তোমাকেই_চাই পর্ব_৫ (অন্তিম পর্ব)

তোমাকেই_চাই
পর্ব_৫ (অন্তিম পর্ব)
#লেখনীতে_জান্নাতুল_মাওয়া_মাহিমুন
শায়ান কিছুক্ষণ পর তাকিয়ে দেখে সামির শায়নাকে কোলে করে নিয়ে আসছে। এটা দেখে শায়ান বোম হয়ে ওদের দিকে তেড়ে যেতে নেয়, তখনি আমি বাধা দেই। কারণ, এখন শায়ান রাগের বশে কী করবে শায়ান নিজেও বুঝবে না।
“তোর কী পা নেই? হাটতে পারিস না?” (দাত কিড়মিড়ে)
“আসলে, শায়ান…”
” For your kind information, আমি শায়নাকে প্রশ্ন করেছি। আপনি মাঝখান থেকে নাক গলাচ্ছেন কেনো?”
“এখানে নাক গলানোর কি আছে? আমরা একসাথে ছিলাম। আমি দেই কিংবা শায়না উত্তর দিক, উত্তর তো একই হবে”
“না হবে না। আপনার মতো চরিত্রহীন মানুষের কথা কখনোই বিশ্বাস করবো না”
“চরিত্রহীন? চরিত্রহীন কে? আমার বোনের স্বামী বলে এখনো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছো, অকে?”
“What do mean by this? নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি মানে কী? হা হা হা… মেরে পা ভেঙ্গে দিতেন নাকি? হা হা হা… আপনার মতো রাস্তার মাস্তানরা এসবই করতে পারবে”
“Mind your language, Mr. Shayan”
আস্তে আস্তে পরিস্থিতির বেগতি হচ্ছে। পরিবেশও ভালো ঠেকছে না। যেকোনো সময় মারামারি লেগে যেতে পারে। শায়না সামির ভাইয়ার বিধায় ভাইয়া কিছু করতে পারছে না। এদিকে আমি শায়ানকে যত সম্ভব টানছি কিন্তু আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। মাথার রগ ফুলে গেছে। সাদা মুখ লাল আভা দেখ যাচ্ছে। মারামারি করার জন্য রক্ত গরম হয়ে গেছে যে, বোঝাই যাচ্ছে।
“প্লীজ ভাইয়া থামো এবার। আমার কথাটা শুনো একবার। আমরা অইদিকটায় হাটতে গিয়েছিলাম। মাটিতে কাটা ছিলো। কিন্তু আমি সেটা খেয়াল করিনি। ভুলবশত কাটায় পা দিয়ে ফেলি। পরে সামির কাটাটা বের করলেও, আমার হাটতে অনেক সমস্যা হচ্ছেছিলো। আবার এইদিকে অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছিলো। তাই কোনো উপায় না পেইয়ে সামির আমাকে কোলে তুলে নেয়। আর আমিও বাধা দেয়নি। তো এখন যদি সামির অপরাধী হয়ে থাকে, তাহলে সমানভাবে আমিও অপরাধী হলাম। হয়তো সামিরের থেকে শাস্তি আমার বেশি পাওয়া উচিত। আমি সামিরকে জোর করেছিলাম অইদিকটায় যাওয়ার জন্য। অইদিকটায় না গেলে এতো সময় লাগতো না। আবার পায়ে কাটাও বিধতো না। ভাইয়া সব দোষ আমার। তুমি সামিরকে আর কথা শুনিয়েও না প্লীজ”
“বাহ বাহ ভালো। আমার ছোট বোনটাকে দেখছি ভালোই ব্রেন ওয়াশ করেছেন”
“দেখো ভাই এবার কিন্তু সত্যি সত্যি বেশি হয়ে যাচ্ছে”
“সামির ভাইয়া বাদ দাও তো। তুমি শায়নাকে ঘরে রেখে আসো।
সামির ভাইয়াও বেশি কথা না বাড়িয়ে শায়নাকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো। সাথে আবিরও চলে গেলো। আর এদিকে শায়ান রাগে ফুসছে। আমি পাত্তা না দিয়ে চলে আসলাম। কারণ সবকিছুর একটা সীমা আছে।কাওকে খামকা অপবাদ দেওয়া উচিত না, এখন সে যেই হোক।
_______________________________________
গত ১ ঘন্টা ধরে সবাই অপেক্ষা করছি। কিন্তু সময় পেরোই না।আজ রাতে শায়ানের বেস্টফ্রেন্ড আর ওনার স্ত্রীকে ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ করা হয়েছে। তাদেরকে আমি কখনো দেখি নি। তার জন্য কিছুটা এক্সসাইটেড বলা যায়। অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটলো। আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে সেই কাঙ্খিত দম্পতি। যাদের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
“সুহু কেমন আছিস? অনেক বড় হয়ে গেছিস?”বলে মিষ্টি হাসি দিলো নূর আপু। নূর আপু ছিলো আমার স্কুলের সিনিয়র আপু। প্র্রায় ৬ বছর পর আজকে দেখলাম। মাশাআল্লাহ নূর আপু আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই অনেক ভালো আছে , রুহান ভাইয়ার সাথে। ভালো থাকারই কথা। রুহান ভাইয়াও আরও হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে। আগের মতো হ্যাবলাকান্ত দেখতে মনে হয় না। অতীতের ধামাচাপা পরা সব ঘটনা যেনো গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে।
“নুর তুমি সুহাকে আগে থেকে চিনো?”
