ওগো_প্রণয়ের_নিমন্ত্রণ🌼 #লেখিকা:-Nowshin Nishi Chowdhury #৫ম_পর্ব

#ওগো_প্রণয়ের_নিমন্ত্রণ🌼

#লেখিকা:-Nowshin Nishi Chowdhury

#৫ম_পর্ব

স্টার কফিশপে ফালাকের পছন্দের টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে ফালাক আর মিথিলা।

— আপনি এখানে কি করছেন মিথিলা?

মিথিলা নির্বিকার উত্তর দিল,

— আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি ফালাক।

ফালাক টেবিলের উপর থেকে কফির মগটা নিয়ে মিথিলাকে প্রশ্ন করল,

— আপনি জানলেন কি করে যে আমি এখন এখানে থাকবো?

বললে বিশ্বাস করবেন তো!

ফালাক ভ্রু কুচকালো। তা দেখে মিথিলা বলল,

— যাকে মন থেকে চেয়েছি তার ব্যাপারে এটুকু খোঁজখবর রাখা অস্বাভাবিক কিছু নয় ফালাক। আজ আপনার একটা বোর্ড মিটিং ছিল সেটা আমি জানতাম।

আপনার মিটিং শেষ হওয়ার পরে আমি আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। আপনার অ্যাসিস্ট্যান্টকে ফোন দিয়েছিলাম । পরে জানতে পারি আপনি হাসপাতালে আসেননি।

পরে ভাবলাম হাসপাতালে যখন আসেনি তাহলে আপনার অভ্যাসবশত নিশ্চয়ই এই কফি হাউজে এসেছেন। তাই এখানেই চলে আসলাম আপনার সাথে দেখা করতে।

— আবার এখানে কি জানতে এসেছেন আমার কাছ থেকে?

— তার আগে বলুন ওমন উদ্ভ্রান্তের মত কার পিছে দৌড়াচ্ছিলেন?

— আমার ভাগ্যের পিছে।

— ভাগ্য!

ফালাক নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল,

— আপনি আপনার কথা বলুন মিস। আমার ব্যাপারে আপনার না জানলেও চলবে।

মিথিলা ফালাকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

— কিন্তু আমি তো আপনার ব্যাপারেই জানতে এখানে এসেছি।

ফালাক তীক্ষ্ণ চোখে মিথিলার দিকে তাকালো। সকালের মত পরনে এখন আর শাড়ি নেই সালোয়ার কামিজ। মুখে মেকাপের লেশমাত্র নেই। চেহারাটা ম্লান হয়ে আছে।

ফালাক নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,

— আমার ব্যাপারে আর কি জানতে এসেছেন আপনি ? আমি তো যা বলার সব আপনার বাবাকে বলে দিয়েছি।এর পরে আর কি জানার থাকতে প..

মিথিলা ফালাকের কথার মাঝে হঠাৎ বলে উঠলো,

— আমি আপনার পুতুল বৌয়ের ব্যাপারে জানতে এসেছি ফালাক । আপনার সেই হঠাৎ বিয়ের ব্যাপারে জানতে এসেছি । আপনার দাদি বলল আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আপনি ব্যাপারটা অস্বীকার করলেন কেন?

ফালাক তীক্ষ্ণ চোখে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল,

— এখানে অস্বীকার করার কি আছে যেটা সত্যি সেটা বলেছি। সেখানে পরিবেশ পরিস্থিতি ভিন্ন রকম ছিল।এক প্রকার বাধ্য হয়ে…

কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেল ফালাক। চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

— আমি এই ডিভোর্স মানিনা।

মিথিলা তাড়াহুড়ো করে বলল,

— কিন্তু আপনার মানায় বা না মানায় তো কিছু যায় আসে না। মৌখিকভাবে আপনি যেহেতু তাকে তালাক দিয়েছেন তার মানে সে তালাক হয়ে গেছে। এখানে আর দ্বিতীয় কোন কথা আসে না।

