গল্পঃএকাকিত্বের_ছায়াসঙ্গী,পর্বঃএক

গল্পঃএকাকিত্বের_ছায়াসঙ্গী,পর্বঃএক
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

“নিজেকে বাঁচাতে হলে তানিশার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করতে হবে নয়তো নিজেকে মনিরার হাতে মরতে হবে”।
মনিরার সাথে লড়ার মতো ক্ষমতা আবিরের নেই।মনিরা ওকে মুহুর্তে শেষ করে দিতে পারে।আবির কিছুতেই নিজেকে বাঁচাতে পারবে না।আবির মাথা তুলতেই দেখলো মনিরা ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।মনিরা আবিরকে বলল
->কি সিদ্ধান্ত নিলে বলো এখন?
->আমি তোমার কথায় রাজি।
->গুড বয়।এখন যাই রাতে আসবো তোমার কাছে।

মনিরা আবিরের সামনে থেকে চলে যাওয়ার পর আবির পুকুর পাড় থেকে উঠে পড়লো।ফসলি জমি,গাছপালায় ঘেরা জায়গার মাঝখানে অবস্থিত শত বছরের এই পুরুনো পুকুর।আবির নিজের একাকিত্বের সময় এখানে বসে কাটায়।আবির হাঁটছে আর তার অতীতের কথা মনে করছে।আবির বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।ছোট বেলা থেকে সে কখনো কারো সাথে মিশতো না।স্কুলে পড়া চলাকালিনও তেমন কোনো বন্ধু ওর জুটেনি।আর কলেজে তো ওর পড়ার ভাগ্য হয়ে উঠেনি ফ্যামিলির কারনে।আবির যখন পূর্ন বয়স্ক হলো তখন সে বুঝতে পারলো বন্ধু বান্ধব না থাকা কতটা কষ্টের।নিজেকে প্রতিটা মুহুর্তে একা মনে হয়।জীবনের এমন কিছু বিষয় আছে,এমন কোনো কথা আছে যা বন্ধু-বান্ধব ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করা যায় না।আবিরের মাঝে মধ্যে বেশ খারাপ লাগে এটা ভেবে যে ওর মা-বাবা চাইলেই ওকে খোলামেলা পরিবেশে বড় করতে পারতো সবার সাথে মিশতে দিতে পারতো কিন্তু তারা তা করেনি।ছোট বেলা থেকে ওকে একা থাকতে শিখিয়েছে।যার ফলস্বরূপ নিজেকে এখন সবার থেকে আলাদা মনে হয়,মা-বাবা থাকার পরও মনে হয় সে একা।মাঝে মধ্যে তো অজানা কারনে সে ডিপ্রেশনে চলে যায় যা থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।অনেকে ভাববে যে,ছেলেদের আবার কিসের একাকিত্ব?একাকিত্বে তো মেয়েরা ভুগে,কেননা একজন মেয়েই তো সবচেয়ে একা।তাকে যদি তার প্রিয় মানুষ সময় না দেয়,তাকে বুঝতে না পারে তাহলে কি তার মতো একাকি আর কেউ আছে নাকি?আসলে শুধু মেয়েরা নয় ছেলেরাও এরকম একাকিত্বে ভুগে তাও সেটা চরম ভাবে।যা কাউকে বলা যায় না,বা কেউ বুঝতেও চায়না।আবিরের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এরকম হয়েছে।
আবির তার এই একাকিত্বের সময়টুকু এই পুকুর পাড়ে বসে কাটায়।যখন সে পুকুরের ধারে বসে থাকে তখন অনেক মাছ একদম ওর কাছে চলে আসে।আবির মাছের দিকে তাকিয়ে হাসে আর ভাবে হয়তো এই মাছ গুলো ওর একাকিত্বের সঙ্গী হয়েছে।এভাবে অনেকদিন কেটে যায়।
একদিন আবির বসে আছে এমন সময় এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রান এসে ওর নাকে লাগে।ঘ্রান এমন মনে হচ্ছে সে অনেক রকমের ফুলের বাগানে বসে আছে,আর সে সমস্ত ফুলের গন্ধ একত্রে এসে ওর নাকে লাগছে।কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এই জায়গায় একটা ফুলের গাছও নেই।আবির সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে পুকুর পাড় থেকে চলে যায়।তিন দিন ধরে আবির একই রকম ঘ্রান পাচ্ছে।
আজ যখন আবির সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলো তখন আশেপাশের মানুষ কেমন যেন অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মানুষের এভাবে তাকিয়ে থাকার কারন আবির বুঝতে পারছে না।সে বার বার নিজের শরীরের দিকে দেখছে আর ভাবছে কোনকিছু আবার উল্টো করে পড়েনি তো?কিন্তু সে দেখলো,সব তো ঠিকই আছে।তাহলে কি দেখছে সবাই?এমনকি প্যান্টের চেইনও তো লাগানো আছে।তাহলে এরা দেখছে কি?আবার কেউ কেউ ওকে নিয়ে কি যেন বলাবলি করছে ব্যাপারটা কি?
