আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,১৪,১৫

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,১৪,১৫
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১৪

কিচেনে দাঁড়িয়ে রাইসা বেগম প্রিয়তির জন্য প্লেটে খাবার নিচ্ছে। প্রিয়তির হাড় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে।
— ছেলেটার ফোন বন্ধ সেই দুপুরে বাড়ি এসে আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল এখনো কোনো খবর নেই।
রাইসা বেগম কিচেন থেকে খাবার নিয়ে প্রিয়তির ঘরের উদ্দেশ্যে যাবেন তখন কলিং বেল বেজে উঠল।
রাইসা বেগম খাবার হাতে নিয়েই দরজা খুলে দিলো।

রোহা লাল শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। রোহা রাইসা বেগমের পা ধরে সালাম করতে যাবে রাইসা বেগম দু পা পিছনে চলে গেলেন।
রাইসা বেগমঃ এইসব কি করছো রোহা। আর তুমি এই বাড়িতে কেন এসেছো।
রোহাঃ এইভাবে কেন বলছো আম্মু। এখন থেকে তো আমায় এই বাড়িতেই থাকতেই হবে।
রাইসা বেগম অবাক হলেন রোহার কথায়।
রাইসা বেগমঃ এই বাড়িতে থাকবে মানে।আর হঠাৎ মা বলে ডাকছো।
রোহাঃ এখন থেকে আপনি আমার শাশুড়ী। তাহলে আমি আপনাকে আম্মুই ডাকবো।
রাইসা বেগমঃ শাশুড়ী মানে……। ভনিতা না করে সোজাসাপটা বলো কেন এসেছ এ বাড়িতে।
রোহার পিছন থেকে আদনান এসে রাইসা বেগমের সামনে দাঁড়ালো।
আদনানঃ বাড়ির বউকে কেউ এইভাবে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখে মামনি।আমরা দুজন আজকে বিয়ে করেছি।
আদনানের কথা শুনে রাইসা বেগমের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিচে পরে গেল।
রাইসা বেগম ভেবেছিল রোহা মজা করে এইসব বলছে।কিন্তু আদনানের কথা শুনে মনে হচ্ছে সব সত্যি।
আদনানঃ মামনি কষ্ট হওয়ার মতো আমি কিছু করিনি। তোমার খুশি হওয়া উচিত ছেলে বিয়ে করে বউ এনেছে। চলো রোহা আমরা ঘরে যাই।
রাইসা বেগমকে পাশ কাটিয়ে আদনান রোহাকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
রাইসা বেগম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

জিহান বাড়িতে এসে রাইসা বেগমকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,,,
— মামনি তুমি এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন শরীর খারাপ লাগছে ডাক্তার ডাকবো।
রাইসা বেগম কোনো কথা না বলে আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছেন।খুব কষ্ট পেয়েছেন আদনানের কাজে। এমন একটা অসভ্য মেয়েকে আদনান কি করে বিয়ে করলো।
রাইসা বেগম চলচল চোখ নিয়ে জিহানের দিকে তাকালো।
— বাবা তুই কই ছিলি। কতবার ফোন দিয়েছি তোর ফোন বন্ধ ছিলো কেন।
জিহানঃ মামনি একটা জরুরি কাজে বেরিয়ে ছিলাম।ফোনে চার্জ ছিলো না।
রাইসা বেগমঃ আমার শরীরটা খারাপ লাগছে আমি ঘরে যাই। প্রিয়তি অসুস্থ তুই ওকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিস।
জিহান প্রিয়তির অসুস্থতার কথা শুনে কলিজা কেঁপে উঠল। জিহান অস্ফুটস্বরে বলে,,,, ঠিক আছে মামনি।

