আলো-২৫,২৬

আলো-২৫,২৬

২৫

আসিফ আর অহনা খেতে বসেছে। আসিফ খাবার মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

অহনা খাবারে হাত দিয়ে আসিফের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
ওর খুব ভয় করছে, আসিফ খেতে পারবে তো?
মনে মনে খুব আফসোস হচ্ছে,
ইস পন্ডিতি করে মাছ গুলো নষ্ট না করলেও পারতাম।

আসিফ চোখ খুলে আরেকটু মাছ মুখে পুরে দিলো।

অহনার তো দম বন্ধ হবার জোগাড়। ও হা করে আসিফের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর হার্টবিট বেড়ে গেছে।

আসিফ অবাক হয়ে বললো মাছটা কি সত্যিই তুমি রান্না করছো?

অহনা ভয়ে ভয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, খেতে খুব বাজে হয়েছে তাই না?

খুব ভালো হয়েছে বিশ্বাস করো। তুমি বসে আছো কেন খাও। খেয়ে দেখো। সত্যিই অসাধারণ রেঁধেছো।
আমার মনে হচ্ছে কাতল মাছ এতো মজার রান্না এর আগে আমি খাইনি। আমাকে আরেক পিস দাও তো।

সত্যিই ভালো হয়েছে তো?
নাকি আমাকে খুশি করার জন্য বলছো।

সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। তোমার মায়ের হাতের রান্না কি খুব ভালো?

হুম।
মা যা রান্না করে তাই খুব মজা হয়।

হুম বুঝেছি। তুমি তোমার মায়ের গুন পেয়েছো।

এই মাছ শুধু তুমি রান্না করবে। আমি নিজে ও এতো ভালো রাঁধতে পারি না।

অহনার মাছ তেমন পছন্দ না। তার ওপরে মাছ ধুয়ে রান্না করছে। তখন থেকেই গা গুলাচ্ছে। ও কালকের মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছে।
কিন্তু তারপরও খুব ভালো লাগছে আসিফ ওর রান্না পছন্দ করেছে, খুব আগ্রহ করে ভাত খাচ্ছে।
দেখেই আনন্দ হচ্ছে ওর। চোখের কোনে একটু একটু আনন্দ অশ্রু ও জমতে শুরু করেছে।

আলো যখন হাসপাতালে এসে পৌছালো, তখন রন্জু অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ফুপি আলোকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। তুই আসছিস।
ভাইয়া আসেনি?

আসছে। তোমার ভাইয়া ও আসছে। আলোর কথা শেষ হবার আগেই মবিনুর রহমান কেবিনে ঢুকলো।
ড্রাইভার এসে ফল মুল আর একটা ফ্লাক্স রেখে গেল।

মবিনুর রহমান উদ্বিগ্ন স্বরে জানতে চাইল কিভাবে কি হয়েছে বলো তো আপা? ডাক্তার কি বললো?

ডাক্তার বললো, বিপদ কেটে গেছে। এখন ভালো আছে। আজকে দুপুরে রিলিজ দিয়ে দিবে।

তাহলে তো খুব ভালো কথা। ভাইজান কোথায়?

ও ছিল সাথেই। রাতে তো খুব ধকল গেছে আমাদের। কেউ ঘুমাতে পারিনি। আমি ভোরে পাঠায় দিলাম বাসায়। বাসায় গিয়ে একটু ঘুমাক। সবাই মিলে অসুস্থ হয়ে তো আর লাভ নেই।

আপা এক কাজ করো। তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
তুমি চলো। আমি তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে অফিস যাই। তুমি ঘন্টা খানেক ঘুমাবা। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে আবার এসো।

না না তা কি করে হয়। দুপুরে তো ছেড়েই দিবে। দুপুরে একবারে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলেই হবে।

