তোর_মনের_অরণ্যে,২৪,২৫

তোর_মনের_অরণ্যে,২৪,২৫
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৪.
সাজিদ মল্লিক চৌধুরী বাড়ি থেকে ফেরার পর থেকেই অস্থির হয়ে আছে। ভিতরে ভিতরে বেড়ে চলেছে প্রচণ্ড আতঙ্ক। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে। সে কি তাহলে দোটানায় ভুগছে। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয় তাহলে। যেখান থেকে সে সোহা কে দেখেছে তার সামনে ভেসে আসছে সেই এক মুখ। একদম সোহার মত আরো একটা মুখ যেই মুখের সাথে মিশে আছে সোহার মুখের আদল। সেই হাসি সেই চোখ সেই মুখ সব কিছুই একদম একই ধারার কিন্তু এটা কি করে সম্ভব হতে পারে। বাইশ বছর আগেই সব কিছু শেষ হয়ে গেছে সেখানে আজ বাইশ বছর পর সেই মুখ তার সামনে এসে দাঁড়ালো কি করে। এটা কি পুরো টা কাকতালীয় না কি তার সাথে কোনো ভাবে যুক্ত হতে পারে। উফ সাজিদ মল্লিক নিজের রুমের মধ্যে পায়চারি করে যাচ্ছে নিজের মাথা চেপে ধরে। আজ এত বছর পর আবারো ওই মেয়ে কে দেখেই ওই একই একটা মুখ তার মনে পড়ে গেলো। বলতে গেলে যার শেষ এর কারণ তিনি। যাকে সে কোনোদিন ও মনে রাখেনি আর আজ এসে সেই মায়া ভরা মুখটা হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো। না এটা কিছুতেই হতে পারে না। সেই অতীত কখন ফিরে আসতে পারে না। যা চলে গেছে সেটা কখনই ফিরে আসবে না। সেই মুখ বাইশ বছর আগেই তার চোখের সামনে মারা গেছে হ্যাঁ মারা গেছে কিছুতেই হতে পারে তার ভাবনার সাথে মিল। এটা সম্পূর্ন কাকতালীয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

সাজিদ মল্লিক রুম থেকে বেরিয়ে দ্রুত পায়ে সতর্কতার সাথে বাড়ির পিছনের দিকে সেই বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা স্টোর রুমের সামনে চলে যায়। বাইশ পর আজ সে এসেছে এই রুমের সামনে চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে নিয়েই রুমের সামনে থাকা সেল্ফ টা কে সরিয়ে দেয়। তার কাছে থাকা একটা চাবি বের করে পকেট থেকে তার পরেই তালা খুলে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে যায়। চারিদিকে ময়লা জঞ্জালে ভরে আছে। চারদিকে একবার ভালো করে এগিয়ে গিয়ে সেই আলমারির সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। চারদিকে খুঁজে ও তিনি আলমারির চাবি খুঁজে পেলেন না এর আগেও তিনি খোঁজার চেষ্টা করে গেছে কিন্তু পারেন নি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি নিজেই রুম থেকে এই সমস্ত জিনিষ এই রুমে বন্ধ করে রেখেছেন। চারদিকে তাকিয়ে আবারো নিরাশ হয়ে ফিরে যান। তবে এখন তার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন সোহা বলে মেয়েটা কে?

————–

চৌধুরী ম্যানসনে সবাই একসাথে বসে সকালের ব্রেক ফাস্ট করছে আর গল্পে মেতে আছে। বিশেষ করে মিস্টার সম্রাট চৌধুরী সোহাদের কেস নিয়ে কথা বলছে। তাদের তো এই ভাবে খুব বেশি পাওয়া যায় না। ইনফ্যাক্ট বলতে গেলে পাওয়ায় যায় না তাদের কে কথা বলার জন্য। তাই কথা বলায় মেতে আছে। আর আমন তাদের কথার মাঝে শুধু নিরব দর্শক এর মত চুপচাপ তাদের কথা শুনে যাচ্ছে আর কোনা চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে যাচ্ছে। যদি ও কথা বলার মাঝে লক্ষ করেছে আমন তার দিকে মাঝে মাঝে দেখছে আর খাচ্ছে। তাদের কথার মাঝে হঠাৎ করেই টপকে যায় মণিকা আর আরহান।

