তুমি_আমার_অনেক_শখের(০৩)

#তুমি_আমার_অনেক_শখের(০৩)
#লেখনীতেঃসুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি

প্রজ্ঞা অনিশ্চয়তাই ভুগছে। একদিকে সবকিছু জানা সত্বেও আজরাফের বিশ্বস্ত, ভরসা বাক‍্য। অন‍্যদিকে নিজের শারীরিক সমস্যা। কোনটাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাবে সেটাই বুঝতে পারছে না সে। আজরাফ সরাসরি প্রজ্ঞার সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলেও প্রজ্ঞা এ প্রস্তাব নাকচ করে। কি কথা বলবে? লোকটার পাগলামোতে সম্মতি দিলে যে ওই মানুষটারই ক্ষতি। সেটা কি আজরাফ নামক বোকা পুরুষটা বুঝছে না? প্রজ্ঞা তার পছন্দের। কিন্তু তাই বলে একজন এসে***ক্সুয়াল মেয়েকে সব জেনেশুনে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যাবে! এমন বোধজ্ঞান সম্পন্ন পাগল ছেলে প্রজ্ঞা ইতিপূর্বে দেখেনি। প্রজ্ঞা ঠিক করলো সে তার সেই কলেজ ফ্রেন্ডকে ফোন করবে। যে কিনা এসে**ক্সুয়ালে ভুগছে। ফারিশতা নামের মেয়েটি ছিল প্রজ্ঞার কমন ফ্রেন্ড। একপর্যায়ে জানতে পারে সেও এসেক্সুয়ালে ভুগছে। কিন্তু ততদিনে তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। প্রজ্ঞার সাথে ফারিশতা এ বিষয়ে কিছু কথা শেয়ার করেছিল। সেখান থেকেই প্রজ্ঞা মূলত এসে**ক্সুয়াল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করে। কিন্তু ফারিশতা বিয়ের পূর্বে তার স্বামীকে এ বিষয়ে কিছুই জানাইনি। ফলস্বরুপ নানা রকম নির্যাতন সহ‍্য করতে হয়েছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পূর্ণ চাহিদা থাকে শারীরিক সম্পর্কে স্থাপনের প্রতি। সেখানে প্রজ্ঞার ফ্রেন্ড ফারিশতা ছিল অকামিতায় ভোগা মেয়ে। এসব জানার পর থেকে প্রজ্ঞার চোখে ফারিশতার নির্যাতনের কাল্পনিক চিত্র ভেসে উঠতো। ক্রমেই সে ছেলেদের সহ‍্য করতে পারতো না। তার কাছে ছেলে মানুষ মানেই ফারিশতার স্বামীর মত অত‍্যাচারী।

প্রজ্ঞা ভাবনা চিন্তা করে ফারিশতাকে ফোন করলো।
কল ধরলো ফারিশতা। প্রজ্ঞা বলল,
“আসসালামু আলাইকুম ফারিশতা। আমি প্রজ্ঞা বলছিলাম।”

ওপাশ থেকে ফারিশতার উৎফুল্ল কন্ঠস্বর। বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম। চিনতে পেরেছি। তোর নাম্বার ফোন সেইভ করা ছিল। তারপর বল কি খবর?”

“চলছে আলহামদুলিল্লাহ্। তুই কেমন আছিস ফারিশতা? এখন সব ঠিকঠাক তো!”

ফারিশতা বিমর্ষ গলাই প্রতিত্তোরে বলল, “আর ঠিকঠাক। চলছে এভাবেই। তবে আমি যদি বিষয়টি আগে থেকে বুঝতে পারতাম তাহলে তাকে জানাতে পারতাম। দোষ আসলে আমারই। তাকে সম্পূর্ণ দোষ দেওেয়া যায় না। কিছুদিন ট্রিটমেন্ট চলেছে। আমি কনসিভ করেছি। জানিস?”

প্রজ্ঞা ফারিশতার কথায় যেন আশার আলো দেখতে পেল। সাথে খুশিও হলো। খুবই আনন্দের খবর। প্রজ্ঞা উল্লসিত গলাই বলল,
“সত‍্যি তুই কনসিভ করেছিস? তাহলে খালামনি হচ্ছি! আলহামদুলিল্লাহ্।”

ফারিশতা জানালো, “হ‍্যাঁ দোয়া কর। সংসারটা যেন টিকে যায়।”

“ফি আমানিল্লাহ্। দোয়া রইল। স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাক।”

“প্রজ্ঞা একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা শোন!”