আপা তুমি খুব ভালো করেই জানো বাসায় গিয়ে আর রেস্ট নেওয়া হবে না তোমার। তোমার শশুর বাড়ির যতো আত্মীয় স্বজন আছে, সবাই দল বেঁধে চলে আসবে। ব্যাগ গুছিয়ে দুই চার দিন বা এক সপ্তাহ থাকার নিয়ত করেই চলে আসবে।
এরা ঢাকা শহরের চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক সব দেখা শেষ না করে ফিরে যাবে না।

আলোর ফুপি ফিক করে হেসে দিলো, তার ভাইয়ের কথা শুনে।

আলো এতোক্ষণ চুপ করে ভাই বোনের কথা শুনছিল। এবার ও মুখ খুললো। তুমি যাও ফুপি। আমি তো আছি।
দুপুরের আগে চলে এসো তাহলেই হবে।
তোমাকে সত্যিই খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

রন্জু তো কাল থেকে কোন খাবার খাচ্ছে না।
ঘুম থেকে উঠলে তুই পারবি কিছু খাওয়াতে?

পারব ফূপি। আমি স্যুপ রান্না করে আনছি।
স্যুপ খায়াবো। তুমি টেনশন করো না।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে তোর বাবার সাথে গেলাম। তুই সাবধানে থাকিস।

উনি চলে যেতে গিয়ে ও ঘুরে এলেন।
আলো শোন।

বলো ফুপি।

আচ্ছা আজ তো অহনার আসার কথা ছিল।
কিভাবে কি করবো, কিছু তো বুঝছি না।
রন্জু হাসপাতালে ভর্তি সেটাও জানাইনি। জামাই আবার কি মনে করে সাত সকালে ফোন দিলে।
আমি কি ওকে হাসপাতালে আসতে বলবো নাকি বাসায় দুপুরের পর আসতে বলবো?

তোমাকে কিছুই করতে হবে না। ফুপি তুমি অহনার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দাও তো। কাল অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। ওর বর আসবে না, তোমরা সরাসরি দাওয়াত না দিলে। আমি তোমাকে পরে সব খুলে বলবো।

এখন ওসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ভাইয়া কে নিয়ে ভাবো। আমি ওকে সুযোগ মতো ফোন করে বুঝিয়ে বলবোনি।

আচ্ছা ঠিক আছে।
তুই সাবধানে থাকিস। আমি গেলাম।

রন্জু যেহেতু ঘুমাচ্ছে। আলো ব্যাগ থেকে গল্পের বই বের করে পড়া শুরু করলো।

রন্জু স্বপ্ন দেখছে আলো একটা নীল রঙের শাড়ি পরে ওর সাথে রিকশায় ঘুরছে। আকাশের রঙ ও নীল। স্বপ্নের মধ্যেও নীল রঙটা রন্জুর খুব চোখে লাগছে।
অতিরিক্ত জ্বরে সব কড়া রঙ চোখে লাগে।
রন্জু হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেললো।

আলো অভিমান করে বললো, কি ব্যাপার তুমি চোখ ঢাকছো কেন?
নীল রঙের শাড়িতে আমাকে মানাচ্ছে না?

তোমাকে সব রঙে খুব মানায়। কিন্তু আমার খুব চোখে লাগছে রঙটা। এখন থেকে হালকা রঙের শাড়ি পরে আমার সামনে আসবে।

এরপর দেখে যে আলো এক বাটি পেপে নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরে রেখেছে। অহনার শাড়ি এখন হালকা আকাশি রঙের দেখাচ্ছে।

রন্জু বললো, মুখের সামনে থেকে পেঁপের বাটিটা সরাও। পেঁপে দেখে বমি আসছে।

বমি আসলে বমি করবে। তবু ও তোমাকে খেতে হবে।
ফুপি বলছে তুমি কাল থেকে না খাওয়া।

হুম আমি কাল থেকে না খাওয়া। আমি ঠিক করেছি কোন খাবার খাবো না। শুধু বাতস খাবো ।
এখন থেকে বাতাস খেয়ে থাকবো। বাতাস খেয়ে পেট ভরাবো।

