গল্পঃ পাপের পরিনাম,পর্ব : ০২

গল্পঃ পাপের পরিনাম,পর্ব : ০২
Writer : Kabbo Ahammad
.
.
-:”ইশার যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে দেখে বিছানাতেই শুয়ে আছে। আর সবকিছু ঠিক ঠাক আছে। তাহলে কি সে স্বপ্ন দেখেছিলো? কিন্তু এমন স্বপ্ন কেনোইবা দেখবে।যেমনটা তার বোনের সাথে হয়েছিলো? এ মুহুর্তে কিছুই বুঝতে পারছেনা ইশা। তার মাথায় তখন নানা রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তারপর বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করে ইশা কিন্তু তখন হঠাৎ তার পেট ব্যাথা শুরু হয়।

যা অন্যদিনের স্বাভাবিক পেট ব্যাথার থেকে অনেক বেশি ব্যাথা করছে। ইশা তখন তার বাবাকে ডাক দেয়।আর নির্ঝর সাহেব মেয়ের ডাক শুনে দৌড়ে চলে আসে।

–“কি হয়েছে মা এভাবে চিৎকার করে ডাকছিস কেন?

–“আমার অনেক পেট ব্যাথা করছে বাবা।

–“হঠাৎ পেট ব্যাথা করছে কেন? কিছু খেয়েছিলি কাল?

–“না তেমনন কিছু খাইনি যেটা খেলে পেট ব্যাথা করবে।

তখন নির্ঝর সাহেব তার রুম থেকে একটা পেট ব্যাথা কমার টেবলেট নিয়ে আসে। আর তা ইশাকে খাওয়ায়।কিন্তু তাও ইশার পেট ব্যাথা কমছিলোনা। বড়ং বেড়েই যাচ্ছিলো। ইশা অনেক ছটফট করতে থাকে পেটের ব্যাথায়। শেষে কোনো রাস্তা না পেয়ে নির্ঝর সাহেব ইশাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে ইশার পেটে কয়েকটা টেষ্ট করানো হয়।তারপর ইশাকে ডাক্তার কিছু মেডিসিন দেয়। আর তা খেয়ে ইশার পেট ব্যাথা কমে যায়। ইশা এখন ডাক্তারের চেম্বারে তার বাবার সাথে বসে আছে। ডাক্তার রিপোর্ট গুলো দেখে ইশার দিকে আর ইশার বাবার দিকে বারবার তাকাচ্ছে।

–“কি ব্যাপার ডাক্তার সাহেব এভাবে চুপচাপ না থেকে কিছু বলেন। রিপোর্টে কি এসেছে। (নির্ঝর সাহেবের কথা শুনে ডাক্তার বলল)

–“আপনার মেয়ে ৩ মাসের গর্ভবতী।

–“হোয়াট? আপনি এসব কি বলছেন? আপনার মাথা ঠিক আছে? (টেবিল চাপড়ে রাগান্বিত গলায় কথাটি ডাক্তার কে বললেন নির্ঝর সাহেব।)

–“দেখুন রিপোর্ট যেটা বলছে আমি আপনাদের সেটাই বলেছি।

নির্ঝর সাহেব তখন তার মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন।হয়তো তিনি মনে মনে বলছেন ডাক্তার যা বলছে তা কি সত্যি? এমনটা কেন করলো ইশা?

ইশা হয়তো তার বাবার মনের কথা বুঝতে পেরেছে তাই সে বলল,

–“বাবা আমি এমন কোনো কাজ করিনি যার জন্য আমি গর্ভবতী হবো।

–‘তাহলে ডাক্তারের রিপোর্ট কি ভুল?

