তুমি_আমার_অধিকার ( সিজন 2),পার্টঃ8,9

তুমি_আমার_অধিকার ( সিজন 2),পার্টঃ8,9
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
পার্টঃ8

সূর্য পশ্চিমে হেলে গেছে, পাখিরা ঝাকে বেধে তাদের বাসায় ফিরছে । নিলয় এই দৃশ্য গুলো এক দৃষ্টিতে দেখছে আর ভাবছে

– সে ভাবছে অন্তী এই‌ কয়েকদিন তার সাথে ঠিক মতো কথা বলছে না ইগনোর করছে তাকে, রূঢ় ব্যবহার করছে, তার থেকে দূরে দূরে থাকছে, নিলয় কাছে গেলে রেগে যায় আর রেগে গিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করে । নিলয় অন্তীর তার সাথে এমন আচারণ করার মানে খুজে পাচ্ছে না…

অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছে অন্তীকে সে কি করেছে। কিন্তু অন্তী মুখ ফুটে কিছু বলছে না। এই তো কালকের ঘটনা

এইই একদম কাছে আসবে না তুমি

নিলয়ঃ- কেনো কি হয়েছে তোমার!
অন্তীঃ- কিছু না!
নিলয়ঃ- কিছু না মানে ( তাহলে আমার সাথে এমন করতাছো কেনো)

অন্তীঃ- এত কথা আমি বলতে পারবো না !!

নিলয় আর কিছু না বলে মনের কষ্টে চলে গেলো সেখান থেকে নিলয় চলে যাওয়াতে অন্তী কাউকে কিছু না বলে তাদের বাসায় চলে গেলো
নিলয় অবশ্যই অন্তীকে অনেক বার আনার চেষ্টা করেছে কিন্তু সে সাফ বলে দিয়েছে সে আর আসবে না !!

শেষবার নিলয় অন্তীদের বাসার সামনে বৃষ্টিতে ভিজে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে ছিলো পরে আবির এসে তাকে নিয়ে গেলো..

আবিরঃ- আরে প্যারা নিস না দোস্ত সব ঠিক হয়ে যাবে!!

নিলয়ঃ- আরে ওইদিন রাতের পর থেকে সে এমন করতাছে আমার যতটুকু খেয়াল ছিলো আমার সামনে নিরা আসছিলো তারপর আর কিছু মনে নেই সকালে উঠে দেখি আমি লেকের ধারে শুয়ে আছি !!

আবিরঃ- তুই অজ্ঞান হওয়ার আগে যেহেতু নিরা তর সামনে ছিলো তাহলে সে কিছু না কিছু করছে ??
নিলয়ঃ- সে কি করতে পারে আর !!
আবিরঃ- করতে পারে, সে অনেক কিছু করতে পারে কিন্তু সে কারাগার থেকে ছাড়া পেলো কিভাবে
নিলয় আবিরের এই কথা শুনে কিছুক্ষণ কাশলো

আবিরঃ- কিরে তর আবার কি হলো
নিলয়ঃ- কই কিছু না তো
আবিরঃ- আচ্চা চল আগে নিরাকে খুজে বের করি তারপর তার কাছ থেকে সব কিছু জানা যাবে
নিলয়ঃ গুড আইডিয়া চলল

আবির আর নিলয় চললো নিরার খোজে

এইদিকে নিরা বসে আছে এক চায়ের দোকানে, কিরে মন্টু খবর কি?

মেডাম আপনি যেমন যেমন বলে দিয়েছেন, ঠিক তেমন তেমন কাজটা করেছি! আর আপনার জন্য একটা সুসংবাদ আছে

নিরাঃ- কি সে টা

মন্টুঃ ওইখান দিয়ে আগুন লাগছে আর পাখি বাসা ছেড়ে চলে গেছে
নিরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বলে কি বলিস সত্যি
মন্টুঃ- হুম মেম তবে আর খুশি হতে হবে না, এখন মনে হয় আমাদের দৌড়াতে হবে এবং সেটা খুব জোরে

নিরাঃ- কিহ কেনো ( অবাক হয়ে )
মন্টুঃ- আপনি একবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখেন দুইজন ব্যক্তি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে

