#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,১৬,১৭
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১৬
প্রিয়তি কোমরে শাড়ি গুঁজে রান্না করা শুরু করলো।
— কতবড় শাঁকচুন্নি এই মেয়ে আমাকে আমার স্বামীর কাছ থেকে আলাদা করতে চাচ্ছে। আর আদনান ভাইয়াও ছিঃ ছিঃ ভাবতেই ঘৃণা লাগছে এদের মনমানসিকতা এতো নিচ।
(ফ্ল্যাশবেক……
প্রিয়তি রাইসা বেগমের ঘর থেকে শাড়ি
নিয়ে আদনানের ঘরে ঢুকতে যাবে কিন্তু তার আর জিহানের বিষয়ে তাদের কথা বলতে দেখে দরজার বাহিরে প্রিয়তি লুকিয়ে গেল। আদনান আর রোহার বিয়ে হয়নি। তারা বিয়ের নাটক করে সবাইকে ঠকাচ্ছে। তাকে আর জিহানকে আলাদা করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে।)
প্রিয়তি রান্না করছে আর নিজে নিজে কথা বলছে।
— এত কথা কিভাবে বলো তুমি।তোমার মুখ ব্যাথা হয়না।
জিহানের কন্ঠ শুনে প্রিয়তি চুপ হয়ে গেল।
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে জিহান দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তিঃ কই কথা বলছি।
জিহানঃ মিথ্যে কথা বললে কিন্তু ভালো স্রী হওয়া যায়না।
— কেন যে শুধু শুধু ভালো স্রী হওয়ার কথা বললাম এখন সব কথায় এইটা বলে খোঁচা মারে।
জিহানঃ কি ভাবছো এতক্ষণ তো নিজে নিজেই বকবক করেছ এখন আমাকে দেখে আর কথা আসছেনা।
প্রিয়তিঃ না মানে।
— বাহ্ আমার বউটাকে এখন দারুন দেখাচ্ছে। শাড়ি কোমরে গুঁজে, চুল খোঁপা করে রান্না করছে পাক্কা রাঁধুনির মতো লাগছে।(মনে মনে)
প্রিয়তি রান্না করছে আর আড় চোখে জিহানকে দেখছে।
— কি সুন্দর লাগছে আমার জামাইকে।সবুজ রঙের টি-শার্ট আর কালো রঙের টাউজারে কতো সুন্দর লাগছে আমার জামাইকে।ধন্যবাদ আল্লাহ প্রথম থেকে যাকে ভালো লেগেছে তাকে আমার স্বামী হিসেবে দেওয়ার জন্য। প্রিয়তি এইসব কথা মনে মনে ভাবছে আর মুচকি হাসছে।
জিহানঃ আর কতক্ষণ লাগবে রান্না করতে।
প্রিয়তিঃ আর দশমিনিট।
জিহানঃ তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করো আজকে বাহিরে ঘুরাতে নিয়ে যাবো তোমায়। বলেই জিহান ঘরে চলে গেল।
বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে প্রিয়তির মনটা ভালো হয়ে গেল।
প্রিয়তি রান্না শেষ করে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলো।আদনান আর রোহা আসলো কিন্তু জিহান আসেনি।
রোহা আর আদনান খাবার টেবিলে বসে চুপচাপ খাচ্ছে কারো মুখে কোনো কথা নেই। দুজনকে চুপচাপ দেখে প্রিয়তি কিছুটা অবাক হলো। খাবার খেয়ে চলে গেল দুজন।
★
জিহান আসছেনা দেখে প্রিয়তি জিহানের জন্য সব খাবার বেড়ে ট্রে নিয়ে ঘরে গেল।
প্রিয়তিঃ জিহান বাবু আপনার খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নিন।
জিহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। বেলকনি থেকে এসে প্রিয়তির পাশে দাঁড়িয়ে বলে — খাবার টেবিলেই খেতাম নিয়ে আসার কি দরকার ছিল মায়াবিনী।
জিহানের মুখে মায়াবিনী শব্দটা শুনে প্রিয়তি চমকে ওঠলো। কেমন একটা অদ্ভুত শিহরন খেলে গেল শরীরে।
প্রিয়তিঃ মায়াবিনী।
জিহান কথার প্রসঙ্গ পাল্টে — সব রান্না করেছ।
প্রিয়তিঃ আপনি যা যা বলেছেন সব রান্না করেছি।
প্রিয়তি খাবারের ট্রে খাটের ওপর রাখলো।
জিহান সব খাবার দেখে,,,,তাহলে একটা স্টেপে পাশ করলে তুৃমি।
জিহান প্লেটে পোলাওর সাথে মুরগী ভুনা নিয়ে মেখে প্রিয়তির সামনে ধরলো।
জিহানঃ হা করো….
