আমার_হৃদয়ে_সে,২৭,২৮,২৯

#আমার_হৃদয়ে_সে,২৭,২৮,২৯
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৭

ত্রিশ মিনিটের মাথায় আমার মা-বাবা এসে হাজির হোন।তার মিনিট দশেক পরে আঙ্কেল।আঙ্কেল আসা মাত্রই খালামণি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।এরইমাঝে আঙ্কেল খাবারদাবারের বন্দোবস্ত করে ফেলেন।তা হলো সব খাবারই রেস্টুরেন্ট থেকে আনবেন মনস্থির করেন।এখন রান্না করতে গেলে বাড়তি ঝামেলা।সময়ের প্রয়োজন।দেখা যাবে রান্না শেষ হতে হতে দশ/এগারোটাও বেজে যাবে।মেহমান ওত সময় বসে থাকবে না।তাই সময়,শ্রমের কথা ভেবে আঙ্কেল তাই করেন।পাত্রপক্ষ দের সাথে খানিক্ষন সৌজন্যতা সাক্ষাৎ সেরেই ছুটে যান বাইরে।খালামণি এবং মা ভেতরের হালকা পাতলা কাজে হাত দেন।আর বাবা মেহমানদের সাথে কথা বলতেছেন।পাঁচ মিনিট বাদে খালামণি আমার রুমে ছুটে এলেন।খালামণির পেছন পেছন একজন অপরিচিত মেয়ে এসে দাঁড়ান।অবশ্যি তাকে চিনতে পারলাম না।খালামণি তার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন,

“পারিসা?এ হলো রিতিকা।হৃদয়ের কাজিন।আর এখন রিতিকা তোমাকে সাজাবে।”

আমি মেয়েটিকে তৎক্ষনাৎ সালাম করে উঠলাম।মেয়েটা ফিক করে হেসে দিলো।ট্রলি হাতে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“আমাকে সালাম দিতে হবে না ভাবী।হয়তো আমি তোমার সমবয়সী ই হবো।”

আমি মুচকি হেসে মাথা বললাম,
“সালাম ছোটবড় সবাইকে দেওয়া যায়।
“জ্বী।”

খালামণি দায়সারা ভাবে এবার বলে উঠেন,
“রিতিকা তাহলে সাজাও।গেলাম আমি।”
“জ্বী।”

খালামণি চলে গেলো।রিতিকা আমাকে সাজাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো।ত্রিশ মিনিটের ভেতর মেয়েটি আমাকে ঝটপট রেডি করে ফেললো।সাজিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো।বললো,

“দ্যাখো ত কেমন লাগছে তোমাকে,ভাবী? ”

কাঁপা কাঁপা পাতায় মাথা তুলে আয়নার দিকে তাকাই।গাঁয়ে গাঢ় গোলাপী-খয়েরী মিক্সড ইন্ডিয়ান কাতান শাড়ী,কপালে টিকলি।নাক থেকে কান পর্যন্ত টানা নাকফুল।গলায় সিতা হার।কানে দুল।হাতে চিকন চিকন ডজন করা অর্নামেন্ট চুড়ি।মুখের মেকআপটা ওতটা গর্জিয়া হয়নি।তবে একটা নিঁখুত লুক এসেছে।ঘরোয়া সাঁজটা খারাপ হয়নি।মোটামুটি ভালোই হয়েছে।

“ভাবী?ভাইয়া কিন্তু আজ তোমাকে দেখে একদম ফিদা হয়ে যাবে।জাস্ট সামলে নিও ভাইয়াকে।”

বলে রিতিকা হাসিতে ফেঁটে পড়ে।আমি লজ্জায় নতজানু হয়ে যাই।তা দেখে মেয়েটি আরো হাসে।

“ওহ,ভাবী লজ্জা পেয়ে লাভ নেই।মিথ্যে ত বলিনি।”

“রিতিকা সাজানো শেষ হয়েছে ?”

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কেউ একজন রিতিকাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে।রিতিকা সেদিকে ফিরে,
“হ্যাঁ,মা।এইতো হয়ে গেছে।”
“তাহলে দেরী করছিস কেন?জলদি বউমাকে নিয়ে বাইরে আয়।”

মা তৎক্ষনাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়াই।এগিয়ে উনাকে সালাম করি।উনি মিষ্টি হেসে সালামের জবাব নেন।তারপর আমাকে উনার দিকে টেনে আনেন।থুতনিতে আলতো স্পর্শ এঁটে বলেন,
“মাশাআল্লাহ কি মিষ্টি!হৃদয়ের পছন্দ আছে।”

