তোমার_আমার_চিরকাল🌸 || পর্ব – ৩৮ || #লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

#তোমার_আমার_চিরকাল🌸
|| পর্ব – ৩৮ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

চোখের পানি মুছতে মুছতে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয় মীরা। রিসিপশনে আহানের নাম জিগ্যেস করে কেবিন খুঁজতে থাকে সে। একশো চার নাম্বার কেবিনের সামনে এসে পা থেমে যায় তার। আয়ানের মা ও বাবাকে দেখতে পায় সে। পাশে আরও দুজন পুলিশকে সে দেখতে পায়। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আয়ানের মা’কে। চোখের পানি ছেড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, “মা আমার সাথেই কেন এমন হয়। কেন বলুননা।”
আয়ানের মা মীরার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, “শান্ত হও মা। কেঁদো না। আহান এখন ভালো আছে। ভাগ্য ভালো ওর হাতে গুলি লেগেছে, বুকে বা মাথায় লাগলে তো অনেক রিস্ক হয়ে যেত বিষয়টা।”
“উনি সুস্থ আছেন তো মা?”
“হ্যাঁ, তুমি দেখা করতে পারবে। ডাক্তার এখন ওকে ঘুমের ঔষধ দিয়েছেন। ঘুম থেকে উঠলেই ও সবার সাথে কথা বলবে।”
“আমি এখন ওনার কাছে যাব মা।”
“ও এখন ঘুমাক মা। তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এখন যাওয়াটা ঠিক হবে না।”
“আমি কাছে যাব না মা। শুধু দূর থেকেই ওনাকে দেখে চলে আসব।”
“আচ্ছা মা। যাও।”
মীরা আয়ানের মা’কে ছেড়ে কেবিনের ভিতরে ঢুকে। সে দেখে আহানের বা’হাতে ব্যান্ডেজ। রক্তও ভাসছে সেখানে। কপালেও হালকা চোট পেয়েছে। একেরপর এক বিপদ যেন লেগেই আছে। ঘুমাচ্ছে আহান। নিষ্পাপ একটা বাচ্চার মতো। মীরা ওখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। সে সহ্য করতে পারছে এসব। এর আগেও একজনকে সে এভাবে দেখেছে। এসব দেখতে দেখতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর কাউকেই হারাতে চায়না সে। কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো মীরা।

কেবিনের বাহিরে এসে দেখে আয়ান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে কিছু ঔষধ। আসার পর আয়ানকে তার চোখে পড়েনি। হয়তো ঔষধ আনতে গিয়েছিল তাই। মীরা বলে, “কি করে হলো এসব?”
“এদিকে এসো। বলছি।”
মীরা আয়ানের পিছু পিছু যায়। একটা বেঞ্চিতে বসে দুজন। আয়ান বলে, “কনস্টেবল এর কাছ থেকে শুনলাম, আজ একটা মিশন ছিল ওদের। ড্রাগস প্রচারকারী গ্যাং কে আজ প্রমাণ সরূপ ধরবে। এদের সাথে অনেক বড়ো বড়ো লোকজন জড়িত। অনেকদিনের টার্গেটে ছিল এটা। ভাইয়া এতোদিন প্ল্যান করেছিল কবে কখন ওদের উপর আক্রমণ করবে তারা। একটা পরিত্যক্ত জায়গায় কয়েকজন ড্রাগের ব্যবসা শুরু করতে থাকে। সে-ই জায়গার খোঁজ পেয়েই ভাইয়ারা তাদের ধরতে যায়। গোডাউনে ঢুকতেই গোলাগুলি শুরু করে ওরা। পালটা গুলি চালায় ভাইয়ারা। কয়েকজনকে এনকাউন্টার করে, আর বাকিদের গ্রেফতার করে জিপে উঠায়। ড্রাগসগুলোও উদ্ধার করে। ভাইয়া ভেবেছিল আর কেউই নেই গোডাউনের ভিতর। তাই ভাইয়া বাকিদের বলে ওখান থেকে প্রস্থান করতে। কিন্তু একজন কোথাও যেন লুকিয়ে ছিল, ভাইয়ার যাওয়ার সময় পিছন থেকে ভাইয়াকে টার্গেট করে গুলি ছুড়ে। সেই গুলিটা ভাইয়ার বাম বাহুতে লাগে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। ভাইয়া নিজেকে সামলে পিছন ফিরে তাকে এনকাউন্টার করে দেয়। ভাইয়া শেষে যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে যায়। অন্যান্য পুলিশরা তাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে আসে।”
সবটা শুনে মীরার বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করছে। এতো কিছু হয়ে গেল এই কয়েক মুহুর্তে! আয়ান বলল, “খবরটা শুনেই চলে আসি আমি। ভেবেছিলাম পরিস্থিতি জেনে তারপর তোমাকে জানাব। এখানে এসে দেখি ভাইয়ার জন্য দু ব্যাগ রক্ত লাগবে। এক ব্যাগ তাদের কাছে আছে, আর এক ব্যাগ আমি দিয়েছি। আমার আর ভাইয়ার রক্তের গ্রুপ এক। রক্ত দেওয়ার পরেই তোমাকে জানিয়েছি খবরটা।”
“আমি আর পারছিনা আয়ান। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।”
আয়ানকে তার বাবা ডাকলে সে ওখান থেকে চলে যায়। মীরা একা আছে।
টেনশনে মাথা যন্ত্রণা করছে মীরার। কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে।


আহানের ঘুম ভাঙলো অবশেষে। আশেপাশে কাউকেই দেখতে পেল না। একজন নার্স ছিল শুধু। তাকে ডেকে বলল, “একটু শুনবেন?”