আবির কারো কথা আর না ভেবে সোজা হেঁটে যেতে লাগলো।এমন সময় ওর পাশ দিয়ে একটা ছেলে যাচ্ছিলো সাইকেল নিয়ে।হঠাৎ সে আবিরকে দেখে সাইকেল থামিয়ে ওকে দেখতে থাকে।
আবির বাসায় চলে আসে।ওর রুমে আসার পর আবারো আবিরের নাকে সেই একই রকম ঘ্রান পেলো।আবির ওর মাকে ডাকলো।আবিরের ডাক শুনে ওর মা আয়েশা বেগম এসে বলল
->কি রে ডাকছিস কেন?
->মা।রুমে এতো ফুলের গন্ধ কই থেকে আসছে।কেউ কি ফুল এনেছে নাকি?
আয়েশা বেগম ভ্রু কুচকে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল
->কোথায় ফুলের গন্ধ আর বাসায় ফুল কে নিয়ে আসবে শুনি?
->তুমি কি একটুও ফুলের গন্ধ পাচ্ছেন না?
->আরে না।ফুলই নেই আর ফুলের গন্ধ আসবে কই থেকে।
আবির আর কিছু বললো না।রাতের বেলা কোনো এক মেয়ের হাসির শব্দে আবিরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর আবির বুঝতে পারছে না সে কোথায় আছে।সব কেমন যেন এলোমেলো লাগছে।একটু বাদে সে বুঝতে পারলো এখন সে নিজের ঘরে আছে।পুরো ঘর অন্ধকার।বাইরে থেকে হালকা আলো এসে ঘর কিছুটা আলোকিত করেছে।তবে আবির একটা বিষয় লক্ষ্য করলো যে ওর রুমের এক কোণে কারো একটা আবছা সাদা রংয়ের ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে।ছায়ামূর্তি অনেকটা মেয়ের মতো।আবির মনের ভুল ভেবে চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুললো।কিন্তু তখনও সেই ছায়ামূর্তি একই রকম দেখা যাচ্ছে।আবির বাধ্য হয়ে রুমের লাইট জ্বালালো কিন্তু তখন আর সে কাউকে দেখতে পেলো না।মনে একটু ভয় ভয় করতে লাগলো তাই সে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন আবির যখন বাইরে বের হলো তখনও একই অবস্থা সবাই কেমন যেন ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।আবির কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা ওর বাবার দোকানে চলে আসলো।সারাদির দোকানে থাকলেও আবির প্রতিদিন বিকেল বেলা সেই পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকে।আজও আবির সেখানে এলো।আবারো ওর নাকে একই রকম ঘ্রান লাগলো।আবির ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিলো না।তবে ঘ্রানটাও ওর ভালো লাগছে।মনে মনে ভাবছে হয়তো এই মিষ্টি ঘ্রান ওর একাকিত্বের সঙ্গী হয়ে ধরা দিয়েছে হাহা।তারপর সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে সে চলে গেলো।আজও ঠিক মানুষজন একই ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
রাতের বেলা আবির ওর মা-বাবার সাথে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে এমন সময় আবিরের বাবা মাহমুদ বলল
->আবির তোমাকে একটা কথা বলার আছে?
