কথা_দিয়েছিলে_ফিরবে #পর্ব_২০,২১ শেষ

#কথা_দিয়েছিলে_ফিরবে
#পর্ব_২০,২১ শেষ
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
২০

– আম্মুন আম্মুন আম্মুন আম্মুন

ইফসি তার মাকে ডাকায় অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ে । রেহানা পারভিন তাকে শান্ত করতে পারছেনই না । সে বার বার বোঝাচ্ছেন যে তার আম্মুন ভেতরে কিন্তু ইফসি ডেকেই যাচ্ছে । দাদুনের কোল থেকে নেমে গিয়ে সোজা রুমের দিকে যাচ্ছে ইফসি । এইদিক দিয়ে রেহানা পারভিন বলা শুরু করে দেয় ,

– সেই কখন পাঠাইছি রুমে । জিজ্ঞেস করতে নাফিস কি খাবে । ওয় গিয়ে আটকিয়ে গেছে । বাচ্চাটার বোধ হয় ঘুম পাইছে ।

পরক্ষণেই তার মাথায় আসে রুমে তো নাফিস আর জুঁই এক সাথেই আছে । কি যেন ভেবে দৌড়ে গিয়ে নাতনিকে কোলে তুলে নেন তিনি । তারপর ইফসি আরও জোরে ডাকা শুরু করে ।

– দাদুন রে , ডাকো কেন ?
– আম্মুন দাদুন আম্মুন ।
– আম্মুন রুমে পাপাও রুমে , এখন কি আর সহজে বের হবে তারা । তাগোরেও সময় দিতে হবে রে দাদুন । আয় তুই দাদুনের কাছে থাক ।

ইফসি লাগাতার আম্মুন আম্মুন করতে থাকে । ইফসির ডাক জুঁইয়ের কানে যেতেই সে নাফিসকে ইশারা দেয় উঠার জন্যে ।

– ইফসি ডাকছে কেন এভাবে ? দেখি সরো দেখে আসি আমি ।
– আরে দাঁড়াও ,

এই বলে আলতো করে জুঁইয়ের ঠোঁট জোড়া নিজের আঙুল দিয়ে মুছে দেয় নাফিস ।

– যাও সরো ,
– বেঁচে গেলে তুমি ।
– তোমার কাছে মরার জন্যে আমার অনেক সময় বাকি আছে , আসছি এখন ।
– হু ,
– চেঞ্জ করো , ফ্রেশ হও ।

জুঁই বের হয়ে এসে ইফসিকে কোলে তুলে নেয় । তখন রেহানা বেগম জিজ্ঞেস করে ,

– নাফিস কি খাবে বলছে কিছু ?

শ্বাশুড়ির কথা শুনে তার মনে পড়ে যায় । তাকে তো পাঠানো হয়েছিল অন্য কাজে । কিন্তু সেখানে গিয়ে হয়ে গেছে অন্য কাজ । শ্বাশুড়ির কথায় মাথা নিচু করে থাকে জুঁই । জুঁইয়ের চুপ থাকা দেখে রেহানা পারভিন কিছু আন্দাজ করতে পারে তাই তিনিও বলে দেন ,

– অন্যকিছু খেলে আর কি খাওয়া লাগে ? তুমি ওরে সামলাও , দেখো মনে হয় ঘুমাবে তাই ডাকাডাকি করেছে । আমি রান্নাঘরে চাই ।

শ্বাশুড়ির কথায় লজ্জা পেয়ে যায় জুঁই । মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে তার । অন্যদিকে একটা ভালো লাগাও কাজ করছে নিজের মনের মধ্যে । রেহানা পারভিনের ভালো ব্যবহার গুলো সত্যিই জুঁইয়ের মনকে পুলকিত করে দিয়েছে ।

ইফসিকে কোলে নিয়ে রুমে যায় জুঁই । নাফিস তখন ফ্রেশ হয়ে নিজের কাজ করছিল । ইফসিকে কোলে নিয়ে জুঁইকে দেখে নাফিস এগিয়ে যায় তাদের দিকে ।

– কি হয়েছে আমার মায়ের , এত কান্নাকাটি কেন ?
– ওর পায়ে হয়তো ব্যাথা করতেছে নাফিস । যার জন্যে বিরক্ত করতেছে ।
– এন্টিসেপটিক দিলাম তো , মা আসো তো পাপার কাছে ।
– এক কাজ করো , তুমি ও-কে রাখো । আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি একটু ।
– আরে নাহ , যেতে হবে না । মা তো আছে সামলে নিবে । তুমি ও-কে ঘুম পাড়িয়ে দেও ।