–‘ভুল হতে পারে।

–“না ইশা ম্যাডাম আমি বেশ কয়েকবার রিপোর্ট চেক করে তবেই বলছি। (ডাক্তার)

ডাক্তারের কথা শুনে ইশার তখন পায়ের নিছ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। এটা কিভাবে সম্ভব? সে এমন কোনো কাজ করেনি যার ফলে তার সাথে আজ এমন হচ্ছে।

যে মেয়ের ১মাস পর বিয়ে আর আজ ডাক্তার বলছে সে ৩মাসের গর্ভবতী? এমনটা নির্ঝর সাহেব মেনে নিতে পারছেনা। ইশার পছন্দের ছেলের সাথেই তো তিনি বিয়ে দিচ্ছিলেন তাহলে আগেই কেন ইশা এমন কাজ করলো? নির্ঝর সাহেব অনেকটা ভেঙে পড়েছে।

–“আপনারা ভেঙে পড়বেননা। আমি আবার পরিক্ষা করে দেখছি যদি ভুল হয়।

ডাক্তার কথাটি বলে আবার ইশাকে মেসিনের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। এবং নানা রকম পরিক্ষা করে। তারপর ডাক্তার রিপোর্টটা হাতে পায়।

–“ডাক্তার সাহেব এবার রিপোর্টে কি লেখা আছে?

–“আপনার মেয়ে গর্ভবতী এটা ঠিক কিন্তু………

–“কিন্তু কি ডাক্তার?

–“বাচ্চাটা কোনো মানুষের বাচ্চা না।

–“কি বলছেন এসব? মানুষের পেটে মানুষের বাচ্চা না তো কিসের বাচ্চা।

–“আপনার মেয়ের পেটে একটা সাপের বাচ্চা আছে।আর আমার প্রতিটা রিপোর্ট সেটাই বলছে।

–“কি বলছেন ডাক্তার আপনি এসব? সাপের বাচ্চা ইশার পেটে কি করে আসবে?

–“কি করে এসেছে সেটা তো বলতে পারবোনা কিন্তু বাচ্চাটা সাপের এটা নিশ্চিত।

নির্ঝর সাহেব এবার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। তার মাথা ঘুরতে থাকে। এটা কি শুনছে? এমনটা কি করে হতে পারে? মানুষের পেটে সাপের বাচ্চা? এমনটা কি কখনো হতে পারে? তখন নিরবে ইশার দিকে তাকায় নির্ঝর সাহেব।

ইশা চুপচাপ বসে আছে কোনো কথা নেই তার মুখে।এমন কথা শুনে হয়তো অনেক বড় শক খেয়েছে তাই সে চুপচাপ বসে আছে। নির্ঝর সাহেব ডাত্তারের কাছ থেকে ইশাকে নিয়ে চলে আসে। তারপর ইশাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। ইশার মনে তখনো কোনো পরিবর্তন লক্ষ করেনি নির্ঝর সাহেব।

এদিকে হঠাৎ করে কাব্য’কে ফোন দিয়ে বিয়ে ভেঙে ফেলার কথা বলে নির্ঝর সাহেব, ইশার বাবার মুখে বিয়ে ভাঙার কথা শুনে চমকে উঠে কাব্য। কিন্তু হঠাৎ ইশার বাবা বিয়ে কেন ভাঙতে চায়। আর কয়দিন পর তাদের বিয়ে। সব প্লানিং করা হয়ে গেছে আর এখন বলছে বিয়ে ভাঙার কথা।তখন কাব্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নির্ঝর সাহেব ফোন কেটে দেয়। আর কাব্য তখন ছটফট করতে থাকে। এমনটা কেন করতে চাচ্ছে ইশার বাবা?এটা জানতেই হবে বলে ইশার বাড়ির দিকে যেতে থাকে।

ইশার বাড়িতে পৌছে নির্ঝর সাহেবের সাথে দেখা।

–“কি ব্যাপার আঙ্কেল হঠাৎ বিয়ে কেন ভাঙতে চাচ্ছেন?

–“কারন আমি তোমার সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইনা?

–“কিন্তু হঠাৎ কি হলো যে আমার সাথে বিয়ে দিতে চাননা?