আলো বিস্ময় প্রকাশ করে বললো এটা আবার কেমন কথা, বাতাস খেয়ে থাকা যায় নাকি!
ঠিক সেই মুহূর্তে আলোর ফোনটা বেজে উঠলো।
রন্জুর কাছে মনে হচ্ছে মাথায় শত শত ঝি ঝি পোকা একসাথে ডাকছে। ফোনের শব্দটা ওর অসহ্য লাগছে।
ও বিরক্ত প্রকাশ করে মাথা চেপে ধরলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে ওর ঘুম ভেঙে গেল।

তাকিয়ে দেখে আলো হালকা আকাশি কালারের থ্রিপিচ পরে আছে।
কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।

ও মুগ্ধ চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
আলোকে খুব স্নিগ্ধ লাগছে।

আলো ফোন রেখে রন্জুর দিকে তাকিয়ে বললো, কি ঘুম ভেঙেছে?

ওঠো, হাত মুখ ধুয়ে আসো। কিছু খাবে।
তুমি একা পারবে নাকি আমি ধরবো?
জ্বর কি আছে এখনো?
বলেই আলো কপালে আলতো করে হাত ছোঁয়ালো।

আলোর হাতটা এতো ঠান্ডা। রন্জুর খুব আরাম লাগছে, সাথে পুরো শরীরে এক ধরনের শিহরণ।
ও আরামে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আলো হাত সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু রন্জু এখনো চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ওর ইচ্ছে করছে আলোকে বলে আলো তোমার হাতটা অনন্তকাল আমার কপালে ছুঁয়ে রাখো।
হাত সরিয়ে নিও না প্লিজ।

জ্বর তো নেই। হালকা গা গরম ভাব আছে। এসো আমার ঘাড়ে হাত দাও। আমি তোমাকে ওয়াশ রুমে নিয়ে যাই।

আমি পারবো আলো। ব্যাস্ত হয়ো না।

রন্জু ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসা মাত্র আলো এক বাটি স্যুপ মুখের সামনে ধরল।

আলো আলো প্লিজ।
খাবার সরাও সামনে থেকে। খাবার দেখলেই বমি আসে।

কোন কথা চলবে না।
ফুপি বলেছে কাল থেকে তুমি উপোস। হা করো বলছি, হা করো।

আলোর কপট রাগ দেখিয়ে ধমকানো রন্জু বেশ উপভোগ করছে। ওর একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।
কিন্তু মেয়েটাকে কষ্ট দিতেও ইচ্ছে করছে না।
যেভাবে আগ্রহ করে মুখের সামনে চামচ ধরে রেখেছে
তা না খেয়ে উপেক্ষা করার শক্তি রন্জুর নেই।
ও হা করলো।

স্যুপটা বেশ ভালো লাগছে খেতে। কেমন ঝাল, মিষ্টি, টকটক ভাব। জ্বরের মুখে বেশ লাগছে।
ও আগ্রহ করে খেলো। পুরো বাটির স্যুপ শেষ করে জানতে চাইলো কে বানিয়েছে স্যুপ? খেতে কিন্তু বেশ লাগলো।

আমি বানিয়েছি।

বাহ্ তুমি তো বেশ ভালো স্যুপ বানাতে পারো।
কার কাছে শিখেছো?

আমার মন্টু মামার কাছে।
আমি যখন জ্বরে খাওয়া দাওয়া একদম ছেড়ে দিতাম।
তখন মন্টু মামা ভাতের গরম মাড়ে কাঁচা মরিচ কুচি, চিনি, তেঁতুল কাথ দিয়ে একটা স্যুপ করে দিতো।
জ্বরের মুখে আমার খুব ভালো লাগতো খেতে।
আমি পেট ভরে খেতাম। মামা স্যুপের মধ্যে কিছু গরম ভাত ও ছিটিয়ে দিতো।
আমি ভাত খেতে না চাইলে বলতো, দুই এক দানা ভাত না খাইলে শরীরে শক্তি পাবি না মা।
খা খা। পেটটা ভইরা খা।

