তপ্ত ভালোবাসা #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_০২

#তপ্ত ভালোবাসা
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_০২

.
🍂
ঘুম ঘুম চোখে হাতে ব্রাশ নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরঘুর করছি আমি,, সাথে বাড়ির ডেকোরেশন ও চোখ বুলিয়ে চলছি ভাইয়া বিয়ে জন্য খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বাড়িটি,, আমাদের বাড়িটা বেশ বড় তা কিন্তুু নয়,, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের বাসিন্দা, অল্প সল্পতায় আমাদের আনন্দ বিরাজ করে,,, দু-তলা বিশিষ্ট বাড়িটি আমাদের, উপর নিচ মিলিয়ে আট বিশিষ্ট রুম রয়েছে এই বাড়িটিতে,,, ভাইয়া আমি উপরে থাকলেও মা বাবা উপরে থাকতে নারাজ তাই তারা দুজনই নিচ তালার বাসিন্দা,,, বাকি রুম গুলো অতিথিদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে,,,, তবে খাওয়া দাওয়া পর্বটা আমাদের নিচেই করতে হয়,,, মাঝে মাঝে মনে হয় আমি নিজ বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে রয়েছি, ঐ যে যখন ভাইয়া সাথে নিচে খাবার খেতে আসি তখন নিচ বাড়িতে ভাড়াটিয়া টাইপ ফিলিংস আসে,,, যায় হোক! আমাদের বাড়ির বাহিরের ছোট একটা বাগানও আছে, এতেই আমাদের খুশির ঢের পড়ে বাড়ির আঙ্গিনায়,,, আর সেই খুশি দু’হাতে মুঠোয় করিয়ে ছড়িয়ে দেয় সবার মাঝে,,, এবারও তাই হচ্ছে ভাইয়া বিয়ে নামক আমেজের মাধ্যমে,,, আত্মীয় স্বজনরা সবাই এসেছে ভাইয়া বিয়েতে,,, সবাই আনন্দে মুখরিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে সর্বাধিক থেকে, হৈঁ, হুল্লোড়, চিৎকার, চেচামেচিঁ,, মেতে আছে সবাই,,,
বড়রা কাজে, আর ছোটদের আনন্দের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে এই আন্দোলন,,,,, আর আমি ঘুম ঘুম চোখে সবাইকে এক পলকে পযবেক্ষন করে নিলাম,,,
সবাই যার যার মতো করে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে, তাই তাদেরকে তাদের মতো করে থাকতে দিয়ে ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে গেলাম ভাইয়া রুমে দিকে,,, উদ্দেশ্য ভাইয়া রুমে ফ্রেশ হবো,,, কারণ নিজ রুমের অবস্থা করুণ, আমার সব বান্ধবীরা ভীড় জমিয়েছে সেখানে,,,
তাই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে আমাকে,,, ভাইয়া রুমে আপাত কেউ থাকবে না তাই চুপিচুপি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসবো সেখান থেকে,,,, ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম ভাইয়া রুমে দিকে, বিনা বাক্য ও শব্দ বয়ে আস্তে করে দরজা খুলে ঢুকে পড়লাম ভাইয়া রুমে,,, পরে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল আবচ্ছা আচ্ছন্ন অন্ধকার রুমটি,, সাথে বেডে কেউ কাঁথা মুড়িয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে,,,

.

আমি এক পলক তাকিয়ে থেকে ভাইয়া হবে ভেবে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়,,, কারণ আমি জানি ভাইয়া ছাড়া ভাইয়ার রুমে একটা মাছিকেও আসতে দেয় না,,, তাই নিশ্চিত হয়ে ওয়াশরুমের গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,,, ফ্রেশ হয়ে ভাইয়ার রুমে আয়নার সামনে এলোমেলো চুল গুলো ছেড়ে নিজ হাতে হালকা হালকা গুঁছিয়ে নিচ্ছি, তখনি টুং শব্দ কানে আসতেই চমকে পাশ ফিরে তাকায় আমি,, ভাইয়া তখনো উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, আর ভাইয়া মোবাইলে মেসেজ আসছে সেই কখন থেকে, সে দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই,,, খেয়াল থাকবেই বা কি করে নিশ্চিত সারা রাত ভাবির সাথে প্রেমময় কথা বলে বলে পার করেছে,, তাই এখন অব্দি পরে ঘুমাচ্ছে,, আল্লাহ কি প্রেম ভাবা যায়,,,,

