#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৫৫
ইমাদ কড়ি কলে কথা বলছিল। একটা সময় কড়ি মনে করে বলল, “আমি ছেলেটাকে চিনেছি। আপনি যেন ট্রেনে উঠতে না পারেন রেলস্টেশনে আপনার ব্যাগ টেনে ধরে রেখেছিল। বিচ্ছু ছেলে।”
ইমাদ চুপ করে রইল। কড়ি বলল, “আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।”
“না।”
“কেন না?” কড়ি একটু অবাক’ই হলো।
ইমাদ বলল, “মুবিন খুব বাজে ব্যবহার করে। আপনার কথা বলার প্রয়োজন নেই।”
কড়ি হেসে বলল, “উফ এখানেও আপনার ফ্লার্ট করতে হবে।”
ইমাদ বলল, “এটাকে ফ্লার্ট করা বলে?”
“তাহলে কি বলে?”
“কি বলে সেটা আপনিও জানেন।”
কড়ি বুঝল ইমাদ এটাকে নিজের ভালোবাসা মানে। কিন্তু বলল, “জানি না।”
“তাহলে বাদ দিন। আসল কথায় আসি। আপনার অনেক সময় নষ্ট করছি আমি।”
“আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই যে আমার সাথে দু মিনিটের জায়গায় চার মিনিট কথা বললে পৃথিবী উচ্ছন্নে যাবে।”
“পৃথিবী উচ্ছন্নে যাওয়া না যাওয়া দিয়ে আমার কি? বেশি কথা বললে আমিই এলোমেলো হই।”
কড়ি বলল, “এইবার বেশি বেশি হচ্ছে।”
“স্যরি।”
“যদি মুবিনের সঙ্গে আমাকে কথা বলতেই না দিন তবে আমার কাছে কেন?”
“মুবিনকে নিয়ে চিন্তিত।”
“দীপা ভাবিকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে আমার প্রেমে পড়ে গেলেন। এখন মুবিনকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে আবার কোন মুশকিলে পড়েন! সাবধানে।”
“এখন কি আপনি ফ্লার্ট করছেন? সাবধানে।”
“অবাককান্ড! আপনাকে দেখলে ভালো মানুষ মনে হয়।”
ইমাদ আশেপাশে তাকিয়ে পরখ করে নিলো কেউ তাকে হেসে ফেলতে দেখে ফেলল না তো!
কড়ি বলল, “যাই হোক কি করতে চান?”
“মুবিনকে সাহায্য করতে চাই।”
“মুবিনকে সাহায্য করতে যাবেন? উল্টো মুবিনের কাছে সাহায্য চাইতে হবে আপনার।”
“আচ্ছা।”
মুবিন রগচটা, জেদী ছেলে। কাউকে পরোয়া করে না। ইমাদকে তো পছন্দই করে না। তাই ইমাদই ওর কাছে ধরনা দিবে। সে নিজেকে বড় আর শক্তিশালী ভাবতে ভালোবাসে। তার কাছাকাছি যাওয়ার এই একটাই পথ৷
.
মুবিন সিঁড়িতে অন্ধকারে টর্চ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার একটা পা সামনের দিকে দেয়ালে ঠেশে ধরা। গেইটের শব্দ হলেই সে সিঁড়িতে টর্চ মেরে দেখছে কে এসেছে। একটু পর পর মেসে অনেকজনই ঢুকল। ইমাদ এলো অনেক পর৷ অনেকগুলো টিউশন ছিল তার৷ এসে গেইটে ঢুকতেই মুবিন টর্চ জ্বালল। ইমাদকে দেখে টর্চ আর নিভাল না। মুবিন গটগট করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। তার আগেই ইমাদ নিজের স্বভাবের বাইরে গিয়ে গলা হাঁকিয়ে বলল, “মুবিন একটা বিপদ হয়েছে।”
মুবিনের টান টান হয়ে থাকা ঘাড় কিছুটা শীতল হলো। সে সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “মরে গেছে নাকি আপদটা? নাকি কেঁদেকেটে পুলিশে নালিশ করেছে?”