-“হ্যালো আংকেল হ্যালো আন্টি । মণিকা বাড়িতে ঢুকে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে।

-” ওই নাও লেজুড় চলে এসেছে। আকাশ ফোড়ন কাটে।

সোহা এক পলক মণিকা কে দেখে নিয়েই আমন এর মুখের দিকে তাকিয়ে খেতে থাকে। তার কাছে যেনো মণিকা নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। মণিকা বলে যে কেউ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা যেনো তার চোখে পড়ছে না। এদিকে আমন ঢোক গিলে একবার মণিকা এর দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসে খেতে থাকে। এখন তার পুরো ফোকাস সোহার দিকে রেখেছে যাতে তার ধানী লঙ্কা এই মেয়ে কে নিয়ে যেনো আর কোনো কথা না বলতে পারে। মণিকা এসে আমন এর পাশে বসে পড়ে।

-“আরে আরহান মণিকা যে এসো বসো। আভা চৌধুরী বলে ওঠে।

-” আন্টি আমাকে বলতে হবে না দেখো আমি আগেই বসে গেছি। মণিকা হেসে ন্যাকা ভাবে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ সেই একেবারে ন্যাকামির দোকান। সাথে ছোঁছা মেয়ে তাইতো এমন হ্যাংলার মত বসে পড়েছে। আকাশ আবারো বলে ওঠে মৃদু ভাবে।

এদিকে আকাশের বলা কথা শুনেই সানি অ্যাস নীহার হেসে ফেলে সোহার খুব হাসি পাচ্ছে। তবে সে একদম স্বাভাবিক ভাবে বসে খেয়েই যাচ্ছে। আমন ভ্রু কুঁচকে সব গুলো কে দেখে সে জানে এরা কি বিচ্চু এরা যে কাউকে ধুয়ে রেখে দেবে। আর সব গুলোর হাসি দেখেই তাই মনে হচ্ছে।

আরহান টেবিলের সামনে এসে থমকে যায়। তার সামনে সোহা বসে আছে। সেই মেয়ে হ্যাঁ এ সেই মেয়ে কি মিল। কিন্তু এই মেয়ে এখানে কি করছে। তার আত্মার মুখের মুখ বসানো আছে মনে হচ্ছে তার কাছে। সে সোহা কে দেখার পর থেকে এই মুখের রহস্য ভেদ করতে চেয়েও পারেনি। একমাস শুধু মিল খুঁজে গেছে তার আত্মা আর তার সামনে বসে থাকা এই মেয়ের মুখের মধ্যে দুটো ছবির মধ্যে থেকে পার্থক্য খুঁজে বের করতে চেয়েছে কিন্তু কখনই পারেনি। আরহান কে এক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আভা চৌধুরী বলে ওঠে।

-“আরে আন্নি বেটা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো বস।

-“আরে ভাই তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তোকে কি নিমন্ত্রণ পাঠাতে হবে বসার জন্য? আমন বলে ওঠে।