সময়টা ভালোই পার হচ্ছিলো । ইফসি তার নতুন দাদার বাড়িতে বেশ ভালো আছে । জুঁই তার নতুন সংসারে ভালোই মানিয়ে নিয়েছে । এর মাঝে একদিন রেহানা বেগম আনিস বেপারি আর শান্তা শাম্মির বাসায় বেড়াতে যায় । সেখানে ইফসিকেও নিয়ে যেতে চায় রেহানা বেগম । কিন্তু ইফসি ঝামেলা করে তাই জুঁই দিতে চায় নি ।

– মা , নিতে হবে না থাক ।
– কেন নিতে হবে না কেন ?
– মা ও তো জ্বালায় , ঝামেলা করে ইদানীং ।
– ও জ্বালাবে না তো কি তুমি জ্বালাবা নাকি ?
– মা , আসলে আপনার শরীরও তো ভালো না , ওইদিকে গিয়ে যদি বিরক্ত করে ?
– আমার দাদুন ভালো , তাই নারে দাদুন ?

দাদুনের কথায় আবার মাথা নেড়ে সমর্থন করে ইফসি । তখন সবাই হেসে দেয় । নাফিস কোলে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে ইফসিকে ।

– এই বুড়ি , ফুপুর বাসায় যাবা ?
– হু হু ,
– জুঁই রেডি করে দেও , থাক ঘুরে আসুক ।
– জ্বালাবে কিন্তু ।
– শান্তা আছে তো , আর তাছাড়া শাম্মিও থাকবে , জ্বালাবে না ।
– হু ,

সবার কথা শুনে রেডি করিয়ে দেয় জুঁই ইফসিকে । রেডি হয়ে টুক টুক করে দাদুনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ছোট্ট ইফসি । রেহানা পারভিন ইফসিকে দেখে এক নজরে তকিয়ে থাকে । লাল রঙের ফ্রকে কি যে সুন্দর লাগছিল ইফসিকে । লাল রঙের রিবন দিয়ে দুটো ঝুঁটি বেধে দিয়েছ তার মা । একদম পরীর মত লাগছিল ইফসিকে । রেহানা বেগম তাড়াতাড়ি করে জড়িয়ে ধরে হাজারটা চুমা দেয় ইফসিকে । দাদুনের চুমু খেয়ে খিল খিল করে হাসে বাচ্চাটা । রেহানা বেগম ও-কে রাখবেন কোথায় ।

– হ্যাঁ রে দাদুন তোকে আমি রাখবো কইরে দাদুন ।

আনিস বেপারিও খুব খুশি । আসলেই বাচ্চারা ফেরেশতার রুপ হয় । আর একজন ফেরেশতার কাছে শয়তানও হার মানতে ব্যস্ত । আর এরা তো মানুষ মাত্র । জুঁই ইফসির কিছু জামা গুছিয়ে দেয় । একদিন থাকবে আর সে তো মিনিটের মধ্যে জামা পালটায় ৩-৫ টা । নোংরা হলেই পাল্টানোর জন্যে কান্নাকাটি করে ।

শান্তার কোলে চেপে আম্মুন আর পাপাকে বাই বাই বলে সে ।

– বাইইইইই বাইইইইইইই
– আম্মুন বাই বাই বলে না মা । আল্লাহ হাফেজ দিতে হয় , আসসালামু আলাইকুম বলতে হয় ।

তখন নাফিস বলে ওঠে ,

– আরে থাক , এইগুলো ওর মুখে দিয়ে আসবে এখন ?
– না আসলেও অভ্যাস করতে হবে তো ?

তারপর সবার সাথে ইফসিও চলে যায় । জুঁই দৌড়ে বারান্দায় চলে যায় । বারান্দা থেকে মেয়েকে দেখবে বলে দাঁড়িয়ে আছে সে । আর মেয়েও নিচে গিয়ে ঠিক বারান্দার দিকে তাকায় । মাকে দেখে ফুপুর কোল থেকে টা টা দেয় তার মাকে ।

ওদের বিদায় দিয়ে নাফিস বাসায় আসে , এর ফাঁকে জুঁই হাতের কাজ গুলো সেড়ে নেয় । বাসা পুরো ফাঁকা । হাফ ডে বলে তাদেরও ছুটি । কাল শুক্রবার অফ ডে ।

নাফিস এসে ড্রইং রুমে বসে আছে । ম্যাগাজিন পড়ছিল সে । কিন্তু চোখ তার জুঁইয়ের দিকে । জুঁই তখন রান্না ঘরে কাজ করছে । আজ যদি মন একটু বেহায়া হয়ে যায় ক্ষতি কিসে ? বিয়ের প্রায় ২০ দিন হতে চললো , অথচ কেউই কারো কাছে ধরা দিচ্ছে না । নাহ জুঁই নিজে আসছে নাহ নাফিস যাচ্ছে । পর মুহুর্তেই নাফিসের গতকাল আওন্ধ্যার কথা মনে পড়ে যায় । জুঁই কাজের ফাঁকে ওড়না খুলে পাশে রাখে । নাফিসের নজর বার বার জুঁইয়ের দিকে যাচ্ছে । কিন্তু লজ্জায় যেতেও পারছে না ।

