ঘৃণার মেরিন season : 2,part : 11,12

ঘৃণার মেরিন season : 2,part : 11,12
writer : Mohona
part : 11

নীড় মেরিনের ঠোট জোরা দখল করে নিলো। মেরিন অবাক হলেও আর কিছু না ভেবে নীড়ের সাথে তাল মেলাতে লাগলো।

একটুপর…
নীড় মেরিনকে ছারলো। মেরিন এখনও চোখ বন্ধ করে আছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে। নাকটা লাল হয়ে গেছে। পাপড়ি গুলোও ভিজে আছে। ঠোট ২টাও কাপছে। খুব কষ্ট হচ্ছে মেরিনের চোখে পানি দেখে।
নীড় হাত দিয়ে মেরিনের চোখের পানি মুছে দিলো।

নীড় : মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ঘুমিয়ে পরো।
মেরিন চোখ মেলল। হাত দিয়ে পানি মোছাটা মেরিনের পছন্দ হয়নি।
মেরিন উঠে বসলো।
নীড় : কি হলো?
মেরিন : না কিছুনা। আপনি ঘুমান।
বলেই মেরিন washroom এ গেলো। fresh হয়ে change করে এলো।

.

নীড় : change করলে যে?
মেরিন: হ্যা একটু কাজ আছে।
বলেই গাড়ির চাবিটা হাতে নিলো।
নীড় : এতো রাতে কিসের কাজ? চাবি রাখো। আর চুপচাপ ঘুমাও।
মেরিন : আরে ঘুমালে হবেনা। আমার যেতে হবে ।
নীড় : না। কোথাও যাবোনা। না মানে না।
মেরিন : আজব তো…
দেখি সরুন তো…
নীড় :মেজাজ খারাপ কোরো না তো।
মেরিন নীড়ের গলা জরিয়ে বলল: কেন গো জান ? যেতে দিতে চান না কেন হামম? মতলব টা কি? 😏।
নীড় : অনেক কিছু। চাবি রাখো। কিছু হলেই চাবি নিয়ে বের হও কেন?
মেরিন: ভাগ্য পরীক্ষা করতে।
নীড়: মানে?
মেরিন: কিছুনা। সরুন।
নীড়: না মানে না।
মেরিন : আমি যখন বলেছি যে আমি যাবো তখন তো যাবোই ।
নীড় : আমিও যখন বলেছি যে যেতে দিবো না তখন দিবোনা।
মেরিন : আচ্ছা আপনার কি আমার কোনো কথাই ভালো লাগেনা?
নীড় : না।
বলেই নীড় মেরিনের হাত থেকে চাবিটা নিয়ে ছুরে মারলো।
এরপর কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো।
নীড় : দেখো ওই সাগরটা কে ঢেউয়ের পর ঢেউ আসতেই থাকে সাগরের বুকে। কিন্তু ১বার না ১বার তাকেও স্থির হতে হয়… মানুষের জীবনটাও এমন উথাল পাতাল যতোই থাকুক না কেন স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করেই। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তুমি আমি আমরা কেউই প্রকৃতির বাইরে না।
মেরিন ওর সেই হাসি দিয়েই
বলল: কখনো কি দেখেছেন যে বন্যা হয়েছে অথচ কোনো ক্ষতিই হয়নি? চুল পরিমান ক্ষতি হলেও হয়। আমি বন্যা। স্থিরতা আমার বৈশিষ্ট্য না। ধংব্স করাই আমার বৈশিষ্ট্য। নোংরা আবর্জনায় আমি ভরপুর। যদি লাগাতার মাত্র ২টা বন্যাতেই কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় তবে ৩য় বছরেই বন্যা আর আতংক থাকবেনা। কিন্তু কথাটা সেটা না…
মেরিন বন্যার আতংকটা কমে গেলে খান সম্রাজ্ঞ হেলে পরবে।
তবে কথাটা হলো এই যে আপনি আমাকে এই উপদেশ বানী শোনাচ্ছেন কেন?
নীড় : বাস্তবতাকে এরিয়ে যেতে চাইছো?
মেরিন : বাস্তবতাকে এরিয়ে চললে এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না….
বলুন তো, যদি দুর্বল হতাম আপনাকে পেতাম? কতোবার ভালোমতো বলেছি ভালোবাসতে? বেসেছেন? request করেছি …. accept করেছেন?
নীড় : দেখো তুমি যে সময় আমাকে propose করেছো তখন তোমাকে accept কিভাবে করতাম বলো তো? আমি অন্যকারো ছিলাম। ভালোবাসতাম নীরাকে। ভীষন…
মেরিন: আর আমাকে ঘৃণা….
আচ্ছা নীড় বুকে হাত রেখে ১টা কথা বলবেন?
নীড় : পারবোনা।
মেরিন নীড়ের হাত নীড়ের বুকে রেখে
বলল : সত্যি করে বলুন তো যদি আমি মরে যাই আপনি আমাকে কাধে করে গোরস্থানে নিয়ে যাবেন তো? আমাকে আপনার হাতের মাটি দিবেন তো? কান্না করে নাই দিলেন…. হাসতে হাসতে দিবেন তো?
কথাটা শুনে নীড়ের বুক কেপে উঠলো। নীড় মেরিনকে বসিয়ে উঠে গেলো।