আরহান ডাক শুনেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আমন এর আরেক পাশে বসে যায়। এদিকে সোহা খেতে খেতে থমকে যায়। আভা চৌধুরীর ডাক শুনে হাত থেমে যায় তার। মাথা তুলে সামনে তাকাতে দেখে তার ঠিক সামনেই একটা ছেলে বসে আছে যে তার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। যেই চোখে রয়েছে একরাশ মুগ্ধতা কৌতুহল আর প্রশ্ন চিহ্ন। তাকে দেখে যে সামনে বসা ছেলে টা খুশি হয়েছে সাথে চমকে আছে সেটা বুঝতে পারে সোহা। সোহা নিজেও তাকিয়ে আছে ছেলেটার মুখের দিকে। তার চোখ জোড়া ও কিছু খুঁজে চলেছে কোনো কিছুর সন্ধানে। বেশ কিছুক্ষণ পরই সোহার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সোহা ঠোঁট কামড়ে হাসি দেয়। তার ভিতরে হঠাৎ করেই তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। ইমোশন নামের অনুভূতিরা জোট বেঁধে ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে ভিতর থেকে। চোখের কোন টা ও ভিজে উঠছে বুঝতে পারে সোহা। সে নিজের ঠোঁট কামড়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চোখ চেপে বন্ধ করে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। আরহান এতক্ষণ সব কিছুই লক্ষ করছিলো হঠাৎ করেই মেয়েটা তার মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেছিলো বোধ হয় তার মুখে হাসি আর চোখের কোণে পানি ও দেখা গেছে। কিন্তু কেনো? কি কারণ হতে পারে এর? সে না হয় তার আত্মার সাথে এই মেয়ের মিল পেয়েছে কিন্তু এই মেয়ের তাকে দেখে এমন চোখ মুখের ভাব পাল্টে গেছিলো কেনো? কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো এই মেয়ে তাকে দেখে খুশি হয়ে গেছিলো কিন্তু কেনো? কি কারণ হতে পারে। তাহলে কি সত্যি কোনো কানেকশন আছে তাদের মধ্যে তাহলে কি এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয় সত্যি কোনো যোগ সূত্র আছে তাদের মধ্যে? আরহান এর মনে আরো এক ঝাঁক প্রশ্নেরা ডানা মেলেছে। এদিকে আরহান এর সাথে সাথে আমন ও লক্ষ করেছে আরহান আর সোহা কে প্রথম থেকে । তার মনেও কিছু প্রশ্ন উদয় হয়েছে।

চলবে….. ❣️

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৫.
-“আমন বলছিলাম কি আমরা কি এক সাথে অফিসে যেতে পারি। না মানে আমরা সবাই একই জায়গায় যাবো তাই। মণিকা বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ কেনো নয় তুমি অবশ্যই এক সাথে যেতে পারো। তবে আমার সাথে নয় ড্যাড আর আরহান এর সাথেই অফিসে যেতে পারো আমার কিছু কাজ আছে আমি সেগুলো সেরে অফিসে যাব। আমন বলে ওঠে।

-” আমি তাহলে তোমার সাথেই যাই কাজ হয়ে গেলে আমরা একসাথে অফিসে যাব । মণিকা নাছোড় বান্দার মত করে বলে ওঠে।

-” স্যরি আমি নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছি না তাই তোমাকে ও নিতে পারছি না। আমন মুখ টা বাঁকা করে বলে ওঠে।

এতক্ষণ টেবিলে সবাই একটাও টু শব্দ করেনি। তারা সবাই জানে আমন মণিকা কে পছন্দ করে না। সব সময়ে এড়িয়ে চলে মণিকা কে। তাই তারা চুপ করে আছে। আর এদিকে সম্রাট চৌধুরী আর আভা চৌধুরী ও চুপ করেই আছে কারন তারা যদি কিছু বলে তাহলে আমন তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেবে। এর আগেও তারা একটা ভুল করে ফেলেছে সাজিদ মল্লিক এর কথায় আমন কে না জিজ্ঞেস করে তার আর মণিকার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা বলে। তাই তারা দুজন আর কোনো কথা বলতে চাইছে না এই বিষয়ে। যা করার আমন করবে। ইনফ্যাক্ট তারা সাজিদ মল্লিক কে এটাও বলে দিয়েছে তারা এই ব্যাপার নিয়ে আর কোনো কথা বলতে পারবে না।

এতক্ষণ অ্যাস নীহার আকাশ সানি সোহা চুপ করে দেখে যাচ্ছিল মণিকা এর এমন ন্যাকামি। তবে আকাশ আর চুপ করে থাকতে পারল না।

-“ভাই রে ভাই আমি বুঝি না এত ন্যাকামি কোথায় থেকে আসে। একে দেখে আমার মনে যদি ন্যাকামির কোনো অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হতো তাহলে এই মেয়ে কে নাম্বার ওয়ান টাই দিত। পুরো ন্যাকামির দোকান একেবারে। আকাশ আবারো মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।

