তোমার_আমার_চিরকাল🌸 || পর্ব – ৫২ || #লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

#তোমার_আমার_চিরকাল🌸
|| পর্ব – ৫২ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

অতঃপর দুই দিন কেটে গেল। আজ দিবার একটা পরিক্ষা আছে। সবাই তাকে বলেছে পরিক্ষা পরের বছর দেওয়া যাবে। কিন্তু দিবা মানতে নারাজ। ও পরিক্ষা দিবেই। সকাল থেকেই সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো নিয়ে আসতে। কেউ কথা কানে নিচ্ছে না। একেই তো সে বেড থেকে উঠতে পারছেনা। আবার এখন নাকি পরিক্ষা দিতে যাবে। যখন কারো কাছ থেকে সাহায্য পেল না। বাধ্য হয়ে আয়ানকে বলল। আয়ানও তাকে বারণ করল। দিবা কেঁদে দিল। সে কিছুতেই ইয়ার লস দিতে চায়না। কেঁদে কেঁদে দিবা বলল, “প্লিজ আমার এ কাজটি করে দিন। আমি পরিক্ষাটা দিয়েই চলে আসব।”
“এই শরীর নিয়ে তুমি যাবে কিভাবে?”
“আমি সুস্থ একদম।”
“এটা মিথ্যা কথা। কিসের সুস্থ তুমি? সুস্থ হলে কেউ হসপিটালের বেডে পরে থাকে?”
“আপনিও আমার কথা শুনবেন না? ঠিকাছে। আমি একাই যাব, আমার কারো সাহায্যের দরকার নেই।”
“দিবা তুমি পাগলামি করছ।”
“বেশ করেছি। কেউ আমায় আটকাতে পারবে না। আমি যাবই।”
আয়ান ভাবছে সে কি করবে। দিবার পাশ থেকে উঠে দিবার বাবার কাছে গেল৷ ওনাকে বুঝালেন কয়েকবার। কিন্তু উনি রাজিই হচ্ছিলেন না। আয়ান তাকে বলল সে নিজে দায়িত্ব নিয়ে দিবাকে পরিক্ষার হলে নিয়ে যাবে, আবার নিয়েও আসবে। দিবার বাবা ভাবলেন কিছুক্ষণ। আয়ান আবারও তাকে রিকুয়েষ্ট করতে থাকে। বলে দিবা খুব কাঁদছে। দিবার বাবা আয়ানকে বললেন, “এই অবস্থায় কি করে ওকে যেতে দেই।”
“আমি সবটা সামলে নিব আংকেল। ওর দিকে একবার তাকান। ও বলছে কেউ ওকে না নিয়ে গেলে ও একাই যাবে।”
“মেয়েটা হয়েছে খুব জেদি।”
“এখন কিছু করার নেই আংকেল। প্লিজ আপনি রাজি হয়ে যান।”
“ঠিকাছে, আমি ফোন করে ওর জিনিসপত্র নিয়ে আসছি।”
“ধন্যবাদ আংকেল।”

দিবার বাবা দিবার মা’কে কল দিয়ে বললেন একজনকে দিয়ে দিবার জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিতে। ও পরিক্ষা দিবে। দিবার মা বেশ রাগারাগি শুরু করলেন। বললেন, “আমার মেয়ের এই অবস্থায় তুমি ওকে পরিক্ষা দিতে দিচ্ছ?”
দিবার বাবা বললেন, “যা বলছি ভেবে বলছি। পাঠিয়ে দাও। আর তুমিও বিকেলে চলে এসো।”