.

নীড় : তোমার ফালতু কথা গুলো শুনলে না আমার গা জ্বলে যায়। রাত দুপুরে ঢং করতে আসছে।
মেরিন পেছন থেকে নীড়ের কলার ধরে সামনে এনে
বলল : আমি বলেছিলাম আমার ঢং দেখতে আসুন? গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন। আর নীরার স্বপ্ন দেখুন।।বলেই নীড়ের কানে ১টা কামড় দিলো। এরপর ঘাড়ে ১টা কিস করে ছেরে দিলো।
মেরিন : জান…. যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন… আর আমার কথা ভাবতে হবেনা। আমি আমার খেয়াল রাখতে পারি। আর ঘুম? ১দিন না ঘুমালে আমি মরবো না। কই মাছের জান আমার । যান….

নীড় চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছে।
মেরিন : দেখুন বাইরেও যেতে দিলেন না আবার বারান্দায়ও থাকতে দিবেন না। কাহিনি কি বলুন তো?
নীড় : কাহিনি হলো এই যে আমি দুর্বল মেরিনকে দেখতে চাই… মেরিনের কান্না দেখতে চাই… happy ? 😒…
মেরিন হা হা করে হেসে উঠলো।
মেরিন : sorry গো। আপনার এই wish টা পূরন করতে পারলাম না। bye….
মেরিন নীড়কে ঠেলেঠুলে রুমে পাঠালো।

.

মেরিন : যখন কল্পনা আর বাস্তবতার দেয়াল ভেঙে যায় তখন সেটাই হয় নিখুত অভিনয় না হয় প্রকৃত ভালোবাসা। আপনার কোনটা?
রবি ঠাকুর মানবের মাঝে বাচিতে চান। আর আমি? 😏।

মরিতে চাইনা আমি সুন্দর ভুবনে …
ঘৃণার মাঝে আমি বাচিবার চাই…

কবিতাটার ২লাইন বলেই মেরিন হা হা করে হাসতে লাগলো।
ওর অট্ট হাসির আড়ালে থাকা হৃদয় ভাঙা চিৎকার নীড় ঠিকই শুনতে পেলো। নীড় এসে ওর কাধে হাত রাখলো। মেরিন ঘুড়ে নীড়কে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
ধরে কাদতে লাগলো।

মেরিন : নীড় আমাকে কখনো ছেরে যাবেন না please ….
আমি পারবোনা আপনাকে ছারতে। কখনো পারবোনা।

বলেই নীড়ের সারা মুখে পাগলের মতো কিস করতে লাগলো। এরপর আবার নীড়কে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলো। নীড় মেরিনের মাথাটা তুলে কপালে চুমু দিলো। মেরিন নীড়ের চোখের দিকে তাকালো। মেরিনের চোখ-নাক লাল হয়ে আছে। মুখ বুজে নিরবে কান্না করছে। যার জন্য ঠোটটাও কাপছে। মেরিনের চোখ ২টা অস্বাভাবিক সুন্দর। গভীর। ওই চোখে নীড়ের জন্য যেমন অঢেল ভালোবাসা আছে তেমনি আছে হাহাকার। যেমন মায়া ভরা তেমন আছে কষ্ট।
এই প্রথম নীড় মেরিনকে এতো গভীরভাবে দেখছে। মেরিন আসলেই অনেক সুন্দরি।
মেরিন : ছছছারুন…
বলেই মেরিন নীড়কে ছেরে দিলো। কিন্তু মেরিন খেয়াল করলো যে নীড় ওকে ধরে রেখেছে । নীড় মেরিনের চোখের পানি ঠোট দিয়ে শুষে নিলো। মেরিন তো মহাঅবাক। নীড় মেরিনকে কোলে তুলে নিলো।
মেরিন সাংঘাতিক অবাক হলো।
মেরিন : নননীড়, ন…
নীড় মেরিনকে কথা বলতে না দিয়ে নীড় মেরিনের ঠোট দখল করে নিলো।

.