-” ঢং করো ঢং । ওকে নিতে চাইছে না তবু দেখ কেমন আঠার মত লেগে আছে। মন চাচ্ছে এরে আঠার মধ্যে ডুবিয়ে রাখি তাহলে নিজে নিজের সাথে জুড়ে যাবে আর শরীর নাড়াচাড়া করতে পারবে না। দেখ কেমন নির্লজ্জ ও কি বুঝতে পারে না ওকে পাত্তা দিতে চাইছে না। তবুও জোর করে পাত্তা চাই। এই কেউ এঁকে পাত্তা দিয়ে যা রে খেয়ে উল্টে পড়ে থাক। আকাশ এক মনে নিজের মত করে বলে যাচ্ছে।

আকাশ এর কথা শুনে সানি আর নিজের মধ্যে হাসি চেপে রাখতে পারিনি হালকা আওয়াজ তুলে হেসে ওঠে সাথে বাকিরা ও সোহা কোনো কথা না বলে মুখ চেপে নিজের হাসি কন্ট্রোল করে রেখেছে। আমন এই তিনজন কে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে এরা যে কিছু ঘোট পাকিয়ে যাচ্ছে সেটা তার বুঝতে বাকি নেই। তবে আরহান তার পাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে তার কোনো ধ্যান নেই সে তো খাওয়ার মাঝে মাঝে সোহা কে দেখে যাচ্ছে ।

-“কি হয়েছে তোমরা এমন করে হাসছ কেনো? আভা চৌধুরী বলে ওঠে।

-” বলছি আন্টি ন্যাকামির কোনো অ্যাওয়ার্ড কি হয়? না মানে এই রকম কোনও শো কি আছে হয়? আকাশ মণিকা কে একবার দেখে নিয়ে বলে ওঠে।

-“মানে? আভা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

এদিকে আকাশ এর প্রশ্ন শুনে বাকি তিনজন আরো একটু জোরে হেসে ওঠে। আর আমন বুঝতে পারে এতক্ষণ তারা মণিকা কে নিয়েই কথা বলাবলি করছিলো আর আকাশ যে মণিকা কে উদ্দেশ্য করে বলছে সেটাও বুঝতে পারে। আমন এর মুখে হাসি খেলে যায়। সম্রাট চৌধুরী বিচক্ষন মানুষ তাই খুব সহজেই তিনি ব্যাপার টা ধরে ফেললেন। আর মণিকা তো চোখ উল্টে তাকিয়ে আছে।

-“আকাশ আমিও তাই ভাবছি এত এত অ্যাওয়ার্ড সো হচ্ছে এত এত রিয়েলিটি শো হচ্ছে শুধু কেনো এই ন্যাকামি ভরা শো টা হয়না। তাহলে আমরা অনেক প্রতিভার দেখা পেতাম। আমন বলে ওঠে ।

-” একদম ঠিক বলেছ আমন দা এটা কেনো হয়না বলোতো। আকাশ বলে ওঠে।

-“আচ্ছা আন্টি এখানে পাত্তা পাওয়া যায়? মনে হয় যায়না তাইনা। আচ্ছা চিন্তা নেই বাইরে পাওয়া যায়। আমি পরেরবার পাত্তা এনে দেবো। আকাশ হেসে বলে ওঠে।

এতক্ষণে আভা চৌধুরী ও বিষয় টা বুঝতে পেরেছেন তাই তিনি হেসে নেড়ে দেয় আকাশ এর দিকে তাকিয়ে। মণিকা রাগে ফায়ার হয়ে গেছে এত গুলো কথা যে তাকে নিয়ে হচ্ছে সেটা ও বুঝতে পেরেছে। আর আমন এর বলা কথা গুলো তো তার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে। সোহা অবস্থা বেগতিক দেখে সিরিয়াস হয়ে ওঠে।

-“আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে এবার ওঠা যাক। সোহা সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।

-” মিস্টার চৌধুরী আপনার হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি চলে আসুন আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বলেই সোহা সামনের দিকে পা বাড়ায়।

-“এই মেয়ে আমন তোমার সাথে কোথায় যাবে? ও এখন অফিসে যাবে সেটা জানো না? মণিকা ঝাঝের সাথে বলে ওঠে।

