#তুমি_আমার_অনেক_শখের(০২) #লেখনীতেঃসুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি

#তুমি_আমার_অনেক_শখের(০২)
#লেখনীতেঃসুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি

‘মিস প্রজ্ঞা! ছোট্ট অসুস্থতাকে অপূর্ণতা ভেবে ভুল করবেন না। প্লিজ! আপনাকে বিয়ে করতে আমার কোন আপত্তি নেই। অজ্ঞাত বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে আগেই অবগত করেছেন এর জন্য ধন্যবাদ। শুধু এটুকু জেনে রাখুন আপনি আমার বিশেষ কেউ। তাই নগণ্য একটা বিষয়ের জন্য কিছুতেই আপনাকে দুরে ঠেলে দিতে পারিনা। ভালো থাকবেন এবং নিজের যত্ন নিবেন।’
আজরাফ।

ব‍্যাস এতটুকু বার্তা যথেষ্ট ছিল প্রজ্ঞার স্বাভাবিক হৃদস্পদনকে অস্বাভাবিক করার জন্য। জীবনে এত বড় বিস্ময়, অবাক হওয়ার ঘটনা ঘটনা বোধহয় এবার প্রথম ঘটলো। কাঁম্পিত হাতে আজরাফের নাম্বারে প্রজ্ঞাও একটা ছোট্ট ম‍্যাসেজ প্রেরণ করলো।

‘আপনাকে দেখে অবুঝ মনে হয়নি। ছেলেমানুষী আপনাকে মোটেও মানাই না। সারাজীবনের প্রশ্ন এখানে। আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না।’
প্রজ্ঞা।

প্রজ্ঞা বাড়িতে ফিরে যেন আরেক দফায় অবাক হলো। আজ তার অবাক হওয়ার দিন বুঝি। জানতে পারলো দুদিন পরেই বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে চান পাত্রপক্ষ। ছেলের ছুটি বেশি দিন নেই। তাছাড়া শুভ কাজে বিলম্ব না করাই শ্রেয়। সব শুনে প্রজ্ঞা ভাষা হারিয়ে ফেলল। তার কাছে একটিবার শোনা উচিত ছিল না? এতটা কান্ডজ্ঞানহীন কি করে হতে পারে তার নিজের মানুষগুলো? ভেবে পাই না কিছুই সে। গটগটে পায়ে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো। আপাতত একটা লম্বা শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন। মন, মস্তিষ্কে জং ধরে গেছে। প্রজ্ঞা বরাবরই ঠাণ্ডা মাথার মেয়ে। হুটহাট কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে। তার মতে, জীবন একটাই। সেখানে হুট করে ভাবনা চিন্তা ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে আজীবন পস্তানোর কোন মানে হয় না। তাই কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বুঝে শুনে বুদ্ধি প্রয়োগ করে নেওয়া অতীব প্রয়োজন। প্রজ্ঞা বিয়ে বিষয়ক ভাবনা চিন্তা খানিক সময়ের জন্য বন্ধ রেখে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। একেবারে গোসল এবং জোহরের নামাজের জন্য অজু করে বের হবে।

প্রায় দেড় ঘন্টা পরে প্রজ্ঞার রুমের দরজায় কড়া নড়ে। প্রজ্ঞা কেবল নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখছিল। ওপাশ থেকে এক চঞ্চল কিশোরী কন্ঠ শোনা যায়। সে ব‍্যস্ত কন্ঠে প্রজ্ঞাকে ডেকে চলেছে, “আপা, আপা! দরজা খুলেন। দুপুরের খাবার খাইবেন না? আপনার দাদীজান এখনো না খাইয়া বইয়া আছে। আপনি আইলে খাবেন। তাড়াতাড়ি আহেন!”

