আরেকটি_বার #পর্বসংখ্যা_৫ #Esrat_Ety

#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_৫
#Esrat_Ety

দরজার বাইরে থেকে দরজায় টো/কা দিচ্ছে আজমেরী, তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রুমা।
রাওনাফ গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে রুমা বলে,”ভাবি উঠেছে ভাইয়া?”

রাওনাফ কিছু বলে না। দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। ওয়াশরুমে ঢোকে। আজমেরী আর রুমা ভিতরে ঢোকে।
উর্বী দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখে মুখে সং/কোচ।
আজমেরী বলে,”বেলা ৯টা বেজে গিয়েছে। খিদে পায়নি?”

উর্বী হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়। তার খিদে পেয়েছে।

_মনে হচ্ছে এখনো ফ্রে/শ হওনি। যাও গিয়ে চোখে মুখে পানি দাও।আজ কিন্তু অনুষ্ঠান। বাড়িতে রাজ্যের মানুষ আসবে। গয়নাগুলো পরে থেকো আজ, খালি গলায় থেকো না।

উর্বী মাথা না’ড়ায়। সে পরবে।

রুমা বলে,”তোমাকে বিয়েতে যে গোলাপি জামদানি টা দিয়েছিলাম,ওটা পরবে। ওটায় তোমাকে ভালো মানাবে। দাড়াও আমি বের করছি আলমারি থেকে। ”

উর্বী বলে,”আপা লাগবে না। আমি যখন শাড়ি পাল্টাবো তখন বের করবো।”

_আচ্ছা তাহলে রে/ডি হয়ে ভাইয়াকে নিয়ে নিচে এসো। টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে।
আজমেরী আর রুমা চলে যায়। উর্বী গিয়ে আলমারি থেকে শাড়ি বের করে ।

রাওনাফ টেবিলে খেতে বসেছে। তার সামনা সামনি চেয়ারে বসে আছে নাবিল। সে একমনে খাচ্ছে। রাওনাফ আ’ড় চোখে তাকে দেখছে। আজমেরী রাওনাফের প্লে’টে খাবার তুলে দিতে দিতে বলে,”ভাইয়া তুমি রেডি হয়ে আছো কেনো, কোথাও যাচ্ছো।?”

_হ্যা,একটু চে*ম্বা*রে বসবো। কাল বসিনি। আজ যেতেই হবে।

_তোমাকে মা যেতে নি’ষেধ করেছে,আজ বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান।

_মা কে বলে দিস আমি একজন ডাক্তার, সেটা যেনো সে ভুলে না যায়। তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।

আজমেরী চুপ করে থাকে। নাবিলের খাওয়া শেষ হয়। সে প্লেট সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সে এখন তার পাপার রুমে যাবে। গিয়ে তার একটা দায়িত্ব পালন করবে।

নাবিলকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে দেখে মোহনা ফিসফিস করে বলে,”ও আপা। নাবিল ভাইয়ার রুমে যাচ্ছে না তো?”

আজমেরী বলে,”হয়তো ছাদে যাচ্ছে।”

আরে দেখো ডান পাশে মো’ড় নিলো। ছাদের সিঁড়ি তো বাম পাশে।আজমেরী তাকায়। তাইতো! আবার কি করবে এই ছেলে! সেদিন রাতে মায়ের উপর রা’গ করে এই ছেলে বাড়িতে ভা*ঙ*চু*র করেছে। আজ যদি উর্বীকে কিছু বলে!
আজমেরী ছুটে যায়। মোহনাও পিছু পিছু যায়।

রাওনাফ খাওয়া রেখে তাকিয়ে থাকে। এদের আবার কি হলো।

***
শর্মী ছাদে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কে*টা*রিং-এর লোকজন অনুষ্ঠানের রান্নাবান্নার আয়োজন করছে।
হঠাত পেছন থেকে কেউ তাকে ডাকে,”শর্মী।”

শর্মী পেছনে ফিরে তাকায়। পেছনে দাঁড়িয়ে আছে অন্তরা। তার মুখ হাসি হাসি।

শর্মীর রা*গ লাগে। সে এই মেয়েটাকে সহ্য করতে পারছে না। এই মেয়েটার জন্যও আজ বাড়িতে এতো অশান্তি। এতটুকু শর্মী বুঝতে পেরেছে।

“তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে শর্মী? মি*ড টা*র্ম এ’ক্সাম কবে?গানের রেওয়াজ করছো ঠিকভাবে?”
জিজ্ঞেস করে অন্তরা।

শর্মী নিচু স্বরে বলে,”জি করছি।”
তারপর নাক মুখ কু’চকে চলে যায়।

অন্তরা দাঁড়িয়ে থাকে। সে নিচের দিকে তাকিয়ে বা’বুর্চি দের রান্না বান্না দেখছে। আজ তো তারও রিসিপশনের দিন।

***
উর্বী নিজেকে আয়নায় দেখছে। গোলাপি শাড়িতে তাকে বেশ মানিয়েছে। তার সামনে গয়নার বাক্স। সে বেছে বেছে তার পছন্দমত হালকা গয়না পরছে।
হঠাৎ বাইরে থেকে কেউ দরজায় কড়া না’ড়ে। উর্বী মাথা ঘুরিয়ে তাকায়।

নাবিল ভেতরে ঢোকে। উর্বী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। নাবিল তাকে আরো অবাক করে দিয়ে বলে,”পাপার আলমারির চাবি কোথায়? চাবি দিন।”
উর্বী তর্জনী আ’ঙুল তুলে চাবি দেখায়। টেবিলের ওপর থেকে চাবি নিয়ে নাবিল আলমারি খোলে।

আজমেরী আর মোহনা ঘরে ঢোকে। আজমেরী নাবিলকে জিজ্ঞেস করে,”কি করছো নাবিল! আলমারিতে কি?”

নাবিল কোনো উত্তর দেয় না।
আলমারি থেকে তার মায়ের শাড়ি আর আনু’ষ’ঙ্গিক সবকিছু বের করে আনে। তার মায়ের জিনিসপত্র বের করে আনতে গিয়ে সে উর্বীর সবকিছু ফেলে দেয়। বোঝাই যাচ্ছে এটা ইচ্ছাকৃত।
রাওনাফ ঘরে ঢোকে, হ*ত*ভম্ব হয়ে নাবিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। নাবিল তার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে, “আমার মাম্মার সব কিছু আমি আমার কাছে রাখবো, এগুলো আর তোমার কাছে সুর*ক্ষিত না পাপা। আমি এগুলো নিয়ে যাচ্ছি।”

নাবিল উর্বীর হাতের দিকে তাকায়। তারপর নিচু স্বরে বলে,”হাত থেকে চু’ড়ি খুলে দিন, ওগুলো আমার মাম্মার।”

উর্বী কিছুটা হতবাক হলেও মুচকি হেসে হাত থেকে চুড়ি খুলতে থাকে। সে জানতো না এটা রাওনাফের প্রথম স্ত্রীর। তাকে বলা হয়নি।

আজমেরী নাবিলকে ধ’ম’ক দিয়ে বলে,”এসব কি হচ্ছে নাবিল! এত বেয়া*দব হয়েছো তুমি!।”

নাবিল হাসে। উর্বীর হাত থেকে চুড়ি নিতে নিতে বলে,
“আপনি আমাদের কেউ না!”

নাবিল খুবই শান্ত ভাবে শব্দ গুলো উচ্চারণ করে।
রুমে থাকা সবাই হতবাক হয়ে যায়। আজমেরী নাবিলকে কিছু একটা বলতে এগিয়ে আসে। নাবিল সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তার মায়ের জিনিসপত্র নিয়ে বেড়িয়ে যায়। দরজার কাছে রওশান আরা দাঁড়িয়ে আছে। নাবিল সেদিকে তাকায় না।

মোহনা আর আজমেরী নাবিলের পিছু পিছু যায়।
রাওনাফ উর্বীর দিকে তাকায়। এগিয়ে এসে নরম গলায় বলে,”আই ক্যা’ন এ’ক্স’প্লে’ইন! ও এমন ছেলেই নয়। আ’ম স্যরি। স্যরি ফর এভ’রিথিং!

