গল্পঃআসলে_সে_কে?,পর্বঃদুই
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)
আকাশ ডাক্তারের সাথে সৌরভের লাশের কাছে এসে আৎকে উঠলো।সৌরভের পেটের ওপর বসে আছে অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির এক প্রকারের মানুষ।যাদের হাতে তলোয়ারের মতো কিছু একটা।তাদের চেহারা একদম ভয়ংকর আর কালো কুচকুচে।এদের উচ্চতা এক-দুই ইঞ্চির চেয়ে হবে।প্রায় ১০-১২ টার মতো ওইরকম মানুষ বসে আছে।আকাশ বলল
->ডাক্তার সাহেব এসব কি দেখছি আমি?
->বুঝতে পারছি না আমি।সৌরভের পেট কাটতেই এরা বের হয়ে এসেছে ওর পেট থেকে।সংখ্যায় ওরা অনেক কয়টা ছিলো।তাদের স্পর্শ করতে ওরা মারা গেছে আর এই কয়টা পেটের ওপর বসে আছে।
আকাশ ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
->সৌরভ কিভাবে মারা গেছে তা কি জানতে পেরেছেন?
->এমন কান্ড দেখে আমি আর হাত লাগায়নি।
সৌরভের মাথা কাটা থাকায় আগেই সব রক্ত পড়ে গিয়েছিলো তাই ওর শরীরের কাটা অংশ থেকে কোনো রক্ত বের হচ্ছে না।আকাশ আস্তে আস্তে সৌরভের লাশের দিকে এগিয়ে গেলো।সৌরভের পেটে ওপর বসে থাকা সেই ক্ষুদ্র মানুষদের স্পর্শ করতে তারা ছাইয়ের ন্যায় হাওয়ায় মিশে যেতে লাগলো।এ যেন এক প্রকার অবিশ্বাস্য ঘটনা।আকাশ একটু ভয় পেয়ে পিছনে সরে এলো।তারপর ডাক্তারকে বলল
->আপনি আপনার কাজ করুন।
ডাক্তার চুপ করে দাড়িয়ে আছে।আকাশ বুঝতে পারলো ডাক্তার আসলে ভয় পাচ্ছে তাই বলল
->আপনি ভয় পাবেন না আমি দুইজন পুলিশ কন্সটেবলকে এখানে রেখে যাচ্ছি।কোনো সমস্যা হলে তাদের জানাবেন।
আকাশের কথায় ডাক্তার মনে একটু সাহস পেলো।আকাশ সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।রিমন আকাশকে বলল
->স্যার এমন ঘটনা আমি এই প্রথম দেখলাম।এটা কি করে হতে পারে বুঝতে পারছি না।
->আমিও বুঝতে পারছি না।তবে আমাদের এই কেসের শেষ পর্যন্ত পৌছাতে হবে।তাই তুমি সৌরভের পুরো ডিটেইলস বের করে ফেলো,তার বন্ধু কয়জন,সে কার সাথে বেশি সময় কাটাতো।সে কোথায় যেত সব খবর আমার চাই।আর শেষ ফোন কার নাম্বার থেকে ওর ফোনে এসেছিলো সেটার খোঁজ নাও।আর তাড়াতাড়ি আমায় জানাও।
->ওকে স্যার।
নিরা কফি খেতে খেতে বিছানার ওপর বসে ওর ল্যাপটপ ওপেন করলো।অনলাইনে যেতে দেখলো নতুন একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এসেছে।নাম রিফাত আহমেদ।নিরা ছেলেটার আইডিতে গিয়ে ভালো করে পুরো আইডি দেখতে লাগলো।ছেলেটার চেহারা অনেক সুন্দর আর দেখে বেশ বড়লোক বলে মনে হচ্ছে ওর।নিরা রিফাতের সাথে মেসেজে কথা বলতে লাগলো।রিফাতের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলো সে আসলে সাইমনের চেয়েও অনেক বড় লোক।রিফাত নিরাকে বলল
->আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
->এত তাড়া কিসের?একটু ধৈর্য ধরো।
->তোমায় দেখার পর থেকে আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছি না।
->হাহা।
এর মধ্যে সাইমনের ফোন আসলো।নিরা ফোন রিসিব করে সাইমনের সাথে কথা বলছে আর একদিকে মেসেজে রিফাতের সাথে কথা বলছে।ব্যাপারটা নিরার কাছে অনেক ভালো লাগে।সাইমন নিরাকে বলল
->আবার কবে আমরা দেখা করছি।
->পরে জানিয়ে দিবো।