->হ্যাঁ আব্বু বলো।
->তুমি কি কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে আছো?
আবির বাবার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো তারপর বলল
->কার সাথে সম্পর্কে জড়াবো আমি বাবা।কোনো মেয়ের সাথে কি আমার পরিচয় আছে,তুমিই বলো।যদি কলেজে পড়তাম তাহলে হয়তো কারো না কারো সাথে পরিচয় হতো তাহলে না এ কথা বলতে পারতে কিন্তু এটা তো হয়নি।
->হ্যাঁ জানি।কিন্তু এলাকার লোকজন আমায় আজ ডেকে বলছে,দুইদিন ধরে তুমি নাকি দেখতে অনেক সুন্দর একটা মেয়েকে নিয়ে এলাকার মধ্যে ঘুরাঘুরি করছো।
এই কথা শুনে আবির নিজেই হতবাক হয়ে গেলো।আবিরের মা একটু চেচিয়ে বলল
->কিসব ভুলভাল বকছো তুমি হ্যা?আমার ছেলে কেমন তা তুমি ভালো করেই জানো।আর যাইহোক সে এমনটা কখনো করতে পারবে না যদি কারো সাথে সম্পর্কে থাকে তবুও।
তখন মাহমুদ একটু নরম সুরে বলল
->আমি জানি আমার ছেলে কেমন?কিন্তু পাড়ার এতগুলো মানুষ কি মিথ্যা বলছে?আবার আবির নাকি তাকে নিয়ে আমার দোকান পর্যন্ত গিয়েছে?
আবির এসব শুনতে শুনতে বলে উঠলো
->আব্বু আজ পর্যন্ত আমি একটা মেয়ের সাথে ঠিক মতো কথা বলতে পারলাম না আর সেখানে একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরাঘুরি এটা তো আমার দ্বারা সম্ভব না।আর আমি সত্যি কোনো মেয়েকে নিয়ে ঘুরিনি।সবাই কেন এমনটা বলছে আমি বুঝতে পারছি না।আর দুইদিন ধরে কেন জানি সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।
->মেয়ে নিয়ে ঘুরলে তাকিয়ে থাকবে না তো কি করবে?
->সত্যি আমি কাউকে নিয়ে ঘুরিনি।
->হয়েছে আর মিথ্যা বলতে হবে না।
আবিরের কথা ওর বাবা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।আর আবির মনে মনে ভাবছে,সে তো এমন কিছু করেনি তাহলে সবাই কেন এরকম কথা বলছে।আবির রুমে এসে বসে আছে তখন আবিরের মা রুমে এসে ওর পাশে বসলো।তারপর আবিরের কাঁধে হাত রেখে বলল
->আবির তোমার বাবা যা বলছে সেটা কি সত্যি?
->না আম্মু।আমি সত্যি কারো সাথে ঘুরিনি।
->তাহলে মানুষ এসব বলছে কিভাবে?
