একটি মৃত্যু এবং একটি বিয়ে-৭ (শেষ পর্ব)

“একটি মৃত্যু এবং একটি বিয়ে-৭ (শেষ পর্ব)

ঘটনার ঘনঘটায় হিমুর ইমেইলটা পড়ার সুযোগ পায় নি প্রমা মধ্যরাতের আগে।
গভীর রাতে কাজের একটা জরুরী ইমেইল পাঠাতে গিয়ে দেখতে পেলো হিমুর চিঠিটা। অল্প কথায় কি সুন্দর সহজ সাবলীল আবেদন!
কি করে অগ্রাহ্য করবে তাকে প্রমা ?

আজ হিমুর খালার সাথে কথা বলার পর অনেক রহস্যের কুহেলিকা একে একে সরে এসেছে। তারপরও অনেকগুলো ব্যাপার এখনও প্রহেলিকার অন্তরালেই রয়ে গেছে।

হিমুর খালা তার বোন সম্পর্কে বেশ খোলাখুলিভাবে কথা বললেন আজ। প্রমা অনেক কিছু জানতে পারলো হিমুর মায়ের পুরনো অতীত সম্পর্কে। সব কিছু শুনে একবারও মনে হয় নাই যে ওনারা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু লুকিয়েছে তার কাছ থেকে।
হয়তো বিয়ের আনন্দঘন মুহূর্তটুকুতে অতীতের কষ্টকর স্মৃতি টেনে আনতে চান নি। এটা স্বাভাবিক।
ছোটখালার বক্তব্য অনুযায়ী বাচ্চা জন্মানোর পর থেকেই হিমুর মা ধীরে ধীরে কেমন যেন নিষ্প্রভ হয়ে যেতে থাকেন। অথচ একটা সুস্থ বাচ্চার জন্মের জন্য তিনি কি না করেছেন…..কতো ডাক্তার,
পীর-ফকিরের কাছে ধরনা দিয়েছিলেন।

—হিমুর প্রতি তোমার শাশুড়ির টান ছিল অন্যরকম, অনেকটা
মা-বাঘিনী যেমন তার বাচ্চাকে আগলে রাখে অনেকটা সেরকম।

—মানে?

—মানে অসম্ভব প্রোটেকটিভ আর দখলপ্রবণ। সে কারোর কোলে যেতে দিতো না ওকে। এমনকি প্রথম প্রথম আমার কাছেও না। অবশ্য পরে আপা যখন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে তখন সে আর মাইন্ড করতো না আমি হিমুকে কোলে নিলে। বরং খুশিই হতো।

—ওনার অসুস্থতার কারণ কি ছিল?

—আপার ঠিক কি হয়েছিল সেটা আমরা জানতাম না। তবে আপার শরীর দিনে দিনে খারাপ হতে থাকে। সে যেন কেমন মলিন হয়ে যেতে লাগলো। অহেতুক কারণে বাচ্চাদের মতো অভিমান-কান্না করতো। অদ্ভুত সব জিনিস কিংবা মানুষ দেখতে পেতো যাদের অস্তিত্ব নেই বাস্তবে।

—আর হিমুর বাবা ? উনি কোথায় ছিলেন ?

—দুলাভাই কাজকর্মে ডুবে থাকতেন। সংসারের প্রতি তার কখনই তেমন ধ্যান ছিল না।

—হিমুর মাকে কি কোন ভালো ডাক্তার মানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়ে ছিল?

—হ্যাঁ। একদম শেষের দিকে। তখন আসলে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

—উনি কিভাবে সুইসাইড করেছিলেন ?

—বিষ খেয়ে।

—বিষ ? ওমাইগড! উনি কি করে পেলেন?

—এসব তথ্য পুরোপুরি আমার জানা নেই। তখন আমি নিজেও বয়সে ছোট আর অপরিপক্ক ছিলাম। যতোদূর মনে আছে ডাক্তার বলেছিলেন পয়জনিং হয়েছে।

—এমনও তো হতে পারে তাকে কেউ বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছিল?
প্রমা এখন বেশ সপ্রতিভভাবে কথা বলতে পারছে।

—সেটা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। কি জানি সবাই প্রথম থেকেই বলছিল যে আপা সুইসাইড করেছে। তার মানসিক ভারসাম্যহীনতার কথা ভেবে ব্যাপারটা সবাই বিশ্বাস করেছিলাম।

—জী বুঝতে পারছি আপনাদের সিচুয়েশনটা।সরি খালামনি,আমি অনেক প্রশ্ন করছি। কিছু মনে করবেন না। আসলে আমি কিছু কিছু ব্যাপারে পরিষ্কার হতে চাই।