প্রিয়তি অবাক হলো জিহান বাবু তাকে খাবার খাইয়ে দিবে। প্রিয়তি চোখ বড় বড় করে জিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
জিহানঃ কি হলো হা করো।
প্রিয়তিঃ আপনি আমায় খাইয়ে দিবেন।
জিহানঃ কেন খাইয়ে দিলে সমস্যা হবে।
খাইয়ে দেওয়ার কথা শুনে প্রিয়তি লজ্জা পেলো।
জিহান বুঝতে পারছে প্রিয়তি লজ্জা পাচ্ছে। জিহান প্রিয়তির মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো।
জিহানের হাত প্রিয়তির ঠোঁটের স্পর্শে হালকা কেঁপে উঠল।
জিহান প্রিয়তিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর প্রিয়তি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিহানের দিকে।
প্রিয়তিকে খাবার খাইয়ে জিহান নিজেও খেয়ে নিলো।
জিহানঃ দ্বিতীয় স্টেপেও পাশ করেছো।মনে হচ্ছে ভালো স্রী হওয়ার চান্স আছে তোমার।
জিহানের কথায় প্রিয়তি লজ্জা পেয়ে খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে ঘর থেকে দৌঁড়ে চলে গেল।
প্রিয়তিঃ কি লজ্জা কি লজ্জা ওনি আমায় খাইয়ে দিলেন।হায় আল্লাহ এত লজ্জা কই রাখমু।
প্রিয়তি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথাটি বলেছিলো।
তখন রোহাও নামছিলো।কিন্তু প্রিয়তি রোহাকে খেয়াল করেনি।
প্রিয়তির কথা শুনে রোহা কিছুটা রেগে বলে — পলিথিনে তোমার সব লজ্জা ভরে রেখ।
প্রিয়তি রোহার কথা শুনে হাঁটা থামিয়ে রোহার দিকে ফিরে গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বলে — ঠিক আছে ভাবি পলিথিনে ভরে রাখবো নি।
★
প্রিয়তি তৈরি হয়ে হালকা সাজুগুজু করছে আজকে জিহান বাবু ঘুরাতে নিয়ে যাবে ভীষন এক্সাইটেড প্রিয়তি। প্রিয় মানুষটার সাথে ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা।
জিহানঃ হয়েছে সাজা আর কতক্ষণ প্রিয়তি।
প্রিয়তি শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে — হয়ে গেছে চলুন।
জিহান আর প্রিয়তি গাড়িতে ওঠে বসলো।
তখনিই জিহানের মোবাইল বেজে উঠল।
জিহানঃ এই রাদিমের কোনো কাজকর্ম নেই এখনই ফোন দিতে হলো।
জিহান ফোন রিসিভ করে — তোর আর ফোন দেওয়ার সময় হলো না রাদিম।
— আমি রাদিম নই ভাই এই মোবাইলের মালিকের কিছুক্ষণ আগে মারাত্মকভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসুন।
জিহান রাদিমের এক্সিডেন্টের কথা শুনে হাত থেকে মোবাইল পরে গেল।
প্রিয়তি জিহানের হাত থেকে মোবাইল পরে যেতে দেখে ভয় পেয়ে গেল।
প্রিয়তিঃ জিহান বাবু আপনার কি হয়েছে । কে ফোন করলো।
জিহানঃ রাদিম মারাত্মক ভাবে এক্সিডেন হয়েছে আমাকে এক্ষুনি হাসপাতালে যেতে হবে। আই এম সরি প্রিয়তি। তুমি বাড়ির ভিতর চলে যাও।অন্য একদিন ঘুরাতে নিয়ে যাব।
প্রিয়তি গাড়ি থেকে বের হয়ে — ঠিক আছে আপনি যান। সাবধানে যাবেন।
জিহান গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
প্রিয়তি মন খারাপ করে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।
★
এইটা কি করলে তুমি আদনান ভাইয়া ছেলেটাকে এইভাবে এক্সিডেন্ট করিয়ে দিলে ওই সামান্য মেয়েটার জন্য।
আদনানঃ মাথা গরম করিসনা রোহা। প্রিয়তিকে সামান্য বলবি না ও আমার ভালোবাসা। তোর কত বড় সাহস তুই ওকে সামান্য বললি।
