আমি_তোমার_গল্প_হবো,পর্ব:১৬
জাহান আরা
বাহিরে পূর্ণিমার চাঁদ,উথলে পড়া জোছনা। শ্রাবণের আজ নিজেকে মনে হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ।
নিজের হাতে দু কাফ কফি বানিয়ে শ্রাবণ বারান্দায় নিয়ে রাখলো।
শবনম কে নিয়ে শ্রাবণী রুমের দিকে আসছে।
শবনমের বুকের ভিতর দুরুদুরু করে কাঁপছে। ইতোমধ্যে শ্রাবণী শবনমের পরনের ভারী শাড়ি,গহনা চেঞ্জ করে নিতে বলেছে।
চেঞ্জ করার পির শবনমের মনে হচ্ছে আস্ত একটা পাথর নেমে গেছে যেনো ওর শরীর থেকে।
শবনম পরেছে একটি হালকা কাজের জামদানী শাড়ি। কলা পাতা রঙের শাড়িতে শবনম কে মনে হচ্ছে যেনো বনের রাণী।
চুলে মস্ত এক খোঁপা,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।
রুমে ঢুকে শবনম কাউকে দেখতে পেলো না।ঘড়িতে রাত সাড়ে বারোটা।
শবনম বুঝতে পারছে না কি করবে।
শ্রাবণ কোথায় গেছে শবনম বুঝতে পারছে না,সে কি শ্রাবণের জন্য অপেক্ষা করবে না-কি ঘুমিয়ে যাবে?
ভাবতে ভাবতে বারান্দা কে পিছ দিয়ে দাঁড়িয়ে রুমের ডেকোরেশন দেখতে লাগলো শবনম।
কেমন স্বপ্নপূরীর মতো লাগচজে শবনমের কাছে রুমটা।
যেনো এক মায়ার জগতে পা দিয়েছে শবনম। ইশশ,এত সুন্দর কেনো রুমটা?
শবনম মুগ্ধ হয়ে দেখছে,ঠিক তখনই শ্রাবণ পা টিপে টিপে রুমে এলো।তারপর শবনমের কানের কাছে এসে “বাউ” বলে চিৎকার করে উঠলো।
ভয় পেয়ে শবনম তারস্বরে চেঁচাতে লাগলো।
তড়িঘড়ি করে শ্রাবণ শবনমের মুখ হাত দিয়ে চেঁপে ধরলো।
শবনমের যেনো কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। ভীষণ ভয় পেয়েছিলো শবনম।
শবনমের হাত ধরে শ্রাবণ নিয়ে গেলো বারান্দায়। বারান্দায় বড় বড় রক্তের মতো লাল গোলাপ ফুটে আছে।
একপাশে গাঁদা ফুল,কয়েকটা মানি প্লান্টের গাছ ও আছে।
বারান্দায় একটা ছবি লাগানো। একটা চাঁদের ছবি,চাঁদের আলোয় সমুদ্রের কালো জল ঝলমল করছে।বালু তীরে পড়ে আছে কয়েকটি লাল গোলাপ। যেনো তীব্র অবহেলার প্রমাণ স্বরূপ কেউ ফেলে রেখেছে।
কি অপূর্ব একটা দৃশ্য,এই ছবি যে তুলেছে তাকে বেস্ট ফটোগ্রাফারের এওয়ার্ড দেওয়া উচিত। এই ছবির দিকে তাকিয়ে একশো একটা অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া যায়।
শ্রাবণ একটা কফির মগ শবনমের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
শবনম কফির মগ হাতে নিলো।তারপর আলতো একটা চুমুক দিলো কফিতে।
বাহিরে শীত বেশ ঝাঁকিয়ে পড়েছে।
শ্রাবণ একটা চাদর এনে শবনমের গায়ের উপর দিয়ে দিলো।
শব্দের দেখলো শ্রাবণের হাত কাঁপছে শীতে,শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে আকাশীরং একটা পাঞ্জাবি পরে।পায়ে সেন্ডেল নেই।
শবনম আপনমনে হাসলো,অথচ এখন প্রলয় হলে শবনম বলতো,”আপনি ও আমার সাথে চাদরের নিচে আসুন,এক চাদরের নিচে দাঁড়াই দুজনে।”
কিন্তু শ্রাবণ কে বলতে পারছে না।
প্রলয়ের কথা মনে পড়তেই তিক্ততায় মন ভরে গেলো।না আর ভাববে না প্রলয় কে,কেনো ভাববে সে প্রলয় কে?
