কায়নাত,পর্বঃ৯
লেখিকাঃ টিউলিপ রহমান
–আল্লাহ মানুষ এবং জ্বীন জাতিকে শুধু মাত্র তার ইবাদত বন্দেগী করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু জ্বীন জাতিতের মধ্যে ইবলিশ শয়তান তার বিরোধিতা করে এবং তার অনুশারীরাই মানুষের বিপদ ডেকে আনে।
তুমি বেশ কিছুদিন আগে এক সন্ধ্যায় ছাদে হাঁটছিলে, মনে আছে তোমার?
— আমি তো প্রতিদিনইই ছাদে যাই আর প্রতিদিনই হাঁটি!
–নাহ, প্রতিদিন সেভাবে হাঁটো না। সেদিন হাঁটতে হাঁটতে তুমি একটা ইটের সাথে বারি খেয়ে পড়ে যেতে নিচ্ছিলে
তোমার মনে আছে?
— ও হ্যাঁ, পায়ে আমি প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছিলাম। তারপর সেই ইটটাকে পাশে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম। হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে।
— ঐ ইট ছুঁড়ে ফেলাতে ছাদে এক জ্বীনের যমজ দুটো বাচ্চা খেলা করছিলো, তাদেরই একজন মারা গিয়েছিল।
— আল্লাহ! বলছেন কি? আমি তো তাদের দেখিই নি, তাহলে এটা কি আমার দোষ? বলুন?
–মানছি তোমার দোষ নয় কিন্তু ওদের বুঝাবে কে! এতেই ওরা এতোটা ক্ষেপেছে যে তোমার ক্ষতি না করা পর্যন্ত ওরা ক্ষ্রান্ত হবে না।
— আমি এখন কি করবো? আমার ভীষণ ভয় করছে। আমি তো জেনে এটা করিনি, যদি ওদের এটা বুঝিয়ে বলি তাহলে কি ওরা আমাকে মাপ করে দিবে??
— কি যে বলো তুমি! ওরা তোমাকে পারলে কেটে কুটি কুটি করে ফেলে রাখে, শুধু হাতের কাছে পায় না। ভুলেও এসব চিন্তা করে আবার ওদের কাছে চলে যেও না। তাহলে তোমাকে ওরা মেরেই ফেলবে।
আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। অন্যমনস্ক হয়ে চিন্তা করছিলাম তখন ইবাদত বলল
–তুমি জানতে চাইলে না আমি কিভাবে তোমার খোঁজ পেলাম বা কেনোই বা তোমার উপকার করছি?
— ও হ্যাঁ আসলেই তো আপনি কিভাবে আমার খোঁজ পেলেন বা দেখা পেলেন?
–তোমার বাবা, সে সাংঘাতিক রকমের একজন ভালো এবং সৎ মানুষ। আমরা জ্বীন জাতি সহজে মানুষের সংস্পর্শে আসিনা যতক্ষণ না সে আমাদের সংস্পর্শে আসে। আমরা মানুষের থেকে দুরে দুরে থাকি। তাই আমরা যারা ভালো আলেম জ্বীন আছি, মানে আমাদের মধ্যে কেও কেও মানুষের বেশ ধরে বা অদৃশ্য হয়েই মাঝে মাঝে মসজিদে নামাজ আদায় করি।
— আল্লাহ তাই! কি ভয়ংকর ব্যাপার। আপনারা নামাজও পড়েন?
–হুম। তবে বেশীরভাগ সময়ই আমরা মানুষের আড়ালে মসজিদে নামাজ আদায় করি। আমরা চাই না মানুষ আমাদের ইবাদত বন্দেগিতে বিরক্ত করুক। তাই রাতে যখন মসজিদ মানুষ শূন্য থাকে তখন আমরা ইবাদত বন্দেগী করি। তো একদিন ঝড়ের রাতে তোমার বাবা ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলেন।প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমরা জ্বীন জাতি ঝড়, বৃষ্টি, তুফান এগুলো খুব ভয় পাই। সেই ঝড়ের রাতেই আমি, আমার ছোট ভাই এবং আমার আব্বা আমরা নামাজ আদায় করে আমাদের গন্তব্যে দ্রুত চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পথিমধ্যে আকাশ থেকে একটা বাজ এসে পড়লো আমাদের উপর। আমি আর আমার আব্বা লাফ দিয়ে সরে তোমাদের বিল্ডিংয়ের আড়ালে আশ্রয় নেই কিন্তু আমার ছোট ভাই সেই বাজে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে রয়।আমার ভাই একটি বিড়ালের আকার ধারন করে অজ্ঞান হয়ে পরে থাকে। ঠিক সেই মুহুর্তে তোমার বাবা সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন আর তার খুব মায়া হয় আমর বিড়াল বেশী ভাইকে দেখে। তিনি ওকে তুলে একটু পানির ছিটা দেয়। এতে ওর জ্ঞান ফিরে। পরে ওকে পানি খাইয়ে ওর জীবন বাঁচায় এবং আমারা তার কাছে চিরজীবনের জন্য ঋনী হয়ে যাই।
— আসলেই আমার বাবার কাছে মানুষ, পশুপাখি বলে কোনো কথা নেই যখন যার বিপদ দেখেন তিনি সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
–এই জন্যই তো আমরা তাকে এতো পছন্দ করি। কিন্তু আজ তার এই বিপদের দিনে আমরা তেমন ভাবে তাকে সাহায্য করতে পারছি না।তারপরও জান দিয়ে হলেও তোমাকে আমি রক্ষা করবো। এটা আমার আব্বা হুজুরের হুকুম এবং আমার ওয়াদা।
— আপনিও তো জ্বীন! ওদের এক ঝটকায় শেষ করে দিন। আপনি ভালো জ্বীন, তাহলে আপনার শক্তি তো বদজ্বীনদের থেকে বেশী হওয়া উচিৎ তাই নয় কি??