নার্সটি আহানের কাছে এসে বলে, “কিছু বলবেন? লাগবে কিছু?”
“আমার পরিবারের লোকদের একটু ডেকে দিবেন?”
“আচ্ছা।”
নার্সটি কেবিন থেকে বেরিয়ে আহানের বাবাকে বললেন, “আপনাদের পেসেন্ট এর ঘুম ভেঙেছে। আপনাদের ডাকছে।”
আহানের বাবা নার্সকে ধন্যবাদ জানালেন। তারপর কাউকে কিছু না বলে নিজেই আগে ছেলেকে দেখতে গেলেন। শুয়ে ছিল আহান। বাবাকে দেখে উঠার চেষ্টা করল। কিন্তু তার বাবা তাকে বাঁধা দিল। ছেলের কাছে গিয়ে পাশে বসলেন উনি। মলিন মুখে বললেন, “কেমন আছিস বাবা?”
আহান বলল, “ভালো আছি বাবা।”
“বাবা” ডাকটা শুনেই কেমন শীতল চোখে আহানের দিকে তাকালো তার বাবা। কতদিন পর নিজের ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনলো সে। আহানের বাবা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আহান বলল, “আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাইনা বাবা?”
আহানের বাবা একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়লেন। “এখন এসব বলে কি হবে। ভুলে যা। রেস্ট নে। আমি মীরাকে পাঠাচ্ছি।”
দূর থেকে আহানকে দেখছেন আয়ানের মা। কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। যদি আহান রেগে যায়? আহানের বাবা কেবিন থেকে বেরুতেই উনি সরে গেলেন। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহানের বাবা জিগ্যেস করলেন, “ভেতরে যাবে?”
আয়ানের মা মাথা নাড়িয়ে না বলে দেয়। আহানের বাবা আর জোর করলেন না। মীরার কাছে গিয়ে তাকে আহানের কাছে যেতে বললেন।
মীরা আহানের কথা শুনেই আর এক মুহুর্তও দেরি করেনি। দৌড়ের মধ্যে দিয়ে কেবিনে ঢুকে। দরজা চাপিয়ে পা চালিয়ে আহানের কাছে আসতে নিলেই একটা চেয়ারের সাথে হোচড় খায় সে। হোচড় খেয়েই নিচে পড়ে যায়। যা দেখে আহান জোরে “মীরা” বলে চিৎকার দেয়। উঠলে নিলেই বা’হাতের বাহুতে ব্যথা পায়। ব্যথায় চোখ মুখ খিঁছে ধরে। ডান হাত দিয়ে বা’হাতের ব্যথার স্থানটা শক্ত করে চেপে ধরে। মীরা কোনরকম উঠে নিচ থেকে৷ তারপর দৌড়ে এসে আহানকে জড়িয়ে ধরে৷ ফোঁপানোর শব্দ কান আসতে থাকে। মীরার কাঁন্নায় আহান ঠিক থাকতে পারেনা। মন ভেঙে আসছে তার। বুক ফেঁটে যাচ্ছে যেন। এতক্ষণ জমিয়ে রাখা অশ্রুদ্বয় গড়িয়ে পড়তে লাগলো টুপটুপ করে। কি অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে হৃদয়ে। মীরা খুব শক্ত করেই ধরে রেখেছে আহানকে। যেন ছেড়ে দিলেই সে হারিয়ে যাবে। এক সময় মীরার কাঁন্না থেমে যায়। চোখ তুলে আহানের দিকে ফিরে দেখে তার চোখ ভেঁজা। তার সাথে কি আহানও কেঁদেছে? মীরা তার হাত দিয়ে আহানের চোখ মুছে দিল। দু’হাত আলতো করে রাখলো আহানের দুই গালে। শীতল দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি একান্তই আমার ব্যক্তিগত সম্পদ। আপনাকে কোনো কিছুর বিনিময়ে হারাতে চাইনা। কখনো না।”
