয়ে গেল। আর হিয়া সে তো পুরোই বাকরুদ্ধ নির্মল এত কিছু বলে যাবে এটা তো ভাবতেই পারে নি সে। তবে একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে ওই দাঁত উঁচা মা পাগলা ছেলেকে তাঁর বিয়ে করতে হবে না।’
______
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে চাকু দিয়ে কিছু ফলমূল সাথে কিছু খাবার বানাচ্ছে বর্ষা। শুভ্রের অসুস্থতার কথা শুনে তাঁর অফিস প্লাস ভার্সিটির কিছু বন্ধুবান্ধব এসেছে শুভ্রের সাথে দেখা করতে। বর্ষার মনটা আজ ভীষণ ফুড়ফুড়ে কারন তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না সকালে সে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল। বিষয়টা মনে করতেই চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে বর্ষার। কাল ভয়ের চোটে একপ্রকার বাধ্য হয়েই শুভ্রকে জড়িয়ে ধরেছিল বর্ষা। শুভ্র গভীর ঘুমে থাকায় বিষয়টা বুঝতে পারে নি। কিন্তু সকালে শুভ্রও ঘুমের ঘোরে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে ছিল বিষয়টা মনে করতেই বর্ষা লাল নীল বেগুনি হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই পোড়া পোড়া গন্ধ নাকে আসতেই নিজের ভাবনা দেখে বেরিয়ে আসলো বর্ষা। তক্ষৎনাত কড়াই থেকে ঢাকনা সরিয়ে নাড়তে শুরু করলো বর্ষা রোমান্টিকের চক্করে তাঁর রান্না গেল।’
”
বন্ধুদের সাথে অল্প স্বল্প কথা বলছিল শুভ্র। জ্বর তার আগের থেকে অনেকটাই কমে গেছে। বর্ষার সেবায় প্রায় সুস্থ শুভ্র। এমন সময় হাতে ট্রে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো বর্ষা। পরনে তাঁর শাড়ি। সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছিল বর্ষা। বর্ষা মুচকি হেঁসে খাবারগুলো বিছানার উপর রাখলো। শুভ্রও খাবার দেখে বললো সবাইকে,
‘ খাও সবাই।’
শুভ্রের কথা শুনে ওরাও খেতে শুরু করলো।
পায়েস তৈরি করেছে বর্ষা। বিদেশি খাবার রান্না করা এখনো শেখেনি সে। তাই অনেক ভেবে চিন্তে এই খাবারটা বানিয়েছে সে।’
শুভ্রের বাম দিকেই বসেছিল শুভ্রের ভার্সিটির ছেলে ফ্রেন্ড তিয়ান। পায়েসে এক চুমুক দিয়েই বললো সে,
‘ উম এটা তো খেতে খুব সুস্বাদু এটার নাম কি?’
সাথে সাথে বর্ষা খুশি হয়ে বললো,
‘ পায়েস।
বর্ষার কথা শুনে তিয়ান তাকালো বর্ষার দিকে তারপর বললো,
‘ পপপপপপা এ…স…
তিয়ানের কথা শুনে হেঁসে ফেললো বর্ষা তারপর বললো,
‘ আপনি তো ঠিকভাবে উচ্চারনই করতে পারছেন না।’
‘ আর একবার নামটা বলো?’
উওরে আবারো হাসে বর্ষা তারপর বলে,
‘ ঠিক আছে পায়েস।’
‘ পাতেস।’
সাথে সাথে উচ্চস্বরে হেঁসে ফেললো বর্ষা। বর্ষার হাসি দেখে বললো তিয়ান,
‘ আরে তুমি হাসছো কেন?’
‘ না না কিছু না।’
এদিকে বর্ষা আর তিয়ানের হাসি দেখে মটেও ভালো লাগছে না শুভ্রের। রাগ হচ্ছে তার, সে বুঝে না এত হাসার কি আছে?’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। কাল ছোট্ট একটা মিসটেক হয়েছিল আমার, আসলে লন্ডনে যে প্রচুর পরিমানে বর্জ্যপাত হয় না এটা আমার জানা ছিল না। এক পাঠকের কমেন্ট দেখে জেনেছি আমি। যেহেতু জিনিসটা আমি লিখে ফেলেছি তাই কালকের পার্টটাকে সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিকতায় নিয়ে নিও সবাই। আসলে আমি যখন কোনো কিছু লেখি তখন ততশত ভাবি না। তবে নেক্সট টাইম থেকে ভাব্বো। আশা করি তোমরা বুঝবে। পার্ট ছোট হয়েছে জানি আমি আসলে শরীরটা ভালো নেই]
#TanjiL_Mim♥️