উর্বী ম্লান হেসে রাওনাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”অতটুকু বাচ্চা ছেলের এমন আচরণের কারণ আপনাকে ব্যখ্যা দিতে হবে? আমি ছোট নই! ওর মন’স্তা’ত্ত্বিক দিকটা আমি বুঝতে পেরেছি! ”

“নাবিল দাঁড়াও। নাবিল ডু হো’য়াট আই সে’ইড!”

নাবিল দাঁড়িয়ে তার পাপার দিকে তাকায়। রাওনাফ তার কাছে এগিয়ে যায়, খুবই নরম গলায় বলে,”অনুচিত কাজ কখনোই করোনি তুমি নাবিল। চলো ওনার কাছে স্যরি বলবে। আমি চাইনা নতুন কোনো ব্যক্তি আমার জান বাচ্চা গুলোর প্রতি নে’গে’টিভ ধারণা পো’ষণ করে থাকুক।”

নাবিল মৃদু হে’সে বলে,”পাপা ডো’ন্ট এ’ক্স’পে’ক্ট দিজ ফ্রম মি!”

_আই উইল! কারন তুমি এমন ছেলেই নও। তুমি আমার নাবিল! যে কাউকে কখনো অ’স’ম্মান করে কথা বলে না।

নাবিল কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
রাওনাফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে একহাতে এ’প্রো’ন,আরেক হাতে স্টে’থো’স্কোপ নিয়ে।

দোতলা থেকে রাওনাফের দিকে তাকিয়ে আছে উর্বী।

***
অন্তরা চুলায় চা বসিয়েছে। ছাদ থেকে আসার পর তার ভিষন মাথা ব্যা*থা করছে। ফু’ট’ন্ত গরম পানিতে সে চায়ের পাতা ঢেলে দেয়।পেছন থেকে সামিউল জরিয়ে ধরে। অন্তরা চ’ম’কে যায়। ঘা’ড় ঘুরিয়ে সামিউলকে দেখতে পেয়ে বলে,”ওহহ তুমি! আমি তো ভ’য় পেয়ে গিয়েছি।”
-ভ’য় পাওয়ার কি হলো। তুমি কি ভেবেছিলে ভু’ত?

-না,সেটা ভাবি নি।

অন্তরা পাতিল থেকে কাপে চা ঢেলে নিতে নিতে বলে,”চা খাবে?”

-হুম। খেতে পারি!

অন্তরা তার কাপের চা অন্য একটি কাপে ভাগ করে নেয়। সামিউল বলে,”তোমার কম পরে যাবে নাতো?”
অন্তরা চায়ের কাপে চু’মুক দিতে দিতে বলে,”না,বাজার এনেছো?”

-হ্যা। দেখো লি’স্ট অনুযায়ী সব ঠিক আছে কিনা। সর’ষের তেল টা আনতে ভুলে গিয়েছি। বিকালে এনে দেবো।

অন্তরা চা শেষ করে বাজারের ব্যাগে হাত দেয়। বেগুন,কাঁচামরিচ, ২ হালি ডিম, মশলা পাতি, তিন কেজি চাল, তেল, চিনি, নুন আর একটা ইলিশ মাছ।
সামিউল বলে “আপাতত দুদিন এই দিয়ে খাই। পরে আবার বাজার এনে দেবো। রান্নার পাতিল-হা’ড়ি, থালা বাসন সব আছে না? ”

-হ্যা। রুমা আপা সব দিয়ে গিয়েছে।

-কিছু বলেছে?
জিজ্ঞেস করে সামিউল।

-হ্যা, দুপুরে তোমার বড়ভাই আমাদের ওদের ওখানে খেতে বলেছে। আর রাতেও।

সামিউল কিছু বলে না, চায়ের কাপে শেষ চু’মু’ক দেয়। অন্তরা ইলিশ মাছ কু’ট’তে বসে পরে, সামিউল পাশে বসে অন্তরাকে দেখতে থাকে।

***
রওশান আরা মেজাজ খারাপ করে বসেছিলো। তার কাছে রাওনাফের ফোন এসেছিলো। সে এই বেলা আসতে পারবে না।তাকে হসপিটালে ই মা র্জে ন্সি ডেকেছে। রওশান আরা ভেবে পাচ্ছেন না এখন তিনি উর্বীর পরিবারকে কি জবাব দেবেন। বোনের শ্বশুরবাড়ি এসে যদি নিজের বোন জামাইকে না দেখতে পায়। রা*গে তার মাথা ধরে গিয়েছে।
হঠাৎ সে দেখে অন্তরা তার ঘরের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। রওশান আরা রা’গে চেচিয়ে ওঠে।
“মেজো বউ! এই নি’র্ল’জ্জ মেয়েটা ঘুরঘুর করছে কেনো।?”