প্রলয় কেউ না।প্রলয় একজন মিথ্যাবাদী,প্রতারক। দুজনের সাথে প্রতারণা করেছে।শবনমের স্থির বিশ্বাস প্রলয় অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে।আর এজন্যই শবনম আর শ্রাবণীর হাত থেকে বাঁচতে এরকম মিথ্যে কথা বলেছে।
শবনমের দিকে তাকিয়ে শ্রাবণ বললো,”মহান সৌন্দর্যের মুখোমুখি হলে এক ধরণের তীব্র হাহাকার মনের ভেতরে আপনা-আপনি জন্মায়, সুন্দরের উৎস সন্ধানে ব্যাকুলতা জাগে”
শবনম জিজ্ঞেস করলো, “কি বললেন? ”
শ্রাবণ জবাব দিলো না।হুমায়ুন আহমেদ স্যারের কথাটা শ্রাবণের কাছে আজ ধ্রুব সত্য বলে মনে হচ্ছে।
এতো সুন্দর না হলেও তো পারতো মেয়েটা।
শবনম বললো,”এই ছবিটি কার তোলা।”
শ্রাবণ মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,”এই অধমের তোলা ম্যাডাম।”
শবনম মুচকি হেসে বললো,”এতো সুন্দর ছবি আমি আগে দেখি নি।আমার মনে হচ্ছে এই ছবির দিকে তাকালে কারো ১০১ টা অপরাধ অনায়াসে ক্ষমা করে দেওয়া যাবে।”
শ্রাবণ হেসে উঠে বললো,”তাহলে তো ভালো খবর। আমি কোনো ভুল করলে তোমাকে এই ছবির সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিবো।তুমি এদিকে তাকিয়ে আমার ভুল ক্ষমা করে দিবে।”
শবনম হাসলো শ্রাবণের কথা শুনে।
শ্রাবণ বলল,”চল ঘুমাবে।”
শবনম কিছুটা আতঙ্কিত হলো শ্রাবণের কথায়।বিছানায় গেলে শ্রাবণ অন্যকিছু চেয়ে বসবে না তো!
যদি চুমু খেতে আসে!
শবনমের ভাবনা শেষ হবার আগেই শ্রাবণ হুট করে একটা চুমু খেলো শবনমের কলাপে।
ভয়ে,লজ্জায় শবনম লাল হয়ে গেলো।
হেসে উঠে শ্রাবণ বললো,”ভয় পেও না,আর কিছু চাইবো না।আমি শুধু তোমাকে পেতে চেয়েছি।তোমাকে পেয়েছি,এর চেয়ে বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই।”
শবনমের যেনো পা নড়ছে না।লজ্জায় শবনমের ইচ্ছে করলো মাটির সাথে মিশে যেতে।
শবনমের লজ্জা টের পেয়ে শ্রাবণ হঠাৎ করে শবনম কে কোলে তুলে নিলো।
আরো বেশি লজ্জা পেয়ে শবনম চোখ বন্ধ করে ফেললো।
বিছানায় শবনম কে শুইয়ে দিয়ে শ্রাবণ নিজেও শুয়ে পড়লো।
মেয়েটা ভীষণ নার্ভাস শ্রাবণ বুঝতে পারছে। শ্রাবণ ঠিক করলো,শবনম কে সময় দিবে কিছুটা।
শ্রাবণ,শবনম শুয়ে পড়লো।
কেউ ভাবতে ও পারে নি ভোরের আলো ফোটার আগেই কি ভীষণ দুসংবাদ এসে হাজির হবে তাদের জীবনে।
চলবে…..???