ঘৃণার মেরিন part : 11

ঘৃণার মেরিন
part : 11
Writer : Mohona

কোলকাতায়……
রাত ১টা……
আড়াল বারান্দায় দারিয়ে আছে। আকাশপানে মুখ করে তাকিয়ে আছে। মেঘের সাথে তারার খেলা দেখছে। সেই সাথে মেঘ-তারার খেলা দেখে মাতোয়ারা চাঁদের হাসিও দেখছে। তখন কেউ আড়ালকে পেছন থেকে ১হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো আড়াল জানে এটা কার শরীরের ঘ্রাণ।
আড়াল: আরে …. তুমি? এখনও ঘুমাওনি দুষ্টু???
নির্বন: উহু।। আগে বলো তুমি কেনো ঘুমাও নি।
আড়াল rocking chare এ নির্বনকে কোলে তুলে নিয়ে
বলল: মামনির ঘুমটা ভেঙে গেছে। তুমি কেন উঠলে? হামম?
নির্বন: আমি washroom যাওয়ার জন্য উঠেছি। দেখি আমার মামনিটা নেই। বুঝলাম আমার মামনি আজকেও মেঘ-তারা-চাদের খেলা দেখছে।
আড়াল:ওলে আমার সোনা বাচ্চাটারে….

আড়াল নির্বনের কপালে চুমু একে দিলো।
আড়াল : হাতে কফি কেন? এতো কষ্ট করে কফি বানাতে গেলে কেন এতো রাতে???
নির্বন: আমি তো জানি যে আমার মামনি হালকা শীতের মধ্যে কফি খেতে এত্তোগুলা ভালোবাসে।।
আড়াল: আমার বাবাইটা বুঝি ভালোবাসেনা???
নির্বন: তোমার বাবাইটা তার মামনিকে বেশি ভালোবাসে। তাই তে সে মামনির কথা শুনে week এ ১দিন কফি খায়। রোজ খেলে অসুখ হয় যে।
আড়াল ছেলেকে বুকের সাথে জরিয়ে নিলো।
নির্বন: কি হলো মামনি?
আড়াল:কিছুনা মামনি।
নির্বন: তাহলে কফিটা খাও।

আড়াল খেলো।
আড়াল: wow… its best coffee of the world ..
নির্বন: সত্যি??
আড়াল: হামম। এখন
এতো best ১টা কফি বানিয়ে খাওয়ানোর জন্য তো আমার বাবুই পাখিটাকে ১টা gift দিতে হবে। তো আমার বাবুই পাখিটার কি gift লাগবে হামম??
নির্বন: আমার কিছুই লাগবেনা মামনি। আমার তো সবই আছে। আমি কেবল তোমার বুকের মধ্যে ঘুমাতে চাই।
আড়াল: তাই? সেটাতো রোজই ঘুমাও। কিন্তু মামনি যে তার বাবুই পাখিটাকে ১টা gift দিবোই। কাল মামা-মামিমনি, মনি আপু, বাবুই পাখি আর মামনি মিলে amusement park এ যাবো। এতো এতো toys কিনবো। এতো এতো রাইডে চরবো। মজার মজার খাবার খাবো। খুব মজা করবো।
নির্বন: সত্যি মামনি??🙂🙂🙂।
আড়াল: হামম।
নির্বন: thank u মামনি। love you মামনি। বলেই নির্বন মায়ের গালে চুমু দিলো।

নির্বন: আচ্ছা মামনি তুমি মেঘ-তারা-চাদের খেলা কেন দেখো??
আড়াল: আমার ভালো লাগে বাবা। তাই। আর বেশি ভালো লাগে ওই শুকতারার পাশের ঝলমল করা তারাটাকে।
নির্বন: কেন?
আড়াল: কারন ওইটা তোমার বড়বাবা বলে….
নির্বন:আমার বড়বাবা মানে??
আড়াল: তোমার বড়বাবা মানে মামনির দাদুভাই…..
নির্বন: তাই??
আড়াল: হামম। সবসময় সবার থেকে উজ্জ্বল। যে তোমার মামনিকে পথ দেখায়।

.