মীরার ভেঁজা চোখ দুটি ছলছল করছে। আহান তার ডান হাত দিয়ে মীরার চোখের পানি মুছে দিল। মীরার দিকে নিষ্পলক চেয়ে থেকে বলল, “তুমি আমার এক সর্বনাশী প্রেমিকা। যার আগমনে আমার সর্বনাশ হয়েছে। যার অভিমানে আমার হৃদয় পুঁড়েছে, হয়েছে দহন। যার ছোঁয়ায় পূর্ণ হয়েছে আমার হৃদকানন।”
ভেঁজা আঁখি পল্লব কাঁপছে মীরার। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আহানকে জড়িয়ে ধরে সে।
“আমাদের নিজের একটা শহর হোক। যে শহরে অর্ধ বছর বৃষ্টি নামবে। হাজার ফুল বৃষ্টির ছোঁয়ায় বহুগুণ রুপসি হবে। বাকি অর্ধ বছর ফাগুন এর ছোঁয়া লাগুক। বসন্ত এসে আমাদের পূর্ণ করুক। তুমি, আমি আর আমাদের শহর। একান্তই আমাদের দুজনার।”
“আপনার ইচ্ছে পূর্ণ হোক। আমাদের নিজের একটা শহর হোক। যে শহরে শত শত প্রজাতি উড়বে। রঙধনু রঙ ছড়াবে আকাশে। আমি আপনার গাছ হবো, আপনি আমার ছায়া হবেন। আমাদের শহরে অন্য কেউর প্রবেশ নিষেধ।”

নিজেদের ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে কেউ একজন কেবিনের ভিতর প্রবেশ করলো। দরজায় আওয়াজ হতেই মীরা তাড়াহুড়োয় আহানকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। এদিকে আয়ান ফোন চাপতে চাপতে কেবিনের ভেতরে ঢুকে। নজর ফোনে বন্দী থাকায় অন্য কোথাও চোখ পড়েনি তার। মীরা আয়ানকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। যাক, দেখেনি তাদের। বেশরম! নক না করেই ঢুকে পড়ে। আয়ান কাছে এসে ফোনের দিক থেকে নজর সরালো। আহানকে দেখে হেসে উঠে জিগ্যেস করল, “ব্রো! এখন কি অবস্থা?”
“ভালো আছি। তবে মনে হচ্ছে হাতের ব্যথা বেশকিছু থাকবে।”
“ডাক্তারের সাথে কথা বললাম, এক সাপ্তাহর নিচে তোকে ছাড়বে না।”
“কি বলিস! আমি এতোদিন হসপিটালে থাকতে পারব না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।”
“থাকা লাগবে, তোর ভালোর জন্যই সব। আচ্ছা, তোর সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।”
“কে?”
“তোদের কমিশনার। ব্যাটা বোধয় দিনে তিন বেলার বদল পাঁচ বেলা খায়। পেট তো নয়, যেন আস্ত একটা পাহাড়।”
আয়ানের কথায় হেসে দিল মীরা। আহান পাশ থেকে ধমক দিয়ে বলছে, “আস্তে, শুনলে কপালে দুঃখ আছে।”
“ওই ব্যাটা আমার কিছুই করতে পারবে না।”
“ওনাকে ডেকে নিয়ে আয়।”
“ঠিকাছে।”
আয়ান কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। মীরাও বেরিয়ে যেতে নেয়। কিন্তু আহান তাকে পিছন থেকে ডেকে উঠল। “কোথায় যাচ্ছ মীরা?”
মীরা আহানের দিকে ফিরে বলল, “আপনারা কথা বলবেন, আমি এখানে থেকে করব কি?”
“তুমি আমার পাশে এসে দাঁড়াও। যেও না।”
মীরা মাথা নাড়িয়ে বলল, “আচ্ছা।”
কিছুক্ষণ পর কমিশনার এলেন আহানকে দেখতে। মীরা তাকে দেখে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে ফেললো। আয়ান যা বলেছে সব ঠিক। এটা মানুষ না দানব। মীরা কাচুমাচু হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। কমিশনার আহানের পাশে এসে বসলেন। বললেন, “কেমন আছো আহান?”
