একাকিত্বের_ছায়াসঙ্গী,পর্বঃদুই

#গল্পঃএকাকিত্বের_ছায়াসঙ্গী,পর্বঃদুই
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

সকালবেলা আবির ঘুম ভাঙ্গার পর দেখলো সারা বিছানা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে আছে।হঠাৎ রাতের কথা মনে পড়লো ওর।তখন সে কিছুটা ভয় পেলো।আবির ভাবলো সে হয়তো স্বপ্ন দেখেছে এটা।আবির তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠলো তখন সে ওর কোমড়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলো।আর শরীরে কেমন যেন আচরের দাগ দেখতে পেয়ে অবাক হলো।তার মানে কি রাতে সত্যি সত্যি ওর সাথে ওই মেয়েটির সাথে কিছু হয়েছে?হুম সত্যি হয়েছে সেটা আবির বাথরুমে আসার পর ভালো ভাবে বুঝতে পারলো।আবির গোসল করার সময় ভাবছে আর যাই হোক মনিরা সাধারন কোনো মেয়ে নয়,সে জ্বীন-পরীদের মধ্যে কিছু একটা হবে।আর ওর সাথে যেটা করেছে সেটা করা একদম উচিত হয়নি।আবির খুব আফসোস করতে লাগলো।আর ঠিক সে সময় আবির আবারো ওর পিঠে কোমল হাতে স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে ঘুরে দেখলো সে আবিরের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আবির তৎক্ষণাৎ তোয়ালে নিয়ে নিজেকে ঢাকা চেষ্টা করলো।তখন মনিরা বলল
->হয়েছে আর নিজেকে ঢাকতে হবে না।রাতে কত কি করলে আর এখন ঢং করা হচ্ছে।
->দেখুন আমি ইচ্ছা করে কোনো কিছু করিনি।
->তুমি না করলেও তোমার সবকিছু আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলো।
->ভুল হয়ে গেছি আপনি আমায় মাফ করে দিন।
->ধুর বোকা মাফ চাইছো কেন?তুমি আমার আমি তোমার।
->আমি জানি আপনি কোনো সাধারন মানুষ নয়।আপনি যেটা করছেন সেটা মোটেও ঠিক না।
->ভালোবাসা কোনো জাত-পাত দেখে হয়না।আমি তোমায় ভালোবাসি আর তাই তোমার ওপর আমার সম্পূর্ন অধিকার রয়েছে।কিন্তু আমার এসব করা উচিত হয়নি,তুমি আমায় মাফ করে দাও।
মনিরা আবিরকে এমন ভাবে কথাটা বলছে,কেউ ওর কথা ফেলতে পারবে না।আবির বলল
->ঠিক আছে।
এমন সময় আবিরের মা আয়েশা বেগম বললেন,”আবির তাড়াতাড়ি বের হ,তোর বাবা দোকানে যেতে বললো”।মনিরা হেসে উঠে অদৃশ্য হয়ে গেলো।তবে আবিরের কেন জানি মনিরাকে দেখে তেমন একটা ভয় পাচ্ছে না।রাতে যখন মনিরা আবিরের সামনে ঘনিষ্ঠ হতে যাচ্ছিলো তখন সে মোটেও ওকে তেমন বাধা দেয়নি।উল্টো সাধরে গ্রহন করেছিলো ওকে।প্রথম স্পর্শ সে নিজেও পেতে চেয়েছিলো।সে এটাও ভুলে গিয়েছিলো যে মনিরা সাধারন কোনো মানুষ নয়।আবির বাথরুম থেকে বের হয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে দোকানে গেলো।আবির কাজ করছিলো তখন সে দেখতে পেলো মনিরা রাস্তার ওপাশে দাড়িয়ে আছে,পরণে কালো রংয়ের পোশাক।মুখে লেগে আছে মায়া ভরা হাসি।আবির নিজেও হাসলো।মনে মনে ভাবছে মেয়েটা আসলে কে আর কেউ কি ওকে দেখছে না?শুধু কি সে নিজেই দেখতে পারছে ওকে।অনেক মানুষ তো যাচ্ছে ওর আশপাশ দিয়ে কিন্তু কোনো মানুষকে দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা কেউ মনিরাকে দেখতে পাচ্ছে।কারন ওর মতো সুন্দরী একটা মেয়েকে দেখে মানুষ তার দিকে তাকাবে না এমন হতেই পারে না।তবে এটা ভেবে আবিরের কেমন যেন নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ হচ্ছে যে ওর মতো একটা ছেলেকে এমন সুন্দরী কেউ একজন ভালোবাসে।তবে সে মানুষ হোক আর যাইহোক সে যে আবিরকে ভালোবাসে এটাই অনেক।
আবির প্রতিদিনের মতো আজও ওই পুকুর পাড়ে বসে থেকে পানিতে ঢিল ছুড়ছে।এমন সময় কেউ একজন ওর পাশে এসে বসলো।আবির তাকিয়ে দেখলো মনিরা।একদম সাধারন মেয়ের মতো এসে বসে আছে।মুখে তার মিটিমিটি হাসি লেগে থাকে।আবির বলল
->আপনি কি সবসময় আমার সঙ্গে থাকেন?