৪২.
বিয়েটা সম্পূ্র্ণভাবে শেষ হয়। আজ থেকে নতুনভাবে আরেকটা জীবনে আলিঙ্গন করেছি।নতুন আরেকজনের অধিকারিণী হয়েছি।প্রথম বিয়েতে বাবার জোরে বিয়ে করলেও পরে নিজেকে সামলে সেই বাসরে অনেকটা প্রস্তুতি নিয়েই বসি।মনে ছিল অনেক চাপা উত্তেজনা।ছিল জল্পনা-কল্পনা।লজ্জায় সারা মুখ লালচে হয়েছিল।কিন্তু অভি ঢোকার পরমুহূর্তে তা একখন্ড কালো মেঘে ঢেকে গেলো।মেয়েরা কত স্বপ্ন নিয়ে বাসরে বসে।সেই স্বপ্নের বাসরে স্বামী যদি নতুন বউয়ের সাথে কোনোরকম কথা না বলা একজন স্ত্রীর জন্যে এটা কতটা বেদনাদায়ক হতে পারে একমাত্র সেই জানে।আজ তা একদমই নেই।মনে ক্ষিণ আশা নিয়েও বসে নি।
নতুন মানুষটিকে নিয়েও মনে তেমন কৌতূহল নেই।প্রথম জীবনটাই প্বেরঙ্গ হয়েছিল,এই জীবনটা কতটা রঙ্গিন হবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারবো না।মিনিট ত্রিশেক হবে আমার রুমে এসে বসেছি।শুনলাম হৃদয় আজ আমাদের বাসায় ই থাকবে। তার পরিবার এবং আমার পরিবার তাকে এখানে থাকতে আজ সম্মতি দিয়েছে।তাই সে তাদের বাসায় তার পরিবারের সাথে যাচ্ছে না।তার পরিবার-পরিজন মিনিট চল্লিশেক হবে খাওয়াদাওয়া শেষ করে বিদেয় নিয়েছে।এখন রাত এগোরটা বেজে বিশ মিনিট।হঠাৎ আলতো দরজা খোলার মৃদু শব্দ কানে আসে।আমি হালকা নড়ে উঠে আলতো দরজার দিকে তাকাই।হৃদয় রুমে ঢুকেছে।আমি আবারো নড়ে বসে নিজেকে ধাতস্থতা করার চেষ্টা করি।হৃদয় পাঞ্জাবীর উপরের দুটা বোতাম খুলে আমার সামনে বসতে বসতে বলে,

“প্রচন্ড গরম লাগতেছে।এই শীতেও ঘামতেছি।ভাবা যায় পারিসা?”

আমার ঠোঁট মৃদু কম্পন করে উঠলো।তবে কিছু বলতে পারলাম না।বোধহয় এতক্ষণে নিজেকে বুঝতে না লজ্জাটা এবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।হৃদয় হয়তো আমার দিকে এরমাঝে তাকালো।কয়েক সেকেন্ডস তাকিয়ে থেকে বললো,

“স্বাভাবিক থাকো পারিসা।এতটা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।আমি ই তো।তাই না?”

তাও রেসপন্স করলাম না।হৃদয় ছোট্ট একটা শ্বাস ছাড়লো।
“এভাবে মাথা নুইয়ে রাখলে আমি কিন্তু আমার বউকে দেখতে পাবো না।অনেক আশা নিয়ে এসেছি এখানে।”

এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না।ছটাং আরেক প্রসঙ্গ টানলাম,

“হুলস্থূল এভাবে কাজটা করা কি ঠিক হলো?সবকিছুর তো একটা প্রিপারেশন লাগে।”
“বিয়ের কথা বলছো?”
“জ্বী।”

বলে এবার ঘোমটা সরিয়ে হৃদয়ের দিকে তাকালাম।হৃদয় ফ্যালফ্যাল চোখে এবার আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু আমার কথার প্রতিউত্তর করলো না।বললাম,

“কথার তো জবাব দেবেন?এভাবে সবাইকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা উচিত ছিল?আমি কি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি?বিয়েটা পরে করা যেত না?”

হৃদয় তাতেও উত্তর দিল না।আমাকে পিলে চমকে দিয়ে বলে উঠলো,

“অবশেষে বউটাকে আমার দেখলাম।বউটা আমার মাশাআল্লাহ! এতে কিউট আমার বউ।আগে তো কখনো ভালোভাবে খেয়াল করিনি।শুধুতো ভেবে এসেছি মায়াবতী।এখন মায়াবতী থেকেও রূপবতী! ”

সঙ্গে সঙ্গে আমার ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো।এই ছেলেটা এতক্ষণ আমার কথার দিকে মনোযোগ দেয়নি?আমার মুখের দিকে মনোযোগ দিয়েছে?এ তো ভেরী ডেয়ারি?
“আপনি তো দেখছি আস্তা একজন নির্লজ্জ!মেয়ে মানুষের দিকে কেউ এভাবে তাকায়।”

আমার কথা শুনামাত্র হৃদয় এবার ঠোঁট ছড়িয়ে হেসে দেয়।আওয়াজ করে হেসে দেয়।এতদিন মৃদু হাসতো।আজকের হাসিটা তার বিপরীত।হাসিতে ফুঁটে উঠছে সে খুবই খুশি!আমি থমকে যাওয়ার মতন তাকিয়ে থাকলাম।সে হাসি থামিয়ে এবার স্বাভাবিকে ফেরে।এবার শান্ত এবং সুদৃঢ় স্বরে বলে,
“তোমাকে এতটাই ভালোবেসেছি যে তোমার অনুরোধ পাওয়া মাত্রই আর একটা সেকেন্ড তোমাকে দূরে রাখতে পারিনি।অনেক ভালোবাসি বউ।অনেক ভালোবাসি।”