নিরা পিছনে তাকিয়ে দেখে আবির আর নিলয় তাদের দিকে দৌড়ে আসছে ! এটা দেখে নিরা কিছুটা ভয় পেয়ে মন্টুকে রেখে দৌড় দিলো নিরা পিছনে মন্টুও দিলো দৌড়

– আবির আর নিলয় পিছন থেকে চিৎকার করে নিরাকে ডাক দেয়…

এইইই নিরা দাড়াও, তুমাকে কিছু করবো না দাড়াও বলছি

কে শুনে কার কথা নিরা দৌড়াচ্চে তো দৌড়াচ্ছে, মেয়ে মানুষ যে এতো জোরে দৌড়াতে পারে মন্টুর তো বিশ্বাসই হচ্ছে না !!

গলির মোড় দিয়ে ডুকতেই শক্ত একটা কাঠের সাথে বারি খেলো মনে হয় নিরা তাল সামলাতে না পেরে নিরা পড়ে গেলো !!.

ওমা গো আমি গেলাম এটা কিসের সাথে ধাক্কা খেলাম রে
এই বলে মাথা তুললো সে, যা দেখলো তার বিশ্বাসইই হচ্ছে না নিহাদ, তার বাল্যকালের ভালোবাসা নিহাদ তার সামনে দাড়িয়ে

নিহাদও নিরাকে দেখে থমকে দাড়িয়ে রইলো চোখ গুলো দিয়ে সে কি দেখছে, এই সেইই নিরা তার ভালোবাসা কিন্তু এইভাবে যে দেখা হবে সে কল্পনা করতে পারে নি । তবে যাইইই হক দেখা তো হয়েছে ।

– নিরা মুখে ফুটে বলে উঠে তুমি তু তু মি এখানে কিভাবে

মন্টুঃ- মেডাম আর কথা বলার সময় নেই প্রাণ বাচাতে হলে দৌড়ান আগে

নিরা আর কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে আবার দৌড় শুরু করলো।

নিরা চলে যাওয়ার পর দুজন ছেলে যখন নিহাদের পাশ দিয়ে গেছে তখন নিহাদ তার কল্পনা জগত থেকে বের হয়ে দেখে নিরা তার সামনে নেই, কোথায় গেলো নিরা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কিন্তু কোথাও নেই, মিনিটে ভেনিস হয়ে গেলো নাকি

নিরা যেইদিক দিয়ে গেছে নিহাদও পিছন পিছন সেই দিক দিয়ে দৌড়াচ্ছে, কিন্তু ব্যাগ আর মালপত্র নিয়ে সে বেশি দূর যেতে পারলো না ।

নিহাদ হাপাতে হাপাতে পার্কের এক চেয়ারে বসলো। ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে সব পানি খেয়ে ফেললো নিমিষে ।

কি ভাই অনেক হাপিয়ে গেছেন মনে হচ্ছে, পাশ থেকে অপরিচিত লোকটি বলে উঠলো।

নিহাদ ওইদিকে না তাকিয়ে শুধু হুম বললো !!

এইবার লোকটা নিহাদের দিকে ঘুরে বসে বললো কোথার থেকে এসেছেন বিদেশ থেকে নাকী?

লোকটির কথা শুনে নিহাদ খুব অবাক হয়ে গেলো সে যে বিদেশ থেকে এসেছে লোকটি জানলো কিভাবে !! সে কৌতূহল স্বরে জিজ্ঞাসা করলো আমি যে বিদেশ থেকে আসলাম আপনি জানলের কিভাবে !!

লোকটি মুচকি হেসে বললো- জানি ভাই আমি

নিহাদ লোকটিকে আবার জিজ্ঞাসা করলো আপনার নাম কি জানতে পারি ??
লোকটি বললো- সেটা জেনে আপনার লাভ নেই, যেটা জানলে আপনার উপকার হবে সেটা জানুন
তো আগে বলুন কার পিছেন এতক্ষণ ছুটেছেন ??