জিহান কিচেন থেকে খাবার প্লেটে নিয়ে প্রিয়তির কাছে গেল।প্রিয়তি এই গরমে কম্বলের নিচে শীতে কাঁপছে।
জিহান খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে প্রিয়তির পাশে বসে কপালে হাত দিতেই আঁতকে উঠল।
জিহানঃ এই মেয়ে এত জ্বর বাঁধালো কিভাবে।
জিহান দেখে প্রিয়তির ঠোঁটের কিছু অংশ কেটে গেছে। জিহানের দুপুরের কথা মনে পরে গেল। নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগছে।এইভাবে তার মায়াবিনীকে শাস্তি না দিলেও পারতো।অবশ্য তার জন্য জিহান নিজেকে নিজে শাস্তি দিয়েছে। জিহান প্রিয়তিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ঠোঁটে আস্তে আস্তে ওষুধ লাগিয়ে দিল।ওষুধ লাগানোর সময় প্রিয়তি কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো। ওষুধ লাগানো শেষ করে জিহান প্রিয়তিকে ডাকছে কিন্তু প্রিয়তি কোনো সাড়াশব্দ করছেনা।প্রিয়তির সাড়া না পেয়ে জিহান প্রিয়তির কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে প্রিয়তির নাম ধরে ডাকছে।কানের ওপর গরম কিছুর স্পর্শ পেতেই প্রিয়তি ধীরে ধীরে চোখ খুললো। চোখ খুলতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
জিহান প্রিয়তির চোখ থেকে চোখ সরিয়ে উঠে যেতেই প্রিয়তি জিহানের হাত ধরে পেলে।
জিহানঃ হাত ছাড়ো মায়াবিনী খাবার খেতে হবে।

প্রিয়তি বাচ্চাদের মতো করে — আপনি এমন কেন জিহান বাবু।সবসময় আমায় বকাবকি করেন একটুও ভালোবাসেন না।আপনি অনেক পঁচা।
অনেক বেশি জ্বর হওয়ার কারনে প্রিয়তি জিহানকে উল্টাপাল্টা বকে যাচ্ছে।
জিহান বুঝতে পেরেছে প্রিয়তি এখন সজ্ঞানে নেই। সজ্ঞানে থাকলে জীবনেও প্রিয়তি ভালোবাসার কথা বলতো না।
জিহানঃ হাত ছাড়ো প্রিয়তি তুমি অসুস্থ খাবার খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।
প্রিয়তিঃ না না কোথাও যাবেন না আপনি।আমাকে আপনি অনেক কষ্ট দেন।আর রোহা আপুকে কতো ভালোবাসেন।আমাকে একটু ভালোবাসলে কি হয়।
জিহানঃ আচ্ছা তোমাকে অনেক ভালোবাসবো আগে খাবার খেতে হবে।
প্রিয়তি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে — আমি খাবার খেলে আমায় ভালোবাসবেন সত্যি তো।
জিহান প্রিয়তিকে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কথা বলতে দেখে হেসে দিলো।
জিহান প্রিয়তিকে খাবার খাওয়াচ্ছে আর প্রিয়তি লক্ষি মেয়ের মতো চুপচাপ খাবার খেয়ে নিচ্ছে।
প্রিয়তিকে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলো জিহান।

জিহানঃ এইবার ঘুমিয়ে পরো লক্ষি মেয়েদের মতো।জিহান চলে যেতে নিবে তার আগেই প্রিয়তি জিহানের হাত ধরে একটানে নিজের ওপর ফেললো।
জিহানঃ জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। মাথায় জলপট্টি দিতে হবে। কি করছো প্রিয়তি ছাড়ো।
প্রিয়তিঃ আপনি না বললেন আমায় ভালোবাসবেন খাবার খেলে।এখন পালাচ্ছন কেন।আপনি ভালো না বাসলে আমি অন্য……
প্রিয়তিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে জিহান প্রিয়তির ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।
প্রিয়তিও জিহানের সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর জিহান ঠোঁট ছেড়ে দিলো। দুজন দুজনের দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তি ঠোঁট উল্টিয়ে — ছেড়ে দিলেন কেন।
জিহানঃ তুমি অসুস্থ প্রিয়তি আজকে এইটুকু নেও। সুস্থ হয়ে গেলে অনেক ভালোবাসবো তোমায়।
প্রিয়তি কেঁদে দিলো জিহানের কথায়।
জিহান বেকুব হয়ে গেল প্রিয়তির চোখে কান্না দেখে।
— আশ্চর্য কি এমন বললাম।
প্রিয়তি জিহানকে বুকে কামড় বসিয়ে দিলো।
জিহান অস্ফুটস্বরে — আহ্ প্রিয়তি মাইর খাবে রাক্ষসীদের মতো কামড়াকামড়ি করছো কেন।
প্রিয়তিঃ আমাকে ভালো না বাসলে কামড়ে দিবো আরো।