“বল?”

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এসে**ক্সুয়াল দু ধরনের। ১| ডেমিসে**ক্সুয়াল। ২| গ্রেসে**ক্সুয়াল। ডেমিসে**ক্সুয়াল হচ্ছে, ‘এ ধরনের ব‍্যক্তিদের সাধারণত শারীরিক সম্পর্কের প্রতি অনাগ্রহ থাকলেও মনের মত কারো সঙ্গে দেখা হলে ধীরে ধীরে ফিলিংস আসতে থাকে। মূলত আবেগগত সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর বিষয়টি পরবর্তিত হয়। আর গ্রেসে**ক্সুয়াল হচ্ছে, ‘এ ধরনের ব‍্যক্তিের খুব বিরল ঘটনায় নিজেদের ফিলিংস সংক্রিয় হয়। এটা মূলত সম্পর্কের মাঝামাঝি পর্যায়। এরা সাধারণত ফিলিংস অনুসন্ধান করে না। এমনকি কোন সম্পর্কে জড়ালেও না। আল্লাহর অশেষ রহমত। আমার এসে**ক্সুয়াল থাকলেও সেটা ডেমিসে**ক্সুয়াল ছিল। ব‍্যপারটা ডাক্তার দেখানোর পরে পরিষ্কার হয়। তার তিনিও নিজের ভুল বুঝতে পারে। বলা যায় এখন তিনি আমার মতামতের গুরুত্ব দেয়। তোকে বললাম এজন্য যে ভবিষ্যতে এহেন সমস‍্যাই পড়লে বুঝতে পারবি।”

“ফারিশতা কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আমি না এসব এডাল্ট সবারই জানা উচিত। অনেক সময় কোন বিষয়ে না জেনে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। এর সম্পর্কে আর কিছু জানলে বল!”

“বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিজ্ঞান এখানো শারীরিক সম্পর্কের প্রতি আকর্ষণ না করার কারণ নির্ণয় করতে পারেননি। শারীরিক সব লক্ষণ ঠিক থাকার পরেও শারীরিক সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ থাকে না। হয়তো এর পেছনে মানব দেহের কোন জিনের ভূমিকা থাকতে পারে। আমাদের মত অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে অজ্ঞতায় ডুবে থাকে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে যথাযথ সচেতনতা গড়ে উঠেনি। এতে বিষয়টি নিরাময় সম্পর্কে জানতে পারে না ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে ডাক্তার কামিনি দেশমুখ বলেন, যথাযথ সচেতনতা ও শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে এসে**ক্সুয়াল মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আশা উচিত। এতে তারা নিজেদের অনুভূতি সাচ্ছন্দে প্রকাশ করতে পারবে। এবং ভুল বোঝাবুঝির অবসান এবং ভয় ভীতিটাও কাঁটবে। বুঝেছিস প্রজ্ঞা?”

প্রজ্ঞা ফারিশতার বলা প্রতিটা কথায় মন দিয়ে শুনছিল। বলল, “হ‍্যাঁ শুনলাম। আসলে আমাদের নিজেদের সাচ্ছন্দ‍্য নিজেদের কাছে। কোন বিষয় নিয়ে ভীত থাকা যাবে না। সে বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে নিরাময়ের ব‍্যবস্থা করতে হবে।”