অন্যদিকে জুঁইয়ের মনটাও খচ খচ করছে । বাসায় কেউই নেই তারা দুজন বাদে । শাম্মি অনেকবার বলেছিল তাকে যেতে , সবার সাথে গেলেই পারতো সে । কিন্তু নাফিসের জন্যেই তার যাওয়া হয় নি । নাফিস একা হয়ে যাবে পুরো বাসায় তাই থেকে যায় সে । কিন্তু এখন যেন কেমন লাগছে তার নিজের কাছে । রান্নাঘর থেকে আড় চোখে নাফিসকে খেয়াল করে জুঁই । তখনই দেখতে পায় নাফিস তাকে পর্যবেক্ষণ করছে । নাফিসের পর্যবেক্ষণ তাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে বার বার ।

এশার নামাজের আজানের পর জুঁই ফ্রেশ হয়ে নেয় । নাফিস তখন অফিসের কাজ করছিল রুমে বসে । জুঁই নামাজ পড়ে উঠে দাঁড়াতেই নাফিস জুঁইকে ডাকে ।

– জুঁই,,,,,,,?
– হু বলো ,
– এই ফাইলটা চেক দেও তো ।
– দেও ।

লাইফ পার্টনারের পাশাপাশি তারা কলিগও বটে । অফিসের টুকটাক কাজ বাসাতে নিয়ে আসে । দুজন মিলে সময় বের করে কাজ গুলোও মিটিয়ে নেয় ।

ফাইল দেখার সময়ও নাফিস বার বার জুঁইকে দেখছিল । জুঁইয়ের ঠোঁট গুলো দেখছিল । জুঁইয়ের শরীরের পুরো পা থেকে মাথার চুল অবদি পর্যবেক্ষণ করছে নাফিস ।

রাতের খাবার শেষে নাফিস বারান্দায় সিগারেট টানতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । জুঁই রুমে এসে নাফিসকে বারান্দায় দেখে ঘড়িতে নজর দেয় । ঘড়িতে ১১ টা বেজে ২৫ বাজতেছে । এই সময়ে নাফিস বারান্দায় এটা ভেবে নিজের কাছেও সংকা লাগছে তার । ওড়নাটা গায়ের থেকে সরিয়ে রেখে বিছানায় বসে জুঁই । নাফিস কি চাইছে ? নাফিসের মনে কি চলছে তা একটু একটু বুঝতে পারছে জুঁই ।

জুঁইয়েরও মন চায় নিজেকে নাফিসের কাছে সপে দিতে । কিন্তু লজ্জায় ঘেষতে পারে না । গতকাল সন্ধ্যায় যা হয়েছিল তা ভেবে মুচকি হাসি মুখে ফুটে উঠে জুঁইয়ের । বার বার নাফিসের দিকে তাকাচ্ছে জুঁই । আগের থেকে আরও সুন্দর হয়ে গেছে নাফিস । আগের থেকে শরীরটাও বেশ ভার দিয়েছে তার । স্বামী হিসেবে একদম পারফেক্ট একজন মানুষ সে ।

জুঁই আর থাকতে পারে নি । উঠে গিয়ে বারান্দায় নাফিসের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সে । জুঁইয়ের অস্তিত্বের টের পেয়ে নাফিস মুচকি হাসি দিয়ে বলে ,

– আজ কাদম্বরী ঘুমায় না কেন ?
– তুমি সিগারেট খাওয়া কমাতে পারো না ?
– সিগারেট হচ্ছে নেশা । ভালো লাগে খেতে ।
– নেশ কি করে কাটানো যায় ?
– এই নেশা কাটানোর নয় । এই নেশা কাটানোর জন্য অন্য নেশা লাগে ।
– কি নেশা সেটা ?
– বলা যাবে না ।
– কেন ?
– ওহে মোর কাদম্বরী তুমি কেন বুঝো না
নিকোটিনে পাই আমি সুখেরও সাধনা
নিকোটিনের জায়গা যখন ঠোঁটের মাঝে
নারী তুমি তখন আমার থেকে অনেক দূরে

নাফিসের কথায় জুঁই আবারও বলে ।

– নারী যদি থাকে পাশে ,
– নারীর সংগ বড় সংগ
ভালোবাসায় বাধা
নারী যদি থাকে সাথে
নিকোটিন হবে সর্বনাশা

জুঁই তখন সেইখানেই এক টানে নাফিসকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করায় । নাফিসকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ঠোঁট দিয়ে নাফিসের ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে জুঁই । জুঁইয়ের ঠোঁটের স্পর্শে হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে পা দিয়ে মুচরে অফ করে দিয়ে জুঁইয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে ।

আজ যদি দুটো মন মিলে যায় তাহলে হয়তো কিছু পুরোনো মান অভিমান ভেঙে যাবে । আজ যদি সব কিছু এক পাশে রেখে দুটো শরীর নিজেদের ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরে তাহলে হয়তো কিছু কষ্ট সুখে পরিণত হবে । হয়তো আজ প্রকৃতিও তাই চাচ্ছে । হয়তো আজ আকাশের পূর্নিমার চাঁদটাও তাই চাচ্ছে । বারান্দা থেকে রুমের দরজায় এসে জুঁইকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নেয় নাফিস । এ যেন এক অতৃপ্ত বাসনার কামনা পূরণের পূর্ব প্রস্তুতি চলছে দুজনের মাঝে ।

.
.