ইমাদ খাঁকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল। এগিয়ে এসে সিঁড়িতে উঠে চট করে মুবিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “ঐ মেয়ের কিছু হয়নি। আমার একটু ঝামেলা হয়ে গেছে। হেল্প করো, প্লিজ।”
মুবিন বিরক্ত হয়ে ইমাদের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, “আমি এখানে আপনাকে ওয়ার্নিং দিতে দাঁড়িয়ে আছি, হেল্প করতে না৷ আপনি আমার বিষয়ে নাক গলাতে আসবেন না৷ সকালে যা করেছেন তা যেন আর না হয়। দূরে থাকুন৷ আপনি আপনার রাস্তায়, আমি আমার রাস্তায়৷”
মুবিন সিঁড়ি ভেঙে নিজের ঘরে চলে গেল। ইমাদ সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই কড়িকে মেসেজ করল, “ও তো শুনলই না। বলল আমি আমার রাস্তায়, সে তার রাস্তায়।”
কড়ি সাথে সাথে উত্তর পাঠাল, “আবার যান। একেবারেই কি কিছু হয় নাকি?”
“আচ্ছা।”
কড়ি আবার লিখল, “ও যে ছোট বলে সমস্যাটা বুঝতে পারছে না এমন কিছু একটা বলতে পারেন। মনে হয় কাজে আসবে।”
“আচ্ছা।”
ইমাদ মুবিনের ঘরে গেল। মুবিন হাউকাউ করে উঠল, “কি সমস্যা আপনার? এখানে কি?”
ইমাদ মুবিনের বিছানায় বসে পড়ল। বলল, “ছোট মানুষ বলে তুমি বুঝতে পারছ না৷ তুমি যদি বড় ছেলে হতে তাহলে বুঝতে। এ ধরনের সমস্যাগুলোয় আসলে সব ছেলেরাই একে অপরকে সাহায্য করে।”
কথাটা বোধহয় কাজে লাগল। মুবিন বলল, “কি এমন হয়েছে আপনার?” মুবিনের চোখে একটা কৌতূহল।
ইমাদ বলল, “থাক বাদ দাও। গার্লফ্রেন্ডের প্যারা। তুমি এসব বুঝবে না।”
মুবিন বলল, “না বুঝলে আমাকে বলতে এলেন কেন? নিজের ঘরে যান।”
“রাগ করছ কেন? তুমিও ওর মতই। কথায় কথায় রাগ করে ফেলো। আমি কি বলছি শুনতেই চাও না।” ইমাদের কণ্ঠ শীতল তবে শব্দগুলো দ্রুত।
“ওর মত মানে আপনার গার্লফ্রেন্ডের মত?”
ইমাদ চুপ করে রইল। মুবিন মজা করে বলল, “কি দোষ করলেন, স্যার?”
ইমাদ গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “বলব?”
“বলতে না চাইলে চলে যান। আমার সময় নষ্ট করছেন কেন?”
“আমি খেয়ে আসি। অনেক ক্ষুধা লেগেছে। সারাদিন খাওয়া হয়নি।”
ইমাদ হেঁটে চলে যাচ্ছিল। মুবিন ডাকল, “দাঁড়ান।”
সে নিজের জন্য কেনা কাচ্চির প্যাকেট থেকে একটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “খেতে পারেন। আমি অনেক বেশি খাই তাই দুটো এনেছিলাম।”
ইমাদ এর আগেও খেয়াল করেছে মুবিন আসলে অনেক বেশি খায় এবং অনেক বেশি ঘুমায়৷ সাধারণত ডিপ্রেশনে থাকা মানুষরা এমন হয়৷ সে বলল, “না আমার জন্যে মেসে রান্না করা হয়৷ আমি সময়ের জন্য খেতে পারিনি।”
“আপনার ইচ্ছা।”
ইমাদ কি একটা ভেবে বলল, “আচ্ছা।”
মুবিন বলল, “আচ্ছা মানে হ্যাঁ, নাকি না?”
“হ্যাঁ।”
মুবিন কাচ্চির প্যাকেটটা ইমাদকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনার আচ্ছা, আচ্ছা সহ্য করে কীভাবে কে জানে! আমার সাথে আচ্ছা আচ্ছা করবেন না। আমার এসব সহ্য হয় না, স্যার। আমার আপনার প্রতি প্রেম নেই যে এসব সহ্য করব। আপনাকে বিদেয় করার অন্যতম একটা কারণ ছিল আপনার এই আচ্ছা, আচ্ছা।”
ইমাদ আবার বলল, “আচ্ছা।”
মুবিনের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। সে তার চৌকিতে একটা জোরে লাথি মেরে বলল, “যন্ত্রণা।”
চলবে…