সকালে….
নীড়ের ঘুম ভাঙলো। ঘুম ভাঙতেই নীড় মেরিনকে পেলো। মেরিনের গালে, চোখের কোনে পানির নিশান রয়ে গেছে। নীড় মেরিনের কপালে কিস করলো। তখনই ওর রাতের কথা মনে পরলো। কি করে ফেলেছে ও? মেরিনকে বুক থেকে নামিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। মেরিনের ঘুম ভেঙে গেলো। নীড় খেয়াল করলো না।
নীড় : ছিঃ ছিঃ ,,, নিজের ভালোবাসার সাথে এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা কিভাবে করলাম?
মেরিন নীড়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারলো যে নীড়ের মধ্যে অনুতাপ-অপরাধবোধ কাজ করছে। মেরিন জানতো এমনই কিছু হবে। তাই ও নীড়কে বাধা দিচ্ছিলো ।

মেরিন মুচকি হাসি দিয়ে নীড়কে টেনে ওর বুকে আবার শুয়ে পরলো। নীড়ের নিজের ওপর রাগ হচ্ছে।
নীড় : কি করছো টা কি?
মেরিন : ঘুমাচ্ছি। আজকে ১টা জিনিসের প্রমান পেলাম।
নীড়: …
মেরিন : মেয়েদের চোখের পানিতে ছেলেরা দুর্বল হয়।
নীড় : মানে?
মেরিন : একটু চোখের জ্বল আর কথা emotional … ব্যাস নীড় পেয়ে গেলাম…
নীড় : !!!!
মেরিন কিছু না বলে washroomএ গেলো । নীড় কিছুই বুঝলোনা।

.

একটুপর…
মেরিন বের হলো। নীড় মেরিনের দিকে তাকালো । ভীষন সুন্দর লাগছে।
মেরিন : এই যে hello…. আমায় নিয়ে অতো গবেষনা না করে যান fresh হয়ে নিন। আমি breakfast বানিয়ে নিচ্ছি।
নীড় : তুমি তখন কি বললে?
মেরিন: ভীষন ক্ষুধা লেগেছে খেয়ে তারপর বলবো ।
নীড় fresh হতে গেলো।

.

মেরিন: এই মুহুর্তে আমার আপনার ঘৃণার ভীষন প্রয়োজন। কারন এখন আপনি আমাকে ঘৃণা না করলে নীরাকে ভালোবাসতে পারবেননা। আর আপনি নীরাকে ভালোনাবাসলে নীরার plan successfull হবে কি করে? আমি নীরার game plan জানবো কি করে….
তাই আপাদত আমার ঘৃণাটাই আমি চাই…..

.

নাস্তা করার পর….
নীড় : এখন তো বলবা?
মেরিন : কি?
নীড় : তখন ওই কথাটা বললা কেন?
মেরিন: ও…. ওই কথা? আসলে আপনি ভীষন ভালো মানুষ। এতো ভালো মানুষ বলেই বারবার ঠকে যান। নীরা ঠকায়, সবাই ঠকায় । তাই এবার আমিও ঠকালাম। you are such an emotional fool…
নীড়: মানে?
মেরিন গিয়ে নীড়ের কোলে বসলো। নীড়ের চুল ঠিক করতে করতে
বলল : তারআগে বলুন কালকে যখন ভালোভাবে ভালোবাসতে বললাম বাসলেন না কেন? হামম?
নীড় : তোমার কথা কিছু বুঝিনা।
মেরিন : হাহাহাহাহা…. কালকে যদি একবার বলাতেই রাজী হতেন তাহলে আমার আর এতো কষ্ট করে অশ্রুবিসর্জন দিতে হতো না। আপনাকে emotional blackmail করতে হতো না।
নীড় : clearly বলবা?
মেরিন : মানে খুব সহজ…. আপনার ভালোগিরির একটু সুযোগ আমিও নিলাম।
emotion টা কমান। মেরিন বন্যার নীড় এতো দুর্বল হৃদয়ের হলে চলে?
নীড় : তুমি কি পাগল? কি বলো কি?
মেরিন : হামম। only for you…
মেরিন নীড়ের কোল থেকে উঠে কাজ করতে করতে
বলল: একটু অশ্রুবিসর্জন যদি নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন অর্জন হয় আর ক…..
মেরিন কথা শেষ করার আগেই নীড় ঠাস করে মেরিনকে থাপ্পর মারলে।
নীড় : তুমি আসলেই ঘৃণার যোগ্য। তোমাকে ভালোবাসা যায়না।
বলেই নীড় চলে গেলো। গেলো।

.

