তোকে ঘিরে,Part_01
Ariyana Nur
নিজের সন্তানকে বাচাতে আবার যে বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি মানহা।বিছানায় বসে বসে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে আর ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেল।কিছু সময়ের মধ্যে যে কি থেকে কি হয়ে গেল।একেই বোধহয় নিয়তি বলে???
সিদরাতুল মানহা।পেশায় একজন বে-সরকারি স্কুল টিচার।গায়ের রং উজ্জল শ্যমবর্ন।হাইট 5″3। দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ্।
কিছুক্ষন আগে স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার সময় দুজন লোক ওকে কিডন্যাপ করে।তারা ওকে একটা পুরোন বাংলোতে নিয়ে যায়।
এতোক্ষন মুখ,হাত বাধা থাকার কারনে কিছু করতে পারে নি মানহা।বাধন খুলতেই ও চিৎকার করে বলে….
—সমস্যা কি আপনাদের??আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন??কারা আপনারা??
কিডন্যাপাররা কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।তাদের চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মানহা আবার চিৎকার করে বলল…
—কি হল কথা বলছেননা কেন??
—ওদের জিগ্যেস করে কোন লাভ নেই।যা জানার আমাকে বল।আমি উওর দিচ্ছি।
উপর থেকে কথাটা বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো একজন।তাকে দেখেই মানহা ভয়ে গুটিয়ে রইল।মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না।লোকটি নিচে নেমে মানহার চারোপাশে দুবার চক্কর দিয়ে সামনের সিংগেল সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বলল….
—তা কি যেন বলছিলেন মিস….
মানহা ভয়ে ভয়ে বলল…
—আমি মিস না মিসেস….
—তা তো আগে ছিলেন।আর একটু পরে আবার হয়ে যাবেন।
মানহা চোখ বড় বড় করে বলল…
—মানে….
লোকটি ভাবলেশহীন ভাবে বলল….
—এতো মানে মানে করতে হবে না।কি যেন বলছিলেন….
ওহ্…মনে পরেছে আপনাকে এখানে কেনো আনা হয়েছে।আজ আপনার আর আমার বিয়ে।তাই আপনাকে এখানে আনা হয়েছে।
মানহা অবাক হয়ে বলল….
—বিয়ে!!!
আপনি কি পাগল হয়েছেন?? আপনি মনে হয় জানেন না যে আমি বিবাহিত আর আমার একটা পাঁচ বছরের মেয়েও আছে।কিডন্যাপ করার আগে তো জেনে নিবেন কাকে কিডন্যাপ করছেন।
মানহা একদমে কথা গুলো বলে ভয়ে ভয়ে সামনের লোকটার দিকে তাকালো।চেয়ে দেখে তিনি রক্ত চক্ষু নিয়ে মানহার দিকে তাকিয়ে আছে।যেটুকু সাহস নিয়ে মানহা কথাগুলো বলেছিল তা ফুস হয়ে গেল।
সামনের লোকটি নিজের রাগকে কন্ট্রল করে দাতে দাত চেপে বলল…
—কথা তো ভালোই বলতে পারেন।এতো কথা আমার পছন্দ না।আর আপনি বিধবা।বিধবা মেয়েদের তো বিয়ে করা যায়।এবার বলুন আমাকে বিয়ে করবেন কি না??
—আমি বিয়ে করবো না।
—ঠিক আছে তাহলে আপনার মেয়েকে শেষ করে দেই।
মানহা অবাক হয়ে বললাম…
—মানে…..
লোকটি ইশারা করে সামনে তাকাতে বলল।আর সামনে তাকিয়ে মানহার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল।কেননা সামনের ল্যাপটপে মানহা দেখছে ওর মেয়ে…..কে চেয়ারের সাথে বেধে রেখেছে আর ও মাম্মা…মাম্মা বলে কান্না করছে।
ভিডিও টি দেখে মানহা পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে রইল।
লোকটি মানহার সামনে এসে বলল….
—১০মিনিট সময় দিলাম তোমাকে।এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নেও যদি তুমি বিয়েতে রাজি না হও তাহলে তোমার মেয়ে….