জিহান চোখ বন্ধ করে আবার প্রিয়তির ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো কিন্তু প্রিয়তি কোনো রেসপন্স না পেয়ে চোখ খুললো। দেখে প্রিয়তি ঘুমিয়ে গেছে।জিহান হেসে প্রিয়তির ওপর থেকে ওঠে জলপট্টি এনে প্রিয়তির কপালে রাখলো।
— প্রিয়তির সাথে সামান্য কারনে খারাপ ব্যাবহার করেছে তার জন্য খুব খারাপ লাগছে। আদনান তার আপন ভাই নয় আর রাইসা বেগম তার নিজের মা নয়। কথাটি ভাবতেই জিহানের চোখে জল চলে আসে।
— জিহান বাবু আমাকে একটু জড়িয়ে ধরে ঘুমাবেন প্লিজ।
প্রিয়তির ডাক শুনে জিহান ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। প্রিয়তি এমনভাবে বললো জিহান আর না করতে পারলো না। প্রিয়তি যে নিজের মধ্যে নেই জিহান সেটা ভালো করেই জানে।
জিহান প্রিয়তিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
প্রিয়তিঃ আপনাকে ভালোবাসি জিহান বাবু।
প্রিয়তির মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দ শুনে জিহান নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
জিহানঃ কি বললে মায়াবিনী।
প্রিয়তিঃ ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি আপনাকে। “”আমার একাকীত্বের শহরে শুরু আপনার বসবাস জিহান বাবু””।
কিন্তু আপনি তো রোহা আপুকে ভালোবাসেন।
জিহানঃ বার বার রোহার নাম কেন বলছো মায়াবিনী। রোহা তোমায় কিছু বলেছে।
প্রিয়তি অভিমানী কন্ঠে বলে — হ্যাঁ বলেছে।রোহা আপুই তো বললো আপনি আর রোহা আপু দুজন দুজনকে ভালোবাসেন।
জিহানঃ আর কি কি বলেছে।
প্রিয়তিঃ আরো অনেক বাজে কথা শুনিয়েছে আমায়।
জিহানঃ কি বাজে কথা বলেছে আমায় বলো।
প্রিয়তি গরগর করে সব বলে দিলো।
প্রিয়তির সব কথা শুনে রাগে জিহানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।
— এই অসভ্য মেয়েকে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে।প্রিয়তিকে ভুল বুঝিয়েছে।ওর জন্য আমার মায়াবিনীকে আমি কষ্ট দিয়েছি।এইসব মেয়ের জন্য পরিবারে অশান্তি লেগে থাকে।
প্রিয়তি আরো কিছুক্ষণ বকবক করে জিহানকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো। আর জিহান প্রিয়তির ঘুমন্ত চেহারা দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পরেছ নিজেও জানেনা।

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই প্রিয়তির ঘুম ভেঙে যায়।চোখ খুলেই মাথা গরম হয়ে গেল।
— আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে প্রতিদিন জড়িয়ে ধরে ঘুমায় লুচু লোক। প্রিয়তি জিহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।
— কি শক্ত পোক্ত লোক রে বাবা নাড়ছেই না।এখন কি করি।
জিহান ঘুমের মধ্যেই প্রিয়তিকে ছেড়ে দিলো।প্রিয়তি ছাড় পেতেই দ্রুত গতিতে খাট থেকে নেমে গেল।
— যাক বাবা বেঁচে গেছি। না হলে কতক্ষণ যে এইভাবে পরে থাকতে হতো।যাক ফ্রেশ হয়ে চা বানিয়ে আজকে সবাইকে খাওয়াবো।