মোহনা ছুটে আসে। অন্তরাকে বলে,”তুমি মায়ের ঘরের সামনে কেনো এসেছো?”
অন্তরা রওশান আরাকে বলে,”মা আমি ঘুর ঘুর করছি না। ছাদে কাপড় মেলে দিয়ে এসেছি।”
রওশান আরা চেঁ’চিয়ে ওঠে,”এই মেয়ে! খবরদার যদি তুমি আমাকে মা ডেকেছো। মুখ ভে*ঙে দেবো। মেজো বৌ, এই অ*স*ভ্য মেয়েটাকে বলে দাও যেনো সং সেজে বাড়িতে আজ ঘুর ঘুর না করে। রাজ্যের মানুষ আজ বাড়িতে। সবাই নানান প্রশ্ন করছে।”

মোহনা চুপ করে থাকে। অন্তরার চোখ ভিজে ওঠে।

দূরে দাড়িয়ে সামিউল দেখে সে দৃ*শ্য। সে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে অন্তরার দিকে।

***
উর্বীদের বাড়ি থেকে উর্বীর মা বাদে সবাই এসেছে। সবাইকে আজমেরী খুবই আদরের সহিত আ*প্যা*য়*ন করছে।
তহুরা আর রেজাউল এসে উর্বীর ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।উর্বী দরজার দিকে তাকায়। কেউ ভিতরে আসছে। দরজা ঠেলে তার ভাই ভাবী ভিতরে ঢোকে। উর্বী শান্ত ভঙ্গিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

বোনকে দেখে রেজাউল কবিরের চোখ ভিজে ওঠে। সে কোমল কন্ঠে বোনকে জিজ্ঞেস করে,”ভালো আছিস বোন?”

-হ্যা,তোমরা ভালো আছো?

-ভালো নেই, তোকে শশুর বাড়িতে পাঠিয়ে আমরা কেউ ভালো নেই।

-কেনো ভালো নেই! উর্বী নামের তোমাদের একটা দু’র্নাম বিদায় হয়েছে। তোমাদের তো ভালো থাকতেই হবে ভাইয়া। জোর করে হলেও ভালো থাকতে হবে।

অ’ত্য’ন্ত ঠান্ডাভাবে জবাব দেয় উর্বী। তার কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক।

রেজাউল কবির হা’হা’কার করে বলে,”আমি তোর গায়ে হা*ত তুলেছি। তুই আমায় ক্ষমা কর বোন।”

উর্বী বলে,”আমি তোমাদের উপর রা*গ করে নেই ভাইয়া। তোমরা ভুল ভাবছো। আমি আসলে কারো উপরই রা’গ করে নেই।”

তহুরা উর্বীর হাত দুটো মুঠো করে ধরে বলে,”তুই কি জানিস তুই চলে আসার পর থেকে তোর ভাইয়া এক রাতও ঘুমায় নি। সারারাত ছ’ট’ফ’ট করতে থাকে। এই মানুষটার উপর অভিমান করে থাকবি?”
উর্বী তার ভাইয়ের দিকে তাকায়। রেজাউল কবির রুমাল দিয়ে নিজের চোখ মোছে।
উর্বীর বুক ভে*ঙে কা*ন্না আসে। সে গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলে,”আমি ম*রে গেলেও তোমার উপর রা*গ করে থাকতে পারবো না ভাইয়া,আমার অ*ভি*শ*প্ত দিনগুলোতে তুমি সবার মতো আমাকে ঘৃ*না করে দূরে সরিয়ে না দিয়ে আমার পাশে থেকেছো। আজ দুটো থা*প্প*ড় দিয়েছো বলে তোমার বোন তোমার উপর রা*গ করে থাকবে? এটা তুমি ভাবলে কি করে ভাইয়া?”