২দিনপর…..
নীড় কোলকাতা পৌছালো। বাচ্চাটাকে দেখলো। treatment start করলো। পরদিন নীড় বিকালে হাটতে বের হলো। ১টা পার্কের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। হাতে থাকা ছোট টুনি ট্যাক whisky এর বোতল টা কেবল বের করলো। তখন কোথায় থেকে যেন ১টা ফুটবল এসে ওর হাতে লাগলো। আর ঠাস করে নীড়ের হাত থেকে বোতলটা পরে গেল। নীড় ভীষন রেগে গেলো। নীড় পেছনে ঘুরলো। দেখলো ৪-৫ টা বাচ্চা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে আসছে।
নীড়: এই বলটা কে ছুরে মেরেছে??😠😠😠।
ওদের মধ্যে থেকে নির্বন এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে
বলল: uncle আমি মেরেছি।
নির্বনের মুখটা কেমন যেন মায়াভরা।
তবুও নীড় রেগেই
বলল: খেলার জন্য এতো বড় পার্ক তারপরও মানুষের গায়ে বল ছুরে মারো কেন???
নির্বন: sorry uncle।
নীড়: sorry বলাতেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে?? খুন করে এসে বলবে যে sorry তাহলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে??
নির্বন: sorry uncle ….
চন্দন: এই তুই শুধু শুধু লোকটাকে sorry বলছিস কেনরে? তারওপর লোকটার ঝাড়িও খাচ্ছিস??
নির্বন: আহ চন্দন। আমাদেরই তো ভুল ছিলো। খেয়াল রাখার দরকার ছিলো। আর তাছারাও uncle আমাদের গুরুজন। শ্বাসন করতেই পারেন। গুরুজনদের শ্বাসনের মধ্যেও ভালোবাসা থাকে। শিক্ষা থাকে। আমাদের ভুল ধারনাগুলো না ধরিয়ে দিলে আমরা সেগুলো ঠিক করবো কিভাবে?? ক্ষমা করে দিবে uncle ….
নীড় নির্বনের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলো। বলটা দিয়ে দিলো।
নির্বন মিষ্টি ১টা হাসি দিয়ে
বলল: thank you uncle …..
নির্বনের হাসির মধ্যে নীড় কি যেন ১টা খুজে পেলো।

.

নির্বনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই নীড় পেছনের দিকে হাটতে লাগলো। তখন আবার ১টা বাচ্চা ছেলের সাথে ধাক্কা লাগলো। আর সেই ছেলেটার হাতে থাকা ৪-৫টা ice cream নীড়ের গায়ে পরে গেল।

নীড়: hey you…. চোখে দেখোনা? আকাশের দিকে তাকিয়ে হাটো নাকি?
মেঘ: আমি না হয় আকাশে চোখ দিয়ে হাটি। কিন্তু আপনি তো চোখ কান সব আকাশে দিয়ে হাটেন। কখন থেকে সরতে বলছি সরেন তো নাই। তারমধ্যে চোখেও দেখেন না।
নীড়: এই ছেলে ১টা থাপ্পর দিবো। একে তো ভুল করেছো। তারমধ্যে মুখে মুখে তর্ক করছো।
মেঘ: তর্ক কোথায়? আমি just সত্যটা বললাম। আর আপনি শুধু আমাকে থাপ্পর মারবেন কেন? আমি কি করেছি? একে তো ছোটদের সাথে কিভাবে বলতে হয় সেটা জানেন তারমধ্যে পচা পচা কথা বলে। আপনার মতো মানুষের তো এই পার্কে ঢোকাই ঠিক হয়নি।
মেঘের কথা শুনে নীড় ঠাস করে থাপ্পর মারতে নিলো। কিন্তু ঠিক যখনই থাপ্পরটা মারবেই তখনই নির্বন মেঘকে সরিয়ে নিজে থাপ্পর টা খেলো। নীড় অবাক হয়ে গেল। সেই সাথে ওর বুকটাও কেপে উঠলো।

নীড়:…. তু….
তখন নির্বন তখন হাতে দিয়ে ইশারা করে
বলল: চুপ থাকো uncle …. please ….. মেঘ বল তো কি হয়েছে?
নীড় অবাক হয়ে গেলো এতোটুকু বাচ্চার attitude দেখে। মেঘ নির্বনকে সবটা বলল।

.