—কোন অসুবিধা নাই মা। তুমি আমাদের বাড়ির বউ হয়ে আসছো। তোমার মনে সব ব্যাপার খোলাসা হওয়াটা খুব প্রয়োজন।

—অনেক ধন্যবাদ খালামনি।

—আরে কিসের এতো ফরমালিটি !
আমি হিমুকে বলেছিলাম তোমাকে সব জানিয়ে দিতে। কিন্তু সে কেন জানালো না তা আমি জানি না। হয়তো সে তার মায়ের এই অন্ধকার অধ্যায়টা নিয়ে কথা বলতে চায় নি তোমার সাথে।হিমু আসলে তার মাকে প্রচন্ড ভালোবাসে এখনও।

—জী খালামনি উনি আমাকে বলেছে। আর সেটাই তো স্বাভাবিক।

—প্রমা, তুমি কিন্তু হিমুর উপর রাগ করে থেকো না। সে তোমাকেও ভীষণ পছন্দ করে।

—হুম।
প্রমা সম্মতির সাথে মাথা নাড়লো।

~~##~~

হিমুর মায়ের অত্যন্ত পছন্দের নবরত্ন আংটিটার সাথে চোখের বিভ্রম মানে হ্যালুসিনেশনের একটা যোগাযোগ নিশ্চয়ই আছে।
কিন্ত সেটার কি কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে ?
অভিশপ্ত হোপ ডায়মন্ড আংটির মতো এই আংটিটাও কি অপয়া?

প্রমা গুগল সার্চ করে দেখলো আংটির সাথে হ্যালুসিনেশনের কোন সরাসরি যোগাযোগ আছে কি না। শুধুমাত্র যাদু টোনা জাতীয় অলৌকিক ব্যাপার ছাড়া আর কোন তথ্য পাওয়া গেল না।

রুমানা বলেছিল সে আজ নাইট ডিউটিতে থাকবে। প্রমা একটু চিন্তা করে রুমানাকে একটা টেক্সট করে দেখলো।

—রুমা, আজ রাতে তুই অনকল আছিস। আমিও জেগে আছি। সময় পেলে একটা কল করিস। হাসপাতালে বিজি থাকলে ঝামেলা করে কল করার দরকার নাই।
প্রমা রুমানাকে একটা টেক্সট মেসেজ পাঠালো।

পরক্ষণেই রুমানা মোবাইলে ফোন করলো।

—কি রে দোস্ত ? কি ব্যাপার ? এতো দুশ্চিন্তা কিসের বল তো ?

—তুই বিজি না তো?

—নাহ্। এই মুহূর্তে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ণ ফ্রন্ট। তবে আগামী দশ মিনিটেই তা বদলে যেতে পারে!

—তোর সাথে একটা বিষয়ে কথা বলতে চাইছিলাম। ব্যাপারটা কনফিডেন্সিয়াল। কাউকে বলিস না।

—শিওর দোস্ত। আমরা ডাক্তার মানুষ এই ব্যাপারে খুব কঠিন নিয়ম পালন করি। সবার কেইস কনফিডেন্সিয়াল রাখতে হয়। তুই নির্ভয়ে
বলে ফেল।

প্রমা রুমানাকে সবকিছু খুলে বললো।
হিমুর খালা যা যা বললেন আজ আর তার নিজের সাথে যেসব অদ্ভুত অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে ….সব কিছু।

রুমানা চুপচাপ সব কথা শুনলো।

—কি মনে হয় তোর রুমা ? হিমুর মায়ের সুইসাইডের কারণ কি হতে পারে?

—যা যা বললি, সব শুনে মনে হচ্ছে হিমুর মায়ের পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন হচ্ছিল। তখন তো এই অসুখটা ঠিক মতো ডায়াগনোজ
হতো না।
আর ভালো মতো কেউ বুঝতে পারতো না এই বিষয়টা।
হিমুর মা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল হরমোনাল কারণে। আর সেই কারণে হয়তো তার সাইকোসিস হচ্ছিল।সাইকোসিসের সময় মানুষ বিচিত্ররকম অদ্ভুত কাজ করে।মানুষ খুন করা থেকে শুরু করে সেল্ফ হার্ম, সুইসাইড সব কিছুরই উদাহরণ আছে সাইকিয়াট্রিক জার্নালে।
আর আমি নিজে এখন গাইনিকোলজিতে ট্রেনিং নিচ্ছি। পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন সব মেয়েদেরই কম বেশি হয়।

— তাই না কি? কি ভয়ংকর অবস্থা।

—ভয়ংকর তখনই হয় যখন মায়েরা নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। সাইকোসিসের কারণে অডিও-ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশনের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকে।

—ইস্! কি কষ্টের। তাহলে সে কারণে সুইসাইড করেছিলেন বোধ হয়।

—হুম মোস্ট লাইকলি।

—তাহলে আমার চোখের বিভ্রমের কি কারণ হতে পারে ?

—সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে আংটিটা এর সাথে কোনরকমভাবে জড়িত মনে হচ্ছে।
আচ্ছা, আংটি যে বাক্সে রাখা ছিল সেটা কিসের তৈরী ?

—দাঁড়া একটু দেখছি।
বাক্সটা তো মনে হচ্ছে কাঠের তৈরী, একটা নীল ভেলভেটের কাভার দেওয়া।

—আর আংটির ভেতর কোন গোপন কুঠুরী আছে না কি ?

—বুঝতে পারছি না। কেন ?

—পয়জন রিঙের নাম শুনেছিস না?

—না তো!

—মনে নাই সেই ক্লিওপেট্রার প্রাচীন যুগে রোমান সম্রাট / সম্রাজ্ঞীরা আংটির ভেতরে গোপন কুঠুরীতে বিষ সাথে নিয়ে রাখতো সুইসাইডের জন্য।

—ওমা কি বলিস!

—সত্যি কথা।গুগল করে দেখিস !
আংটিটা কোন এক অভিজ্ঞ স্যাকরার কাছে নিয়ে চেক করতে হবে।

—স্যাকরা কি জিনিস ?

—আরে বোকা, স্যাকরা হলো স্বর্ণকার যারা গয়না বানায়।

—ওহ! তুই কোন স্যাকরাকে চিনিস না কি?

—নাহ্। দেখি সকালে আম্মুকে জিগেস করে দেখবো।

—আচ্ছা দোস্ত তুই কাজে যা। অনেকটুকু সময় নিলাম তোর। মেনি মেনি থ্যাংকস!

—নো প্রবলেম বন্ধু। এখন মাথা ঠান্ডা রেখে ঘুমোতে যা তাহলে।

— আচ্ছা।

মোবাইল বন্ধ করে প্রমা চুপচাপ শুয়ে রইলো।
সারাদিনের কোলাহলের পর রাতের নির্জনতায় হিমুর জন্য মন কেমন করতে লাগলো।
খুব মায়া হলো হিমুর জন্য। তার মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু এখনও তাকে হন্ট করে বেড়াচ্ছে। এতে তার তো কোন দোষ ছিল না।
প্রমা ভাবলো তার উচিত হিমুর ইমেইলের উত্তর দেয়া। গত কয়েকদিন অনেক এ্যাভয়েড করেছে তাকে।

সুপ্রিয় হিমু,

এবারও আপনার ইমেইলটা অনেক পরে পেলাম। একটু বেশি ব্যস্ত ছিলাম গত কয়েকদিন।ঠিক মতো কথা বলতে পারি নি বলে দুঃখিত।
আসলে আমার মনে বেশ কিছু দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছিল। সেগুলো আমাকে যথেষ্ট পীড়া দিচ্ছিল।
আজ ছোট খালামনির সাথে অনেকক্ষণ বেড়ানো হলো।তিনি আমাকে স্নেহের সাথে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। আপনার কবে সময় হবে জানাবেন।