তাই বলে আবার ভেবো না, তোমাকে ভাতের মাড় খাওয়ালাম। মামা তো খুব গরীব ছিল।
স্যুপের প্যাকেট কেনার সামর্থ্য ছিল না। তাই ভাতের মাড়ের স্যুপ খেতাম আমরা।

তোমাকে বাচ্চা মুরগির স্যুপ করে দিছি।
তুমি আবার ভাতের মাড় মনে করে বমি করে দিও না।
হা হা হা।

আলো হাসছে খুব হাসছে।
ওর চোখ ভর্তি পানি চিকচিক করছে। ও সেই পানি গোপন করার কোন চেষ্টা করলো না।

রন্জু মুগ্ধ হয়ে আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটাকে কি যে অদ্ভুত রহস্যময় লাগছে এই মুহূর্তে।
মুখে হাসি, চোখ ভর্তি পানি।
রন্জুর কাছে মনে হলো, এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য ও ওর এতো বছরের জীবনে আগে কখনো দেখেনি।

আলো-২৬

আলো ছুটে গেল রান্না ঘরে।
ফুপির সাথে আরো দুজন ক্রমাগত চা বানাচ্ছে।
আলো ছোটাছুটি করে মেহমান দের চা দিচ্ছে।
রন্জু আজ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছে। সেই উপলক্ষে বাসা ভর্তি মেহমান। যারা ঢাকা থাকে তারা তো এসেছেই।
সাথে গ্রাম থেকেও আত্মীয় স্বজন চলে আসছে। প্রত্যেকের হাতে যেভাবে ব্যাগ স্যুটকেস,
তাতে মনে হয় না এরা এক সপ্তাহের আগে যাবে।

মুশফিকুর রহমান গার্ডেন ইন থেকে ড্রাইভার পাঠিয়ে প্রচুর নাস্তা আনিয়েছেন। ভাজা পোড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম পিঠাও আছে। সব টেবিলে সাজানো আছে। যার যেটা পছন্দ তুলে নিয়ে খাচ্ছে।

আলোর দায়িত্ব সবাইকে চা পরিবেশন করা। ও ছোটাছুটি করে সবাইকে চা দিচ্ছে। ওর যেন দম ফেলার সময় নেই।

আলো ভেবেছিলো সন্ধ্যায় হয়তো ঢাকার মেহমানরা চলে যাবে। কিন্তু কারো যাওয়ার কোন লক্ষণ নেই।
ও প্লেটে কিছু পিঠা সাজিয়ে ফুপিকে বললো, ফুপি আমি রন্জু ভাইয়াকে নাস্তা দিয়ে আসি।

আচ্ছা ঠিক আছে যা মা। চা টাও নিয়ে যা।

আলো একটা ট্রেতে কিছু পিঠা, ফল আর চা নিয়ে ওপরে গেল।

আসবো রন্জু ভাইয়া?

এসো।

আলো সাইড টেবিলে ট্রে রেখে পিঠার প্লেটটা সামনে ধরলো।

রন্জু পিঠা না নিয়ে আলোর চোখে চোখ রেখে জানতে চাইল কেমন আছো আলো?

আমি তো ভালোই আছি।
কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ছয় মাস ধরে বিছানায় পড়ে আছো। একদিনেই পাট খড়ি হয়ে গেছো।
বেশি বেশি খাওয়া দাওয়া করে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো তো।

তাড়াতাড়ি সুস্থ হলে কি হবে?