— তা ঠিক। তুমি দেখবে ভালো মানুষের ক্ষমতা খারাপ মানুষগুলোর চাইতে কম। আমাদের বেলায়ও একই জিনিস। ওরা বেশ শক্তিধর। আমরা তাদের চাইতে অতি নগন্য! কিন্তু তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমি আছি, আমার জান দিয়ে হলেও তোমার জীবন রক্ষা করবো।
–আপনি খুব ভালো। আচ্ছা আমি যে বইয়ে পড়েছি জ্বীন দেখতে খুব ভয়ংকর! কিন্তু আপনি তো দেখতে তেমন না। আপনাকে দেখলে আমার বিন্দু মাত্র ভয় লাগে না। কেনো?? ( হেসে)
–কারন আমি তোমাকে ভয় দেখাই না তাই!
— আপনিও ভয় দেখান বুঝি? তা এ যাবৎ কতজনকে ভয় দেখিয়েছেন?
— এক জনকেও না।
–আমি জানি আপনি কাওকে ভয় দেখাতে পারেনই না।
–তুমি কিন্তু আমেকে চেলেঞ্জ করছো!
— হুম করছিই তো! পারলে একটু ভয় দেখান তো। আপনাকে দেখে খুব ভয় পেতে ইচ্ছা করছে।( হেসে)
–তুমি না খুব দুষ্টু একটা মেয়ে। তোমার মা যে তোমাকে বকে ঠিকই করে।
— আপনি এটাও জানেন আমার মা আমাকে বকে? তা আর কি কি জানেন আমার সম্পর্কে?
উনি হেসে বললেন,
— নাহ তেমন কিছুই না। শুধু এতটুকুই জানি তুমি ভুতের গল্পের বই পড়তে বেশ ভালোবাসো।
— হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন।
–আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাস্য করি?
— জী করুন।
–সত্যি বলবে কিন্তু, তুমি কি ঐ ছেলেটাকে পছন্দ করো?
— জ্বীনরা কি মনের কথা পড়তে পারে না? আমি তো শুনেছি ওরা মানুষের শিরায় শিরায় দৌড়াদৌড়ি করতে পারে। আপনিও বুঝে নিন আমি ওকে পছন্দ করি কি না! ! ( মিটি মিটি হেসে)
উনি একটু মন খারাপ করে দাড়িয়ে রইলেন। দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দেই। পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য এই কাজটা করতে পারলাম না। তবে তার শরীরের সুগন্ধটা আমার সমস্ত শরীর জুড়ে রয়েছে সেটাতেই আমি খুশি। তারপর উনি বলল
— অনেক রাত হয়েছে আমার মনে হয় তোমার এখন বাড়িতে যাওয়া উচিৎ। তোমার মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
–হ্যাঁ,কিন্তু মনে হচ্ছে এইখানে আরো কিছু সময় কাটাই, খুব ভালো লাগছে। ও আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি।
— কি?
–গতকাল রাতে ঘুমের মধ্যে কালো একটা বস্তু আমার গলা চেপে ধরেছিল। পরে ভাইয়া এসে ডাক দেওয়ার সাথে সাথে আমার ঘুম ভাঙ্গল। সেটা কি ঐ সব বাজে জ্বীন ছিল?না আমি স্বপ্ন দেখেছি।
— হুম ঐ টা ওরাই ছিল। সবচেয়ে বদরাগীটা তোমাকে মারতে এসেছিল।
–আল্লাহ সত্যি!! কি ভয়ংকর ব্যাপার! আমার ঘরে তারা অনায়াসে আসা যাওয়া করে?