চলবে……….

#কথা_দিয়েছিলে_ফিরবে
#পর্ব_২১ (শেষপর্ব)
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

রাতের আঁধারে আজ না হয় দুটো মন মিলে এক হলো । হয়তো এখান থেকেই শুরু হবে আরেক পথ চলা । ভুল গুলো মেনে নিয়ে সব বুঝে শুনে সেই ভুল গুলোকে শুধরাতে হয়তো সবাই পারে না । সবাই হয়তো নাফিস হতে পারে না । ভালোবাসতে হলে মন থেকে উপলব্ধি করতে হয় ব্রেইন থেকে নয় । যতবার ব্রেইন দিয়ে ভাবা হবে ব্রেইন ততবারই ধোঁকা দিয়ে যাবে ।

রাতের অন্ধকারে সব অতীত ভুলে আবারও এক হয় নাফিস জুঁই । জুঁইয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কালো অধ্যায়কে ঢেকে দিয়ে সেখানে নতুন অধ্যায়ের শুভ সূচনা করে দেয় নাফিস । সেই সূচনায় একটা ভবিষ্যত কে নিশ্চিত করতে পারাটাই অনেক কিছু ।

রাত্রির শেষ ভাগে নাফিসকে জড়িয়ে ধরে রাখে জুঁই । আর নাফিসও নিজের খুব কাছে আঁকড়ে ধরে রাখে জুঁইকে । খুব ক্লান্ত দুজনেই , তারা যে ভালোবাসার অতল সমুদ্রে ডুব দিয়েছে । এরই মাঝে নাফিস জুঁইয়ের চুলের ঘ্রাণ নেয় । একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আসছিল চুল থেকে ।

– কাদম্বরী ,,,,,,,,,?
– হু ,
– চুলে কি দিয়েছো , এত মাতাল করা ঘ্রাণ কেন ?

জুঁই লজ্জায় কথা বলতে পারি নি । শুধু নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেছে সে । নফিসের চোখের দিকে তাকাতেও এখন লজ্জা করছে তার ।

– কাদম্বরী ,,,,,,,,?
-………….
– এই,,,,,, কথা কেন বলো না ?
– হু,,,,,
– বললে না তো চুলে কি দিয়েছো ?
– শ্যাম্পু দিয়েছিলাম , আর কিছু না ।
– শ্যাম্পুতে এত ঘ্রাণ ?
– জানি না ।

নাফিস হেসে জুঁইকে নিজের কাছে আরও টেনে নেয় । গল্প করতে করতে শেষ রাতের দিকে দুজনেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় । জুঁইয়ের কপালে এই সুখ গুলো হয়তো লিখা ছিল । তাই হয়তো আল্লাহ পাক তাকে সুখের মুখ দেখিয়েছেন ।

জীবন আসলেই বৈচিত্র্যময় । এখানে এক এক সময় এক এক জলসার আগমন ঘটে । এক এক জলসায় এক এক রকম গান বেজে ওঠে । কখনো দুঃখের অন্ত থাকে না , কখনো বা সুখের কমতি থাকে না । সারাজীবনের হিসেব কেউই করতে পারে না । অতীতে কি হয়েছিল তা ভেবে আফসোস করতে করতে সময় পার হয়ে যাবে কিন্তু আসলেই কি হয়েছিল কেন হয়েছিল এর সঠিক তথ্য পাওয়া খুব কঠিন । বর্তমানে কি আছে তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত । অতীতকে বির্সজন দিয়ে সামনে আগানোই উচিত ।

জুঁইয়ের এক জীবনে একটা ঘটনা তার পুরো জীবনকে নষ্ট করে দিতে পারে না । প্রত্যেক মানুষকে জীবন দ্বিতীয় সুযোগ দেয় । জুঁইকেও দিয়েছে আর সেই সুযোগটা এসেছে তারই প্রাক্তন নাফিসের হাত ধরে । জুঁইয়ের মায়ের সেদিন রাতে বলা কথাটা সত্যি হয়েই গেলো । আল্লাহ পাক পরীক্ষা নেন তার বান্দা কতটুকু ধৈর্য ধারণ করতে পারে । হয়তো সেই পরীক্ষায় জুঁই সঠিকভাবে উর্ত্তীন হয়েছে তাই তার জীবনে আজ সুখের অভাব নেই ।