নীড় : ফাজিল মেয়ে…. কি মনে করে নিজেকে? আমি আসল নকল বুঝিনা? মনে করে সবার সামনে যেমন নিজের emotion লুকিয়ে রাখে মনে করে আমার কাছেও তেমনি পারবে… ১টা থাপ্পর দেয়া ঠিক হয়নি। ১০-১২টা দিলে ভালো হতো। বেয়াদব। মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।

.

রাতে…
নীড় বাসায় ফিরলো। দেখলো বাসা অন্ধকার।
নীড় : মেরিন…. মেরিন…
কোনো সারা পেলোনা। লাইট অন করলো। দেখলো মেরিনকে যখন থাপ্পর মেরেছিলো তখন যেভাবে যেই পসিশনে ছিলো এখনও ওই একইভাবে আছে। নীড় অনেক অবাক হলো।
নীড় আগে বারতে লাগলো। তখন দেখলো মেঝেতে রক্ত ভরা। নীড়ের বুকটা কেপে উঠলো।
নীড় ধীর পায়ে মেরিনের কাছে এগিয়ে গেলো। মেরিনকে ছুতে ওর সাহস হচ্ছেনা। কাপা কাপা হাতে মেরিনের গায়ে হাত দিলো। ঠান্ডা হয়ে গেছে।
নীড় : মমমেরিন…. মমমমেরিন.. এই মমমেরিন… ঘোরো…
নীড় মেরিনকে নিজের দিকে ঘোরালো।
দেখলো কপাল কেটে রক্ত বের হতে হতে থেমে গেছে।
নীড় ; মমমেরিন… মেরিন…. মেরিন… 🔊🔊🔊

.

হসপিটালে…
নীড় মেরিনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। ওর শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছে। ডক্টর বলেছে যদি ১২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফেরে তাহলে মেরিন কোমায় চলে যাবে।
নীড়ের চোখ দিয়ে পানি পরছে। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করছে মেরিনের জন্য। নীড় কখনো ভাবেনি যে ও মেরিনের জন্য দোয়া করবে। কিছুক্ষন পরে মেরিনের জ্ঞান ফিরলো। আর জ্ঞান ফেরার পরই মেরিন নীড়ের নাম নিলো। নীড় কিছুতেই ভেবে পায়না যে মেয়েটা ওকে এতো ভালোবাসে কেন?

.

২দিনপর…
নীড় ফোনে কথা বলে ভেতরে এসে দেখে মেরিন রেডি হচ্ছে। নীড় অবাক হলো।
নীড় : কোথায় যাচ্ছো?
মেরিন : ব্যাংকক….
নীড় : what? এই শরীরে?
মেরিন : হামম। আপনার সমস্যা?

চলবে…
ঘৃণার মেরিন
part : 12
season : 2
writer : Mohona

.

মেরিন: হামম। আপনার সমস্যা?
নীড় : হ্যা সমস্যা। তুমি এখন কোথাও যাবেনা।
মেরিন: দেখুন আপনার সাথে ফালতু বকবক করার সময় আমার নেই। আমি যাবোই।
নীড় : ১টা থাপ্পর দিবো । চুপচাপ বেডে শুয়ে পরো।
মেরিন : এখানে কোনো কাচের কোনা নেই যার ওপর আপনি আমাকে থাপ্পর মেরে ফেলবেন। কপাল কাটবেন…
নীড় : দেখে মেরিন … বসো…
মেরিন : don’t touch …
নীড় খানিকটা অবাক হলো।

.