রাওনাফ দুপুর নাগাদ চলে এসেছিলো। অতিথিদের অসম্মান করার লোক সে নয়। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে উর্বীর বাড়ির সবাইকে খাইয়েছে। যাওয়ার আগে বেশ খানিকক্ষণ তাদের সাথে আলাপ করেছে। নিজের গাড়িতে তাদের পৌঁছে দিয়েছে।

***
শাখওয়াত চৌধুরীর ব্লা*ড প্রে*শার টা আজকাল খুব বেরেছে। সামনে ইলে*ক*শন। গো*দের উপর বি’ষ’ফোঁ’ড়া।
তিনি একা এই চাপ নিতে পারছেন না। কারো উপর যে দায়িত্ব দেবে তেমন কেউ নেই। রা*জ*নীতির লাইনে সবাই মুখে মুখে ভাই ভাই করলেও সুযোগ পেলে পেছনে ছু*ড়ি ঢোকাবেই। সে সবসময় সুস্থ থাকার চেষ্টা করছে। এতো বছরের চেয়ার সে কিছুতেই ছা*ড়বে না। আর ম*ন্ত্রীর পদটাও তারই চাই এবার। সে নিয়মিত প্রে*শার চে’ক করিয়ে ওষুধ নিচ্ছে। তবু ক*ন্ট্রো*লে থাকছে না। তার জন্য তিনি তার স্ত্রী শেফালিকে দায়ী মনে করেন। এই মহিলা রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যে ভা*ঙা রে’কর্ড বাজাতে থাকেন তার কানের কাছে।

তিনি কতবার বলেছেন,ওই কু*লা*ঙ্গা*রের নাম যেনো এই বাড়িতে কেউ মুখে না নেয়। তবু শেফালি প্রতিদিন তার কাছে আকুতি মিনুতি করে তার ছেলেকে যেনো শাখওয়াত এ বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।যেটা শাখওয়াতের পক্ষে সম্ভব না। সামনে ই*লে*ক*শন। ওই কু*লা*ঙ্গার কে বাড়িতে এনে তিনি নিজের পায়ে নিজে কু’ড়া’ল মা*র*তে চায় না।

সজীব এসে শাখওয়াতের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। শাখওয়াত বলে,”কি। আবার কি অঘটন ঘটিয়েছে তোর গুরু?”

_কাকা,ভাই কিছু টাকা চেয়েছে।
মিন মিন করে জবাব দেয় সজীব।

শাখওয়াত এটাই আন্দাজ করেছিলো। বলে,”পঁচিশ হাজার টাকা দু’দিনে শেষ? ওকে বলে দিবি এভাবে চলতে থাকলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। এমনিতেও ওর পিছনে উকিল ঠিক করতে আমার লা’খ লা’খ টাকা গিয়েছে। এখানে ওখানে টাকা ছ’ড়াতে হয়েছে।”
সজীব মাথা নেড়ে বলে,”আচ্ছা কাকা।”
শাখওয়াত ড্র*য়ার থেকে একটা বা*ন্ডি*ল বের করে সজীবের হাতে দেয়।
শেফালি ঘরে ঢুকে সজীবকে বলে,”আমার বাবু কেমন আছে? খায় দায় ঠিকমতো।?”
_জি কাকি। আপনি চিন্তা করবেন না।

_আর চিন্তা। রাতে ঘুমাতে পারি না বাবা ছেলেটার চিন্তায়। যদি একটু দেখতে পারতাম, যদি একটু ছুঁ*তে পারতাম।”

সজীব বলে,”আপনি ভিডিও কলে কথা বলবেন কাকি? আমি ফোন দেবো ভাইকে?”
শেফালির চোখ মুখ খুশিতে ঝলমল করে ওঠে,”দাও বাবা,এক্ষুনি দাও।”
শাখাওয়াত হুং*কা*র দিয়ে ওঠে।
_এই খবরদার। ওই ব*দ*মাই*শের সাথে কথা বলতে হলে অন্যখানে যাও। আমি তোমাদের এইসব ন্যা’কা’মি দেখতে চাই না।

সজীব ভ’য় পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। শেফালি তার স্বামীর দিকে আ’হ’ত চোখে তাকিয়ে থাকে।