তবে জুঁই তার নতুন জীবনে এসেও তার কর্তব্য ভুলে যায় নি । তার যতটুকু কর্তব্য ততটুকু সে আজও নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে ।
দেখতে দেখতে ৩ টি বছর পার হয়ে গেছে । এই ৩ টি বছরে ফারুকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মসজিদে মিলাদ দিয়েছে নাফিস তা অবশ্য জুঁইয়ের কথাতেই । জুঁই নিজের বিবেকের কাছে যথেষ্ট দৃঢ় । সে তার সব দিক ঠিক রেখেছেন ।

অন্যদিকে , রেহানা বেগম অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে । ওনার এই পরিবর্তন হয়তো ইফসির জন্যে । এই বয়সে এসে ইফসিকে পেয়ে নিজের ভেতরের সব কালিমা ধুয়ে যায় তার । তার মাঝে মায়া জন্মে যায় যেই মায়া জন্মিয়ে জুঁইকেও আপন করে নেন তিনি ।

গত ৩ টি বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে । শান্তার বিয়ে হয়ে গেছে । নাফিসের নিজের ব্যবসা হয়েছে । সেই ব্যবসাতে অনেক সফলতাও পেয়েছে নাফিস । সবার ধারণা এইসবের পিছনে ইফসি আছে । ইফসির ভাগ্যের জন্যে তারা এত সফলতা পেয়েছে । ৪ বছরের ইফসিও বেশ পাকা পাকা কথা বলে এখন । তার সবার সাথে ভাব , সে এখন দাদান দাদুন ছাড়া এক পা চলতে পারে না । ঘরের সবার আদরের মনি সে ।

আজ প্রায় ৮ মাস হলো জুঁই প্রেগন্যান্ট । দ্বিতীয় বাচ্চা কনসিভ করেছে সে । এই সিদ্ধান্ত তার নিজেরই । নাফিসের তো কোন দোষ নেই । তারও তো ইচ্ছে হতে পারে তার নিজের রক্তের একটা সন্তান আসুক । যদিও নাফিস চায় নি এখন বাচ্চা নিতে তবুও জুঁই নিয়ে নেয় । নাফিসের চিন্তাধারা ছিল ইফসি আরেকটু বড় হোক , স্কুলে দিক তারপর না হয় পরবর্তী চিন্তা করা যাবে । কিন্তু জুঁই বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে ।

এই বাচ্চাটা হয়তো সবাইকে আরও বেশি একত্রিত করে দিয়েছে । তবে জুঁইয়ের শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো না । প্রথম বাচ্চা সিজারিয়ান হওয়ায় এই বাচ্চাতেও শরীর অনেক দুর্বল তার । প্রথম তিন মাস তো খেতেই পারে নি সে । এর মধ্যে মাঝে মাঝে ইফসিও অনেক বিরক্ত করে । মাঝে সাঝে ইফসিকে বকা দিলে রেহানা বেগম জুঁইকে অনেক বকা দেয় । ওনারা কথা হচ্ছে ইফসিকে একটা শব্দও বলা যাবে না এবার সে যাই করুক না কেন ।

সকালের দিকে নাস্তার টেবিলে ইফসি আর জুঁই বসে আছে , রেহানা বেগম তখন রান্নাঘরে কাজ করছিল । নাফিস খেয়ে বেরিয়ে গেছে আর আনিস সাহেব বাজারে গেছে । ইফসি তখন অনেক বায়না করছিল ।

– এটা খাবো না আম্মুন ।
– কেন আম্মুন এটা ভালো তো খেয়ে নেও ।
– নাহ আমি এটা খাবো না ।
– ইফসি বেয়াদবি কেন করতেছো । দাদুন বানিয়েছে না , খেয়ে নেও চুপচাপ ।
– আমি খাবো না খাবো না ।
– ইফসিইইই , এক থাপ্পড়ে গাল লাল করে দিবো বেয়াদব । এত বায়না কেন করো ? যা দিয়েছি তাই খেতে হবে । আমার শরীর ভালো না তবুও তুমি এইভাবে আমায় বিরক্ত করতেছো কেন ?

মায়ের ধমক শুনে কেঁদে দেয় ছোট্ট ইফসি । এদিকে নাতিনের কান্না শুনে দৌড়ে আসেন রেহানা বেগম ।

– কি হয়েছে দাদুন ?
– আম্মুন বকছে আম্মুন বকছে ।
– ওরে বকছো কেন জুঁই ?
– মা লাই দিয়েন না একদম , সব কাজে ইদানীং বায়না করে ।
– বাচ্চা মানুষ , বায়না তো করবেই । দাদুন কি খাবা বলো ,
– নাহ মা , ও এটাই খাবে । এক্সট্রা কিছু করবেন না । এই তুমি এটাই খাবা ।