রোহাঃ তুমি দিন দিন সাইকোদের মতো আচরন করছো ভাইয়া। তোমাকে দেখলে এখন আমার নিজেরই ভয় লাগে।সামান্য কারনে তুমি রাদিমকে এক্সিডেন্ট করিয়ে দিলে।
আদনান শয়তানি হাসি দিয়ে বলে– আমার থেকে সরে গেলে তুই বিপদে পরবি।তাই চুপচাপ আমি যা বলি তাই কর।
রোহাঃ প্লিজ আদনান ভাইয়া আমাদের কাজ হলো দুজনকে আলাদা করা। অন্যদের ক্ষতি করে আমাদের কি লাভ।
রোহার কথা শুনে আদনান রেগে রোহার গলায় ছুরি ধরে বলে — বললাম না একবার আমি যা বলি চুপচাপ তাই করবি।যখন আমার সাথে হাত মিলিয়েছিলি তখন মনে ছিলনা এই কথা। আমার কথা না শুনলে সোজা ওপরে পাঠিয়ে দিবো। আমি কিছুতেই জিহান আর প্রিয়তিকে একসাথে সহ্য করতে পারবো না।এর জন্য আমাকে যতো নিচে নামতে হয় আমি তাই করবো।
রোহা ভয় পেয়ে গেল আদনানের কথা শুনে।
রোহাঃ আ….আমি স…সব ক…কথা শুনবো। দয়া করে ছু….ছুরি সরিয়ে পেলো।
আদনান ছুরি সরিয়ে পেলে।
— এইতো গুড গার্ল। কথা শুনলেতো আর আমাকে এইসব করতে হয়না।
রোহা ছাড় পেয়ে দৌঁড়ে ছাঁদে চলে গেল সাথে ছাঁদের দরজা বন্ধ করে দিলো।
★
প্রিয়তি কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে খাটে বসে। চোখে পানি টলমল করছে।
— রোহা আপুর গলায় ছুরি ধরলো আদনান ভাইয়া।কতটা নিচে নেমে গেছেন। আর রোহা আপু একটা সংসার ভাঙতে আদনান ভাইয়ার সাথে হাত মিলালো। অনেক হয়েছে আর না এইভাবে নিরীহ মানুষের আর ক্ষতি হতে দেওয়া যাবেনা।ওনি বাড়িতে আসলে ওনাকে সব বলে দিবো আমি।কিন্তু ওনি আমায় বিশ্বাস করবেন কি।
চলবে………..
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]
#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১৭
হাসপাতালে……..
জিহান রাদিমের সাথে দেখা করতে এসে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
রাদিমের হাত, পা, মাথা সব ব্যান্ডেজ করা।
রাদিম চোখ বন্ধ করে আছে। কেবিনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুললো।
চোখ খুলে জিহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। রাদিম কোনো কথা না বলে মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
জিহান রাদিমের পাশে বসে রাদিমের মাথায় টোকা দিয়ে বলে — আমার ওপর রেখে আছিস কেন রাদু।আমার দিকে তাকা বলছি।আমি কি করলাম আমার ওপর রেগে আছিস কেন।
রাদিমঃ না আসলেই পারতি। আমি মরে গেলে আমার মৃতদেহ দাফন করতে আসতি।
রাদিমের কথায় জিহানের মাথা গরম হয়ে গেল। জিহান রাদিমকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বাম গালে থাপ্পড় মেরে বসে।
রাদিম বাম গালে হাত দিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে আছে জিহানের দিকে।
রাদিমঃ ভাই তুই কি আদোও মানুষ। এমন অসুস্থ রুগীকে কেউ মারে।তোর যে থাপ্পড় আ…..আহ্ আমার গালের সব হাড় মনে হয় ভেঙে গেছে।
জিহানঃ থাপ্পড়টা তোর দরকার ছিল।যখন এসেছি তখন থেকেই মেয়েদের মতো ন্যাকা নাটক করছিস।তুই জানিস সারা রাস্তায় তোর টেনশনে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছিল। আর তুই প্রথম থেকে উলটাপালটা বকে যাচ্ছিস।
রাদিমঃ সরি ভাই। তবে আমার মনে হলো কেউ ইচ্ছে করে আমায় গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরেছে।