.
বারবার টুং টুং শব্দে কৌতূহল চোখে কঁপাল কুঁচকে এলো আমার,, এতো কিসের মেসেজ আসছে ভাইয়ার, পাঁচ সেকেন্ডও দম নিতে পারছেনা ব্যক্তিটি,,, পরে ভাবি হতে পারে ভেবে সুস্হির নিশ্বাস ফেলাম,, কারণ নিশ্চিত ভাবি কোনো প্রয়োজনে বোধের জন্য ভাইয়াকে এতো এতো মেসেজ করছে,,, তাই নিজের শত শত চিন্তা পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম বিছানার উপর ফোনটির দিকে,,,, ফোনটি ভাইয়া পাশে বালিশের নিচে হবে কারণ শব্দটি সেখানে থেকেই আসছে তাই ভাইয়ার মাথা উপর দিয়ে ঝুঁকে উপুড় হয়ে ফোনের জন্য হাত বাড়ায় আমি,,, ভাইয়া উপুড় হয়ে শুয়ে থাকায় ভাইয়া মাথা আমার পেটের নিচে, তবে কোনো রকম স্পর্শ লাগেনি ভাইয়া সাথে,,,

.
নিজের মতো করে ফোন খুঁজে চলছে আমি, কিন্তুু বারবার ব্যর্থ হতে হচ্ছে আমাকে,, এদিকে ওদিকে ফোন খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পরেছি আমি, তারপর অনাকাঙ্ক্ষিত ফোনটি অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি,, ব্যর্থ হয়ে ধুপ করে বসে পড়লাম ভাইয়া মুখে সামনে,,, চারপাশে অন্ধকার হওয়ার ভাইয়া চেহেরাটা স্পষ্ট দেখতে পারছি না আমি, আর না দেখতে চাইছি,, নিজের মতো করে আস্তে আস্তে ভাইয়া মাথার নিচের বালিশটি উঁচু করে চুপিচুপি দেখতে লাগলাম,,,

.
আমার এমন চুপচুপি কাজে নড়েচড়ে উঠে ভাইয়া, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় নড়েচড়ে আবারও আগের ন্যায় ঘুমিয়ে পড়ে,,, আমি ভীতু চোখে কিছুক্ষণ থেমে থেকে আবারও নিজের মতো করে খুঁজা ঝারি রাখি,,, অপ্রত্যাশিত ফোনটি খুঁজে না পেয়ে বিরক্তি নিয়ে নিজের মাথাটা খানিকটা উঁচু করে দেখতেই ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত একটি কাজ,,, আমার ঠোঁটের মূহুর্তের কারও ঠোঁট ছুঁয়ে গেল,,, একত্রিত হলো দুজনের ঠোঁট,,, আমি মাথা উচু করাতেই উনিও নিজের মাথা উচু করেন হয়তো। কে উনার সামনের দেখার জন্য আর তখনি ঘটে এই অত্যাশিত কাজটি,,,, আমি পাথর মূর্তির মতো ফ্রিজ হয়ে টায় জায়গায় বসে রইলাম,, এমন অপ্রত্যাশিত কাজের জন্য মনে হয় ব্যক্তিও প্রস্তুুত ছিল না, আমার সাথে সাথে ব্যক্তিটিও শকটে আছেন,,, নিজের শকট হওয়া ধাপটা কাটাতেই ব্যক্তিটাকে না দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে দৌড় দিতে যাব এমন সময় কেউ আমাকে হেঁচকা টানে বিছানায় ফেলে আমাকে ঝাপটে ধরে বিছানার সাথে,,,,

.

কিছু বুঝে উঠার আগেই, আমার সাথে এমন কাজটি ঘটায় ভড়কে যায় আমি,,, মুখ খিঁচে চোখ বন্ধ করে আছি,,, আর সাথে এটাও ভাবছি যে ভাইয়া তো আর যায় হোক আমার সাথে এমনটা করবে না,,, নিজের বোনের সাথে তো আর,,, ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি সাংঘাতিক কান্ড,,, কিন্তুু ভাইয়া রুমে যদি ভাই না থাকে তাহলে কে ছিল ব্যক্তিটি, কাকে আমি চুমু খেলাম, নিজের জীবনের প্রথম চুমু এভাবে খেয়ে নিলাম, না এই চুমু আমি মানি না,,, আমি চুমু হবে তো…..