প্রিয়তি ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে চা বানাতে শুরু করলো।
“– আমার জন্য কড়া করে এক কাপ কফি বানিয়ে দিও তো।
পিছনে তাকিয়ে প্রিয়তির চোখ কপালে ওঠে যাওয়ার মতো অবস্থা।
রোহা বাঙালি স্টাইলে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে।
— বাহ্ বিদেশি আপা হঠাৎ আজ বাঙালি স্টাইলে সাজলো।আরে মুখে এক বস্তা ময়দা তো আছেই। সব মিলিয়ে বাঙালি ময়দা সুন্দরী লাগছে।(প্রিয়তি মনে মনে)
প্রিয়তিঃ রো…..রোহা আপু আপনি।
রোহাঃ কি আজব মার্কা কথা বলছো।বাড়ি বউ বাড়িতে থাকবেনা তো কোথায় থাকবে শুনি।
প্রিয়তিঃ বাড়ির বউ মানে।
রোহাঃ তোমাকে শাশুড়ী আম্মু বলেনি কিছু। যাকগে শাশুড়ীর থেকে সব শুনে নিও।এখন আমায় কফি বানিয়ে দেও।
— শাঁকচুন্নি বলে কি কফি খাওয়াতে।এমন কফি খাওয়ামু জীবনে আর কফির নাম নিবি না।আল্লাহই ভালো জানে কোন অশান্তি বাঁধতে এই বাড়িতে এসে উঠেছে। যাকগে যতক্ষণ আছে ততক্ষণে জ্বালিয়ে ছাড়বো। চুন্নি কোথাকার অন্যের স্বামীর দিকে চোখ দেয়।এখন আবার বাড়ির বউ বলে দাবি করছে।মামনিই বলতে পারবে আসল কাহিনী।

প্রিয়তি জিহানকে চা দিতে গিয়ে দেখে জিহান ঘরে নেই।ওয়াশরুম থেকে আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।
প্রিয়তি চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর মুখে রহস্যময় হাসি।
জিহান সকাল সকাল গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে তার গিন্নী তার জন্য চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তিঃ নিন চা খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে ।
জিহানের খটকা লাগলো।প্রিয়তি নিশ্চিত আবারো কোনো কান্ড ঘটিয়েছে।
— জিহান রাতে ঠিক করেছিলো প্রিয়তিকে ভালো স্বামী হয়ে দেখিয়ে দিবে।কিন্তু প্রিয়তির উল্টাপাল্টা কাজের জন্য জিহানের রাগ ওঠে যায়।
জিহান চুপচাপ চা খেয়ে নিলো। আর প্রিয়তি জিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
চা খেয়ে জিহানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
প্রিয়তি ভীতু চেহারা নিয়ে জিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
— চার চামচ মরিচ দিয়েছে চায়ের কাপে তারপর ওনি কিভাবে শান্ত হয়ে বসে আছেন। মনে হচ্ছে ঝড় আসতে চলেছে।
জিহান ঝালে খেয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।

এই সুযোগে প্রিয়তি আস্তে আস্তে ঘর থেকে পালিয়ে একদৌঁড়ে কিচেনে চলে আসল।
প্রিয়তি হাঁপাতে হাঁপাতে — যাক বাবা বেঁচে গেছি না হলে ঝাল দেওয়ার অপরাধে ওখানেই পুঁতে দিতো আমায়। আরে শাঁকচুন্নির কফির কথা তো ভুলেই গেছি।
প্রিয়তি কফি বানিয়ে রোহার সামনে ধরলো কফির মগ।
— নেও তোমার কফি।
রোহা কফির মগ হাতে নিয়ে আবার টেবিলে রেখে দিলো।
রোহাকে কফি দিয়ে প্রিয়তি রাইসা বেগমের ঘরে আসল চা নিয়ে।আসল ঘটনা না জানলে শান্তি নেই। এই শাঁকচুন্নি এই বাড়িতে কেন এসেছে আবার নিজেকে এই বাড়ির বউ দাবি করছে।
— মামনি আসবো…….
রাইসা বেগমঃ আসো প্রিয়তি।
প্রিয়তি রাইসা বেগমকে চায়ের কাপ হাতে দিয়ে — মামনি আসলে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।
রাইসা বেগম ভালো করেই বুঝেছেন কি জিজ্ঞেস করবে প্রিয়তি।
রাইসা বেগমঃ আমি জানি তুমি রোহার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে।
তারপর রাইসা বেগম রোহা আর আদনানের বিয়ের ঘটনা সব বললেন।সব শুনে প্রিয়তি স্তব্ধ হয়ে গেল।
এরই মাঝে নিচ থেকে রোহা আপুর চিৎকার শুনা গেল।