চোখ মেলে তাকানো ফালাক। বড্ড শান্ত দৃষ্টি তার ঠোঁটের কোলে মিশে আছে স্মিত হাসি। বেশ মিষ্টি ভঙ্গিতে বলল,

— সমস্যা কোথায়? আবার না হয় বিয়ে করবো তাকে। সে বললে আমি তাকে আরো ১০০ বার বিয়ে করতে রাজি আছি ।

আসলেই তো গত বিয়েটা একেবারে হঠাৎ করে আর সাদামাটা হয়েছিল।যাকে বলে এক কাপড়ে বিয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। না হলে “ফালাক শাহতাজ খানের” বিয়ে এমন ভাবে হতো না।

কিন্তু এই কথাটা মানতে হবে,

— বিয়ের পরের প্রেম একটা অদ্ভুত অনুভূতি। হঠাৎ পাওয়া বউয়ের প্রেমে প্রতিদিন একটু একটু করে পড়ার মধ্যে রয়েছে এক স্বর্গীয় সুখানুভূতি।ওই বিশটা দিন আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত হয়ে এসেছিল আমার পুতুল বউ।

— এতই যখন ভালবেসে ছিলেন তাহলে আপনার পুতুল বউ আপনাকে কষ্ট দিয়ে ছেড়ে চলে গিয়েছিল কেন?

মিথিলার কন্ঠে কান্না স্পষ্ট। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে ভাঙ্গা গলায় প্রশ্ন করল সে ।

ফালাক চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তা দেখে মিথিলা বলে উঠলো,

— একি আপনি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন কেন? আমার কথা তো এখনো শেষ হয়নি।

ফালাক টেবিলের সাইডে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর দুই হাতের ভর দিয়ে কিছুটা ঝুঁকে মিথিলাকে বলল,

— কিন্তু আমি আপনার সাথে এই ব্যাপারে আর কোন কথা বলতে ইচ্ছুক নই মিস। আর আমার ওয়াইফের ব্যাপারে তো মোটেও নয়।

শুধু একটা বলে যাই আপনাকে,সময় পেলে আমি এখানে কেন আসি জানেন?

কারণ এই বেইলি রোডেই তাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম। ওই যে দেখুন রাস্তার ওপাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে যে চায়ের টং ঘর রয়েছে ওখানেই তাকে প্রথম দেখেছিলাম। ওখান থেকেই তার প্রতি আমার ভালোলাগার সূত্রপাত। যাকে আপনার ভাষায় লাভ এট ফাস্ট সাইট বলা যায়।

কিন্তু এই যান্ত্রিক শহরের ভিড়ের মাঝে আমি তাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওই এক ঝলক দেখা পাওয়ার ব্যাপারটা বেশ কয়েকদিন মস্তিষ্কের ঘুরপাক খেয়েছিল। হঠাৎ হঠাৎ তার চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠতো ঠিকই

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মানসপট থেকে প্রায় মুছে গিয়েছিল তার স্মৃতি। কিন্তু আসলেই এই পৃথিবীটা গোল আর আমাদের তকদির জুড়ে দিয়েছিলেন আল্লাহ।

যার জন্য আবার কাকতালীয়ভাবে তার আবির্ভাব ঘটে আমার সামনে।তার পরের ঘটনাটা অবশ্যই নাটকীয়।

পরিশেষে বলবো আমার পুতুল বৌ কোন অন্যায় করিনি ।বরং সবথেকে বেশি কষ্ট আমার ওই কিশোরী অবুঝ বৌ টাই পেয়েছিল।ও বরং আমাকে বারবার বলেছিল,

— আমাকে কোথাও লুকিয়ে ফেলো না তাজ। এমন কোথাও লোকাও যাতে তুমি ছাড়া আমাকে আর কেউ খুজে না পায়।