আমি চোখের দৃষ্টি এবার কিছুটা নত করলাম।নতুন করলাম বলতে লজ্জা পেলাম।কি নির্লজ্জের মতন ছেলেটা কথা বলতেছে!ভালোবাসি কথাটা বলতেও বাঁধিতেছে না মুখে একটুও।

“বউ?”
“বলেন।”

হৃদয় আমার ডান হাতটা চেপে ধরলো।মুহূর্তে আমার মেরুদণ্ড বরাবর একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল।বুকের ভেতর ধুকপুক করে উঠলো।সারা শরীর মৃদু কম্পিত হলো।হৃদয় আরেকটু কাছে এগিয়ে এলো।আমি চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললাম।জোরে শ্বাস ছাড়লো সে।ওর তপ্ত শ্বাসেরও আমার হিম সারা মুখটা মুহূর্তে উষ্ণতায় ভরে গেল।ঘোরের ভেতর বললো,
“ভালোবাসো আমাকে?”

আমি কাঁপা কাঁপা চোখের পাতা মেলে তাকালাম তার দিকে।তবে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলাম না।দৃষ্টি নিচু হয়ে এলো।।হৃদয় আমার আরো কাছে আসতে থাকলো এবার।আরো কাছে।সে যখন আমার একদম কাছে,মানে ওরমাঝে যখন আমার এক বিন্দু পরিমাণও দূরত্ব নেই তখন আমার সৎবিৎ ফিরে আসে।আমি ওমনি তাকে এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে সরে যেতে উদ্ভুত হলে সে পেছন থেকে আমাকে ধরে ফেলে।আমি আরো ছোটাছুটি করতে থাকি।ও মুহূর্তে আমার কোমর জড়িয়ে নেয়।আমি স্থির হয়ে যাই। চোখের দিকে তাকাই।ঘোরমাখা গলায় বলি,

“এসব ঠিক না।”

সে কিছু বললো না।ঠোঁটজোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তাকিয়ে থাকার মাঝে গভীর চুম্বন এঁকে দিল।সারা শরীরে আমার বিদ্যুৎ খেলে গেলো।টাল হারিয়ে দুই হাতে খাঁমচে ধরি মানুষটির পান্জাবীর কলার।

চলবে……

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৮

৪৩.
কতটা সহজ হলে একটা আনম্যারিড ছেলে একজন ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে পারে!কিসে কমতি ছিল তার?অর্থবিত্ত,সামাজিকতা,সৌন্দর্য্যে সে প্রথম দিকে।চাইলেও হাজারটা মেয়েকে রিজেক্ট করতে পারতো।এতদসত্ত্বেও কালরাতে একটিবারের জন্যেও আমার অতীত টানলো না।তার যে আগে আরেকটা বিয়ে হয়েছে তা মনে করার চেষ্টা করলো না।কী শান্ত,স্নিগ্ধ মুখে কাছে টেনে নিল।তার পরম স্নেহাশিস আদর বুলিয়ে দিলো।প্রতিটি স্পর্শের আগে ভাবলো না তাকে আরেকটা ছেলে ছুঁয়েছিল কিনা?!আসলে সত্যিই অভি কখনো আমাকে ছুঁয়ে নি।ছুঁবেই বা কীভাবে বিয়ের প্রথম রাত থেকেই ত আমার সাথে তার কথা বলতে মুখে কুলুপ লাগিয়েছিল।যেখানে কথা বলতো না।সেখানে আবার ছুঁয়ে দেখা।আচ্ছা,হৃদয় কি এই বিষয়টা জানে?নাকি ভেবে রেখেছে অভিও হয়তো আমাকে ছুঁয়েছে কখনো।বিয়ে হয়েছে।ছুঁয়ে দেখবে না।এটা তো হয়না!হঠাৎ ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায় আমার।চোখ যায় বিছানার দিকে।হৃদয় তার গাঁয়ের কম্বলটা পা দিয়ে এক সপাটে নেচে ফেলে আবার কাঁত হয়ে শোয়।অনেক বেলা হয়েছে।নটার মতন বাজে।আমি সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি।এরমাঝে গোসল সেরেছি।নাস্তা বানাতে খালামণিকে সাহায্য করেছি।প্রতিটি রুমের জগে পানি ভর্তি করেছি।আর এই লাপাত্তার মতন ছেলেটা এখনো ঘুমচ্ছে।আর ঘুমতে কি করে দিই?ভেবেই ছটাং হৃদয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।গাঁয়ে আলতো ধাক্কা মারলাম।বললাম,

“এই যে উঠুন?বেলা অনেক হয়েছে।”