নির্বন: আপনি কেন বিনাদোষে আমার বন্ধুকে কেন মারতে যাচ্ছিলেন?
নীড়: বিনা দোষ মানে? he is a mannerless boy…. বেয়াদব। ভদ্রভাবে কথা বলতেই শেখেনি।
নির্বন: আমার বন্ধু যেটা বলেছে সেটাই সত্যি। আর আপনি বুঝি খুব শিখেছেন। আপনি নিজেই তো আদব-কায়দাহীব রেলগাড়ি। নিজে আদব শিখে তারপর অন্যদের শেখাতে আসবেন।
নীড় নির্বনকে থাপ্পর মারতে গেলে নির্বন খপ করে হাতটা ধরে ফেলল। নির্বনের চোখ রাগে লাল হয়ে গেলো। নীড় আরো অবাক হলো। এই রাগী চোখ ২টা মেরিনের রাগী চোখের সাথে কতো মিল। যখন মেরিন রেগে যেতো তখন ওর চোখ ২টাও ঠিক এমনটাই লাগতো।

নীড় নিজেকে সামলে
বলল: এতোটুকু ছেলের এতো সাহস। আমার হাত ধরো তুমি। তুমি জানো আমি কে?

নির্বন: জানিনা । আর জানতেও চাইনা। আর সাহস দেখাতে বড় ছোটো লাগেনা। প্রতিবাদ করতে বয়স লাগেনা। আমি অপরাধ করলে আমাকে ১০টা থাপ্পর মারলেও আমি কিছু বলবোনা।
নির্বন নীড়ের হাতটা ছেড়ে দিয়ে
বলল: কিন্তু বিনা অপরাধে চোখ রাঙানোও সহ্য করেনা নির্বন।

.

“নির্বন”…. এই নামটা শুনেই নীড় স্তব্ধ হয়ে গেলো। ওর মনে পরলো মেরিনের বলা সেই কথাটা নীড় এর সাথে বন্যার বন জুরে দিলে হয় “নির্বন”। আর বলেছিলো যে আমাদের ছেলের নাম রাখবো “নির্বন”। নীড় নির্বনের সামনে হাটু গেরে নির্বনের গাল ধরে অস্থির হয়ে
বলল: তততোমার নননাম কি বললে বববাবাহ???🥺🥺🥺।

নির্বন: নির্বন। নির্বন আড়াল। son of doctor Aral…..
নীড়: তততোমার মায়ের নাম কি???
নির্বন: doctor আড়াল।
নির্বনের মায়ের নাম শুনে নীড়ের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। নীড়ের চোখে পানি চলে এলো।
নির্বন: একি uncle তুমি কাদছো কেন? তুমি কি আমার কথায় খুব বেশি কষ্ট পেয়েছো?? sorry গো sorry…..
নির্বন নীড়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে
বলল: sorry uncle … আমি তোমাকে hurt করতে চাইনি। কিন্তু আসলে রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকেনা। তাই ভুলভাল বলে ফেলি। এই এত্তোগুলা sorry…. তুমি চাইলে আমাকে আরেকটা থাপ্পর মারতে পারো। তবু তুমি কান্না করোনা।

নীড় নির্বনকে জরিয়ে ধরলো। এতে ২জনেরই কেমন যেন ১টা feel হলো।
নীড়: না বাবা তোমাকে আমি আর মারতে পারবোনা।
নির্বন: কেন??🤔🤔।
নীড়: কারন তোমার নাম নির্বন।
নির্বন: কেন? আমার নাম নির্বন বলে আমাকে মারবেনা কেন??
নীড়: কারন আমার ছেলের নামও নির্বন। তাই। ☺️☺️☺️।