সোহা দাঁড়িয়ে গিয়ে পিছনে ফিরে তীক্ষ্ণ ভাবে মণিকা এর দিকে তাকায়। মণিকা সোহার তাকানো দেখে হালকা কেঁপে ওঠে।

-” আমি কাউকে কৈফিয়েত দেওয়া পছন্দ করি না। আর তুমি কে আমাকে জিজ্ঞেস করার? আর তুমি মিস্টার চৌধুরীর গার্জেন ও নও যে আমাকে জিজ্ঞেস করবে। পরেরবার থেকে নিজের সীমা বুঝে কথা বলবে। বলেই সোহা বেরিয়ে যায়।

সোহার কাছে থেকে এমন অপমানিত হয়ে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে মণিকার । আকাশ সানি নীহার অ্যাস একবার মণিকার মুখের দিকে তাকিয়ে উঠে যায়। আর আমন ও তাই।

-“মণিকা তোমাকে একটা কথা বলি তুমি ভুল মেয়ের পিছনে লাগতে যাচ্ছ এতে উল্টে তোমারই ক্ষতি তাই সাবধান করে দিলাম। অ্যাস যেতে গিয়ে পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে আবার চলে যায়।

সবাই চলে যেতে মণিকা নিজের হাত মুঠো বদ্ধ করে নেয় রাগে। কিছুটা এগিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে বাইরের দৃশ্য। সোহার বাইক এর পিছনে আমন কে উঠতে দেখে তার শরীর যেনো জ্বলে যাচ্ছে। দেওয়ালে হাত ঠুকে রেগে বলে ওঠে।

-“এই সব কিছুর হিসেব আমি নেবো। আমাকে করা প্রত্যেক অপমানের বদলা আমি কড়াই গন্ডাই আদায় করে নেবো শুধু দেখতে থাকো এর পর তোমার সাথে কি হতে চলেছে । এই মণিকা কে এখনও তোমরা চেন না।

মণিকা তার ফোন কানে ধরে কারোর সাথে কথা বলতে থাকে। আসলেই কথা ঠিক নয় প্ল্যান করছে। কথা শেষে ফোন রেখে শয়তানি হেসে ওঠে মণিকা।

————–

সোহারা নিজেদের কাজ শেষ করে এসে দাঁড়ায় চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সামনে। আমন বাইক থেকে নেমে সোহার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নিয়ে সোহার দিকে তাকায় দেখে সোহা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ।

-“মিস আপনি কি এক ঘন্টা থেকে যেতে পারেন তাহলে একসাথে ফিরতাম। সেই আপনার কোনো কাজ নেই এখন তাই আমাকে কোম্পানী দিলে এই বান্দা খুশি হয়ে যেতো। আমন বলে ওঠে ।

-” আর আপনাকে খুশি করে আমার কি লাভ? সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-“উম লাভ ক্ষতির কোনো ব্যাপার নেই। তাহলে তোমার সঙ্গে আমি ফিরতাম। নাহলে হয়তো আমাকে শেষে মণিকার সাথে বাড়ি ফিরতে হবে। আমন বলে ওঠে ।