কোনো উত্তর নেই।আবারো ধাক্কা দিলাম।প্রথম ধাক্কা থেকে এই ধাক্কাটা একটু জোরে ছিল।তাই সে মুহূর্তের জন্যে চোখজোড়া হালকা খুলে ফেলে।খুলেও লাভ বিশেষ হলো না।কাঁত অবস্থা থেকে সোজা হয়ে চোখের পাতা বন্ধ করে ফেলে।আমি আবারো মুখ উঁচিয়ে কিছু বলতে গেলে হঠাৎ চোখজোড়া আঁটকে যায় তার প্রশস্ত বুকের উপর।ধবধবে সাদা বুকে কালো লোমগুলো এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে আছে।গাঁয়ের রং শুভ্র হওয়ার ধরুনে একটা স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে যেন।যে কেউ তাকে এই অবস্থায় তাকে দেখলে দ্বিতীয়বার তার প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে।আমিও পড়েছি।নেশা ধরে যায় চোখে।মাদকের মতন নেশা।হঠাৎ মনের কোণে অবাধ্য ইচ্ছেরা উঁকি দেয়।হাতটা সন্তপর্ণে বাড়িয়ে দিই সেদিকে!আর ওমনি কেউ টুপ করে আমার ডান হাতটা ধরে ফেলে।আমি ভয় পাওয়ার মতন চমকে যাই।হৃদয়ের মুখ পানে তাকাই।সে আমার হাতটা ধরে রেখে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে।আমি ওমনি একটা ঝাঁকি দিয়ে আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিই।সে বোধহয় এরইমাঝে আমার দিকে তাকিয়ে কুটিল হেসে দেয়।শোয়া থেকে বসতে বসতে বলে,
“চোরের মতন কি করছিলে?আমার মতন নিষ্পাপ ছেলেকে একা পেয়ে নির্যাতন করার চেষ্টা করছিলে?”

বলে আবারো কুটিল হেসে দেয়।আমি দিকবিদিকশুন্য হয়ে টগবগ চোখে এদিকওদিক তাকাই।তবে, এভাবে তাকালে তো হবে না।মান রক্ষা করতে ইনার এক হাত উপরে আমাকে দৌড়াতে হবে।শক্ত গলায় বলে উঠি,

“অসভ্যের মতন কি যা তা বলতেছেন?আমিতো আপনাকে শুধু উঠানোর জন্যে ওখানে হাত দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
“মুখ বলে মিথ্যা।চোখ বলে সত্য।”
“ম-মা নে?”
“মানে কিছু না।ফ্রেশ হবো।”

বলে উঠে বসা থেকে এক সপাটে উঠে দাঁড়ায়।আর এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
“আমার প্যান্ট,শার্ট কোথায় যেন রেখেছি?”

আমি নৈঃশব্দে মুখে হাত উঁচিয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে ইঙ্গিত করি।আমি গোসলের করতে যাওয়ার সময় হৃদয় গতকাল রাতে সঙ্গে তার আনা শার্ট-প্যান্ট ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখি দিই।সাথে আমার নতুন একটা তোয়ালেও।যাতে সে গোসল করতে যেতে এগুলো খুঁজতে না হয়।সে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তার শার্টপ্যান্ট হাতে নেয়।তারপর মুখে লম্বা মতন একটা শিষ টেনে বাথরুমে ঢুকে যায়।বাথরুমের দরজা বন্ধ করতে আমি জোরে একটা শ্বাস ছাড়ি,

“কত অসভ্য ছেলে!ঘুমের ভাণ ধরে আমাকে লজ্জা দেবার চেষ্টা চালিয়েছে।আর আমিও না যেচে লজ্জাটা তুলে নিলাম।এখন নিজের চুল নিজেরই টানতে ইচ্ছে হয়।আর চোখ গুলোও আমার বড্ড নির্লজ্জ!”

৪৪.
আজ আমাদের বিয়ের তিনদিন হতে চলছে।সেদিনের পর হৃদয় রাতে খালামণিদের বাসায় আর আসে নি।আসে নি বলতে একেবারে যে আসে নি তা নয়।অবশ্যি দিনের বেলায় আসে।এসে আমার সাথে দেখা করে যায়।আমাদের ফ্যামিলির সবার সাথে দেখা করে যায়।সাক্ষাৎ করে যায়।রাতে আসতে তার নাকি লজ্জা লাগে।শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা মেটাতে রাতে আসবে এই দৃশ্যটা আমাদের ফ্যামিলির এবং তার ফ্যামিলির কাছে নাকি খারাপ দেখাবে তাই ভেবে আসে নি।ওর এহেন দেখে আমার মা,খালামণি বাবা এবং আঙ্কেল তো ওকে ভদ্রতা উপাধি দিয়েই ফেলেছে।অবশ্যি ওকে আমি ভদ্রতা বলবো না।কেননা ও ভদ্রতা নামক লজ্জাটা আমার সামনে আর চেপে রাখে না।আমাকে ফোনে ফেলেই নির্লজ্জের মতন উড়াধুরা ওর মনের সবকথা ছেড়ে দেয়।গতকাল কাল রাত কি হলো?আমি ওর কল রিসিভ করতেই বলে উঠে,

“আমার বিছানার পাশের জায়গাটা খালি পড়ে আছে।তুমি কবে আসবে?শূন্যতা শূন্যতা লাগছে।তোমাকে ছাড়া আর এক মুহূর্তেও থাকতে পারছি না।এই বাবার জন্যে কত অপেক্ষা করবো?দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার!বাবা কি আমার মনের ব্যথা বুঝিতেছে না!আমার প্রেয়সীকে দুইদিন কাছে পাইনি।এটা একজন নতুন বিয়ে করা ছেলের কাছে কেমন লাগে বলো ত?এতটা জুলুম বাবা কীভাবে করতে পারে আমাদের উপর!”