নির্বন: তাই বুঝি?😀😀😀।
নীড়: হামম।
নির্বন: thats great …. উইই…..
নীড়: কি হলো?
নির্বন: এখন তো আর আমার কখনো বিয়ে হবেনা। 😞😞😞।
নীড়: মানে? কেন?
নির্বন: কারন তুমি তো আমাকে আর থাপ্পর মারবেনা।
নীড়: থাপ্পরের সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক?
নির্বন: আরে বুদ্ধু….. ১গালে থাপ্পর দিলে তো আর বিয়ে হয়না। আর তুমি তো আমাকে আর আরেকটা থাপ্পর দিবেনা। তাই আর আমার বিয়েও হবেনা….😞😞😞…..
নির্বনের এমন মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে নীড় হো হো করে হেসে উঠলো। আজকে ৮টা বছর পর নীড় এমন মন খুলে হাসলো। নীড়ের এই হাসি দেখতে নির্বনের বেশ লাগছে। ও নীড়ের দিকে তাকিয়েই রইলো।

.

নীড় দেখলো যে নির্বন ওর দিকে তাকিয়েই আছে।
নীড় হাসি থামিয়ে
বলল: কি দেখছো?
নির্বন: আমার স্বর্গ।

বলেই নির্বন নিজেই থতমত খেয়ে গেল।
নির্বন: না মানে sorry uncle …. আসলে আমার মামনি আমাকে আর আমি আমার মামনি কে এটা বলিতো। তাই তোমাকেও বললাম। রাগ করোনা please ….
নীড়: হামম।
নির্বন: thank you…. uncle আমি এখন আসি।
নীড়: হামম।
নির্বন: bye.।
নির্বন ওর দলবল নিয়ে চলে গেল। নীড় ডুবে গেল অতীতে। নির্বন যেভাবে ওর দিকে আজকে তাকিয়ে ছিলো মেরিনও অমন করেই তাকিয়ে থাকতো। নীড় যদি জিজ্ঞেস করতো যে পরে ধরে কি দেখো? তখন মেরিন জবাবে
বলতো: আমার স্বর্গ।

আসলে নির্বন যখন খিলখিল করে হাসে তখন ওকে ওর বাবা নীড়ের মতোই লাগে। আর তাই তখন মেরিন(আড়াল) মুগ্ধ চোখে নির্বনের দিকে। নির্বন যদি জিজ্ঞেস করে যে মামনি কি দেখছো? তখন মেরিন জবাব দেয় যে আমার স্বর্গ। মায়ের মতো করে নির্বনও মায়ের মুখের দিকে, হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। আর মেরিন জিজ্ঞেস করলে নির্বনও বলে যে আমার স্বর্গ।

.

{{ অনেকেই বুঝে গেছে যে আড়াল মেরিন। আবার অনেকে confused …. সকল confused এখনই clear করে দিচ্ছি। মেরিনই আড়াল। ৮বছর আগে সেদিন সকালে যখন মেরিন সব ছেরে ছুরে চলে এসেছিলো। তখন তার সাথে নিজের নামও পরিবর্তন করে আড়াল রেখেছিলো। কারন মেরিন নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়াল করে নিতে যাচ্ছিলো। পাওয়ার ছিলো। তাই সহজেই কাজটা তারাতারি করতে পেরেছিলো। মেরিন দাদুভাইয়ের সাথে ১২বছর কোলকাতা ছিলো। সেখানে ওদের ছোট্ট ১টা বাড়িও আছে। তাই মেরিন সব ছেরে ছুরে সেখানেই চলে আসে। খান পরিবারের ১টা টাকাও মেরিন নিয়ে আসেনি। কোনো টাকা পয়সা আনেনি। শুধু মেরিন হওয়ার পরই মামা আর দাদুভাই যে পলিসি করেছিলো সে টাকা আর ছোটবেলার বৃত্তির টাকা ব্যাংকে রেখে যে টাকা হয়েছিলো সেগুলো নিয়ে মেরিন কোলকাতা গিয়েছিলো।