আলোর পুরো শরীর শিরশির করছে।
রন্জু কেমন যেন ঘোর লাগা চোখে একভাবে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক ফেলছে না।

আলো এক ধরনের অসস্তি নিয়ে বললো,
কি আবার হবে? তুমি সুস্থ হলে তোমার ভাল।
নাও নাও পিঠা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
চা জুড়িয়ে যাচ্ছে।

আলোর দিকে রন্জু এখনো তাকিয়ে আছে। চোখের পলক না ফেলে বললো, আলো দেখো আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে।
আজকে তুমি নীল রঙের শাড়ি পরবে?
ছাদে পাটি বিছিয়ে আমরা আজ জোৎস্না বিলাস করবো। আমি আজকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই তুমি বেশি সুন্দর, নাকি ঐ চাঁদ।

আলো মুখ ভেংচে ছুটে পালালো।
ইস বয়েই গেছে আমার শাড়ি পরে তোমার সাথে জোৎস্না বিলাস করতে।

আলোর ঠোঁটে তখনো হাসির রেশ লেগে আছে। ও এত দ্রুত সিড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছিলো যে, ও খেয়াল করেনি ওর ফুপা তখন ওপরে উঠছে।
আলোর ছটফটানিতে ফুপার সাথে একটা ছোট্ট ধাক্কা খেলো।

সরি সরি সরি ফুপা।
আমি খেয়াল করিনি।

ইটস ওকে।

আলো নেমে যাচ্ছিল।

মুশফিকুর রহমান পেছন থেকে ডেকে বললেন আচ্ছা আলো মেহমানরা তো সহজে নড়বে বলে মনে হয় না।
রাতে খাওয়ার আয়োজন তো করতে হয়। কি করা যায় বলোতো?
হোটেলে খাবার অর্ডার দিয়ে দিব নাকি?

ফুপা তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।
ফুপি অলরেডি খাবার দাবারের আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। অনেক মাংস ভিজিয়ে রাখতে দেখেছি।
সম্ভবত তেহারি রান্না হবে আজ।

তোর মা তো আসলো না?

মায়ের দাঁত ব্যাথা বাড়ছে। কাল থেকে বিছানায় পড়ে আছে। আমি আসতে নিষেধ করেছি।

হুম।
অহনা কে আসতে বলেছো? ও কি জানে রন্জুর খবর?

না ফোন করতে মনে নেই।

ঠিক আছে ফোন করে ওকে জামাই নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসতে বলো। কয়দিন থেকে যাক।

ঠিক আছে ফুপা।

আলো ছাদে এসে অহনাকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানালো। সাথে এও জানালো আসিফকে নিয়ে চলে আয়। আজ রাতে এখানেই থাক।
ফুপা তোকে আসতে বলছে।

আলোর কথা শুনে অহনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
ওর হেঁচকি উঠে গেছে। হেঁচকির জন্য ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না।
ও শুধু বললো, আসিফ অফিস থেকে আসলে একসাথে আসবো।

আলো নিচে নেমে দেখে ফুপি বড়ো বড়ো ডেকচি ভরে রান্না শুরু করে দিয়েছে। মাংস কষানোর গন্ধে পুরো রুম ভরে গেছে।
আর কপাল থেকে ঘাম টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে।

আলো পেছন থেকে ফুপিকে জড়িয়ে ধরে বললো, ফুপি তোমার নীল রঙের শাড়ি আছে?

আলোর ফুপি অবাক হয়ে বললো, কি করছিস!
ছাড় আমাকে। ঘামে ভেজা শরীর কেউ এভাবে ধরে!

কেউ ধরে না। কিন্তু আমি ধরি।

হুম।
তা এই অসময়ে নীল শাড়ি দিয়ে কি হবে শুনি?

শাড়ি দিয়ে আবার কি হয়? আমি পরবো।

আমার ছেলেটার এই অবস্থা। আর তুই কিনা এখন নীল শাড়ি পরবি!

ফুপি তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার ছেলে এখন ভালো আছে। তার বিপদ কেটে গেছে।
এতোই যদি ছেলের জন্য দরদ, তখন রান্না না করে ছেলের পাশে গিয়ে বসে থাকো। বাসায় আনার পর একবারো ছেলের রুমে উঁকি দিয়ে দেখছো?

