ঝগড়া,১ম পর্ব
বিন্দু মালীনি
ঠাস করে গালের মধ্যে থাপ্পড় টা খাওয়ার সাথে সাথে গালে হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখি আমার সামনে রণ দাঁড়িয়ে।বিয়ের কনে সেজে বসে আছি আমি স্টেজে।আর সেই মুহূর্তে এমন একটা ঘটনা কল্পনা করা যায়?
কল্পনা না করা গেলেও বাস্তবে যে হয়েই গেছে।
রণ আর আমি দুজন দুজনকে পাগলের মত ভালবাসি।পাগলের মত এই জন্য বললাম যে,আমার মনে হতো ওকে না পেলে আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো।
আর ও নিজেও নাকি সেরকম ই ফীল করতো।
দুজন দুজনকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝতাম না আমরা।
সেইম এজের রিলেশন আমাদের।
রণ আমার এক মাসের বড় আর আমি ওর এক মাসের ছোট।
আমি ওর এক মাসের ছোট হলেও,ওকে দেখতেই লাগে আমার থেকে ছোট।আর আমাকে লাগে ওর থেকে বড়।
কারণ ও হলো হ্যাংলা পাতলা,আর আমি গলুমলু।
আমি ওকে সব সময় প্রশ্ন করতাম,ওই বলোনা,আমাদের মানাবে তো?
ও উত্তর দিতো,
আরে এত চিন্তা করো কেন?বিয়ের পর তো আর তোমার প্যারা এত থাকবেনা,তখন না হয় খেয়ে দেয়ে আমিও তোমার মত গলুমলু হয়ে যাবো।
-কি?আমি প্যারা দেই?
-না না,ভালবাসা দাও।
প্যারা তো আমি দেই।
সারাটা দিন আমাদের ঝগড়া লেগেই থাকতো।
দশ মিনিট কথা বললে ৬ মিনিট হতো ঝগড়া,আর ৪ মিনিট হতো নরমালি কথা।
বান্ধবীরা সবাই বলতো,এই সম্পর্ক টা বেশি দিন টিকবেনা দেখিস।
সেইম এজের রিলেশন গুলা টিকেনা।
এই সব সম্পর্কে ভালবাসা থাকেনা।যা থাকে সেটা হচ্ছে আবেগ।আর আবেগ কেটে যাবার সাথে সাথে সব ভূত পালাবে।
কিন্তু আমরা জানতাম,আমরা দুজন দুজনকে কতটা ভালবাসি।
আর আবেগ আছে ঠিকই আমাদে মাঝে,তবে আবেগের থেকে ভালবাসা টা যথেষ্ট বেশিই আছে।
আমি জানতাম ও আমাকে খুব ভালবাসে,
আর খুব বিশ্বাসও করতাম আমি ওকে।
কিন্তু সমস্যা হলো,
ও কোন মেয়ের সাথে কথা বলবে এটা আমি মানতে পারতাম না।
হোক সেটা ফ্রেন্ড বা অন্য কেউ।
ফেসবুকে ও সব সময় পিক আপলোড করতো।
আর সেই পিকে ঝাঁপিয়া পড়তো মেয়েরা লাভ রিয়েক্ট দিতে।
যা আমার একদম ভালো লাগতোনা।কোন মেয়ের কমেন্ট পর্যন্ত আমি সহ্য করতে পারতাম না ওর পিকে।
মেয়েরা কমেন্ট করলে বা লাভ রিয়েক্ট দিলেও আমি রেগে গিয়ে ওকে নক দিয়ে গালি দিতাম।
আর বলতাম,ওই মেয়ে তোর কি হয় হ্যাঁ?
ও কেন লাভ রিয়েক্ট দিলো তোর পিকে?
কেন কমেন্ট করলো?