“শুধু আমি না রুহানও অনেক আগে থেকে চিনে। তাই না, রুহান? তুমি কি কিছু বলবা না”
“আসলে শায়ান……”
“আমি বলছি। সবার যেমন একটা অতীত থাকে। তেমন আমারো আছে। এটা প্রায় ৬ বছর আগের কথা। আমি আর নুর আপু এক স্কুলে পড়তাম। আমি যখন ক্লাস ৯ এ পড়তাম তখন নূর আপু পরিক্ষার্থী ছিলো। আর নূর আপুর কাজিন ছিলো রুহান ভাইয়া……”
“তারপর…???”( অনেক আগ্রহ নিয়ে শায়ান জিজ্ঞেস করলো)
“রুহান ভাইয়া একদিন আমাকে প্রপোজ করে। সে স্বীকার করে আমাকে নাকি অনেক ভালোবাসে। আমি তখন সটান না করে দেই। কিন্তু রুহান ভাইয়া প্রায় আমাকে জ্বালাতো। একদিন তো আমি আবেগের বশে চড়ও মেরেছিলাম। সেদিন রুহান ভাইয়া অনেক কান্না করেছিলো। তখন তো ভালোবাসা কি জিনিস সেটা বুঝতাম না। রুহান ভাইয়া কলেজে পড়তো, আর আমি মাত্র ক্লাস ৯ এ। পরে নূর আপু ভাইয়াকে বুঝে নিয়ে যায়। তখন ভাইয়ার অপর মায়া হলেও একটু কষ্ট হয়নি। কিন্তু অই মুহুর্ত গুলো মনে হলে বিশ্বাস করো তোমরা আমার অনেক কষ্ট হয়। পরে আমি রুহান ভাইয়াকে অনেক খুজেছিলাম, সাথে নুর আপুকেও। কিন্তু কারোর খোজ পাইনি। পরে প্রকৃতির নিয়মে দিন চলতে থাকে। প্রায় ২ বছর পর আমার দেখা হয় শায়ানের সাথে”
“তুই রুহানের খোজ পাসনি, কারণ আমি দিতে চাই নি। অই ঘটনার কয়েকদিন পরেই রুহান অনেক ভেঙ্গে পড়ে। সবাই খুব চিন্তিত ছিলো। পরিবারের সবাই ঠিক করে রুহাঙ্কে ফরেন পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু রুহান যেতে চাই নি। পরে একপ্রকার জোরাজুরিতে চলে যায়। আমার পরিক্ষা শেষ হওয়ার পর আমিও চলে যাই। হাত ধরে পাশে দাড়াই রুহানের”
“সবকিছুই ঠিক ছিলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড শায়ান বললো, ওনাকি একটা মেয়েকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। তাদের নাকি অলরেডি ২ বছর প্রেমও চলছে। যখন আমি সুহানার ছবি দেখি, তখন আমার অপর আকাশ ভেঙ্গে পরে। নূরের অঢেল ভালোবাসায় আমাকে কখনো সুহানার কথা ভাবার সময়টুকুও দেয়নি। সবকিছু ভুলে গেলেও আমার মাঝে সুহানার প্রতি ঘৃণার বীজ এ বিধে ছিলো”
“ছি রুহান ছি তুই আমার বন্ধু? তোকে আমার বন্ধু কম ভাই বেশি ভাবতাম। তুই আমার এতো বড় ছলনা করলি কীভাবে?”
“বিশ্বাস কর শায়ান। আমি ইচ্ছা করে করতে চাই নি। আমি আমার ভূল স্বীকার করছি। আমি চেয়েছিলাম, শুধু সুহানাকে কষ্ট দিতে। ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে কেমন লাগে সেটা বুঝাতে। তার জন্য……”
“তার জন্য তুই সুহা আর সামিরের ছবি পাঠিয়েছিলি, আমার বাসর রাতে?”