আচ্ছা পৃথিবীতে এমন কোন ম্যাজিক নেই যে ম্যাজিকটা করে তোমার বুকের ভিতরে লুকিয়ে থাকা যায়।

আমাকে কেউ দেখতে পাবে না। আমি শুধু তোমাকে দেখতে পাবো আর তুমি শুধু আমাকে।

কথাগুলো বলে ফালাক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চোখগুলো তার ভয়ঙ্কর লাল বর্ণ ধারণ করেছে। একটা শুকনো ঢোক গিলে আবার বলতে শুরু করলো,

— যাকে সে তার অবুঝ মনের সর্বোচ্চ দিয়ে ভালোবেসেছিল, চোখের সামনে তার সেই প্রিয় মানুষটির হঠাৎ এমন ভিন্ন ও অপরিচিত রূপ আচরণ দেখে মেয়েটা সহ্য করতে পারিনি একেবারে পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়েছিল।

শুধু যাওয়ার আগে আমার কলার ধরে টেনে তার কাছে টেনে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলেছিল,

— তুমি হয়তো তোমার জন্য অনেক যোগ্য পাত্রী পেয়ে যাবে তাজ। কিন্তু আমার মত তোমাকে আর কেউ ভালবাসতে পারবে না।কেউ না।

একদিন ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তুমি তড়পাবে কিন্তু আমাকে আর পাবে না তুমি।আর পাবে না তাজ।

কথাটা শেষ করে ফালাককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গিয়েছিল সে। আর পেছনে ফিরে তাকাইনি।

_______🤎_______

ফালাক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

— তার অভিশাপটা ফলে গেছে জানেন। আমার কাছে সব কিছু থেকেও মানসিক শান্তিটাই নাই। সেই মানসিক শান্তিটাকেই এত বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি আমি কিন্তু যে নিজ থেকে হারিয়ে যায়। তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

মিথিলা নিজের চোখের কোণের পানিটুকু মুছে নিয়ে বলল,

— কোথায় চলে গিয়েছিল সে? সত্যিই কি তার আর কোন খোঁজ পাননি আপনি?

কথাটা শুনে ফালাক একদৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। মিথিলা তার এই দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পারল না ।

এরপর ফালাক নিজের ক্যারিব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিতে গেলে মিথিলা আবার বলে উঠলো,

— বড্ড ভালোবাসেন তাকে তাই না?

ফালাক মুচকি হেসে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল,

— তার থেকে বেশি নয়।

সালার টেবিল ছেড়ে উঠতে গিয়েও আবার থেমে বলল,

— ওহ আর একটা কথা , বলতে পারেন এটা এক প্রকার উপদেশ। আর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে এই উপদেশ টা আমি আপনাকে দিতে চাই।

মিথিলা কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বলল,

— জি বলুন। এটাতো আমার পরম সৌভাগ্য।

ফালাক মিথিলার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলল ,

— আপনি তখন বলছিলেন না মরীচিকার পেছনে কেন দৌড়াচ্ছি আমি। আমি নই বরং আপনি দৌড়াচ্ছেন মিস মিথিলা।

আপনার এই ভ্রম যখন কেটে যাবে তখন হয়তো খুব বেশি দেরি হয়ে যাবে। তাই বলছি খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে নিজেকে শুধরে নিন। পাল্টে ফেলুন আপনার এইসব চিন্তাভাবনা।

দয়া করে আর আমার মত কেউ ভুল করবেন না। যে আপনাকে ভালোবাসে তাকে একটি বার সুযোগ দিয়ে দেখুন জীবনটা সত্যি সুন্দর হয়ে যাবে আপনার। আসি।

কথা শেষ করে ফালাক টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মিথেনের দিকে আরেক ঝলক তাকিয়ে কপি শপের দরজার দিকে এগুলো পেছন থেকে মিথিলা বলে উঠলো।