ওর কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠে যায়।হেঁচকির মাঝে ফোনের ওপাশ থেকে ওর আবার চিন্তিত গলার স্বর ভেসে আসে,
“পারিসা,সরি,সরি।তোমাকে আসতে হবে না।প্লিজ, পারিসা শান্ত হও।শান্ত হও, প্লিজ?আরেহ আমিতো মজা করেছি জাস্ট!হেঁচকি কমেছে তোমার?এই পারিসা এই?”

ওর কথা শুনে তখন আমার টানা হেঁচকি তোলা মুখের কোণে ফুঁটে ওঠে হাসির রেখা।দুষ্ট রকমের হাসি।হেঁচকি তো শুধুমাত্র ওর রোমান্টিক কথা বন্ধ করতে তুলি। এটা যে আমার অভিনয়ের হেঁচকি হৃদয় বুঝতে পারেনি।পরশুও এরকম করেছি।হৃদয় তাও ভেবে নিল ওর ওসব কথা শুনে হেঁচকি উঠেছে।

৪৫.
ফাহিমকে একটু পড়াচ্ছি।পাশের রুমে খালামণি এবং আঙ্কেল দুজনে কথা বলছেন।ফাহিমের রুম এবং উনাদের রুম পাশাপাশি।তাই একটু টু শব্দ করলেও ও রুম থেকে এ রুমে সহজে শোনা যায়।কথা বলার বিষয়বস্তু আমাকে নিয়েই।খালামণি বলতে চাচ্ছেন,

“পারিসার এখানে যেহেতু এনগেজমেন্ট সুবাধে বিয়েটা হয়েছে।অনুষ্ঠানটা নাহয় এখানেই করা হোক।তাছাড়া,এখানে অনুষ্ঠান হলে আপা এবং ভাইয়া দ্বিমত করনেন না আমার মনে হয়।”

আঙ্কেল বলছেন,
“নাহ,রাহেলা।মেয়েরা তার মা-বাবার থেকে পরের বাড়িতে বিদেয় নেওয়া টা ভালো আমার দৃষ্টিতে।কারণ এটা নিয়ম।নিয়ম বরখেলাপ করার দরকার নেই।এমনিতেই মেয়েটার এটা দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে।ভাগ্য বলে একটা ব্যাপারস্যাপার আছে।”

“হৃদয়ের বাবা কবে শহরে ফিরছেন?”
“হৃদয়ের থেকে আজ সকালে শুনলাম তিনি নাকি শীঘ্রই ফিরছেন।”
“কবে?”
“এই সপ্তাহের মধ্যেই নাকি।”
“তাহলে ত আর সময় বেশি নেই।অনুষ্ঠানের সব আয়োজন তাড়াতাড়ি শুরু করা উচিত।”
“হ্যাঁ।তুমি পারিসাকে তাদের বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করো।”
“আচ্ছা।”

ফাহিম পড়ছে”,”the little cat is eating milk,the little cat is eating milk,the little cat is eating milk.” ওর মুখে বারবার প্রতিধ্বনিত করা পড়াগুলো আমার মাথায় ভো ভো করছে।শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না।আগের মনোযোগটা এখন আর নেই।ভেতরে উৎপাত করছে কোনো এক অজানা উত্তেজনায়।বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম।।বললাম,

“ফাহিম আপুর মাথা ঘুরছে খুব।আপু তোকে পরে পড়াবো।”

বলে চলে এলাম।ফাহিমের উত্তরের অপেক্ষা করলাম না।রুমে এসে দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করলাম।দরজার কাঠে সোঁজা হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম।ছোট্ট একটা শ্বাস ছাড়লাম।মুখে লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি ফুঁটে উঠলো।
পরক্ষণে এগিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম।মেসেজে লিখলাম,

“মিথ্যেবাদী,বাবা শুনলাম এই সপ্তাহে আসবে।আর আপনি আমাকে আরো দিনেক বিশে লাগবে আসতে এ’কথা বললেন কেন?আসুন আমার সামনে মিথ্যে বলা মুখটা সেলাই করে দেব।”

লিখে হেসে দিলাম।আবারো লজ্জামিশ্রিত হাসি।তারপর ফোনটা আবার বিছানার দিকে ছুঁড়ে ফেলে বেলকনির দিকে দৌড়ে গেলাম।আকাশ পানে তাকালাম।।বিকেলের শেষ সময় এখন।নরম মিষ্টি রোদ।গাছের পাতাফোকরে রোদগুলো ঝকঝক করে নাচছে।তার সাথে তাল মিলিয়ে আমার ভেতরটাও কোনো অজানা এক চাপা উত্তেজনায় নাচছে।অপেক্ষা করছে সেই শুভ দিনের।সেই শুভ মিলনের।সেই শুভ প্রিয় মুখের।সেই শুভ প্রিয় সংসারের।
ভাবনার মাঝে হঠাৎ কেউ দুইহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে।আমি চমকে উঠি।পেছন ফিরি।চারপাশের মিষ্টির রোদের সহিত তাল মিলিয়ে আমার সামনের মানুষটিও মিষ্টি হেসে বলে উঠে,

“বউ,আমার?মিস ইউ!”