প্রজ্ঞা দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা খুলে আবিষ্কার করে শ‍্যামবর্ণের হাস‍্যজ্বল মুখশ্রীর মর্জিনাকে। মর্জিনা প্রজ্ঞাদের বাসার হেল্পিং হ‍্যান্ড। অবশ‍্য হেল্পিং হ‍্যান্ড বললে ভুল বলা হবে। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মর্জিনা। তারওপর সৎ মায়ের অত‍্যাচার। প্রজ্ঞার নানু বাসার পাশেই মর্জিনাসহ আরও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে জীর্ণশীর্ণ এক কুটিরে বাস করতো মর্জিনার বাবা। প্রজ্ঞা তখন ওর নানু বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে মর্জিনার মা ওকে কাঠ দিয়ে পিটিয়ে পিঠে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল। প্রজ্ঞার দয়ার শরীর। ১৬ বছরের কিশোরী মর্জিনাকে দেখে মায়া হয় প্রজ্ঞার। মা, দাদিকে বুঝিয়ে মর্জিনার বাবাকে রাজি করিয়ে শহরে নিজেদের বাসায় নিয়ে এসেছিল প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞার দাদিজান যদিও একটু দ্বিরুক্তি করেছিল কিন্তু প্রজ্ঞার একরোখা মনোভাবে পেরে ওঠেননি বৃদ্ধা। প্রায় একবছর মর্জিনা এ বাড়িতে আছে। ছোট বোনের থেকে কম নয় মর্জিনা প্রজ্ঞার কাছে। কাছের একটা উচ্চ বিদ‍্যালয়ে তাকে ভর্তি করিয়ে দেওেয়া হয়েছে। বছর খানিকের মধ্যেই মর্জিনার পরিবারের একজন হয়ে উঠেছে। গ্রামের মেয়ে তাছাড়াও সৎ মায়ের ছায়াতলে বেড়ে ওঠা মর্জিনা সাংসারিক প্রায় সব কাজেই পটু। রান্না বান্না তাছাড়াও বাসার অন‍্য আরও কজকর্মে প্রজ্ঞার মা মিসেস পিয়াসা বেগমকে সাহায্য করে থাকে সে।

মর্জিনা প্রজ্ঞার জবাবার আশায় দরজায় ঠাই দাড়িয়ে রইল। প্রজ্ঞা বলল, “তুমি খাবার খেয়েছো মর্জিনা?”

প্রজ্ঞার প্রশ্নে লাজুক হাসে মর্জিনা। যেন তাকে খুবই লজ্জাজনক প্রশ্ন করা হয়েছে। সে মাথা চুলকে প্রতিত্তোরে জানাই, “আপনারে রাইখা আমি খাই কেমনে আপা! আপনে আসেন আমরা একলগে খামুনে।”

“আচ্ছা যাও তুমি। আমি এখনি আসছি। দাদিজানকে ডাকো। খাবার দাও টেবিলে আমি আসছি।”

“আইচ্ছা আপা।” মর্জিনা ছোট্ট করে জবাব দিয়ে প্রস্থান করে জায়গা।

পরিবারের সকলের আদরের প্রজ্ঞা। মা-বাবার একমাত্র সন্তান সে। দাদিজানের চোখের মনি। মর্জিনার মত একটা ছোট বোন। কি নেই তার জীবনে? সচ্ছল পরিবারের সন্তান সে। অভাব নামক শব্দটার বাস্তব সম্মুখীন সে কখনও হইনি। মাঝারি গড়নের হলদে ফর্সা প্রজ্ঞার কোন কিছুরই কমতি নেই বাহ‍্যিক দৃষ্টিতে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে এত বড় একটা অপূর্ণতা তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে কেউ তা জানে। এসে**ক্সুয়াল নামক শারীরিক অক্ষমতা তার মধ্যে বেড়ে উঠছে সেটাও কি রমনী জানতো! এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে বুক’চিরে প্রজ্ঞার।

“প্রজ্ঞা বুবুজান! আজরাফ দাদুভাইয়ের সাথে কথাটথা হলো ঠিকমতো? কেমন দেখলে তাকে?”

দাদিজানের প্রশ্নে থতমত খেয়ে ফেলে প্রজ্ঞা। ফলে খাবার গলাই আটকে যায়। দ্রুত পানি খেয়ে লম্বা শ্বাস নেয় সে। নিজেকে কিছুটা সময় নিয়ে ধাতস্থ করে প্রতিত্তোরে বলল, “আমার জন্য কি কিছু বাকি রেখেছো দাদিজান? সব তো ঠিক করেই রেখেছো। এসব জিজ্ঞাসা করে আর কি লাভ!”