->হুম তোমার ছায়াসঙ্গী হয়ে।আর একটা কথা আমায় আপনি নয় তুমি বলে সন্মোধন করবে।
->আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে এখন তোমার পরিচয় বলো।তুমি আসলে কে?
->আমি একটা পরী।আমি এই পুকুর পাড়ে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি।
আবির মনিরার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।আবির বলল
->তাহলে তোমার বয়স তো অনেক বেশি।কিন্তু এখন তো তোমায় দেখে মনে হয় তোমার বয়স মাত্র ১৮-২০ এর মতো।
আবিরের কথা শুনে মনিরা হাসলো।আবির ওর হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে কোনো মেয়ের হাসি এতটা মিষ্টি কি করে হতে পারে।মনিরা বলল
->আমাদের বয়স অনেক বেশি হলেও আমাদের রুপ যৌবন সাধারন মানুষের থেকে বেশি থাকে।যেকারনে আমাদের বয়স বাড়লেও চেহারার পরিবর্তন হয়না।
->বুঝলাম।জানো আমায় একা একা আর ভালো লাগে না।কেমন জানি লাগে আমার,সবকিছুতে বিরক্তিকর একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
->হুম একাকিত্ব মানুষকে মানসিক ভাবে মেরে ফেলে।তবে চিন্তা করো না এখন আমি আছি।তোমার আর ডিপ্রেশনে থাকতে হবে না।
আবির ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর আবির ঘাসের ওপর শুয়ে পড়লো।ওর পাশে মনিরা শুয়ে পড়লো।মনিরা ওর হাত দিয়ে অনেক কিছু করছে।আবির যত দেখছে তত মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ কোথা থেকে একটা সোনালী রংয়ের অপরুপ সুন্দর এক ঝাক পাখি এসে ওদের চারপাশে ঘিরে বসলো।আবির পাখি গুলোর দিকে দেখছে।আবির মনিরার দিকে তাকাতেই দেখলো সে মিটিমিটি হাসছে আর মনে মনে কি যেন বলছে।আবির বলল
->তার মানে এই পাখিগুলো তুমি এনেছো?
->হুমম।কেন পছন্দ হয়নি তোমার?
->,হ্যাঁ খুব পছন্দ হয়েছে।তুমি আসলেই অনেক কিউট।
মনিরা আবিরের দিকে মুখ করে মুচকি হাসলো।তারপর সে আবিরের দিকে মুখ দিয়ে ফু দিলো।ওর মুখের বাতাসের ঘ্রানে যেন শত শত ফুলের গন্ধ মিশ্রিত আছে।আবির চোখ বন্ধ করে সেটা অনু্ভব করতে লাগলো।আবির যখন চোখ খুললো তখন দেখলো মনিরা আর সেখানে নেই।সাথে পাখি গুলোও চলে গেছে।আবির উঠে পড়লো আর বাসার দিকে রওনা দিলো।আবির ওদের এলাকার মোড়ে চলে এসেছে এমন সময় সেখানে দাড়ানো পাড়ার বখাটে ছেলে রকি আবিরকে ডাকলো।আবির তার কাছে গিয়ে বলল
->হ্যাঁ ভাই বলুন।
রকি আবিরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল
->যে তাহার শ্রী মেয়ে নিয়ে ঘুরে শুশ্রী।
->মানে?
->কচি খোকা কিছু জানেনা।দুইদিন যে মেয়েকে সাথে নিয়ে ঘুরলি তার নাম কি বল?আর ওত সুন্দর মেয়ে কি করে পটিয়েছিস?