—প্রমা।

~~~##~~~

সকালবেলা প্রমা তাদের বাড়ির গেট পাড় হয়ে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ দারোয়ান এসে বললো,

—আফা, আস সালামু আলাইকুম।

—ওয়ালাইকুম।

—আপনের সিএনজি ভাড়া আমাদের পাশের বিল্ডিংএর ওয়াদুদ ভাই দিয়া গেছিল।

—উনি কে ? আমার ভাড়া কেন দিলো?

—ওনারা নতুন আসছেন এই পাড়ায়। ওয়াদুদ ভাই মানুষটা খুব ভালো। হে আপনারে ভালা পায়।

—ভালা পায় মানে ?
প্রমা ভুরু কুঁচকে ফেললো।

—এই ধরেন…. পেরেম, মহব্বত …..এইসব আর কি!
আকবর দারোয়ান পান খাওয়া দাঁত বের করে হে হে করে হাসতে লাগলো।

—তাকে বলে দিয়েন। আমার বিয়ে সামনে। পেরেম টেরেম আমারে দিয়ে হবে না।

—আইচ্ছা আফা!

প্রমা বাসে উঠে ভাবছে,

—এইসব উটকো ঝামেলা প্রশ্রয় দেয়ার কোন মানে নেই।
আহারে ! নতুন রোমিও এসেছেন পাড়ায় !
যত্তোসব !

তার মানে সামনের বাসার এই ছেলেকে হয়তো সে দেখেছিল গভীর রাতের বেলায়।
কিন্তু বেড়ালটা কি করে এলো ? কেন এলো ?

একটু পরই হিমুর টেক্সট এলো,

—রাজকন্যার অভিমান শেষ পর্যন্ত ভাঙলো তাহলে ? বিকেলেবেলায় কি দেখা করা সম্ভব হবে?

—জী জনাব, সম্ভব।

—আই মিসড ইউ প্রমা।

—আই নো।

—ডিড ইউ মিস মি ?

উত্তরে প্রমা এটা স্মাইলি ব্লাশিং ফেইসের ইমোজি পাঠালো।

—দ্যাট মিনস ইয়েস। আই নো আমাকে ভুলে কোথায় যাবে সুন্দরী?

—আপাতত কাজে যাচ্ছি।
প্রমা মনে মনে হাসলো।

—ঠিক আছে বিকেলবেলায় আমি তোমার স্কুলের সামনে থেকে তুলে নিবো।

—আচ্ছা।

পুরোটা দিন একটা চরম উৎকণ্ঠায় কাটলো প্রমার। বারবার মোবাইলে সময় দেখে নিচ্ছে সে। বিকেল হতে আর কতোক্ষণ বাকি ?

একসময় স্কুলের লাস্ট ক্লাশ শেষ হয়ে এলো। প্রমার মনে হচ্ছে একটু পরেই হিমু চলে আসবে তাকে নিতে। মাকে জানানো দরকার যে সে হিমুর সাথে বেরুবে, কিন্তু তার লজ্জা লাগছে।

স্কুলের গেট পেরিয়ে বের হয়ে দেখে মিস্টার হিমু তার সেই মিলিয়ন ডলার হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা প্রথমদিনের মতো। সে কি করে বুঝলো রজনীগন্ধা প্রমার প্রিয় ফুল?

—এসো প্রমা, গাড়িতে বসো।

গাড়িতে বসার পর প্রমা জিগেস করলো,

—আমরা কোথায় যাচ্ছি ? দেরি করলে মা চিন্তা করবে।

—ডোন্ট ওয়ারি। ছোটখালা তোমার মাকে জানিয়ে রেখেছি অলরেডি।

—ওহ্। তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি এখন?

—যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে।

—আচ্ছা।
প্রমা মিটিমিটি হাসছে।

—শোন, মানে শোনেন, কাল ছোট খালা বললেন যে আপনার আগে অমিতা নামে একটা মেয়ের সাথে এনগেজমেন্ট হয়েছিল।

—তুমি করেই বলো। শুনতে বেশি ভালো লাগে। আর হ্যাঁ অমিতার সাথে এনগেজমেন্ট হয়েছিল, সেটা সঠিক তথ্য। কিন্তু সে বিয়ে ভেঙে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল তার পুরানো বয়ফ্রেন্ডের সাথে।

—বিয়ে কেন ভেঙে দিলো ?

—সে না কি অদ্ভুত কিসব দেখতে পায়।

—কি দেখতে পেতো ?

—জানি না। তবে মনে হচ্ছিল ওর ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন হচ্ছিল।

—কেন হচ্ছিল হ্যালুসিনেশন, জানেন ?

—হ্যাঁ। সে ড্রাগ নিতো। আসলে এখনও ড্রাগ নেয়। সে বর্তমানে একটা রিহ্যাবে আছে।

—যোগাযোগ আছে ওর সাথে এখনও ?

—না তাক সাথে যোগাযোগ নাই। তবে যেহেতু বাবার বন্ধুর মেয়ে, সেজন্য খবরাখবর পাওয়া যায়।

—আর তুমি? মানে আপনি….আপনি তাকে ভালেবাসেন নি ?

—ভালোবাসা কি এতোটা সহজ প্রমা ? বাবার বন্ধুর মেয়ে শুনে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। পরে তো দেখলাম সে একজন এ্যাডিক্ট!