“কেন তোমার পছন্দ হয়নি আজরাফকে? এভাবে কথা বলছো কেন? তোমার খারাপ চাই না কেউ।”

“তাহলে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করো না।”

“আমি কি বুঝে নিব তোমার পছন্দ নয় আজরাফকে?”

“কথা পেচিও না দাদিজান। সে কথা কখন বললাম। অপছন্দের কিছু নেই এখানে। বিয়ে ঠিক করেছো একটাবার আমার অনুমতি নিতে পারতে। কিন্তু নাওনি। তাই এসব জিজ্ঞাসা করো না। যা ইচ্ছা করো। আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না।”

“প্রজ্ঞা বড় হচ্ছো ততই বে’য়া’দব হচ্ছো দেখছি। আমি কথা পেচায়?”

“দাদি প্লিজ! আমার তর্কে যেতে ইচ্ছে করছে না।”

প্রজ্ঞা খাওয়া অর্ধসমাপ্ত রেখেই উঠে পড়ে। মন মেজাজ ভালো নেই দাদিজানের জন্য আরও খারাপ লাগার পরিমাণটা বাড়লো বৈ কমলো না। প্রজ্ঞার মর্জিনার উদ্দেশ্যে বলল, “মর্জিনা তোমার খাওয়া শেষ হলে কড়া লিকার দিয়ে এক কাপ চা নিয়ে এসো রুমে। আমার মাথা ধরেছে।” কথাগুলো সমাপ্তি টেনে ধুপধাপ পা ফেলে খাবার টেবিল বেরিয়ে আসে প্রজ্ঞা।

মর্জিনা নিরব চোখে সবটা দেখলো শুধু। সে মোটেও অবাক হইনি। দাদি নাতনির এমন ছোটখাটো ঝগড়া সে এসে থেকে দেখছে। প্রতিদিনের রুটিন তাদের। প্রজ্ঞা চলে যেতেই দাদিজান মর্জিনার উদ্দেশ্যে বলল, “দেখলি মর্জি! কিভাবে কথা বলে সে! দুদিন বাদে শশুর বাড়ি যাবে এমন চটপটে কথা বললে হবে? কে বোঝায় এই মেয়েকে!”

মর্জিনা প্রতিত্তোরে কিছু বলল না। চুপচাপ নিজের প্লেটের খাবার শেষ করছে সে।

মর্জিনার নির্লিপ্ততা সহ‍্য হলো না দাদিজানের। সে গনগনে স্বরে বলল, “তুইও দাম দিচ্ছস না। আমার কথার কোন মূল্য নেই এ বাড়ি। বুঝেছি আমি। হাতি কাদায় পড়লে চামচিকাতেও লাথি মা’রে।”

দাদিজানের কথায় অবাক হয় মর্জিনা। সে এমন কিছু বলেছি কি! বৃদ্ধার কথায় সবকিছু হয় এবাড়িতে। তাও নাকি তার দাম নেই।

“দাদি আমি সেরকম কিছু বলেছি নাকি? আপনি ঠিক কথা কইছেন। আপার মাথা ধরছে। সেই জন্য আপনের ভালো কথাও তার ভালো লাগেনি। আপনে মন খারাপ কইরেন না। ভাত খান। শরীর খারাপ করবো। চিংড়ি ভুনা দিব নাকি আরেকটু?”

“না থাক। আর লাগবে না। খাওয়া শেষে মহারানির জন্য চা নিয়ে যাস।”

“আইচ্ছা।”
__________________

“আপা, আজরাফ ভাইজানরে আপনের পছন্দ হইছে? কি কথা হইলো আপা?” ধোয়া ওঠা এক কাপ গরম চা নিয়ে রুমে প্রবেশ কালে উক্ত প্রশ্নোগুলো প্রজ্ঞার উদ্দেশ্যে করে মর্জিনা। এটা তার পুরোনো স্বভাব।

শোয়া থেকে উঠে বসে প্রজ্ঞা। হাত বাড়িয়ে চা নেয় মর্জিনার হাত থেকে। মর্জিনার পাশে রাখা আরাম কেদারাই আয়েশ করে বসে। অপেক্ষা করছে প্রজ্ঞার জবাবের।

প্রজ্ঞা বলল, “তেমন কিছু না। তারপর বলো তোমার পড়াশোনার কি অবস্থা? বলেছিলাম না কোথাও না পারলে আমার কাছে আসবে!”