নীড়: দেখি বসো …
মেরিন: বসার সময় নেই। i have to go right now…
নীড় মেরিনের হাত ধরে টেনে বসালো।
এরপর গালে হাত দিয়ে
বলল: কোথাও যাবেনা তুমি… আমি যেতে দিবোনা।
মেরিন নীড়ের কপালে কিস করে
বলল: আমিও আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।
নীড় : ১০০বার বাধ্য । কারন আমি তোমার স্বামী।
মেরিন: স্বামী? 🤣🤣। আগেই বলেছি আমাকে সেদিনই বাধা দেবেন যেদিন অধিকার নিয়ে বলবেন…
নীড় : আলাদা করে অধিকারবোধের দরকার নেই…. তুমি আমার বিয়ে করার বউ। ১বার যখন আমি না করেছি তখন যাবে না।
মেরিন নীড়ের কোলে বসে ওর মুখে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে
বলল: মেরিনকে আটকাতে পারে একমাত্র নীড়… কিন্তু যদি চোখে ভালোবাসা আর কন্ঠে অধিকার থাকে…. আমি যখন বলেছি যে আমি যাবো তখন তো যাবোই।
নীড় : পারলে যাও….
মেরিন : আপনি আমাকে আটকাতে চান? মন থেকে? আপনি কি আটকাবেন? আমি তো এমনিতেই নীড়ে আটকে গেছি… নয়কি….
বলেই নীড়ের ঠোট জোরা দখল করে নিলো। নীড় অবাক হলো। তবুও মেরিনকে বাহুডোরে আটকে নিলো।
মেরিন খুব সাবধানে নীড়ের ঘাড়ে ১টা injection দিয়ে দিলো। নীড় বুঝতেও পারলোনা। নীড় মনের অজান্তেই মেরিনের ঠোট ছেরে ধীরে ধীরো গলায় মুখ গুজে দিলো। মেরিনের গলায় কিস করতে করতে নীড় অজ্ঞান হয় গেলো। মেরিন নীড়কে বেডে শুইয়ে দিলো।

মেরিন : এখন আমার যেতেই হবে নীড় sorry… আপনার ভালোবাসা আমি এখন নিতে পারলাম না….

.

৪ঘন্টাপর…
নীড়ের জ্ঞান ফিরলো। দেখলো ও ওর রুমে। মানে ঢাকায়। তারাহুরা করে উঠে বসলো।
নীড় : আমি এখান?
তখন দেখলো ওর হাতের মুঠোয় ১টা চিঠি।
চিঠিতে লেখা : আপনার বাধা মানতে পারলাম না আর না আপনার আবেগে ভাসা ভালোবাসা নিতে পারলাম….
কারন আমি #ঘৃণার_মেরিন ।
যে ভালোবাসার অযোগ্য।
নীড় : এই মেয়েকে কখনোই আমি বুঝতে পারবোনা। তুমি কেন এতো অজানা….

.

তপু : আমাকে এখানে তুলে নিয়ে এলে?
মেরিন : শুনলাম কবির ফয়সাল খানের লিভার ড্যামেজ হয়ে গেছে। আর কোথাও তার ম্যাচিং ব্লাডের লিভার পাওয়া যাচ্ছেনা ।
তপু : কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা সেটা না… সেতু আন্টি আর নীরার মিলেছে।
মেরিন : কিন্তু ওরা দিবেনা।
তপু: হামম। এখন তো তোমার নজর পরেছে তার ওপর। তার বাচা এখন অসম্ভব। আর এটা বলতেই তুমি আমাকে এনেছো?
মেরিন ওর হাসিটা দিয়ে
বলল : ভুল… কবির ফয়সাল খানের এখনো মরার সময় হয়নি। এখন আমি উনাকে মরতে দিতে পারিনা । আল্লাহ যেন উনাকে এখন না নেয়। এখন যদি কবির ফয়সাল খান মরে যায় তবে আমার আম্মুর সত্য না জেনেই সে মরবে। তাকে আমার আম্মুর সত্য জেনে মরতে হবে।
তপু: বুঝলাম না।
মেরিন : আমি কবির ফয়সাল খানকে আমার অর্ধেক লিভার দিবো।
তপু: what?
মেরিন : হামম।
তপু: তুমি দিবে?
মেরিন : হ্যা…
তপু : সত্যি ভালোলাগলো। যে তুমি ….
মেরিন : ঘৃণা করি… আমি কবির ফয়সাল খান কে এখন বাচতে হবে।
তপু: মানে?
মেরিন : মানে তোমাকে বুঝতে হবে না। তোমার কাজ just surgery করা তো করো। আর মুখ বন্ধ রাখবে যে আমি দিয়েছি। বিনিময়ে ৫০লাখ পাবে। চাইলে আরো বেশি দিবো।
তপু: না কোনো লাগবেনা। তবে তুমি কি নিজের ভালো দিক লুকাতে চাইছো?
মেরিন হাহা করে হেসে উঠলো।
বলল : তপুদা…. বন্যার পানি দেখেছো? সেখানে নোংরা ভরা থাকে। সেই পানি থেকে পবি….ত্র পানি বের করা যেমন বেকার তেমনি মেরিনের মধ্যেও ভালো কিছু খোজা বেকার। মেরিনের মাঝে ভালো কিছু নেই। সময় এলে কবির ফয়সাল খানকে আমি নিজে জানাবো। ওনাকে জীবন ভিক্ষা দিয়েছি সেটা তার জানতে হবেতো। উনি যে আমার ভিক্ষার জীবন নিয়ে বেচে আছেন সেটা জানাবো না?
যখন জানতে পারবেন তখন না বাচতে পারবে না মরতে পারবে। তার সকল দাম্ভিকতা মাটির সাথে মিশে যাবে। আর হ্যা ভুলেও যেন কেউ টের না পায় যে আমি লিভার দিয়েছি।
তপু : হামম।
মেরিন : জন…
জন: ম্যাম…
মেরিন : তপুদা কে পৌছে দিয়ে আসো।
জন: জী ম্যাম….
ওরা চলে গেলো।