কেন বল্লো সুন্দর।
তুই এখনি ওই মেয়েকে ব্লক করবি।
আর আমি যেন কোন দিন আর দেখি না ওই মেয়ে তোকে আর কমেন্ট করে বা তোর পিকে লাভ রিয়েক্ট দেয়।
আমার মাথায় আগুন ধরে যেতো।
মেয়েদের যখন দেখতাম ওর আশেপাশে।
রণকে আমি কয়েক বার নিষেধ করেছি তুমি পিক আপ্লোড করবানা।
তুমি স্টোরিতে কোন পিক দিবানা।
আমার মনে ভয় হতো,
কমেন্ট তো দেখি তবুও আমি।
স্টোরিতে পিক আপ দিলে ওখানে মেয়েরা রিপ্লাই করলে,মেসেজ দিলে তা তো আমি আর দেখবোনা।
আর তখন যদি দুজন কথা বলতে বলতে গভীর সম্পর্কে চলে যায়।
এই ভয় টা আমি পেতাম সব সময়।
আমি রণকে বিশ্বাস করি।
কিন্তু ভয় টাকে যে আরো বেশি ভয় করি।
ওকে হারানোর ভয় টা আমাকে রাগান্বিত করে দিতো।পাগল করে দিতো।
আমি ওকে না করার পরও ও স্টোরিতে পিক দিতো।
আমি না করার পরও আইডিতে পিক আপলোড করতো।
আর এই নিয়ে শুরু হতো আমাদের ঝগড়া।
ও ভাবতো আমি ওকে সন্দেহ করি।
আর আমি পেতাম ওকে হারানোর ভয়।
এভাবে একটা সময় আমাদের মাঝে ঝগড়া আর ভুল বুঝাবুঝির শুরু হয়।
ঝগড়া হলেই আমি আমার ফেসবুক আইডি ডি এক্টিভ করে চলে যেতাম অন্য আইডিতে।
যাতে ও আমাকে খুঁজে না পায়।আর আমি ওকে ঠিকই দেখতে পারি।
কিন্তু সমস্যা আরো বেড়ে যেতো।
কারণ ও ভুল ভাল মেয়েদের আইডিকে ভাবতো আমার আইডি।
মেয়ে গুলো অন্য ছেলেদের পোস্টে গিয়ে পিকে গিয়ে কমেন্ট করে আলাপ শুরু করতো।আর রণ ভাবতো আমিই বুঝি ওই মেয়ে,আমি বুঝি ওই মেয়ে।
আমার রাগ কমলে যখন আমি আমার মেইন আইডিতে চলে আসতাম।
তখন আরো বেশি হতো ঝগড়া।
কারণ ও বলতো ওই আইডি গুলা আমার।
আমি বলতাম,
না।ওই আইডি গুলো আমার না।
আমি যতই বুঝাতাম,আমি না ওই মেয়ে।
ও বলতো,তোর লিখা কি আমি চিনিনা?
তোর করা পোস্ট কি আমি চিনবোনা ভেবেছিস?
ও ভাবতো ওই মেয়েদের করা উলটস পালটা পোস্ট গুলোও আমি করি।
লেগে যেতো ফাইট।
-তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা?
-না করিনা।
-তুমি বিশ্বাস করোনা ওই আইডি গুলো আমার না?
-না করিনা।
-কেমন ভালবাসো যে বিশ্বাস ই করোনা আমায়।
-তুই কেমন ভালবাসিস যে আমাকে অন্য মেয়েদের নিয়ে সন্দেহ করিস?
এই ফেসবুক নামক ছোট্ট বিষয় টা নিয়েই আমাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হতো।ঝগড়া হতো।যেমন ছিলো ওর রাগ।তেমন ছিলো আমার রাগ।
রিলেশন কত বার যে ব্রেকাপ হতো আর জোড়া লাগতো তার হিসেবও নেই।
ঝগড়া ছিলো আমাদের ডেইলি রুটিন।
কিন্তু একটা সময় এই ছোট ছোট ভুল বুঝাবুঝি,ছোট ছোট ঝগড়া গুলোই বড় আকার ধারণ করে।
আর আমরা আলাদা হয়ে যাই।
বাবা মায়ের পছন্দ করা পাত্র কে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে যাই আমি।
যেই ছেলে আমাকেই চিনেনা,অন্য মেয়েদেরকে ভাবে আমি।
আর আমার কথা বিশ্বাসই করেনা।এমন কি আমাকেই বিশ্বাস করেনা।তার জন্য কষ্ট পেয়েই বা কি হবে?
এই কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই আমি বিয়ের পিড়িতে বসি।
আর আমার বিয়ের দিনই ঘটে এই ঘটনা।
আমি কনের সাজে সেজে গুজে বসে আছি।
আর রণ এসেই ঠাস করে আমার গাল বরাবর বসিয়ে দেয় এক চর।
চারিদিক লোকজনে ভরা।
আমি গালে হাত দিয়ে রণর দিকে তাকাতেই
রণ আমাকে বলে,
_তুই কি আমার সাথে ভালোয় ভালোয় লক্ষী মেয়ের মত একাই যাবি?
নাকি আরেক কানের নিচে আরেকটা দিয়ে তোকে টানতে টানতে গরুর মত নিয়ে যাবো?
চলবে?