ইহান ভাই,পর্ব-৫
সাদিয়া
রেহেলা বেগম স্যুপের বাটি রেখে মিহু কে এদিকে ডাকলেন। রেহেলা বেগমের সাথে রক্তের কোনো টান না থাকলেও উনার কাছে মায়ের আভা পায় সে। সেই ছোটবেলায় এসেছিল এবাড়ি। তখন থেকেই তিনি ওকে আগলে রাখেন।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “শরীর খারাপ?”
“না মামুনি এমনি ভালো লাগছিল না। আর তুমি স্যুপ করে আনতে গেলে কেন? আমি নিজেই বানিয়ে নিতাম।”
“আহ কি পাকামি। যেন কত রান্নাঘরে যাস। পারিস তো ওই একটু চাইনিজ বানাতে। তাও হাতটাত পুড়ে।”
ফিক করে হেসে উঠল মিহু। রেহেলা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বললেন “তুমি আমার মা।”
“পাগলি মেয়ে। এসব রেখে এখন কথা শুন তো।”
“বলুন মহারানি।”
“সারাদিন যে ফোন নিয়ে বসে থাকিস একটুও পড়তে বোস না। তার কি হবে?”
“….
“এবারও কি তুই গ্রেপ দিতে চাস? ইহান কে যদি এই কথা বলি তো ফোন আর হাতেও পাবি না।”
“….
“এখন থেকে ঠিক ভাবে পড়াশোনা করবি। বুঝলি? এবার এটা খেয়ে ঘুমা।”
রেহেলা বেগম চলে গেলেন। মিহু ইহানের কথা মনে করে মুখ পাল্টালো।
“যেই না এক ছেলে তার আবার এত মাতবরি। অসভ্য বাজে স্বভাবের লোক একটা।”
ইহান মিহুর নাম লিখে ফেসবুকে সার্চ দিল। একটু ঘাটাঘাটির পর আইডি পেল। প্রোফাইল পিকে ওর নিজের একটা ছবি। মুখে হাত দেওয়া, সাদা ওড়না মাথায় পরনে। শুধু মায়াবি চোখ দেখা যাচ্ছে। কি অদ্ভুত সেই চোখ! কি আবেগি সেই চোখের চাউনি! যেন শরীর শিউরে দেওয়া অনুভূতি। চোখের নিচের খানিক দূরের তিল টা একদম দিলে গিয়ে গাথে। ইহান স্তম্ভিত নয়নে তিলের পানে তাকিয়ে রয়েছে। ঠিক আবেগি অনুভূতি।
ইহান নিচে গেল। টুকটাক ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে সে। কখনো নূপুর পড়া দুই জোড়া পায়ের, কখনো হাতের মেহেদি দেওয়া পিক, কখনো চোখের আবার কখনো বা নীল আকাশের মেঘ ভর্তির ছবি। আর সেখানে হাজার ছেলের হুমড়ি খাওয়া কমেন্ট। নাইস বিউটিফুল অসাধারণ এসব দেখতে দেখতে মেজাজ চরে গেল তার। মিহু কে রিকুয়েস্ট পাঠাল।
১০ মিনিট হতে চলে একসেপ্টের নোটিফিকেশন আসছে না। রেগে এবার সে মিহু কে ম্যাসেজ করে “মিহু কুহু একসেপ্ট কর রিকুয়েস্ট টা।”
মিহু চ্যাট করা রেখে ম্যাস রিকুয়েস্ট দেখল। আইডিও ঘুরে এসেছে সে। ইহান ভাই তাকে রিকুয়েস্ট কেন দিতে গেল? ফেসবুকে মোটামুটি ভালোই পরিচিত লোকটার। এসব দেখেও না দেখার ভান করে মিহু গ্রুপে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
“মিহুর বাচ্চা আমি যদি তোর রুমে আসি না। তবে খারাপ হয়ে যাবো। তোর ফোন টাই আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলব। ১ মিনিটের মাঝে রিপ্লে দে।”
মিহু এবার রিপ্লে দিল।
“কি হয়েছে?”
“এতক্ষণ লাগে তোর?”
“তাতে আপনার কি?”
“কি করছিলি এতক্ষণ?”
কোনো রিপ্লে আসে না।
“মিহু কি করছিলি?”
“চ্যাট করছিলি নাকি কারো সাথে।”
“হুম।”
“কার সাথে এত কথা বলিস?”
“তাতে আপনার কি?”
“আমি তোর ফোন টা না আইডিটা উড়িয়ে দেই?”
মিহু ঢোক গিলল। এত স্বাদের আইডি গেলে সে বাঁচবে কি করে। নিজে থেকেই লিখল,
“কি চাই আপনার?”