.

পরদিন…
হসপিটালে….
কবির ঘুমিয়ে আছে। মেরিন ওর রুমে ঢুকলো।
মেরিন : কবির কবির কবির….
সে আমার ছোট বোন বড় আদড়ের ছোট বোন…
কিন্তু সে আমাকে লিভার দিলোনা…. so sad….
আদরের ভাগনিও দিলোনা। আহারে…. কি দুঃখ নিঃসঙ্গ জীবন….. so sad… কেউ নেই জীবনে। এমন জীবনের থেকে মরে যাওয়া ভালো। কিন্তু তার অনাদরের মেয়ে তো তাকে যে মরতে দেবেনা…. কারন তার মেয়ে সবার জন্য শাস্তি নির্ধারন করেছে কিন্তু আপনার জন্য তো করেনি। আমার মায়ের প্রতি ঘৃণা নিয়ে আমি আপনাকে মরতে দিবোনা। আপনি যখন মরবেন তখন আপনার বুক ভরা আমার মায়ের জন্য ভালোবাসা থাকবে। সেই সাথে হৃদয় জুরে থাকবে অনুতাপ। মৃত্যুর সময় আমার আম্মুর মুখটা দেখার জন্য থাকবে আহাজারি। ছটফট করবেন আম্মুকে দেখার জন্য। কিন্তু পাবেন না। কতো কি plan আছে আমার।
এতো সব planning fullfill না করে এতো সহজে আপনাকে মরতে দেই কি করে বলুন তো? তারমধ্যে আপনাকে তো আপনার আদরের বোন ভাগনির লাশও কাধে করে গোরস্থানো নিতে হবে। তাই না?
কলেমা শাহাদাত বলতে বলতে ওদোর গোরস্থানে নেবেন না?
আপনি এতো জ্বলদি মরলে হবে।
আপ…
তখন এদিকটা তে কাউকে আসতে দেখলো। মেরিন তারাতারি লুকিয়ে পরলো। আর তখন নীড় আর নার্স রুমে ঢুকলো।

.