ফারিশতা বলল, “সহমত। এছাড়াও এসে**ক্সুয়ালের জন্য শারীরিক কারণ হচ্ছে,
-রক্তস্বল্পতা যা নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন র’ক্তে আয়রনের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া থেকে প্রকট হয়।
-মদ‍্য’পানে আস’ক্তি।
-ডায়াবেটিস জাতীয় রোগ।
-সন্তান প্রস’বের পরবর্তী কিছু সময়কাল নারীর শারীরিক চাহিদা সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। এটি শ’রীরে হরমোনাল বিষয়ের সাথে প্রায় সরাসরি জড়িত। অনেক সময় সন্তান জন্মদেবার পর মানসিকভাবে অনেকটা বিক্ষিপ্ত থাকেন যার কারনে ডিম রিলেশনে তারা আগ্রহী হয় না।
-এছাড়াও কিছু ঔষধের পাশ্ব’প্রতিক্রি’য়াতেও এসে**ক্সুয়াল দেখা দেয়।
আর মানসিক কারণগুলো হচ্ছে,
-ডিপ্রেশন।
-দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া। নারী যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে তখন এ‍্যডরিনাল গ্রন্থি ইষ্ট্রোজেন এবং টেষ্ট্রষ্টিরন হরমোন সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ইষ্ট্রোজেন আর টেষ্ট্রষ্টিরন হরমোনই নারী শরীরে কামিতার আকাঙ্খা উৎপন্ন করে।
-উদ্বিগ্নতা।
-শিশুসুলভ মনোভাবের পূর্ণজন্ম।
-পূর্বের ধর্ষ’ণ কিংবা যন্ত্রণাদা’য়ক শারী’রিক সম্পর্কের স্মৃ’তি।
-স্বামীর সাথে প্রচণ্ড মানসিক বিবাদ।
এরপরও কোন নারী যদি এসে**ক্সুয়াল সম্পর্কে নিজের সমস্যা নির্ণয় না করতে পারে তাহলে চিকিৎসক কিংবা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের নারী কর্মিদের সহয়তা নেওয়া যেতে পারে। সব সমস্যারই সমাধান আছে আলহামদুলিল্লাহ্। এছাড়াও সমস্যা নিরাময়ে সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তিনি রহমানুর রহিম। বান্দার যেকোনো প্রতিবন্ধকতা তিনিই ঠিক করে দিতে পারেন। প্রজ্ঞা তোর যদি কখনও মনে হয় এর মধ্যে কোন সমস্যা আছে। তাহলে নিজ থেকে ট্রাই করবি ঠিক করে নিতে। তারপরও ঠিক না হলে চিকিৎসা নিতে পারিস। শুনছিস প্রজ্ঞা?”

প্রজ্ঞা গম্ভীর স্বরে জবাব দিল, “হুম, বুঝলাম।”

“প্রজ্ঞা তোর দুলাভাইয়ের অফিস থেকে ফেরার সময় হয়ে গেছে। আমি রাখছি তাহলে।”

প্রজ্ঞা খেয়াল করলো ফারিশতার মধ্যে সংসারিক ভাব এসে গেছে। আগের মত উদাসীন নয়। ভালো লাগলো প্রজ্ঞার। প্রত‍্যেকেরই উচিত জীবন গুছিয়ে নেওয়া। প্রজ্ঞা দ্বিধান্বিত স্বরে বলল, “শোন, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তুই এবং ভাইয়া অবশ্যই অবশ্যই আসবি।”

“আলহামদুল্লিল্লাহ্। খুবই খুশির খবর। ইন শা আল্লাহ চেষ্টা করবো। নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল প্রজ্ঞা।”

“শুকরিয়া বান্ধবী। ভালো থাকিস। আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ।”

প্রজ্ঞা ফোন কল কেটে স্বস্তির শ্বাস নিল। যাক! অনেকটাই নিশ্চিন্ত সে।

এরপরের ঘটনাগুলো খুব তাড়াতাড়ি ঘটে গেল। প্রজ্ঞা বিয়েতে আর দ্বিমত পোষণ করেনি। বিয়ের দিনক্ষণ আগালো। সেই সাথে প্রজ্ঞার মনের ধুক’পুকও বাড়তে লাগলো। কোথাও কিছুটা নিশ্চিন্ত কোথাও কিছুটা অনিশ্চ’য়তাই ঘিরে ধরেছে। সবকিছু মহান রব্বুল আলামিনের কাছে সপর্দ করে প্রজ্ঞা নিশ্চিন্ত হলো। তিনি নিশ্চয়ই তার বান্দার খারাপ চান না।

ইনশাআল্লাহ..চলবে।

গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। নাইস, নেক্সট নয়। দুঃখিত অনেক এডাল্ট বিষয় লিখে ফেলেছি। ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here