চলবে………
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১৫

রোহা আপুর চিৎকার শুনে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো জিহান ছাড়া।
রাইসা বেগমঃ সকাল সকাল চিৎকার করছো কেন রোহা।
রোহার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে চোখ দিয়ে জল পরছে।
রোহা প্রিয়তির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে — তোমার আদরের ছোট বউ আমার কফিতে মরিচ দিয়েছে। মরিচ দেওয়া কফি খেয়ে আমার এই অবস্থা।
আদনান রোহার চিৎকারে ঘুম থেকে ওঠে নিচে চলে আসলো।
আদনানঃ এত চেচামেচি কেন হচ্ছে সকাল সকাল ঘুমের বারোটা বাজালে রোহা।
রোহা কোনো কথা না বলে পানি খুঁজছে খাওয়ার জন্য। কিন্তু কোথাও পানি পাচ্ছেনা।
প্রিয়তির মুখে রহস্যময় হাসি।
— জানি ময়দা সুন্দরী কফি খেয়ে তুই পানি খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাবি।তাই বুদ্ধি করে সব পানি জানালা দিয়ে পেলে দিয়েছি।হা হা। কি শান্তি লাগছে তোকে এভাবে দেখে। আমাকে সবার সামনে বাজে কথা শুনানোর শাস্তি দিলাম।

রোহা টেবিলে থাকা ঝগ নিয়ে দেখে তাতেও পানি নেই।
আদনান রোহার সামনে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি ধরলো।রোহা ডগডগ করে সব পানি খেয়ে শান্ত হলো।পানি খেয়ে প্রিয়তির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে — তোমায় পরে দেখে নিবো প্রিয়তি আমার সাথে গেম খেলছো তুমি।বড় ভুল করে ফেললে প্রিয়তি। বলে ঘরে চলে গেল।
আদনান প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তির আদনানের দিকে চোখ পরতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো।

রাইসা বেগমঃ প্রিয়তি জিহান উঠেছে ঘুম থেকে।
প্রিয়তিঃ হ্যাঁ মামনি উঠেছে।
রাইসা বেগমঃ তুমি জিহানের কাছে যাও।
প্রিয়তিঃ না মামনি তোমার সাথে রান্নার কাজে সাহায্য করবো।
রাইসা বেগমঃ কোনো কথা নয় যা বলছি তাই করো।আর একটা কথা — রোহার সাথে যা করেছ আর এইসব কাজ করতে যেওনা।তোমার ক্ষতি করতে পারে।ওর থেকে একশো হাত দূরে থাকার চেষ্টা করবে।প্রয়োজনে দু’একটা কথা বলবে।
প্রিয়তি মাথা নাড়িয়ে ঘরে চলে গেল।

প্রিয়তি সাবধানে পা টিপে টিপে ঘরে প্রবেশ করলো।
জিহানকে ঘরে না দেখতে পেয়ে লম্বা একটা নিশ্বাস ছাড়লো।
— আহ্ কি শান্তি লাগছে দুটোকেই শাস্তি দিতে পেরে।
— বাহ্ বাহ্ কোন কাজের শাস্তি দিলে।
প্রিয়তি পাশে তাকিয়ে দেখে জিহান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তি ভয় পেয়ে গেল জিহানের দিকে তাকিয়ে।
প্রিয়তিঃ ক…কই কিছুনা।
আমি তো মজা করে বলছিলাম।
জিহান প্রিয়তির আর কাছে এসে — তাই বুঝি।সকালের চা এত ঝাল হলো কিভাবে।
প্রিয়তিঃ আ……আমি জানিনা।
জিহানঃ এমন ভাবে কথা বলছো ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানোনা। অথচ দুনিয়ার সব থেকে ডেঞ্জারাস মহিলা তুমি।

দুজনের কথার মাঝে রাইসা বেগমের ডাক পরলো।
প্রিয়তি আর জিহান দুজনে নিচে গেল।সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।
রাইসা বেগমঃ আমি গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি আম্মাকে নিয়ে আসার জন্য। আম্মা অসুস্থ একা একা ওনার কষ্ট হচ্ছে তাই ঠিক করেছি এখানে নিয়ে আসবো। তোমরা সবাই মিলেমিশে থাকবে।ঝগড়াঝাটি করবেনা।আমি সেখান থেকে এসে যেন কারো সম্পর্কে কোনো কথা না শুনি।আর রোহা তুমি প্রিয়তির সাথে হাতে হাতে কাজ করে দিবে।দুজন ঝগড়া করবেনা।
রোহা রাইসা বেগমের কথা শুনে মুখ ভেঙিয়ে ঘরে চলে গেল।
প্রিয়তি, জিহান,আদনান রাইসা বেগমকে গেইট পর্যন্ত দিয়ে আসলো।
— প্রিয়তি রোহার থেকে সাবধান। ও তোমার ক্ষতি করতে পারে। ওকে কোনো বিষয়ে রাগাবেনা।আর একটা কথা আমার ঘরে আলমারিতে হলুদ রঙের প্যাকেটে চারটা শাড়ি রেখেছি রোহার জন্য। তুমি রোহাকে শাড়িগুলো দিয়ে দিও।আমার মনে ছিলনা হঠাৎ মনে পরে গেছে।(যাওয়ার আগে রাইসা বেগম প্রিয়তিকে বলে গেলেন)