নীড় : বাবা দেখি ঘুম… নার্স : ১৫মিনিটি wait করুন উনি উঠে যাবেন। উনার ঘুম ভাঙার সময় প্রায় হয়ে গেছে।
নীড় বসলো।
মেরিন মনে মনে : নীড় এখানে কেন? damn it….
নীড় চারিদিক দেখতে লাগলো।
মনে মনে : এমন কেন মনে হচ্ছে যে মেরিন এখানে আছে? মেরিন তো ব্যাংকক।
তখন দেখলো যে কবির নরাচরা দিচ্ছে। নীড় গিয়ে কবিরের কাছে গিয়ে বসলো। ধীরে ধীরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কবির চোখ মেলে দেখে নীড় বসে আছে ওর পাশে।
কবির : আরে নীড়…
কবির উঠতে নিলো।
নীড় : আরে আরে করছো কি? উঠতে হবেনা।
কবির : না বসবো। সারাদিন তো শুয়েই থাকি।
নীড় কবিরকে বসিয়ে দিলো।
কবির : কেমন আছো তুমি বাবা?
নীড় : ভালো বাবা।
কবির : যদি কোনো ভুল করে থাকি মাফ ক…
নীড় : ছিঃ বাবা করছো বাবা? তুমি বড় তুমি কেন ক্ষমা চাইবে?
কবির : জীবনের শেষ সম….
নীড় : বাবা… তোমার কিছু হবেনা। & i am really very sorry… এতোদিন আসতে পারিনি বলে…. আসলে এই কদিন ঢাকার বাইরে ছিলাম।
কবির : আর বাবা… তুমি কেন sorry বলছো? আমি তো ১টা ঝড়া পাতা। কেউ নেই আমার…. বয়স্ক বাবাটা ছারা… এই শরীর নিয়েও ছোটাছোটি করছে। আসলে বাবা বাবাই হয়…
নীড় : নীরা, সেতু আন্টি… ওরা আসেনি…?
তখন দাদুভাই ভেতরে ঢুকলো।
দাদুভাই : ওরা আসবে কেন? আসলে যে লিভার দিতে হবে।
নীড় : মানে?
কবির : আহ বাবা। এমন করে বলছো কেন? ওদের হয়তো কোনো কাজ আছে…
দাদুভাই : ১বার অন্তত ওদের দোষটা দে। জানো নীড় দাদু,,, যেই শুনেছে যে ওর লিভার লাগবে আর এই মুখী হয়নি। যদি লিভার দিতে হয়? কারন ওদের সাথে কবিরের blood group matched.. তাও ওই ২জনকে নিয়েই মরছে। আর তোমাকেই বা কেন বলছি? তুমিও তো ওই একই…
কবির : আহ বাবা… তুমি ওদের সাথে এতো বাজাবাজি করো কেন? আর তুমি যাকে আমার মেয়ে বলে দাবি করো সে কয়বার এসেছে?
দাদুভাই : কেন সে আসবে কেন? কি দায় তার?
নীড় : ১মিনিট… আমার কিছু বলার আছে বাবা।
কবির : কি?
নীড়: আসলে বাবা মেরিনই আমাকে পাঠিয়েছে…
কবির : what?
নীড় : আসলে ও আসতে একটু দ্বিধা করছিলো। চক্ষুলজ্জা । তাই আমাকে…
কবির : মিথ্যা কথা। আমি মানি না? তুমি মিথ্যা বলছো। ওকে ভালো সাজানোর জন্য।
নীড় : বলেকি… ওই মেয়েকে আমি ভালো সাজাবো কেন? i just hate her…
মেরিন মনে মনে : এই লোকটা বলে কি? আমি কখন বললাম? উনি কি পাগল না মাথা খারাপ?
নীড় :whatever ,,, দাদুভাই তোমার আর দৌড়াদৌড়ি করতে হবেনা। যা করার আমি করবো। ডোনারও খুজে আনবো।
তপু: ডোনার পাওয়া গেছে।
নীড় : সত্যি?
কবির : কে সে?
তপু: ১জন মৃত ব্যাক্তির।

.

১০দিনপর….
মেরিন বাসায় ফিরলো
নীলিমা: মামনি….
মেরিন : মামনি….
নীলিমা : মিটিং শেষ হলো তবে ।
মেরিন : হামম।
নীলিমা : যা fresh হয়েনে । আমি খাবার বারছি…
মেরিন : এই না না… আমি কিছু খাবোনা… একটু ঘুমাবো।
নীলিমা : কিন্তু..
মেরিন : please …
নীলিমা : আচ্ছা।
মেরিন রুমে গেলো। দেখলো নীড় বসে আছে।

.

মেরিন নীড়কে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
মেরিন : missed you জান…
বলেই নীড়ের ঘাড়ে কিস করলো। নীড় মেরিনের হাত সরিয়ে উঠে দারালো।
নীড় : কোথায় গিয়েছিলে?
মেরিন : আপনি বুঝি জানেন না?
নীড় : না… কারন এমন কোনো মিটিং ছিলোনা। বলো কোথায় গিয়েছিলে?
মেরিন কিছু না বলে কাবার্ডের দিকে পা বারালো। কেবল খুলল। নীড় ধিরিম করে লাগিয়ে দিয়ে মেরিনকে কাবার্ডের সাথে চেপে ধরলো।
নীড় : কিছু বলতে বলেছি…
মেরিন : কি….
নীড় দাতে দাত চেপে
বলল : কোথায় গিয়েছিলে? আমি জানি কোনো মিটিং ছিলোনা। so বলো কোথায় গিয়েছিলে আর কেন গিয়েছিলে?🤬
মেরিন : আপনাকে বলতে বাধ্য নই….
নীড় মেরিনের গাল চেপে ধরে
বলল : ফাজলামো করো?
বলতে বাধ্য নই বলতে বাধ্য নই… স্বামী হয়ে অধিকার নিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলবেন…
মানে কি এসবের? হ্যা মানে কি?
যখন অধিকার দিবেনা তখন বিয়ে করেছো কেন? জেদ দেখিয়ে বিয়ে করেছো ,,, জেদ মিটে গেছে। তাহলে এখন divorce দিয়ে দাও… মুক্তি করো আমায়।
ব্যাথায় মেরিনের চোখে পানি চলে এলো। তাও নীড়কে ১বিন্দু বাধা দিলোনা। মেরিনের চোখের পানি দেখে নীড় ছেরে দিলো।
মেরিন: মেরিনের থেকে মুক্তি ভুলে যান। যতোদিন বেচে আছি আপনাকে এভাবেই থাকতে হবে।
নীড় : then মরে যাও তুমি মুক্তি পাই আমি।
মেরিন : sorry not possible …. আমি মরলে আপনাকে ভালোবাসবে কে?
বলেই নীড়ের ঠোটে ছোট ১টা কিস করে washroom এ চলে গেলো।

.