–“আমার এ বিয়েতে মত নেই। আমি চাইনা এই বিয়ে হোক।

কিন্তু কাব্য এটা মানতে পারলো না, তার মনে তখন খটকা লাগে। ইশার সাথে কাব্যর বিয়ের সম্পূর্ণ মত ছিল নির্ঝর সাহবের। অনেক আগে থেকে তাকে চিনে।তাহলে কি এমন হয়েছে যে একেবারে বিয়েটা ভাঙতে চাচ্ছে?

–“আঙ্কেল আপনি মিথ্যা বলছেন। আমাদের বিয়েতে আপনার মত ছিলো। কিন্তু এখন বলছেন মত নেই।তাহলে কি হয়েছে বলেন?

–“কিছু হয়নি বললাম না।

–“আমি বলছি কাব্য কি হয়েছে। (ইশা)

ইশার কথাটি শুনে তার দিকে তাকায় কাব্য।

–“তুই কিছু বলবিনা ইশা। কিছু হয়নি। (নির্ঝর সাহেব)

–“বাবা সব কিছু লুকিয়ে রাখা যায়না। আর আমি এটা লুকাতে পারবোনা। (ইশা)

–কি হয়েছে ইশা আমাকে বলো। (কাব্য)

–“কাব্য আমি প্রেগন্যান্ট।

–তুমি প্রেগন্যান্ট? এটা কিভাবে সম্ভব?

–হ্যাঁ, আর আমার পেটে কোন মানুষের বাচ্চা না একটা সাপের বাচ্চা আছে।

ইশার কথা শুনে দুপা পিছিয়ে যায় কাব্য। তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। কি শুনলো সে? মানুষের পেটে সাপের বাচ্চা? এটা কি করে সম্ভব?

–“ইশা তুমি ঠিক আছো? একটা মানুষের পেটে সাপের বাচ্চা কি করে আসবে? (কাব্য)

–“আমি ঠিক আছি কাব্য। ডাক্তারের রিপোর্ট এটাই বলছে।

–“রিপোর্ট ভুল ও হতে পারে?

–“না কাব্য ভুল নেই, ডাক্তার বেশ কয়েকবার পরিক্ষা করার পর কথাটি বলেছে।

কিন্তু কাব্য এটা বিশ্বাস করতে পারছেনা। এমনা কিভাবে সম্ভব? কাব্য তখন ইশার কাছ থেকে সে ডাক্তারের ঠিকানা নেয়। তারপর সে ডাক্তারের কাছে যায়। গিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে কাব্য। একটা রুগি দেখছে ডাক্তার। তারপরেই কাব্যর সাথে কথা বলবে। রুগি দেখা শেষে…..

–“বলুন কাব্য সাহেব কি জানতে চান? (ডাক্তার)

–ইশার যে রিপোর্ট আপনি করেছেন সেগুলো কি সঠিক? (কাব্য)

–“আমি দুবার পরিক্ষা করিয়ে দেখেছি। ভুল হবার কোনো চান্স নেই।

–“কিন্তু ডাক্তার এটা কিভাবে সম্ভব? এমনটা কি হতে পারে?

–“কিভাবে সম্ভব এটা তো বলতে পারবোনা। তবে রিপোর্ট যা বলছে আমি তা বলছি।

–“এই সমস্যার কি কোনো সমাধান নেই?

–“সমাধান তো আছে কিন্তু অনেক রিস্কি। অপারেশন করে বাচ্চাটা বের করতে হবে। তবে সাপটা অনেব বিষাক্ত। যদি কোনো মতে ইশাকে কামড়ে দেয় তাহলে ইশার ক্ষতি হতে পারে।

–“এটা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই?