রোহা ঘরে গিয়ে রেগে খাট থেকে বালিশ নিয়ে ফ্লোরে পেলে দিলো।
আদনান ঘরে ডুকে দেখে রোহা বিছানা সব উলটপালট করে রেখেছে বালিশ ফ্লোরে পরে রয়েছে।
আদনানঃ সমস্যা কি তোর রোহা পাগলের মতো ব্যাবহার করছিস কেন।আমি কত কষ্ট করে বিছানা গুছালাম আর তুই কি করলি সব উলটপালট করে দিলি।
রোহাঃ দেখো আদনান ভাই আমার আর এইসব ড্রামা ভালো লাগছেনা।
আদনানঃ আস্তে কথা বল রোহা ওরা দুজন বাড়িতে আছে তুই ভুলে গেছিস।সত্যিটা জানতে পারলে সব শেষ হয়ে যাবে।
রোহাঃ প্লিজ ভাইয়া তাড়াতাড়ি কিছু একটা করো প্রিয়তিকে আমি জিহানের সাথে সহ্য করতে পারছিনা।
আদনানঃ তুই এমনভাবে বলছিস যেন আমি প্রিয়তিকে জিহানের সাথে সহ্য করতে পারছি।
রোহাঃ এই আমার দিকে দেখো জীবনে আমি শাড়ি পরেছি। জিহানের জন্য আমার এইসব করতে হচ্ছে আমার আর ভালো লাগছেনা এইসব।

আদনানঃ আর একটু সবুর কর বোন তাড়াহুড়ো করে কিছু করা যাবেনা। তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।
রোহাঃ তোমার ঘরে থাকতে আমার মোটেও ভালো লাগেনা।এইসব মিথ্যে বিয়ের নাটক করতে আমার অসহ্য লাগছে।নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে এখন কেন যে তোমার কথা শুনতে গেলাম।
আদনানঃ আমি সোফায় ঘুমাই আর তোকে খাটে ঘুমাতে দেই। আমার সোফায় ঘুমানোর অভ্যাস নেই। কিন্তু তবুও কষ্ট করে ঘুমাই।তোকে আমার ঘরে রানীর মতো করে রাখি আর তুই এইসব বলছিস।
রোহাঃ এতকিছু না করে প্রিয়তিকে মেরে ফেলবো আমি।
রোহার কথায় আদনান প্রচন্ড রেগে যায়।
আদনানঃ যদি আর একবার এই কথাটা মুখে আনিস তোকে আমি গলা টিপে মেরে ফেলবো।প্রিয়তির যদি কোনো ক্ষতি হয় তোকে আমি শেষ করে ফেলবো।
রোহা আদনানের কথায় ভয় পেয়ে যায়।
রোহাঃ ঠিক আছে আমি প্রিয়তর কোনো ক্ষতি করবো না।কিন্তু যা করার তাড়াতাড়ি করো।ওদের মধ্যে কিছু হওয়ায় আগেই।
আদনান কিছু না বলে বেলকনিতে চলে গেল। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়া শুরু করলো।

দুজনের ঝগড়াঝাটি শেষ হওয়ার পর প্রিয়তি আদনানের ঘরে আসে।
প্রিয়তিঃ রোহা আপু মামনি বলেছে এই শাড়িগুলো তোমায় দিতে।
রোহা তখন সোফায় বসে অনলাইনে খাবার অর্ডার দিচ্ছিলো।
প্রিয়তির কথা শুনে সামনে তাকালো।
রোহাঃ আমি তোমার বড় ভাবি হই।ভাবি বলে ডাকবে আপু বলা বন্ধ করো।
প্রিয়তিঃ সরি ভাবি। এই শাড়িগুলো রাখেন মামনি দিয়েছে।
রোহাঃ আম্মু নিজেই দিতেই পারতেন।
প্রিয়তি রোহার পাশে শাড়িগুলো রেখে চলে গেল কোনো কথা না বলে।
রোহাঃ আজব মেয়ে কথার উওর না দিয়েই চলে গেল।

