#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৪৯
সুহা বটি নিয়ে বসেছে। পেয়ারা কাটছে। প্রায় বিকেলেই তার পেয়ারার নেশা উঠে। পেয়ারা কাটা শেষ। লবণ মরিচ দিয়ে পেয়ারা খেতে যাবে তখনি ঠিক কলিংবেলটা বাজল। সে মহাবিরক্ত! শান্তি বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই।
সুহার মা নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলেন সুহার হাতে কেক। কেকের উপর বড় করে লেখা, “থ্যাংক ইউ।”
তিনি চোখ সরু করে তাকালেন, “কি এটা?”
সুহা বলল, “কেক এটা। চকোলেট কেক।”
“কেক যে আমিও তা দেখতে পাচ্ছি। টাকা কি গাছে ধরে? কোনো জন্মদিন না, উপলক্ষ না কিসের কেক?” তিনি প্রায় হুঙ্কার দিলেন।
সুহা বিরক্ত হয়ে বলল, “আহা, মা। গিফ্ট এসেছে। তোমার টাকা যায়নি।”
“গিফ্ট! কিসের গিফ্ট?”
“একজনকে আমার প্র্যাক্টিকেল খাতা দিয়েছিলাম তাই…” “একজনটা ছেলে না মেয়ে?”
“ছেলে হলে কি হবে আর মেয়ে হলে কি হবে?”
“ছেলে হলে তোর পা ভেঙে দেয়া হবে আর মেয়ে হলে মেয়েটাকে একদিন নিয়ে আসবি বাসায়। এত ভালো মেয়ে! কৃতজ্ঞতার মত সহজ গুণ সবার থাকে না।”
সুহা বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসব ওকে।”
“কি নাম ওর?”
সুহা একটু ভেবে মুবিনের বদলে মিলার নাম বলে দিলো। সুহার মায়ের ভ্রু কুঁচকে গেল। এত ভালো ছাত্রী সুহার কাছ থেকে দেখে লিখে? অসম্ভব। মেয়ে কিছু একটা লুকাচ্ছে। কিন্তু এখন তিনি আর কিছু বলবেন না। মেয়ে ডালে ডালে চললে, মাকে চলতে হয় পাতায় পাতায়।
.
সুহা নিজের ঘরে এসে পায়চারি করতে করতে মুবিনকে কল করল। মুবিন কল ধরল না। সুহা বারবার করতে থাকল। সে বিফল নয়। মুবিন বলল, “হ্যালো।”
সুহা তার রিনরিনে গলায় ঝগড়া করে উঠল, “কেক ফেরত পাঠাচ্ছি তোমার ঠিকানা বলো।”
“কেক চাই না? ঝাল কিছু খাবে? আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল ঝগড়াটে মেয়েরা মিষ্টি খেতে পারে না। তাদের ডায়রিয়া হয়।”
“কি বললে তুমি? কি বললে?” সুহা রেগে বোম্ব।
মুবিন বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বলেছি।”
“তুমি থ্যাঙ্ক ইউ বলোনি। তুমি শো-অফ করেছ। টাকার গরম দেখিয়েছ।”
“সবকিছুতেই তুমি টাকার গরম পাও। তোমার মাথায় সমস্যা আছে।”
“আমার ইচ্ছা আমি তোমাকে খুন করব।”
“আমারো একই ইচ্ছা। ভাবছি লোক দিয়ে খুন করাব। টাকার গরম দেখাব।”
মুবিন লাইনটা কেটে দিলো। মেয়েটা বেশি বেশি। ফোন কেটে দেয়ার পরও সুহা আরো কল দিতে থাকল। কাজ হলো না। মুবিন ধরল না। সুহা তাই মেসেজ লিখতে মেসেজবক্সে গেল। মেসেজেই ধুয়ে দিবে মুবিনকে আজ। কিন্তু মেসেজ বক্সের দখিন হাওয়া সুহাকে মুহূর্তেই শান্ত করে দিলো। দখিন হাওয়ার নাম ইমাদ। সুহা গতরাতে ইমাদকে বলেছিল, “কে আপনি বলা ছাড়া আপনার কি কোনো কথা নেই? আমি কে এত জানতে হবে না আপনার। শুধু জেনে রাখুন, আমি ভাত খেতে বসলে আপনি খেয়েছেন কিনা সে চিন্তায় গলা দিয়ে আমার ভাত নামে না। বৃষ্টি নামলে আপনি ঘরে না বাইরে সেটাই ভাবি। ভ্যাপসা গরমে হাত পাখা নিয়ে আপনার কাছে দৌড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে। আপনি ঘুমোবেন আমি বাতাস করব।”
জবাবে ইমাদ লিখেছে, “আচ্ছা।”
সুহা বুকে কোল বালিশ জড়িয়ে আনন্দে কতক্ষণ গড়াগড়ি খেল। বুকের ভেতরের ধুকপুক।
.
অফিস শেষে শিল্পী প্রায়ই বাসা খুঁজতে বের হয়। এখন যে বাসাটা নিয়েছে সেটি অফিস থেকে দূর হয়ে যায়। অফিসের কাছাকাছি একটা বাসা নেওয়ার ইচ্ছা তার। তাই প্রতিদিনই বাসা খুঁজে বেড়ায়। আজ বাসা খুঁজতে বেরিয়ে একটা ঘটনা ঘটল। শিল্পী যে বিল্ডিং এ ফ্ল্যাট দেখছিল সে বিল্ডিংয়েই জুয়েল সাহেব থাকেন। শিল্পী জানতো না। বাড়ি ওয়ালার পাশের ফ্ল্যাটে জুয়েল সাহেব সপরিবারে বাস করেন। শিল্পী বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা শেষ করে বেরিয়েছে। জুয়েল সাহেবের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গেল। শিল্পী অবাক। এ বাসায় জুয়েল সাহেব থাকেন! জুয়েল সাহেব বাজারের ব্যাগ হাতে বেরুচ্ছিলেন। শিল্পীকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, “আরে আপনি এখানে?”
শিল্পী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “জি এখানে। ভাবির সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।”
জুয়েল সাহেব চমকালেন, “কি কথা?”
“কথা তো আপনার সাথে না। ভাবির সাথে।”
“ও বাসায় নেই।” বলেই জুয়েল সাহেব তড়িঘড়ি করে বাসায় ঢুকে গেলেন। ভেতর থেকে দরজা আটকে ফেললেন। শিল্পী হেসে ফেলল। জুয়েল সাহেব আজ আর বাজারে যাবেন না। বউকে শিল্পীর কাছ থেকে আগলে রাখবেন। বউয়ের কাছে তার কীর্তিকলাপ ফাঁস করে দেবার ভয় দেখাতে চেয়েছিল শিল্পী। তিনি পুরোদস্তুর আতঙ্কিত। হায়রে নষ্টা পুরুষদের দল!
চলবে ইনশাআল্লাহ….