— হুম। তোমার কি মনে হয় তোমার ভাইয়া এমনে এমনেই তোমার রুমে এসেছিল আর ওরা কিছু না করেই চলে গেল?
–হ্যাঁ, সেটাই তো! আমার রুমের দরজা লক করা ছিল তাহলে ভাইয়া এলো কি করে?তার মানে আপনি কি আমার রুমের দরজা খুলেছেন?
— হুম, আমি ছাড়া আর কে করবে বলো! আমিই তোমার ভাইয়াকে মনে মনে উদ্ভুদ্ধ করেছি যেনো ডাইনিং এ যায় এবং তোমাকে সাহায্য করে।
–আপনিও আমার বাসায় আসেন? আল্লাহ আর কি কি করেন? আমি যখন ওয়াশরুমে যাই তখনও কি আসেন ?
— নাহ কি যে বলো না, আমি তেমন জ্বীন না। তুমি জানো কত পরী আমার পিছে পিছে ঘুরছে? আমি কাওকে পাত্তা দেই না। টাইম নেই। একাই ভালো আছি। তবে কেও যদি আমার ডাকে সাড়া দেয় তাহলে তাকে নিয়ে সারাটা জীবন কোনো নিরিবিলি একটা দ্বীপে বাকীটা জীবন সুখে কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে। যদিও এটা সম্ভব নয়। আমি জানি। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা চাইলে কি না হয়!
তার এই কথা শুনে আমি একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। আমি জানি সে আমাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলছে। তারপর আমি মাথা নিচু করে তাকে বললাম
— ও তাহলে এই অবস্হা। আপনি তাকে ডাক দিন। আমার মন বলছে সে আপনার ডাকে অবশ্যই সাড়া দিবে।
তিনি মুচকি হেসে দিলেন। তারপর বললেন
–চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই। তোমার মা চিন্তা করছে।
— হুম কিন্তু বিরিয়ানিই তো খাওয়ালেন না!
–তুমি না একটা পাজি মেয়ে। আচ্ছা যাও ওয়াদা করলাম কোনো একদিন আমি নিজেই রান্না করে খাওয়াবো, এবার খুশি তো?
— ওমা, আপনি রাঁধতেও জানেন! বাহ ভালো তো অল ইন ওয়ান জ্বীন। এমনই তো চাই। ( হাসি দিয়ে)
— আমরা সব পারি। মানুষের থেকে ভালো পারি। তবে কিছু কিছু খারাপ জ্বীনদের জন্য আমাদের মত ভালো জ্বীনদের নাম খারাপ হচ্ছে।
বলে আমরা হাঁটা শুরি করলাম। তখন এক পর্যায়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম
–আচ্ছা আমাদের আবার কবে দেখা হবে?
— আল্লাহ যেদিন চাইবে সেইদিন।
–কিন্তু আমার যদি আপনাকে প্রয়োজন হয় তাহলে কোথায় খুজবো আপনাকে?
— তুমি মন থেকে আমাকে ডাকবে, দেখো আমি হাজির হয়ে যাবো।
–সত্যি?
— হুম। এখন তাহলে বিদায়! তোমার বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি। তবে আমার কথাগুলো মনে রেখো। একা একা কোথাও বের হবে না। আর ছাদে ভুলেও যাবে না। মনে থাকবে?
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলায়। কেনো যেনো তাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না। কেনো যেনো অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো তার সাথে হয়তো আমার আর কখনো দেখা হবে না। মনে হচ্ছেলো তাকে আমি সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবো।উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। তারপর তিনি বললেন
–মিস ঘুমপরী, তাহলে এখনকার মত বিদায়। তোমার মাথায় কি আমি একটু হাত বুলিয়ে দিতে পারি?