জিহান রাদিমের কথায় কিছুটা অবাক হলো।
জিহানঃ তোকে মারতে যাবে এমন কেউ আছে আমি বিশ্বাস করিনা।তোর কোনো দুশমন আছে তোর জানা মতে।
রাদিমঃ না এমন কেউ নেই। আমি রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। আমি যত সাইডে যাচ্ছি গাড়ি আমার সাথে সাথে আসছে শেষে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরে দ্রুত গাড়িটা চলে যায়।
জিহানঃ আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না। আমি ব্যাপারটা দেখছি।আসার সময় রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নিবি৷ কোনো ঢং করবিনা তাহলে তোর শরীরের হাড় একটাও আমি রাখবো না।
রাদিমঃ ভাই একটা কথা রাখবি।
জিহানঃ বল।
রাদিমঃ না মানে বলতে চাইছি……
জিহানঃ ভনিতা না করে বলে পেল।
রাদিমঃ তৃধাকে একটু বলবি আমার সাথে দেখা করতে।
জিহানঃ ওর সাথে কেন।
রাদিমঃ এমনি বললাম।ওকে দেখতে মন চাইছে। অনেক দিন দেখি নাই।
জিহান হেসে দিলো রাদিমের কথায়।
জিহানঃ আচ্ছা বলমু। সামথিং সামথিং……
রাদিম মাথা চুলকিয়ে বলে — ওই আর কি।
জিহানঃ তোর ভাবি বাড়িতে একা আমাকে যেতে হবে।আদনান, রোহা আছে ওর বিপদ সাথে সাথে আমি যাই।ঠিকমতো ওষুধ খেয়ে নিবি।
★
প্রিয়তি ঘরে পায়চারী করছে কখন জিহান আসবে জিহানকে আজই সব বলে দিবে।
— কি হলো মেডাম এইভাবে ঘরে হাঁটাহাঁটি করছেন যে…..
প্রিয়তি জিহানের কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে — আপনি এসে গেছেন আপনার সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
জিহান শার্ট খুলতে খুলতে — আগে তুমি করে বলো তারপর তোমার সব গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনবো।
প্রিয়তিঃ পরে বলি।আগে কথাটা শুনুন।
জিহানঃ কোনো কথা শুনতে চাই না। আগে তুমি করে বলো তারপর ভেবে দেখছি।
প্রিয়তি উপায় না পেয়ে — এ…এই যে শু……শুনো তো……তোমার সাথে ক……কথা আছে।
জিহানঃ এইভাবে বললে হবেনা। সুন্দর ভাবে বলো।
প্রিয়তিঃ তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
জিহানঃ এখন ঠিক আছে। এইবার বলো কি বলবে।
প্রিয়তি জিহানকে বলতে যাবে তার আগেই রোহার চিৎকার শুনা গেল।
জিহানঃ নাও শুরু হয়ে ন্যাকামো।তুমি বলো কি বলবে।
প্রিয়তিঃ পরে বলি দেখি আপুর কোনো বিপদ হয়েছে কিনা।
জিহান প্রিয়তির হাত ধরে বসিয়ে দিল।
জিহানঃ যাওয়ার দরকার নাই।
প্রিয়তিঃ প্লিজ চলুন।
জিহান আর মানা করতে পারলো না।
জিহানঃ ঠিক আছে চলো।যদি কোনো ন্যাকামো করে আমি এক মুহূর্ত ওইখানে থাকবো না।
প্রিয়তিঃ আচ্ছা ঠিক আছে এখন চলুন।
★
রোহা ছাঁদে বসে কান্না করছে। আর সামনে মোবাইল ভেঙে পরে আছে।
কিছুক্ষণ আগে আদনান মোবাইলে ভিডিও আর রেকর্ড পাঠায়। ভিডিও আর সব রেকর্ড দেখে রোহার মাথায় যেন দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। রাগে মোবাইল ভেঙে পেলে আর জোরে চিৎকার করে।
— কেন যে এই ছেলের সাথে হাত মিলাতে গেলাম।এখন আমার সব ভিডিও আর রেকর্ড ওর কাছে আছে। আমার প্রতিটি কথা রেকর্ড করে রেখেছে। ও যে এমন একটা সাইকো সেটা আমি সত্যিই জানতাম না।ভেবেছিলাম প্রিয়তিকে শেষ করে দিব।কিন্তু আদনানের জন্য কিছুই হলোনা।এখন ওর কথা না শুনলে সব রেকর্ড, ভিডিও সবাইকে দেখিয়ে দিবে।আমার কি হবে তখন।সবাই আমাকে ঘৃণা করবে। আমি জিহানকে ভালোবাসি কিন্তু এতোটা অন্ধ হওয়া ঠিক হয়নি।এখন নিজেই ফেঁসে গেলাম।না অনেক হয়েছে আদনান কিছু করার আগেই আমায় কিছু করতে হবে।