নিহাদঃ- একটা মেয়ের পিছে ??
অপরিচিত লোকটিঃ- মেয়েটির নামটা কি জানতে পারি !!
নিহাদঃ হুম নিরা..
লোকটি চমকে বলে‌ উঠে কি নাম বললেন নিরা
নিহাদঃ- হুম কিন্তু আপনি এইভাবে চমকে উঠলেন কেনো আপনি কি তাকে চিনেন?
লোকটিঃ- হুম চিনি খুব ভালো করে চিনি কিন্তু সে কি হয় আপনার ‌‌
নিহাদঃ- তাকে আমি ভালোবাসি,আর সেও আমায় ভালোবাসে! আমরা দুজন দুজনকে বিয়ে করবো ঠিক করে রেখেছি

-নিহাদের মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনে লোকটি খুব জোরে হেসে উঠে বলে বিয়ে আপনি তাকে বিয়ে করবেন আর সেও আপনাকে বিয়ে করবে এই বলে লোকটি আবারও খুব জোরে জোরে হাসা শুরু করছে । নিহাদের এই মূহর্তে খুব বিরক্ত লাগছে লোকটিকে

আচ্ছা আপনি কাইন্ডলি তার বিষয়ে কি কি জানেন আমাকে বলবেন প্লিজ!
অপরিচিত লোকটি হাসি থামিয়ে বললো- হুম
নিহাদঃ- তাহলে বলুন আর না হেসে‌.

তারপর নিরার প্রথম থেকে সব কাহিনি নিরার যত অপকর্ম আছে লোকটি নিহাদকে বললো ।

নিহাদের তো লোকটির কথা শুনে একদম বিশ্বাস হচ্ছে না। সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । সে কি শুনছে, এতো বছরের তার লালিত ভালোবাসা এক নিমিষে শেষ এই‌ লোকটির কথা শুনে??
না না এ হতে পারে না আমার নিরা এমনটি কখনো করতে পারে না। তবে নিরাকে জিজ্ঞাসা করলে সব জানতে পারবো ।

অপরিচিত লোকটি বললো- আমার কথা বিশ্বাস করুন আর না করুন সেটা আপনার ব্যাপার তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার চেয়ে, আমরা যদি একটা সমাধান বের করতে পারি তাহলে আমি এবং আপনার ভালোবাসার মানুষটা বেচে যাবে!!

নিহাদঃ- আপনিও তাহলে আপনি কে ?? এই কথা জিজ্ঞাসা করতে লোকটা উঠে গেলো অন্ধকারে মিশে যাবে তার আগে সে বলে আমার নাম হ্দয়!! আর কালকে বিকালে ঠিক এইখানে আসবেন । কালকে দেখা হবে আমাদের খোদা হাফেজ!!

নিহাদের মনে হচ্ছে এতক্ষণে সে অন্যগ্রহে ছিলো, তবে সেটা যাইইই হক তার মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার চেয়ে বিষয়টা সমাধান করতে হবে না হলে চিরতরে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে হারাবে ?? ও

ক্লান্ত শরীর নিয়ে সে বাসার দিকে হাটা শুরু করলো

চলবে..

#তুমি_আমার_অধিকার ( সিজন 2 )
#লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
#পার্টঃ9

নিহাদের ছবি হাতে নিয়ে নিরা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ।
আসলে মানুষ পুরনো ভালোবাসা কখনো ভুলতে পারে না. নিহাদকে দেখার পর থেকে তার মনে ভালোবাসার আগুন জ্বলছে

এটা তো হওয়ার কথা না তার, এখন তো আর চাইলে সে ফিরতে পারবে না, কারণ তার পথ তো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্তীর কাছে যে পিক গুলো পাঠিয়েছে তা অধিকাংশ এডিট করা

আর অন্তীও কেমন যাচাই বাছাই না করে হুদাই বেচারাকে কষ্ট দিচ্ছে।

– এই‌ কয়েকদিন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করে অন্তী কেমন জানি শুকিয়ে গেছে, তার মনে হচ্ছে নিলয়কে এমন কষ্ট দেওয়া তার ঠিক হয় নি । পিক গুলো তো ভুয়া ফেইকই হতে পারে কারণ এই একুশ শতকে এসে সব সম্ভব তবে অজানা এক অভিমানে সে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে !!

– নিহাদ পার্কে বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে, ওই লোকটার আসার কেনো খবর দেখছে না সে, অনেক সময় পর হ্দয় আসলো

হ্দয়ঃ যাক যথা সময়ে চলে এসেছেন আমি ভাবলাম আপনি আসবেন না । আপনি তো তাহলে সত্যি নিরাকে ভালোবাসেন। ভালোবাসার মানুষকে বাচাতে মানুষ সাত সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে আসেতে পারে আর আপনি তো এইটুকু জায়গা

নিহাদঃ- বেশি বেশি বক বক না করে কাজের কথা বলুন..