***
উর্বী বইয়ের তাক থেকে স’ম’রেশ মজুমদারের “সাতকাহন ” বইটা বের করে পড়ছে। বাড়ির সবাই চলে যাওয়ার পর তার মন ভার হয়ে ছিলো। এই জিনিসটা তার মন ভালো করে দিয়েছে। রাওনাফের বইয়ের তাকে রাজ্যের বই। সবই মে’ডি’কেলের বই। তার মাঝখান থেকে সে এটা খুজে পেয়েছে। আরো তিনটা উপন্যাস আছে। হুমায়ুন আহমেদের। এসব কে পড়তো উর্বী বুঝতে পারছে না। রাওনাফের মতো লোক উপন্যাস পড়বে এটা হতেই পারেনা! এই জিনিসটা তার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না একেবারেই।

উর্বী উপুর হয়ে বু’কের নিচে বালিশ দিয়ে বইটা পড়ছে। রাওনাফ ঘরে ঢুকতেই সে তড়িঘড়ি উঠে বসে। তার চোখে মুখে সং’কো’চ।

রাওনাফ উর্বীর পাশে একটা ব’ক্স রেখে দিয়ে বলে, “নতুন ফোন। এটা এখন থেকে ব্যাবহার করতে পারো।”

উর্বী অবাক হয়ে ব’ক্সটা হাতে নেয়।

রাওনাফ ব্লে’জা’র খুলে আলমারিতে রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করে
“কোথায় চাকুরী করতে?”

_দুটো এন’জিওতে করেছি। এক বছর করে।

_কোন সা’ব’জেক্ট নিয়ে পড়াশোনা?

_পলি’টি*ক্যাল সা’ই’ন্স।

_চাকুরী কি করতে চাও?

উর্বী চুপ করে থাকে। রাওনাফ বলে, “যদি চাও তাহলে সাহায্য করতে পারি। আমার চেনাজানা কিছু এ’ন’জিও রয়েছে। পরিচালনা মহিলারা করেন।”

উর্বী তখনও চুপ,রাওনাফ বলতে থাকে,”যেহেতু এ’ক্স’পে’রি’য়েন্স আছে তাই বললাম এন’জিওর কথা। এছাড়াও কিছু কি’ন্ডা’র’গার্টেন স্কুলের বি’জ্ঞা’পন নজরে পরলো আজ। করতে চাইলে বলো। কথা বলবো।”

উর্বী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”আমি আপনাকে জানাবো।”

***
নোটি*ফিকে*শনের টুংটাং আওয়াজে উর্বীর মাথা ব্যা*থা করছে।অনেকদিন পর তার ফেইসবুকের আ’ই’ডি’টা’তে সে ল*গ ইন করেছে। অনেকগুলো নো*টি*ফি*কে*শন এসে জমা হয়েছে। পরিচিতরা অনেক মেসেজ দিয়ে রেখেছে।
উর্বীর ইচ্ছে করে না সেসব দেখতে। সে খানিকক্ষণ নিউজ*ফিড দেখে থেমে যায়। হুট করে রাওনাফের আ’ই’ডি’টা দেখতে পায়।

আ’ই’ডি’র নাম ডক্টর রাও! প্রো*ফাইলে রাওনাফ গলায় একটা স্টে*থো*স্কোপ নিয়ে হাসিখুশি দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছনে কয়েকজন ফ’রেইনার।
উর্বী আগ্রহী ভাব নিয়ে রাওনাফের আ’ই’ডি’টাতে ঢোকে। আ’ই’ডি’র কভারে রাওনাফ তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে একটা হ্র’দের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। উর্বী রাওনাফের টা’ই’ম’লা’ইন ঘুরে অবাক হয়ে যায়। পুরো আ*ই*ডি জুরে শুধু অ্যা*ওয়ার্ড আর অ্যা*ওয়ার্ডের ছবি। হয় রাওনাফ কারো কাছ থেকে অ্যা*ওয়ার্ড নিচ্ছে, নয় সে কাউকে দিচ্ছে। উর্বীর ভিষন হাসি পায়।

হঠাৎ একটা আওয়াজ ভেসে আসে। বাড়িতে কেউ মিউজিক শুনছে।

“এরপর বি’ষ’ণ্ন দিন, বাজে না ম’ন’বীণ
অবসাদে ঘিরে থাকা সে দীর্ঘ দিন,
হাজার কবিতা, বেকার সবই তা
তার কথা কেউ বলে না
সে প্রথম প্রেম আমার নী’লা’ঞ্জনা!”