“হুম। কিন্তু অইটা ইডিট করা ছিলো। সুহানা অনেক মিশুক আচরণের মেয়ে। আমি এই সুযোগটাই কাজে লাগাই। সুহানার সাথে সামিরের ছবি দেই। যাতে তুই অদের দেখলে তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করিস। আর সুহানাও জানতো না আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড। যার কারণে কোনো সন্দেহ তৈরি হতো না। কিন্তু কালকে রাতে আমি সব নুরের সাথে শেয়ার করি। নূর আমাকে আমার ভুল ধরিয়ে দেয়। আসলেই সুহানা তখন অনেক ছোট ছিলো। অনুভূতি কি জিনিস তখন বুঝতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা অইদিন সুহানা আমাকে ফিরিয়ে না দিলে, কখনোই নূরকে পেতাম। সত্যিকারের ভালোবাসা রেখে সারাজীবন মরিচীকার পেছনেই ছুটতাম। প্লীজ ভাই আমাকে মাফ করে দেয়। আমি তোদের মাঝে দেয়াল হতে চাই না”
“হয়তো তোর জায়গায় থাকলে আমিও এমনেই করতাম। তুই যে তোর ভুল বুঝতে পেরে স্বীকার করলি, এটাই অনেক কিছু। তোর অনুতপ্তে আমি মুগ্ধ বন্ধু”
“জানো ভালোবাসা হলো মৌলিক মৌল! একে যতো ভাগই করবে কেবল ভালোবাসার টুকরা পাবে। কিন্তু যখনি এতে অভিমান যুক্ত হবে তখনই এটা যৌগিক মৌল হয়ে যাবে তখন একে ভাংলে কেবল ভালোবাসা না প্রতি অংশে অভিমান ও পাওয়া যাবে৷ এই অভিমান নষ্ট করার এন্টিলোড হলো আরো বেশি বেশি ভালোবাসা অপরজনকে। দেখি! সব অভিমান ঝেড়ে ফেলো তো!”
হঠাৎ করে শায়ান আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমিও জরিয়ে ধরলাম।
“কি মিস্টার রুহান আপনাকে কী ইনভাইট করতে হবে আমাকে জরিয়ে ধরার জন্য?”
“জি না রানী সাহেবা”
“এক মিনিট তাহলে কালকে সামির সুহাকে ছাদে পেছন থেকে জরিয়ে ধরেছিলো কেনো?”
সবাই সামির ভাইয়ার দিকে অবাক দৃষ্টীতে তাকিয়ে আছে।
“আসলে আমি……”
“তুমি আমাকে জরিয়ে ধরেছিলে? কিন্তু কেনো?”
“তুই তো জানিস আমি ঘুমের মধ্যে হাটি। তখন হাটতে হাটতে তোকে জরিয়ে ধরেছিলাম রে। যখন বুঝতে পারি তখন চলে যাই। হয়তো শায়ান দেখেছিলো। আমাকে জিজ্ঞেস করলেই পারতো। ইজ্জতের মাথা খেয়ে বলে দিতাম”( লজ্জা পেয়ে )
সামির ভাইয়ার কথা শুনে সবাই হাসছে। শায়না পারে তো মাটিতে গড়াগড়ি খায়।
“যাক অবশেষে সব ভূল বোঝাবুঝি শেষ হলো। এখন সুহু একটা গান গা তো”
“কি যে বলো না তুমি নূর আপু। আমি কি গান পারি?”
“ঢং না করে গা তো”( ধমক দিয়ে )
“গাইছি রে বাবা। আসতে না আসতে তদারকি শুরু”(ভেংচি কেটে)
~~~~~~~
তোমার নামে রৌদ্দুরে
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কতো দূরে এখনো
তোমার নামে রৌদ্দুরে
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কতো দূরে এখনো
আমার পোরা কপালে
আর আমার সন্ধায় সকালে
তুমি কেনো এলে জানি না এখনো
ফন্দি আটে মন পালাবার
বন্দি আছে কাছে সে তোমার
যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই
তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
#তোমাকেই_চাই
যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই
তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
#তোমাকেই_চাই
হলো সুরু সাত দিনে
এই খেলা-ধুলো রাত-দিনে
জানি বারণ করার সাধ্যি নেই
আর আমার………
তোমার নামে মন্দিরে
আর তোমার নামে মসজিদে
আমি কথা দিয়ে এসেছি
বার বার
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যাও
তুমি ইচ্ছে মতো আমাকে সাজাও
যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই
তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
#তোমাকেই_চাই
——————-সমাপ্ত——————
অনেকদিন ধরে এই গল্পটা পেন্ডিং এ ছিলো। অবশ্য আরও বড় লেখেছিলাম। কেও বেশি পছন্দ করছিলো না। সবাই #ভালোবাসতে_যে_তোকে গল্পটা রোমান্টিকের জন্য বেশি সাপোর্ট করছে। তাই এটা কোনোরকম ছোট করে শেষ করলাম। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এতো ভালোবাসা ও আগ্রহ দিয়ে কাছে টেনে নেওয়ার জন্য। হয়তো আমি এসব ডিজার্ভ করি না। আমি অনেক খারাপ, তাই না? নিয়মিত গল্পও দেই না। কিন্তু আমার করার মতো কিছু নাই। সবাই ভালো থাকবেন। করোনা প্রকোপ বেড়ে গেছে আবার, সবাই সাবধানে থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। সবার জন্য আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা অবিরাম। হ্যাপি রিডিং। আল্লাহ হাফেয।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here