আমন এর কথা শুনে সোহা কপাল কুঁচকে আমন এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে পার্ক করে। আমন সোহার কাজ দেখে ঠোঁট এলিয়ে হেসে ওঠে । তার প্ল্যান কাজ করেছে। তার মানে এই মেয়ে জ্যালাস মণিকা এর কথা শুনে। আর এটাই তো সে দেখতে চেয়েছিল যে তার প্রতি তার ধানী লঙ্কার কোনো দুর্বলতা আছে কিনা। এতদিন সে অনেক ঘুরেছে এই মেয়ের পিছনে। আরে ভাই সে নিজে ও একজন স্পাই এর সিনিয়র অফিসার গোপন তথ্য খুঁজে বের করাই তার আসল কাজ। আর এটাতো তার জীবনের ক্ষেত্রে তাই সে এপ্লাই করে দেখলো আর তার রেজাল্ট ও সে পেয়ে গেছে। হ্যাঁ তার ধানী লঙ্কা ও যে মনে মনে তাকে পছন্দ করে শুধু তাই নয় ভালোবাসে হয়তো যেটা সে মুখে স্বীকার করতে চাইছে না। এতদিন আমন না বুঝলে ও সোহা আর তার প্রথম দেখা থেকে আর এই মেয়ের ব্যাপারে সে যা ইনফরমেশন পেয়েছে সেগুলো নিয়ে হিসেব মেলানোর চেষ্টা করে। যে মেয়ে তার কাছে কোনো ছেলে কে এলাও করত না সেই মেয়ে তাকে কি ভাবে মেনে নেয়। এই যে এতক্ষণ তার সাথে ছিল আমন যে তাকে পিছন দিকে থেকে জড়িয়ে বসে ছিল এটা তো এই মেয়ের মেনে নেওয়ার কথা নয় যদি না সে দুর্বল হতো। প্রথম প্রথম যখন সে এই ভাবে বসত সোহা বিরক্ত হতো কিন্তু এখন না সোহার মুখে কোনো বিরক্তির ছাপ দেখেনি আমন। তাই সে তার এই ট্রিক ইউজ করেছে আর তাতে কাজ ও দিয়েছে।

-“এই যে মিস্টার চৌধুরী আপনি কি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন না কি ভিতরে যাবেন? সোহা বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে আমন তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে তার পর হাসি মুখে এগিয়ে যায়। দুজন একসাথে অফিসে ঢুকতে সবাই তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। কিন্তু এতে তাদের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়েনি তারা নিজেদের মতো যেতে থাকে। দূর থেকে মণিকা আমন আর সোহা কে একসাথে দেখে রাগে পুড়ে যাচ্ছে।

-“ম্যাডাম আমি আপনাকে এই মেয়ের কথা বলেছিলাম জৈন ইন্ডাস্ট্রিসের ডিরেক্টর । নিশি বলে ওঠে।

-” তাহলে আগের দিন এই মেয়েই ছিল। মণিকা ভ্রু কুঁচকে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-“ইয়েস ম্যাডাম । নিশি বলে ওঠে।

মণিকা আর কোনো কথা না বলে ওখান থেকে চলে যায়। আমন সোহা কে নিয়ে তার কেবিনে চলে যায়।

-“তুমি বসো এখানে আমি মিটিং রুমে যাচ্ছি। আর তোমার কিছু লাগলে নিশি কে ডেকে আনিয়ে নেবে। আমি বলে নিশি কে বলে দিচ্ছি। আমন বলে ওঠে ।

-“ঠিক আছে আপনি যান। আমি দেখে নিচ্ছি । সোহা বলে ওঠে।

-“ওকে । মুচকি হেসে বলে ওঠে।

-” বাই দ্য ওয়ে এই নিশি কে? সোহা আমন এর দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” আমার পি.এ। আমন ঠোঁট কামড়ে হাসি কন্ট্রোল করে বলে ওঠে।

আমন সোহার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হেসে ওঠে।

-“আমি আসছি তুমি বসো।

আমন সোহা কে রুমে বসিয়ে রেখেই মিটিং রুমে চলে যায়। মিটিং রুমে মণিকা আমন এর দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে থাকে। যদিও এটা আমন এর চোখ এড়িয়ে যায়নি তবে এতে তার কিছু যায় আসেনা। প্রায় এক ঘণ্টা পরে মিটিং শেষ করে বেরিয়ে আসে আমন। কেবিনে গিয়ে দেখে সোহা তার চেয়ারে বসে পেপার চেক করছে। আমন দেখে হেসে ফেলে এই মেয়ে কাজ ছাড়া এক মুহূর্ত চুপ করে বসে থাকতে পারে না।

-“এই তুমি আমন এর চেয়ারে বসেছ কেনো? নিজেকে কি মনে করো তুমি? আর সাহস কি করে হয় আমন এর চেয়ারে বসার? মণিকা চিৎকার করে বলে ওঠে।

হঠাৎ এমন চিৎকারে আমন সহ সোহা ও চোখ তুলে তাকায়। মণিকা কখন রুমে এসেছে বুঝতে পারিনি আমন। সোহা তীক্ষ্ণ নজরে মণিকা এর দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে আমন মণিকা এর কথা শুনে রেগে যায়।

