#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৪৭
দীপা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আয়নার সামনে কাদিন। দীপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কিগো, তোমার হলো?” ওর কণ্ঠে ক্লান্তি। আর কতক্ষণ?
কাদিন বলল, “দু’মিনিট।”
“আর কতক্ষণ ধরে দু’মিনিট দু’মিনিট করবে তুমি?”
কাদিন কিছু বলল না। সে নিজেকে তৈরী করতে ব্যস্ত। রিমা বাইরে থেকে দরজায় কড়া নেড়ে ঠাট্টায় মাতল, “দীপা, দ্রুত তৈরী হও। কাদিন বেচারাকে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করাবে? বেশিরভাগ দাম্পত্যকলহ স্ত্রীর সাজগোছ নিয়েই কিন্তু হয়। এত সময় নিয়ে সাজা স্বামীরা পছন্দ করে না, বোন।”
দীপা ঘন ঘন চোখ পিটপিট করে আয়নার ভেতর দিয়ে কাদিনকে দেখতে দেখতে বলল, “স্যরি, কাদিন। রাগ করো না। এই তো আমার হয়ে যাবে। আর দু’মিনিট।”
রিমা দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়াল, “জানো, দীপা কড়ি বলছিল বাবাকে বলে কান্দিরপাড় একটা দোকান নিতে। দোকানের নাম কাদিন কসমেটিক্স। দোকান নাকি সেই চলবে?”
দীপা বলল, “কড়ি যেহেতু বলেছে নিশ্চয়ই চলবে। আমরা অবশ্যই নিব।”
রিমা বলল, “আচ্ছা আমি গিয়ে বাবার সঙ্গে আলাপটা পাড়ি।”
হাসতে হাসতে চলে গেল রিমা। দীপার মোবাইলটাও বেজে উঠল। ইমাদের কল। দীপা হাসিমুখে লাফিয়ে উঠে ফোন ধরল, “হে ইমাদ বল।”
ইমাদ জানতে চাইল, “সাদা শার্ট থেকে সসের দাগ কীভাবে তুলতে হয় জানিস?”
দীপা বলল, “ডিটার্জেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেল, উঠে যাবে।”
“হচ্ছে না।”
” হচ্ছে না? তাহলে আর কীভাবে? ব্লিচিং পাউডার? ব্লিচিং পাউডার দিয়ে দেখ।”
কাদিন প্রশ্ন করল, “কি পরিষ্কার করতে চাচ্ছে ও?”
দীপা ফোন কানে চেপেই বলল, “সসের দাগ।”
কাদিন মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “ডিটারজেন্ট, ঠাণ্ডা পানি, স্পঞ্জ আর সাদা ভিনেগার নিতে বলো। প্রথমে সসের দাগ লাগা জায়গাটায় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভিজিয়ে ডিটারজেন্ট দিবে। তারপর দশ/পনেরো মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর সাদা ভিনেগারে স্পঞ্জ ভিজিয়ে সেই স্পঞ্জটা দিয়ে দাগটা আবার ঘষবে। ঘষবার পর সাধারণ নিয়মে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিবে। দ্যাটস এনাফ।”
দীপা কাদিনের বলা প্রক্রিয়াটা ইমাদকে বুঝিয়ে বলল। ইমাদ বলল, “আচ্ছা।”
ফোন রেখে দিলো সে। দীপা কাছে এসে পেছন থেকে কাদিনকে জড়িয়ে ধরল। কাদিনের পিঠে মাথা রেখে বলল,
“রূপ লাগি আঁখি ঝুরে, গুণে মন ভোর,
প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে, প্রতি অঙ্গ মোর।
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে,
পরাণ পিরিতি মোর থির নাহি বান্ধে।।”
কাদিন স্মিত হাসল, “কোথায় শুনেছ?”
দীপা বলল, “শুনিনি, পড়েছি।”
কাদিন অবাক, “তুমি বৈষ্ণব পদাবলী পড়েছ?”
দীপা বলল, “বৈষ্ণব পদাবলী পড়তে যাব কেন? ইমাদের ডায়েরীতে পড়েছি।”
কাদিন হাতের আঙুলে আংটি পরতে পরতে বলল, “অনুমতি ছাড়া পড়োনিতো?”
দীপা মনে মনে জিহ্ব কাটল। সে অনুমতি ছাড়া পড়েছে। কিন্তু কাদিনকে তা বলা যায় না। মুখে বলল, “না, না। অনুমতি ছাড়া পড়তে যাব কেন? তাছাড়া, ওর ডায়েরীতে তেমন কিছু নেইও। ইমির ডায়েরী ইমির মত’ই রোবট রোবট।”
প্রথমটুকু মিথ্যে হলেও শেষ কথাটা সত্য। ইমাদের ডায়েরীতে এরকম ছড়ানো ছিটানো কিছু সংগৃহীত লাইন ছাড়া কিছুই নেই। কাদিন হাতঘড়ি পরে বলল, “রোবট রোবট না। অনুভূতি আছে বলেই লাইনগুলো টুকে রেখেছে। প্রেমিকার জন্য টুকেছে।”
দীপা শব্দ করে হেসে ফেলল, “কি বললে তুমি? কি বললে? ধুর ইমির আবার প্রেম, প্রেমিকা!!! আমি হাসি থামাতেই পারছি না।”
“এটা পড়ার পরও এ কথা বলছ?”
“এমন লাইন টুকে রাখলেই নাকি মানুষ প্রেমিক হয়ে যায়। ইমি হবে প্রেমিক?” দীপা বিরতিহীন হাসছে। হাসতে হাসতে কাদিনের পিঠে ঢলে পড়ছে। কাদিন ধীরে সুস্থে গায়ে পারফিউম মেখে ঘুরে দাঁড়াল। দীপার কপাল থেকে চুল সরিয়ে গালে আঙুল বুলাল। চোখে চোখ ডুবিয়ে বলল, “মাই ইনোসেন্ট লাভ।”
দীপা তখনও হাসছে। হাসি নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন।
চলবে ইনশাআল্লাহ….