একাকিত্বের_ছায়াসঙ্গী,পর্বঃতিন শেষ পর্ব

গল্পঃএকাকিত্বের_ছায়াসঙ্গী,পর্বঃতিন শেষ পর্ব
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

প্রায় মাস দেড়েকের মতো হয়ে গেছে।মনিরা প্রতিটা রাতে আবিরের কাছে আসে আর ওর সাথে মেলামেশা করে।ব্যাপারটা প্রথম প্রথম আবিরের ভালো লাগলেও এখন আর ভালো লাগেনা।শরীর অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছে ওর।কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না।সবকিছুতে এক প্রকার বিরক্তি ভাব কাজ করে।ওর সুঠাম দেহ কেমন যেন শুকিয়ে গেছে।গায়ের রং হলদেটে হয়ে গেছে।সামান্য কাজ করতে গেলে শরীর কেমন যেন হাপিয়ে উঠে।রাতের বেলা মনিরা এলো তখন আবির বলল
->আজকেও আমার সাথে এসব করবে?
মনিরা মায়াবি মুখে তখন বলল
->কেন তোমার এটা ভালো লাগেনা?
->শরীরটা আমার ভালো না।আর এসব করতেও আমার আর ভালো লাগে না।
->কিন্তু এটা ছাড়া তো আমি থাকতে পারবো না।আমি তোমাকে চাই,কারন আমি তোমায় ভালোবাসি।
আবির না চাইতেও সে আবারো মেয়েটার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো।মনিরার কাজ শেষ হয়ে গেলে সে চলে যায়।এতদিনে আবির বুঝতে পারছে যে সে যাকে একাকিত্বের সঙ্গী ভেবেছিলো সে আজ শুধু স্বার্থের জন্য নিজের চাহিদা পূরন করছে।আবির মনে মনে ভাবছে,সে যখন একা ছিলো তখনই বেশ ভালো ছিলো।আবিরের শরীরের এমন অবস্থা দেখে ওর মা আয়েশা বেগম বেশ চিন্তিত।আয়েশা বেগম আবিরকে বলল
->আবির তোর শরীর দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছে কেন?কোনো কি সমস্যা তোর?
->না তো আম্মু।আমি তো একদম ঠিক আছি।
->আমার কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে না।
->মায়ের মন তো তাই সন্তানের অনেক কিছুই তার কাছে অস্বাভাবিক লাগে।
আবির আর কথা না বলে বাইরে চলে গেলো।ইদানিং ফেসবুকে আবিরের সাথে তানিশা নামের একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে।মেয়েটা আবিরের সমবয়সী কিন্তু সে বিবাহিত।সে মেয়েটি নিজেও একাকিত্বে ভুগে।তার স্বামী থেকেও না থাকার মতো।মেয়েটির সাথে আবিরের পরিচয় অনেক আগে থেকে কিন্তু ওর সাথে আগে খুব একটা কথা হতো না।কিন্তু ইদানিং দুইজনের বেশ ভালোই কথা বার্তা হয়।আবির মনে করতো যে,ওর সাথে কথা বলতে গেলে যদি মনিরা এসে কিছু করে কিন্তু মনিরা এমন কিছু করেনা।সে শুধু রাতে আসে এখন,এছাড়া সারাদিন ওর আর কোনো দেখা পাওয়া যায় না।আবির তানিশার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে।একজন আরেকজনের কাছে নিজেদের ব্যাপারে সবকিছু শেয়ার করে।তবে তানিশা বলেছিলো ওকে যে,তুমি যদি আমার সাথে ফ্রেন্ড হিসেবে থাকো তাহলে আমি রাজি,এছাড়া অন্যকিছু হলে দুরে থাকো।আবির বলেছিলো যে সে ফ্রেন্ড হিসেবে থাকবে আর এমন কিছু করবে না যাতে তানিশার কোনো সমস্যা হয়।আর এভাবে দুইজনের কথা চলছে।তো আবির ওকে মনিরার কথাটা বলেই ফেলে।সব শুনে তানিশা বেশ চমকে যায়।কারন এমন কিছু শুনলে যে কারো চমকে যাওয়ার কথা।তানিশা আবিরকে বলে
->এভাবে চলতে থাকলে তো তুমি মারা যাবে।
->জানি না।আমার তো এখন মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
->না না এমন কথা বলতে নেই তুমি মরে গেলে তোমার মা-বাবার কি হবে হুম?