হয়েছে হয়েছে।
মাপ চাইছি। আমার খুব ভুল হয়েছে। আমার আলমিরা খুলে দেখ একটা তাঁতের নীল শাড়ি আছে।
আমার ব্লাউজ তো তোর হবে না। অহনার অনেক ব্লাউজ আছে। ওর আলমিরাতে দেখ নীল ব্লাউজ আছে কিনা।

আলো রন্জুকে শাড়ি পরবে না বললেও খুব আগ্রহ করে ফুপির তাঁতের শাড়ি পরলো।
অহনার আলমিরাতে এক কালারের নীল ব্লাউজ না থাকলেও নীলের মধ্যে সাদা বড়ো বড়ো ফুল প্রিন্টের একটা ব্লাউজ পেয়েছে। ব্লাউজ টার সাথে শাড়িটা খুব মানিয়ে গেছে।

অহনা আসিফকে ফোন করে কান্না করে দিলো।
আসিফ অহনার কোন কথাই ভালো করে বুঝলো না।
শুধু এই টুকু বুঝলো কেউ অসুস্থ। অফিস ছুটি হতে তখনো ঘন্টা খানেক দেরি। ও চেয়ারম্যান ম্যামকে বলে বাসায় চলে আসলো।

সবকিছু শুনে বললো, অহনা এক কাজ করো।
আমি তোমাকে দিয়ে চলে আসি। ভেতরে ঢুকবো না।
তুমি থেকে যেও না হয় আজ রাতটা ঐ বাসায়।

অহনা এমনিতেই কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। প্রচন্ড রকম মন খারাপ তার ভাইয়ার জন্য।

সে অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বললো, কি বলছো তুমি! তুমি ভেতরে যাবে না মানে কি?
আমার ভাই অসুস্থ, তাও তুমি তোমার ইগো নিয়ে বসে থাকবা!

আচ্ছা ঠিক আছে ভেতরে যাবো।
এখন কান্না বন্ধ করো তো। চোখ ফুলিয়ে চেহারার অবস্থা করেছো কি?
তুমি রেডি হও। আমি ফ্রেস হয়ে আসি।

আমি রেডি আছি। তুমি ফ্রেস হও।
কিছু খাবে?

না এখন আর কিছু খাবো না।
অফিসে চা নাস্তা খেয়েছি ম্যাডামের সাথে।

অহনার চোখ দুটো আবারো ভিজে উঠলো।
মন খারাপের সাথে যেন আরেকটু খারাপ লাগাও যোগ হলো।

যদিও রিকশা নিয়ে চলে যাওয়া যায়।
কিন্তু অহনা সি এন জি নিতে বললো, তাড়াতাড়ি যাবার জন্য।

আসিফ বললো তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি একটু সামনে এগিয়ে দেখি সি এন জি পাই কিনা।
ও ভালো কথা।
অহনা কিছু তো নিয়ে যাওয়া দরকার তাই না।
কি নেওয়া যায় বলোতো?
প্রথম যাচ্ছি। মিষ্টি নিবো নাকি ফল?

ভাইয়া যেহেতু অসুস্থ ফল নেওয়া উচিত।
কিন্তু তুমি জামাই মানুষ। তুমি বরং মিষ্টি নাও।

কতোটুকু নিব?