বাকিটা বুঝে নিও।
এই বলে লোকটি চলে গেল আর মানহা ধপ করে নিচে বসে পরলো আর আল্লাহ্কে ডাকতে লাগলো।মানহা কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না।মনে মনে ইচ্ছে মত নিজেকে গালাগাল করতে লাগলো।সেদিন কেন যে এই লোকটার সাথে লাগতে গিয়েছিল।
এতক্ষন যে লোকটি কথা বলছিল সে হল ইহান শেখ।পলিটিশিয়ানের নেতা সাথে গুন্ডা,বদমাশ।সেদিন সামান্য একটা কারনে মানহা তার সাথে তর্ক করেছিল তাতেই তার ইগোতে লেগেছে।তাই সেদিন সবার সামনেই মানহাকে থ্রেট দিয়েছে।” আমি তোর এই দেমাগ ভেঙ্গে দিব আর তোর এমন অবস্থা করবো যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”
তার ঐ সামান্য ভুলের বদলা যে মানহাকে এভাবে দিতে
হবে তা ওর জানা ছিল না।
____________________________
তুর কান্না করছে আর মাম্মাম বলে ডাকছে।এমন সময় একজন সামনে এসে বলল…..
—এই মেয়ে কান্না থামাও।সেই কখন থেকে কান্না করেই যাচ্ছ।
তুর মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে বলল….
—তুমি কি পচা আঙ্কেল???আমাকে এভাবে বেধে বেখেছো কেন???
—আমরা তোমাকে কিড্যনাপ করেছি।
—কিড্যনাপ কি???
—আমরা তোমাকে আটকিয়ে রেখেছি।
—তোমরা কেন আমায় আটকিয়ে রেখেছো???আমি কি করেছি???আমি তো গুড গার্ল।আমি তো অনেক ভালো।তাহলে কেন আটকিয়ে রেখেছো???
—এই মেয়ে চুপ কর।বেশি কথা বলছো কেন।চুপ করে বসে থাকো।
লোকটির ধমক শুনে তুর আবার কান্না করতে লাগলো।
একটু পর তুর কান্না থামিয়ে বলল…
—আচ্ছা পচা আঙ্কেল তুমি কি দৈত্য???
তুর এর কথা শুনে লোকটি ধমক দিয়ে বলল….
—এই মেয়ে তোমার কোন দিক দিয়ে আমাকে দৈত্য মনে হয়।
তুর নাক টেনে বলল….
—আমার মাম্মাম আমাকে বলেছে যে দৈত্যরা প্রিন্সেসদের নিয়ে আটকিয়ে রাখে তাই বললাম।আর আমি তো আমার মাম্মাম এর প্রিন্সেস।এই বলে আবার কান্না করতে লাগলো।
লোকটি এবার বিরক্ত হয়ে বলল….
—এই মেয়ে আবার কান্না করছো কেন??কান্না থামাও তা না হলে আমি তোমাকে মারবো।
তুর কান্না করতে করতে বলল….
—তুমি খুব পচা আঙ্কেল,খুব পচা।আমাকে বকছো।আমি মাম্মাম এর কাছে বলে দিব।মাম্মাম এর কাছে বড় বড় লাঠি আছে তোমাকে তা দিয়ে পিটাবে।তুর কান্না করছে আর আর বকর বকর করছে।আর একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।
আর লোকটি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আর ভাবছে এইটুকু মেয়ে কিভাবে এতো কথা বলতে পারে। ওকে প্রশ্ন করতে করতে ওর অবস্থা নাজেহাল করে দিচ্ছে।
লোকটি ফোন বের করে একজনকে ফোন করে বলল….
—ভাই আপনে কই ।তারাতারি আসেন।তা না হলে একটু পরে আমাকে পাগলা গারদে ভর্তি করতে।
—……..
—ভাই আর…..
—……..
—ঠিক আছে ভাই।আপনে যেমনে কইবেন ওমনেই হইবো।
লোকটি কথা বলে দরজা লাগিয়ে চলে গেল।
আর তুর লোকটির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলল….
—যাহ্….চলে গেল পচা আঙ্কেল।এখন আমি কার সাথে কথা বলবো।
__________________________
মানহা অনেক ভেবে চিন্তে সিধান্ত নিল যে,,ও ইহানকে বিয়ে করবে।যা হবার তা ওর সাথে হবে।ওর মেয়ের উপর কোন আচ্ আসতে দিবে না।ওর মেয়ের কোন ক্ষতি হলে ও নিজেকে কখনোও ক্ষমা করতে পারবে না।
প্রতিটি মা…ই এমন হয় যা ঝড় যাক নিজের উপর দিয়ে যাক।সন্তানের উপর যেন কোন আচ্ না আসতে পারে সেই চিন্তাই করে।
রেজেস্টি পেপার সামনে নিয়ে বসে আছে মানহা।নিরবে চোখের জল ফেলছে।ইহানের ধমক খেয়ে কাপা কাপা হাতে কলম ধরে যেই না সাইন করতে যাবে তখনি কেউ বলল….
—এক মিনিট…..
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)