–“আছে সাপের বাচ্চাকে পেটের মধ্যেই মেরে ফেলতে হবে তারপর অপারেশন করে বের করতে হবে।

–“এটাই ঠিক হবে।

–“হ্যা। এখন ইশাকে আর তার বাবাকে রাজি করাতে হবে।

–“আপনি এটা নিয়ে ভাববেননা। আমি সব ব্যবস্থা করছি।

তারপর কাবত সেখান থেকে ইশার বাড়িতে চলে যায়। গিয়ে নির্ঝর সাহেবকে সবকিছু খুলে বলে। নির্ঝর সাহেব ও তখন তার সামনে একটা পথ খুলা পায়। তাই ইশাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে যায়। ইশাকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে গেছে ডাক্তার। বাইরে কাব্য আর নির্ঝর সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।

ডাক্তার ইশার পেটে সাপের বাচ্চাটাকে মারার জন্য মেডিসিন দেয়। কিন্তু ৩০মিনিটের বেশি হয়ে যায়, কিন্তু বাচ্চাটার ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি মেডিসিনটা। ডাক্তার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কোনো ভাবেই ইশার পেটের মধেকার সাপের বাচ্চাকে মারতে পারেনি। তারপর ইশাকে একটা কেবিনে রাখা হয়। আর ডাক্তার বাইরে আসে

ডাক্তারকে দেখেই নির্ঝর সাহেব দৌড়ে তার কাছে যায়।

–“কি হলো ডাক্তার সাহেব? আমার মেয়ে ঠিক আছে তো?

–“আপনার মেয়ে এখন বেহুশ। তবে ঠিক আছে কিন্তু তার পেটের মধ্যে বাচ্চাটাকে মারতে পারিনি।

–“কি বলছেন ডাক্তার?

–“হ্যাঁ আমরা অনরক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমি এটা নিয়ে কাল বোর্ড মিটিং করবো তারপর কি করা যায় দেখা যাবে। ততক্ষণ আপনার মেয়েকে হাসপাতালেই থাকতে হবে।

এটা বলে ডাক্তার চলে যায়। আর নির্ঝর সাহেব ফ্লোরে বসে পড়ে। আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে? বড় মেয়েটা অস্বাভাবিক ভাবে মারা গেলো। আবার ছোট মেয়েটার ও এমন এম অদ্ভুত সমস্যা দেখা দিলো। তার সাথে এমন কেন হচ্ছে? আমার কোনো পাপের ফল আমার মেয়েরা ভোগ করছেনা তো?

নির্ঝর সাহেব কথা গুলে মনে মনে ভাবছিলো। হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় অতীত এর কথা। তার চোখে তখন ভয় আর আতঙ্কের ছাপ। না না এমনটা হতে পারেনা। যে মারা যায় সে কখনো ফিরে আসেনা। এটা একটা হাকিকতই হবে।

এদিকে কাব্যর মনে তখন নানা রকম প্রশ্ন বিরাজ করছে। ইশার পেটা সাপের বাচ্চা কি করে আসলো?আর সাপের বাচ্চাটাকে ডাক্তার কেন মারতে পারলোনা। এই সাপের বাচ্চার সাথে অশরীরী কিছুর হাত নেই তো? নাকি এমনিতেই এমন কিছু হচ্ছে? না কিছু বুঝতে পারছেনা।

ওদিকে পরেরদিন সকালে ডাক্তারের বাড়িতে তার লাশ পাওয়া যায়। পুরো শরীর নীল হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে বিষাক্ত কোনো সাপ কামড়েছে। আরেকটা বিয়ষ লক্ষণীয় ডাক্তারের পেটে ছোট একটা ফুটো পাওয়া যায়। আর সেখানে একটা সাপের মৃত বাচ্চা পাওয়া যায়। ডাক্তারের এমন মৃত্যু দেকে সবাই অনেক ভয় পেয়ে যায়। কারন এমন কঠিন মৃত্যু কি করে হতে পারে।

নির্ঝর সাহেব ও ভেঙে পড়ে, কারন তার মেয়ের চিকিৎসা যে করছিলো সে মারা গেছে। আর পুরো হাসপাতালের লোক বলছে ইশার সাথে অশরীরী কিছু আছে তাকে চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তারের এমন মৃত্যু হয়েছে। তাই ইশার চিকিৎসা করতে কেউ রাজি নয়।নির্ঝর সাহেব তখন কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা।তার মেয়ের সাথে কেন এমন করছে? তার মেয়ে তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন সে এমন কষ্ট পাচ্ছে?
.
.
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here