এক_ফালি_রোদ ১৭তম_পর্ব

এক_ফালি_রোদ
১৭তম_পর্ব

ইসমাইল সাহেবের প্রশ্নটা শুনে কি উত্তর দিবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ভিডিওটা দেখে তার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। এমন অশালীন আচারণ তার ছেলে কিভাবে করতে পারে! কিছু বলতে যাবেন তার আগেই সেখানে অয়ন উপস্থিত হয়। এই সময়টা সে কখনোই বাসায় থাকে না কিন্তু আজ তার বাসায় আসতে হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতে হবে। শরীরটা আজকাল অহেতুক কারণে খারাপ থাকে। একেবারেই ভালো লাগছে না। একেই গরমের পরিমাণটা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। উপর থেকে নতুন এক ভিডিও কান্ড তার জীবনের গতি বাধাগ্রস্থ করছে। শুনেছিলো মঈনুদ্দিন সাহেব প্রাপ্তির খালু ইসমাইল সাহেবকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এসব চিন্তা মাথায় ঝেকে বসে রয়েছে। কোনো কাজ করার স্পৃহাটুকু হারিয়ে ফেলেছে অয়ন। এর মাঝেই তার মোবাইলে একটি মেইল আসে। তাই তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফেরা। মিস্টার উইজলি তার মেইলের রিপ্লাই দিয়েছেন। অয়নকে নিজের এসিস্ট্যান্ট বানানোর জন্য সে রাজী। এই ইমেইলটা যেনো খড়ার মাঝে এক পশলা বৃষ্টির মতো। দেশ থেকে পালানোর এর থেকে ভালো সুযোগ কিংবা উপায় তার হবে না হয়তো। বাসায় ঢুকতেই অয়নের নজরে পড়ে ইসমাইল সাহেব এবং নাসিমা বেগম সোফায় বসে রয়েছেন। তাদের দেখামাত্র চিন্তার ভাজ কপালে ভেসে উঠে অয়নের। ভ্রু যুগল স্বয়ংক্রিয়ভাবে একত্রিত হয়ে যায়। অয়ন সেখানে উপস্থিত হলেই নাসির সাহেবের মেজাজটাই বিগড়ে যায়। তিনি যেনো নিজের মাঝে নেই। রাগে তার গা রি রি করছে। বসা থেকে উঠে অয়নের কাছে যান তিনি। মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বরফ শীতল কন্ঠে তিনি প্রশ্নটা ছুড়ে দেন অয়নকে,
– এই গুলো কি অয়ন? একজন শিক্ষক হয়ে নিজের স্টুডেন্টের সাথে এরুপ অশালীন আচারণ, ছিঃ ছিঃ কি লজ্জাজনক একটা ব্যাপার! মেয়েটা এখন নিজেকে ঘরে আটকে রেখেছে শুধুমাত্র তোমার জন্য। উত্তর দাও! এগুলো কি?
– এসব বানোয়াট, ওই মেয়ে কেবলই আমার একজন স্টুডেন্ট।
– তুমি ভেবে বলছো তো?
– বাবা, বিশ্বাস অবিশ্বাস তোমার ব্যাপার। আমার বলার দরকার বললাম। আমি একটা মেয়ের ব্যাপারে নিশ্চয়ই মিথ্যে বলবো না। আর আমাকে একা কেনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে? মেয়েটাকেও করো। আই ডোন্ট থিংক সি উইল লাই। গো এন্ড আস্ক হার। আর সরি আমার কিছু কাজ রয়েছে। আমি রুমে গেলাম।

বলেই রুমের জন্য প্রস্তান করতে নিবে ঠিক তখনই ইসমাইল সাহেব হিনহিনে কন্ঠে বলে উঠেন,
– কোন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে রাত নয়টায় বাসায় দিতে আসে?