তারপর জোর করে নিজের হাতে করে মেয়েকে খাইয়ে দেয় জুঁই । তার কথা অনুযায়ী বাচ্চাদের এত লাই দিতে নেই । বেশি পেতে পেতে পরে দিয়ে জেদি হয়ে যাবে ।

ইদানীং শরীর ভালো যাচ্ছে না জুঁইয়ের । সময় ঘনিয়ে এসেছে । তাই শরীর খারাপ তার । চেক আপ করানো হলে ডক্টর তাকে ভর্তি হতে বলে ।

অন্যদিকে , জুঁইকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে । বিকেলের দিকে অপারেশন । নাফিসকে লাগাতার ফোন দিচ্ছে জুঁই । কিন্তু ফোন রিসিভ করেনি নাফিস । প্রায় অনেক্ষন পর ফোন ব্যাক করে নাফিস ।

– এতগুলা ফোন দিলাম , রিসিভ করো নি কেন ?
– আরে বাবা , মিটিং লাগাতার দুটো ছিল ।
– কখন আসবে ?
– ভর্তি হয়েছো ?
– হ্যাঁ ,
– মা কোথায় ?
– এখানেই আছে ।
– আচ্ছা আমি আসছি ,
– কথা দিচ্ছো কিন্তু ,
– হ্যাঁ , কথা দিলাম জলদি ফিরবো ।
– O.T তে যাওয়ার আগে তোমাকে দেখতে চাই আমি নাফিস ।
– O.T তে যাওয়ার আগে আমি তোমার সামনে থাকবো কথা দিলাম ।

নিজের চোখে মেয়েকে ভালো ভাবে দেখছে জুঁই । দাদুনের কোলে চুপ করে বসে আছে । হাতে সেলাইন চলছে জুঁইয়ের । বিকেলেই O.T করিয়ে ফেলবে । শান্তা শাম্মিও চলে এসেছে ইতোমধ্যে । জুঁইয়ের মা আর ভাবীও এসেছে হাসপাতালে ।

সবাই আছে কিন্তু শূন্যতা এক জায়গাতেই । নাফিস এখনো আসে নি । কথা দিয়েছিল যে সে ফিরবে । এখনও ফিরছে না সে । এইদিকে সময়ও প্রায় ঘনিয়ে এসেছে । শ্বাশুড়ির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থেকে একবার চোখে ইশারা দেয় জুঁই । রেহানা বেগমের জুঁইয়ের প্রতি আলাদা একটা মায়া আছে । যেই জুঁইকে তিনি দেখতে পারতেন না সেই জুঁইকে তিনি আজ চোখে হারান । ছেলের বউয়ের চোখের ইশারা পেয়ে নিজের বুকের মধ্যে কামড় দিয়ে উঠে রেহানা বেগমের । উঠে গিয়ে জুঁইয়ের পাশে দাঁড়ায় রেহানা বেগম ।

– কিছু বলবা ?
– ও কথা দিয়েছিল ফিরবে , এখনো তো এলো না ।
– আসবে তো ।
– একটাবার ফোন দেন না মা , দেখেন কোথায় আছে ?
– তোমার চোখে পানি কেন ? কেঁদো না ।
– মা ও-কে একবার ফোন দেন না ।
– আচ্ছা আমি দেখতেছি ।

রেহানা পারভিন অনেকবার ছেলেকে ফোন দিয়েছেন কিন্তু ছেলে তার ফোন রিসিভ করে নি । এদিকে নার্স এসে গেছে । জুঁইকে O.T তে নিয়ে যাবে এখন । জুঁইয়ের যেন পা চলছে না । উঠে তো বসেছে কিন্তু নামছে না বেড থেকে । একটু নাফিসকে দেখার জন্যে তার মতো ন উতলা হয়ে আছে । বার বার চোখ থেকে পানি পড়ছে কিন্তু বুঝতে দিচ্ছে না কাউকে । ইফসিকে কিছুক্ষণ কাছে টেনে আদর করে দেয় । কি ভেবে যেন ইফসিটাও কেঁদে দেয় । কান্না থামাতে শান্তা ইফসিকে বাহিরে নিয়ে যায় । এরই মাঝে নার্স বলে ,

– চলেন , O.T রেডি আছে ।
– আরেকটু অপেক্ষা করি ?
– সময় বয়ে যাচ্ছে তো ।
– একটু প্লিজ ।
– আচ্ছা আপনাদের হয়ে গেলে আমাকে ডাক দিবেন তবে একটু তাড়াতাড়ি । ম্যাডাম আবার চলে যাবেন ।
– জ্বি ।

নার্স চলে গেলে জুঁই এইবার শব্দ করেই কেঁদে দেয় । কারণ সে চেয়েছিল নাফিস অন্তত এই সময়টাতে থাকুক তার পাশে । কিন্তু নাফিস কোথায় ?