[ ব্যাংক ট্যাংক, business সম্পর্কে আমার কোনো ধারনা নেই। তাই কিভাবে কি বীমা না কি বলে জানিনা ভালোভাবে। কষ্ট করে বুঝে নেবেন। 😅😅😅]।

যাই হোক কোলকাতা গিয়ে মেরিন নতুন করে জীবন শুরু করে। মেরিন মরে গিয়ে আড়াল জন্ম নেয়। এখন আসি নির্বনের মামা মানে মেরিনের ভাই। মেরিনের ভাই আর কেউনা, জন। হ্যা জনই মেরিনের ভাই। বডিগার্ড…… এই বডিগার্ড শব্দের অর্থ হলো দেহরক্ষী। জন মেরিনের সত্যিকারের অর্থে বডিগার্ড। যে জীবন দিয়ে হলেও নিজের ম্যাডামকে সুরক্ষিত রাখে। মেরিন চলে যাওয়ার আগে জনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে যায়। কারন জনের কাছে মেরিন অনেক ৠণি। তাই জন যেন জীবনে কিছু করতে পারে তাই জন্য মেরিন জনকে টাকা দিয়ে এসেছিলো। মেরিন কতো থাপ্পর মেরেছে , কতো খারাপ ব্যাবহার করেছে। কিন্তু জন সবসময় মেরিনকে নিজের ছোট বোনের মতোই ভালোবেসেছে। তাই তো নিজের বডিগার্ড হওয়ার দায়িত্ব শেষ করে নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করতে কোলকাতা চলে যায়। মনি জনেরই মেয়ে। মেরিনের দেয়া সেই টাকা দিয়ে জন ব্যাবসা শুরু করে। সফল হয়। তাই সে সেরা ব্যাবসায়ীদের মধ্যে একজন। নির্বন ৬মাস হওয়া পর্যন্ত মেরিন জনের বাড়িতেই ছিলো। কিন্তু এরপর নিজের বাড়িতে চলে আসে। মেরিনও এখন জনকে নিজের ভাই ই মনে করে। জনের স্ত্রীও ভীষন ভালো।
জন নিজের সাথেই মেরিনকে রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু মেরিন রাজী হয়নি। মেরিন নিজেকে বিলীন করে আড়াল কে তৈরী করে। মেরিন যেমন ছিলো তার সম্পুর্ন বিপরীত হলো আড়াল। মেরিন আর আড়ালের মধ্যে কোনো মিল নেই। শুধু ১টা জিনিস ছারা। সেটা হলো নীড়ের প্রতি ভালোবাসা। মেরিন যতোটা নীড়কে ভালোবাসতো আড়ালও ঠিক ততোটাই ভালোবাসে। বলতে গেলে মেরিনের থেকে আড়াল নীড়কে বেশি ভালোবাসে। কারন নীড় আড়ালকে নির্বন দিয়েছে। যা আড়ালের বাচাক একমাত্র অবলম্বন। }}

.

পরদিন……
নীড় আজও নির্বনের সাথে দেখা করতে সেই পার্কে এসেছে। নির্বন বন্ধুদের জন্য ice cream কিনে রাস্তা পার হচ্ছে। তখন দেখলো যে ছোট্ট ১টা ৩পায়ের খরগোশ রাস্তায় পরে আছে। আর ১টা গাড়ি ছুটে আসছে। নির্বন সব ice cream ফেলে দৌড়ে খরগোশ টাকে বাচাতে ছুটলো। খরগোশটাকে কোলেও তুলে নিলো। তবে দুর্ভাগ্যবসত একটুর জন্য গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগলো। নির্বন গিয়ে ছিটকে পড়লো। মাথার মধ্যে প্রচুর ব্যাথা পেল। আর সব ঘটলো নীড়ের চোখের সামনে। ওর মনে হলো যে মেরিনেরই accident টা হলো। নীড় জোরে মেরিন বলে চিৎকার করে উঠলো। এরপর নির্বনকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো। এমনকি নিজে রক্তও দিলো। এরপর নির্বনের ব্যান্ডেজ করা চেহারাটা ১বার দেখলো। এরপর ছুটলো সেই driver এর কিয়ামত আনতে।

.