ইসমাইল সাহেবের কথাটা শোনামাত্র পা থেমে যায় অয়নের। সেই রাতে সে নিজে প্রাপ্তিকে বাসায় পৌছে দিয়েছিলো। লোকটা সেই ব্যাপারটাকে এইভাবে দেখছে। ভেবেও অবাক লাগছে এমন লোকের মেয়ে রাইসা কিভাবে হয়? ইসমাইল সাহেব আবার বলতে লাগলেন,
– বাবা, দুনিয়ায় আমরা নতুন নই। সুতরাং তুমি আমাদের অন্তত ভুল বুঝিও না। নাসির সাহেব আমরা এসেছি আপনাদের কাছে একটা সমাধানের আশায়। কিন্তু এখন দেখছি সেটা সম্ভব নয়। এখন আমাদের মেয়েকেই নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে৷
– আমি তাকে শুধু বাসায় ড্রপ করেছি আংকেল। এই সিম্পল ব্যাপারটাকে একটু বেশিই অন্যভাবে টানছেন না আপনি?
– তাই বুঝি? এই ভিডিও মিথ্যে, আমার চোখ মিথ্যে। শুধু তুমি সত্যি?
– আংকেল, মাঝে মাঝে যেমনটা দেখায় তেমনটা হয় না কিন্তু। আমি আর প্রাপ্তি শুধু টিচার এবং স্টুডেন্ট। প্রাপ্তির যখন হেল্প প্রয়োজন আমি করি। আরে আমাদের মাঝে পরিচয় হয়েছে রাইসা আর ভাইয়ের বিয়ের সময়৷ সেখান থেকে এমন কোনো সম্পর্ক ই আমাদের মাঝে তৈরি হয় নি।
– আমি কিছু শুনতে চাই না। প্রাপ্তি তো ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তাই নয় কি? আমি এর একটা সমাধান চাই ব্যাস।
– আপনি কিসের সমাধান বারবার বলছেন? যেখানে আমি বলছি আমরা নির্দোষ। আপনি কি জোর করে আমাদের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন?

বেশ রাগান্বিত কন্ঠেই প্রশ্নটি করে অয়ন। রাগে তার গা রি রি করছে। লোকটা কোনো ভাবেই বুঝতে চাইছেন না। এদিকে প্রাপ্তির উপর ও তার রাগ হচ্ছে। মেয়েটি কেনো এসব নাটকের প্রতিবাদ করছে না। সে তো এতোটা শান্ত থাকার মেয়ে নয়। এদিকে অয়নের প্রশ্ন শুনে নাসির সাহেব এবং শেফালী বেগম মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন। একটা অনাথ মেয়েকে কিভাবে নিজেদের ছোট ছেলের বউ বানানোর কথা ভাববেন তারা! অপরদিকে ইসমাইল সাহেবের মুখে বাঁকা হাসি। তিনি এটাই চাচ্ছিলেন, যাতে কেউ একজন বিয়ের কথাটা বলে। সেটাই হয়েছে। রাইসা স্তব্দ হয়ে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। সে একজন নিরব দর্শক কেবল। একদিকে নিজের বোন তো অন্য দিকে নিজের প্রাক্তন। নিজের প্রাক্তনকে নিজের বোনের স্বামী রুপে দেখতে হবে ভাবতেই বুকের এক কোনায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হলো তার। এই ব্যাথাটা অদৃশ্য। এই অদৃশ্য ব্যাথাটা কেউ দেখতে পাচ্ছে না, হয়তো পাবেও না। তার নিজেকেই সেটা সহ্য করে যেতে হবে৷ অবশ্য এখন এমনটা হওয়াটা খুব একটা মন্দ হবে না। প্রাপ্তির মাথা থেকে কলঙ্কের ছাপ টা হয়তো মুছে যাবে! হয়তো!

এসবের মাঝে মহীমা বেগম চুপ করে বসে রইলেন। তিনি শুধু সবার কথা শুনে যাচ্ছিলেন। সবার মতামত শুনে তিনি কিছু একটা চিন্তা করলেন। একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে। তার নাতীর জীবনের ব্যাপার বলে কথা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীর কন্ঠে তিনি বললেন,
– যদি দরকার হয় তবে………..

চলবে

[ আজ গল্পটা ছোট করে দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল ধামাকা পর্বে পুশিয়ে দিবো। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল রাতে ইনশাআল্লাহ পোস্ট করবো। দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না ]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here