বলেই মাথাটা তার এগিয়ে এনে আমার ঠোঁটজোড়ার উপর আলতো একটা চুম্বন এঁকে দেয়।আমি জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিই।নাক ফুলিয়ে চাপা অভিমানটা এবার আমার মাথায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।ধড়াম বলে উঠি,

“মিথ্যাবাদী!”

চলবে….

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৯

বউ,আমার?মিস ইউ!”

বলেই মাথাটা তার এগিয়ে এনে আমার ঠোঁটজোড়ার উপর আলতো একটা চুম্বন এঁকে দেয়।আমি জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিই।নাক ফুলিয়ে চাপা অভিমানটা এবার আমার মাথায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।ধড়াম বলে উঠি,

“মিথ্যাবাদী!”

আমার কথার পিঠে হৃদয় একদণ্ড হেসে ফেলে।হাসি থামিয়ে বলে,
“বউ রাগ করছে কেন?কি করেছে তার স্বামী?”
“ইউ স্টপ!ন্যাঁকা অভিনয় বন্ধ করুন।”

হৃদয় আবারো হেসে ফেলে।আমি নাকের পাটা ফুঁলিয়ে বলে উঠি,
“বেহায়া।”

হৃদয় এবার যেনো হাসিতে আরে লুটোপুটি খাবে এহেন অবস্থা হয়ে যায়।তা দেখে আমার পিত্তি জ্বলে উঠে।কপালে দীর্ঘ ভাঁজ ফেলে চলে আসতে উদ্ভুত হলে হৃদয় পেছন থেকে আমাকে টেনে ধরে।তার বাহুদ্বরে আবদ্ধ করে নিয়ে পেছনের চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে,

“রাগ করে না বউ।বাবা যে এতো তাড়াতাড়ি আসছে আমিও জানতাম না।আজ হঠাৎ ফোনে আমার সদ্য ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলে এই সপ্তাহের ভেতরই নাকি তিনি আসছেন।সেই কথাটা দু’ঘন্টা পর তোমার আঙ্কেলকে কল করে জানাই। তোমাকে সরাসরি সারপ্রাইজ দিবো ভেবে জানাই নি।এই দ্যাখো,এখন আসলাম সেই সারপ্রাইজটা দিতে।আর এসে দেখি বউ যদি আমার তার স্বামীর উপর রাগ করে থাকে তাহলে স্বামীর কাছে কেমন টা লাগে?”

শেষ কথাগুলো শুনে আমার কপালের ভাঁজ মসৃণ হয়ে এলো।সাথে মুচকি হাসিও ফুটে উঠলো।পেছন ফিরি।বলি,
“হয়েছে বুঝলাম।এবার আমাকে ছাড়ুন।সোফায় যেয়ে বসুন।আমি আসছি।”
“পরে যাবো।আজ অনেকদিন পর বউকে কাছে পেয়েছি এতো তাড়াতাড়ি কি ছেড়ে দেওয়ার জন্যে?”

এই লোকটার উদ্দেশ্য সৎ ঠেকছে না।যেকোনো মুহূর্তে অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।দরজাটাও ভিড়ানো।খালামণি বা আঙ্কেল যে কোনো মুহূর্তে এর দরজা ঠেলে যদি রুমে ঢুলে গেলো?ভেবেই দেরী করলাম না।পেছনের কাঁধ দিয়ে হৃদয়কে খুব জোরে ধাক্কা।ওমনি হৃদয়,

“আআআ পড়ে যাচ্ছি…! ”

আমি আতঙ্ক মাখা চোখে পেছনে ফিরি।আচমকা ঠোঁটের উপর হাত চলে আসে।একহাতে রেলিং চেপে ধরে অন্যহাত শূন্যে ছুঁড়ে আছে হৃদয়ের।রেলিং না ধরলে নিচে পড়ে যেত নির্ঘাত।অল্পের জন্যে বেঁচে গেছে।আমি দৌড়ে হৃদয়কে ধরতে নিলে হৃদয় আমাকে সময় না দিয়ে ছিটকে উঠে দাঁড়ায়।বুকে হাত রেখে জোরে বার কয়েক শ্বাস নেয়।তারপর বলে,
“বাব্বাহ এতে জোরে কেউ ধাক্কা মারে,বউ?অল্পের জন্যে বাঁচলাম।”

বলে আবারো হাঁপাতে থাকে।আমার চোখের দৃষ্টি নত হয়ে আসে।দিলাম তো আস্তে। এতো জোরে পড়েছে!ভাবনার মাঝে খালামণি দৌড়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেন।বেলকনির দিকে এগিয়ে বলেন,
“কি হয়েছে পারিসা?এখান থেকে কিচেনে যে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেলাম?”