—আপনি কি জানেন আমিও বেশ কয়েকবার অদ্ভুত কিছু দেখেছি যার অস্তিত্ব বাস্তবে নেই।

—তাই না কি?

—আমার সন্দেহ আপনার মায়ের নবরত্নের আংটিটার উপর।

—তুমি বলতে তাও ঐ আংটিটা cursed ?

—সেটা জানি না।

—আমার মনে হয় তুমি ওভার-রিয়েক্ট করছো। আংটিটার সাথে হ্যালুসিনেশনের কি যোগাযোগ ?

—তাহলে আমি আর তোমার এক্স অমিতা…. সবারই কি বিভ্রম
হওয়া সম্ভব?

—ইউ হ্যাভ আ পয়েন্ট দেয়ার।

—আমার বন্ধু আংটিটা স্যাকরার কাছে নিয়ে চেক করবে সেখানে পয়জন রাখার ছোট কুঠুরী আছে কি না।

—শিওর চেক করে দেখতে পারো। আমার কোন আপত্তি নাই। সব ব্যাপারে ক্লিয়ার হয়ে নাও প্রমা।

প্রমা বাইরে তাকিয়ে দেখছে। হাইওয়েতে শাই শাই করে গাড়ি ছুটে চলেছে। দেখতে দেখতে তারা পদ্মা ব্রীজের ওপর চলে এসেছে। কি আশ্চর্য এতো তাড়াতাড়ি কি করে সম্ভব ?

—আমরা কি এখন পদ্মা ব্রীজের ওপর ?

—ইয়েস ইওর হাইনেস!

—আমরা কোথায় যাচ্ছি ?

—ফরিদপুর।

—সেখানে কি ?

—সেখানে আমার মায়ের কবর। তার হবু পুত্রবধূকে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে।

প্রমা চুপ করে রইলো। হিমু তার মাকে এখনও কতো ভালোবাসে!
অথচ এই পুত্রের জন্মের পর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
আহারে, কেউ বোঝেনি তার কষ্টটা। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন সত্যিই একটা মেয়ের জীবনের কালো অধ্যায়।

হিমু গাড়িতে গান ছেড়েছে। সে কি করে জানলো জন ডেনভারের এই গানটা প্রমার ভীষণ প্রিয়।

“You fill up my senses like a night in a forest
Like the mountains in springtime like a walk in the rain
Like a storm in the desert like a sleepy blue ocean
You fill up my senses come fill me again….”

পদ্মা ব্রীজ পেরিয়ে গাড়ি দৌড়ে চলেছে ফরিদপুরে হিমুর নানি বাড়ির দিকে। সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই পৌঁছে গেল তারা।
বাড়ির কেয়ারটেকার রহমান মিয়া দৌঁড়ে এলেন,

—আরে ছোটবাবু তুমি ?

—হুম রহমান কাকা। আপনাদের বউমাকে সাথে করে নিয়ে আসলাম।

রহমান মিয়া একটু অবাক হয়ে প্রমার দিকে তাকালো। তারপর তাদের আপ্যায়নের জন্য অস্থির হয়ে বাড়ির ভেতরে খবর দিতে চলে গেল।

—চলো বাড়ির পেছনের বাগানে নানি আর মায়ের কবর।
সাড়ি সাড়ি নারকেল আর সুপাড়ি গাছের ছায়াঘেরা বাগানের মধ্যে দুটো কবর।

হিমু এগিয়ে এসে এই প্রথম প্রমার হাত ধরলো।

—মা, দ্যাখো তোমার ছেলের বউকে সাথে করে নিয়ে এসেছি। তুমি এবার শান্তিতে ঘুমাও মা।

প্রমার হাত ধরে হিমু দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত।
আকাশে দলে দলে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে।
একটা পাখি যেন পথ ভুলে চুপচাপ এসে বসে রইলো পেয়ারা গাছের ডালে।

~~~সমাপ্ত~~~

উপসংহারঃ
আংটির কারণে প্রমার হ্যালুসিনেশন হয়েছে কি না সেই ব্যাপারটা এখনও বিতর্কিত।
স্যাকরার কাছে নিয়ে প্রমা আর রুমানা চেক করে দেখেছে আংটিতে কোন গোপন কুঠুরি ছিল না।
হিমুর মায়ের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। সম্প্রতি তার একটা ডায়েরি পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে আর পরে তার অভিব্যক্তি লিখে রেখে গেছে।
অতঃপর সামনের মাসের ১৭ তারিখে প্রমা আর হিমুর বিয়েটা হয়ে গেল নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে। তাদের মধু চন্দ্রিমার জন্য তারা বেড়াতে গিয়েছে মালদ্বীপে। স্বস্তির ব্যাপার হলো হিমু খুব ভালো সাঁতার জানে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here