হ্দয়ঃ- তা ঠিক তবে শুনুন নিরা সবচেয়ে খারাপ একটা কাজ করেছে
নিহাদ অবাক হয়ে বললো কি??

সেটা হলো সে একজনকে এসিড মেরেছে

“কিহ কি বলছেন আপনি নিরা এমন কাজ কখনো করতে পারে না..!! “”

হদয়ঃ- সে সব পারে এটাও তার দ্বারা হয়েছে

আর এটা বাস্তবায়ন করেছে হ্দয়। এই কথা শুনে হদয় পিছে তাকিয়ে দেখে নিলয় আবির মনির দাড়িয়ে আছে ।

সে উঠে দৌড় দিতে যাবে তার আগে মনির তাকে জাপটে ধরে বলে,

কোথায় যাবি সালা, অনেক ভুগিয়েছিস আমাদের এইবার চললল। হদয় করুন স্বরে বলে উঠে, আমি কিছু করিনি সব করেছে ওই নিরা সে আমাকে করতে বলেছে

চুপ সালা সে করতে বলেছে দেখে তুই‌ করবি, পাশ থেকে আবির হ্দয়কে কষে চড় মেরে কথাটা বলে।

নিহাদ দাড়িয়ে বলে উঠে, কি হচ্ছে এইসব আর আপনারা কারা

আমি নিলয়

নিলয়ের কথা শুনে চমকে উঠে নিহাদ, তারপর বলে আপনি সেইই নিলয় জাপটে ধরে নিলয়কে

আমি নিহাদ ওই যে বিদেশ থেকে আপনাকে কল করেছিলাম
উহ চিন্তে পেরেছি।

নিলয়ঃ তো বিদেশ থেকে কবে এসেছেন.
নিহাদঃ এই‌ তো কালকে ?

আবিরঃ- কিরে তুই ওনাকে চিনিস নাকি
নিলয়ঃ- হুম চিনি ওনি আমাকে অনেক সুপারিশ করেছে যেনো আমি আমার অভিযোগ তুলে অন্তীর সাজা কিছুটা মওকুফ করাতে পারি । আর আমার সুপারিশে অন্তী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে।

আবিরঃ- কি বলিস রে এতকিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছু জানতে পারলাম না

আচ্ছা নিলয় ভাই নিরা যেটা করেছে তার জন্য তার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত !!

নিলয় গম্ভীর ভাবে উঠে হুম কিন্তু সে কোথায়??
আবিরঃ- এইইই বদমায়েশকে দিয়ে নিরাকে বের করতে হবে

এর মধ্যে মনির বলে‌ উঠে ভাইজান এইই সালাকে কি করবো

নিলয়ঃ- আপতত তাকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেধে রাখো, আর ইচ্ছা হলো মারধর করতে পারো

মনিরঃ- ভাইজান আমার তো তাকে এখন লাথি দিতে ইচ্ছে করছে
আবিরঃ- দেও আর দেরি করো না

অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে মনির কষে হদয়ের পাছা বারবর লাথি মারলো । হদয় লাথি খেয়ে ও মা গো বলে চিৎকার করে উঠলো ।

আচ্ছা আবির সব ঝামেলা তো মিটছে কিন্তু আমারটার কি হবে,
আর আমি যতটুকু জেনেছি নিরা আমার ফটো সাথে কিছু একটা করেছে। আর তুইই তো জানিস অন্তী একটু বেশি ইমোশোনাল যে যেটা বলে বিশ্বাস করে ফেলে যাচাই বাচাই করে না । কি করা যায় তাকে তো আনতে হবে ?

আবিরঃ- চিন্তা করিস না আমার মাথায় একটা প্লান আছে, যেটা দিয়ে অন্তী এইখানে সুড় সুড় করে চলে আসবে তর কাছে ।

সন্ধ্যায় হয়ে যাচ্ছে হ্দয়কে খুটির সাথে বেধে রাখা হয়েছে।
আচ্ছা তর প্লানটা কি আবির।

আবির চা টা শেষ করে বলে, শুন তাহলে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here