“ভালো স্যার।”
“তোমার সাহসিকতা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করে। কিভাবে তুমি গুলি খাওয়ার পরেও অপরাধীকে ছাড় দাওনি। তোমার কাজ সত্যিই প্রসংশার যোগ্য।”
“এটা আমার ডিউটি স্যার। নিজের দেশকে রক্ষা করা, নিজের দেশের সম্পদ ও মানুষদের নিরাপত্তা দেওয়া। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। এর বেশি কিছু না।”
“শোণ, শুধু এরাই নয়। এদের উপর মহলকে ধরতে হবে। সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
“আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি, এবং এদের উপরে যারা আছে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।’
“ওয়েল ডান আহান। আমি জানতাম তুমি পারবে।”
কমিশনার আহানের পাশে মীরাকে দেখে জিগ্যেস করলেন, “ইনি কে?”
“আমার স্ত্রী।”
“আপনি সুখী হোন। আপনার স্বামী অনেক সরল, সৎ এবং দায়িত্বশীল।”
মীরা কি বলবে। আহান কেমন সেটা তার থেকে ভালো কে জানে।


হাসপাতালের বেডে দুই হাটু ভাজ করে বসে আছে দিবা। পলকহীন দৃষ্টি ফেলছে দরজা বরাবর। ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে বসে আছে সে। তার মা তাকে খাইয়ে গেছে একটু আগে। দিবা অল্প খেয়েছে। গলা গিয়ে যেন খাবার নামছে না। দিবাকে এখনি রিলিজ করে দেওয়া হবে। তার বাবা তাকে নিয়ে যেতে চান। ইরা এসে দিবার পাশে বসলো। ইরাকে দেখেও দিবার সাড়াশব্দ নেই। ইরা বলল, “এমন করিলি কেন তুই?
দিবা নিশ্চুপ। কোনো উত্তর নেই তার কাছে। ইরা আবারও বললো, “কথা বলছিস না কেন? কি হয়েছে আমায় বল।”
দিবা একটা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। দিবার বাবা এসে ইরাকে তাড়া দিয়ে বললেন, “দিবাকে নিয়ে আয়। আমরা বাহিরে অপেক্ষা করছি।”
ইরার বাবা চলে গেলে ইরা দিবাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে কেবিন থেকে নিয়ে যায়। বাহিরে বের হয়ে তারা একটা সিএনজি করে বাড়িতে চলে যায়।
বাড়িতে এসে দিবার বাবা ঠান্ডা মাথায় দিবাকে বলেন, “তুমি এই কাজটি কেন করলে?”
দিবা কিছুক্ষণ চুপ ছিল। এরপর জবাব দিল। “কোনো অন্যায় না করেও আমি যখন শাস্তি পাচ্ছি, তখন বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।”
“দিবা!!”
বাবার ধমকে কেঁপে উঠল দিবা। তবুও নিজের মনকে শক্ত রেখে বলল, “বাবা আমি তোমার সে-ই মেয়ে, যাকে তুমি নিজ হাতে খাইয়ে দিতে। ছোট বেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় আমার চুল আছড়ে দিতে। হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতে। যখন যা খেতে চাইতাম নিয়ে চলে আসতে। তুমি আমায় এতো স্বাধীনতা দিয়েছ। এতো কিছু দিয়েছ। তাহলে আমি কেন তোমার সম্মানের কথা ভাবব না? বাবা আমি ইরার মতো নই। ইরাকে তুমি ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিলেও সে কিছু বলবে না। কিন্তু আমাকে তো তুমি জানো। আমি ছোট থেকেই জেদি, বিয়ের আগে একবারও আমার মতামত নিলে না? একটা ভুল বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে তুমি আমাকে এত বড়ো শাস্তি দিলে বাবা?”
উপস্থিত সবাই নিরব। মেয়ের কথায় চোখের পানি এসে গেল তার। সত্যি তো। দিবা যতই ছন্নছাড়া হোক। কোনোদিন তার বাবার কথার অমান্য সে করেনি। দিবার বাবা চোখ মুছে বললেন, “মা আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। ক্ষমা করে দিস আমায়। এবার থেকে তুই যা চাইবি, আমি তোকে তা-ই করতে দিব। তোকে আমি তোর অমতে বিয়ে দিব না।”
“বাবা তুমি কেন ক্ষমা চাইছ? ভুল আমার। আমি ক্ষমা চাইছি। হয়তো তোমাদের যোগ্য মেয়ে হয়ে উঠতে পারিনি বলে তোমরা আমায় বিশ্বাস করে উঠনি। ব্যাপার না। সময় দাও, তোমাদের যোগ্য মেয়ে হয়ে উঠব।”
বাবা মেয়ে দুজন দুজনকে ধরে কাঁদতে লাগলো। একটা ভুল সিদ্ধান্ত জীবনকে কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যায়। তা আজ হারে হারে টের পাচ্ছে সবাই।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here