ছাঁদের দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে রোহা চুপ হয়ে গেল।
|||
— আপু দরজা খুলো।দরজা বন্ধ করে রেখেছো কেন দরজা খুলো।
প্রিয়তিঃ জিহান বাবু প্লিজ তুমি দরজা খুলতে বলো।
জিহানঃ আমি পারবো না।
প্রিয়তিঃ প্লিজ বলো যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় তখন কি করবে। প্লিজ বলো।
জিহানঃ এত করে যখন বলছো ঠিক আছে।
— ভাবি দরজা খুলুন।
জিহান বলার সাথে সাথে রোহা দরজা খুলে দিল।
কিন্তু ভাবি বলাটা পছন্দ হলোনা।
জিহান প্রিয়তির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।
জিহানঃ দেখলে এখন কিছুই হয়নি শুধু শুধু আমায় এইখানে ন্যাকামো দেখাতে নিয়ে আসলে।তোমায় এত অপমান করে তারপরও তুমি ওর কথা ভেবে এখানে চলে আসলে।
প্রিয়তিকে বকে চলে গেল।
রোহাঃ সরি প্রিয়তি আমার জন্য জিহান তোমায় বকা দিলো।
প্রিয়তি অবাক হলো রোহার মুখ থেকে সরি শব্দটা শুনে।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
প্রিয়তি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রোহার দিকে।
রোহাঃ এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন।
প্রিয়তিঃ আপু না না ভাবি আপনি আমায় সরি বললেন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
রোহাঃ বিশ্বাস না করার কি আছে। তোমার সাথে আমার কথা আছে। তুমি যদি একটু সময় দিতে তাহলে বলতাম।
প্রিয়তিঃ হ্যাঁ ভাবি বলেন।
রোহাঃ কতক্ষণ ধরে ভাবি,আপনি ডেকে যাচ্ছো।আপু বলে ডাকবে। এই আপু ডাকটা ভালো লাগে।
প্রিয়তির অবস্থা শোচনীয়।
— এই মেয়েরে কি ভূতে ধরছে। হঠাৎ এত চেঞ্জ আবার কোনো ষড়যন্ত্র নয়তো।
রোহাঃ কি ভাবছো।চলো আমার সাথে আজকে তোমায় সব বলে দিব।
প্রিয়তিঃ কি বলবে।
রোহাঃ আগে আসো আমার সাথে।
প্রিয়তিঃ কই নিয়ে যাবে আমায়।মেরে পেলবে নাতো।
রোহাঃ পাগল মেয়ে মারতে যাব কেন।কিছু সত্যি বলবো।
|||
প্রিয়তিকে রোহা কফিশপে নিয়ে গেল।
তারপর যা করেছে ও আর আদনান মিলে সব কিছু বলে দিলো।আর রেকর্ড, ভিডিও ওইসব সম্পর্কেও বলে দিল।
প্রিয়তিঃ আমি সব কিছুই জানি আপু। কিন্তু রেকর্ড আর ভিডিও সম্পর্কে জানিনা।
রোহা অবাক হয়ে বলে — কিভাবে….
প্রিয়তি সব বললো কিভাবে জেনেছে।
প্রিয়তির কথা শুনে রোহা কান্না করা শুরু করলো।
রোহাঃ সত্যি প্রিয়তি তুমি তো ইচ্ছে করলে সব বলে দিতে পারতে কিন্তু কাউকে কিছু বলোনি।এখন বুঝতে পারছি জিহান কেন তোমায় এত ভালোবাসে। কারন তুমি এমন একটা মেয়ে সবাই তোমাকে ভালোবাসতে চাইবে।আমায় মাপ করে দেও প্রিয়তি। আমি অনেক ভুল করেছি নিজেকে শুধরে ফেলবো। দয়া করে একবার সুযোগ দেও।
তখন পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো — তাই নাকি সে সুযোগ তোকে দিলেই তো নিজেকে শুধরে নিবি।
কথাটি শুনে দুজনে পিছনে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল।
চলবে………
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]