->জানি না।কিন্তু আমার শরীর দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আর কিছু ভালো লাগছে না।
->এমন হওয়ার কথা।কেননা মানুষের থেকে এদের চাহিদা অনেক অনেক বেশি হয়।যা একজন সাধারন মানুষের পক্ষে পূরন করা সম্ভব হয় না।আর ও তোমাকে শুধু মাত্র নিজের চাহিদা পূরনের জন্য ব্যবহার করছে।এমনটা আমার একটা আত্মীয়ের সাথে হয়েছিলো,পরে যখন ওর বাড়ির সবাই বুঝতে পেরে হুজুরের কাছে নিয়ে যায় তখন অনেক দেরি হয়ে পড়ে।তাকে আর বাঁচানো যায়নি।আর অবাক করা বিষয় হলো ওর শরীরে এক ফোঁটা রক্ত অবশিষ্ট ছিলো না।শরীর একদম হলুদ হয়ে গেছিলো।
->আমার শরীরটাও তো অনেক হলুদ।
->আবির তুমি আর দেরি করো না।আমি একটা ঠিকানা দিচ্ছি তুমি সে ঠিকানায় গিয়ে মসজিদের ইমামের সাথে দেখা করো সে কিছু একটা করবে।

আবির তানিশার থেকে সেই ঠিকানা নিলো।আবির ওই ইমামের কাছে যাওয়ার জন্য রওনা দিবে আর তখন ওর সামনে মনিরা এসে দাড়ালো।মনিরার চোখে মুখে রাগ দেখা যাচ্ছে।মনিরা আবিরকে বলল
->আমাকে তুমি তোমার জীবন থেকে কখনো সরাতে পারবে না।
->কিন্তু আমি আর তোমায় চাইনা।কারন তুমি শুধু নিজের চাহিদা পূরনের জন্য আমার কাছে আসো।যা পূরন করতে গিয়ে দিন দিন আমি মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি।
->এতকিছু আমি বুঝিনা।তুমি আজ থেকে ওই তানিশার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবে না।আর যদি রাখো তাহলে তোমায় আমার হাতে মরতে হবে।এখন ঠিক করো তুমি কি করবে?
আবির ভাবতে লাগলো সে এমনিতেও মারা যাবে।তার চেয়ে একটা শেষ চেষ্টা করা যাক তানিশার কথা মতো।কিন্তু এর জন্য আগে মনিরাকে সরাতে হবে।তাই আবির বাধ্য হয়ে বলল
->আমি তোমার কথায় রাজি।
মনিরা হেসে উঠে বলল
->ভালো ছেলে।এখন যাচ্ছি আমি রাতে আসবো।
আবির দেরি না করে তাড়াতাড়ি সেই ঠিকানায় যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠে পড়লো।আর তখনই একটা ট্রাক এসে রিকশায় ধাক্কা দিলো।আবির রিকশা থেকে ছিটকে দুরে গিয়ে পড়লো।আবির মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পেলো মনিরা ওর থেকে কিছুটা দুরে দাড়িয়ে আছে।সে আবিরকে বলছে,
->তুমি ভালো ভাবে কথা শোনার ছেলে নও তাই আমি এটা করতে বাধ্য হলাম।
আবিরের চোখ বুজে এলো।আশেপাশের মানুষজন আবিরকে ধরে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দিলো আর তারপর ওর মা-বাবা আবিরের ফোন থেকে নাম্বার নিয়ে কল করে বিষয়টা জানালো।আবিরের বাবা-মা এসে আবিরের এই অবস্থা দেখে কাঁদতে লাগলো।একটু বাদে আবিরের ফোনে একটা কল আসে।তখন আবিরের বাবা ফোন রিসিভ করে।আসলে ফোনটা করেছে তানিশা।তানিশা আবিরের এই অবস্থার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।তানিশা আবিরার বাবার কাছে নিজেকে ওর বান্ধবী বলে পরিচয় দেয়।তারপর তানিশা ভাবে যা করার ওকেই করতে হবে।তানিশা আর দেরি না করে সে নিজে ওই ইমামকে নিয়ে আবিরের কাছে হাজির হয়।তারপর তানিশা সব ঘটনা খুলে বলে আবিরের মা-বাবাকে।সব শুনে তারা নিজেরাও বেশ অবাক হন।অনেক চেষ্টা করে সেই ইমাম আবিরের থেকে মনিরাকে ছাড়াতে সফল হোন।কিন্তু যখন মনিরা আবিরকে ছাড়লো তখন সে ওই ইমামকে বলল