জুঁইয়ের কান্না শুনে রেহানা বেগম আর জুঁইয়ের মা জুঁইকে শান্তনা দেয় । মিনিট পাঁচেক পর হাপাতে হাপাতে কেবিনে আসে নাফিস । নাফিসকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জুঁই । যেন চোখ জোড়া নাফিসকে দেখা জন্যে অপেক্ষায় ছিল । নাফিসকে দেখে আরও কেঁদে দেয় জুঁই । নাফিস এসে জুঁইয়ের পাশে দাঁড়ায় । এই ৯ টা মাস নাফিস জুঁইকে আদরে আদরে রেখেছে । ওর সমস্ত কাজ নিজ হাতে করে দিয়েছে । আর এই মুহুর্তে যদি সে না আসতে পারে তাহলে এটা সব থেকে খারাপ লাগার একটা জায়গা হয়ে থাকবে ।

নাফিসের আসা দেখে সবাই ওদের একা ছেড়ে দেয় । সবাই চলে যাওয়ার পর নাফিস আর এক সেকেন্ডও দেরি করে নি । জড়িয়ে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে জুঁইকে । আর জুঁইও জড়িয়ে ধরে নাফিসকে ।

– এত দেরি করলা কেন ?
– সরি গো , লাস্ট মোমেন্টে এসে আরেকটা মিটিং চলে আসছে ।
– এখানে আমি টেনশনে শেষ ।
– কাঁদছো কেন ? এক বাচ্চার মা এখন আরেক বাচ্চা হবে সে এখনও কান্না করে বাচ্চাদের মত ।
– যাও সরো ।
– কি ভেবেছিলে , আসবো না ?
– কিন্তু কথা দিয়েছিলে তো ফিরবে ।
– তাই তো ফিরে এলাম ।
– আমি যদি কোন ভুল করে থাকি তো আমাকে ক্ষমা করে দিও ।
– কি সব বলো এইগুলা , তুমি যে আমার কাদম্বরী । আমার লাকি চার্ম ।
– যদি না ফিরি ?
– চুপ , একদম চুপ । না ফিরি মানে কি ? ফিরতে তোমাকে হবেই ।
– দোয়া করো ।
– ইনশাআল্লাহ দেখা হবে আমার ছোট সোনা সমেত ।
– ইনশাআল্লাহ ।
– কাদম্বরী ,,,,,,,?
– হু ,
– কথা কিন্তু তুমিও দিলে যে ফিরবে ।
– কথা দিতে পারছি না ,
– আমার যে তোমাকে লাগবে ?

এরই মাঝে নার্স এসে ডাক দেয় । নাফিস জুঁইকে নিয়ে নার্সের সাহায্যে O.T র সামনে নিয়ে যায় । সবার সাথে কথা বলার পর জুঁইকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয় ।

এক ঘন্টা পর বিকেল ৫ টা বেজে ৪০ মিনিটে এক সদ্য নবজাত ছেলে সন্তানকে এনে নাফিসের দিকে এগিয়ে দেয় নার্স । বাচ্চাকে দেখে অবাক নয়নে চেয়ে থাকে নাফিস । বাচ্চার মুখ টা দেখে সারাদিনের শত ক্লান্তি এবং এতক্ষনের সকল দুঃশ্চিন্তা সব উড়ে গেল তার । হাত কাঁপছিল নাফিসের । নাফিসের মা নাফিসকে বললেন ,

– কিরে বাবা কোলে নে

মায়ের কথা শুনে নিজের বাচ্চাকে কোলে তুলে নেয় নাফিস । বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সে চোখের পানি গুলো অনায়াসে পড়ে গেল । বাচ্চার মুখ দেখে তার জুঁইয়ের কথা মনে পড়ে যায় । নার্সকে তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করে বসলো ,

– আমার ওয়াইফ ?
– ভালো আছে , সেন্স ফিরবে আস্তে আস্তে । অভজারভেশনে আছেন তিনি ।
– ধন্যবাদ ,

বাচ্চাকে পর পর সবাই কোলে নিয়েছে । ইফসি তখন নাফিসের কোলে । সে তার পাপার গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে ।

– বাবু টা কার পাপা ?
– বাবুটা তোমার মা , বাবুটা তোমার ভাই ।
– আমার ভাই!
– হ্যাঁ মা , তোমার ছোট ভাই ।

বাবার কোলে থেকেই ইফসি বাবুর দিকে এক নাগারে চেয়ে থাকে । সবাই আজ অনেক খুশি । আসলেই তাদের একটা সন্তানের প্রয়োজন ছিল । যা শুধু জুঁই বুঝেছিল । অসাধারণ এক অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে নাফিসের মধ্যে ।