দিবাদের ওখানকার একটা ছেলে এসে দিবার বই, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড আরও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে গেল৷ আয়ান দিবার বইগুলো নিয়ে দিবার কাছে এলো। দিবা মন খারাপ করে বসে আছে। ভাবছে ওর বোধহয় ইয়ারটা লস হলো৷ এমন সময় আয়ান এসে ওর চোখের সামনে বইগুলো ধরে। দিবা চমকে উঠে। বই! এগুলো তো তার। আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান হাসছে। আয়ান দিবার পাশে বসে বলল, “এই নাও বই। সব কিছু আনিয়ে রাখা হয়েছে। পড়ো এইবার।”
দিবা খুশিতে গদগদ করতে লাগল। আয়ানের হাত থেকে বই নিল সে। উক্ত পরিক্ষার বইটি নিয়ে অন্যটা পাশে রেখে দিল। আয়ানকে বলল, “আপনি কিভাবে ম্যানেজ করলেন সব?”
আয়ান বলে, “আমি না, তোমার বাবা সব ব্যবস্থা করেছে। তোমার বাবা তোমায় খুব ভালোবাসে দিবা। তাকে কখনো অসম্মান করো না। তার ভরসার মান রেখো।”
“আব্বু!!”
“হ্যাঁ, তোমার বাবাই তো করেছেন।”
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দিবার বাবা সব দেখছেন। আয়ানের সব কথা শুনেছেন। ছেলেটা চাইলেই নিজেকে দিবার সামনে বড়ো প্রমাণ করতে পারত। ও বলতে পারত যা হয়েছে সব সে-ই করেছে। কিন্তু আয়ান এমনটা করলো না। উল্টো দিবার বাবাকেই দিবার সামনে তুলে ধরলো। দিবার অ্যাকসিডেন্ট এর পর ছেলেটা অনেক খেটেছে। বাসায় খুব একটা যায়নি। হাসপাতালেই থেকেছে। ব্যবহার কত সুন্দর তার। দিবার বাবা আয়ানকে দেখে বারবার মুগ্ধ হয়। একটা ছেলে কতটা ভালোবাসলে এমনটা করতে পারে। নিজের খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকে। আয়ানকে না দেখলে উনি বুঝতেই পারতেন না আজকালকার ছেলেরা এভাবে কাউকে ভালোবেসে এতো কিছু করতে পারে। দিবার বাবা আয়ানকে ডাক দিলেন। আয়ান অপ্রস্তুত ছিল। দিবার সাথে তাকে দেখে কি উনি মাইন্ড করলেন? অন্যদিকে দিবাও একি ভয় পাচ্ছে। বাবা কি রেগে গেলেন? আয়ান দিবাকে পড়তে বলে সে চলে যায়। দিবার মনে ভয় থেকেই যায়।

দুপুর বারোটা বাজতেই দিবা নিজে নিজে রেড়ি হয়ে গেল। মিরাজ এসেছে খাবার নিয়ে। মিরাজের সাথে মিরাজের মাও এসেছে। মীরা আজ এখনো আসেনি। আহানের সাথে বিকালে আসবে। মীরার মা দিবাকে খাইয়ে দিল। দিবার বাবাকে বলল খেয়ে নিতে। কিন্তু দিবার বাবা বললেন আগে আয়ানকে দিতে। ও সকালে নাশতা করার পর আর কিছুই খায়নি। আয়ান অবাক হয়ে যায় বেশ। খাওয়া শেষে আয়ান আহানের বাইক নিয়ে আসে। দিবাকে ধরে বাইকে বসানো হয়। আয়ান সবাইকে ভরসা দেয় সে দিবাকে ঠিকভাবে নিয়ে যাবে। আয়ান বাইক স্টার্ট দেয়। যেতে যেতে আয়ান বলে, “আমাকে ধরে রাখো দিবা। পরে যেতে পারো।”
দিবা আয়ানের কাঁধে হাত রাখে। শক্ত করে চেপে ধরে। আয়ান দিবাকে নিয়ে পরিক্ষার হলে চলে যায়।