->জানি না।
->ঠিক আছে।তবে আমাদের থেকে যেন কোনো কিছু লুকিও না পড়ে কিন্তু তোমারই সমস্যা হবে।
আবিরের মা চলে গেলেন।এসব কথা ভেবে আবিরের বেশ রাগ হচ্ছে।সে যেটা করেনি,সেটা মানুষ কেন বলছে?সে ভালোভাবে আছে সেটা কি মানুষের সহ্য হচ্ছে না নাকি অন্য কোনো ব্যাপার আছে।
এত কিছু ভাবতে ভাবতে আবিরের মাথার প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলো।আবির লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।মাথা ব্যথায় ঘুমও আসছে না ঠিক ভাবে।আবির চিৎ হয়ে শুয়ে আছে এমন সময় আবির ওর কপালে কারো অত্যন্ত নরম কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো।স্পর্শে আবিরের সারা শরীর জুড়ে অজানা এক শিহরন বয়ে গেলো।আবির দেখলো ওর সামনে একটা মেয়ে বসে আছে।দেখতে অপরূপ সুন্দরী।হলদে সাদা গায়ের রং,টানা টানা চোখ,লাল টকটকে ঠোঁট।হালকা বাদামী রংয়ের চুল মাথার ওপর খোপার মতো করে বাধা।চুলের সাথে সোনালী রংয়ের কি যেন আটকানো,তার শরীরের আলোয় যেন পুরো ঘর আলোকিত হয়ে আছে।মেয়েটি আবিরের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আবির যেন এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেছে।এত সুন্দর মেয়ে সে আগে কখনো দেখেনি।আবির কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
->কে আপনি?
তখন মেয়েটি যেন একজন স্বাভাবিক মেয়ের মতো হয়ে গেলো।ওর শরীর থেকে আর আলো ছড়াচ্ছে না।তখন মেয়েটি আবিরের দিকে মায়াবি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
->আমায় মাফ করে দাও।আমার জন্য আজ তোমার বাবার কাছে তোমাকে এত অপমানিত হতে হয়েছে।
আবির মেয়েটির কথা যেন কিছুই বুঝতে পারছে না।আবির বলল
->আপনার কথার মানে বুঝলাম না।আর আপনিই বা কে?এখানে আসলেন কি করে বলুন তো?
->আমার নাম মনিরা।আর এই কয়দিন আমি তোমার সাথে সাথে হাঁটতাম।সবাই আমায় দেখেছে কিন্তু তুমি আমায় দেখতে পারোনি।এজন্য কিছু বুঝতে পারছো না।
->কিন্তু আপনি এমনটা কেন করেছেন?আমি আপনাকে দেখতে পারিনি কেন?
->বুঝে নাও।
আবির তখন ভাবতে লাগলো।হঠাৎ সে মনে মনে ভাবলো,আমি যেহেতু ওকে দেখতে পারিনি তার মানে আর যাই হোক এটা কোনো সাধারন মেয়ে নয়।আবির চিৎকার করতে যাবে তার আগে সে মেয়ে আবিরের কাছে এসে ওর মুখ চেপে ধরলো।আর বলল
->চিৎকার করলে একদম ঘাড় মটকে দিবো।আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।আমি শুধু তোমার বন্ধু হতে চাই।তোমার প্রতিটা মুহুর্তে আমি তোমার ছায়া সঙ্গী হয়ে থাকতে চাই।
আবির মনিরার কথা শুনে চোখ বড় বড় করলো।আবির অনুভব করলো সেই ফুলের মিশ্রিত মিষ্টি ঘ্রান মনিরার শরীর হতে আসছে।ওর নিঃশ্বাসেও কেমন যেন একটা মিষ্টি ঘ্রান মিশে আছে।আবিরের কাছে কেমন যেন লাগছে।আবিরের থেকে মেয়েটি ওর হাত সরিয়ে নিলো।আবির এখনো বেশ ভয় পেয়ে আছে।আবির ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল
->আপনি কোথায় থেকে এসেছেণ?
->তুমি যে পুকুর পাড়ে বসে থাকতে সেখান থেকে।তোমাকে প্রতিদিন দেখতে দেখতে আমার ভালো লেগে গেছে।আর আমি তোমাকে মনে প্রানে নিজের করে চাই।
এই বলে মেয়েটি আবিরের কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো।আবির মনিরাকে দেখে পিছন দিকে সরে যেতে লাগলো।মনিরার আবভাব সুবিধার ঠেকছে না।মনিরা আবিরের হাত দুটো স্পর্শ করলো।আবিরের শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো।মনিরা নিজের ঠোঁট আবিরের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসছে,আবির বুঝতে পারছে যে মনিরা ওর সাথে কি করতে চলেছে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here