.
বাকি কিছু চিন্তা ভাবনায় করার আগেই কেউ আমার গাল চেপে ধরে শক্ত হাতে, ব্যাথা আমার জান যায় যায় অবস্থা,,, তখনই সামনে থাকা ব্যক্তিটির কর্কশ কন্ঠ আমার কানে আসতেই চমকে উঠে সাথে সাথে সামনে দিকে তাকায় তখনই চোখে পরে রিদ খানকে,,, উনি শক্ত হাতে আমায় বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছেন,,, আমি করুন চোখে তাকাতেই উনি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,,

.
—” লিমিটেড বাহিরের কোনো কিছুই পছন্দ না আমার,,, তোকেও না,,, চিপ টাইপের মেয়েদের আমার কোনো কালেই পছন্দ নয়,,,তোর মতো মেয়েদের আমি জাস্ট ঘৃণা করি অন্যকিছু নয়,,, আমার থেকে দূরে থাকবে নয়তো শরীরে আগুন ধরিয়ে দিব,,, (রেগে চোখ মুখ শক্ত করে)

.

উনার এমন কথায় আমি মূহুর্তেই বাক রুদ্ধ হয়ে গেলাম,,, কি এমন করেছি আমি যাতে উনি আমাকে এতোটা খারাপ দৃষ্টিতে দেখছেন, আর আজ যেটা হয়েছে সেটা আমি ইচ্ছে করে করেনি, সেটা এমনি এমনি হঠাৎ করে হয়ে গেছে,,, তাই বলে উনি আমাকে এইভাবে বলবেন,,,, উনার কথায় আমি করুন কন্ঠে বলে উঠি,,,,
.

—” আপনি আমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার কেন করছেন,,, কিছুক্ষণ আগে যেটা হয়েছে সেটা আমি ইচ্ছে করে করেনি। আমি তো ভাইয়া ফোন খুঁজতে এসে এটা হয়ে গেছে,,,, (টলমলে চোখে)

.

আমার এমন কথায় উনি আরও খানিকটা এগিয়ে এসে আমার দিকে ঝুকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গালে থাকা হাতটা সরিয়ে নেয় আস্তে করে,,, পরে কিছু একটা ভেবে সাথে সাথে আমার গলা চেপে ধরে শক্ত হাতে পরে রাগে রি রি করতে করতে বলে উঠে,,,,,

.

—” তোর লিমিটেড বাহিরে আমি বাজে, কতটা ভয়াবহ আমি তা তোর চিন্তা ভাবনায় বাহিরে,,, তাই নিজেকে বার বার আমার সামনে প্রেজেন্ট করাটা বন্ধ কর,,, আমাকে ধ্বংশ লীলায় মেতে উঠতে বাধ্য করিস না,,, এতে তুইও বাঁচবি সাথে তোর আশেপাশে আপন জনও,,, তোর মতো মিডেল ক্লাস থেকে বিলং করি না আমি। তাই ভদ্র থেকে অভদ্রতায় খেলটায় করে আমার মাঝে বেশি,,,, তোদের মতো এক ঢুক পানি খেতে সারাদিন ভেবে সময় পার হয় না আমার। সমাজ, সোসাইটির চিন্তাও নেই। তাই আমাকে আমার মতো করে থাকতে দে, আর নিজের পঁচা শরীরটা নিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে ঘুরে বেড়া,,,

.

কথাগুলো বলে আমাকে ছেড়ে উঠে পড়েন বিছানা থেকে,,, আমার দিকে না তাকিয়ে দ্রুততার সঙ্গে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়,,, আর আমি বিছানায় শুয়ে নীরবে চোখের পানি বিসর্জন করছি,, আর ভাবছি, কি এমন করেছি, যার কারণে উনি এত বাজে ব্যবহার করছেন আমার সাথে,,, কিসের এত রাগ ঝাড়লেন উনি আমার উপর,, আমি তো আগে কখনোই দেখিনি উনাকে না কখনো সামনে গিয়েছি উনার,,, তাহলে কেন উনি আমাকে বারবার বলছেন উনার সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট না করতে,,

দুঃখ-কষ্টে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলাম আমি। দু’হাতে নিজের চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে পড়লাম উদ্দেশ্যে নিজের রুমে যাবো। আর পিছনে ফেলে যাব অসভ্য বাজে লোকটাকে। আর যাই কিছু হোক না কেন? এই রুমে যা হয়েছে কাউকে বলা যাবে না, এতে করে ভাইয়ার বিয়ের ও চাকরিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে,,, তাই আমার চুপ থাকায় শ্রেয়,,,, আর সবচেয়ে বড় কথা আমি এই খারাপ লোকের সামনে যাব না আজকে,,, ভালোয় ভালোয় ভাইয়ার বিয়েটা মিটে গেলে উনাকেও আর দেখতে হবে না আমার,,, এমন সব চিন্তা ভাবনায় মনো স্থির করে যেতে লাগলাম নিজের রুমের দিকে,,,, আর পিছনে ফেলে গেলাম রিদ নামক গুন্ডাটাকে,,,,

গল্পের পেইজ লিংক
https://www.facebook.com/profile.php?id=100069402592136
.
চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here