অহনা একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো, তোমার যেমন সামর্থ্য তেমন নাও।

ওদের বাসার সামনেই সারি সারি খাবারের দোকান।
আসিফ দুই কেজি সাদা আর কালোজাম মিষ্টি মিলিয়ে নিলো।

আলো শাড়ির সাথে খোঁপায় প্লাষ্টিকের বেলি ফুলের মালা পরেছে। অহনার আলমিরাতে খোঁপার ফুলটা পেয়ে ও আর পরার লোভ সামলাতে পারলো না।
ওর সাদা নীল প্রিন্টের ব্লাউজের সাথে খোঁপার ফুলটা খুব ম্যাচিং হয়েছে। চোখে গাড় করে কাজল, আর ঠোঁটে হালকা লিপ গ্লস।
ওর নিজের কাছেই নিজেকে অপরুপা লাগছে।

খুব ইচ্ছে করছে রন্জু ভাইয়াকে চমকে দিতে। ও জানে রন্জু ভাইয়া এখন ওকে দেখলে চোখ ফেরাতে পারবে না। কিন্তু কেমন যেন একটা লজ্জা আর সংকোচ ওকে আঁকড়ে ধরছে।
ইচ্ছে গুলোকে বস্তা বন্দী করে ও নিচে নেমে আসলো।

অবাক হয়ে দেখল, তখনও খাওয়া পর্ব চলছে।
কারো মুখ থেমে নেই। এক দল খাওয়া দাওয়া করে বিদায় নিয়েছে। আরেক দলের জন্য টেবিলে খাবার সাজানো হচ্ছে।

ঠিক সেই মুহূর্তে অহনা ওর বরকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। অহনাকে দেখে সবাই এগিয়ে আসলো। এতো দিন পর মেয়েকে পেয়ে মা মেয়ের কান্নাকাটি পর্ব ও হলো।

আলো ওদেরকে রন্জুর রুমে নিয়ে গেল।
সেখানে আরেক পর্ব কান্নাকাটি হলো।
আলো বিরক্ত হয়ে বললো, তুই এতো কাঁদুনি হলি কবে থেকে রে? আজ থেকে তোর নতুন নাম কান্দুনি বেগম।

আলোর কথা শুনে আসিফ আর রন্জু একসাথে হেসে উঠলো। রন্জু এতো কিছুর মধ্যে ও বারবার আলোকে দেখছে লুকিয়ে লুকিয়ে।

আলো সেটা খেয়াল করে বললো। চল তোরা তোদের রুমে চল। একটু রেস্ট নে।

আমি খাবার রেডি করে তোদের নিচে নিয়ে যাবো।

ওদেরকে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আলো নিচে এসে দেখে বাড়ি মোটামুটি ফাঁকা। শুধু গ্রাম থেকে অহনার দূর সম্পর্কের এক ফুপু এসেছে আন্ডা বাচ্চা সাথে নিয়ে।
তারা আছে।

আলোকে দেখেই ওর ফুপি তাড়া দিল, টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে। ওদের ডেকে নিয়ে আয়।

ওরা সবাই একসাথে খেতে বসেছে। রন্জু ও নিচে আসছে খেতে।

সবাই এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে।
আসিফের পাতে গোটা মুরগির রোস্ট তুলে দিল ওর শাশুড়ি।

আসিফ খুব অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। ও বুঝতে পারছে নতুন জামাই হিসেবে তাকে একটু বেশি সমাদর করছে তার শাশুড়ি। ও লজ্জাবনত হয়ে বললো, মা মাপ করবেন আমাকে। আমি এতো বড়ো রোস্ট খেতে পারবো না।

হঠাৎ করে পাশ থেকে অহনার ফুপি বলে উঠলো,
অহনা তুই এটা কি বিয়ে করছিস মা?
এই টুকু মিষ্টি নিয়ে শশুর বাড়ি আসছে জামাই।
আবার একটা আস্ত মুরগির রোস্ট খেতে পারে না।
বলি দেশে কি ছেলে ছিল না?
বাপের মানসম্মান ডুবিয়ে শেষ পর্যন্ত এক হাভাতে ঘরের গরীব ছেলেকে বিয়ে করছিস!

বাসায় বোম পড়লেও কেউ হয়তো এতো অবাক হতো না। সবাই খাওয়া বন্ধ করে হতভম্ব হয়ে ফুপির দিকে তাকিয়ে আছে!

আলো খাওয়া বন্ধ করে কঠিন স্বরে বললো….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here