আমার ঠোঁট নড়ে উঠে।মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে পারিনি।তবে হৃদয় চুপ করে থাকে নি।ছটাং বলে উঠে,

“আপনার মেয়ে তো আমাকে শেষ করে দিত আজ, খালামণি?”
“মানে?”
“নাহ মানে হলো ও রেলিং এর উপর একটা তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়েছিলো। ওর চিৎকারে আমিও ভয় পেয়েছিলাম।”

খালামণি হৃদয়ের কথায় চোখজোড়া ক্রমাগত ছোট্ট করতে থাকেন।এর মানে হৃদয়ের কথা খালামণির বোধগম্য হচ্ছে না।কারণ খালামণি জানেন আমি
তেলাপোকায় ভয় পাইনা। আমি অসংযতে পড়ে গেলাম।খালামণিকে শুধলাতে ফোঁড়ন কেঁটে বলে উঠলাম,
“নাহ মানে খালামণি তেলাপোকাটা রেলিং এর উপর থেকে আমার গাঁয়ের উপর ঝাঁপ দিতে চেয়েছিল।আচমকা কিছুর উপস্থিততে ভয় পেয়ে যাই আর কি।এই আপনিও না ভালোমতো গুছিয়ে বলতে পারেন না।”

শেষ কথাটা হৃদয়কে উদ্দেশ্য করে।হৃদয় চোখ ছোট্ট করে মৃদু হাসে ।তারপর মাথা নাড়ে।খালামণি এবার বুঝতে পারেন।হাই তোলে বলেন,
“দাঁড়িয়ে কত আর কথা বলবি?মেহমানকে খেতে দিতে হবে না?বাবা সোফা যেয়ে বসো।”

৪৬.
আজ আরো দুইদিন কেঁটে গেলো।শুনলাম আজ রাতেই নাকি হৃদয়ের বাবা বাড়িতে ফিরবেন। সন্ধের দিকে হৃদয় আমাকে কল করে সংবাদটা জানায়।সে সংবাদ শুনে আমি ভেতরে ভেতরে খুব পুলকিত।পুলকিত কেন অবশ্যি তার কারণ জানি না।তবে বেশ পুলকিত।রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে রুমে এসে শুলাম।এমন সময় ফোন বেজে। স্ক্রিনে তাকিয়ে আমার জামাইটা।রিসিভ করে বললাম,

“বলো?”

ওপাশ থেকে হৃদয়ের নৈঃশব্দতা।বললাম,
“চুপ কেন?আচ্ছা,এই শুনুন?বাবা কি পৌঁছেছেন?”

বার কয়েক দৃঢ় শ্বাস ছেড়ে ওপাশ থেকে এবার হৃদয়ের খুব স্বর ভেসে আসে।তবে খুব আস্তে,
“হ্যাঁ।”

আমি হেসে দিলাম।বললাম,
“এটাতো ভারী খুশি খবর।তো এই খুশির মুহূ্র্তে আমার স্বামীর লাগে মন খারাপ?”

হৃদয়ের আবারো নিরবতা।বললাম,
“এই বারবার চুপ হয়ে যান কেন?কথার জবাব দেন।এবার কিন্তু চুপ থাকলে এখুনি আপনার বাড়িতে যেয়ে আপনাকে কিস করবো।”
বলে নিজ মনে খিলখিল করে আবারো হেসে উঠলাম।
“পারিসা?বাবা যেন কেমন বিহেভ করছে!”

এবার মুখের হাসিটা ঠোঁটের সাথে চেপে যায়।কপালের উপর উপচে পড়া চুলগুলো বামহাত দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে নিই বলি,
“কেমন বিহেভ করে মানে?”
“পারিসা, আমি বুঝতেছি না বাবা কেন ডিভোর্সের বিষয়টা নিয়ে এতটা বিগড়াচ্ছেন।সামান্য একটা ডিভোর্সের ব্যাপারই তো।তুমিতো অভির সাথে সংসারও করোনি।তারপরও বাবাকে বুঝাতে পারছি না।মরে যেতে ইচ্ছে করতেছে পারিসা আমার।খুব মরে যেতে ইচ্ছে করতেছে।এই সময় বাবার এরকম বিহেভিয়ার সত্যিই আমি আশা করি নি।”