রাতে…
মেরিন ধপ করে নীড়ের বুকে শুয়ে পরলো । নীড় মেরিনকে সরিয়ে দিলো।
নীড় : don’t you dare to touch me…
মেরিন : কেন কেন?
নীড় : তোমাকে আর তোমার স্পর্শকে আমার just সহ্য হয়না। বুঝেছো?
মেরিন : পুরোনো dialogue … দেখি ঘুমাতে দিন। ঘুম পাচ্ছে…
নীড় : তোমাকে ধরে রাখিনি। ঘুমাও… আরেকবার আমাকে ছুতে আসলে আমি এখন উঠে চলে যাবো … so নিজেও ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দাও।
মেরিন ১টা হাসি দিয়ে
বলল : আপনি ঘুমান…
বলেই মেরিন ১টা বালিশ নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
এদিকে মেরিনের সাথে এমন ব্যাবহার করে নীড়ের ভালো লাগছেনা। আর না মেরিনকে ছারা ঘুম আসতে পারছে । আর না ওই কয়দিন ঘুমাতে পেরেছে। আর যখন শুনেছে কোনো মিটিং নেই তখন নীড় ক্ষেপে গেছে। মেরিনের ফোন বাজছে। আওয়াজ পেয়ে মেরিন দৌড়ে এলো।
মেরিন : hello…

মেরিন : what?

মেরিন : আমি এখনি আসছি…
মেরিন ফোন রেখে। গান,টাকা, চেক বই ব্যাগে ঢুকিয়ে চাবি হাতে নিয়ে বের হতে লাগলো।
নীড় : কোথায় যাচ্ছো?
মেরিন : জনের মারাত্মক accident হয়েছে।
বলেই মেরিন বেরিয়ে গেলো। নীড়ও পিছু পিছু গেলো।

.

হসপিটালে…
জনের বউ রিতা হাউমাউ করে কাদছে। মেরিন তার মাথায় হাত রাখলো। রিতা মেরিনকে দেখেই ক্ষেপে গেলো।
রিতা : আপনি এখানে কেন এসেছেন? হ্যা? আপনার জন্যেই আমার স্বামীর এই অবস্থা… আপনার হয়ে কাজ করে বলেই ওর এতো শত্রু…
মেরিন : হয়ে গেছে তোমার বকবক। এই নাও ধরো টাকা…
রিতা সেগুলো নিয়ে মেরিনের ওপর ছুরে মারলো।
রিতা : লাগবেনা আপনার টাকা….
মেরিন : তোমার কপাল ভালো যে তুমি জনের বউ …. না হলে যে কাজটা করলে তার জন্য তোমাকে চওরা মূল্য দিতে হতো।
মেরিন জনকে দেখলো। এরপর ডক্টরদের সাথে কথা বলে বেরিয়ে এলো।

.

মেরিন : hello…

মেরিন : ২৪ঘন্টার মধ্যে আমি তার লাশ চাই যে জনের এই অবস্থা করেছে…

মেরিন : কোনো কথানা… চাই মানে চাই… got it…
মেরিন ফোন কাটলো। এরপর গাড়ির কাছে যেতে নিলো। তখন মেরিনের মাথা চক্কর দিলো দিলো। পরে যেতে নিলে নীড় এসে ধরে ফেলল। কোনো কথা না বলে মেরিনকে কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে বাসায় নিয়ে এলো। এরপর নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে শুয়ে পরলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে
বলল: মেয়েসুলভ আচরন করতে শেখো… এখন তুমি মেরিন বন্যা খান নও। এখন তুমি মেরিন বন্যা নীড় খান চৌধুরী… আর আমাকে জানিয়ে কোনো কাজ করলে আমি বাধা দিবোনা। আমি চাইনা আমার বউয়ের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলুক অথবা আমার বউর গায়ে কোনো ফুলের টোকাও লাগুগ। আমার অনুমতি ছারা কোথাও ১পাও বারাবেনা। got it?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here