উর্বী ফোন হাত থেকে ফেলে কান চে’পে ধরে বসে থাকে। মিউজিকের আওয়াজ তী’ব্র থেকে তী’ব্র’তর হচ্ছে। এই গানটা উর্বীর মস্তি’ষ্কে আ’লো’ড়’ন সৃষ্টি করছে। তার কুঁ’চকে যাওয়া অনূভুতিকে আরো একটু পি’ষে দিতে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”বন্ধ করো! এই গান শুনতে ভালো লাগেনা।”

চোখ বেয়ে পানি পরতে শুরু করে তার। মন ম’স্তি’ষ্কে যু’দ্ধ চলছে, র’ক্তপা’ত হচ্ছে চোখে। পাথরের ন্যায় চুপচাপ বসে থাকে সে।

রাওনাফ হসপিটালে যাবে বলে তৈরি হতে ঘরে ঢুকেছিল। উর্বীর দিকে চোখ পরতেই সে দাঁড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জ’ড়তা কাটিয়ে প্রশ্ন করে,”আর ইউ ওকে!”

উর্বী তার দিকে তাকায়। না সে চোখের পানি মোছার চেষ্টা করেছে। না তা আ’ড়াল করার চেষ্টা করছে। রাওনাফ এগিয়ে গিয়ে বলে,”কোনো অসুবিধে?”

উর্বী কিছুক্ষণ সময় নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বলে,”না।”

_কাঁ’দছো যে!

_আজ কি বার?

রাওনাফ অবাক হয়ে বলে,”আজ বুধবার। কেনো?”

_আমি প্রত্যেক বুধবার এভাবে কাঁ’দি। আপনি প্লিজ পাত্তা দেবেন না!

রাওনাফ হতভম্ব হয়ে বলে,”কা’ন্নার সাথে বুধবারের কি সম্পর্ক!”

_আছে। প্রত্যেক বুধবার, আমার ওপর জ্বি’নে’র আ’ছড় হয়। মা বলেছে।

রাওনাফ চ’রম হতভম্ব হয়ে উর্বীর দিকে তাকিয়ে থাকে। উর্বী হেসে ফেলে, তারপর স্বাভাবিক গলায় বলে,”মজা করছিলাম। চোখ জ্বা’লা করছিলো আমার। চোখে এ’লা’র্জি আছে। তাই পানি পরছিলো।

রাওনাফ ঘুরে হাতে এ’প্রো’ন উঠিয়ে নেয়। তারপর বলে,”ডক্টরের কাছে এ্যাপ’য়েন’মেন্ট দিয়ে রাখবো। চোখ খুবই সেন’সে’টিভ জায়গা! চিকিৎসা নেওয়া দরকার!”

***
রওশান মঞ্জিলে আজকে কোনো হৈ চৈ এর আওয়াজ হচ্ছে না।কোথাও কোনো শো’র’গোল নেই। আজমেরী আর রুমা সকালে বাচ্চাদের নিয়ে যে যার শশুরবাড়িতে চলে গিয়েছে। এই সময়ে বাড়িতে মাত্র চারজন মানুষ। রওশান আরা, উর্বী, অন্তরা আর আমিরুন। বাকি সবাই যে যার কাজে গিয়েছে।
রাওনাফ হসপিটালে, রাওনাফের তিন ছেলেমেয়ে স্কুলে আছে।

মোহনাকে নিয়ে শাফিউল একটু বেরিয়েছে আর সামিউল তার ফটোগ্রাফির কাজে।
আমিরুন উর্বীকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। আসলে সে কিছুই করছে না। উর্বী তাকে চুপচাপ দাড় করিয়ে রেখেছে। উর্বী নাকি আজ একটা বিশেষ পদ রাঁ’ধ’তে চায় সবার জন্য।
আমিরুন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার নতুনভাবিকে দেখছে। তার খুব ভালো লাগে এই মেয়েটাকে। উর্বী তার দিকে তাকিয়ে বলে,”আজ খুব গরম তাই না আমিরুন আপা”
-জে নুতনভাবি। আপনার কষ্ট হইলে আমারে দেন। আমি ইলিশ পোলাও রাধতে জানি।