আমি তার সামনে চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কখন যেনো চলে গেলো আমি টের পেলাম না। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি কেও নেই। তারপর ধীরে ধীরে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে তার প্রতিটা কথা আমার মনে পড়ছিল। তার সাথে কাটিয়ে আসা প্রতিটা মুহুর্ত আমার মনে পরছিলো।এভাবে তাকে ছাড়া বেশ কয়েকটি দিন কেটিয়ে দিলাম। মার কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়মগুলো ভালোভাবে জেনে নামাজ পড়া শুরু করলাম। এখন একা একাও ছাদে যাই না। তবে তিনি বলেছিল মন থেকে ডাকলেই সে চলে আসবে কিন্তু তাকে আমি কয়েকবারই মন থেকে ডেকেছি। তার কোনো সাড়া শব্দ পাইনি। এমনকি আগে যেরকম তার শরীরের গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াতো এখন আর সেইরকম কোনো সুগন্ধ বাতাসে আর পাই না। সে কি আমাকে ভুলে গিয়েছে? নাকি অন্য কোনো সুন্দর মেয়েকে তার পছন্দ হয়েছে! তাহলে আমার ডাকে সে সাড়া দেয় না কেনো? তিনি কি বুঝেন না যে তাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে? তিনি কি বুঝতে পারছেন না যে আমি তাকে আমার জান প্রান দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি? এগুলো মনে করে সারাদিন খুব মন মরা হয়ে থাকি। কারো সাথে কথা বলি না, মিশিও না। শুধু সারাদিন আমার জ্বীন প্রেমিকের কথা চিন্তা করি। মনে মনে স্বপ্ন বুনে ফেলেছি তার সাথে দেখা হলে তাকে খুব করে বকে দিবো আমাকে এত এত কষ্ট দেওয়ার জন্য। আর খুব খুব বেশী আদর করে দিবো যেনো আমাকে ছেড়ে আর কখনো কোথাও না যায়।
এর মধ্যে বাসায় দাদী আর ফুফু এসেছে গ্রাম থেকে। এসেই তারা আমাকে নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করে দিয়েছে। আমি এত বড় হয়ে গিয়েছি এখনো কেনো আমার বিয়ে হচ্ছে না। নাকি কারো সাথে প্রেম-ট্রেম করছি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের কথা আমি এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেই। কারন তারা ছোটববেলা থেকেই আমাকে এইসব কথা বলছে। এখন এগুলো শুনতে শুনতে আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাবার জন্য খুব খারাপ লাগে। তার মত মানুষই হয় না।তিনি এইসব কথায় খুব কষ্ট পান।
এভাবে একাকী দিন কাটাচ্ছিলাম তবে ঘটনা ঘটলো সেই দিন রাতে যখন আমি আমার দুহাত ভরে মেহেদি পরেছি। আমার মনে হচ্ছিলো খুব শীঘ্রই তার সাথে আমার দেখা হবে। মনে হচ্ছিলো সে হয়তো কোনো কাজে আটকে গিয়েছে তাই আমার ডাক শুনতে পেয়েও আসছে না। আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও মনে হচ্ছিল জ্বীন জাতি ধোকা দিতে একবিন্দুও পিছপা হয় না। কিন্তু ইবাদত মনে হয় না সেই রকম ধোকাবাজ জ্বীন। আমি আমার রুমে শুয়েছি মাত্র তার তখন আবার সেই পটকা গন্ধটা নাকে এসে লাগলো। যেমনটি আগে যখন সেই বদজ্বীনটা আমার গলা চেপে ধরেছিল তখন এসেছিল। গন্ধে আমার গা গুলিয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিলো গন্ধে বমি করে দেই। উঠে বসতেই দেখলাম ইবাদত আমার সামনে দাড়িয়ে। কিন্তু একি! ওর চেহারার যেই নুরানি ভাব সেটা নেই। ওর চেহারার যেই লাবন্য ছিল সেটাও অনুপস্থিত। মনে মনে বলছিলাম হয়তো অসুস্থ ছিল তাই ওকে এমন দেখাচ্ছে।ওর চেহারাটা একদম ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল।ওর গায়ের যে সুগন্ধ সেটাও পাচ্ছি না। আমাকে দেখে ও কেমন করে যেনো হাসলো। এই রকম ভাবে আমি ওকে আগে হাসতে দেখিনি। তারপর বলল
–কায়য়য়য়নাআআআআত!
এটা শুনে আমার অন্তরআত্না কেঁপে উঠলো। আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম। ইবাদত কেনো আমাকে এইভাবে ডাকবে! ও হয়তো আমাকে ভয় দেখাচ্ছে কারন একদিন আমিই ওকে বলেছিলাম আমাকে ভয় দেখাতে তাই ও আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এমন করে ডাকছে। আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে ওকে বললাম
— তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? তোমাকে মনে মনে কত খুজেছি!
তারপর সে বলল
–ভুল হয়ে গেছে সোনা! চলো ছাদে যাই, তোমার সাথে আমার অনেক জরুরী কথা আছে। মনের ভিতর অনেক কথা জমে আছে। আজ সব বলবো।
আমি খুশি হয়ে গেলাম। ভাবলাম আজ হয়তো ও ওর মনের কথা আমাকে বলবে। তাই আমিও ছাদে যেতে রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ১ টা বাজে। ওকে বললাম
–অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, এখন কিভাবে ছাদে যাবো এখানে বলো না!
ও বলল
— কিছু হবে না চলো না ছাদে, প্লিজ!
আমিও সাতপাঁচ না ভেবে ছাদে রওনা হলাম।
( চলবে)