আবির বুঝলো যে,ওর সাথে মনিরাকে এরাও দেখতে পেরেছে।আবির সেটা না বলে বলল
->আমি তো কোনো মেয়েকে নিয়ে ঘুরিনি।
তখন রকির সাথে বসে থাকা ওর এক চেলা রেগে গিয়ে বলল
->তোর সাহস কি করে হয় আমার বসের সাথে মিথ্যা কথা বলার।
->আমি মিথ্যা বলিনি সত্যি বলছি।
আর তখনই রকি ওর কলার চেপে ধরে বলল
->ঠিক আছে বলবি না তো তাই না?কোনো ব্যাপারনা আমি মেয়েটার খোঁজ নিবো।আর তোকেও দেখে নিবো এখন যা।
এই বলে রকি আবিরকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো।আবির মাটি থেকে উঠে ওর কাপড় ঝাড়লো।আর ওদের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় ভাবে হাসলো।রাতের বেলা আবিরের মা আয়েশা বেগম বলল
->আবির ওই রকি নামের ছেলে নাকি আজ তোকে ধরেছিলো?
->হুম তুমি কি করে জানলে?
->কথা বসে থাকে না বাবা।তুই যেন ওদের ধারের কাছে যাস না কেমন ওরা কিন্তু ভালো ছেলে না।তুই আমাদের একমাত্র ছেলে তোর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমরা কাকে নিয়ে বাঁচবো।
আবির হেসে উঠে ওর মাকে বলল
->চিন্তা করো না মা আমার কিছু হবে না।
->তারপরেও দুরে দুরে থাকবি কেমন?
->আচ্ছা ঠিক আছে মা।
আবির রুমে এসে শুয়ে পড়লো।মনে মনে ভাবছে কালকের মতো কি আজও মনিরা রাতে ওর কাছে আসবে?তবে কালকের রাতের কথা ওর আজীবন মনে থাকবে।কি শান্তিময় এক ভালো লাগার রাত ছিলো।আবির চোখ বন্ধ করে সেটা আবার অনুভব করার চেষ্টা করছে।দুইজন যেন একজন হয়ে গিয়েছিলো।এমন সময় আবির ওর হাতে নরম স্পর্শটি পেলো।আবির চোখ খুলে দেখলো মনিরা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আবির উঠে বসে পড়লো।তখন মনিরা বলল
->ওই ছেলেরা তোমার সাথে যখন ওই রকম ব্যবহার করলো তখন আমার খুব রাগ হয়েছে।তুমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পাওনি তো?
->তেমন না।হাতে একটু লেগেছে।
তখন মনিরা আবির হাতে হাত বুলিয়ে দিলো মুহুর্তে যেন আবিরের ব্যথা দুর হয়ে গেলো।আবির অবাক হয়ে ভাবছে
->এটা কি করে সম্ভব?
->আমার দ্বারা অনেক কিছুই সম্ভব।
মনিরা আবিরের কাছে এসে ওর ঠোঁটে চুমু দিলো তারপর বলল
->কেমন?
->মিষ্টি।
মনিরা হেসে উঠে আবারো আবিরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
সকালবেলা আবির শুয়ে আছে এমন সময় শুনতে পেলো বাইরে কারা যেন বলছে,রকি খুন হয়েছে।কথাটা শুনে আবির লাফ দিয়ে উঠে পড়লো আর দেরি না করে সে বাইরে আসলো।বাইরে এসে জানতে পারলো রাস্তার মোড়ে নাকি রকির লাশ পাওয়া গেছে।ওকে নাকি খুব নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে।আবির দেরি না করে তাড়াতাড়ি সেখানে পৌছে গেলো।আর সেখানে এসে আবিরের লাশ দেখে সে নিজেই চমকে গেলো।খুব ভয়ানক ভাবে ওকে মারা হয়েছে।পা দুটো টেনে এনে কাঁধের ওপর রেখে হাত দিয়ে গিট্টুর মতো বেধে রাখা হয়েছে।হাত দেখে মনে হচ্ছে সেটাকে দড়ির মতো ব্যবহার করা হয়েছে।পেট মাটির সাথে লেগে আছে।মাথা উচু হয়ে আছে।আর মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে।এমন লাশ দেখে প্রত্যেক মানুষের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।আবির দেখতে পেলো রকির লাশের পাশে মনিরা দাড়িয়ে আছে।মনিরা আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
->যে আমাদের মাঝে বাধা হয়ে দাড়াবে আর তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে তার অবস্থায় এমন হবে।
তার মানে এটা মনিরা করেছে।আবির এখন বুঝতে পারছে মনিরা দেখতে যতটা ভালো তার চেয়ে সে ভয়ংকরী বেশি।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here