“তুই আমার সাথে কথা বলবি, আমাকে নিয়ে ভাববি।”
“আশ্চর্য তো।”
“রাত হয়েছে ঘুমা।”
ওখান থেকে আর কোনো রিপ্লে এলো না। ইহান লম্বা নিস্বাস ফেলে দিল। সে কি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে কি? মিহু কে নিয়ে যেন একটু বেশিই ভাবছে। মিহু কে এত বছর পর দেখাতে মনে কেমন অজানা একটা অনুভূতি হতে শুরু করেছে তার। ছোটবেলার কথা বড্ড মনে হয়। তিতাস বা অন্য কোরো সাথে মিহু পুতুল নিয়ে খেলা করলে মিহু কে মারত সে। বাবার কাছে নালিশ করত মিহু তার সাথে খেলে না। সে মিহু কে অন্য কারো সাথে কথা বলতে দেখলেও চিমটি কেটে দিত। আর মিহু তখন তার ফোলা গাল দুটি আরো ফুলিয়ে কেঁদে উঠত। ইহান ফিক করে হাসল। হেসে হেসে সে ফোনের দিকে তাকাল। মিহু এখনো এক্টিভ।
“তুই কি যাবি? নাকি ব্যবস্থা নিতে হবে?”
নাক ফুলিয়ে দিয়ে মিহু ডাটা অফ করল।
“আমি আগেই জানতাম ওই লোকটা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। আমি যে কি করব। হায় মাবুদ!”
—-
মিহু ঘুমের মাঝে অনুভব করল কেউ তার পাশেই আছে। একটা হাত যেন তাকে স্পর্শ করছে। গরম আভা সে পাচ্ছে। ঘুমের ঘোরেও মিহু ভয় পেয়ে যাচ্ছে। চোখ মেলতেই ভয় হচ্ছে কেমন। এটা সত্যি নাকি কল্পনা সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু স্পর্শ গুলি সতেজ লাগছে। মিহু এবার মিটমিট করে চোখ মেলল। দরজার কাছে একটা অবয়ব দেখে হুট করে উঠে বসল সে। সেই ছায়া আবার মিলিয়ে গেল। মিহু ভয়ে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। কি ভয়নক কান্ড। এর আগে কখনো এমন হয়নি। মিহু লাইট অন করে পানি খেতে যাওয়ার সময় খেয়াল করল বিছানার ধারে এক জোড়া নূপুর। মিহু ভ্রু কুঁচকে সেগুলি হাতে নিল। দেখতে সুন্দর হলেও কে দিয়ে গেল সেটাই চিন্তার বিষয়। মিহু দরজা ঠেলে বাহিরে উঁকি দিল সবাই তো যার যার রুমে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে ঢুকার সময় খেয়াল করল ইহানের রুমের দরজা খোলা লাইট অন করা। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। মিহুর আর বুঝতে বাকি নেই এটা কার কাজ। দাঁক কিটে সে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। নূপুর গুলির দিকে তাকিয়ে আবার ছুড়ে ফেলল টেবিলের উপর।
“বদমাইশ অসভ্য খারাপ লোক একটা। সারারাত প্রেম করবে একজনের সাথে আর নূপুর দিবে আরেকজন কে। চরিত্রেরই তো ঠিক নেই ওর।”
—-
সকালে ইহান ছাদে গেল। যেতেই থমকে গিয়েছে। বাহারি রঙ এর ওড়না মাথায় দিয়ে মিহু ছাদ বাগানের গাছে পানি দিচ্ছিল। ইহানের সকালটাই মিষ্টি হয়ে গেল। ছাদে এসেছিল জিম করতে। শরীরটা একটু অলস হয়ে যাচ্ছে বলে তাল মিলিয়ে নিতে চাইছিল। কিন্তু মিহুর ওমন স্নিগ্ধ মুখ দেখে তার শরীর এমনিই চাঙ্গা হয়ে গেছে। শিশির ভেজা ঘাসের মতো ফুরফুরে লাগছে। মিহু কে কেন তার এতটা আকর্ষণীয় লাগে বুঝে উঠতে পারে না। মিহুর দিকে তাকালে টিনা মিনা কারো কথাই মাথায় আসে না তার। হৃদয়টা পর্যন্ত হীম হয়ে আসে তার।
মিহু যখন খেয়াল করল ইহান তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন কপাল এক করে চোখ চোখ হয়ে এলো তার।
“ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? মেয়ে দেখেন নি?”
“তোর মতো দেখিনি।”
“কি?”
“কিছু না নিজের কাজ কর।”
“….
মিহুর দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল কেউ তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। অস্বস্তিকর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মিহু চলে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হলে ইহান তাকে ডাক দিল।
“কোথায় যাচ্ছিস?”
ইহানের জবাব না দিয়ে সে চলে যাচ্ছে।
“আরেকটু থাক। তোকে আরেকটু দেখি।”
মিহুর রাগ হয় খুব। রাতের কথা মনে হতেই পানি দেওয়া ফাইভ টা হাতে দিয়ে ইহানের দিকে ধরে। ওমনি বৃষ্টির পানির মতো ইহান ভিজতে শুরু করে দিয়েছে।
মুখে “লম্পট” উচ্চারণ করে মিহু ফাইভ ছুড়ে চলে গেল।
ইহান রাগ করার বদলে মুচকি করে হেসে মুখের পানি ঝাড়ল।
“তোর ফোলা গাল দুটি দেখলে বেশ লাগে মিহু।”
চলবে♥