->তুই যত চেষ্টায় কর না কেন তুই আমায় ওর কাছে থেকে দুরে রাখতে পারবি না।
->আমি তোর মতো অনেক ভূত-পেত্নী তাড়াইছি।আর তুই তো তুই।
এই বলে ইমাম মনিরার দিকে এক ধরনের পানি ছিটে দেয় তখন মনিরা বেশ ভয় পেয়ে যায়।আর সেখান থেকে মনিরা চলে যায়।
আবিরের শরীরে রক্ত নেয় বললেই চলে।মনিরা নামের সেই পরী দিনে দিনে আবিরের শরীরের রক্ত শুষে নিয়েছে।তাই আবিরকে অনেক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।ইমাম বের হয়ে এসে আবিরের মা-বাবাকে বলে,”যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবিরকে যেন বিয়ে দেওয়া হয় নয়তো ওই পরী সহজে ওর পিছু ছাড়বে না”।ইমাম চলে যায়।আবিরের মা-বাবা তানিশার কাছে এসে বলে,
->তুমি আমার ছেলের জন্য যা করলে এর জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
->আন্টি একজন বন্ধু হিসেবে আমার যেটুকু করার প্রয়োজন সেটুকু করেছি।আর একটা কথা আন্টি আপনারা আবিরের দিকে খেয়াল রাখবেন।আমি যেটুকু শুনেছি,ছোটবেলা থেকে আবির একা বড় হয়েছে।এমনটা করা ঠিক হয়নি।বড় হওয়ার পর যখন সে নিজেকে একা অনুভব করতো তখন সেই পরী ওর একাকিত্বের সুযোগ নিয়েছে।সে আবেগে পড়ে বুঝতে পারেনি সে কি করছে।তাই আন্টি আপনারা ওর সাথে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করবেন।আর এমন কাউকে ওর জীবনে এনে দিবেন যাতে সে আবিরের সাথে ফ্রি ভাবে চলতে পারে আর সে নিজেকে কখনো একা না ভাবে।
->তাহলে মা তুমি ওর জীবনে চলে এসো।
তানিশা এই কথা শুনে রহস্যময় ভাবে হেসে চলে গেলো।আবিরের মা-বাবা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে।নিজের সন্তানকে একা বড় করার কারনে আজ তার এই অবস্থা হয়েছে।
আবির এখন পুরোপুরি সুস্থ।মনিরা আর ওর কাছে আসেনা কিন্তু মাঝেমধ্যে সে স্বপ্নে মনিরাকে দেখতে পায়।ইদানিং আবিরের বিয়ের কথা চলছে,কিন্তু কেন যেন বিয়েটা হতে গিয়েও হয়ে উঠছে না।হয়তো সেটা মনিরার কারনে।তবে কিছুদিনের মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।
তানিশার সাথে আবিরের এখন খুব একটা কথা হয় না।তানিশা ভাবে কি লাভ আর ওর সাথে এখন কথা বলে।আবির তো এখন তার স্ত্রীকে পেয়ে নিজের একাকিত্ব দুর করেছে।একাকিত্বের ছায়াসঙ্গী হিসেবে সে তার স্ত্রীকে পেয়েছে।কিন্তু তানিশার কি হবে,তার একমাত্র একাকিত্বের ছায়াসঙ্গী তো ছিলো তার স্বামী কিন্তু সেও তো থেকেও না থাকার মতো না।দিনশেষে তানিশা একা একায় থেকে গেলো।
আবির এখনো মনিরাকে দেখে,সে ওর থেকে দুরে দাড়িয়ে আছে।তার চোখে অনুতপ্তের ছাপ স্পষ্ট দেখা যায়।
আমাদের সমাজে আবির আর তানিশার মতো মানুষদের অভাব নেই যারা অনেক একাকিত্বে ভুগে।আর অনেকে আছে যারা এই রকম মানুষদের একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে তাদেরকে উল্টো অন্ধকারে ঠেলে ফেলে দেয়।আর এই অন্ধকার সেই মানুষদের অনেক কঠিন করে তুলে যাদের মন পরবর্তীতে অনেক কঠিন হয়ে যায়।সহজে আর কাউকে বিশ্বাস করেনা।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here