প্রিয়তি ঘরে গিয়ে মন খারাপ করে খাটের ওপর বসে আছে।
জিহান মোবাইল স্ক্রোল করছে আর কিছুক্ষণ পর পর প্রিয়তির দিকে তাকাচ্ছে।
জিহান প্রিয়তির মন খারাপ দেখে বলে — মহারানীর মন খারাপ কেন।নাকি আমাকে আবার কিভাবে শায়েস্তা করবে সেই চিন্তা করছো।
জিহানের কথায় করুন চোখে প্রয়তি জিহানের দিকে তাকালো।
জিহানঃ এইভাবে তাকিয়ে নিজেকে কি প্রমানিত করতে চাও।
প্রিয়তিঃ স……সরি।আর এমন হবেনা। একটা সুযোগ দিবেন আমায় ভালো স্রী হওয়ার।
জিহান মনে মনে খুশি হলো প্রিয়তির কথা শুনে কিন্তু ওপরে প্রকাশ করলোনা।

জিহানঃ ভালো স্রী হওয়া এত সহজ।
প্রিয়তিঃ আপনি যা যা বলবেন আমি সব করবো। তবুও একটা সুযোগ দেন দয়া করে।
জিহানঃ ভেবে বলছো তো।পরে মাঝ পথে থেমে গেলে হবেনা।
প্রিয়তিঃ আ…..আমি পারবো।
জিহান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।
জিহানঃ আচ্ছা ঠিক আছে এত করে যখন বলছো তাহলে একটা সুযোগ দেওয়াই যায়।
প্রিয়তিঃ ধন্যবাদ জামাই।
জিহানঃ জামাই।
প্রিয়তিঃ কই কিছু বলিনি তো।
জিহানঃ আমার কিছু শর্ত আছে।
প্রিয়তিঃ বলুন কি শর্ত।
জিহানঃ আমার সাথে তোমায় বন্ধুত্ব করতে হবে। তোমার সব সমস্যা আমার সাথে শেয়ার করতে হবে।আমাকে তোমার স্বামী নয় বন্ধু মনে করে সব বলবে। আর আমাকে আপনি বলা যাবেনা এখন থেকে তুমি করে বলবে।
প্রিয়তি জিহানের শর্ত শুনে খুব খুশি হলো।
প্রিয়তিঃ ঠিক আছে তাহলে আজকে থেকে আপনি আমার বন্ধু।

জিহানঃ বলেছিনা আপনি বলা বন্ধ করতে হবে।
প্রিয়তিঃ কিছুদিন সময় দিন হুট করে আপনি বলা বন্ধ করি কি ভাবে আপনিই বলুন।
জিহানঃ আচ্ছা ঠিক আছে সময় দিলাম। তাহলে আমি এখন যা বলবো তাই রান্না করতে হবে তোমায়।
প্রিয়তিঃ বলুন কি কি খাবেন আপনি।
জিহানঃ পারবে তো।
প্রিয়তিঃ পারবো ইন-শা-আল্লাহ।
জিহানঃ তাহলে বলা শুরু করি। পোলাও,গরুর মাংস ভুনা, মুরগী ভুনা, রুই মাছের ভর্তা, কাঁচা মরিচের ভর্তা, করলা ভাজি। আর….
এতগুলো রান্নার কথা শুনে প্রিয়তির চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
প্রিয়তিঃ আ…….আর কিছু।
জিহানঃ না থাক আজকে এইটুকুই রান্না করো আমি আবার বেশি খাওয়া পছন্দ করিনা।আর শুনো মনে মনে গালিগালাজ করোনা তাহলে ভালো স্রী হতে পারবেনা।
প্রিয়তি মুখটাকে পেঁচার মতো করে রান্নাঘরে চলে গেল রান্না করতে।
জিহান মুচকি মুচকি হাসছে প্রিয়তির অবস্থা দেখে।

চলবে………..
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here