— আপনার জন্য শুভকামনা থাকলো। নিশ্চয়ই আপনি আপনার পুতুল বউকে খুঁজে পাবেন শীঘ্রই। মানুষ যেটা মন থেকে চায় খুব করে চায়। আল্লাহ তাকে সেটা দিয়ে দেন। হয়তো যথার্থ সময়ে সে আপনার সামনে হাজির হবে।

আমি হয়তো আপনাকে মন থেকে চেয়েছিলাম কিন্তু খুব করে চাইনি তাই হয়তো আপনার ভাগ্যের সাথে আমার ভাগ্যটা জুড়ে গেল না।

তবে এটা আমার কোন আক্ষেপ থাকবে না। বরং আপনার ভালবাসা দেখে আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছে।

পরিশেষে শুধু এটুকুই বলবো আপনাকে ,

যদি কখনো কোনদিন কোন দরকারে আমায় আপনার কোন কাজে লাগে । অবশ্যই আপনি আমাকে জানাবেন। আপনার কোন উপকার করতে পারলে আমার সত্যিই খুব ভালো লাগবে।

আর হ্যাঁ আপনার বিয়েতে কিন্তু আমার একটা দাওয়াত চাই।আপনার পুতুল বউকে দেখার লোভ সামলাতে পারছি না যে।

ফালাক পেছনে ফিরে মিথিলার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে বলল,

— দাওয়াত অবশ্যই পাবে।ডা. রিয়াদের সাথে বিয়ের পর নব দম্পতি হয়ে না হয় আমার বিয়ের দাওয়াত খেতে আসবেন।

মিথিলা চমকে উঠে বলল,

— আপনি!

— কি অবাক হচ্ছেন? আমি আপনাকে অনেক আগে থেকেই চিনি। রিয়াদের ফোনে আপনার ছবি দেখেছি। তখন সে আমার কাছে কিছু স্বীকার না করলেও আপনারা যেদিন আমাদের বাড়িতে আসেন।

আগের দিন রাতে সে আমাকে ফোন দিয়ে সবকিছু বলেছিল । আপনাকে সাহস করে কিছু বলতে পারেনি। আমি যেন আপনাদের সম্পর্কের উকিল বাবা হই । পরে রিয়াদের সম্পর্কে আমি আপনার বাবাকে সবকিছু জানিয়েছি।আশা করছি বাড়িতে গেলেই বিস্তারিত জানতে পারবেন ‌

সত্যিই রিয়াদ আপনাকে খুব ভালোবাসে।আর ভালোবাসার মানুষকে হারাতে দেবেন না মিথিলা।

কথাগুলো শেষ করে কফি শপ থেকে বেরিয়ে আসলো ফালাক। চোখে সানগ্লাসটা পরে দ্রুত পায়ে হেঁটে গাড়ির কাছে আসলো। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা মাত্রই ফালাকের ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলো।

ফোনটা হাতে নিয়ে ফালাক লক স্ক্রীন সরিয়ে দেখতে পেল তার কাঙ্খিত মেসেজ। ‌ যা দেখে ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠলো ফালাকের।

ঘাড় ঘুরিয়ে রাস্তার ওপাশে কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে আরেকবার তাকালো তারপর গাড়ি স্টার্ট দিল তার নিজস্ব গন্তব্যের উদ্দেশে।

#চলবে…🖤

[ঈদ শেষে গ্রাম থেকে ফিরেছি আজ দুপুরে। তাই এত ঝামেলায় গল্প দিতে দেরি হয়ে গেল। তারপরও আমি পর্বটা বড় করে দিয়েছি।

একটু ধৈর্য ধরুন পাঠকগণ ধীরে ধীরে সবকিছু পরিষ্কার,সহজ ও বোধগম্য হয়ে আসবে আপনাদের কাছে।

আর আপনারা যদি আমার সাথে কমিউনিকেট না করেন তাহলে আমি বুঝবো কি করে যে গল্পটা আপনাদের কাছে ভালো লাগছে নাকি না?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here