প্রায় অনেকক্ষণ পর নাফিস কেবিনে যায় । জুঁই তখন ঘোরের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে । আস্তে করে জুঁইয়ের পাশে গিয়ে বসে নাফিস । নাফিসকে দেখে অনেক শান্তি পায় জুঁই । কারণ একটা বাচ্চার খুশি যে কতটা একজন বাবার কাছে তার সম্পূর্ণ ভাবটা তখন নাফিসের চোখে মুখে ভেসে উঠে যা জুঁইয়ের চোখ এড়ায় নি । জুঁইয়ের হাতটা আলতো করে ধরে কপালে চুমু দেয় নাফিস ।

– কেমন আছো কাদম্বরী ?
– ভালো , বাবুকে দেখেছো ?
– হু ,
– দেখতে কার মত হয়েছে ?
– তোমার মত ,
– বাবু তো তার বাবার মত হওয়ার কথা ।
– ব্যাথা করতেছে ?
– একটু একটু , ইফসি কোথায় ?
– শান্তার কাছে ।
– বাবু কোথায় ?
– মায়ের কোলে ।
– ওহ ,
– কাদম্বরী ,,,
– হু বলো ,
– তুমি আজ আমাকে যা দিয়েছো আমি সারাজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ ।
– তুমি আমায় যা দিয়েছো তার কাছে এ কিছুই না ।
– ভালোবাসি , অনেক অনেক ভালোবাসি ।
– তাই তো ফিরতেই হলো ।
– কথা দিয়েছিলে ফিরবে ,
– হ্যাঁ , কথা রেখেছি । বাবু সমেত তোমার কাছে ফিরেছি আমি ।
– বাবুকে নিয়ে আসি ,
– যাও , ইফসিকেও নিয়ে আসো ।
– হু ,

কিছুক্ষণ পর নাফিস বাবু আর ইফসিকে নিয়ে কেবিনে আসে । বাবুকে জুঁইয়ের পাশে শুইয়ে দেয় নাফিস । এদিকে ইফসিকে দেখে জুঁই হেসে দেয় ।

– কেমন আছো আম্মুন তুমি ?
– ভালো আছি
– ভাইকে দেখেছো ?
– হু , আমার ভাই আম্মুন ।
– হ্যাঁ মা , তোমার ভাই ।
– ভাই আমার মত হাই তুলে ,
– তাই ?

এরপর জুঁই বাবুকে দেখে । দ্বিতীয় নাফিসকে দেখছে সে । অনেকটা নাফিসের মত হয়েছে তাদের ছেলে । এরই মাঝে নাফিস বলে ওঠে ,

– কাদম্বরী ,,,,,,,,,,?
– হু ,
– আমাদের সুখী পরিবার । আমি তুমি ইফসি আর বাবু ।
– হু ,

এরপর আস্তে আস্তে সবাই ভেতরে এসে জুঁইয়ের সাথে দেখা করে যায় । রাতের দিকে সবাই চলে যায় । নাফিস থেকে যায় জুঁইয়ের কাছে । গভীর রাতে বাবুকে দুধ দিয়ে আবার শুইয়ে দেয়া হয় জুঁইকে । নাফিস জুঁইয়ের পাশে বসে আছে । দুজনেই চুপ করে আছে । নিরবতা ভেঙে জুঁই নিজেই বলে ,

– কি হলো চুপ যে ,
– আমাদের সন্তান হয়েছে , আমি যে কত খুশি তুমি ভাবতে পারো কাদম্বরী ।
– এই খুশিটাই তো দেখতে চেয়েছিলাম ।
– আমায় এতটা বুঝো কি করে ?
– ভালোবাসি , তার জন্যে ।
– এই ভালোবাসা আমি আর কখনো হারাতে দিবো না ।
– তুমি হারাতে দিলেও আমি কখনো হারিয়ে যেতে পারবো না ।
– ভালোবাসি কাদম্বরী , অনেক ভালোবাসি
তাই তো স্বযত্নে বুকে আগলে রাখি

নাফিসের কথায় হেসে দেয় জুঁই । এ যেন এক পরম পাওয়া । এ যেন এক সুখের মেলবন্ধন । যেখানে আজ সব কষ্ট দূরে পালিয়ে গেছে । যেখানে আজ শুধুই ভালোবাসা আর ভালোবাসা । নাফিস তার ভুল গুলো শুধরে নিয়ে ভালো আছে । জুঁই আরও একবার জীবনকে সুযোগ দিয়ে এখন হয়তো ভালোবাসা টুকু আঁকড়ে ধরে দুই সন্তান নিয়ে ভরা সংসার নিয়ে ভালো আছে ।

এভাবেই হয়তো কিছু ভালো থাকা গুলো স্থায়ী হয়ে রয় । এভাবেই হয়তো কিছু মানুষ কথা দিয়ে ফিরে আসে । এভাইবেই হয়তো কিছু অতীত ভুলে যাওয়া যায় । এভাবেই হয়তো কিছু কষ্ট সুখে পরিণত হয় । ভালো থাকুক ভালোবাসা গুলো । সুখে থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো ।

★★★★★★ সমাপ্ত ★★★★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here