নিজের রুমে বই নিয়ে বসে আছে মীরা। বিরক্তি লাগছে তার। ওরও সামনে পরিক্ষা। একা একা বাসায় থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে সে। এই দুপুরবেলা সে বই নিয়ে বসে আছে। আহান ফোন করে বলেছিল আসবে। মীরা বই নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বোলালো। বই আর পড়তে পারলো না। ঘুমের ঘোরে ঢলে পড়ল বিছানায়। এর পাঁচ মিনিট পর আহান আসলো। গায়ের পোশাকটা খুলে শুকাতে দিল সে। তারপর একটা শার্ট পড়ে নিল। বিছানায় চোখ গেল তার। মীরা ঘুমুচ্ছে। তবে ঠিকভাবে শোয়নি। খোলা বই পড়ে আছে। আহান গিয়ে আগে বইটি বন্ধ করল। তারপর বিছানায় উঠে মীরাকে দেখতে লাগল। মীরাকে সুন্দর করে বালিশে শোয়াল। মীরার চোখের উপর তার খোলা চুলগুলো পড়ে আছে। আহান আস্তে করে তার হাত দিয়ে মীরার চুলগুলো চোখ থেকে সরিয়ে কানে গুঁজে দিল। মীরার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সে। আনমনে বলে উঠলো, “আমার সর্বনাশী প্রেমিকা! তোমার রুপের আগুনে ঝলসে গেছি। আর কত সর্বনাশ করবে আমার?”
মীরা চোখ খুলে তাকালো। হুট করে মীরা জেগে যাওয়ায় আহান বিস্মিত হলো। বলল, “তুমি ঘুমাওনি?”
মীরা ফিক করে হেসে দিল। “আপনার উপস্থিতি টের পেয়ে আমার ঘুম ভেঙে গেছে।”
“তাহলে এতক্ষণ নাটক করছিলে?”
“হু, আমি দেখছিলাম আপনি কি করেন।”
“তুমি খুব দুষ্ট হয়ে গেছ মীরা।”
“তাই?”
মীরা আহানের আরো কাছে আসলো। আহানের শার্টের বোতামে হাত দিয়ে দুটো বোতাম খুলে ফেলল। আহান মীরার এমন কাণ্ড দেখে জিগ্যেস করে, “এই! কি করছ তুমি! বোতাম খুলছ কেন?”
“আপনি না বললেন, আমি দুষ্ট হয়ে গেছি? তাই দুষ্টুমি করছি।”
“এই মীরা ছাড়ো।”
“নাহ্।”
মীরা আহানের উন্মুক্ত বুকে নিজের মাথাটা রাখল। দুহাতে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমার এভাবে থাকতে বেশিই ভালো লাগে। মানসিক শান্তি পাই।”
মীরা চোখ তুলে তাকাল আহানের দিকে। টুপ করে আহানের গালে একটা চুমু দিয়ে বসলো সে। সাথে সাথেই মুখ লুকিয়ে ফেলল আহানের বুকে। “তোমার না সামনে পরিক্ষা? সেদিকে মন দেওয়া উচিৎ।”
“আপনি বেশি কথা বলেন! আমার মন সারাক্ষণ আপনার কাছেই পড়ে থাকে৷ ওদিকে মন দেওয়ার সময় আমার নেই।”
“পড়া চোর! এক্ষুনি উঠো। পড়ালেখা নাই, শুধু দুষ্টুমি ছাড়া।”
মীরা ঠোঁট উলটিয়ে বলল, “আমি পড়া চোর? আপনি এভাবে বললেন?”
“হ্যাঁ! বলব না কেন? পরিক্ষায় ফেল গেলে তো আমারই বদনাম। আর তুমি তো আমার বদনাম করতে উঠে পড়ে লেগেছ।”
“আমি আপনার বদনাম করব! এটা বলতে পারলেন?”
“তোমাকে যা বললাম তা-ই করো। যাও উঠো।”
মীরা আলসেমি করে আহানের গলা জড়িয়ে ধরে। বলে, “এখন পড়ার সময় না, এখন ঘুমানোর সময়। আমি ঘুমাব।”
“খাওয়ার পর ঘুমাবে। আলসেমি করো কেন।”
“বরের কাছে যত বাহানা করা যায়।”
মীরা আহানের মাথার চুলের ভাজে নিজের আঙুল গলিয়ে দেয়। আহান নিজের উষ্ণ, তৃষ্ণার্ত ঠোঁট ছোয়ায় মীরার কপালে। নিমিষেই শীতল হয়ে যায় মীরার অন্তর্দেশ। দুজনের চোখে একে অপরকে কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা দৃশ্যমান। আঁখি পল্লব বুজে তৃষ্ণা মেটালো ঠোঁটে। এবার হারানোর পালা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here