-না আমার কষ্ট হচ্ছে না। তুমি এক কাজ করো,আমাদের চারজনের জন্য লেবুর শরবত বানাও। ঠান্ডা ঠান্ডা।

-আমরা চারজন কই ভাবি? আমরা তো তিনজন বাড়িতে।আপনে,আম্মায় আর আমি।

উর্বী হাসে। বলে,”তোমাদের ছোট ভাইজানের বউও তো আছে বাড়িতে। তার কথা ভুলে যাও কেন?”
আমিরুন জিভ কা’মড়ে দিয়ে বলে,”ইশশশ। এক্কেরে ভুইলা বইসা আছি। আমি অক্ষন বানাইতেছি।”
আমিরুন কাজ করতে করতে বলে,”আইচ্ছা ভাবি আপনার রা’গ লাগে না হের উপর?”

-না।
উত্তর দেয় উর্বী।
আমিরুন বলতে থাকে,”তবে ওই মা’ষ্টার আপা কিন্তু ভালা মানুষ।এক্কেবারে আপনের মতো।”

-আমি ভালো?
উর্বী হাসতে হাসতে জিগ্যেস করে।
-হ ভালা। এইজন্য আপনেরে আল্লাহ ভাইজানের লগে মিলাইয়া দিছে। আমার বড় ভাইজান এই দুনিয়ার সবচেয়ে ভালা মানুষ।

উর্বী আমিরুনের দিকে তাকায়। আমিরুন বলে,”আমি জানি ভাবি,আপনে ভাইজানরে মানতে পারতেছেন না। এই যুগের মাইয়া।তবে দেইখেন আপনে একদিন দ্যাখবেন কেমনে কেমনে জানি এই মানুষটার মা’য়ায় পইরা গেছেন।”
আমিরুন উর্বীর দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে এই কথা টা বলে।

উর্বী প্র’সঙ্গ পালটে বলে,”আমার শাশুড়ি কেনো অন্তরাকে অপছন্দ করেন? এর পেছনে কারণ কি?”

আমিরুন এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে,”অন্তরা আপার আগে বিয়ে হইছিলো ভাবী। অনেক কাহিনী!’

***
নিজের পুরনো গি’টারটায় হাত বুলিয়ে উচ্ছাস ম্লান হাসে। এই বস্তুটা সে ছোয়নি প্রায় ছয় বছর।
গিটারের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিজের হাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর নিচু স্বরে বলে,”এই হাত দিয়ে সব হয়।”

সজীব দূরে দাঁড়িয়ে উচ্ছাসের কর্ম’কাণ্ড দেখছে । হিং’স্র মানুষটা কেমন শান্ত হয়ে গিয়েছে। উর্বীকে নিয়ে ঝামেলা করছে না এটাও স্বস্তির। বারবার রা’গের মাথায় অঘটন ঘটায় এই লোকটা।

উচ্ছাস ফোন ঘেঁ’টে উর্বীর একটা ছবি বের করে দেখে। ছবিটা সম্ভবত কিছুদিন আগের। মুখ হাঁসি হাঁসি উর্বীর।
একটু কি মোটা হয়েছে মেয়েটা! চোখ সরু করে ছবিটা জুম করে দেখে সে। না, আগের মতো রো’গা পট’কাই আছে! তবে চেহারায় মহিলা মহিলা একটা ভাব এসেছে। ছয় বছর তো কম সময় না!

সজীব রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই উচ্ছাস ফোনের স্ক্রিনে উর্বীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে,”গান শুনবে?”

হাতে গিটারটা তুলে নিয়ে উচ্ছাস মাথা নিচু করে গাইতে শুরু করে,

“বলবো তোমায়! আজকে আমি,
একটি ছেলের গল্প প্রেমের,
চুপি চুপি, কার ছবি!
একেছিলো ছিলো যে সে অন্তরে!”

নোট: [আমার গল্পগুলো সম্পূর্ণ কাল্পনিক কাহিনী থেকে নির্মিত। বাস্তবতার সাথে এর মিল খুঁজে মন ম’স্তি’ষ্কে সং’ঘাত সৃষ্টি না করার অনুরোধ]

[ গান দুটো আমার ভিষন পছন্দের!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here