এদিকে…….
ছেলের খবর পেয়ে সবকিছু ছেরে ছুরে পাগলের মতো ছুটে এলো। হাউমাউ করে কাদতে লাগলো। তেমনভাবে কোনো ক্ষতি হয়নি বলে পরদিন সকালেই নির্বনকে রিলিজ দেয়া হলো।
ছেলের জন্য ১৫দিনের ছুটি নিলো মেরিন।

.

১৫দিনপর……
নীড় নিজের কাজ করে দেশে ফিরবে আজকে। airport যাচ্ছে……. পথের মধ্যে ১টা ট্রাকের সাথে খুব বাজেভাবে accident হলো। নীড়কে hospital এ নেয়া হলো।

.

in the hospital …….
১৫দিনপর মেরিন হাসপাতালে এলো। রোগী টোগী দেখে বাসায় ফিরছে। তখন দেখলো যে ট্রলিতে করে ১টা রক্তাত্ব রোগীকে নিয়ে আসছে। যা দেখে মেরিনের হাত পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেলো। কারন মেরিন এখন একদম রক্ত দেখতে পারেনা। মেরিন চোখ মুখ খিচে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে সামনে বাড়তে লাগলো। আসলে এটা নীড়ই। নীড়ের খুব সামান্য জ্ঞান ছিলো। তাই ও মেরিনের মুখটা দেখতে পেলো। তাই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মেরিনের মুখ দেখতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। মেরিন এগিয়ে যাচ্ছে তখন ওর আঙ্গুলের সাথে কারো আঙ্গুল বেজে গেলো। আর সাথে সাথেই মেরিন থেমে গেলো। কারন এই স্পর্শ ওর চিরচেনা। ঘুরলো। আর ঘুরে যা দেখলো তা দেখার জন্য মেরিন মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। নীড়ের রক্তাত্ব শরীর। মুহুুর্তেই মেরিনের দুনিয়া ঘুরে গেলো। ৮বছরপর এই মুখটা এভাবে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।
নীড়ের ট্রলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নীড়ের হাত মেরিনের হাত থেকে ছুটে যাচ্ছে। মেরিনের মনে হচ্ছে কেউ ওর জীবনটা নিয়ে যাচ্ছে। মেরিন শক্ত করে নীড়ের হাতটা ধরলো। এরপর নীড়ের সামনে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে শুরু করলো। নিজের হাতে নীড়ের surgery করলো। যা দেখে সবাই অবাক। কারন ডাক্তার আড়াল কখনো surgery করেনা।এরপর হাসপাতাল থেকে resign নিয়ে দৌড়ে বাসায় চলে গেলো।

.

বাসায় গিয়ে মেরিন ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কান্না করছে। এদিকে জনের কাছে খবর চলে গেলো মেরিনের রিজাইনের। তারমধ্যে তখনই নির্বন ফোন করে
বলল: মামা আমার মামনি না রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। কতো ডাকছি খুল়ছেইনা।
জন: দারাও বাবা মামা এখনি আসছি।
জন সব কাজ ফেলে মেরিনদের বাসায় চলে গেলো। গিয়ে দেখলো নির্বন রুমের দরজার

বাইরে দারিয়ে কাদছে আর
বলছে: ও মামনি….. মামনি… দরজা খোলোনা।
জন যেতেই নির্বন দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে কাদতে কাদতে
বলল: ও মামা দেখোনা আমার মামনি দরজা খুলছেনা। 😭😭😭।
জন: কাদেনা সোনা। এই মুসকান (জনের স্ত্রী) নির্বনকে নিয়ে আমাদের বাসায় যাও।