-“তার আগে তুমি বলো বিনা পারমিশনে তুমি আমার কেবিনে কি করছো? মিনিমাম কমন সেন্স নেই যে কারো রুমে ঢুকতে গেলে নক করে আসতে হয়? আমন চিবিয়ে চিবিয়ে কথা গুলো বলে ওঠে।

মণিকা আমন এর কথা শুনে অপমান চুপ করে যায়। আমন তাকে দেখতে পারেনা সে জানে কিন্তু এই ভাবে অপমান করবে সে ভাবেনি সে তো আমন কে দেখিয়ে সোহা কে অপমান করতে চেয়েছিলো কিন্তু এখানে আমন তাকে অপমান করলো।

সোহা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমন এর সামনে এসে দাঁড়ায়। সে মণিকা কে একবার দেখে নিয়ে আমন কে বলে ওঠে।

-“কাজ হয়ে গেছে আপনার? এবার যাওয়া যেতে পারে।

-” হ্যাঁ হয়ে গেছে। তোমাকে আমি ডাকতে এসেছিলাম। চলো যাওয়া যাক। মুচকি হেসে বলে ওঠে।

সোহার হাত ধরে মণিকার দিকে তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে মণিকা সোহার ইগনোরেন্স কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারে না। এই মেয়েকে সে কত কথা বললো আর সে কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেলো। মনে হচ্ছে তাকে যেনো দেখেই নি।

-” তোমাকে আমি কিছুতেই আমন এর জীবনে ঢুকতে দেবো না। আমন শুধু আমার। তোমাকে রাস্তা থেকে সরাতে আমার বেশি সময় ও লাগবে না। আর আমাকে করা প্রত্যেক অপমান এর হিসেব আমি নেবো।

মণিকা নিজের রাগ সামলাতে না পেরে টেবিলের উপর থাকা ভাস টা রাগে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেও বেরিয়ে যায়।

————

আমন সোহা সারাদিন বাইরে ঘুরে মজা করে সন্ধে বেলা বাড়ি ফেরে। আমন আজ নিশ্চিত হয়ে গেছে যে সোহা ও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। সারাদিন সে পুরোটা সময়ে সোহা কে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করে গেছে। আমন যে সোহার মনের অনুভূতি বুঝে গেছে সেটা সে সোহা কে বুঝতে দেয়না সোহা কে। সে সারাদিন সোহা কে ঘুরে কাটিয়ে দিয়েছে আজ সোহা ও তার সাথে মন খুলে আনন্দ উপভোগ করেছে আজ সোহার মধ্যে আমন কোনো জড়তা খুঁজে পাইনি বরং বরাবর তাকে আরো বেশি করে মুগ্ধ করেছে সোহার ব্যবহার।

সোহা আর আমন কে একসাথে আসতে দেখে আকাশ সানি নীহার অ্যাস সোহার পিছনে লাগে। সবাই মিলে একসাথে মজা করে কাটিয়ে দেয়। আভা চৌধুরী এতদিন পর একসাথে সবাই কে তিনিও তাদের সাথে মজা করে। রাতে একসাথে ডিনার করে যে যার রুমে চলে যায়।

আমন কিছু তথ্য ক্র্যাক করতে পেরে আনন্দে সোহার রুমে দিকে যায় তাকে এই খবর টা দিতে তাহলে সোহা পরের প্ল্যান তাড়াতাড়ি করে নিতে পারবে। আর সোহা যে এখনও জেগে কাজ করছে আমন জানে কারণ এর আগেও তারা যতো কাজ করেছে রাতের বেলায় করেছে। এই ভেবে আমন সোহার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজা টা হালকা খুলে ভিতরের দিকে তাকাতে আমন এর পা থমকে যায়। চোখ জোড়া স্থির গেছে। সে যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে । তার সারা শরীরে অদ্ভূত শিহরন বয়ে যায়। এটা সে কি দেখছে সে? এটা কি করে সম্ভব হতে পারে?

চলবে…… ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here