পড়াশোনায় বড্ড ফাঁকিবাজ মর্জিনা। মর্জিনার সরল জবাব,
“আপা পড়তে আমার ভালো লাগে না। কাম করতে মন চাই। সংসার গুছাতে ভালো লাগে। পড়ালেখা মেলা কঠিন জিনিস।”

“আব্বুকে বলি তোমার বিয়ে দিয়ে দিতে?”

প্রজ্ঞার কথার পিঠে লাজুক হাসে মর্জিনা। অর্থাৎ সে অখুশি না। তা দেখে প্রজ্ঞার চোখে অশ্রুকণা ভর করে। সে বিশ বছরের প্রাপ্ত বয়স্ক নারী হয়েও সংসার ধর্মে আকর্ষীত না। অথচ ষোড়শী মর্জিনা কি সুন্দর সংসার গোছানোর স্বপ্ন দেখে। সে কি ওর মত হতে পারতো না? এসে**ক্সুয়াল নামক রোগটি কেন তারই হতে হলো!

“বিয়ে টিয়ে পরের কথা। মন দাও পড়াশোনায়। বুঝেছো? এখন যাও ঘুমাও। রাতে পড়তে এসো।”

মর্জিনা দ্বিরুক্তি না করে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। সে ঘুমাবে! সে এখন টইটই করে সারা বাসা ঘুরে টুক টুক করে কাজ করবে। পড়ে দাদিজানের ফোন নিয়ে বিকেলে সাজগোজ করে ছাদে গিয়ে ছবি তুলবে।

‘কেমন কান্ডজ্ঞানহীন মেয়ে আপনি। বাসায় পৌঁছে একটা ম‍্যাসেজ দেওেয়া যেত না? শুনন! ভাগ‍্যে থাকলে আপনি আমারই বউ হবেন ইন শা আল্লাহ। শারীরিক ভাবে না হোক মানসিক ভাবে এই আজরাফ ফাহিমের বউ হবার জন্য প্রস্তুত হন। ঠিক আছে?”
আজরাফ।

আবারও আজরাফের ম‍্যাসেজ। এবার আর অবাক হলো না। বরং ভালো লাগলো প্রজ্ঞার। পছন্দের মানুষটা এমন সাপোর্টটিভ হবে এটাই তো চাওয়া পাওয়া থাকে। অধর জুরে বিস্তৃত হাসির রেখা ফুটে ওঠে প্রজ্ঞার। মানুষটা তার হোক বা না হোক কিন্তু এমন অভয় বাক‍্য কেইবা তাকে বলতো!

‘মিঃ আজরাফ ফাহিম! এসে**ক্সুয়াল রোগটিকে হালকা ভাবে নিবেন না। অ কা’মি তা বা শারীরিক সম্পর্কের প্রতি অনাগ্রহকে এসে**ক্সুয়াল বলে। আর কোন নারীর শারীরিক চাহিদার প্রতি আকাঙ্খা কম থাকাকে ফিমেল সে**ক্সু**য়াল এ‍্যারুসাল ডিজওর্ডার বলে। অনেকে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। আবার অনেকে পারে না। আমার কি হবে সেটা আমি এখনো জানিনা। আবারও বলছি আপনি ভাবুন। মন প্রাণ দিয়ে ভাবুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েন। ভালো থাকবেন।’
প্রজ্ঞা।

প্রজ্ঞা আজরাফকে ম‍‍্যাসেজ বার্তা পাঠিয়ে ফোন সুইচ অফ করে বালিশে মাথা এলিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক ঠিক রাখতে এখন কিছুটা ঘুম দেওেয়া উচিত। শরীরে ক্লান্তি ভর করাই বালিশে মাথা দেবার মিনিট খানিকের মধ্যেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় প্রজ্ঞা।

ইনশাআল্লাহ…চলবে।

আসসালামু আলাইকুম।
দেরি করার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আমার মাথা ব‍্যথা আর চোখ ব‍্যাথা জন্য লেখালেখি করা সম্ভব ছিল না। ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে নিয়মিত দিব। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
জাযাকাল্লাহ্ ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here