বলে হৃদয় কেমন ছন্নছাড়া পাখির মতন ছটফট আওয়াজ তুলতে থাকলো।আওয়াজগুলো বেদনার আওয়াজ।বললাম,
“আপনি আমাদের বিয়ের আগে বলেন নি আপনার বাবাকে আমার যে আগে একজায়গায় ডিভোর্স হয়েছিল?”
“বাবাকে এসব বলার সময় পাইনি।মাকে বলেছিলাম।ভাবলাম মা বাবাকে বলেছেন হয়তো।এখন শুনলাম মা বাবাকে কিছুই বলেননি।তবে যা হবার তো হয়েই গেছে তাই না?বাবা এখন আগের ইতিহাস ঘেঁটে কি লাভ পারিসা!কি লাভ!”
“উনার অনেক লাভ।কারণ আপনি উনার একমাত্র ছেলে।এক ছেলেকে নিয়ে বাবাদের কত স্বপ্ন থাকে।কত আশা থাকে।আপনি উনার সেই স্বপ্ন এবং আশায় গুড় বালি দিয়েছেন।ভুল করেছেন।খুব ভুল করেছেন।”
“নাহ,পারিসা,নাহ।কোনো ভুল করি নি।আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর আমার ভালোবাসাই সত্যি।আমি আমার সত্যিকারের ভালোবাসা জয়ী করবোই।পৃথিবীর কোনো বাঁধা মানবো না।পারিসা তুমি শুধু আমাকে একটু আশ্বাস…..!”

কেঁটে দিলাম হৃদয়ের কল।শুনলাম না ওর আর কোনো কথা! আঘাতটা এবার ঠিক বুকের মাঝখানে এসে বিঁধলো।ভেতরে সব দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।চোখের পাতা ভার হয়ে এসেছে।গলা জড়িয়ে কান্নাগুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে।মুখ চেপে গলার বেগতিক কান্না চাপাতে উঠে লাগলাম।
“আমি আর পারছি না আল্লাহ!আর নিতে পারছি না!আর না!

সেই রাতে ঘুম আসে নি আর।পুরো রাত জেগে থেকেছিলাম।শেষরাতে চোখবুঁজে এসেছিলো।পরক্ষণে আবার ধপ করে খুলে গেলো।পুরো রাতে হৃদয়ের অসংখ্যবার কল এসেছিলো।মেসেজ এসেছিলো।রিসিভ করি নি!মেসেজ গুলো দেখিনি।ওর কল,মেসেজ দেখবোই বা আর কেন আমি যে আবারো আরো একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি!এই ভুলের এবার মাশুল কিভাবে দেব?কিভাবে?

৪৭.
বেলা দশটা/এগারোটার দিকে দরজায় প্রবল করাঘাতে চোখ থেকে তন্দ্রাঘুম ছুটে যায়।এলোপাতাড়ী চোখে উঠে বসি।মাথাটা ভার খুব।সাথে মাথাব্যথাও ।চারদিকে চোখ বুলাই।সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।মাথার চুলগুলো আলতো টেনে ধরি।আবারো দরজায় করাঘাত।

” পারিসা?পারিসা?পারিসা?”

ওপাশে হৃদয়ের আওয়াজ!হৃদয়ের কন্ঠস্বর শুনতে চোখজোড়া আবারো পানিতে ভরে গেলো।তরতর করে কয়েক ফোঁটা ঝরে পড়লো।বুকে হাত রেখে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।লাভ তেমন হলো না।কান্না যেন আরো বেরিয়ে আসতে চাইছে।
“পারিসা?দরজা খোলো প্লিজ?কিছু হবে না।আমি আছি না?দরজা খোলো?”

হৃদয়ের সাথে তাল মিলিয়ে খালামণিও ডাকতে থাকলেন।কান চেপে ধরলাম। কারো গলার স্বর শুনবো না।কান চেপেও ধরে রাখতে বিরক্ত লাগছে এখন।সবকিছুই বিরক্ত লাগছে।সবকিছু।
“দ্যাখো পারিসা?পাগলামো করো না।দরজাটা খোলো প্লিজ।তোমার সাথে আমার কথা আছে।আগে আমার কথাগুলো শুনো প্লিজ?তারপর নাহয় দরজাটা বন্ধ করে ফেলে আর খুলো না?”

খালামণিও তাল মিলিয়ে তাই বলতে থাকলেন।এবার কিছুটা নিজেকে ধাতস্থ করলাম। বিছানা থেকে নামলাম।টলমল পায়ে পড়ে যেতে নিলে আবার খাটের চৌকাঠ ধরে ফেললাম।তারপর আস্তে আস্তে হেঁটে দরজার দিকে ঘুরলাম।দরজা খুললাম।ওমনি হৃদয় আমাকে জড়িয়ে ধরলো।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কাতর জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো,

” কেন এরকম পাগলামো করো তুমি?তুমি আমার স্ত্রী।আমার সাথে তোমার বন্ধন হয়েছে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে।পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাদের বন্ধনে নাকে দিতে পারবে না।বিশ্বাস রাখো বউ এই হৃদয়ের উপর।এ-ই হৃদয় তোমার স্বামী।তোমার ভবিষ্যতে একই পায় তারার সাথী।”

বলে আমাকে আলতো ছাড়িয়ে নেয় হৃদয়।চোখের কোণের পানি মুছে নেয়।তারপর খালামণির দিকে তাকায়,

“খালামণি?আমাদের বিয়ে তো হয়েছে,না?আর কোনো অনুষ্ঠান লাগবে না।আমি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আজই পারিসাকে আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।আর এক মুহূর্তও দেরী করতে চাচ্ছি না।”

খালামণি চুপ করে থাকলেন।নিরবতা সম্মতির শামিল।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here