->ঠিক আছে।
নিরা ওদের দুইজনের সাথে কথা বলা শেষ করে একটা রুমে প্রবেশ করলো।তারপর একটা ছবির সামনে দাড়িয়ে পড়লো।একটু বাদে ওর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।নিরা কাঁদছে অঝোর ধারায়।নিরা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,”আমি কখনো তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কারো কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা কখনো ছিলো না।কিন্তু আপসোস এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।তুমি আমায় মাফ করে দিও।এসব করতে আমার অনেক কষ্ট লাগে কিন্ত এছাড়াও আমি থাকতে পারিনা”।কারন এদের মতো ছেলেদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।নিরা চোখ মুছে বাইরে চলে গেলো।
আকাশ কেবিনে বসে আছে এর মধ্যে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে ডাক্তার চলে এলো।আকাশ বলল
->কি জানতে পারলেন বলুন।
->আমি ভাবতে পারছি না যে একটা মানুষের শরীরের ভিতরের সবকিছু ফাঁকা হয় কি করে?
->আপনার কথার মানেটা ঠিক বুঝলাম না?
->সৌরভের শরীর কলিজা,হার্ট কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই।এমনকি পেটের ভুড়ি পর্যন্ত নেই।সবকিছু একদম উধাও হয়ে গেছে।
->ধুর কি সব বলছেন?
তখন ডাক্তার ওর ফাইল থেকে ছবি বের করে আকাশের হাতে দিয়ে বলল
->আপনার বিশ্বাস করানোর জন্য ছবি এনেছি।
আকাশ ছবি হাতে নিয়ে চমকে গেলো।সত্যি সৌরভের পুরো দেহের ভিতরটা ফাঁকা।এমন খুন আকাশ জীবনেও দেখেনি।আকাশ বলল
->ওর মৃত্যু কি করে হয়েছে?
->পেটের ওপর যে মানুষগুলো দেখেছেন ওরা সম্ভবত সবকিছু খেয়ে ফেলেছে।আর একটা কথা,সেই মানুষগুলোর জন্ম কিন্তু শারিরীক সম্পর্ক করার কারনে হয়েছে।অর্থাৎ কোনো মেয়ের শরীর থেকে ওর শরীরে এদের প্রবেশ ঘটেছে।
এই কথা শুনে আকাশ আরো অবাক হয়ে গেলো।এটা কিছুতে বিশ্বাস করার মতো না।যদি মেয়ের ক্ষেত্রে এমনটা হতো তাহলে ব্যাপারটা বিশ্বাস করা যেত।কিন্তু একজন পুরুষের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা কিছুতেই মানা যাচ্ছে না।আকাশ বলল
->এটা কি করে সম্ভব হতে পারে?
->আমি জানি না।আমি যেটুকু জেনেছি সেটুকু বললাম।আমি নিজেই এখন পাগল হয়ে যাবো এটা ভাবতে ভাবতে।
->সাথে আমিও পাগল হবো।
->তবে যে মেয়ের সাথে শারিরীক সম্পর্ক করার ফলে এমনটা হয়েছে সে মেয়ে কিন্তু একজন সাধারন মেয়ের থেকে আলাদা।তার শরীরে এমন কিছু আছে যা এর শরীরে প্রবেশ করে এরকম কিছু জন্ম দিয়েছে।
->বুঝলাম।
ডাক্তার আর কিছু না বলে চলে গেলো।এখন যে করেই হোক সেই মেয়েকে খুজে বের করতে হবে।কিন্তু সেই মেয়েকে খুজে বের করবে কি করে?এমন সময় এসআই রিমন হন্তদন্ত আকাশের সামনে এসে বলল
->স্যার সৌরভের পুরো খোঁজ খবর নিয়েছি স্যার।সৌরভ ছেলেটা মোটেও সুবিধার ছেলে ছিলো না।মেয়েদের সর্বনাশ করায় ছিলো ওর আসল উদ্দেশ্য।ওর কারনে তিনজন মেয়ে আত্মাহত্যা করেছে।আর ওর অনেক জনের সাথে সম্পর্ক ছিলো।আর প্রত্যেকের সাথে সম্পর্ক করার আসল উদ্দেশ্য ছিলো মেয়ের দেহ।
->অতিরিক্ত প্রশ্রয় পেয়ে ছেলেটা এমন হয়েছে।আচ্ছা যাদের সাথে ওর সম্পর্ক ছিলো ওদের সাথে কি যোগাযোগ করা যাবে?