নির্বন: না মামা আমি যাবোনা। আমার মামনিকে ফেলে আমি যাবোনা।
জন: মামা আমি তোমার মামনিকে নিয়ে এখনি আসছি।
নির্বন: না আমি যাবোনা।
জন: নির্বন না good boy। মামার কথা শুনবেনা?
নির্বন গেলো।

জন: আড়াল….. আড়াল। বোন আমার দরজা খোল।

মেরিন দরজাটা খুলছেনা বলে জন দরজা ভেঙে ফেলল। ঢুকে দেখলো যে মেরিন দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে কাদছে। আর সেই সাথে দেয়ালের মধ্যে মাথায় ঠোকা মারছে। জন দৌড়ে মেরিনের কাছে গেলো।

জন: আড়াল…. এই আড়াল। তুই কাদছিস কেন বোন?? তুই তো জানিস যে তোর চোখের পানি আমার সহ্য হয়না। বলনা বোন আমার।
মেরিন জনকে জরিয়ে ধরে
বলল: ভাইয়া …. উউনি ফফিরে এএসেছে।
জন: কে?
মেরিন: নির্বনের বাবা।

জন: কি??
মেরিন: হামম।

মেরিন সবটা বলল। জন একটু চিন্তিত হলেও মেরিনকে বোঝালো।
জন: আরে বোকা । পাগল নাকি? তিনি ১জন ডাক্তার। কতো জায়গাতেই সে যেতে পারে। হয়তো তাই কোলকাতাতে এসেছিলে।
মেরিন: যযযদি উউনি আমার নির্বনকে কেরে নেয়। বাবা হওয়ার দাবিতে…..
জন: ধ্যাত বোকা। নীড় চৌধুরী নির্বনের কেউনা। বাবাও না। নির্বনের বাবাও ডাক্তার আড়াল। আর মাও ডাক্তার আড়াল। আর তারথেকেও বড় কথা নীড় চৌধুরী নির্বনের কথা তো জানবেই না।
মেরিন: কিন্তু….
জন: কোনো কিন্তুনা। কেন ভুলে যাও যে তুমি মেরিন নও। তুমি আড়াল। যতোদিন জন আছে ততোদিন কেউ আড়ালের নির্বনকে কেরে নিতে পারবেনা। যে অন্যায়গুলো মেরিনের সাথে হয়েছে তার ছিটেফোটাও আমি আমার বোন আড়ালের সাথে হতে দিবোনা। কথা দিলাম।
মেরিন একটু শান্ত হলো। জন মেরিনকে নির্বনের কাছে নিয়ে গেলো।

.

ওদিকে ….
নীড়ের accident এর কথা শুনে নিহাল-নীলিমা, কবির-কনিকা দৌড়ে কোলকাতা এলো। নীড়ের জ্ঞান ফিরতেই মেরিন বলে চিৎকার করে উঠলো।

নীলিমা: কি হলো বাবা?

নীড়: আআহমার মমমেরিন। আহমার মেরিন….. আমি দদেখেছি।
কনিকা: ককোথায়? ককোথায় দেখেছো??
নীড়: জজজানিনা। তবে দদেখেছি। ও হাত দিয়ে মুখ ঢেকে অন্যদিকে ঘুরে ছিলো। কককিন্তু ওর সেই কালো তিলটা যে বেরিয়ে ছিলো। যার চমক আমার দৃষ্টি কেরেছিলো। ওর সেই চিরকোমল হাত…..

বাকীরা বুঝতে পারলো যে এটা কেবলই নীড়ের কল্পনা। কিন্তু নীড় জানে…. নীড়ের মন জানে যে এটা কল্পনা না।

নিহাল: বাবা তুমি আরাম করো।
নীড়: আরাম…. 🤣🤣🤣? আরাম তো সেদিনই করবো যেদিন আমার জীবন পাবো। আর আমি জানি আমি ওকে এখানেই পাবো……..

.

হয়তো ভাগ্যের চাকা এবার ঘুরতে চলেছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here