->স্যার এদের মধ্যে অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে আর ওরা চাচ্ছে না এই বিষয়ে কথা বলে নিজের সংসারের অশান্তি সৃষ্টি করার।
->এই কথাটা এসব করার আগে ভাবতে পারে না ফাজিল মেয়ে-ছেলে গুলা।তারপরও চেষ্টা করো।
->হুম।
->আর শেষ শেষের কলটা এসেছিলো নিলাদ্রি চৌধুরী নামের এক মেয়ের নাম্বার থেকে।কিন্তু তার ফোনটা বন্ধ।আর ওর শেষ লোকেশন বালুঘাটের নদীতে দেখাচ্ছে।
->এই মেয়ের ঠিকানা জোগার করো।একে আমার সন্দেহ হচ্ছে।
->ওকে স্যার।
নিরা আয়নার সামনে বসে সাজগোছ করছে সাইমনের সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্য।এমন সময় দরজায় কে যেন নক করলো।নিরা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলো ওর সামনে পুলিশ দাড়িয়ে আছে।পুলিশ দেখে নিরা চমকে গিয়ে বলল
->আপনারা আমার বাড়িতে?
->আপনি কি নিলাদ্রি চৌধুরী?
->না তো।আমার নাম নিরা।
->নিরা?এই বাসা তো নিলাদ্রি নামের কারো যেন?
->তা আমি বলতে পারবো না কারন আমি কিছুদিন যাবৎ এখানে নতুন ভাড়ায় এসেছি।
->ও আচ্ছা তাহলে বাড়িওয়ালার ঠিকানা দিন।
->উপরের ফ্লাটে থাকেন উনি।
->আচ্ছা ধন্যবাদ।
পুলিশ অফিসার আকাশ নিরার কাছে কিছু জানতে না পেরে সে সোজা বাড়ির মালিকের কাছে চলে গেলো।বাড়ির মালিককে নিলাদ্রির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন
->এখানে নিলাদ্রি নামের একজন থাকতো আজ থেকে দুই বছর আগে।উনারা হাসবেন্ড ওয়াইফ ছিলো।তো একদিন রাতে হঠাৎ ওরা দুইজন কোথায় যেন যাওয়ার পথে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়।আর কোনো খোঁজ পাইনি তাদের।
->ও আচ্ছা।উনাদের কোনো জিনিকপত্র নেই আপনাদের কাছে?
->ছিলো।তবে ওরা মারা যাবার কিছুদিন পর ওই মেয়ের বাবা-মা এসে সব জিনিস নিয়ে যায়।
->উনাদের কোনো ঠিকানা জানেন?
->হুম একবার মেয়েটা বলেছিলো।
আকাশ ভাবছে নিলাদ্রি যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে ওর ফোন নাম্বার ব্যবহার করছে কে?নাকি নিলাদ্রি আসলেই মারা যায়নি?দুই বছর আগে মারা যাওয়া নিলাদ্রি ফোন নাম্বার চালু আছে,আবার সৌরভের এরকম অলৌকিক ভাবে মৃত্যু সব কিছু অস্বাভাবিক একদম।ভালো করে তদন্ত করতে হবে।
নিরা সাইমনের সাথে দেখা করতে এলো সেদিনের মতো।নিরা আজও সাইমনের সাথে ওর বাসায় গেলো আর দুইজন মিলে আবারো সেই আদিম খেলায় মত্ত হলো।শারীরিক সম্পর্ক চলাকালীন সাইমন অনুভব করলো ওর শরীর কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে এখনি সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।কিন্তু নিরা ওর দিকে তাকিয়ে ভয়ানক ভাবে হাসছে।সাইমন আর তাকিয়ে থাকতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।যখন সে চোখ খুললো তখন দেখলো,,,,।
চলবে,,,,,,